রবিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৮

Nabanya


                                                              বাঙালি যেমন কৃষিপ্রধান তেমনি উৎসব পাগলও। অপরদিকে বাঙালি আবার ভীষন ধর্মপ্রাণ। তাই ধর্ম, কৃষি, সংস্কৃতি ও আনন্দের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে বাঙালি তার উৎসবানুষ্ঠানের মাধ্যমে। কৃষিপ্রধান বাঙালির এইরকম একটি উৎসব হল নবান্ন । কার্তিক মাস হতে শুরু হয় ধান কাটা। অগ্রহায়ণ বা অঘ্রান মাসে নতুন চালের ভাত প্রথমে দেবতাকে উৎসর্গ করার উৎসবই নবান্ন ।
                পশ্চিমবঙ্গে নবান্ন সাধারণত অন্নপূর্ণা পূজার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। তবে ব্যতিক্রমও আছে। যেমন বীরভূমের তারাপীঠে নবান্ন হয় কার্তিক পূজার সঙ্গে। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে বিয়ের  পর কৈলাশ শিখরে শিব ও পার্বতী বেশ সুখেই দাম্পত্যজীবন কাটাচ্ছিলেন।  আর্থিক অনটনের জেরে  বেশ কিছুদিন পরই শুরু হয় দাম্পত্যকলহ। দারিদ্র্যের কারণে পার্বতীর সঙ্গে কলহে ঘর ছেড়ে ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করেন শিব। কিন্তু কোথাও ভিক্ষা না পেয়ে শেষে  কৈলাশে ফেরেন। পার্বতীর মায়ায় তিনি যে ভিক্ষে পাচ্ছিলেন না, তা ঘুমাক্ষরেও টের পাননি শিব। কাশীতে তখন পার্বতী মা অন্নপূর্ণা রুপে অন্ন বিতরন করছেন। ভোলানাথ দেবী অন্নপূর্ণার কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করেন। দেবী অন্নপূর্ণার হাতে রন্ধনকৃত  সঘৃত পালান্ন, পায়েস ইত্যাদি ভোজন করেন। এই ঘটনাকেই নবান্নের শুরু মনে করা হয়। মনে করা হয় নতুন চালের অন্ন দেবী অন্নপূর্ণাকে নিবেদন করলে দেবী সংসার ধনধান্যে পরিপূর্ণ রাখেন।
পশ্চিমবঙ্গে নবান্য রন্ধন, পূজা ও উৎসর্গে আবদ্ধ থাকলেও পূর্ববঙ্গ তথা অধুনা বাংলাদেশের নবান্নের অনেকগুলো অংশ আছে। সেগুলি হল-
লক্ষ্মী পূজা :-
পিতৃশ্রাদ্ধ:- পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বীরবাশ:- বাড়ির উঠানে গর্ত করে তাতে জ্যান্ত কই মাছ, দুধ দিয়ে মাঝে একটি বাঁশ পোতা হয়। চারপাশে আলপনা আঁকা হয়।
কাকবলি:- একটি কলার পাতায় নতুন চাল, কলা, নাড়ু ইত্যাদি কাককে খেতে দেওয়া হয়। মনে করা হয় কাকের মাধ্যমে মৃত আত্মারা (পূর্বপুরুষের ) ঐ খাবার খান।
সব অনুষ্ঠান হয়ে গেলে রন্ধনকরা খাদ্য দেবতাদের নিবেদন করে একসাথে খাওয়া দাওয়া হয়।
  নবান্নের খাদ্য তালিকা :- 
সকালে পূজার পর নতুন চালের গুঁড়ো / চাল সেদ্ধ, মাখার জন্য দুধ, চিনি, কিসমিস, ফলের টুকরো, মিষ্টি।
দুপুরে পাঁচ, সাত বা নয় রকমের ভাজা। যেমন- আলু-ভাজা, পটলভাজা, বেগুন ভাজা, আখ ভাজা, বড়িভাজা ইত্যাদি।
তরকারি, মুগের ডাল,মাছের পদ, টক, চাটনি পায়েস, মিষ্টি, পান। নবান্নে ডিম বা মাংস রান্না হয় না।
অনেক জায়গায় পরেরদিন রান্না করা হয় না।

                                               

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন