সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৯

Shiva stuti

শিবস্ততি 


হর হর হর গঙ্গাধর চন্দ্রচূড় শঙ্কর 
পিনাকধর বাঘাম্বর উমেশ্বর দয়া কর। 
ভূতনাথ ত্রিদশনাথ দীননাথ দয়াল হে
আশুতোষ ক্ষণরোষ হরদোষ কৃপাময়ে । 
জটাজাল কপালমাল মহাকাল উমাপতে 
সোমনাথ গণনাথ বিশ্বনাথ নমোস্তুতে। 
নাগেশ্বর প্রলয়ঙ্কর ভীমেশ্বর পাহিমে 
দোষহর গ্রীবাগর রক্ষাকর দেবহে ।
রজতগিরি সমান তণু চন্দ্রচাপ শিখরে 
প্রসন্নানন চতুর্ভুজ নিখিলভয় হরন করে। 
পরশুধর বরাভীতি হর ত্র্যম্বক হে সুন্দর 
জগদ্বীজ আদি প্রভূ হে কৃত্তিবাস যশস্কর।
বন্দে চরণ সুরাসুর মুনিগনজন মানবে 
শীতল অমিয় তুমি প্রভূ হে সুব্রত হৃদিবাড়বে।। 

শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯

Shivaratri brata

           
                                   শিবরাত্রি
                     ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশীতে মহা শিবরাত্রির ব্রত পালন করা হয়। পুরাণ অনুসারে ভক্তি ও নিষ্ঠার সঙ্গে শিবরাত্রি পালন করলে রজোঃগুণ ও তমঃগুণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। মহা শিবরাত্রির রাতে  সোমনাথ,  মল্লিকার্জুন, মহাকালেশ্বর, ওঙ্কারেশ্বর,কেদারনাথ, ভিমশঙ্কর,বিশ্বেশ্বর,ত্র্যম্বকেশ্বর, বৈদ্যনাথ, নাগেশ্বর, রামেশ্বর এবং ঘুশ্মেশ্বর - - এই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ সেজে ওঠে। যথাবিহিত মর্যাদাসহকারে এই দিন শিবরাত্রির ব্রত উদযাপিত হয়।
শিবরাত্রি ব্রতের প্রয়োজনীয় দ্রব্য : –
সিদ্ধি, তিল, হরিতকী, ফুল, দূর্ব্বা, ধুতরাফুল, বিল্বপত্র, ধূপ, দীপ, ধুনা, দধি, দুগ্ধ, ঘৃত, চিনি, মধু, শিবের ধুতি ১, দূর্গার শাটী ১, আসনাঙ্গুরীয়ক ২, মধুপর্কের বাটী ২, নৈবেদ্য ৮, কুচা নৈবেদ্য ১, যথাসাধ্য পুরোহিত দক্ষিণা।
আরো পড়ুন:-
দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ
শিবস্তুতি
উমর-বিন-হাসনান দ্বারা স্তোত্রম
শিবমহিম্ন স্তোত্র
ব্রতের নিয়ম :-
শিবরাত্রির আগের দিন হবিষ্যান্ন গ্রহন করে  রাতে বিছানায় না শুয়ে  খড় বা কম্বলে শুতে হয়। ব্রতের দিন উপবাসী থেকে গঙ্গামাটি দিয়ে চারটি শিব গড়ে চার প্রহরে একটি করে শিবের পুজা করতে হয়।  প্রতিষ্ঠিত শিব থাকলে তাতেই পুজা করতে হয় চার প্রহরে চার বার। প্রথম প্রহরে দুগ্ধ দ্বারা, দ্বিতীয় প্রহরে দধি দিয়ে, তৃতীয় প্রহরে ঘৃত দিয়ে ও চতুর্থ প্রহরে মধু দিয়ে স্নান করাতে হয়। সেদিন সারারাত্রি জাগরণ করে পরদিন ব্রতকথা শুনে, ব্রাহ্মণ ভোজন করিয়ে ও সাধ্যমত দক্ষিণা দান করে পারণ করতে হয়।
ব্রতের ফলঃ- 
একাধারে তিনি পঞ্চানন, তাঁর পাঁচটি আনন বা মুখ, আর তিনটি নয়ন। যেটি  কপালে থাকে,সেই নয়নটি গ্যানের নয়ন।তিনি ব্রমহান্দের সৃষ্টি কর্তা,জীবের নিওয়ান্তা।তিনি স্বয়ম্ভু।তিনি আবার ধ্বংসে র অধিকর্তা।এঁর প্রধান অস্ত্র ত্রিশুল। মহাপ্রলয়ে কালে ইনি ডমরু বাজিয়ে ধ্বংসের সূচনা করেন।তিনি মহাযোগী সন্ন্যাসী,সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী, নির্গুণ ধ্যানের প্রতীক।
মহাদেব বলেন, "ব্রতপালনকারী ত্রয়োদশীতে স্নান করে সংযম পালন করবে। স্বপক্ষ নিরামিষ বা হবিষ্যান্ন ভোজন করবে। ভূমি বা বালি বিছানো যজ্ঞবেদী অথবা কুশ বিছিয়ে শয়ন করে আমার  নাম স্মরণ করতে থাকবে। রাত্রি শেষ হলে শয্যা ত্যাগ করে প্রাতঃ ক্রিয়াদি করবে অন্যান্য আবশ্যক কার্যাদি করবে। সন্ধ্যায় যথাবিধি পূজাদি করে বিল্বপত্র সংগ্রহ করবে। তারপর নিত্যক্রিয়াদি করবে। অতঃপর  বিল্বপত্র দিয়ে আমার পূজা করবে। একটি বিল্বপত্র দ্বারা পূজা করলে আমার যে প্রীতি জন্মে, সকল প্রকার পুষ্প একত্র করে কিংবা মণি, মুক্তা, প্রবাল বা স্বর্ণনির্মিত পুষ্প দিয়ে আমার পূজা করলেও, আমার তার সমান প্রীতি জন্মে না। প্রহরে প্রহরে বিশেষভাবে স্নান করিয়ে আমার পূজা করবে। পুষ্প, গন্ধ, ধূপাদি দ্বার যথোচিত অর্চনা করবে। প্রথম প্রহরে দুগ্ধ, দ্বিতীয় প্রহরে দধি, তৃতীয় প্রহরে ঘৃত এবং চতুর্থ প্রহরে মধু দিয়ে আমাকে স্নান করাবে এবং পূজা করবে। এছাড়া যথাশক্তি নৃত্যগীতাদি দ্বারা আমার প্রীতি সম্পাদন করবে।"
হে দেবী, এই হলো আমার প্রীতিকর ব্রত। এ ব্রত করলে অপস্যা ও যজ্ঞের পূণ্য লাভ হয় এবং ষোল কলায় দক্ষতা জন্মে। এ ব্রতের প্রভাবে সিদ্ধি লাভ হয়। অভিলাষী ব্যক্তি সপ্তদীপা পৃথিবীর অধীশ্বর হয়।যজ্ঞের মধ্যে যেমন অশ্বমেধ যজ্ঞ , তীর্থের মধ্যে যেমন যেমন গঙ্গা , তেমনি ব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্রত হল শিব চতুর্দশী ব্রত। শিব চতুর্দশী ব্রত পালন করলে ধর্ম, অর্থ , কাম , মোক্ষ চতুর্বিধ ফল লাভ হয়ে থাকে।
এই ব্রত পালণের মন্ত্র-
সংসার ক্লেশদগ্ধস্য  ব্রতেনানেন শঙ্কর। প্রসীদ, সুমুখো নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদ ভব।।
ॐ নমঃ শিবায় ( তিন বার)
**  দ্বিজাতি ভিন্ন অন্যেরা ॐ উচ্চারণ করবেন না।
ব্রতকথা :-
একবার কৈলাশশিখরে শিব ও পার্বতী নির্জনে গল্প করছিলেন । কথা প্রসঙ্গে পার্বতী শিবকে প্রশ্ন করলেন, "ভগবান, আপনি ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষের  দাতা। আপনি কোন ব্রত বা তপস্যায় সন্তুষ্ট হন ?" দেবী পার্বতীর কথা শুনে শিব বললেন, "হে দেবী, ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথীর রাত্রিকে মহা শিবরাত্রি বলা হয়। এই রাত্রিতে উপবাস করলে আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হই। স্নান, বস্ত্র, ধূপ, পুষ্প ও অর্চনায় আমি যতটুকু সন্তুষ্ট হই তার চেয়ে বেশি সন্তুষ্ট হই শিবরাত্রির উপবাসে।"
শিব পার্বতীকে আরও বলেন, এবার শিবচতুদর্শী তিথির মাহাত্ম্য বলছি, শোন।
একবার বারাণসীতে  ভয়ঙ্কর এক ব্যাধ জন্ম নিয়েছিল ।  নিষ্ঠুর সেই ব্যাধ ফাঁদ, জাল, দড়ির ফাঁস ইত্যাদি সহকারে  প্রাণীদের হত্যা করত।
একদিন সে বনে গিয়ে অনেক পশু হত্যা করল। তারপর নিহত পশুদের মাংসভার নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হলো। পথে শ্রান্ত হয়ে সে বনের মধ্যে বিশ্রামের জন্য একটি বৃক্ষমূলে শয়ন করলো এবং একটু পরেই নিদ্রিত হলো।
 রাত্রকালে ব্যাধ জেগে উঠল। ঘোর অন্ধকারে কোনো কিছুই কারও দৃষ্টিগোচর হলো না। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে সে একটি শ্রীফলবৃক্ষ অর্থাৎ বিল্ববৃক্ষ পেল। সেই বিল্ববৃক্ষে সে লতা দিয়ে তার মাংসভার বেঁধে রাখল। বৃক্ষতলে হিংশ্র জন্তুর ভয় আছে। এই ভেবে সে নিজেও ঐ বিল্ববৃক্ষে উঠে পড়ল। শীতে ও ক্ষুধায় তার শরীর কাঁপতে লাগল। এভাবে সে শিশিরে ভিজেই জেগে কাটাল সারা রাত।
দৈববশত সেই বিল্ববৃক্ষমূলে ছিল আমার (অর্থাৎ শিবের) একটি প্রতীক। তিথিটি ছিল শিবচতুর্দশী। আর ব্যাধও সেই রাত্রি কাটিয়েছিল উপবাসে। তার শরীর থেকে আমার প্রতীকের ওপর হিম বা শিশির ঝরে পড়েছিল। তার শরীরের ঝাঁকুনিতে বিল্বপত্র পড়েছিল আমার প্রতীকের ওপর। এভাবে উপবাসে বিল্বপত্র প্রদানে এবং শিশিরস্নানে নিজের অজান্তেই ব্যাধ শিবরাত্রিব্রত করে ফেলল। দেবী, তিথিমাহাত্মে কেবল বিল্বপত্রে আমার যে প্রীতি হয়েছিল, স্নান, পূজা বা নৈবেদ্যদি দিয়েও সে প্রীতি সম্পাদন সম্ভব নয়। তিথি মাহাত্মে ব্যাধ মহাপূণ্য লাভ করেছিল। পরদিন উজ্জল প্রভাতে ব্যাধ নিজের বাড়িতে চলে গেল।
কালক্রমে ব্যাধের আয়ু শেষ হলো। যমদূত তার আত্মাকে নিতে এসে তাকে যথারীতি যমপাশে বেঁধে ফেলতে উদ্যত হলো। অন্যদিকে আমার প্রেরিত দূত ব্যাধকে শিবলোকে নিয়ে এল। আর আমার দূতের দ্বারা আহত হয়ে যমদূত যমরাজকে নিয়ে আমার পুরদ্বারে উপস্থিত হলো। দ্বারে শিবের অনুচর নন্দীকে দেখে যম তাকে সব ঘটনা বললেন। এই ব্যাধ সারা জীবন ধরে কুকর্ম করেছে। জানালেন যম।
তার কথা শুনে নন্দী বললেন, ধর্মরাজ, এতে কোনো সন্দেহই নেই যে ঐ ব্যাধ দুরাত্মা। সে সারা জীবন অবশ্যই পাপ করেছে। কিন্তু শিবরাত্রি ব্রতের মাহাত্মে সে পাপমুক্ত হয়েছে এবং সর্বেশ্বর শিবের কৃপা লাভ করে শিবলোকে এসেছে।
নন্দীর কথা শুনে বিস্মিত হলেন ধর্মরাজ। তিনি শিবের মাহাত্মর কথা ভাবতে ভাবতে যমপুরীতে চলে গেল। শিব পার্বতীকে আরও বলেলেন, এই হলো শিবরাত্রিব্রতের মাহাত্ম। শিবের কথা শুনে শিবজায়া হিমালয় কন্যা পার্বতী বিস্মিত হলেন। তিথি শিবরাত্রিব্রতের মাহাত্ম্য নিকটজনের কাছে বর্ণনা করলেন। তারা আবার তা ভক্তি ভরে জানালেন পৃথিবীর বিভিন্ন রাজাকে। এভাবে শিবরাত্রিব্রত পৃথিবীতে প্রচলিত হলো।

শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

Shitala sasthi & makuri saptami

শীতলা ষষ্ঠী ও মাকুড়ি সপ্তমী

সূর্য্য যখন মকর রাশিতে থাকে তখন শুক্লপক্ষের সপ্তমী
তিথিকে মাকুড়ি সপ্তমী বলা হয়। সাধারণত সরস্বতী পুজো হয় পঞ্চমীতে। আর তার পরের দিন শীতলা ষষ্ঠী। শীতলা ষষ্ঠীর পরদিনই মাকুড়ি সপ্তমী।
শীতলা ষষ্ঠী :-
 শিলের নীচে নোড়া রেখে  হলুদে ছাপানো কাপড়  মুড়ে রাখা হয় । এরপর সেই শীলকে  পুজো করে দই-হলুদের ফোঁটা লাগিয়ে দেওয়া হয় সন্তানের কপালে । দুপুরে শীতলা ষষ্ঠীর ভোগ-পান্তা ভাত, তেল, পাঁচরকমের ভাজা, বিভিন্ন তরকারি, গোটা সেদ্ধ, আগের দিন বেঁটে রাখা পোস্ত, লঙ্কা ভাজা দিয়ে জব্বর খ্যাটন । এবার আসা যাক গোটা সিদ্ধর  প্রক্রিয়ায়—বেতো শাক, গোটা মুগ,কালোকলাই, গোটা শিম, গোটা আলু (অবশ্যই নতুন), সাদা বেগুন দিয়ে সেদ্ধ করা হয় । অনেক জায়গায় সেদ্ধতে গাছশুদ্ধ রসুন ও লঙ্কা দেওয়া হয়। এই সেদ্ধ দিয়ে মুড়ি খাওয়াটা রাঢ়বঙ্গের বিশেষ পার্বন।
দেবী শীতলা :-
এদিনের নাম শীতলা ষষ্ঠী হওয়ার আরেকটি কারণ এদিন মা শীতলার পূজা করা হয়। দেবী একদা কাত্যায়ন নামে এক ঋষির কন্যা কাত্যায়নী নামে জন্মগ্রহণ করেন।  তখন জ্বরাসুর নামের এক দানব এমন এক জ্বর ছড়াতে শুরু করে । কাত্যায়নীর সঙ্গীসাথীরা সেই জ্বরে আক্রান্ত হয়। সেই সঙ্গে দেখা দেয় কলেরা, বসন্ত ইত্যাদির মতো রোগও। কাত্যায়নী তাঁর দৈবশক্তি দিয়ে বেশ কিছু বন্ধুর অসুখ নিরাময় করেন। কিন্তু সেই রোগগুলিকে একেবারে নির্মূল করা যায়নি। তখনই কাত্যায়নী দেবী শীতলার রূপ ধারণ করেন। 
শীতলার চার হাত। এক হাতে ঝাঁটা, এক হাতে জলপূর্ণ পাত্র, অন্য হাতে একটা হাতপাখা এবং বাকি হাতে একটি ঔষধের পাত্র। স্কন্দপুরাণের পিচ্ছিলাতন্ত্রে শীতলা শ্বেতবর্ণা, গর্দভবাহিনী, দুই হাতে পূর্ণকুম্ভ ও সম্মার্জনীধারিণী হিসেবে বর্ণিত হয়েছেন। সম্মার্জনীর দ্বারা অমৃতময় জল ছিটিয়ে তিনি রোগ-তাপ দূর করে শান্তি স্থাপন করেন বলে ভক্তরা বিশ্বাস করে। তিনি এই রূপ ধারণ করে রোগ নিরাময় শুরু করেন ও তাঁর এক সহচর বটুককে পাঠান জ্বরাসুরকে মোকাবিলা করতে। কিন্তু বটুককে পরাস্ত করে হত্যা করে জ্বরাসুর। বটুকের মৃতদেহ মুহূর্তে ধুলোয় মিশে যায়। কিন্তু তার ক্ষণিক পরেই বটুক ভৈরব মূর্তি ধারণ করে আবির্ভূত হয়। ঘোর কৃষ্ণবর্ণ বটুকভৈরব তাঁর ত্রিশূল দিয়ে জ্বরাসুরকে হত্যা করেন। শীতলা-বটুকভৈরব-জ্বরাসুরের এই কাহিনি পরে অন্য রূপ নিতে শুরু করে। শীতলার হাতের জলপূর্ণ পাত্রকে ধরা হতে থাকে বসন্ত রোগের বিষপূর্ণ পাত্র। চতুর্ভুজা শীতলাকে দ্বিভুজা হিসেবেও চিত্রিত করা শুরু হয়। তাঁর এক হাতে ঝাঁটা ও অন্য হাতে বিষপাত্র। কল্পনা করা হয়, তিনিই একহাতে রোগ ছড়ান ও অন্য হাতে তা ঝাঁটা দিয়ে দূর করেন। মহাযান বৌদ্ধ ধর্মে শীতলাকে দেবী পর্ণশর্বরীর সঙ্গিনী হিসেবে কল্পনা করা হতে থাকে। পর্ণশর্বরী রোগব্যাধির দেবী। বজ্রযানী মতে, তিনি আবার দেবী তারার সঙ্গিনী। পাল যুগ থেকে বাংলায় শীতলা মূর্তির সঙ্গী হতে শুরু করে জ্বরাসুর। শীতলা কাল্টে আজ জ্বরাসুর নেই।
মাকুড়ি সপ্তমী :-
এদিন কন্যা সন্তানদের (অনেক ক্ষেত্রে ছেলেদের ও ) কান ফুটো করে মাকুড়ি পরানো হয় বলে একে মাকুড়ি সপ্তমী বলে। উত্তর ভারতে একে রথ আরোগ্য সপ্তমী বা অচলা সপ্তমী বা সূর্য্যসপ্তমী বলা হয়।
অচলা সপ্তমী ব্রতকথা :-
একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুত্র শাম্ব নিজের শক্তির দম্ভে মত্ত হয়ে উঠেছিল। একদিন ঋষি দুর্বাশা শ্রীকৃষ্ণের সাথে দেখা করতে এলে তপোক্লিষ্ট ঋষির শরীর নিয়ে উপহাস করেন। তখন ঋষি দুর্বাশা রেগে গিয়ে শাম্বকে কুষ্ঠরোগাক্রান্ত হবার শাপ দেন। শাম্বের এই অবস্থা দেখে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শাম্বকে ভগবান সূর্য্যের উপাসনা করার নির্দেশ দেন। পিতার আজ্ঞা মেনে নিয়ে শাম্ব ভগবান সূর্য্যের উপাসনা আরম্ভ করেন। এর ফলে সূর্যের বরে শাম্ব কুষ্ঠরোগমুক্ত হন।
এই অচলা সপ্তমীর দিনেই শাম্ব কুষ্ঠরোগমুক্ত হন বলে এদিন মানুষ ভগবান সূর্য্যের আরাধনা করেন । এই ব্রতের ফলে ধন, পুত্র ও আরোগ্য প্রাপ্তি হয়। এই ব্রত করলে শারীরিক দূর্বলতা, হাড়ের দূর্বলতা ও জয়েন্টের ব্যাথা দূর হয় বলে বিশ্বাস। এছাড়াও এই ব্রতের প্রভাবে কুষ্ঠের মতো চর্মরোগ নাশ হয় বলে বিশ্বাস।

বুধবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৯

Netaji - bengali poem

      নেতাজী 
  সুব্রত মজুমদার 

ডুবেছিল লাল রবি ঐ পূতঃ গঙ্গায়, - 
গোরাদের বেয়নেট চকমক চমকায় ।
ওঠে রব কলরব উষ্ণ এ শিরাতে 
ঘুম নেই, ঘুম নেই আঁধেরা এ রাতে। 
হঠাৎ উঠল রবি উড়িয়ার কটকে,
রাখবি আটকে তারে জেলে কিবা ফাটকে ? 
দেখ ছুড়ে ফেলে দেয় বিদেশীর নোকরি
গর্জায় সিংহ, - ভয় পায় বখরি। 
ভয় পায় ইংরেজ  সুভাষের দাহাড়ে, 
'জয় হিন্দ' ধ্বনি ওঠে ইম্ফল পাহাড়ে। 
একপাশে নেতাজীর যত বীর  সেনানী 
আর দিকে মার্কিন ব্রিটিশের কাঁপুনি। 
'দাও খুন দাও খুন, আমি দেব আজাদী' - 
হাঁকে বীর ; - স্হির থাকে দিল্লির রাজা কি ? 
শহীদ স্বরাজ দ্বীপে  তিরঙ্গা উড়িয়ে 
বাংলার ছেলে গেল এ হৃদয়ে হারিয়ে। 
দেশের সবার হিয়ে এক নাম - 'নেতাজী' 
চোখেতে দেখিনি তবু হৃদয়েতে দেখেছি।।

সোমবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৯

Makar sankranti


মকর সংক্রান্তি 

পৌষ মাসের শেষ দিনটিকে বলা হয় মকর সংক্রান্তি। এই দিনে  সূর্য্য মকর রাশিতে প্রবেশ করে। হিন্দু জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী 'সংক্রান্তি' একটি সংস্কৃত শব্দ, এর দ্বারা সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝানো হয়ে থাকে। ১২টি রাশি অনুযায়ী এ রকম সর্বমোট ১২টি সংক্রান্তি রয়েছে। সূর্যাদির এক রাশি হতে অন্য রাশিতে সঞ্চার বা গমন করাকেও সংক্রান্তি বলা যায়। সংক্রান্তি শব্দটি বিশ্লেষণ করলেও একই অর্থ পাওয়া যায়; সং+ক্রান্তি, সং অর্থ সঙ সাজা এবং ক্রান্তি অর্থ সংক্রমণ। অর্থাৎ ভিন্ন রূপে সেজে অন্যত্র সংক্রমিত হওয়া বা নুতন সাজে, নুতন রূপে অন্যত্র সঞ্চার হওয়া বা গমন করাকে বুঝায়। বাস্তবেও তা-ই দেখা যায়। মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ এবং মীন এই বারটি একটির পর আরেকটি চক্রাকারে অবর্তিত হতে থাকে। রাশিচক্রস্থ দৃশ্যমান গমন পথ যাকে ইংরেজীতে ঊপষরঢ়ঃরপ বা ক্লান্তিবৃত্ত বলে; সেপথে সূর্য গমনের ফলে (জ্যোতিষতত্ত্বমতে) পৃথিবীর পরিমণ্ডলে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। এভাবে পৃথিবী নানারূপে সঞ্চারের কারণে প্রাকৃতিক দৃশ্যপট প্রতিমাসে পরিবর্তিত হতে থাকে। পৃথিবীর পরিমণ্ডলে এধরনের পরিবর্তনের মধ্যে সনাতন ধর্মের অনুসারীগণের মধ্যে চারটি দিন উল্লেখযোগ্য। তন্মমধ্যে দুই অয়ন এবং দুই বিষুব দিন। দুই অয়ন হল উত্তরায়ন ও দক্ষিণায়ন এবং বিষুব হল মহাবিষুব ও জলবিষুব। চৈত্র সংক্রান্তিতে মহাবিষুব ও আশ্বিন সংক্রান্তিতে জলবিষুব আরম্ভ হয়। উল্লেখ্য বছরে যে দুইদিন দিবা ও রাত্রি সমান হয় তাকে বিষুব দিন বলা হয়। বসন্তকালে যে বিষুব হয়, তাকে মহাবিষুব আর শরৎকালে যে বিষুব হয় তাকে জলবিষুব বলা হয়। মৎস্যপুরাণেও তাই বলা হয়েছে-

“মৃগকর্কটসংক্রান্তিঃ দ্বে তূদগ্দক্ষিণায়নে।
বিষুবতী তুলামেষে গোলমধ্যে তথাপরাঃ ॥”

অর্থাৎ সুর্য ধনুরাশি ত্যাগ করে মকর রাশিতে সঞ্চার হওয়াকে উত্তরায়ণসংক্রান্তি, মিথুনরাশি হতে কর্কটরাশিতে সঞ্চার হওয়াকে দক্ষিণায়ন সংক্রান্তি, কন্যারাশি হতে তুলারাশিতে সঞ্চার হওয়াকে জলবিষুবসংক্রান্তি আর মীনরাশি হতে মেষরাশিতে সঞ্চার হওয়াকে মহাবিষুব সংক্রান্তি বলা হয়ে থাকে।গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মকর সংক্রান্তি ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। তবে কখনও কখনও ১৩ বা ১৫ জানুয়ারিও মকর সংক্রান্তি পড়ে।জ‍্যোর্তিবিজ্ঞান বলেছে দক্ষিণায়নের সময় দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্যরশ্মি বেশি থাকে ফলে সেখানে দিন বড় রাত ছোট আর উত্তরায়ণে উত্তর গোলার্ধে দিন বড় রাত ছোট হয়। আর সূর্যের আলোর উষ্ণতাই তো প্রাণীকুলের বিকাশের অন‍্যতম কারণ। ঠিক এই কথা অনুযায়ী মকর সংক্রান্তির দিন থেকেই শুরু হয় উত্তরায়ণ। আর পুণ্যতীর্থ ভারতবর্ষের অবস্থানও তো উত্তর গোলার্ধে। এই দিন থেকেই উত্তর গোলার্ধে দিন বড় হতে শুরু কর। তাই এই মকর সংক্রান্তির দিনটিকে প্রাধান্য দিয়ে পালন করা হয়ে থাকে এখানে।
  দিনটির বিশেষত্ব :-
১।। এই দিনে দেবতাদের দিন শুরু হয়। দেবতারা ঘুম হতে জাগন।
২।। এই দিনে কুরু-পিতামহ ভীষ্ম দেহত্যাগ করেন।   
৩।। এই দিনে ভগবান সূর্য্যেদেব মকর রাশিতে গিয়ে পুত্র শনিদেবের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
৪।। এই দিনে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র ঘূড়ি ওড়ান ।
৫।। এই দিনে মৃত্যু হলে বিষ্ণুলোক প্রাপ্তি হয়।
৬।।  মকর সংক্রান্তি নতুন ফসলের উৎসব। তবে এ
৭।। মকরসংক্রান্তি   'উত্তরায়ণের সূচনা' ও  একে অশুভ সময়ের শেষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অঞ্চলভেদে মকর সংক্রান্তি :-
                          দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে এই উৎসব আয়োজনের চল আছে। তবে দেশ ভেদে এই উৎসবকে নানা নামে ডাকা হয়। নেপালে এই দিনটি 'মাঘে সংক্রান্তি' নামে সুপরিচিত। আবার থাইল্যান্ডে এর নাম 'সংক্রান' এবং কম্বোডিয়ায় এর নাম 'মহাসংক্রান' । ‘সংক্রান্তি’ নামটির সঙ্গে এর মিল কিন্তু লক্ষণীয়। মায়ানমারে 'থিংগিয়ান' এবং লাওসে  এই উৎসবের নাম 'পি মা লাও' । এ ছাড়াও পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে এবং ভারত মহাসাগরীয় বহু দ্বীপে যেখানে ভারত থেকে বহু মানুষ অভিবাসী হয়ে গিয়েছিলেন, সেখানেই পালিত হয় মকর উৎসব।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও মকর সংক্রান্তি বিভিন্ন নামে পরিচিত। বাংলায় পৌষ সংক্রান্তি, তামিলনাড়ুতে পোঙ্গল, গুজরাতে উত্তরায়ণ, অসমে ভোগালি বিহু, পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ ও জম্মুতে লোহ্রি, কর্নাটকে মকর সংক্রমণ ও 'ইল্লু বিল্লা' , কাশ্মীরে শায়েন-ক্রাত। উত্তর ভারতের অন্যান্য অঞ্চল, ওডিশা, মহারাষ্ট্রে 'তিলগুল' , গোয়া, অন্ধ্র, তেলঙ্গানা এবং কেরলে মকর সংক্রান্তি নামটিই চলে, যদিও তার পাশাপাশি স্থানীয় নামেরও প্রচলন আছে, যেমন মধ্যপ্রদেশে সুকরাত বা বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের কোনও কোনও এলাকায় খিচড়ি পর্ব।

   পালনীয় রীতি :-
                             পুণ্যস্নান এই উৎসবের একটা প্রধান অঙ্গ। পুণ্যার্থীরা সমুদ্রে, গঙ্গায় বা অন্য কোনও নদীতে স্নান করে পুণ্য অর্জন করেন। গঙ্গাসাগর, জয়দেব কেন্দুলি, দ্বারবাসিনী প্রভৃতি স্হানে এই উপলক্ষ্যে পূন্যস্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই উত্তরায়ণ দেবত্বের- আলোর দিক অর্থাৎ সাকারাত্মকের প্রতীক। এই জন্যই এই দিনটিতে জপ, তাপ, দান, স্নান, শ্রাদ্ধ, তর্পন, ধর্মীয় কার্যাদি করা হয়ে থাকে। কারণ এই দিনটির মহত্বই আলাদা। ধারনা আছে এই দিনে দান করলে তার নাকি শতগুনে ফিরে প্রাপ্তি হয়। অবাঙালিদের মতে মকর সংক্রান্তির দিন যদি ঘি ও কম্বল দান করা যায় তাহলে মোক্ষ লাভ হয়। মনে করা হয় মকর রাশিতে সূর্যের প্রবেশ অত‍্যন্ত ফলদায়ক। তাইতো এই দিন স্নান করে তিল দান করার রীতি আছে বাঙালিদের মধ্যে।
নতুন ফসল ওঠার সুচনায় যে হেতু এই উৎসব পালিত হয়, সে হেতু ভারতের অনেক জায়গায় এই উৎসবের সঙ্গে লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে বহু পরিবারে নতুন পোশাক পরার চল আছে। সব মিলিয়ে কৃষি ভিত্তিক সমাজের অন্যত