রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮

Shiva stotram by UMAR-BIN-E-HASNAN



নবী হযরত মহম্মদ এর কাকা 'উমর-বিন-এ-হাসনাম' কৃত শিব স্তুতি ।

আরব অঞ্চলে যে সনাতন ধর্মের অস্তিত্ব ছিল তা I প্রমাণে আজ আর কষ্ট করতে হয় না। মক্কার কাবাতে রাজা বিক্রমাদিত্যের উৎকীর্ণ ফলক ছিল। শিব ভক্ত রাজা বিক্রমাদিত্যের ফলক স্বভাবতই শিবলিঙ্গের কাছই উৎকীর্ণ হবে। এখন এমন একটি কবিতা আপনাদের শোনাবো যেটি ভগবান শিবের উদ্দেশ্য রচিত। আর রচিয়তা স্বয়ং নবী হযরত মহম্মদ এর কাক 'উমর-বিন-এ-হাসনাম'। ইনি ছিলেন সেই সময়কার আরবের একজন বিখ্যাত কবি। আর তিনি ছিলেন 'কোরায়েশ' বংশীয় ও 'কাবা' র একজন পুরোহিত।

শিবস্তুতি :

কাফায়োমাল ফিকরা মিন উলুমিন তাব আসাইরু
কালউয়ান আমাতাউল হাওয়া ওয়াজ তাজাখরু
উই তাজাখাঈরোবা উডান  কালালওয়াদে-এ লিবোওয়া
ওয়ালুকায়ইয়ানাই যাতাল্লি, হ্যায় ইয়উমা তাব আসাইরু
ওয়া আবালোলহা আযাবু আরমীমান' মহাদেব'
মনোজেইল ইলামুদ্দিন মিনহুম ওয়া সাইয়াত্তারু
ওয়া সাহাবী কাই-আম ফিমা-কামিল মিনডে ইয়ায়ুমান
ওয়া ইয়াকুলুম ন লাতাবাহান ফৈনাক তওজ্জারু
মাসসায়ারাই আখলাকান হাসনান কুল্লাহুম
নাজুমুম আজা-আট সুম্মাগাবুল হিন্দু।

বাংলা তর্জমা ( তর্জমা : সুব্রত মজুমদার) :-

 যেলোক কাটায় তাহার জীবন পাপের পঙ্কতলে
ব্যাভিচার আর নাস্তিককতায় জীবন যে জন পালে
করে আফসোস যদি সে ফিরিয়া আসে
নীতিবান সে বাঁচে কোন আশ্বাসে ?
যদি সেই জন হয়ে একমন পূজে শ্রী মহাদেবে
বিমলচিত্ত সেইজন লভে আত্মীয় সম্পদে।
হে শিব মোর লও এ জীবন তবু দিনেকের তরে
পাঠিয়ো 'হিন্দে' যেথা বেদবান তপের সাগরে ফিরে।
সেথায় তীর্থে বেদবান সনে সখ্যে ও সংলাপে
হব সমৃদ্ধ, ভরিবে হৃদয় তপে ।

শুক্রবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

Srimoti sanbad - poem

শ্রীমতী সংবাদ
সুব্রত মজুমদার 

[[ একদিন নির্জন আরব সাগরের তীরে চঞ্চল কৃষ্ণ পদচারণা করছেন। হঠাৎ শুনতে পেলেন এক পরিচিত স্বর। কে  ? এ কি.. শ্রীমতী ! রাধা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে তুললেন কৃষ্ণকে। ঘটনা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। স্থান, কাল ও ব্যক্তি বা ধর্মীয় ঘটনার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। থাকলে তা নেহাত কাকতালীয়। ]
ভালো আছো জানি প্রীয় অন্যকারো সাথে, অন্য কারো হাত রেখে হাতে ;
মোদের বিরহ ব্যাথা তোমাকে কাঁদায়, - - হয়তো কোন নিঃসঙ্গ নিশীথে।
আমি কাঁদি নাকো। কেন জানো ? আমার হৃদয়জুড়ে আছো তুমি হে দ্বারকাধীশ ;
তব স্মৃতি হিয়া জুড়ে তাই, - বিরহ বেদন মাঝে সুখের হরিষ।
ভয় করে, তোমার পরশ যদি হৃৎপিণ্ডের বদ্ধ কোষ্ঠ হতে আবেগ আকারে
ঝরে পড়ে নয়নের অশ্রুধারা হয়ে ! বল বন্ধু তখন কি করে
বেঁচে রবে কলঙ্কিনী  ? জানি প্রীয় জানি জানি উত্তরের বৃথাই প্রত্যাশা।
কি করে জানবে তুমি জননীর স্নেহ আর দয়ীতার মৌন ভালোবাসা ?
তুমিও কি সুখে আছ  - - রাজছত্র ঢাকেনাই মোহনচূড়া তব  ? যে অঙ্গুলি
বাজাতো বাঁশরী, - উছলিত যমুনার ধারা, ফিরিত গৃহে গাভীবৎসগুলি;--
সে অঙুলে সুদর্শনচক্র ধরো আজ। যে আঙুল ধরেছিল গিরিগোবর্ধন
রেখেছিল গোপগণে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে, সে আঙুল নেয় আজ প্রাণ।
যে গোপবালক যমুনার স্বাদুজল পান করে নিবারিত তৃষা
সে আজ হেমদণ্ড ধরে সমুদ্রের খরজলে হারিয়েছে দিশা।
বৃষ্ণীরাজ ! ভুলে যাই মাঝে মাঝে কোনো দিন আপন ছিলে তুমি,
তোমার বাঁশির তাণে চঞ্চলিত হৃদয় আমার। প্রেমহীন রূক্ষ মরুভূমি
যেথা নাই সামান্য আর্দ্র্যতা, আছে শুধু ন্যায়-নীতি-কূটনীতির জঘন্য প্রলাপ,
সে হৃদয় নিয়ে কেন বাঁচো ? কেনো জগন্নাথ, এত ঘোর পাপ  ?
যে রথের তুমিই সারথি সে রথের হতে ভীমবাণ ছিন্ন করে নিরীহ বৃষ্ণীরে ?
ভালো থেকো প্রীয়তম, নির্জন তরঙ্গময় সমুদ্রের বেলাভূমি পরে
এ সাক্ষাৎ মুছে যাবে ইতিহাস হতে। দ্বৈপায়ণ ব্যাস কৃপণতা বশে
এই জীর্ণ পাতা ভরাবেনা কালির আঁচরে। হয়তো কোন দেশে
হয়তো কোন কালে আবার তোমার হব। তোমার অপেক্ষায়...
বিদায় প্রিয়.... বিদায়....।

বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮

Guru bandana




(  শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শিষ্য শ্রী দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের উদ্দেশ্যে গানটি লেখেন।
ছন্দ - #তোটক
মাত্রা ৪|৪ |৪ ) 
রবি নন্দন বন্ধন খন্ডন হে।
শরনাগত কিঙ্কর ভীত মনে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
হৃদি কন্দর তামস ভাস্কর হে।
তুমি বিষ্ণু প্রজাপতি শঙ্কর হে।
পরব্রহ্ম পরাৎপর বেদ ভণে।
গুরুদেব দয়া কর দীনজনে।।
মন বারণ শাসন অঙ্কুশ হে।
নরত্রান তরে হরি চাক্ষুষ হে।
গুণগান পরায়ণ দেবগণে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
কুলকুণ্ডলিনী ঘুম ভঞ্জক হে।
হৃদিগ্রন্থি বিদারণ কারক হে
মম মানস চঞ্চল রাত্রি দিনে।।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
রিপুসূদন মঙ্গলনায়ক হে।
সুখ শান্তি বরাভয় দায়ক হে।
ত্রয় তাপ হরে তব নাম গুনে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
অভিমান প্রভাব বিনাশক হে।
গতিহীন জনে তুমি রক্ষক হে।
চিত শঙ্কিত বঞ্চিত ভক্তি ধনে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
তব নাম সদা শুভ সাধক হে।
পতিতাধাম মানব পাবক হে।
মহিমা তব গোচর শুদ্ধমনে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
জয় সদ্গুরু ঈশ্বর প্রাপক হে।
ভব রোগ বিকার বিনাশক হে।
মন যেন রহে তব শ্রীচরণে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
                                               

সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮

Bengali poem


( আরো কবিতা ভীরু প্রেম  )
হৈমন্তীকা
সুব্রত_মজুমদার
এতদিন ধানশীষে চুপচাপ শিশিরেরা পড়ছিল ঝুপঝাপ বোঝেনি কেউ তো আসবে।
এই মেয়ে আজ এলি সে শিশির মেখে নিলি তোর ছোঁয়ায় এই মাঠ জাগবে।।
ঐদিকে রৌদ্রের হরতাল কুয়াশার কু-আশায় বেসামাল হাজার মানিক যেন ঝরছে;
তোর হাতে রেখে হাত ধানের সবুজ পাত হৈমন্তী ভৈরবী ধরছে।।
ঐ দূরে শালেদের জটলায় শিশিরেরা টপটপ টপকায়, বনময় শিহরণ লাগলো
ঘাঁসে বসে চঞ্চল উচ্ছ্বল বিহ্বল ঘাঁসফড়িং এর ডানা জাগল।।
পুবদিক  রাঙিয়ে প্রানে সাড়া জাগিয়ে ক্ষীনরেখা ঐ দেখা যায় রে
ভাঁপ ওঠা দীঘি তে কালো জলে এ শীতে বাতাসের নিঃশ্বাস পাই রে।
দলবেঁধে বালি হাঁস কাটাইছে পরবাস কলকল অবিরল ডেকে যায়
জাগধরা চাদরে পেয়ালার আদরে কবি মন কল্পনা পেয়ে যায়।
হয়তো বা এরপরে কোলাহল নেবে কেড়ে সুপ্তির সুখভরা অবকাশ;
দ্বারকার বুক বেয়ে নির্জনে নির্ভয়ে খেলাকরে যাবে যত বালিহাঁস।
আবার দিনের পরে পেঁচাডাকা রাত্তিরে স্বপ্ন বালিকা সুর ধরবে,
আগামীর আয়োজনে নদীতীরে একমনে শিশিরের স্নেহকণা ঝরবে।।

রবিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৮

Nabanya


                                                              বাঙালি যেমন কৃষিপ্রধান তেমনি উৎসব পাগলও। অপরদিকে বাঙালি আবার ভীষন ধর্মপ্রাণ। তাই ধর্ম, কৃষি, সংস্কৃতি ও আনন্দের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে বাঙালি তার উৎসবানুষ্ঠানের মাধ্যমে। কৃষিপ্রধান বাঙালির এইরকম একটি উৎসব হল নবান্ন । কার্তিক মাস হতে শুরু হয় ধান কাটা। অগ্রহায়ণ বা অঘ্রান মাসে নতুন চালের ভাত প্রথমে দেবতাকে উৎসর্গ করার উৎসবই নবান্ন ।
                পশ্চিমবঙ্গে নবান্ন সাধারণত অন্নপূর্ণা পূজার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। তবে ব্যতিক্রমও আছে। যেমন বীরভূমের তারাপীঠে নবান্ন হয় কার্তিক পূজার সঙ্গে। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে বিয়ের  পর কৈলাশ শিখরে শিব ও পার্বতী বেশ সুখেই দাম্পত্যজীবন কাটাচ্ছিলেন।  আর্থিক অনটনের জেরে  বেশ কিছুদিন পরই শুরু হয় দাম্পত্যকলহ। দারিদ্র্যের কারণে পার্বতীর সঙ্গে কলহে ঘর ছেড়ে ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করেন শিব। কিন্তু কোথাও ভিক্ষা না পেয়ে শেষে  কৈলাশে ফেরেন। পার্বতীর মায়ায় তিনি যে ভিক্ষে পাচ্ছিলেন না, তা ঘুমাক্ষরেও টের পাননি শিব। কাশীতে তখন পার্বতী মা অন্নপূর্ণা রুপে অন্ন বিতরন করছেন। ভোলানাথ দেবী অন্নপূর্ণার কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করেন। দেবী অন্নপূর্ণার হাতে রন্ধনকৃত  সঘৃত পালান্ন, পায়েস ইত্যাদি ভোজন করেন। এই ঘটনাকেই নবান্নের শুরু মনে করা হয়। মনে করা হয় নতুন চালের অন্ন দেবী অন্নপূর্ণাকে নিবেদন করলে দেবী সংসার ধনধান্যে পরিপূর্ণ রাখেন।
পশ্চিমবঙ্গে নবান্য রন্ধন, পূজা ও উৎসর্গে আবদ্ধ থাকলেও পূর্ববঙ্গ তথা অধুনা বাংলাদেশের নবান্নের অনেকগুলো অংশ আছে। সেগুলি হল-
লক্ষ্মী পূজা :-
পিতৃশ্রাদ্ধ:- পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বীরবাশ:- বাড়ির উঠানে গর্ত করে তাতে জ্যান্ত কই মাছ, দুধ দিয়ে মাঝে একটি বাঁশ পোতা হয়। চারপাশে আলপনা আঁকা হয়।
কাকবলি:- একটি কলার পাতায় নতুন চাল, কলা, নাড়ু ইত্যাদি কাককে খেতে দেওয়া হয়। মনে করা হয় কাকের মাধ্যমে মৃত আত্মারা (পূর্বপুরুষের ) ঐ খাবার খান।
সব অনুষ্ঠান হয়ে গেলে রন্ধনকরা খাদ্য দেবতাদের নিবেদন করে একসাথে খাওয়া দাওয়া হয়।
  নবান্নের খাদ্য তালিকা :- 
সকালে পূজার পর নতুন চালের গুঁড়ো / চাল সেদ্ধ, মাখার জন্য দুধ, চিনি, কিসমিস, ফলের টুকরো, মিষ্টি।
দুপুরে পাঁচ, সাত বা নয় রকমের ভাজা। যেমন- আলু-ভাজা, পটলভাজা, বেগুন ভাজা, আখ ভাজা, বড়িভাজা ইত্যাদি।
তরকারি, মুগের ডাল,মাছের পদ, টক, চাটনি পায়েস, মিষ্টি, পান। নবান্নে ডিম বা মাংস রান্না হয় না।
অনেক জায়গায় পরেরদিন রান্না করা হয় না।

                                               

সোমবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৮

Labh Panchami

লাভ পঞ্চমী :-
                 দীপাবলীর তিনদিন পর ছট পূজার  মধ্যে যে পঞ্চমী পড়ে তা লাভ পঞ্চমী বা সৌভাগ্য পঞ্চমী হিসাবে গুজরাত ও অন্য কিছু রাজ্যে পালিত হয়। এই দিনটি খুবই মঙ্গলময় ও সৌভাগ্যদায়ক দিন। মনে করা হয় এই দিন গণেশের দুই স্ত্রী ঋদ্ধি ও সিদ্ধি এর  দুই পুত্র শুভ ও লাভের পূজা করলে সৌভাগ্য আসবে। গুজরাতে সমস্ত ব্যবসায়ীরা এই দিন হতে ব্যবসা শুরু করেন বা হালখাতা করেন। এই নতুন খাতাকে 'খাতু' বলে, যার বাম দিকে 'শুভ' ও ডান দিকে 'লাভ' লেখা হয়। জৈনরা এদিন বই এর পূজা করে। এ অনেকটা আমাদের বসন্তপঞ্চমীর মতো। এদিন জৈনরা জ্ঞানের উপাসনা করেন।
হালখাতর মাঝে আঁকা হয় স্বস্তিকা চিহ্ন যা জ্ঞান ও সিদ্ধির দেবতা গণেশের প্রতীক। আর স্বস্তিকার দুপাশে দুটি করে লাইন গণেশের দুই স্ত্রী ঋদ্ধি ও সিদ্ধির প্রতীক। গণেশের সাথে ঋদ্ধি ( বুদ্ধি ও পদ্ধতি) এর মিলনে শুভ অর্থাৎ মঙ্গলের জন্ম। আবার গণেশের সাথে সিদ্ধি (আত্মশক্তি  ) এর মিলনে লাভ অর্থাৎ মুনাফার জন্ম। 

শনিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৮

Chhath puja

(আরও দেখুন - সূচিপত্র
                                                     দীপাবলীর পর লাভ পঞ্চমীর  পরদিন  হিন্দুদের যে বড়ো উৎসব তা হল ছট পূজা। ছট্ অর্থাৎ ছটা যা কিনা সূর্যের রশ্মি। আবার সূর্যের পত্নীর নাম ছায়া - - যিনি 'ছট্ মাইয়া' নামে পরিচিত । এই উৎসব মূলত অবাঙ্গালীদের পালিত উৎসব। তুলারাশির শুক্লা চতুর্থী থেকে কার্তিক শুক্লা সপ্তমী এই চারদিন ধরে এই ব্রত পালন করা হয়।
 কথিত আছে ভগবান রামচন্দ্র  সূর্যদেবের বংশধর। তাই তিনি চৌদ্দ বছর বনবাসে কাটিয়ে যখন অযোধ্যায় ফেরেন তখন  তিনি এবং মা সীতা দুজনে সূর্যদেবের তপস্যার উপবাস রাখেন। 
পরদিন ভোরে সেই উপবাস ভঙ্গ করেন। পরিবর্তীতে এই রীতি কে ছট পূজা বলা হয়। 
কাহিনী :-
১।।        অথর্ববেদ অনুসারে মা ষষ্ঠী ভগবান সূর্য্যের ছোট বোন। তিনি প্রকৃতি দেবীর ষষ্ঠ অংশ হতে উৎপন্ন হয়েছেন। তাকে বাচ্চাদের রক্ষা করার জন্য সৃষ্ট ভগবান বিষ্ণুর মায়া বলেও বর্ননা করা হয়।
  ২।।            এই ছট্ পূজার পেছনে একটা পৌরাণিক কাহিনী আছে।  বর্ষায়  বৃষ্টি তেমন হয়নি। মাঠের ফসল মাঠেই মারা যাচ্ছে।  ঘরে ঘরে অন্নাভাব হাহাকার ওঠে।  সূর্যের তাপ হ্রাস করে বাঁচার জন্য মা অন্নপূর্ণা সূর্যদেবের ধ্যান করতে শুরু করেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়। সূর্যের প্রখর ছটায় মা অন্নপূর্ণা দিন দিন শ্রীভ্রষ্টা হয়ে ক্ষীয়মান হতে থাকেন। দেবলোকে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দেবতারা সম্মিলিতভাবে সূর্যদেবের কাছে গেলে তিনি মা অন্নপূর্ণার এই দশার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, মা অন্নপূর্ণা যেন গঙ্গাদেবীর আশ্রয় নেন। সূর্যদেব আরও বলেন, অস্তগমনকালে গঙ্গাদেবীর আশ্রয়ে থেকে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতে এবং সপ্তমীর উদয়কালে মা অন্নপূর্ণা গঙ্গাদেবীর আশ্রয়ে থেকে উদীয়মান ছটা বা রশ্মিকে দেখে আমার স্তব বা দ্বাদশনাম উচ্চারণ করলে আমার স্মরণকারীকে অন্নের কষ্ট পেতে হবে না। এইভাবে ব্রত করে সমস্ত পৃথিবী অন্নে পরিপূর্ণ হল। মা অন্নপূর্ণা আবার তাঁর শ্রী ফিরে পেলেন ।
৩।। অন্য একটি গল্পে আছে রাজা প্রীয়ব্রত নিঃসন্তান ছিলেন। অনেক যজ্ঞ করে মহর্ষি কাশ্যপের দেওয়া 'ক্ষীর' খেয়ে  রানী মালিনী গর্ভবতী হন। কিন্তু রানী মৃতসন্তান প্রসব করলে রাজা আত্মহত্যা করতে উদ্যত হন। তখন মা ষষ্ঠী ( ষষ্ঠী =ছয় =ছট ) এসে তাকে ছট পূজা করতে বলেন। রাজা ছট পূজার পর সন্তানের জীবন ফিরে পান। তখন তিনি সারা রাজ্যে এই পূজা ছড়িয়ে দেন। এখানে ছট তাই মা ষষ্ঠীর প্রতীকও।
৪।। মহাভারতের রাজা কর্ণ ছিলেন 'অঙ্গ' অর্থাৎ পূর্ববিহারের রাজা ।তিনি সূর্যের পুত্র ছিলেন ও সূর্যের পূজা করতেন। তার প্রচলিত সূর্যের পূজা 'ছট পরব' সারা বিহার ও উত্তরপ্রদেশে তাই বহুল প্রচলিত হয়।
৫।। মহাভারতের কাহিনী অনুসারে দ্রৌপদী তার পরিবারের দীর্ঘায়ু ও স্বাস্থ্য কামনা করে ছট পূজা করেন।
ব্রতের আচার :-
প্রথম দিন অর্থাৎ শুক্লা চতুর্থীর দিন স্নান সেরে শুদ্ধাচারে ভোজন করা হয় যা 'নাহায়-খায়' নামে পরিচিত।
দ্বিতীয় দিন হতে উপবাস শুরু হয়। সারাদিন নির্জলা উপবাসের পর ক্ষীর দিয়ে উপবাস ভাঙ্গ হয় যা 'খরনা' বা 'লোহণ্ডা' নামে পরিচিত ।
তৃতীয় দিন নিকটবর্তী জলাশয়ে গিয়ে অস্তায়মান সূর্য্যকে কাঁচা দুধের অর্ঘ্য দেওয়া হয়।
চতুর্থ তথা শেষদিনে জলাশয়ে গিয়ে উদীয়মান সূর্য্যকে অর্ঘ্য প্রদান করে উপবাসভঙ্গ করা হয়।
উপাচার:-
সাধারনত বাঁশের ঝুড়িতে করে উপাচারগুলি জলাশয়ে পূজার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আখ, ঝুনো নারকনা, কলা, বিভিন্ন ফল, মিষ্টি , ঠেকুয়া, লাড্ডু ইত্যাদি ।

বৃহস্পতিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৮

Gobardhan puja

                             (আরও দেখুন - সূচিপত্র
               দীপাবলীর উপলক্ষে পঞ্চোৎসব পালন করা হয়। এগুলি হল যথাক্রমে ধনতেরাস , নরকচতুর্দশী , দীপাবলী, গোবর্ধনপুজা ও ভাইফোঁটা । গোবর্ধনপুজা বা গরুর পরব  হল হিন্দু ক্যালেন্ডারের তুলারাশির শুক্লপক্ষের প্রথম দিন। আদিবাসী সমাজে আবার এই উৎসব  বাঁদনা পরব বা সহরায় উৎসব নামে পরিচিত । কথিত আছে এই দিনই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনবাসীর সাথে মিলে গিরিরাজ গোবর্ধন এর পুজা করেন। 
                                               কৃষিনির্ভর সমাজে গরু, মোষ ইত্যাদি গৃহপালিত পশুর গুরুত্ব অপরিসীম। গোবর্ধনপুজা বাঁষষ এদের উদ্দেশেই নিবেদিত।  এই দিন  গরুকে স্নান করিয়ে নানা রঙে অলঙ্কৃত করা হয়, সিং–এ সিঁদুর দেওয়া হয়, যথাসাধ্য ভালোমন্দ খাওয়ানো হয়। রং করার জন্য গিরি মাটি, আতপচাল বাঁটা, হলুদ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। তবে গর্ভবতী গাভীর গায়ে রং দেওয়া হয় না। বিকাল বেলায় গরুর পা ধুইয়ে গায়ে রং এর ছাপ দেওয়া হয়। খেতে দেওয়া হয় সদ্য পাকা ধানের শীষ ও শাঁওলতা। 

Bhratridwitia - ভ্রাতৃদ্বিতীয়া

                           
 ( আরও দেখুন - সূচিপত্র
                           দীপাবলীর উপলক্ষে পঞ্চোৎসব পালন করা হয়। এগুলি হল যথাক্রমে ধনতেরাস , নরকচতুর্দশী , দীপাবলী, গোবর্ধনপুজা ও ভাইফোঁটা । ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা হল হিন্দু ক্যালেন্ডারের তুলারাশির শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিন। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে  যমুনা তাঁর ভাই যমের মঙ্গল কামনায় এই ব্রত করেন। তাঁরই পুণ্যপ্রভাবে যমদেব অমরত্ব লাভ করেন। এই কাহিনীতে প্রেরিত  হয়ে বর্তমান কালের বোনেরাও এই অচার পালন করে আসছেন ।
বিভিন্ন নাম:-
বাংলায় এই উৎসব ভাইফোঁটা নামে পরিচিত হলেও নেপালে এর নাম 'ভাইটিকা'। বিহার, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি অবধি ও মৈথিলি ভাষাভাষী অঞ্চলে এই উৎসব 'ভাইয়াদুজ' নামে পরিচিত। মহারাষ্ট্র,গোয়া,গুজরাত, কর্ণাটক প্রভৃতি গুজরাটি, কোঙ্কনি ও মারাঠিভাষী আঞ্চলে এই উৎসবকে 'ভাউবীজ' বলে।
কাহিনী :-
ভাইফোঁটা উপলক্ষ্যে অনেক কাহিনীর প্রচলিত আছে। সেগুলি হল -
১।।  ঋকবেদ অনুযায়ী, মৃত্যুদন্ডদাতা যম ও তাঁর বোন যমুনা হচ্ছে সূর্য্যের যমজ সন্তান, অর্থাৎ তারা যমজ ভাই বোন। বড় হয়ে তারা পরস্পর থেকে অনেক দূরে থাকতেন। দীর্ঘকাল অদর্শনে থেকে বোন যমুনার খুব ইচ্ছে হলো ভাই যমকে একটু দেখার। ভাইকে নিমন্ত্রণ করতেই ভাই যমরাজ বোনের বাড়ীতে এসে উপস্থিত। ভাইকে যথাসাধ্য আপ্যায়ন শেষে ভাইয়ের জন্য মন ব্যাকুল হতেই বোন যমুনা ভাইয়ের সর্বাঙ্গীন কুশল কামনা করে প্রার্থনা করেন, ভাই যমরাজ খুব প্রীত হন বোনের এই আকুলতা দেখে।
২।।  নরকাসুরকে বধ করে শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকযয়  ফিরে গেলে। সেখানে ক্লান্ত শ্রীকৃষ্ণকে বোন সুভদ্রা প্রদীপ জ্বালিয়ে  অভ্যর্থনা করল। পিঁড়ি পেতে খেতে দিল কতরকমের সুস্বাদু খাবার । ভাই যেন পুনর্জন্ম পেল, অর্থাৎ হয়ে গেল দ্বিজ, তাই শুরু হল ভাই-দ্বিজ, অপভ্রংশে ভাইদুজ।
৩।। পুরাণ মতে দানবরাজ বলি পাতালে বামনরূপী ভগবান বিষ্ণু কর্তৃক বন্দি হলে  ভগবান বিষ্ণু বর দিতে চাইলে বলি বললেন, "প্রভূ , আপনি এখানেই দ্বারপাল হিসাবে থাকুন, যাতে আসতে যেতে আপনার দেখা পাই। ভগবান বিষ্ণু হলেন বলির দ্বারপাল । এদিকে স্বামীর জন্য বহুকাল অপেক্ষা করে মা লক্ষ্মী যান নারদের কাছে। সেখানে তিনি সবকিছু জানতে পারেন।
তখন পাতালে গিয়ে তিনি  বলির সাথে ভাইবোনের সম্পর্ক স্থাপন করেন। বলির কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে বললেন , "ভাই আমার  ! আজ থেকে তুমি আমার ভাই।"  বলি বললো,"বোন, তোর কি চায় বল। যা চায় তাই পাবি।" লক্ষ্মী বলল, "আমার স্বামীকে আটকে রেখেছ, ছেড়ে দাও।"  বলি তৎক্ষণাৎ ভগবান বিষ্ণুকে মুক্তি দিলেন।
৪।। জৈন ধর্ম অনুসারে রাজা নন্দীবর্ধন বহুদিন ভাইকে না দেখে মনোকষ্টে ভুগছে। ভাই মহাবীর তপস্যায় নির্বাণলাভ করে জৈনধর্ম প্রচার করে বেড়াচ্ছে। নন্দীবর্ধনের কষ্ট লাঘবের জন্যে বোন সুদর্শনা কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়ায় ভায়ের বাড়ি এসে তার সেবা করতে লাগল। এই ঘটনাকে মনে রেখে জৈনরা ভাইফোঁটা পালন করেন।
৫।। ভাইফোঁটা নিয়ে আবার একটি লোককথা আছে। সেই  গল্প অনুসারে, - -
                                                               একসময় একটা  জঙ্গলের পাশে এক বাড়িতে  এক পরিবার বাস করত । সেই বাড়ির ছেলেটির দিদির যখন বিয়ে হয় তখন সে খুব ছোট। বড় হয়ে দিদির কথা জানতে পেরে সে মাকে জিজ্ঞেস করে, "মা, আমারও তো দিদি আছে তুমি বলো, সে কেন আসে না?" মা বলে," তার  শ্বশুরবাড়ি অনেক দূর,  জঙ্গল, খরস্রোতা নদী পেরিয়ে সে কী করে আসবে ?"
ছেলেটি মায়ের কাছে বিদায় নিয়ে দিদির শ্বশুরবাড়ির দিকে চলে। জঙ্গলের পথে হাঁটছে ছেলে, ধেয়ে এল সাপ। ছেলে বলল, জানো, আমি আমার দিদির কাছে যাচ্ছি, কতদিন তাকে দেখিনি, এখন আমাকে কেটো না, প্লীজ, ফেরার পথে যা খুশি কোরো। সাপ বলল, ঠিক আছে। ছুটে এল বাঘ, তাকেও একই কথা বলল সে। পাহাড় শুরু করল তার ওপর পাথর ফেলতে, সে মিনতি করল, এখন আমায় মেরো না দয়া করে। ওরা মেনে নিল। নদী পার হতে গিয়ে দেখে প্রবল স্রোত, ভেসে যাবার উপক্রম। নদীর কাছেও সে চাইল তাকে যেন পার করে দেয়।  নদী তাকে পার করে দেয় । ভাইকে পেয়ে তো দিদির আনন্দের শেষ নেই। খাওয়া-দাওয়া ফোঁটা-টোঁটা তো হলই, কত গল্পগুজব, খুনসুটি, কত কী! অনেক দিন সেখানে থেকে ফেরার যখন সময় হল, দিদি বলল, আবার আসিস ভাই। ভাই বলল, "জানিস দিদি, আমাদের আর দেখা হবে না।" আসার সময় যা যা কাণ্ড হয়েছিল, সব দিদিকে বলল সে।দিদি বলল, "কী, আমার ভাইকে মেরে ফেলবে এরা? রসো, মজা দ্যাখাচ্ছি।" সেও পোঁটলা নিয়ে রেডি হয়ে গেল, বলল," চ' আমিও তোর সাথে যাব।"
নদীকে খুশি করতে পুজো দিল সে, নদী ছেড়ে দিল। বাঘ হালুম করে তেড়ে আসতেই পোঁটলা খুলে তার দিকে ছুঁড়ে দিল রান্না করা মাংস । বাঘ তাই খেয়ে ফুটে গেল। সাপকে দুধকলা দিয়ে আর পাহাড়কে সোনা-রূপো ঘুষ দিয়ে বশ করে ফেলল সে। ভাইয়ের সব অনিষ্ট দূর হয়ে গেল।
উপাচার:-
ধান, দূর্বা, শিশির দিয়ে ঘষা চন্দন, পৈতে ( ব্রাহ্মণ হলে ), পান, সুপারি, নাড়ু, মিষ্টি, পায়েস, জল ও উপহার সামগ্রী
আচার ও অনুষ্ঠান :-
এই দিন বোনেরা উপবাস রেখে ভাইয়ের কপালে বাঁ হাতের অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে চন্দন, ঘি, কাজল, মধু , শিশির, গোমূত্র  দিয়ে ফোঁটা দিয়ে ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে থাকে।  এই সময় বোনেরা বলেন  –
ভ্রাতস্তব ললাটে হি দদামি তিলকং শুভ। 
অতঃপরং যমদ্বারে ময়া দত্তং হি কন্টকম্।
“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা,
আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা।”

মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৮

রক্ত জবা

       
                  - সুব্রত মজুমদার
হে গৌরীসুত সিন্দূরচর্চিত গণজনাবৃত হে গণেশ
বন্দি তব পদ হরয়ে বিপদ ধরয়ে সতত রাজেন্দ্রবেশ।
নমি অতঃপর যোগীন্দ্র শঙ্কর গঙ্গাধর ভূতভর্তরি
সে মৃত্যুঞ্জয়ের চরণে সুব্রত বিরাজে রজরূপ ধরি ।
যমুনাপুলীনে শ্রীমতীর সনে রাসরসে মাতে নটবর
শ্যাম করে গান গোপী ধরে তাণ নাচে ব্রজপ্রাণ সুন্দর।
নমি সে চরণ, নগেন্দ্রগমন ঈশান মনহারিনী
বন্দি হরজায়া হরিনেত্রাশ্রয়া মহাকাল মনোরঞ্জনী।।

                  ।। ১ ।।
তারা পাপহারী তমনাশকারী উদ্ধার সন্তানে বিপদে
মনোদুখ হর ওমা হরজায়া এ প্রপঞ্চমায়া নাশ হে।
প্রলয়ের কালে তুমি নারায়ণী, বিষ্ণুনিদ্রারুপী তুমি সনাতনী ;
কৈলাশে আবার গণেশজননী, বিরাজ  ভবের সাথে হে।
তুমি কখনো ইন্দ্রাণী বজ্র ধরি হাতে, কখনো গো মা শঙ্খ-চক্র ধৃতে --
কালরমা কালি স্থিতি কালহৃদে, বস সুব্রতের হৃদয়ে।।
                  ---¤---

                  ।। ২ ।।
আয় মা এসে বস মা কোলে যতন করে সাজিয়ে দি
এলো চুল পড়েছে মুখে , কি অভিমান জমলে বুকে ?
শুকালো মা দুইগালে তোর অশ্রুজলের বারিধী।
বুঝাই তোরে কেমন করি তোর লাগি মা ঘরে ফিরি
(আমি)  তোর নয়নে জগৎ হেরি , আনন্দহাট বসিয়ে দি।
কে বলে তুই পাগলী মেয়ে ওরাই পাগল দেখুক গিয়ে ;
নাই পরেছিস বসন গায়ে,  তাতে বা যায় আসে কি  ?
সুব্রতের কঠোর হিয়া এলো কণ্যারুপা হরজায়া
দিলো ব্যথা না চিনিয়া,  এখন উথলিছে স্নেহনদী।।
                     ---¤---
                    ।। ৩ ।।
যদি ধুলোয় ফেলে রাখবি শ্যামা তবে মিছে মা বলি ক্যানে,
দেখলি না মা এলোকেশী তোর কোলের ছেলে রয় ঊপোষী
পেটভরালি প্রতিবেশীর চাইলি নাকো শিশুর পানে।
হত যদি গণপতি এমন কি হত মা গতি ? শিবজায়ার এ কি মতি
                 সদানন্দয়ী বলি কেমনে ¦
ভাল আমার পশুপতি নির্বিকল্প সরলমতি সুব্রতের হীনমতি
             উদ্ধারিল যার চরণে।
এরপরেও হরজায়া থাকিস গো মা পাষান হইয়া তবে এ সন্তান হিয়া
            কেমন করে প্রবোধ মানে!
সুব্রত বলে শোন মা তারা নিজমায়ায় নিজে হারা, বসে খাও সন্দেশ-প্যাড়া
                   দোষ কি দেবে অপর জনে ?
                     


                      ।। ৪ ।।
         
আমি কেন মার চরণ ছাড়া
কোলে লয় মা দুষ্টজনে অবোধ কেঁদে পায় না সাড়া।
কে বলে মা মহামায়া অন্ধ মা তুই মায়ার ঘোরে
বালকে ত্যজি তাইতো তারা ঠাঁই নিয়েছেন ডাকাতপুরে।
দুঃখ দিলি তমোময়ী দুধের শিশু ফেললি ভূমে
ওঠ জেগে দেখ ব্রহ্মময়ী ব্যাঘ্রেও শিশুর কপোল চুমে।
তাই বলি শোন মনের দুঃখে সুব্রত কয় শোন গো তারা
এই তারানাম কেউ লবে না যদি থাকিস জ্যান্তে মরা।।
             ।।৫।।


যাসনে মা উমা যাসনে মা, উমা দন্ডদুয়েক থাক মা ঘরে,
তুই গেলে গো মা হরমনোরমা মন যে গো মা কেমন করে।
বছরের পর এলি উমা ঘর সঙ্গেতে শঙ্কর আনিলি ক্যানে !
সে পাগল ভোলা লয়ে ভূতচেলা ঘুরুক এবেলা শ্মশানে শ্মশানে।
কে বলে পার্বতী তোর পিতা মূঢ়মতি, - সে কি জানে কত হৃদয় বিদারে?
হইয়ে পাষান বিদরে পরাণ সঁপেছি পরাণ পাগলের করে;-
যদি যাস উমা পরাণপ্রতীমা কি পরাণ লয়ে থাকিব ঘরে?
নয়নের জলে পাষান বিগলে তবু কি গো টলে পাগলের হিয়া
সুব্রত বলে দেখ দ্বার খুলে সে পাগল ভোলা দুয়ারে বসিয়া।


আমার কালি

আমার কালি

কালি বলতে তোমরা কি বোঝ জানি না, আমি বুঝি ছোট্ট ন্যাংটা মেয়ে
ঘুরে বেড়ায় আমার আশে পাশে ;-  শাসন বারন কোনকিছুই মানে না।
ফাগুন মাসে  কুল পেড়ে খায় বোশেখ মাসে লবণ মেখে আম
বার করে জিভ চাটে আমের আঁটি ; কালো বলে কালিই তো তার নাম।
যখন আমি আপনমনে লিখি পিছন হতে ছোট্ট দুটি হাত জড়িয়ে ধরে এসে;
'ছাড় নারে মা, এখন কত কাজ ;' - - বলি আমি তখন মুচকি হেসে।
খেলতে গিয়ে পাড়ার দুষ্ট ছেলে যখন তাকে দেয় কখনো গালি
মেয়ে আমার কেঁদে এসে পড়ে, কালো বরন হয় যে আরো কালি।
ধুলোমাখা কালোকেশে জট বেঁধে যায়, খুলে পড়ে যত্নে বাঁধা বেণী
আর যেই যা বলুক তারে সে তো আমার এই দু'চোখের মণি।
চলতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে ঠোঁটদুখানি রক্তে ভিজে ওঠে
মেয়ের আমার তবুও মুখে হাসি, - - কালোয় যেন হাজার আলো ফোটে।
রুক্ষকেশে গুঁজে জবার কলি মেয়ে আমার কালি।
তাই তো তার দেখতে মুখের হাসি সমস্ত সুখ অক্লেশে দিই বলি।
এ কালি আজ সবার ঘরে ঘরে, হয়তো আছে অবহেলায় পড়ে ;
এই কালি-ই লক্ষ্মী দশভূজা, তবে কেন অবহেলার সাজা ?
বদলেছে যুগ, - - এ যুগ আমার কালির
তার আলোতেই উঠবে জ্বলে প্রদীপ দীপাবলীর।।
          - সুব্রত মজুমদার 

রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮

Dhanterus - ধনতেরাস

                ধনতেরাস                
                             
(আরও দেখুন - সূচিপত্র
                               দীপাবলী উপলক্ষে পঞ্চোৎসব পালন করা হয়। এগুলি হল যথাক্রমে ধনতেরাস, নরকচতুর্দশী, দীপাবলী, গোবর্ধনপুজা ও ভাইফোঁটা । ধনতেরাস হল হিন্দু ক্যালেন্ডারের তুলারাশির কৃষ্ণপক্ষের তেরতম দিন। এখানে "তেরাস'' শব্দের অর্থ হল ত্রয়োদশী। এদিন ধনের দেবতা কুবের ও ধন দেবী মা লক্ষ্মী বাড়ি বাড়ি এসে ধন বিতরন করেন। ভারতসরকার এই দিনটিকে 'জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস' হিসাবে ঘোষণা করেছেন।
 ধনতেরাস সম্পর্কে অনেক পৌরাণিক ও লোককথা আছে। এগুলি হল :-
১।। পুরাণ অনুসারে একবার দুর্বাশা মুনির অভিশাপে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হন লক্ষ্মী। আর এই ধনতেরাসের দিনেই দেবতারা ফিরে পান দেবী লক্ষ্মীকে। এই আনন্দের উৎসবই  হচ্ছে ধনতেরাস।
২।। রাজা হিমের ষোড়শবর্ষীয় পুত্রের কোষ্ঠীতে লেখা - বিবাহের চতুর্থ দিবসে সর্পাঘাতে মৃত্যু। নবোঢ়া পুত্রবধূটি দিশাহারা, কী করবে সে?

ভেবে ভেবে সে এক উপায় বের করল - স্বামীকে কিছুতেই ঘুমাতে দেওয়া যাবে না। পতিদেবতাটি সাহসী ও পরাক্রমী, যত বিষধর সর্পই হোক, তার তরোয়ালের কাছে কিছুই না। কিন্তু ঘুমন্ত মানুষের পরাক্রম থাকে না। সুতরাং যে করেই হোক, তাকে জাগিয়ে রাখতে হবে।

বিবাহের পর চতুর্থ রাত্রি। কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর অমানিশায় সমস্ত জগৎ যখন সুষুপ্ত, তাদের শয্যাকক্ষের চতুর্দিকে তরুণী জ্বালিয়ে দিল রেড়ির তেলের অসংখ্য প্রদীপ। কক্ষে একটিমাত্রই প্রবেশদ্বার, সর্পকে প্রবেশ করতে হলে সেটিই একমাত্র পথ। দ্বার রুদ্ধ থাকলেও সর্প নাকি তার ক্ষুদ্র রন্ধ্রপথেও প্রবেশ করতে পারে, তাই সে তার অঙ্গের সমস্ত গহনা ও স্বর্ণাভরণ খুলে স্তূপীকৃত করে রাখল সেই দ্বারপ্রান্তে। প্রদীপের উজ্জ্বল আলোক রত্নরাজি, মণিমাণিক্য ও স্বর্ণাভরণে বিচ্ছুরিত হতে লাগল।

ঘুম দূরে রাখার জন্য এবার সে শুরু করল তার জীবনের চিত্তাকর্ষক গল্প। কোনো মতেই যেন রাজকুমার ঘুমিয়ে না পড়ে।

মৃত্যুদেব যম এলেন সর্পরূপ ধারণ করে। সূক্ষ্মদেহ ধারণ করে ঢুকেও পড়লেন শয্যাকক্ষের দ্বারের অতি ক্ষুদ্র রন্ধ্রপথে। কিন্তু ঢুকেই তার চোখ ধাঁধিয়ে গেল, রাত্রির অন্ধকারেও কক্ষের ভিতর হাজার সূর্যের প্রভা। তিনি দিকনির্ণয় করতে পারলেন না, গুটিসুটি মেরে পড়ে রইলেন রত্নরাজির ওপর। তিনি শুনছেন অনির্বচনীয় কণ্ঠে এক তরুণী গল্প শোনাচ্ছে তার দয়িতকে।

রাজকুমার মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেলেন। পেলেন দীর্ঘ আয়ু ধন্বন্তরীর কৃপায়।

আয়ুর্বেদের জনক, সমস্ত চিকিৎসকদের গুরু এই ধন্বন্তরীর পূজাই ধন্বন্তরী ত্রয়োদশীর মূলে। প্রাণের মূলে যে সূর্যদেব, তিনি হেলে পড়েছেন দক্ষিণে। বাতাসে হিমের পরশ। এ সময় রোগব্যাধির উপক্রম বেশি। এর ফলেই আয়ুক্ষয়।

আমাদের সমস্ত পূজাই কোনোভাবে আয়ু-বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত।

দেব-অসুরের সমুদ্রমন্থনে উঠে এসেছিলেন এই ধন্বন্তরী, এক হাতে অমৃতভাণ্ড ও অন্য হাতে আয়ুর্বেদ নিয়ে। তিনিই শেখালেন আয়ুর্বেদ। আয়ু-বৃদ্ধির উপায়। পরমায়ুই আমাদের একমাত্র ধন। তারই পূজা ধনতেরাসে। পিসিচন্দ্র বা সেনকো গোল্ডের গহনা দিয়ে তাকে কেনা যায় না।

দক্ষিণ ভারতে - তামিলনাড়ুতে - এইদিন উপাসনা হয় মারুন্দুর। মারুন্দু মানে ওষুধ। বাড়িতে প্রস্তুত করে পরের দিন - নরক চতুর্দশীর দিন - সূর্যোদয়ের প্রাক্কালে তা খাওয়ার নিয়ম। বাড়ির মেয়ে-বৌমাকে শেখানো হয় মারুন্দুর রেসিপি, যাতে তারা প্রজন্ম প্রজন্ম ধরে এই ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে চলে।

যমদেবের উদ্দেশে দীপ জ্বালানো হয়। লক্ষ লক্ষ প্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হয় ধরণী। প্রার্থনা ধ্বনিত হয় জীবনের উদ্দেশে, পরমায়ু বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে।

তোমাদের সকলের জীবন সেই পবিত্র আলোয় আলোকিত হোক। স্বাস্থ্যই সম্পদ, তার পূজা যেন আমরা কখনোই ভুলে না যাই।
৩।। এছাড়াও কথিত আছে যে, কুবের আজকের দিনে বিবাহের জন্য প্রয়োজনীয় কারণে ভগবান বিষ্ণুর কাছ থেকে কিছু অর্থ নিয়েছিলেন। যার ফলে, আজও বহু লোক ভগবান বিষ্ণুর মন্দিরে টাকা দান করেন, যাতে ভগবান বিষ্ণুর কাছে ধার শোধ করা যায়।
ধনতেরাসের পুজো পদ্ধতি:-
প্রথমে একটি নতুন কেনা ঘট বা পাত্রে চাল, পাঁচটি সুপারি ও ২১টি পদ্ম বীজ নিতে হবে। অন্য একটি পাত্রে গঙ্গাজল নিয়ে তাতে চিনি, ফুল ও সোনা বা রূপোর পয়সা দিতে হবে। লক্ষ্মী ও গণেশের মূর্তিতে মালা পরিয়ে পুজো করতে হবে। পুজোর সময় নতুন প্রদীপ জ্বালাতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন এই প্রদীপ কমপক্ষে দুই ঘন্টা জ্বলে।
পুণ্য ধন-ত্রয়োদশী (ধনতেরাস্)

ধন্বন্তরির ধ্যান :-
শঙ্খং চক্রমুপর্যধশ্চ করয়োর্দিব্যৌষধং দক্ষিণে
বামেনান্যকরেণ সম্ভৃতসুধাকুম্ভং জলৌকাবলিম্ |
বিভ্রাণঃ করুণাকরঃ শুভকরঃ সর্বাময়ধ্বংসকঃ
ক্ষিপ্রং নো দুরিতং ছিনত্তু ভগবান্ ধন্বন্তরিঃ পাতু নঃ ||

এদিনে কি কিনব ও কি কিনব না :-
এদিন সোনা ও রূপার দ্রব্য, পিতলের মূর্তি, মুদ্রা,কড়ি, ঝাঁটা, মাটির প্রদীপ ইত্যাদি কেনা শুভ।
অপর পক্ষে অ্যালুমিনিয়ামের দ্রব্য, তীক্ষ্ণ ও ধারালো দ্রব্য, কাঁচের দ্রব্য, কালো কিছু ও তেলনির্মিত দ্রব্য কেনা অশুভ। 

Surya kavacham

SURYA KAVACHAM


चमत्कारी सूर्य कवचम : आरोग्य और सौभाग्य का दिव्य वरदान देता है
(নিচে বাংলা অনুবাদ সহ বাংলা ফন্টে ) 
====
II अथ श्रीसूर्यकवचस्तोत्रम् II 
श्री गणेशाय नमः I
याज्ञवल्क्य उवाच I
श्रुणुष्व मुनिशार्दूल सूर्यस्य कवचं शुभम् I
शरीरारोग्यदं दिव्यं सर्व सौभाग्यदायकम् II १ II
दैदिप्यमानं मुकुटं स्फ़ुरन्मकरकुण्डलम् I
ध्यात्वा सहस्रकिरणं स्तोत्रमेतदुदीरयेत् II २ II
शिरो मे भास्करः पातु ललाटे मेSमितद्दुतिः I
नेत्रे दिनमणिः पातु श्रवणे वासरेश्वरः II ३ II
घ्राणं धर्म धृणिः पातु वदनं वेदवाहनः I
जिह्वां मे मानदः पातु कंठं मे सुरवंदितः II ४ II
स्कंधौ प्रभाकरं पातु वक्षः पातु जनप्रियः I
पातु पादौ द्वादशात्मा सर्वागं सकलेश्वरः II ५ II
सूर्यरक्षात्मकं स्तोत्रं लिखित्वा भूर्जपत्रके I
दधाति यः करे तस्य वशगाः सर्वसिद्धयः II ६ II
सुस्नातो यो जपेत्सम्यक् योSधीते स्वस्थ मानसः I
स रोगमुक्तो दीर्घायुः सुखं पुष्टिं च विंदति II ७ II
II इति श्री माद्याज्ञवल्क्यमुनिविरचितं सूर्यकवचस्तोत्रं संपूर्णं II
সূর্য্যকবচম

যাজ্ঞবল্ক্য উবাচ -
 শ্রণুষ্ব মুনিশার্দুল সূর্য্যস্য কবচং শুভম্  ।
শরীরারোগ্যদং   দিব্যং সর্ব সৌভাগ্যদায়কম্ ।1।

 ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য বললেন - হে মুনিশ্রেষ্ঠ ! ভগবান সূর্য্যের শুভ কবচ শ্রবণ কর , যা শরীরের আরোগ্য প্রদানকারী তথা সম্পূর্ণ দিব্য সৌভাগ্য প্রদান করে।

 দেদীপ্যমানং মুকুটং স্ফূরন্মকরকুণ্ডলম্ ।
ধ্যাত্বা সহস্রকিরনং স্তোত্রমেতদুদীরয়েৎ  ।2।

 উজ্জ্বল মুকুটধারী দোলয়মান মকর কুণ্ডলধারী সহস্রকিরনের ধ্যান করে এই স্তোত্র আরম্ভ করছি।

 শিরো মে ভাস্করঃ পাতু ললাট মেড়মিতদ্যূতিঃ ।
নেত্রে দিনমণিঃ পাতু শ্রবণে বাসরেশ্বরঃ ।3।

 ভাস্কর আমার মস্তক রক্ষা করুন, অপরিমিত কান্তি যুক্ত দেব আমার ললাট রক্ষা করুন। নেত্র রক্ষা করুন দিনমণি আর ঈশ্বর আমার কান রক্ষা করুন।

 ঘ্রাণং ধর্ম ঘৃণিঃ পাতু বদনং বেদবাহনঃ ।
জিহ্বাং মে মানদঃ পাতু কণ্ঠং মে সুরবন্দিতঃ  ।4।

 ধর্মঘৃণি আমার নাক রক্ষা করুন, মুখ রক্ষা করুন বেদবাহন । জিহ্বা রক্ষা করুন মানদ ও কণ্ঠ রক্ষা করুন সুরবন্দিত।

স্কন্ধৌ প্রভাকরং পাতু বক্ষঃ পাতু জনপ্রিয়ঃ।
পাতু পাদৌ দ্বাদশাত্মা সর্বাঙ্গ সকলেশ্বরঃ ।।

প্রভাকর আমার স্কন্ধদ্বয় রক্ষা করুন, বক্ষ রক্ষা করুন জনপ্রিয়। দ্বাদশাত্মা পদদ্বয় রক্ষা করুন আর সর্বাঙ্গ রক্ষা করুন সকলেশ্বর ।

সূর্য্য রক্ষাত্মকং স্তোত্রং লিখিত্বা ভূর্জপত্রকে  ।
দধাতি যঃ করে তস্য বশগাঃ সর্বসিদ্ধয়ঃ ।5।

 সূর্য্যরক্ষাত্মক এই স্তোত্র ভোজপত্রে লিখে যে হাতে ধারন করে সর্বসিদ্ধি তার বশীভূত হয়।

 সুস্নাতো যো জপেৎসম্যক্ যোৎধিতে স্বস্থ মানসঃ ।
স রোগমুক্তো দীর্ঘায়ুঃ  সুখং পুষ্টিং চ বিদন্তি। ।6।

 স্নান করে যে স্বচ্ছ মনে এই কবচ পাঠ করে সে সর্বরোগমুক্ত হয়ে সুখী ও দীর্ঘজীবন লাভ করে।
=====================================

বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৮

কিছু কবিতা - some poems

নিহারীকা
     সুব্রত মজুমদার 
আমি ছিলাম তোমার আশে তোমার প্রতীক্ষায়,
                                  শালের তলে মাদল যেথায় ধিতাং ধিতাং গায়
রুক্ষ মাটি গ্রীষ্মে তাপে' শ্রাবণ জলে নায়।
 সুপ্তিভরা আঁধার ঘেরা কাজল নদীর কূলে
                                       ঘুমিয়ে ছিলাম নরম ঘাসের কোলে ;
তন্দ্রাহরা তোমার কথা ভূলে।
ঘুমের মাঝে হঠাৎ এলো ডাক, -
                                       "শুনছো ! হোথায় চক্রবাক
উড়ছে দেখো ; - - হোথায় চক্রবাক !
ওদের ডানা রোদে ঝলমলিয়ে ওঠে;
                                        শান্ত নদীর নরম সবুজ তটে
 সোনার রবি চলছে অস্তপাটে।"
আমি বললাম - ' কোথায় নিহারীকা ?
                                  কোথায় তুমি  বসে একা একা ?
কোথায় তুমি? কোথায় নিহারীকা ?"
নিরব হেঁসে বাড়িয়ে দিলে তোমার নরম হাত,
                                              মেহেন্দীতে ভর করে তার নামল জ্যোৎস্নারাত ;
জ্যোৎস্না এসে চুমল চিকন হাত।
উঠল জোয়ার নদীর বুকে দীগন্তহীন জল
                                          ফেনায় ফেনায় ডুবল ঘাসের দল,
মরানদী হঠাৎ হলযেন  উচ্ছ্বল চঞ্চল।
গলা আমার উঠল কেঁপে দারুণ আশঙ্কায়
                                           - 'ও মেয়ে ! এ আমি কোথাই ?
ছিলাম বসে তোমার প্রতীক্ষায়।'
ভেঁসে এলো ললিত কণ্ঠে সুরের কলতাণ
                                                   - 'আমি তোমার নিহারীকা, - - জোয়ার ভাঁট আর গান।
আমার সুরে জাগবে আজি লক্ষ কোটি  প্রান।

রবিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৮

হিন্দু পঞ্চাঙ্গ কি ও কেন?

        হিন্দু পঞ্চাঙ্গ
             
               
পঞ্চাঙ্গ কথার অর্থ হল 'পঞ্চ-অঙ্গ'  অর্থাৎ পাঁচটি অঙ্গের সমাহার। এই পাঁচটি অঙ্গ হল   :- নক্ষত্র, তিথি, বার, যোগ ও করণ।
নক্ষত্র :-
               নক্ষত্র হল কোন বিশেষ মুহূর্তে চন্দ্র যে নক্ষত্রে থাকে ।  আবার জন্ম সময়ে চন্দ্র যে নক্ষত্রে থাকে তাকে জন্মনক্ষত্র বলে। নক্ষত্র 27 টি। আর অভিজিৎ কে ধরলে নক্ষত্র 28 টি।
এরা হল :- ১) অশ্বিনী, ২) ভরণী, ৩) কৃত্তিকা, ৪) রোহিণী, ৫) মৃগশিরা, ৬) আর্দ্রা, ৭) পুনর্বসু, ৮) পুষ্যা, ৯) অশ্লেষা, ১০) মঘা, ১১) পূর্ব-ফাল্গুনী, ১২) উত্তর-ফাল্গুনী, ১৩) হস্তা, ১৪) চিত্রা, ১৫) স্বাতী, ১৬) বিশাখা, ১৭) অনুরাধা, ১৮) জ্যেষ্ঠা, ১৯) মূলা, ২০) পূর্বাষাঢ়া, ২১) উত্তরাষাঢ়া, ২২) শ্রবণা, ২৩) ধনিষ্ঠা, ২৪) শতভিষা, ২৫) পূর্ব-ভাদ্রপদ, ২৬) উত্তর-ভাদ্রপদ ও ২৭) রেবতী।
নক্ষত্র বের করার পদ্ধতি :- প্রথমে জন্মসময়ে চন্দ্রের অবস্থান বের করে তার ভোগাংশ লিখে রাখতে হবে। ধরা যাক ঐসময় চন্দ্র নবম রাশিতে আছে ও তার ভোগাংশ  6o 5' । এখন একে মিনিটে পরিবর্তন করে পাই  16,565"। এবার একে 800 দিয়ে ভাগ করে পাই   20.70625 । এর মানে দাঁড়ায় কুড়িটি নক্ষত্র পেরিয়ে একুশতম নক্ষত্র চলছে। এখন একুশতম নক্ষত্র হল উত্তর-আষাঢ়া। দশমিকের আগের সংখ্যা হল পেরিয়ে যাওয়া নক্ষত্র। এইভাবে নক্ষত্র নির্ণয় করতে হবে।
বার
                            এক সূর্য্যোদয় হতে পরবর্তী সূর্য্যোদয় পর্যন্ত সময়কালকে বার বলা হয়। বার মোট সাতটি। বারগুলি হল :- রবিবার, সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার, শনিবার।
তিথি
                                            তিথি হলো সূর্য্য ও চন্দ্রের মধ্যের কৌণিক দশা। মোটামুটি 12o  নিয়ে একটি তিথি হয়। চন্দ্র ও পৃথিবীর গতির কারণে চন্দ্রের কলা যত বৃদ্ধি পায় তত তা সূর্য্য হতে দূরে সরে যায়। যখন সূর্য্য হতে চন্দ্র দূরে সরে যায় তখন চন্দ্রের কলা বৃদ্ধি পায়, একে শুক্লপক্ষ বলে।  আর চন্দ্র যত সূর্যের কাছে আসে তত চন্দ্রের কলা হ্রাস পায়, একে কৃষ্ণপক্ষ বলে। তিথি বের করার নিয়মটি হল :-
তিথি = ( চন্দ্রের ভোগাংশ - সূর্যের ভোগাংশ )/12
                                   এখন উপরের ফর্মুলায় যেটা দরকার সেটা হল তিথির চন্দ্র ও সূর্যের ভোগাংশ। চন্দ্র ও সূর্যের ভোগাংশ কিভাবে নির্ণয় করব তা আলোচনা করছি।  উপরের ফর্মুলায় প্রাপ্ত সংখ্যাটি তিথি। যদি তিথি 1—15 হয় তবে কৃষ্ণপক্ষ আর 16 এর বেশি হলে শুক্লপক্ষ। মনে করা যাক আমরা পেলাম 17, এর অর্থ এটি শুক্লপক্ষের দ্বাদশী । জ্ঞাতার্থে জানাই উত্তরভারতে কৃষ্ণপক্ষ হতে মাসের শুরু হয়।
যোগ
                        যোগ গণনা করা হয় চন্দ্র ও সূর্যের অবস্থান গণনা করে।
এরা হল :-  ১) বিকুম্ভ, ২) প্রীতি, ৩) আয়ুষ্মান, ৪) সৌভাগ্য, ৫) শোভন, ৬) অতিগ-, ৭) সুকর্মা, ৮) ধৃতি, ৯) শূল, ১০) গ-, ১১) বৃদ্ধি, ১২) ধ্রুব, ১৩) ব্যাঘাত, ১৪) হর্ষণ, ১৫) বজ্র, ১৬) অসৃক, ১৭) ব্যতীপাত, ১৮) বরীয়ান্, ১৯) পরিঘ, ২০) শিব, ২১) সাধ্য, ২২) সিদ্ধ, ২৩) শুভ, ২৪) শুক্র, ২৫) ব্রহ্ম, ২৬) ইন্দ্র ও ২৭) বৈধৃতি।
যোগ 27 রকমের। তিথি বের করার নিয়মটি হল :-
যোগ = ( চন্দ্রের ভোগাংশ +সূর্যের ভোগাংশ )/13o20'
        = ( চন্দ্রের ভোগাংশ +সূর্যের ভোগাংশ )/800
(এই 13o20' কে মিনিটে করলে 800 মিনিট হয়।)
করণ
                                                              করণ হল তিথির অর্ধেক। অর্থাৎ একটা তিথিতে দুটো করণ।মাসে মোট করণ 11 টি।  এগুলি হল :-
বব, বালব, কৌলব,তৌতিল, গর, বণিজ, বিষ্টি, শকুণি, চতুষ্পাদ, নাগ এবং কিস্তুঘ্ন। 

শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮

ভূতচতুর্দশী ও চৌদ্দ শাক

     ভূত চতুর্দিকে ও চৌদ্দ শাক
                                                 দীপাবলী উপলক্ষে পঞ্চোৎসব পালন করা হয়। এগুলি হল যথাক্রমে ধনতেরাস , নরকচতুর্দশী , দীপাবলী, গোবর্ধনপুজা  ও   ভাইফোঁটা । 
( দেখুন - সূচিপত্র
কার্তিক মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিকে 'ভূতচতুর্দশী' বা 'যমচতুর্বদশী'ও বলে। এই দিন চৌদ্দশাক ও চৌদপ্রদীপ দেওয়ার রীতি আছে। সন্ধ্যায় পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে চৌদপ্রদীপ দেওয়া হয়। চৌদ্দ পুরুষের উদ্দেশ্যে চৌদপ্রদীপ। এই চৌদ্দপুরুষ হচ্ছেন, পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতা, পিতামহী ও প্রপিতামহী, মাতামহ, প্রমাতামহ ও বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতামহী, প্রমাতামহী ও বৃদ্ধপ্রমাতামহী এবং শ্বশুর ও শাশুড়ি।

দীপদান মন্ত্রঃ-

নমঃ পিতৃভ্যঃ প্রেতেভ্যো নমঃধর্মায় বিষ্ণবে।
নমো ধর্ম্মায়(ধুম্রায়)রুদ্রায় কান্তায় পতয়ে নমঃ।। 
                           পুরাণে আছে প্রাগজ্যোতিষপুরের রাজা নরকাসুর ১৬০০০ কন্যাকে বন্দি  করে রাখেন। তিনি দেবমাতা অদিতির কানের বালা ছিনিয়ে নেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করেন এই দিনে। তা দিনটি নরকচতুর্দশী বা ভূতচতুর্দশী নামে পরিচিত।
                   এছারাও - দানবরাজ বলি যখন স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল দখল করে নিলেন। তখন বলির অত্যাচারে   দেবতা-মানব কেউই রেহাই পেলেন না। এমতাবস্থায়  দেবগুরু বৃহস্পতির পরামর্শে ভগবান বিষ্ণু নিলেন বামনের অবতার। বলি তখন ইন্দ্রত্ব লাভের জন্যে শতাশ্বমেধ যজ্ঞে রত ।ভগবান বামন তখন বলির কাছে তিন পা সমান জমি ভিক্ষা চাইলেন । দানবরাজ বলি কিন্তু শুরুতেই বুঝেছিলেন এই বামন আর কেউ নন, স্বয়ং বিষ্ণু। কিন্তু এরপরও তিনি দানে প্রতিশ্রুত হলেন।  দু'পা দিয়ে স্বর্গ ও মর্ত্য দখল করে ফেললেন বিষ্ণু। এরপর নাভি থেকে বের হয়ে এলো আরেক পা, যা রাখার স্থান নেই। জ্ঞানী বলি তখন মাথা পেতে দিলেন তৃতীয় পা রাখার জন্য। সঙ্গে সঙ্গেই পাতালে নেমে গেলেন দানবরাজ বলি। সেই থেকে পাতালই হলো তার আবাস।
                                                       ভগবানের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করায় বলির জন্য একটি বিশেষ সুবিধা রেখে দিলেন বিষ্ণু। প্রতি বছর মর্ত্যে, অর্থাৎ পৃথিবীতে তাকে পূজা দিবে মানুষ। সেই থেকে কালীপূজার আগের রাতে বলি রাজা পাতাল থেকে উঠে আসেন পূজা নিতে, তার সহচর হিসেবে থাকে শত সহস্র ভূত, প্রেতাত্মা এবং অশরীরী, বেতার, পিশাচ । তাই এই দিনটিকে বলা হয় ভূতচতুর্দশী।  তুলারাশির শুক্লপক্ষের  চতুর্দশী তিথিতে  চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালিয়ে চৌদ্দ পুরুষের আত্মাকে তুষ্ট করে অশুভ শক্তিকে দূর করার প্রথা পালন করা হয় বলে এই দিনটাকে ভূত চতুর্দশীও বলে। এক সঙ্গে অনেকগুলি প্রদীপ জ্বালিয়ে ক্ষতিকারক কীটের হাত থেকে হৈমন্তিক ফসল রক্ষা করার তাগিদে কৃষিজীবী বাঙালীকে এই উপাচার পালন করতে হত ।
                                                                এই ভূতচতুর্দশী দিনটি উপলক্ষ্যে রান্না হয় চৌদ্দ শাক ভাজা । ওল, কেঁউ, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ, ভাঁট  ও শুষণী- এই চৌদ্দ রকমের শাক একসঙ্গে রান্না হয় সেদিন। চৌদ্দ শাক ধোয়ার পর তার জল বস্তুর চতুর্দিকে।বাংলার নব্য-স্মৃতিশাস্ত্রকার রঘুনন্দন (১৬ শতাব্দী) তাঁর অষ্টবিংশতি তত্ত্বের অন্যতম গ্রন্থ কৃত্যতত্ত্বে এই ভূত চতুর্দশীর উল্লেখ করে চৌদ্দ শাক খাবার কথা বলেছেন । আশ্বিন ও কার্ত্তিক মাস দুটিকে যমদংস্টা কাল বলে। কারন এসময় রোগের প্রকোপ অনেক বৃদ্ধি পায়। মন্ত্রে তাই বলা হয়েছে :-
“ওলং কেমুকবাস্তূকং, সার্ষপং নিম্বং জয়াং।
শালিঞ্চীং হিলমোচিকাঞ্চ পটুকং শেলুকং গুড়ূচীন্তথা।
ভণ্টাকীং সুনিষন্নকং শিবদিনে খাদন্তি যে মানবাঃ,
প্রেতত্বং ন চ যান্তি কার্ত্তিকদিনে কৃষ্ণে চ ভূতে তিথৌ।”
চৌদ্দ শাকের নিচে বর্ণনা দেওয়া হল :-
  ওল (Amorphophalluscampanulatus) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: কচি পাতা, পাতার বৃন্ত এবং কন্দ।
ভেষজ গুণাবলী: ওলের শুকনো কন্দের গুঁড়ো অর্শ, হাঁপানি, টিউমার, প্লিহার বৃদ্ধি ও রক্ত আমাশার ঔষধ হিসেবে প্রাচীনকাল থেকে ভারতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। টাটকা মূল ব্যবহৃত হয় কফনাশক ও বাতের চিকিৎসায়। কাঁকড়া বিছার কামড়ে পত্রবৃন্তের রস ব্যবহৃত হয়।

কেঁউ (Costus speciosus.) :- 
যে অংশ খাওয়া যায়: নরম পাতা
ভেষজ গুণাবলীঃ কেঁউ পাতার রস ভালো হজমকারক ও ক্ষুধাবর্ধক। জ্বর, আমাশা, ডায়েরিয়া, কফ, কাটা-ছেঁড়া, ক্ষত, চর্মরোগ, জন্ডিস, আরথ্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, কুষ্ঠ, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, রক্তাল্পতা, কৃমি, চুলকানি, বমিভাব ইত্যাদি রোগের ঔষধ ও সাপে কাটার প্রতিষেধক হিসেবে কেঁউ পাতার নির্যাস প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় সমাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বথুয়া বা বেথুয়া ( Chenopodium album) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: ছোটো গাছের পুরো বিটপ অংশ, আর বড়ো গাছের পাতাসহ ডগা।
ভেষজ গুণাবলী: কোষ্ঠবদ্ধতা, রক্তাল্পতা, অম্বল, কৃমি, বৃক্ক-পাথুরি, মুখে ঘা, পায়েরিয়া, ত্বকের রোগ, বাত ও অর্শ প্রতিরোধে বেথুয়া শাক খুব উপকারী। গর্ভরোধক হিসেবে এর ব্যবহার রয়েছে।

কালকাসুন্দা ( Senna  sophera ) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: নরম পাতা ও কাঁচা শুঁটি।
ভেষজ গুণাবলীঃ অ্যালার্জি, কোষ্ঠবদ্ধতা, হুপিং কাশি, কফ, জ্বর, বেতো জ্বর, ম্যালেরিয়া, কঞ্জাংকটিভাইটিস ও ক্ষত নিরাময়ে কালকাসুন্দার পাতার রস খাওয়া হয়। মৃগি রোগীদের চিকিৎসায় গোটা উদ্ভিদের রস ব্যবহার হয়। রজঃস্রাবের সময় যন্ত্রণা হলে মূলের ক্বাথ কাজ দেয়। আবার ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় কালকাসুন্দার বাকল ভেজানো জল খেলে উপকার হয়।
নিম ( Azadirachta indica) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: কচি পাতা ও ফুল।
ভেষজ গুণাবলীঃ নিম পাতা বা পাতার রস কুষ্ঠ, চর্মরোগ, বহুমুত্র, জন্ডিস, একজিমার ভালো ঔষধ। ব্লাড সুগারের রোগীরা প্রতিদিন সকালে ১০-১২টা করে নিমপাতা চিবিয়ে খেলে সুগার কমে। পোকামাকড়ের কামড়ে মূলের ছাল বা পাতা বেটে লাগালে উপকার হয়। পাতা বাটা মাথায় মাখলে উকুন মরে। মূলের গুঁড়ো জলে মিশিয়ে খাওয়ালে বাচ্চাদের কৃমি নাশ হয়। নিম তেলের শুক্রানুনাশক ক্ষমতা থাকায় এটি জন্মনিয়ন্ত্রক হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। নিমের ছাল ভিজিয়ে জল খেলে অজীর্ণ রোগ সারে।
 সরিষা ( Brassica juncea) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতা ও পাতাসহ কচি কান্ড এবং বীজ।
ভেষজ গুণাবলীঃ ত্বক, যকৃৎ ও চোখের পক্ষে সরষে শাক খুব উপকারি। ভিটামিন K, C ও E এবং ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও লোহার সমৃদ্ধ উৎস হল এই শাক। এই শাক খেলে ক্যানসার, হৃদরোগ ও অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হবার সম্ভাবনা কমে। এছাড়া আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস ও রক্তাল্পতা রোগের নিরাময়ে সরষে শাক যথেষ্ট উপকারি।

শালিঞ্চা ( Alternanthera sessilis  ) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতাসহ ডগা।
ভেষজ গুণাবলীঃ চোখ, চুল ও ত্বকের জন্য শালিঞ্চা শাক খুব উপকারী। ডায়েরিয়া, অজীর্ন, হাঁপানি, কফ, জ্বর, রাতকানা, খোসপাঁচড়া, একজিমা, অর্শ ও অন্ত্রে ঘায়ের চিকিৎসায় এই শাক খেলে উপকার হয়। এই শাক খেলে মায়ের স্তনদুগ্ধের পরিমাণ বাড়ে। প্রতিদিন ৭৫ গ্রাম করে শালিঞ্চা শাক খেলে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে সুগারের পরিমাণ কমে। চোখে জল পড়া, কনজাংক্টিভাইটিস, মায়োপিয়া ও ছানির চিকিৎসায় মূলের রস ব্যবহৃত হয়। গোরুর দুধের সাথে শালিঞ্চা পাতার রস মিশিয়ে খেলে শরীরে শক্তি ও জীবনীশক্তি বাড়ে। কাঁটা বা হুল বিঁধলে ক্ষতস্থানে শালিঞ্চা পাতা বেটে লাগালে কাজ দেয়।

জয়ন্তী ( Sesbania sesban) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: কচি সবুজ টাটকা পাতা।
ভেষজ গুণাবলীঃ উদরাময়, বহুমূত্র, শ্বেতি, মৃগী, মানসিক সমস্যা, জ্বর, ফুসফুসের যক্ষ্মা, কিডনির সংক্রমণ, গনোরিয়া ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ও কৃমিনাশকের কাজ করে। সদ্য প্রসূতিদের জন্য এই শাক খুব উপকারি। মেধা ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও জয়ন্তী পাতার রস খাওয়ানো হয়।

গুলঞ্চ (  Tinospora cordifolia) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতা।
ভেষজ গুণাবলীঃ গুলঞ্চকে স্বর্গীয় উদ্ভিদ বলে গণ্য করা হয় এর ভেষজ গুণের জন্য। ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, পাকস্থলীর গোলমাল, লিম্ফোমা সহ অন্যান্য ক্যানসার, কুষ্ঠ, যক্ষ্মা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বাত, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, হেপাটাইটিস, পেপটিক আলসার, গনোরিয়া, সিফিলিস, শোথ, জ্বর ইত্যদি নানা রোগের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় গুলঞ্চ ব্যবহৃত হয়। গুলঞ্চ শাক খেলে অনাক্রম্যতন্ত্র উজ্জীবিত হয়। গুলঞ্চের রস নিয়মিত খেলে আয়ু বাড়ে, যৌবন দীর্ঘস্থায়ী হয়, সুস্বাস্থ্য হয়, ত্বকের রঙ উজ্জ্বল হয়, ক্ষুধা বাড়ে ও বন্ধ্যাত্ব দূর হয়। গুলঞ্চ খেলে বৃক্কে পাথর জমার সম্ভাবনা থাকে না এবং রক্তে ইউরিয়ার মাত্রা সঠিক থাকে।

পলতা বা পটল পাতা ( Trichosanthesdioica) :-
যে অংশখাওয়া যায়: পাতা ও ফল।
ভেষজ গুণাবলীঃ শ্বাসতন্ত্রঘটিত যে কোনও রোগ সারাতে পটল পাতা উপকারি। রক্তবর্ধক ও রক্তশোধক হিসেবে এবং লিভার ও চর্ম রোগ সারাতে পটল পাতা খুব কার্যকর। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে এবং রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে পটল পাতার কার্যকরী ভূমিকা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন। পটল পাতা নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও মানসিক অস্থিরতা দূর হয়। পটল পাতা ক্ষিদে ও হজমশক্তি বাড়ায়। জন্ডিস, কফ, জ্বর, পিত্তজ্বর, টাইফয়েড, অর্শ, কৃমি, ডায়েরিয়া ইত্যাদি রোগে পটল পাতা খেলে কাজ দেয়। ক্ষতস্থানে পটল পাতার রস লাগালে তাড়াতাড়ি সারে।১) পটোল একটি সুস্বাদু, নির্দোষ সব্জী ও সর্বরোগে সমপথ্য৷ বিশেষ করে অর্শ, আমাশয়, বহুমূত্র ও অম্লরোগে প্রাত্যহিক ভোজন তালিকায় পটোলের তরকারী সুপথ্য৷

(২) পটোলের লতার ডগার অংশকে পলতা বলে৷ পলতা একটি তিক্ত ভোজ্য ও ঔষধীয় গুণে পরিপূর্ণ৷ পলতা লিবার তথা যকৃতের পক্ষে উপকারী, এ রক্ত–পরিষ্কারক, রক্ত–বর্দ্ধক, ক্ষুধা–বর্দ্ধক ও নিদ্রাহীনতার ঔষধ৷ প্রমেহ (গণোরিয়া), উপদংশ (সিফিলিসগ্গ, চর্মরোগে, কুষ্ঠে ও বহুমূত্র রোগে পলতার তরকারী আবশ্যিক ভোজন৷

গ্রন্থিবাত অর্থাৎ আর্থরাইটিস্ রোগে মুখ্যতঃ পলতা ও অন্যান্য উপকরণ সহযোগে একটি ভাল ঔষধ তৈরী হয়–এক মুঠো অড়হর ডাল ১/২ দিন জলে ভিজিয়ে রেখে তারপরে শিলে পিষে নিতে হয়৷ পলতা পাতা (ধরা যাক ১০০টি) ও তার অর্ধেক কালমেঘের পাতা একত্রে পিষে নিতে হয়৷ তারপর দুই ধরনের পেষা বস্তু একত্রে মিশিয়ে মাখো মাখো অবস্থায় ছোট ছোট ওষুধের পিলের মত বানিয়ে শুকিয়ে নিতে হয়৷ তারপর প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২টি করে পিল ১/২ ফোঁটা মধুসহ খেতে হয়৷ অড়হর ডাল বাদ দিয়ে কালমেঘ পাতা ও পলতা পাতা থেকে একই প্রক্রিয়ায় বটিকা তৈরী করে নিয়ে ব্যবহার করলেও ফল পাওয়া যায়৷

ভাঁট বা ঘেঁটু ( Clerodendrum infortunatum) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতা।
ভেষজ গুণাবলীঃ ঘেঁটুতে প্রচুর ফ্ল্যাভোনয়েড থাকায় এটি ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম। এছাড়া চুল পড়া, হাঁপানি, কফ, বাত, জ্বর, চর্মরোগ, লিভারের রোগ, মাথার যন্ত্রণা, কৃমি, কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার, উদরাময় ইত্যদি রোগ প্রতিরোধে ঘেঁটু পাতা খুব কার্যকর। ঘেঁটু পাতা বেটে ঘা বা ফোলা জায়গার ওপর লাগালে তাড়াতাড়ি সারে।

হেলেঞ্চা বা হিংচে ( Enhydra fluctuans ) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতাসহ ডগা।
ভেষজ গুণাবলীঃ আয়ুর্বেদে হেলেঞ্চাকে রক্তশোধক, পিত্তনাশক, ক্ষুধাবর্ধক, ব্যথানাশক, জীবানুনাশক ও জ্বরনাশক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই শাক নিয়মিত খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে। কোষ্ঠকাঠিন্য, হাঁপানি, ডায়েরিয়া ও স্নায়ুরোগের ভেষজ চিকিৎসায় হেলেঞ্চা ব্যবহৃত হয়। দীর্ঘ জ্বরভোগের পর হেলেঞ্চা শাক দিয়ে মাছের ঝোল খেলে ক্ষুধা বাড়ে ও মুখে রুচি ফেরে। হেলেঞ্চা শাকে যথেষ্ট অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকায় এর ক্যানসার প্রতিরোধী ভূমিকা রয়েছে। মাথার যন্ত্রণায় মাথায় এই শাক বেটে লাগালে যন্ত্রণা কমে। হেলেঞ্চা শাক নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগার কমে।

শুষনি ( Marsileaquadrifolia / Marsileaminuta ) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতা।
ভেষজ গুণাবলীঃ  শুষনি শাক খেলে ঘুম পায়। তাই নিদ্রাহীনতায় যাঁরা ভোগেন তাঁদের নিয়মিত শুষনি শাক খেলে কাজ দেয়। এ ছাড়া নিয়মিত শুষনি শাক খেলে মাথার যন্ত্রণা, তীব্র মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, গায়ে ব্যথা, পায়ের পেশির অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন, বাত, জিভে ও মুখে ক্ষত, চর্মরোগ ইত্যদি দূর হয়। শুষনির কাশি ও কফ নিরাময়কারী ভূমিকা বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রমাণিত। চোখের রোগ, ডায়াবেটিস ও ডায়েরিয়া নিরাময়ে শুষনি পাতার রস কার্যকর। সন্তান প্রসবের পর মায়েরা শুষনি শাক খেলে দুগ্ধক্ষরণ বাড়ে। সাপের কামড়ে শুষনি পাতার রস দিয়ে চিকিৎসা করার প্রচলিত রীতি রয়েছে।

শেলুকা বা শুলফা (Peucedanum graveolens / Anethumsowa) :-
যে অংশ খাওয়ায যায়: পাতাসহ ডগা এবং বীজ।
ভেষজ গুণাবলীঃ মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ বাড়াতে ও বাচ্চাদের পেটের রোগ সারাতে শুলফা শাক খুব উপকারী। বাচ্চাদের গ্রাইপ ওয়াটারের একটা উপাদান এই শুলফা শাক থেকে আসে। চোখের রোগ, চোখে ঘা, পুরানো ক্ষত, জ্বর, স্নায়ু রোগ, জরায়ুর ফাইব্রয়েড ইত্যদি রোগের নিরাময়ে শুলফা খুবই কার্যকর। বাচ্চাদের পেটফাঁপায় শুলফা বীজ জলে ভিজিয়ে সেই জল খেলে দারুণ কাজ দেয়। শুলফা বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল সায়াটিকা বাত, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, স্পন্ডাইলোসিস, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, কফ ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। মৌরি তেল পচন রোধে, মূর্চ্ছা রোধে ব্যবহৃত হয়।

ভূতচতুর্দশী পূজাপদ্ধতি :-


 দীপদান মন্ত্রঃ-
নমঃ পিতৃভ্যঃ প্রেতেভ্যো নমঃধর্মায় বিষ্ণবে।
নমো ধর্ম্মায়(ধুম্রায়)রুদ্রায় কান্তায় পতয়ে নমঃ।। "

 মাষভক্তবলি :- 

 নিজের বামে গোময়ের দ্বারা ত্রিকোণ মণ্ডল লিখিয়া তাহার উপরে  "এতে অন্ধপুস্পে ওঁ ক্ষেত্রপালাদিভূতগণেভ্যো নমঃ"  মন্ত্রে পাদ্যাদি দ্বারা পূজা করিয়া খুরি বা বিল্বপত্রের উপরে মাষকলাই, দধি ও হরিদ্রাচুর্ণ একত্রে মিশ্রিত করিয়া তাহার অর্চ্চনা করে  নিবেদন করতে হবে , -
ওঁ মাষভক্তবলয়ে নমঃ। এষ মাষভক্তবলিঃ ওঁ ক্ষেত্রপালাদিভূত-গণেভ্যো নমঃ।।

নিবেদনান্তে প্রার্থনা মন্ত্র য: -
ওঁ ভূতপ্রেতপিশাচাশ্চ দানবা রাক্ষসাশ্চ যে। 
শান্তিং কুর্ব্বন্তুতে সর্ব্বে ইমং গৃহ্নন্তু মদ্‌বলিম্‌।

তারপরে সাদা সর্ষে নিয়ে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠপূর্ব্বক উহার দশদিকে ছড়িয়ে দেবে। 
ওঁ বেতালাশ্চ পিশাচাশ্চ রাক্ষসাশ্চ সরীসৃপাঃ। অপসর্পন্তু তে সর্ব্বে নারসিংহেন তাড়িতাঃ।। "

 এই মাস কলাই,দই আর আতপচাল কলা পাতা বা মৃত্ পাত্রে ভূতের উদ্দেশ্য দেওয়া হয়,যাকে মাসভক্তবলী বলে। 
                                   - - - - 

সোমবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৮

শ্রী শ্রী লক্ষ্মী দেবীর ব্রতকথা - Sri Sri Laxmi Devi Bratakatha


 শ্রী শ্রী  লক্ষ্মী দেবীর  ব্রতকথা


( আরও দেখুন - কোজাগরী লক্ষীপুজা   * অষ্টলক্ষ্মী
গণেশ বন্দনা
বন্দ দেব গজানন বিঘ্ন বিনাশন।
নমঃ প্রভু মহাকায় মহেশ নন্দন।।
সর্ববিঘ্ন নাশ হয় তোমার শরণে।
অগ্রেতে তোমার পূজা করিনু যতনে।।
নমো নমো লম্বোদর নমঃ গণপতি।
মাতা যার আদ্যাশক্তি দেবী ভগবতী।।
সর্বদেব গণনায় অগ্রে যার স্থান।
বিধি-বিষ্ণু মহেশ্বর আর দেবগণ।।
ত্রিনয়নী তারার বন্দিনু শ্রীচরণ।
বেদমাতা সরস্বতীর লইনু শরণ।।

শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর আবাহন
এস মা লক্ষ্মী, কমল বরণী, কমলালতিকা দেবী কমলিনী-
কমল আসনে, বিরাজ কমলা, কমলময়ী ফসলবাসিনী।।
কমল বসন, কমল ভূষণ, কমনীয় কান্তি অতি বিমোহন।
কোমল করে, শোভিছে কমল, ধান্যরূপা, মাতঃ জগৎপালিনী।।
কমল কিরিটি মণি মনোহরে, কমল সিঁদুরে শোভে দেখি শিরে।
কোমল কন্ঠে কমল হারে, কোমল বদন দেখি যে সুন্দরে।।
কমল চরণে কমল নূপুর, কমল অলক্ত মরি কি সুন্দর।
দীন মধুসূদনের সন্তাপ হর তুমি নারায়ণী শান্তিপ্রদায়িনী।।

শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর বরণ
তুমি মাগো লক্ষ্মীদেবী কমল বরণী।
কমললতিকা কৃপা কর নারায়ণী।।
সাজায়ে রেখেছি মাগো ধান্য-গুয়া-পান।
আসিয়া মাগো কর ঘটেতে অধিষ্ঠান।।
ঘরেতে ধূপ ধূনা আর ঘৃতবাতি।
হৃদয় কমলে ওমা করহ বসতি।।
পদ্মাসনে পদ্মদল রাখি থরে থরে।
শঙ্খ বাদ্যে বরণ করি তোমা ছরে।।
সবে করি লক্ষ্মীপূজা অতি সযতনে।
আশিস করহ মাতঃ আমা সব জনে।।

শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর বারমাসি পাঁচালী
বছরে বৈশাখ মাস প্রথম যে হয়।
পূজা নিতে এস গো মা আমার আলয়ে।।
জৈষ্ঠ্য মাসে ষষ্ঠী পূজা হয় ঘরে ঘরে।
কৃপা করি এস ওমা পূজা যে বা করে।।
আষাঢ়ে আসিতে মাগো নাহি কর দেরী।
পূজা হেতু রাখি মোরা ধান্য-দূর্বা ধরি।।
শ্রাবণের ধারা দেখ চারিধারে পড়ে।
পূজিবারে শ্রীচরণ ভেবেছি অন্তরে।।
ভাদরের ভরা নদী কূল বয়ে যায়।
কৃপা করে এস গো মা যত শীঘ্র হয়।।
আশ্বিনে অম্বিকা সাথে পূজা আয়োজন।
কোজাগরী রাতে পুনঃ করিব পূজন।।
কার্তিকে কেতকী ফুল চারিধারে ফোটে।
বসো এসে মাগো মোর পাতা এ ঘটে।।
অঘ্রাণে আমন ধান্যে মাঠ গেছে ভরে।
লক্ষ্মীপূজা করি মোরা অতি যত্ন করে।।
পৌষ পার্বণে মা গো যে মনের সাধেতে।
প্রতি ঘরে লক্ষ্মী পূজি নবান্ন দানেতে।।
মাঘমাসে মহালক্ষ্মী মহলে রহিবে।
নতুন ধান্য দিয়া পূজা করি মোরা সবে।।
ফাল্গুনে ফাগের খেলা চারিধারে হয়।
এস গো মা বিষ্ণুজায়া পূজিব তোমায়।।
চৈত্রেতে চাতকসম চাহি তব পানে।
এস ওমা পদ্মালয়া অধিনী ভবনে।।
লক্ষ্মীদেবী বারমাসি হৈল সমাপন।
দীন ভক্তজন দুঃখ কর নিবারণ।।
কাতরে ডাকিছে যত ভক্ত সন্তান।
ভক্তজন মাতা হয়ে করহ কল্যাণ।।

বৃহস্পতিবারের ব্রতকথা
শরৎ পূর্ণিমার নিশি নির্মল গগন।
মন্দ মন্দ বহিতেছে মলয় পবন।।
লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ।
বৈকুন্ঠধামেতে বসি করে আলাপন।।
হেনকালে বীণা হাতে আসি মুনিবর।
হরিগুণগানে মত্ত হইয়া বিভোর।।
গান সম্বরিয়া উভে বন্দনা করিল।
বসিতে আসন তারে নারায়ণ দিল।।
মধুর বচনে লক্ষ্মী জিজ্ঞাসিল তায়।
কিবা মনে করি মুনি আসিলে হেথায়।।
কহে মুনি তুমি চিন্ত জগতের হিত।
সবার অবস্থা আছে তোমার বিদিত।।
সুখেতে আছয়ে যত মর্ত্যবাসীগণ।
বিস্তারিয়া মোর কাছে করহ বর্ণন।।
লক্ষ্মীমার হেন কথা শুনি মুনিবর।
কহিতে লাগিলা তারে জুড়ি দুই কর।।
অপার করুণা তোমার আমি ভাগ্যবান।
মর্ত্যলোকে নাহি দেখি কাহার কল্যাণ।।
সেথায় নাই মা আর সুখ শান্তি লেশ।
দুর্ভিক্ষ অনলে মাগো পুড়িতেছে দেশ।।
রোগ-শোক নানা ব্যাধি কলিতে সবায়।
ভুগিতেছে সকলেতে করে হায় হায়।।
অন্ন-বস্ত্র অভাবেতে আত্মহত্যা করে।
স্ত্রী-পুত্র ত্যাজি সবাই যায় দেশান্তরে।।
স্ত্রী-পুরুষ সবে করে ধর্ম পরিহার।
সদা চুরি প্রবঞ্চনা মিথ্যা অনাচার।।
তুমি মাগো জগতের সর্বহিতকারী।
সুখ-শান্তি সম্পত্তির তুমি অধিকারী।।
স্থির হয়ে রহ যদি প্রতি ঘরে ঘরে।
তবে কি জীবের এত দুঃখ হতে পারে?
নারদের বাক্য শুনি লক্ষ্মী বিষাদিতা।
কহিলেন মুনি প্রতি দোষ দাও বৃথা।।
নিজ কর্মফলে সবে করে দুঃখভোগ।
অকারণে মোর প্রতি কর অনুযোগ।।
শুন হে নারদ বলি যথার্থ তোমায়।
মম অংশে জন্ম লয় নারী সমুদয়।।
তারা যদি নিজ ধর্ম রক্ষা নাহি করে।
তবে কি অশান্তি হয় প্রতি ঘরে ঘরে।।
লক্ষ্মীর বচন শুনি মুনি কহে ক্ষুণ্ন মনে।
কেমনে প্রসন্ন মাতা হবে নারীগণে।।
কিভাবেতে পাবে তারা তব পদছায়া।
দয়াময়ী তুমি মাগো না করিলে দয়া।।
মুনির বাক্যে লক্ষ্মীর দয়া উপজিল।
মধুর বচনে তারে বিদায় করিল।।
নারীদের সর্বদুঃখ যে প্রকারে যায়।
কহ তুমি নারায়ণ তাহার উপায়।।
শুনিয়া লক্ষ্মীর বচন কহে লক্ষ্মীপতি।
কি হেতু উতলা প্রিয়ে স্থির কর মতি।।
প্রতি গুরুবারে মিলি যত বামাগণে।
করিবে তোমার ব্রত ভক্তিযুক্ত মনে।।
নারায়ণের বাক্যে লক্ষ্মী অতি হৃষ্টমন।
ব্রত প্রচারিতে মর্ত্যে করিল গমন।।
মর্ত্যে আসি ছদ্মবেশে ভ্রমে নারায়ণী।
দেখিলেন বনমধ্যে বৃদ্ধা এক বসিয়া আপনি।।
সদয় হইয়া লক্ষ্মী জিজ্ঞাসিল তারে।
কহ মাগো কি হেতু এ ঘোর কান্তারে।।
বৃদ্ধা কহে শোন মাতা আমি অভাগিনী।
কহিল সে লক্ষ্মী প্রতি আপন কাহিনী।।
পতি-পুত্র ছিল মোর লক্ষ্মীযুক্ত ঘর।
এখন সব ছিন্নভিন্ন যাতনাই সার।।
যাতনা সহিতে নারি এসেছি কানন।
ত্যাজিব জীবন আজি করেছি মনন।।
নারায়ণী বলে শুন আমার বচন।
আত্মহত্যা মহাপাপ নরকে গমন।।
যাও মা গৃহেতে ফিরি কর লক্ষ্মী ব্রত।
আবার আসিবে সুখ তব পূর্ব মত।।
গুরুবারে সন্ধ্যাকালে মিলি এয়োগণ।
করিবে লক্ষ্মীর ব্রত করি এক মন।।
কহি বাছা পূজা হেতু যাহা প্রয়োজন।
মন দিয়া শুনি লও আমার বচন।।
জলপূর্ণ ঘটে দিবে সিঁদুরের ফোঁটা।
আম্রের পল্লব দিবে তাহে এক গোটা।।
আসন সাজায়ে দিবে তাতে গুয়া-পান।
সিঁদুর গুলিয়া দিবে ব্রতের বিধান।।
ধূপ-দীপ জ্বালাইয়া রাখিবে ধারেতে।
শুনিবে পাঁচালী কথা দূর্বা লয়ে হাতে।।
একমনে ব্রত কথা করিবে শ্রবণ।
সতত লক্ষ্মীর মূর্তি করিবে চিন্তন।।
ব্রত শেষে হুলুধ্বনি দিয়ে প্রণাম করিবে।
এয়োগণে সবে মিলি সিঁদুর পরিবে।।
দৈবযোগে একদিন ব্রতের সময়।
দীন দুঃখী নারী একজন আসি উপনীত হয়।।
পতি তার চির রুগ্ন অক্ষম অর্জনে।
ভিক্ষা করি অতি কষ্টে খায় দুই জনে।।
অন্তরে দেবীরে বলে আমি অতি দীনা।
স্বামীরে কর মা সুস্থ আমি ভক্তি হীনা।।
লক্ষ্মীর প্রসাদে দুঃখ দূর হৈল তার।
নীরোগ হইল স্বামী ঐশ্বর্য অপার।।
কালক্রমে শুভক্ষণে জন্মিল তনয়।
হইল সংসার তার সুখের আলয়।।
এইরূপে লক্ষ্মীব্রত করি ঘরে ঘরে
ক্রমে প্রচারিত হল দেশ দেশান্তরে।।
এই ব্রত করিতে যেবা দেয় উপদেশ।
লক্ষ্মীদেবী তার প্রতি তুষ্ট সবিশেষ।।
এই ব্রত দেখি যে বা করে উপহাস।
লক্ষ্মীর কোপেতে তার হয় সর্বনাশ।।
পরিশেষে হল এক অপুর্ব ব্যাপার।
যে ভাবে ব্রতের হয় মাহাত্ম্য প্রচার।।
বিদর্ভ নগরে এক গৃহস্থ ভবনে।
নিয়োজিত বামাগণ ব্রতের সাধনে।।
ভিন দেশবাসী এক বণিক তনয়।
সি উপস্থিত হল ব্রতের সময়।।
বহুল সম্পত্তি তার ভাই পাঁচজন।
পরস্পর অনুগত ছিল সর্বক্ষণ।।
ব্রত দেখি হেলা করি সাধুর তনয়।
বলে এ কিসের ব্রত এতে কিবা ফলোদয়।।
বামাগণ বলে শুনি সাধুর বচন।
লক্ষ্মীব্রত করি সবে সৌভাগ্য কারণ।।
সদাগর শুনি ইহা বলে অহঙ্কারে।
অভাবে থাকিলে তবে পূজিব উহারে।।
ধনজন সুখভোগ যা কিছু সম্ভব।
সকল আমার আছে আর কিবা অভাব।।
কপালে না থাকে যদি লক্ষ্মী দিবে ধন।
হেন বাক্য কভু আমি না করি শ্রবণ।।
ধনমদে মত্ত হয়ে লক্ষ্মী করি হেলা।
নানা দ্রব্যে পূর্ণ তরি বানিজ্যেতে গেলা।।
গর্বিত জনেরে লক্ষ্মী সইতে না পারে।
সর্ব দুঃখে দুঃখী মাগো করেন তাহারে।।
বাড়ি গেল, ঘর গেল, ডুবিল পূর্ণ তরি,
চলে গেল ভ্রাতৃভাব হল যে ভিখারী।।
কি দোষ পাইয়া বিধি করিলে এমন।
অধম সন্তান আমি অতি অভাজন।।
সাধুর অবস্থা দেখি দয়াময়ী ভাবে।
বুঝাইব কেমনে ইহা মনে মনে ভাবে।।
নানা স্থানে নানা ছলে ঘুরাইয়া ঘানি।
অবশেষে লক্ষ্মীর ব্রতের স্থানে দিলেন আনি।।
মনেতে উদয় হল কেন সে ভিখারী।
অপরাধ ক্ষম মাগো কুপুত্র ভাবিয়া।।
অহঙ্কার দোষে দেবী শিক্ষা দিলা মোরে।
অপার করুণা তাই বুঝালে দীনেরে।।
বুঝালে যদি বা মাগো রাখগো চরণে।
ক্ষমা কর ক্ষমাময়ী আশ্রিত জনেরে।।
সত্যরূপিনী তুমি কমলা তুমি যে মা।
ক্ষমাময়ী নাম তব দীনে করি ক্ষমা।।
তুমি বিনা গতি নাই এ তিন ভুবনে।
স্বর্গেতে স্বর্গের লক্ষ্মী ত্রিবিধ মঙ্গলে।
তুমি মা মঙ্গলা দেবী সকল ঘরেতে।
বিরাজিছ মা তুমি লক্ষ্মী রূপে ভূতলে।।
দেব-নর সকলের সম্পদরূপিনী।
জগৎ সর্বস্ব তুমি ঐশ্বর্যদায়িনী।।
সর্বত্র পূজিতা তুমি ত্রিলোক পালিনী।
সাবিত্রী বিরিঞ্চিপুরে বেদের জননী।।
ক্ষমা কর এ দাসের অপরাধ যত।
তোমা পদে মতি যেন থাকে অবিরত।।
শ্রেষ্ঠ হতে শ্রেষ্ট তারা পরমা প্রকৃতি।
কোপাদি বর্জিতা তুমি মূর্তিমতি ধৃতি।
সতী সাধ্বী রমণীর তুমি মা উপমা।।
দেবগণ ভক্তি মনে পূজে সবে তোমা।।
রাস অধিষ্ঠাত্রী দেবী তুমি রাসেশ্বরী।
সকলেই তব অংশ যত আছে নারী।।
কৃষ্ণ প্রেমময়ী তুমি কৃষ্ণ প্রাণাধিকা।
তুমি যে ছিলে মাগো দ্বাপরে রাধিকা।।
প্রস্ফুটিত পদ্মবনে তুমি পদ্মাবতী।
মালতি কুসুমগুচ্ছে তুমি মা মালতি।।
বনের মাঝারে তুমি মাগো বনরাণী।
শত শৃঙ্গ শৈলোপরি শোভিত সুন্দরী।
রাজলক্ষ্মী তুমি মাগো নরপতি পুরে।
সকলের গৃহে লক্ষ্মী তুমি ঘরে ঘরে।
দয়াময়ী ক্ষেমঙ্করী অধমতারিণী।
অপরাধ ক্ষমা কর দারিদ্র্যবারিণী।।
পতিত উদ্ধার কর পতিতপাবনী।
অজ্ঞান সন্তানে কষ্ট না দিও জননী।।
অন্নদা বরদা মাতা বিপদনাশিনী।
দয়া কর এবে মোরে মাধব ঘরণী।।
এই রূপে স্তব করি ভক্তিপূর্ণ মনে।
একাগ্র মনেতে সাধু ব্রত কথা শোনে।।
ব্রতের শেষে নত শিরে করিয়া প্রণাম।
মনেতে বাসনা করি আসে নিজধাম।।
গৃহেতে আসিয়া বলে লক্ষ্মীব্রত সার।
সবে মিলি ব্রত কর প্রতি গুরুবারে।।
বধুরা অতি তুষ্ট সাধুর বাক্যেতে।
ব্রত আচরণ করে সভক্তি মনেতে।।
নাশিল সাধুর ছিল যত দুষ্ট সহচর।
দেবীর কৃপায় সম্পদ লভিল প্রচুর।।
আনন্দে পূর্ণিত দেখে সাধুর অন্তর।
পূর্ণতরী উঠে ভাসি জলের উপর।।
সাধুর সংসার হল শান্তি ভরপুর।
মিলিল সকলে পুনঃ ঐশ্বর্য প্রচুর।।
এভাবে নরলোকে হয় ব্রতের প্রচার।
মনে রেখ সংসারেতে লক্ষ্মীব্রত সার।।
এ ব্রত যে রমণী করে এক মনে।
দেবীর কৃপায় তার পূর্ণ ধনে জনে।।
অপুত্রার পুত্র হয় নির্ধনের ধন।
ইহলোকে সুখী অন্তে বৈকুন্ঠে গমন।।
লক্ষ্মীর ব্রতের কথা বড়ই মধুর।
অতি যতনেতে রাখ তাহা আসন উপর।
যে জন ব্রতের শেষে স্তব পাঠ করে।
অভাব ঘুচিয়া যায় লক্ষ্মীদেবীর বরে।।
লক্ষ্মীর পাঁচালী কথা হল সমাপন।
ভক্তি করি বর মাগো যার যাহা মন।।
সিঁথিতে সিঁদুর দাও সব এয়োমিলে।
হুলুধ্বনি কর সবে অতি কৌতুহলে।।
দুই হাত জোড় করি ভক্তিযুক্ত মনে।
নমস্কার করহ সবে দেবীর চরণে।।

লক্ষ্মীদেবীর স্তুতি
লক্ষ্মীস্তং সর্বদেবানাং যথাসম্ভব নিত্যশঃ।
স্থিরাভাব তথা দেবী মম জন্মনি জন্মনি।।
বন্দে বিষ্ণু প্রিয়াং দেবী দারিদ্র্য দুঃখনাশিনী।
ক্ষীরোদ সম্ভবাং দেবীং বিষ্ণুবক্ষ বিলাসিনীঃ।।

লক্ষ্মীদেবীর ধ্যান মন্ত্র
ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ সৃণিভির্যাম্য সৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনাস্থাং ধায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্য মাতরং।।
গৌরবর্ণাং স্বরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কারভূষিতাম্।
রৌক্‌নোপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।

শ্রীশ্রীলক্ষ্মী স্তোত্রম্
ত্রৈলোক্য পূজিতে দেবী কমলে বিষ্ণুবল্লভে।
যথাস্তং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভবময়ি স্থিরা।।
ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতি হরিপ্রিয়া।
পদ্মা পদ্মালয়া সম্পদ সৃষ্টি শ্রীপদ্মধারিণী।।
দ্বাদশৈতানি নামানি লক্ষ্মীং সম্পূজ্য যঃ পঠেত।
স্থিরা লক্ষ্মীর্ভবেৎ তস্য পুত্রদারারদিভিংসহ।।
(তিন বার পাঠ করতে হবে)

পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র
নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে।
যা গতিস্তং প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্বদর্চবাৎ।।

শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর প্রণাম মন্ত্র
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমোহস্তু তে।।

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা


কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা

                              (আরও পড়ুন- সূচিপত্র *   শ্রী শ্রী লক্ষ্মী দেবীর ব্রতকথা, * অষ্টলক্ষ্মী )                      'কোজাগরী' শব্দটির উৎপত্তি 'কো জাগতী' অর্থাৎ 'কে জেগে আছ? ' কথাটি থেকে। কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে সারারাত জেগে লক্ষ্মীদেবীর উপাসনা করা হয়। আর তাই এই লক্ষ্মীপূজাকে বলা হয় কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা। যার কিছু নেই সে পাওয়ার আশায় জাগে, আর যার আছে সে না হারানোর আশায় রাত জাগে । আর সারারাত জেগে লক্ষ্মীর আরাধনা করাই এই পুজোর বিশেষ আচার। কথিত আছে কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন দেবী লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা রাত্রে খোঁজ নেন - কে জেগে আছেন ? যে জেগে অক্ষক্রীড়া করে , লক্ষ্মী তাঁকে ধন সম্পদ দান করেন ।
       কৌমুদ্যাং পূজয়েল্লক্ষীমিন্দ্রমৈরাবতস্থিতম্।
        সুগন্ধির্নিশি সদ্বেশঃ অক্ষৈর্জাগরণং চরেৎ।।
        নিশীথে বরদা লক্ষ্মীঃ জাগরত্তীতিভাষিণী ।
তস্মৈ বিত্তং প্রযচ্ছামি অক্ষৈঃ ক্রীড়াং করোতি যঃ।।" (লিঙ্গ পুরাণ ) 
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজা প্রদোষের পুজো 
'প্রদোষ ব্যাপিনী গ্রাহ্যা তিথির্নক্তব্রতে সদা।
  প্রদোষোহ স্তময়াদুর্দ্ধঃ ঘটিকাদ্বয়মিষ্যতে।।'
অর্থাৎ সুর্যাস্ত হবার পরের দুই মুহুর্তকাল বা ১ ঘন্টা ৩৬ মিনিট, অথবা চার দণ্ড সময়কাল যা ২৪×৪ = ৯৬ মিনিট হলো প্রদোষকাল। 
তাহলে সুর্যাস্তের পরে এই ৯৬ মিনিটের মধ্যে যদি পূর্ণিমা থাকে বা প্রবেশ করে বা আংশিকও থাকে তাহলে এই সময়ের মধ্যেই কোজাগরী লক্ষীপুজা করতে হবে। 
 লক্ষ্মীপুজোয় যে আল্পনা দেওয়া হয়, তাতে মায়ের পায়ের ছাপও আঁকা হয়। বিশ্বাস ওই পথেই মা ঢুকবেন গৃহস্থের ঘরে।
কে এই লক্ষ্মী  ? 
                                                   পুরাণে আছে দুর্বাসা মুনি দেবরাজ ইন্দ্রকে একটি পারিজাতের মালা উপহার দেন। দেবরাজ অবজ্ঞাভরে সেই মালা নিজের বাহন ঐরাবতের গলায় পরিয়ে দেন। ঐরাবত তো হাতি-ই, আর হাতি তো মালার কদর বোঝে না। ঐরাবত শুঁড় দিয়ে মালা গলা হতে পায়ে ফেলে পদদলিত করে। তখন ঋষি দেবরাজ ইন্দ্রকে অভিশাপ দেন, - - "ক্ষমতা ও ধনের গর্বে গর্বিত হয়ে আমার দেওয়া মালা মাটিতে ফেলে দিলে, তাই তোমার ত্রিলোক এখন লক্ষ্মীছাড়া হবে।" ঋষিশাপে ইন্দ্রের ইন্দ্রপুরী হলো শ্রীহীন, লক্ষ্মীর আড়াল । লক্ষ্মী  প্রবেশ করলেন পাতালে ।
                                         সমুদ্র মন্থর সময় পর  উত্থিতা হলেন দেবী লক্ষ্মী । তার এক হাতে পদ্ম, আরেক হাতে অমৃতের কলস।  তিনি পদ্মাসনা আর বাহন শ্বেত পেঁচা । ইনি বিষ্ণু পত্নী। জ্যোৎস্না প্লাবিত এই পৃথিবীর হেমন্তে আসেন শুধু একটি রাতের অতিথি হয়ে।অপর মতে দেবী  ভৃগুর কন্যা, মায়ের নাম খ্যাতি। লক্ষ্মী চঞ্চা, - তবে ক্রোধী  নন।
 লক্ষ্মী পূজা 
                                                               গৃহস্থ তার লক্ষ্মীর ঝাঁপি করে লক্ষ্মীর পিঁড়ি পাতেন গৃহেরকোণে - বা কুলুঙ্গিতে। উপাচার তো সামান্যই। প্রতি বৃহস্পতিবারে (লক্ষ্মীবারে ) সামান্য ফুল-বাতাসা আর ধোয়া পিঁড়িতে চাল পিটুলির আলপনা। সেটাই একটু বড় আকারের এই কোজাগরীর রাতে। আগে আমাদের সমাজে বিশেষ করে গ্রামে দুর্গাপূজা নিয়ে এত মাতামাতি ছিল না। বরং কোজাগরী লক্ষ্মীপূজাই ছিল বড় উৎসব। এই উৎসবে মহিলারাই প্রধান। তারা আলপনা এঁকে লক্ষ্মীর ঝাঁপি সাজিয়ে বলেন :-
  ‘আঁকিলাম পদ দু’টি, তাই মাগো নিই লুটি।
দিবারাত পা দু’টি ধরি, বন্দনা করি।
 আঁকি মাগো আল্পনা, এই পূজা এই বন্দনা।’
 ‘আমি আঁকি পিটুলির গোলা, আমার হোক ধানের গোলা।
  আমি আঁকি পিটুলির বালা, আমার হোক সোনার বালা।’
  ‘আঁকিলাম আল্পনা, দূরে ফেলি আবর্জনা।
শুভ-শুদ্ধ মন নিয়ে, করি তব আরাধনা।’
পূজাপ্রণালী:-

প্রথমে মাথায় একটু গঙ্গাজল নিয়ে নারায়ণকে স্মরণ করে নিন। পূজার আগে মাথায় জল নিয়ে দেহ ও নারায়ণকে স্মরণ করে মন শুদ্ধ করে নেবেন। তারপর সূর্যের উদ্দেশ্যে একটু জল দিন। যে কোনো পূজার আগে আমাদের প্রাণশক্তির উৎস সূর্যকে জল দেওয়ার নিয়ম, তাই জল দেওয়ার জন্য ঠাকুরের সিংহাসনে একটি ছোটো তামার পাত্র সর্বদা রাখবেন। সূর্যের নাম করে সেই কুশীতে জল নিয়ে সেই তামার পাত্রে দেবেন। তারপর সংসারের সকলের মঙ্গলকামনা করবেন। এরপর একটু গঙ্গাজল আপনার পূজার আসন, পূজার ফুল-নৈবেদ্য ইত্যাদি উপকরণের উপর ছিটিয়ে দেবেন। এইভাবে পূজাদ্রব্যগুলিকে শুদ্ধ করে নিতে হয়।

এরপর লক্ষ্মীর সামনে সামান্য ধান ও এক চিমটি মাটি ছড়িয়ে দিয়ে তার উপর জলভরা ঘট স্থাপন করবেন। ঘটের গায়ে সিঁদুর দিয়ে মঙ্গলচিহ্ন এঁকে নিতে ভুলবেন না। ঘটে একটি আমপল্লব (যাতে বিজোড় সংখ্যায় আমপল্লব থাকে) ও তার উপর একটি কলা বা হরীতকী দিয়ে উপরে একটি ফুল দেবেন। ইচ্ছা করলে ঘটে ও লক্ষ্মীকে একটি করে মালাও পরাতে পারেন। এবার লক্ষ্মীকে ধ্যান করবেন। লক্ষ্মীর ধ্যানমন্ত্র হল—

নমঃ   পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-সৃণিভির্ষাম্য-সৌম্যয়োঃ।

পদ্মাসনাস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।।

গৌরবর্ণাং সুরুপাঞ্চ সর্বলঙ্কার-ভূষিতাম্।

রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।

মন্ত্রটি পাঠ করতে ভাল। নয়তো লক্ষ্মীর রূপটি চোখ বুজে মনে মনে খানিকক্ষণ চিন্তা করবেন। এরপর মা লক্ষ্মীকে আপনার ঘরে আবাহন করবেন। আবাহন মন্ত্রটি হল—

নমঃ লক্ষ্মীদেবী ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ ইহ সন্নিধেহি ইহ সন্নিরুদ্ধস্য অত্রাধিষ্ঠান কুরু মম পূজান গৃহাণ।

সংস্কৃতে মন্ত্র পড়তে অক্ষম হলে বাংলায় বলবেন,
এসো মা লক্ষ্মী, বসো মা লক্ষ্মী, যতক্ষণ তোমার পূজা করি, ততক্ষণ তুমি স্থির হয়ে থাকো মা।

তারপর ভাববেন, মা লক্ষ্মী আপনার হৃদয়ে এসে বসে আপনার দেওয়া ফুল-নৈবেদ্য গ্রহণ করছেন। একে বলে মানসপূজা।

এরপর আপনার পূজাদ্রব্যগুলি একে একে লক্ষ্মীকে দেবেন। লক্ষ্মী আপনার গৃহে পূজা নিতে এলেন, তাই প্রথমেই একটুখানি জল ঘটের পাশে লক্ষ্মীপদচিহ্নে দেবেন। এটি মা লক্ষ্মীর পা ধোয়ার জল। এরপর দুর্বা ও একটু আতপ চাল ঘটে দেবেন। এটি হল অর্ঘ্য। এর সঙ্গে একটি ফুলও দিতে পারেন। এরপর লক্ষ্মীকে একটি চন্দনের ফোঁটা দেবেন। লক্ষ্মীর প্রতিমা না থাকলে ফুলে চন্দন মাখিয়ে ঘটে দেবেন। এরপর লক্ষ্মীকে ফুল দেবেন। তারপর প্রথমে ধূপ ও তারপর প্রদীপ দেখাবেন। শেষে নৈবেদ্যগুলি নিবেদন করে দেবেন। তারপর ফুল দিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দেবেন। মন্ত্র—এষ সচন্দনপুষ্পাঞ্জলি নমঃ শ্রীং লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ।পুষ্পাঞ্জলি এক, তিন বা পাঁচ বার দিতে পারেন। পুষ্পাঞ্জলির পর নারায়ণের উদ্দেশ্যে একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা ঘটে দেবেন। তারপর ইন্দ্র ও কুবেরের নামে দুটি ফুলও ঘটে দেবেন। মা লক্ষ্মীর পেচককেও একটি ফুল দেবেন। আপনি যদি দীক্ষিত হন, তবে এরপর আপনার গুরুমন্ত্র যথাশক্তি জপ করে মা লক্ষ্মীর বাঁ হাতের উদ্দেশ্যে জপসমর্পণ করবেন। শেষে নিম্নোক্ত মন্ত্রে প্রণাম করবেন—

নমঃ   বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।

সর্বতঃ পাহি মাং দেবি মহালক্ষ্মী নমঽস্তু তে।।

মন্ত্র পড়তে অক্ষম হলে বিনা মন্ত্রেই ভক্তিভরে মা-কে প্রণাম করবেন। এরপর ব্রতকথা  পাঠ করবেন বা শুনবেন।
উপসংহার :-
                                             এই কোজাগরী লক্ষ্মী পূজায় অনেকে অক্ষক্রীড়া করেন  অর্থাৎ  এক শ্রেণির লোক এই দিন পাশা খেলার মাধ্যমে টাকা পয়সা বাজি রেখে জুয়া খেলায় মেতে ওঠেন । আবার কেউ কেউ এই দিন পরের বাগানের ফলমূল চুরি করে গাছপালা তছনছ করে । এই সব অর্থহীন কাজের মাধ্যমে তারা ভাবে যে লক্ষ্মী দেবী তাদের কৃপা করবেন । লক্ষ্মীপূজা আমাদের জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আসলে কেবল টাকাকড়িই ধন নয়। চরিত্রধন মানুষের মহাধন। যার টাকাকড়ি নেই সে যেমন লক্ষ্মীহীন, যার চরিত্রধন নেই সে তেমনি লক্ষ্মীছাড়া।  লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা কেন? কেউ কেউ বলেন, লক্ষ্মীর দেওয়া ধন যারা অপব্যবহার করে, তাদের কপালে লেখা আছে যমের দণ্ড—এই কথা ঘোষণা করে লক্ষ্মীর বাহন। তাই কথায় বলে, ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’। এছাড়া ধনসম্পত্তি, সে টাকাকড়ি হোক বা সাধনধনই হোক, সদাজাগ্রত অবস্থায় রক্ষা করতে হয়। রাতে সবাই যখন ঘুমায়, তখন পেঁচা জেগে থাকে। পেঁচাই সেই ধনসম্পদ পাহারা দেয়। লক্ষ্মী তাই বাঙালির কাছে সংযম, নিয়মানুবর্তিতা ও জাগরণ তথা উন্নয়নের প্রতীক।




শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৮

বিজয়া


শুভ বিজয়া 

যাসনে মা উমা যাসনে মা, উমা দন্ডদুয়েক থাক মা ঘরে,
তুই গেলে গো মা হরমনোরমা মন যে গো মা কেমন করে।
বছরের পর এলি উমা ঘর সঙ্গেতে শঙ্কর আনিলি ক্যানে !
সে পাগল ভোলা লয়ে ভূতচেলা ঘুরুক এবেলা শ্মশানে শ্মশানে।
কে বলে পার্বতী তোর পিতা মূঢ়মতি, - সে কি জানে কত হৃদয় বিদারে?
হইয়ে পাষান বিদরে পরাণ সঁপেছি পরাণ পাগলের করে;-
যদি যাস উমা পরাণপ্রতীমা কি পরাণ লয়ে থাকিব ঘরে?
নয়নের জলে পাষান বিগলে তবু কি গো টলে পাগলের হিয়া
সুব্রত বলে দেখ দ্বার খুলে সে পাগল ভোলা দুয়ারে বসিয়া।
আমার লেখা বিজয়ার গান। প্রথা ভেঙে এই গানে পিতৃহৃদয়ের যে ব্যাথা তা তুলে ধরা হয়েছে। এখানে মেনকা নন পাষান গিরিই উমার বিচ্ছেদ ভাবনায় কাতর। ) 

মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৮

Durga dhyaan - দুর্গাধ্যান

শ্রী শ্রী দুর্গা ধ্যান 

জটাজুট সমাযুক্তাং অর্ধেন্দু কৃতশেখরাম্।
লোচনত্রয় সংযুক্তাং পূর্ণেন্দু সদৃশাননাম্।।২।।
অতসীপুষ্প বর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাম্।
নবযৌবন সম্পন্নাং সর্ব্বাভরণ ভূষিতাম্।।৪।।

সূচারু দশনাং তদ্বৎ পীনোন্নত পয়োধরাম্।
ত্রিভঙ্গস্থান সংস্থানাং মহিসাসুরমর্দীনিম্।।৬।।
মৃণালায়াত সংস্পর্শ দশবাহু সমন্বিতাম্।
ত্রিশুলং দক্ষিণে ধ্যেয়ং খর্গং-চক্রং ক্রমাদধঃ।।৮।।

তীক্ষ্ণবাণং তথা শক্তিং দক্ষিণেষু বিচিন্তয়েৎ।
খেটকং পূর্ণচাপঞ্চ পাশমঙ্কুশমেব চ।।১০।।
ঘণ্টাং বা পরশুং বাপি বামতঃ সন্নিবেশয়েৎ।
অধস্থান মহিষং তদ্বৎবিশিরক্ষং প্রদর্শয়েৎ।।১২।।

শিরোচ্ছেদোদ্ভবং তদ্বৎ দানবং খর্গপাণিনম্।
হৃদি শুলেন নির্ভিন্নং নির্যদন্ত্র বিভূষিতম্।।১৪।।
রক্তারক্তী কৃতাঙ্গঞ্চ রক্তবিস্ফুরিতেক্ষণম্।
বেষ্টিতং নাগপাশেন ভ্রূকুটি ভীষণাননাম্।।১৬।।

সপাশ বামহস্তেন ধৃতকেশঞ্চ দুর্গয়া।
বমদ্রুধির বক্ত্রঞ্চ দেব্যা সিংহং প্রদর্শয়েৎ।।১৮।।
দেব্যাস্তু দক্ষিণাং পাদং সমং সিংহোপরিস্থিতম্।
কিঞ্চিৎ ঊর্ধ্বং তথা বামঅঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি।।২০।।
স্তুয়মানঞ্চ তদ্রূপ মমরৈঃ সন্নিবেশয়েৎ।
প্রসন্নবদনাং দেবীং সর্ব্বকাম ফলপ্রদাং।।২২।।

উগ্রচন্ডা প্রচন্ডা চ চন্ডোগ্রা চন্ডনায়িকা।
চন্ডা চন্ডবতী চৈব চন্ডরূপাতিচন্ডিকা।।২৪।।
অষ্টাভি শক্তিভিরষ্টাভিঃ সততং পরিবেষ্টিতাম্।
চিন্তয়েৎ জগতাং ধাত্রিং ধর্মকামার্থ মোক্ষদাম্।।২৬।।

ব্যাখ্যা

দেবীর মাথায় জটা, সাথে অর্ধচন্দ্রের মত কপাল। পূর্ণিমার চাঁদের মত মুখ তাঁর ও গায়ের রঙ অতসীফুলের মতো। তিনি সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত এবং তাঁর সর্বাঙ্গ বিভিন্ন অলঙ্কার দ্বারা ভূষিত। ।২-৪।

তাঁর দাঁত সুন্দর এবং ধারালো, স্তন সম্পূর্ণ। তিন ভাঁজে দাঁড়িয়ে তিনি দৈত্যনিধন করছেন। দশহাতভর্তি অস্ত্র তাঁর যা দেখতে শাখা-প্রশাখা সমন্বিত পদ্ম গাছের মতো। ডানদিকের উপরের হাতে অবস্থান করে ত্রিশুল, তারপর ক্রমান্বয়েখর্গ এবং চক্র। ।৬-৮।

দেবীর দক্ষিণের সর্বনিম্ন দুই হাতের অস্ত্র ধারালো তীর এবং বর্শা। দেবীর ধ্যানে বর্ণিত হয় তাঁর বাঁ হস্ত। সেদিকে সবচেয়ে নিচের হাতে থাকে চামড়ার ঢাল ও তার উপরের হাতে ধনুক। সেগুলির উপরের হাতে থাকে সর্প, অঙ্কুশ এবং কুঠার (ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে)। দেবীর পায়ের কাছে দৈত্যরাজের মাথার স্থান। ।১০-১২।

মহিষের কাটা মাথা থেকে মহিসাসুরের দেহ অর্ধেক উত্থাপিত, হাতে তাঁর খর্গ এবং হৃদয়ে দেবীর ত্রিশূল দ্বারা বিদ্ধ। তাঁর পেট থেকে নাড়িভূঁড়ি নির্গত হয়েছে। শরীর রক্তলিপ্ত। দেবীর হাতে ধরা সাপ দ্বারা অসুরের দেহ বেষ্টিত। তবে উত্থিত ভ্রূ তে দৈত্যের রূপও ভয়ঙ্কর। ।১৪-১৬।

দেবী তাঁর বাম হাত দিয়ে দৈত্যরাজের চুল টেনে রেখেছেন। দেবীর ডান পা বাহন সিংহের উপরে এবং বাঁ পা কিঞ্চিৎ উর্ধে মহিষের উপরে অবস্থান করে। প্রবল যুদ্ধরত অবস্থাতেও দেবী তাঁর শান্তিপূর্ণ মুখাবয়ব ও আশীর্বাদী রূপ বজায় রেখেছেন এবং সমস্ত দেবতা দেবীর এই রূপের স্তুতি করেন। ।১৮-২২।
                             
দেবীর উপরোক্ত রূপ দেবতাদের আট শক্তি উগ্রচন্ডা, প্রচন্ডা, চন্ডোগ্রা, চন্ডনায়িকা, চন্ডা, চন্ডবতী, চন্ডরূপ ও অতিচন্ডিকা দ্বারা পরিবেষ্টিত। গৃহকর্তার মানব জীবনের সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ করেন এই দেবী। তাই ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ লাভের জন্য জগন্মাতৃকা দেবী দুর্গার ধ্যানই মানবজাতির হওয়া উচিত। ।২৪-২৬।
নবদুর্গা 
ওঁ প্রথমং শৈলপুত্রী দ্বিতীয়ম ব্রহ্মচারিনী , তৃতীয় চন্দ্রঘনটে , কুস্মানডেতি চতুরথাকম , পঞ্চমম স্কন্দমাতেতি ,ষষ্ঠম কাত্যায়নী তথা , সপ্তমম কালরাত্রিতি মহাগৌরী , তিচাস্তমাম , নবমাম সিদ্ধিদ্ধাত্রিতি নবদুর্গা প্রকীতিতা ।