শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০১৯

Ghetu puja / Ghantakarna puja

                               ঘেঁটু


ঘেঁটু বা  ঘন্টাকর্ণ হলেন  চর্ম রোগের দেবতা।  ফাল্গুন মাসের শেষ দিনে এই পূজা হয়। ঘেঁটু  ঠাকুর হলেন সূর্য ও ধর্মঠাকুরের লৌকিক রূপ।
আবার জৈন মতে ইনি ৫২ বীরের অন্যতম। পূর্বে বাংলায় জৈনধর্মের প্রতিপত্তি ছিল  । সম্ভবত  ব্রাহ্মণ্যধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠার সাথে সাথে ইনি কৌলিন্য হারান ।
কারণ, সূর্য ও ধর্মঠাকুর দুজনই কুষ্ঠ ও নানারকম চর্মরোগ থেকে মুক্তি দেন। চর্মদেবতা ঘেঁটুর নাম ও আচরণে মত  মূর্তিটিও অদ্ভুত। আধভাঙা ব্যবহৃত মাটির হাড়ি উল্টো করে রাখা হয়, এটি আসন। এর ওপরে একদলা গোবর দিয়ে করা হয় ঘাঁটু দেবতার মুখ। চোখ তৈরি করা হয় দুটি কড়ি দিয়ে। কপালের অংশে দেয়া হয় সিঁদুরের তিলক। হাড়ির ওপরে রাখা হয় দুর্বা ঘাস ও ভাঁট ( ঘেঁটু ) ফুল। কোনো কোনো এলাকায় ঘাঁটুর পোশাক হিসেবে হাড়িতে জড়িয়ে দেয়া হয় হলুদ ছাপানো কাপড়। আর ভাঙাহাড়ির ভেতর জ্বালানো হয় মোমবাতি।
ঘেঁটু ঠাকুরের গল্প :-
ঘেঁটু দেবকুমার থাকা অবস্থায় বড়সড়  অপরাধ করে বসেন। এর জন্য বিষ্ণু তাকে অভিশাপ দেন। এই অভিশাপের ফলে তাকে  জন্ম নিতে হয় পিশাচ কুলে। রাগে ফুলে থাকতেন। কোনোভাবেই যেন বিষ্ণু নাম কানে না আসে সেজন্য দুই কানে ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখার কারণে নাম হয় ঘণ্টাকর্ণ। কোনো মন্দিরে ঘেঁটু ঠাকুরের  পূজা হয় না। পূজা হয় জলাশয়ের  পাশে রাস্তার মোড়ে।
ভাঁট বা ঘেঁটু  ফুল :-
এর বৈজ্ঞানিক নাম: Clerodendrum infortunatum L. ।  এই গাছের রস তিতো। দীর্ঘমেয়াদী  জ্বর, গেটেবাত,  আমাশয় ও পেট ব্যথায় ভাঁটের কচি ডগার রস কয়েক দিন সকালে খেলে রোগ ভালো হয়ে যায়। ভাঁটপাতার রস কৃমিনাশক। এর পাতা অ্যাজমা, টিউমার, সাপের কামড় ও চর্ম রোগে ব্যবহার হয়। মূলের নির্যাস দাঁতের ক্ষয়রোগ, পেটব্যথা, ও হিস্টিরিয়ার উপশম করে। যে কোনো চর্মরোগে ভাঁটপাতার রস ৩-৪ দিন লাগালে আশ্চর্যজনক ফল পাওয়া যায়। উকুন হলে ভাঁট পাতার রস লাগিয়ে ১ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলবেন। উকুন থাকবে না। ম্যালেরিয়াতেও এর ব্যবহার দেখা যায়।
রীতিনীতি :-
এই দিনে গ্রাম বাংলার ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা কলার পাতা দিয়ে পালকি তৈরী করে পালকির ভিতরে প্রদীপ জালিয়ে এবং পালকিটিকে ঘেঁটু ফুল দিয়ে সাজিয়ে ঘেঁটু ঠাকুরের পুজো করেন।

ঘেঁটু গান :-
ছেলে মেয়েরা ঘেঁটু গান গেয়ে পাড়ায় পাড়ায় চাল ডাল টাকা আদায় করে বেড়ায়।
১।।  শোন শোন সর্বজন ঘাঁটুর জন্ম বিবরণ।
পিশাচ কুলে জন্মিলেন শাস্ত্রে লিখন।
বিষ্ণুনাম কোনমতে করবে না শ্রবণ
তাই দুই কানে দুই ঘন্টা করেছে বন্ধন।
২।।  ঘেঁটু যায় ঘেঁটু যায় গৃহস্থের বাড়ি
এক কাঠা চাল দাও কুমড়োর বড়ি
যে দেবে থালা থালা তার হবে কোঠা-বালা
যে দেবে মুঠো মুঠো তার হবে হাত ঠুটো
যে দেবে এক পলা তেল তার হবে সোনার দেল।
৩।।  আলোর মালা চাল-ডাল দাও
নয় খোসপচড়া লও।
যে দেবে ধামা ধামা
তারে ঘাঁটু দেবে জরির জামা
যে দেবে শুধু বকুনি।
ঘাঁটু দেবে তাকে খোস-চুলকানি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন