Vishwakarma विश्वकर्मा यन्त्र देवशिल्पी भाद्र व्रत पुजा লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
Vishwakarma विश्वकर्मा यन्त्र देवशिल्पी भाद्र व्रत पुजा লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বিশ্বকর্মা




দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা হলেন যন্ত্র ও শিল্পের দেবতা। পুরাণ মতে বিশ্বকর্মা  হলেন  বিশ্বের সকল কর্মের সম্পাদক।  বিশ্বকর্মা চতুর্ভুজ ও গজারূঢ়।বিষ্ণুপুরাণের মতে প্রভাসের ঔরসে বৃহস্পতির ভগিনীর গর্ভে বিশ্বকর্মার জন্ম হয়।  ইনি সর্বমেধ-যজ্ঞে নিজেকে নিজের কাছে বলি দেন। 

শুক্ল যজুর্বেদের অধ্যায় ১ মন্ত্র ৪ এ বলা হয়েছে - 

সা বিশ্বায়ুঃ, সা বিশ্বকর্মা, সা বিশ্বধায়াঃ।
ইন্দস্য ত্বা ভাগং সোমেনা-তনচ্মি।
বিষ্ণো হব্যং রক্ষ।

অর্থাৎ তিনি বিশ্যবায়ু অর্থাৎ জগতের প্রাণ বা সামান্যার্থে দীর্ঘায়ু, তিনি শিল্পবিদ্যার জনক এবং  সমগ্র ক্রিয়াকাণ্ড সম্পাদক, সর্ববিদ্যার প্রকাশক ও বিশ্বধারক।

ইনি একাধারে বিষ্ণু ও ইন্দ্রের সাথে সম্পৃক্ত।


                            তিনি শিল্পসমূহের প্রকাশক, অলঙ্কার শিল্পের স্রষ্টা, দেবতাদের গমনাগমনের জন্য বিমান নির্মাতা ইত্যাদি। অর্থাৎ শিল্পবিদ্যায় তাঁর একচ্ছত্র অধিকার। তাই যাঁরা শিল্পকর্মে পারদর্শিতা লাভ করতে চান, তাঁরা বিশ্বকর্মার অনুগ্রহ কামনা করেন। এঁর চক্ষু, মুখমণ্ডল, বাহু  ও পা সর্বদিক বিদ্যমান। বাহু ও পায়ের সাহায্যে তিনি স্বর্গ ও মর্ত্য নির্মাণ করেন। তিনি শিল্পসমূহের প্রকাশক ও অলঙ্কারের স্রষ্টা, দেবতাদের বিমান-নির্মাতা। এঁর কৃপায় মানুষ শিল্পপকলায় পারদর্শিতা লাভ করে। 
                                  রাবণের অপূর্ব শোভা ও সম্পদবিশিষ্ট লঙ্কা নগরীর নির্মান করেক স্বয়ং  বিশ্বকর্মা । তিনি উপবেদ, স্থাপত্যবেদ ও চতুঃষষ্টিকলারও প্রকাশক। দেবশিল্পিরূপে তিনি দেবপুরী, দেবাস্ত্র ইত্যাদিরও নির্মাতা।তিনি ইন্দ্র ,  যম ও বরুণের রাজসভারা নির্মাণ করেন।জনশ্রুতি আছে যে, পুরীর প্রসিদ্ধ জগন্নাথমূর্তিও বিশ্বকর্মা নির্মাণ করেন।

বিশ্বকর্মা রামের সেতু বন্ধনের জন্য নলকে সৃষ্টি করেন। পুরাণ অনুসারে তিনি ত্বষ্টার শক্তি আত্মীভূত করেন বলে তাকে ত্বষ্টা ও বলা হয়। বিশ্বকর্মার কন্যার নাম সংজ্ঞা । তিনি এই কন্যাকে সুর্যের সাথে বিবাহ দেন। সংজ্ঞা সুর্যের প্রখর তাপ সহ্য করতে না পারায়, ইনি সুর্যকে শানচক্রে স্থাপন করে তাঁর উজ্জ্বলতার এক অষ্টমাংশ কেটে ফেলেন। এই কর্তিত অংশের  দ্বারা তিনি  বিষ্ণুর সুদর্শনচক্র, শিবের ত্রিশূল, কুবেরের  অস্ত্র, কার্তিকেয়ের শক্তি ও অন্যান্য দেবতাদের অস্ত্রশস্ত্রাদি নির্মাণ করেন।
    বিশ্বকর্মার প্রনাম মন্ত্র :-
                  দংশপালঃ মহাবীরঃ সুচিত্রঃ কর্মকারকঃ।                        বিশ্বকৃৎ বিশ্বধৃকতঞ্চ বাসনামানো দণ্ডধৃক।।
                  ওঁ বিশ্বকর্মণে নমঃ।
                      
                       হভাদ্রমাসের সংক্রান্তিতে কলকারখানায় বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে বিশ্বকর্মার পূজা অনুষ্ঠিত হয়।এইদিনে সমস্ত যানবাহন ও যন্ত্রাদি বিশ্বকর্মা রুপে পুজিত হয়। দুপুরে মাংস-ভাত খেয়ে বিকালে ঘুড়ি ওড়ায় আপামর বাঙালি। 

  প্রনাম মন্ত্র 
                    দেবশিল্পী মহাভাগ দেবানাং কার্য্যসাধক।  
                     বিশ্বকর্মা নমস্তুভ্যং  সর্বাভীষ্টপ্রদায়ক।।

বিশ্বকর্মার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র —

ফুলচন্দন দূর্বা তুলসী পাতা বেলপাতা হাতে করে নিয়ে করজোরে নিচের মন্ত্রগুলি পাঠ করবেন।

দেবশিল্পীন্ মহাভাগ দেবানাং কার্যসাধকঃ। পূজাং গৃহাণ বিধিবৎ কল্যাণং কুরু মে সদা৷৷

প্রনাম করে বিশ্বকর্মার চরণে বা ঘটে বিশ্বকর্মার পুষ্পাঞ্জলি দিবেন, তারপর আবার ফুলচন্দন দূর্বা তুলসী পাতা বেলপাতা হাতে করে নিয়ে হাতজোড় করে দ্বিতীয় মন্ত্রটি পাঠ করবেন।

আয়ুৰ্যশঃ বলং দেহি শিল্পে দেহি শুভাং মতি। ধনং দেহি যশো দেহি বিশ্বকৰ্ম্মণ প্রসীদ মে৷৷

আবার প্রনাম করে বিশ্বকর্মার চরণে বা ঘটে পুষ্পাঞ্জলি দিবেন, তারপর আবার ফুলচন্দন দূর্বা তুলসী পাতা বেলপাতা হাতে করে নিয়ে হাতজোড় করে তৃতীয় মন্ত্রটি পাঠ করবেন।

শিল্পাচার্য্যং নমস্তুভ্যং নানালঙ্কার ভূষিতম্। মম বিঘ্নবিনাশায় কল্যাণং কুরু মে সদা ৷৷

এইভাবে বিশ্বকর্মার চরণে বা ঘটে তিনবার পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করবেন এবং তারপর ভগবান বিশ্বকর্মার প্রনাম মন্ত্র পাঠ পূর্বক প্রণাম করবেন।


বিশ্বকর্মার ব্রতকথা :-
কাশী শহরে একজন সুত ছিলেন। তিনি রথের সাহায্যে মানুষকে এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতেন। ফলে তাকে এক দেশ হতে অন্য দেশের ভ্রমন করতে হতো। সংসার চালিনোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হতো তাকে। কিন্তু এই কঠোর পরিশ্রম করা সত্ত্বেও তাঁর এবং পরিবারে দারিদ্রতা যেন কাটতেই চাইত না। মাসের পর মাস পরিশ্রম করেও দিনের আহার ছাড়া অতিরিক্ত ধন সম্পত্তি সঞ্চয় হত না।

অন্যদিকে তার ঘর ছিল শূন্য। এত বছরের বৈবাহিক জীবনে সন্তানসুখ প্রাপ্তি ঘটেনথা তাদের। ফলে তার ও তার স্ত্রীর মনে সুখ ছিল না মোটেও। আর এই সন্তান প্রাপ্তির আশাতে দুজনে বিভিন্ন তীর্থস্থানে তীর্থস্থানে গিয়ে মানত উপবাস করতেন। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। 

একদিন এভাবেই এক তীর্থে এক সাধুর সাথে দেখা হয়। সেই সাধু তাদের ভাদ্রমাসের সংক্রান্তি পালন করার কথা বলেন। বলেন সেদিনে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার পূজো করার কথা। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সন্তান প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক সমস্যাও দূরীভূত হবে। বাবা বিশ্বকর্মার কৃপায় সন্তান প্রাপ্তি তো হবেই সাথে ধন সম্পদ ও শ্রী বৃদ্ধি পাবে। 

এরপর সেই সুত স্বামী স্ত্রী দুজনায় মিলিতভাবে খুব ধুমধাম সহকারে ভাদ্র সংক্রান্তের দিন বাবা বিশ্বকর্মার পূজা করলেন। অল্প দিনের মধ্যেই তাদের সংসারের সমস্ত দারিদ্রতা দূর হলো। রথ চালানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজের একটি কারখানাও খুললেন রথচালক। এবং যথাসময়ে তাদের সংসারে একটি সুন্দর ফুটফুটে পুত্র সন্তান এল। 

এরপর থেকেই যন্ত্র যানবাহন পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা তাদের ব্যবসা এবং কর্মস্থলে বিশ্বকর্মা দেবের কৃপাপ্রাপ্তির আশাতে নিয়মিত প্রত্যেক বছর বিশ্বকর্মা পূজার আয়োজন করেন। এইভাবে বিশ্বকর্মা পূজার প্রচলন হয়।