রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৯

Choitra sankranti / charak puja

    চৈত্র সংক্রান্তি বা চড়ক

             বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তিতে পালিত হয় চড়ক উৎসব । জনশ্রতি অনুসারে ১৪৮৫ খ্রিষ্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই পূজা প্রথম শুরু করেন।
রীতিনীতি :-

‘‘চৈত্র মাস্যথ মাঘেবা যোহর্চ্চয়েৎ শঙ্করব্রতী।
করোতি নর্ত্তনং ভক্ত্যা বেত্রবানি দিবাশিনম্।।
 মাসং বাপ্যর্দ্ধমাসং বা দশ সপ্তদিনানি বা।
 দিনমানং যুগং সোহপি শিবলোক মহীয়তে।।’’ ( ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, প্রকৃতি খণ্ড  )
                      অর্থাৎ, চৈত্রমাসে বা  মাঘ মাসে একমাস বা পনেরো দিন বা দশ দিন বা সাত দিন অথবা এক  দিন হাতে বেতের লাঠি নিয়ে শিবব্রতী হয়ে নৃত্যাদি করলে সেই ব্যক্তি  শিবলোক প্রাপ্ত হয়।
পূজোর আগের দিন চড়ক গাছটিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ বা সিঁদুরমথিত শিবের পাটা বা বুড়ো শিব কে রাখা হয়।
গাজন উৎসবের তিনটি অংশ— সন্ন্যাস, নীলব্রত এবং চড়ক।  চৈত্র সংক্রান্তির সাত দিন বা তিন দিন আগে থেকে কঠোর নিয়ম পালন করা হয় যাকে সন্ন্যাস পালন করা হয় বলে। গেরুয়া বা সাদা বস্ত্র ধারণ করে হবিষ্যি গ্রহণ করা আবশ্যিক।
সন্ন্যাস নেওয়া / চড়ক ঘোরা:- 
পূজোর উৎসবে বহু প্রকারের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ বলে বিবেচিত হয়। চড়কগাছে ভক্ত্যা বা সন্ন্যাসীকে লোহার হুড়কা দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানো হয়। যারা শরীরে বড়শি বিঁধিয়ে শূন্যে ঘোরেন তাদের ‘হাজরা’  বলা হয়। তার পিঠে, হাতে, পায়ে, জিহ্বায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বাণ শলাকা বিদ্ধ করা হয়। কখনো কখনো জ্বলন্ত লোহার শলাকা তার গায়ে ফুঁড়ে দেয়া হয়। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার আইন করে এ নিয়ম বন্ধ করলেও কিছু কিছু স্থানে এখনো দেখা যায়।
ফুল-খেলা :— লম্বা গর্ত। এক ফুট গভীর, সাত-আট লম্বা গর্তে জ্বলন্ত কাঠকয়লার আংরা বিছিয়ে দেওয়া হয়। এবং তার ওপর দিয়ে ভক্ত সন্ন্যাসীরা হেঁটে যান। বীরভূম জেলার মল্লারপুরের মল্লেশ্বর শিব মন্দিরের ফুল খেলা বিখ্যাত।
হাকুণ্ড: — জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর হাঁটা, কুমিরের পূজা, বাণফোঁড়া , কাঁটা আর ছুঁড়ির ওপর লাফানো,  শিবের বিয়ে, অগ্নিনৃত্য, চড়কগাছে দোলা এবং দানো-বারনো বা হাজরা পূজা করা ইত্যাদি হল চড়ক পুজোর বিশেষ রীতিনীতি। লম্বা সার দিয়ে সন্ন্যাসীরা বসে। তাদের জিভে ফোঁড়া লম্বা শলাকা। রক্ত-লালা ঝরছে। প্রত্যেক জনের সামনে গর্তে জ্বলন্ত কাঠকয়লার আগুন। তার সামনে হাঁড়ির মধ্যে জাগ-পিদিম, সামনে পিছনে এয়োস্ত্রী। সন্ন্যাসীর কোলে ওই অবস্থায় শিশুপুত্র বসে।

শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০১৯

Ghetu puja / Ghantakarna puja

                               ঘেঁটু


ঘেঁটু বা  ঘন্টাকর্ণ হলেন  চর্ম রোগের দেবতা।  ফাল্গুন মাসের শেষ দিনে এই পূজা হয়। ঘেঁটু  ঠাকুর হলেন সূর্য ও ধর্মঠাকুরের লৌকিক রূপ।
আবার জৈন মতে ইনি ৫২ বীরের অন্যতম। পূর্বে বাংলায় জৈনধর্মের প্রতিপত্তি ছিল  । সম্ভবত  ব্রাহ্মণ্যধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠার সাথে সাথে ইনি কৌলিন্য হারান ।
কারণ, সূর্য ও ধর্মঠাকুর দুজনই কুষ্ঠ ও নানারকম চর্মরোগ থেকে মুক্তি দেন। চর্মদেবতা ঘেঁটুর নাম ও আচরণে মত  মূর্তিটিও অদ্ভুত। আধভাঙা ব্যবহৃত মাটির হাড়ি উল্টো করে রাখা হয়, এটি আসন। এর ওপরে একদলা গোবর দিয়ে করা হয় ঘাঁটু দেবতার মুখ। চোখ তৈরি করা হয় দুটি কড়ি দিয়ে। কপালের অংশে দেয়া হয় সিঁদুরের তিলক। হাড়ির ওপরে রাখা হয় দুর্বা ঘাস ও ভাঁট ( ঘেঁটু ) ফুল। কোনো কোনো এলাকায় ঘাঁটুর পোশাক হিসেবে হাড়িতে জড়িয়ে দেয়া হয় হলুদ ছাপানো কাপড়। আর ভাঙাহাড়ির ভেতর জ্বালানো হয় মোমবাতি।
ঘেঁটু ঠাকুরের গল্প :-
ঘেঁটু দেবকুমার থাকা অবস্থায় বড়সড়  অপরাধ করে বসেন। এর জন্য বিষ্ণু তাকে অভিশাপ দেন। এই অভিশাপের ফলে তাকে  জন্ম নিতে হয় পিশাচ কুলে। রাগে ফুলে থাকতেন। কোনোভাবেই যেন বিষ্ণু নাম কানে না আসে সেজন্য দুই কানে ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখার কারণে নাম হয় ঘণ্টাকর্ণ। কোনো মন্দিরে ঘেঁটু ঠাকুরের  পূজা হয় না। পূজা হয় জলাশয়ের  পাশে রাস্তার মোড়ে।
ভাঁট বা ঘেঁটু  ফুল :-
এর বৈজ্ঞানিক নাম: Clerodendrum infortunatum L. ।  এই গাছের রস তিতো। দীর্ঘমেয়াদী  জ্বর, গেটেবাত,  আমাশয় ও পেট ব্যথায় ভাঁটের কচি ডগার রস কয়েক দিন সকালে খেলে রোগ ভালো হয়ে যায়। ভাঁটপাতার রস কৃমিনাশক। এর পাতা অ্যাজমা, টিউমার, সাপের কামড় ও চর্ম রোগে ব্যবহার হয়। মূলের নির্যাস দাঁতের ক্ষয়রোগ, পেটব্যথা, ও হিস্টিরিয়ার উপশম করে। যে কোনো চর্মরোগে ভাঁটপাতার রস ৩-৪ দিন লাগালে আশ্চর্যজনক ফল পাওয়া যায়। উকুন হলে ভাঁট পাতার রস লাগিয়ে ১ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলবেন। উকুন থাকবে না। ম্যালেরিয়াতেও এর ব্যবহার দেখা যায়।
রীতিনীতি :-
এই দিনে গ্রাম বাংলার ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা কলার পাতা দিয়ে পালকি তৈরী করে পালকির ভিতরে প্রদীপ জালিয়ে এবং পালকিটিকে ঘেঁটু ফুল দিয়ে সাজিয়ে ঘেঁটু ঠাকুরের পুজো করেন।

ঘেঁটু গান :-
ছেলে মেয়েরা ঘেঁটু গান গেয়ে পাড়ায় পাড়ায় চাল ডাল টাকা আদায় করে বেড়ায়।
১।।  শোন শোন সর্বজন ঘাঁটুর জন্ম বিবরণ।
পিশাচ কুলে জন্মিলেন শাস্ত্রে লিখন।
বিষ্ণুনাম কোনমতে করবে না শ্রবণ
তাই দুই কানে দুই ঘন্টা করেছে বন্ধন।
২।।  ঘেঁটু যায় ঘেঁটু যায় গৃহস্থের বাড়ি
এক কাঠা চাল দাও কুমড়োর বড়ি
যে দেবে থালা থালা তার হবে কোঠা-বালা
যে দেবে মুঠো মুঠো তার হবে হাত ঠুটো
যে দেবে এক পলা তেল তার হবে সোনার দেল।
৩।।  আলোর মালা চাল-ডাল দাও
নয় খোসপচড়া লও।
যে দেবে ধামা ধামা
তারে ঘাঁটু দেবে জরির জামা
যে দেবে শুধু বকুনি।
ঘাঁটু দেবে তাকে খোস-চুলকানি।

মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৯

Holi / Dol jatra / Basanta panchami

        দোলযাত্রা বা হোলি

হোলি বা দোলযাত্রা হল হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ ধর্মের একটি অন্যতম প্রধান উৎসব। এটি একাধারে রঙের উৎসব ও প্রেমের উৎসব প্রধানত ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে হোলি বা দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। নারদ পুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ ও ‘জৈমিনি মীমাংসা’য় রঙের উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায়। হর্ষবর্ধনের নাটক ‘রত্মাবলী’তে ও সপ্তম  শতাব্দীর এক শিলালিপিতে রাজা হর্ষবর্ধন কর্তৃক ‘হোলিকোৎসব’ পালনের উল্লেখ পাওয়া যায়।
হোলির প্রথম সন্ধ্যাকে বলে ছোট হোলি। এদিন হোলিকা দহন বা মেড়াপোড়া অনুষ্ঠিত হয়। পরের দিনকে বলা হয় ফাগুয়া, ধুলেন্দি বা রঙ্গোলি হোলি।
হোলিকে নেপালি ও হিন্দিতে  होली (হোলি ) , মারাঠিতে होळी,পাঞ্জাবীতে  ਹੋਲੀ, কানাড়ায়   ಹೋಳಿ, তেলেগুতে   హోళి, অসমীয়া ভাষায়  ফাকুৱা ও  দ’ল যাত্ৰা , ওড়িয়ায়  ଦୋଳଯାତ୍ରା (দোলযাত্রা ), আর বাংলাভাষার দোলযাত্রা বলে।
হোলি উৎসবের সূচনা :-
১।।   উত্তর ভারতে হোলি উৎসবটি বাংলার দোলযাত্রার পরদিন পালিত হয়। হোলি নামটা এসেছে  দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকার নাম থেকে । হোলিকা ছিলেন মহর্ষি কশ্যপ ও তাঁর পত্নী দিতির পুত্র হিরণ্যকশিপুর বোন ।  হিরণ্যকশিপু ছিলেন অপরাজেয়। তাই সে নিজেকে ভগবান হিসেবে ঘোষণা করেন । আরো ঘোষণা করেন যে তাই কোনও দেবতাকে  নয়, পুজো তাকেই করতে হবে। কিন্তু হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুর ভক্ত। সে তার বাবার আদেশ মানতে রাজি নয়। হিরণ্যকশিপু ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। নানা ভাবে ছেলেকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু ফল হল না। শেষে প্রহ্লাদকে ভুলিয়ে জ্বলন্ত চিতায় বসল হোলিকা। হোলিকার  ছিল  অগ্নিনিরোধক শাল । নিজে গায়ে দিল সেই অগ্নি-নিরোধক শাল। কিন্তু আগুন জ্বলে উঠতেই সেই শাল উড়ে গিয়ে প্রহ্লাদকে ঢেকে ফেলল। অগ্নিদগ্ধ হল হোলিকা।  ওই আগুন হল অশুভের বিরুদ্ধে শুভের জয়ের প্রতীক।একে আমরা প্রতীকীভাবে প্রকাশ করি চাঁচর পোড়ানোর মধ্য দিয়ে। আমরা বলি চাঁচর বা মেড়াপোড়া। ওড়িশায় একই বলে মেন্টপোড়াই। হোলিকা দগ্ধ হওয়ার পরের দিন পালিত হয় হোলি।
২।।  শৈব মতানুসারে এদিনে ভগবান শিব মদনকে দগ্ধ করেন তাই এই দিনটি কামপঞ্চমী বা বসন্তপঞ্চমী হিসাবে পালন করা হয়।মহাদেবের ধ্যানভঙ্গ করতে মদন পুষ্পধনুতে শরসন্ধান করে দেবাদিদেবকে বিদ্ধ করলেন। মহাদেবের ধ্যানভঙ্গ হল বটে কিন্তু রুষ্ট শঙ্করের তৃতীয় নয়নের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেলেন মদনদেব। মদনের স্ত্রী রতি শিবের পায়ের উপর পড়ে স্বামীর প্রাণভিক্ষা চাইলেন। তাতে মহাদেবের হৃদয় একটু নরম হল। দেহ আর ফিরে পেলেন না মদন। তিনি রয়ে গেলেন অনঙ্গ হয়ে। এটিকে স্মরণ করেই দক্ষিণ ভারতে হোলির সময় ‘কামদহনম’ বা ‘কামাহন’ উৎসব পালিত হয়।
৩।।   দ্বাপরযুগে বসন্তপূর্ণিমার এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেশি নামক অসুরকে ( মতান্তরে অরিষ্টাসুরকে  ) বধ করেন। অত্যাচারী এই অসুরকে বধ করার পর সকলে আনন্দে রঙের উৎসব পালন করে।
৪।।  বৈষ্ণবমত অনুসারে  ফাল্গুনীপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ  রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সাথে আবির বা গুলাল নিয়ে রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়।
৫।।  স্কন্দপুরাণের একটি অধ্যায়ে দোলযাত্রার কথা বলা হয়েছে। যুধিষ্ঠির দোলযাত্রার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে বলেন, সত্যযুগে রঘু নামে এক ধার্মিক ও গুণবান রাজা ছিলেন। তাঁর রাজ্যে দুর্ভিক্ষ, ব্যাধি, মহামারী বা অকালমৃত্যু বলে কিছু ছিল না। কিন্তু একবার ঢুনঢা নামে এক রাক্ষসীর প্রভাবে রাজ্যে নানা অমঙ্গল সূচিত হয়। নানা রোগে ভুগে ভুগে মানুষের মৃত্যু হতে থাকে। প্রজারা বিপদ দেখে রাজার শরণাপন্ন হলেন। রাজা সব কথা শুনে ডেকে পাঠালেন প্রধান পুরোহিতকে। পুরোহিত এসে গণনা করে রাজাকে বললেন, পুরাকালে মালিনীর কন্যা ঢুনঢা কঠোর তপস্যা করে শিবকে তুষ্ট করেন। শিব তাঁকে বর প্রার্থনা করতে বললে ঢুনঢা অমরত্ব বর প্রার্থনা করে। শিব তাঁকে বরদান করে বলেন, স্বর্গ, মর্ত্য, পাতালে তাঁকে কেউ বধ করতে পারবে না। শুধু ঋতু পরিবর্তনের সময় উন্মাদগ্রস্ত ব্যক্তি বা বালকগণের কাছ থেকে তাঁকে দূরে থাকতে হবে। পুরোহিতের কাছ থেকে মৃত্যুর পন্থা জানতে পেরে রাজ্যের বালকরা সবাই একত্রিত হয়ে শুকনো কাঠ জ্বালিয়ে রাক্ষসী ঢুনঢাকে পুড়িয়ে মারে। হোলিকা, পুতনা, ঢুনঢা এরা সবাই অশুভের প্রতীক। একদিকে যেমন শীতের অবসানে বসন্তের আগমন হয়। তেমনই ফেলে আসা শীতের ঝরাপাতা, শুকনো আবর্জনাকে পুড়িয়ে ফেলে নতুন রংয়ে নিজেদের মনকে রাঙিয়ে তোলার উৎসব দোল।
৬।।  শুধু হোলিকা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে পুতনা রাক্ষসীর কাহিনিও। কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য পুতনা রাক্ষসীকে পাঠিয়েছিল রাজা কংস। পুতনার বুকের বিষদুধ পান করে যাতে মৃত্যু হয় কৃষ্ণের। কিন্তু কৃষ্ণের মরণ কামড়ে মৃত্যু হল পুতনার। এরপর গোপবালকেরা সেই রাক্ষসীর প্রতিকৃতি আগুনে পুড়িয়ে উৎসব পালন করে। এখানেও তো আমরা দেখি সেই দুষ্টের দমনের স্মরক।

৭।।    এই দোলপূর্ণিমা তিথিতেই চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মনিয়েছিলেন বলে একে গৌরপূর্ণিমা বলা হয়।শ্রীচৈতন্য বৃন্দাবনের হোরিখেলার অনুকরণে বাংলাতেও দোলযাত্রার সূচনা করেছিলেন। তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে আবির ও রং দেওয়ার মাধ্যমে নিজের মনের শুভ রংটি দেবতার কাছে সমর্পণ করার তত্ত্বকে তুলে ধরেন । সেই রংই মনের শুদ্ধ ভক্তির প্রতীক হয়ে যায়।
৮।।  শিখ গুরু গোবিন্দ সিং তিনদিনের হোলা মহল্লা পালন শুরু করেন।
৯।। রাজা রণজিৎ সিং রাধাকৃষ্ণের পটচিত্র সামনে রেখে হোলি পালন করতেন।
১০।। এই উৎসবে ফাগুনের রঙিন আনন্দের ঘোর লাগে মানুষের দেহে ও মনে।
ধর্ম ও পুরাণের জীবন থেকে রংয়ের উৎসব নেমে এল ইতিহাসের সরণি বেয়ে আমাদের আজকের জীবনে। ইতিহাসের পাতাতেও হোলিখেলার বহু কাহিনি পাই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা ‘হোরিখেলা’র উল্লেখ করা যেতে পারে। পাঠান বীর কেসর খাঁকে হোরি খেলতে আমন্ত্রণ জানালেন ভুনাগ রানি। দোলকে কেন্দ্র করে সে এক রাজনৈতিক লড়াই। প্রতিশোধের রংয়ে রাঙা হল মাটি।
ইতিহাসে প্রথম হোলির উল্লেখ পাই আমরা বাণভট্টের রত্নাবলী নাটকে। সপ্তম শতকে হর্ষবর্ধনের সময় লেখা এই নাটকে হোলি উৎসবের বর্ণনা পাওয়া যায়। একাদশ শতাব্দীতে পর্যটক আলবেরুণী এসেছিলেন ভারত ভ্রমণে। তাঁর লেখায় হোলির বর্ণনা পাওয়া যায়। ‘আইনি আকবরী’তে বলা হয়েছে তখন কেবল শূদ্ররাই হোলি খেলত। অবশ্য সেই অর্থে সম্প্রদায়গত বিভেদ বলে একসময় কিছু ছিল না। তখন সব উৎসবে এদেশে সবাই মিলেমিশে একাত্ম হয়ে যেতেন। তখন মুসলমানরাও রং-আবির খেলায় যোগ দিতেন। সেই রং পৌঁছে গিয়েছিল রাজদরবারেও। আবির-গুলাল উড়ত প্রাসাদের বাগানে, অলিন্দে। দোল নিয়ে লেখা হতো কবিতা আর বসত গানের আসর। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম তাঁর দরবারে হোলি খেলতেন। ফাগের সঙ্গে ছড়ানো হত গোলাপ জল। হোলি নিয়ে নিজেও বেশ কয়েকটি দিওয়ান বা কবিতা ও গান লিখেছিলেন। সেই গান তিনি দরবারে বসে শুনতেন। হোলির দিন বসত কাওয়ালির আসর। আর প্রাসাদের ভিতরে তাঁর বালক পুত্র সুলেমান শুকোহ কৃষ্ণ সেজে অন্যদের সঙ্গে হোলি খেলত। সেই সময়কার লেখা বইতে তার উল্লেখ পাওয়া যায়। বিভিন্ন বইতে পাওয়া যায় আওধের রাজাদের হোলি খেলারও প্রসঙ্গ। আওধের রাজদরবারে হোলি খেলা নিয়ে লিখে গিয়েছেন উর্দু কবি মির তাকি মির। হোলি খেলার সময় রাধাকৃষ্ণ সাজিয়ে শোভাযাত্রা বের করা হতো। এছাড়া বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌল্লা আবির খেলতে ভালোবাসতেন বলে শোনা যায়।
শান্তিনিকেতনে দোলযাত্রা :-
শান্তিনিকেতনে প্রভাতফেরীর মাধ্যমে দোলউৎসব আরম্ভ হয়। 'ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল..' গানের মাধ্যমে প্রভাতফেরী হয়। একে  বসন্তোৎসবও বলা হয়। রবিন্দ্রসঙ্গীত ও রবিন্দ্রনৃত্যের মাধ্যমে দোলউৎসব পালনের রীতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকেই চলে আসছে। রবি ঠাকুর ১৯২৫ সালে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন।  এখনো সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
রীতিনীতি :-
দোলের পূর্বদিন খড়, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি জ্বালিয়ে এক বিশেষ বহ্ন্যুৎসবের আয়োজন করা হয়।শুকনো গাছের ডাল, কাঠ ইত্যাদি দাহ্যবস্তু অনেক আগে থেকে সংগ্রহ করে সু-উচ্চ একতা স্তুপ করে তাতে অগ্নি সংযোগ করে ‘হোলিকা দহন’ হয় ।
দোলযাত্রার দিন সকালে তাই ভগবান শ্রীরাম ও সীতা বা রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির ও গুলালে রাঙিয়ে   কীর্তনগান সহকারে শোভাযাত্রায় বের করা হয়। এরপর ভক্তেরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রং খেলেন।
ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলে সিদ্ধি ও ভাঙের সরবত বা লাড্ডু খেয়ে লোকেরা হোলিতে মাতে।
ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও আমেরিকা, রাশিয়া, ফিজি, কানাডা, মরিশাস, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি দেশে ইস্কন প্রভৃতি হিন্দু সংগঠনের উদ্যোগে বিপুল সংখ্যক মানুষ হোলি পালন করেন।

সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৯

Shiva stuti

শিবস্ততি 


হর হর হর গঙ্গাধর চন্দ্রচূড় শঙ্কর 
পিনাকধর বাঘাম্বর উমেশ্বর দয়া কর। 
ভূতনাথ ত্রিদশনাথ দীননাথ দয়াল হে
আশুতোষ ক্ষণরোষ হরদোষ কৃপাময়ে । 
জটাজাল কপালমাল মহাকাল উমাপতে 
সোমনাথ গণনাথ বিশ্বনাথ নমোস্তুতে। 
নাগেশ্বর প্রলয়ঙ্কর ভীমেশ্বর পাহিমে 
দোষহর গ্রীবাগর রক্ষাকর দেবহে ।
রজতগিরি সমান তণু চন্দ্রচাপ শিখরে 
প্রসন্নানন চতুর্ভুজ নিখিলভয় হরন করে। 
পরশুধর বরাভীতি হর ত্র্যম্বক হে সুন্দর 
জগদ্বীজ আদি প্রভূ হে কৃত্তিবাস যশস্কর।
বন্দে চরণ সুরাসুর মুনিগনজন মানবে 
শীতল অমিয় তুমি প্রভূ হে সুব্রত হৃদিবাড়বে।। 

শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯

Shivaratri brata

           
                                   শিবরাত্রি
                     ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশীতে মহা শিবরাত্রির ব্রত পালন করা হয়। পুরাণ অনুসারে ভক্তি ও নিষ্ঠার সঙ্গে শিবরাত্রি পালন করলে রজোঃগুণ ও তমঃগুণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। মহা শিবরাত্রির রাতে  সোমনাথ,  মল্লিকার্জুন, মহাকালেশ্বর, ওঙ্কারেশ্বর,কেদারনাথ, ভিমশঙ্কর,বিশ্বেশ্বর,ত্র্যম্বকেশ্বর, বৈদ্যনাথ, নাগেশ্বর, রামেশ্বর এবং ঘুশ্মেশ্বর - - এই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ সেজে ওঠে। যথাবিহিত মর্যাদাসহকারে এই দিন শিবরাত্রির ব্রত উদযাপিত হয়।
শিবরাত্রি ব্রতের প্রয়োজনীয় দ্রব্য : –
সিদ্ধি, তিল, হরিতকী, ফুল, দূর্ব্বা, ধুতরাফুল, বিল্বপত্র, ধূপ, দীপ, ধুনা, দধি, দুগ্ধ, ঘৃত, চিনি, মধু, শিবের ধুতি ১, দূর্গার শাটী ১, আসনাঙ্গুরীয়ক ২, মধুপর্কের বাটী ২, নৈবেদ্য ৮, কুচা নৈবেদ্য ১, যথাসাধ্য পুরোহিত দক্ষিণা।
আরো পড়ুন:-
দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ
শিবস্তুতি
উমর-বিন-হাসনান দ্বারা স্তোত্রম
শিবমহিম্ন স্তোত্র
ব্রতের নিয়ম :-
শিবরাত্রির আগের দিন হবিষ্যান্ন গ্রহন করে  রাতে বিছানায় না শুয়ে  খড় বা কম্বলে শুতে হয়। ব্রতের দিন উপবাসী থেকে গঙ্গামাটি দিয়ে চারটি শিব গড়ে চার প্রহরে একটি করে শিবের পুজা করতে হয়।  প্রতিষ্ঠিত শিব থাকলে তাতেই পুজা করতে হয় চার প্রহরে চার বার। প্রথম প্রহরে দুগ্ধ দ্বারা, দ্বিতীয় প্রহরে দধি দিয়ে, তৃতীয় প্রহরে ঘৃত দিয়ে ও চতুর্থ প্রহরে মধু দিয়ে স্নান করাতে হয়। সেদিন সারারাত্রি জাগরণ করে পরদিন ব্রতকথা শুনে, ব্রাহ্মণ ভোজন করিয়ে ও সাধ্যমত দক্ষিণা দান করে পারণ করতে হয়।
ব্রতের ফলঃ- 
একাধারে তিনি পঞ্চানন, তাঁর পাঁচটি আনন বা মুখ, আর তিনটি নয়ন। যেটি  কপালে থাকে,সেই নয়নটি গ্যানের নয়ন।তিনি ব্রমহান্দের সৃষ্টি কর্তা,জীবের নিওয়ান্তা।তিনি স্বয়ম্ভু।তিনি আবার ধ্বংসে র অধিকর্তা।এঁর প্রধান অস্ত্র ত্রিশুল। মহাপ্রলয়ে কালে ইনি ডমরু বাজিয়ে ধ্বংসের সূচনা করেন।তিনি মহাযোগী সন্ন্যাসী,সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী, নির্গুণ ধ্যানের প্রতীক।
মহাদেব বলেন, "ব্রতপালনকারী ত্রয়োদশীতে স্নান করে সংযম পালন করবে। স্বপক্ষ নিরামিষ বা হবিষ্যান্ন ভোজন করবে। ভূমি বা বালি বিছানো যজ্ঞবেদী অথবা কুশ বিছিয়ে শয়ন করে আমার  নাম স্মরণ করতে থাকবে। রাত্রি শেষ হলে শয্যা ত্যাগ করে প্রাতঃ ক্রিয়াদি করবে অন্যান্য আবশ্যক কার্যাদি করবে। সন্ধ্যায় যথাবিধি পূজাদি করে বিল্বপত্র সংগ্রহ করবে। তারপর নিত্যক্রিয়াদি করবে। অতঃপর  বিল্বপত্র দিয়ে আমার পূজা করবে। একটি বিল্বপত্র দ্বারা পূজা করলে আমার যে প্রীতি জন্মে, সকল প্রকার পুষ্প একত্র করে কিংবা মণি, মুক্তা, প্রবাল বা স্বর্ণনির্মিত পুষ্প দিয়ে আমার পূজা করলেও, আমার তার সমান প্রীতি জন্মে না। প্রহরে প্রহরে বিশেষভাবে স্নান করিয়ে আমার পূজা করবে। পুষ্প, গন্ধ, ধূপাদি দ্বার যথোচিত অর্চনা করবে। প্রথম প্রহরে দুগ্ধ, দ্বিতীয় প্রহরে দধি, তৃতীয় প্রহরে ঘৃত এবং চতুর্থ প্রহরে মধু দিয়ে আমাকে স্নান করাবে এবং পূজা করবে। এছাড়া যথাশক্তি নৃত্যগীতাদি দ্বারা আমার প্রীতি সম্পাদন করবে।"
হে দেবী, এই হলো আমার প্রীতিকর ব্রত। এ ব্রত করলে অপস্যা ও যজ্ঞের পূণ্য লাভ হয় এবং ষোল কলায় দক্ষতা জন্মে। এ ব্রতের প্রভাবে সিদ্ধি লাভ হয়। অভিলাষী ব্যক্তি সপ্তদীপা পৃথিবীর অধীশ্বর হয়।যজ্ঞের মধ্যে যেমন অশ্বমেধ যজ্ঞ , তীর্থের মধ্যে যেমন যেমন গঙ্গা , তেমনি ব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্রত হল শিব চতুর্দশী ব্রত। শিব চতুর্দশী ব্রত পালন করলে ধর্ম, অর্থ , কাম , মোক্ষ চতুর্বিধ ফল লাভ হয়ে থাকে।
এই ব্রত পালণের মন্ত্র-
সংসার ক্লেশদগ্ধস্য  ব্রতেনানেন শঙ্কর। প্রসীদ, সুমুখো নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদ ভব।।
ॐ নমঃ শিবায় ( তিন বার)
**  দ্বিজাতি ভিন্ন অন্যেরা ॐ উচ্চারণ করবেন না।
ব্রতকথা :-
একবার কৈলাশশিখরে শিব ও পার্বতী নির্জনে গল্প করছিলেন । কথা প্রসঙ্গে পার্বতী শিবকে প্রশ্ন করলেন, "ভগবান, আপনি ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষের  দাতা। আপনি কোন ব্রত বা তপস্যায় সন্তুষ্ট হন ?" দেবী পার্বতীর কথা শুনে শিব বললেন, "হে দেবী, ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথীর রাত্রিকে মহা শিবরাত্রি বলা হয়। এই রাত্রিতে উপবাস করলে আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হই। স্নান, বস্ত্র, ধূপ, পুষ্প ও অর্চনায় আমি যতটুকু সন্তুষ্ট হই তার চেয়ে বেশি সন্তুষ্ট হই শিবরাত্রির উপবাসে।"
শিব পার্বতীকে আরও বলেন, এবার শিবচতুদর্শী তিথির মাহাত্ম্য বলছি, শোন।
একবার বারাণসীতে  ভয়ঙ্কর এক ব্যাধ জন্ম নিয়েছিল ।  নিষ্ঠুর সেই ব্যাধ ফাঁদ, জাল, দড়ির ফাঁস ইত্যাদি সহকারে  প্রাণীদের হত্যা করত।
একদিন সে বনে গিয়ে অনেক পশু হত্যা করল। তারপর নিহত পশুদের মাংসভার নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হলো। পথে শ্রান্ত হয়ে সে বনের মধ্যে বিশ্রামের জন্য একটি বৃক্ষমূলে শয়ন করলো এবং একটু পরেই নিদ্রিত হলো।
 রাত্রকালে ব্যাধ জেগে উঠল। ঘোর অন্ধকারে কোনো কিছুই কারও দৃষ্টিগোচর হলো না। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে সে একটি শ্রীফলবৃক্ষ অর্থাৎ বিল্ববৃক্ষ পেল। সেই বিল্ববৃক্ষে সে লতা দিয়ে তার মাংসভার বেঁধে রাখল। বৃক্ষতলে হিংশ্র জন্তুর ভয় আছে। এই ভেবে সে নিজেও ঐ বিল্ববৃক্ষে উঠে পড়ল। শীতে ও ক্ষুধায় তার শরীর কাঁপতে লাগল। এভাবে সে শিশিরে ভিজেই জেগে কাটাল সারা রাত।
দৈববশত সেই বিল্ববৃক্ষমূলে ছিল আমার (অর্থাৎ শিবের) একটি প্রতীক। তিথিটি ছিল শিবচতুর্দশী। আর ব্যাধও সেই রাত্রি কাটিয়েছিল উপবাসে। তার শরীর থেকে আমার প্রতীকের ওপর হিম বা শিশির ঝরে পড়েছিল। তার শরীরের ঝাঁকুনিতে বিল্বপত্র পড়েছিল আমার প্রতীকের ওপর। এভাবে উপবাসে বিল্বপত্র প্রদানে এবং শিশিরস্নানে নিজের অজান্তেই ব্যাধ শিবরাত্রিব্রত করে ফেলল। দেবী, তিথিমাহাত্মে কেবল বিল্বপত্রে আমার যে প্রীতি হয়েছিল, স্নান, পূজা বা নৈবেদ্যদি দিয়েও সে প্রীতি সম্পাদন সম্ভব নয়। তিথি মাহাত্মে ব্যাধ মহাপূণ্য লাভ করেছিল। পরদিন উজ্জল প্রভাতে ব্যাধ নিজের বাড়িতে চলে গেল।
কালক্রমে ব্যাধের আয়ু শেষ হলো। যমদূত তার আত্মাকে নিতে এসে তাকে যথারীতি যমপাশে বেঁধে ফেলতে উদ্যত হলো। অন্যদিকে আমার প্রেরিত দূত ব্যাধকে শিবলোকে নিয়ে এল। আর আমার দূতের দ্বারা আহত হয়ে যমদূত যমরাজকে নিয়ে আমার পুরদ্বারে উপস্থিত হলো। দ্বারে শিবের অনুচর নন্দীকে দেখে যম তাকে সব ঘটনা বললেন। এই ব্যাধ সারা জীবন ধরে কুকর্ম করেছে। জানালেন যম।
তার কথা শুনে নন্দী বললেন, ধর্মরাজ, এতে কোনো সন্দেহই নেই যে ঐ ব্যাধ দুরাত্মা। সে সারা জীবন অবশ্যই পাপ করেছে। কিন্তু শিবরাত্রি ব্রতের মাহাত্মে সে পাপমুক্ত হয়েছে এবং সর্বেশ্বর শিবের কৃপা লাভ করে শিবলোকে এসেছে।
নন্দীর কথা শুনে বিস্মিত হলেন ধর্মরাজ। তিনি শিবের মাহাত্মর কথা ভাবতে ভাবতে যমপুরীতে চলে গেল। শিব পার্বতীকে আরও বলেলেন, এই হলো শিবরাত্রিব্রতের মাহাত্ম। শিবের কথা শুনে শিবজায়া হিমালয় কন্যা পার্বতী বিস্মিত হলেন। তিথি শিবরাত্রিব্রতের মাহাত্ম্য নিকটজনের কাছে বর্ণনা করলেন। তারা আবার তা ভক্তি ভরে জানালেন পৃথিবীর বিভিন্ন রাজাকে। এভাবে শিবরাত্রিব্রত পৃথিবীতে প্রচলিত হলো।