(আরও দেখুন - সূচিপত্র )
দীপাবলীর পর লাভ পঞ্চমীর পরদিন হিন্দুদের যে বড়ো উৎসব তা হল ছট পূজা। ছট্ অর্থাৎ ছটা যা কিনা সূর্যের রশ্মি। আবার সূর্যের পত্নীর নাম ছায়া - - যিনি 'ছট্ মাইয়া' নামে পরিচিত । এই উৎসব মূলত অবাঙ্গালীদের পালিত উৎসব। তুলারাশির শুক্লা চতুর্থী থেকে কার্তিক শুক্লা সপ্তমী এই চারদিন ধরে এই ব্রত পালন করা হয়।
দীপাবলীর পর লাভ পঞ্চমীর পরদিন হিন্দুদের যে বড়ো উৎসব তা হল ছট পূজা। ছট্ অর্থাৎ ছটা যা কিনা সূর্যের রশ্মি। আবার সূর্যের পত্নীর নাম ছায়া - - যিনি 'ছট্ মাইয়া' নামে পরিচিত । এই উৎসব মূলত অবাঙ্গালীদের পালিত উৎসব। তুলারাশির শুক্লা চতুর্থী থেকে কার্তিক শুক্লা সপ্তমী এই চারদিন ধরে এই ব্রত পালন করা হয়।
কথিত আছে ভগবান রামচন্দ্র সূর্যদেবের বংশধর। তাই তিনি চৌদ্দ বছর বনবাসে কাটিয়ে যখন অযোধ্যায় ফেরেন তখন তিনি এবং মা সীতা দুজনে সূর্যদেবের তপস্যার উপবাস রাখেন।
পরদিন ভোরে সেই উপবাস ভঙ্গ করেন। পরিবর্তীতে এই রীতি কে ছট পূজা বলা হয়।
কাহিনী :-১।। অথর্ববেদ অনুসারে মা ষষ্ঠী ভগবান সূর্য্যের ছোট বোন। তিনি প্রকৃতি দেবীর ষষ্ঠ অংশ হতে উৎপন্ন হয়েছেন। তাকে বাচ্চাদের রক্ষা করার জন্য সৃষ্ট ভগবান বিষ্ণুর মায়া বলেও বর্ননা করা হয়।
২।। এই ছট্ পূজার পেছনে একটা পৌরাণিক কাহিনী আছে। বর্ষায় বৃষ্টি তেমন হয়নি। মাঠের ফসল মাঠেই মারা যাচ্ছে। ঘরে ঘরে অন্নাভাব হাহাকার ওঠে। সূর্যের তাপ হ্রাস করে বাঁচার জন্য মা অন্নপূর্ণা সূর্যদেবের ধ্যান করতে শুরু করেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়। সূর্যের প্রখর ছটায় মা অন্নপূর্ণা দিন দিন শ্রীভ্রষ্টা হয়ে ক্ষীয়মান হতে থাকেন। দেবলোকে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দেবতারা সম্মিলিতভাবে সূর্যদেবের কাছে গেলে তিনি মা অন্নপূর্ণার এই দশার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, মা অন্নপূর্ণা যেন গঙ্গাদেবীর আশ্রয় নেন। সূর্যদেব আরও বলেন, অস্তগমনকালে গঙ্গাদেবীর আশ্রয়ে থেকে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতে এবং সপ্তমীর উদয়কালে মা অন্নপূর্ণা গঙ্গাদেবীর আশ্রয়ে থেকে উদীয়মান ছটা বা রশ্মিকে দেখে আমার স্তব বা দ্বাদশনাম উচ্চারণ করলে আমার স্মরণকারীকে অন্নের কষ্ট পেতে হবে না। এইভাবে ব্রত করে সমস্ত পৃথিবী অন্নে পরিপূর্ণ হল। মা অন্নপূর্ণা আবার তাঁর শ্রী ফিরে পেলেন ।
৩।। অন্য একটি গল্পে আছে রাজা প্রীয়ব্রত নিঃসন্তান ছিলেন। অনেক যজ্ঞ করে মহর্ষি কাশ্যপের দেওয়া 'ক্ষীর' খেয়ে রানী মালিনী গর্ভবতী হন। কিন্তু রানী মৃতসন্তান প্রসব করলে রাজা আত্মহত্যা করতে উদ্যত হন। তখন মা ষষ্ঠী ( ষষ্ঠী =ছয় =ছট ) এসে তাকে ছট পূজা করতে বলেন। রাজা ছট পূজার পর সন্তানের জীবন ফিরে পান। তখন তিনি সারা রাজ্যে এই পূজা ছড়িয়ে দেন। এখানে ছট তাই মা ষষ্ঠীর প্রতীকও।
৪।। মহাভারতের রাজা কর্ণ ছিলেন 'অঙ্গ' অর্থাৎ পূর্ববিহারের রাজা ।তিনি সূর্যের পুত্র ছিলেন ও সূর্যের পূজা করতেন। তার প্রচলিত সূর্যের পূজা 'ছট পরব' সারা বিহার ও উত্তরপ্রদেশে তাই বহুল প্রচলিত হয়।
৫।। মহাভারতের কাহিনী অনুসারে দ্রৌপদী তার পরিবারের দীর্ঘায়ু ও স্বাস্থ্য কামনা করে ছট পূজা করেন।
ব্রতের আচার :-
প্রথম দিন অর্থাৎ শুক্লা চতুর্থীর দিন স্নান সেরে শুদ্ধাচারে ভোজন করা হয় যা 'নাহায়-খায়' নামে পরিচিত।
দ্বিতীয় দিন হতে উপবাস শুরু হয়। সারাদিন নির্জলা উপবাসের পর ক্ষীর দিয়ে উপবাস ভাঙ্গ হয় যা 'খরনা' বা 'লোহণ্ডা' নামে পরিচিত ।
তৃতীয় দিন নিকটবর্তী জলাশয়ে গিয়ে অস্তায়মান সূর্য্যকে কাঁচা দুধের অর্ঘ্য দেওয়া হয়।
চতুর্থ তথা শেষদিনে জলাশয়ে গিয়ে উদীয়মান সূর্য্যকে অর্ঘ্য প্রদান করে উপবাসভঙ্গ করা হয়।
উপাচার:-
সাধারনত বাঁশের ঝুড়িতে করে উপাচারগুলি জলাশয়ে পূজার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আখ, ঝুনো নারকনা, কলা, বিভিন্ন ফল, মিষ্টি , ঠেকুয়া, লাড্ডু ইত্যাদি ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন