রবিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৮

হিন্দু পঞ্চাঙ্গ কি ও কেন?

        হিন্দু পঞ্চাঙ্গ
             
               
পঞ্চাঙ্গ কথার অর্থ হল 'পঞ্চ-অঙ্গ'  অর্থাৎ পাঁচটি অঙ্গের সমাহার। এই পাঁচটি অঙ্গ হল   :- নক্ষত্র, তিথি, বার, যোগ ও করণ।
নক্ষত্র :-
               নক্ষত্র হল কোন বিশেষ মুহূর্তে চন্দ্র যে নক্ষত্রে থাকে ।  আবার জন্ম সময়ে চন্দ্র যে নক্ষত্রে থাকে তাকে জন্মনক্ষত্র বলে। নক্ষত্র 27 টি। আর অভিজিৎ কে ধরলে নক্ষত্র 28 টি।
এরা হল :- ১) অশ্বিনী, ২) ভরণী, ৩) কৃত্তিকা, ৪) রোহিণী, ৫) মৃগশিরা, ৬) আর্দ্রা, ৭) পুনর্বসু, ৮) পুষ্যা, ৯) অশ্লেষা, ১০) মঘা, ১১) পূর্ব-ফাল্গুনী, ১২) উত্তর-ফাল্গুনী, ১৩) হস্তা, ১৪) চিত্রা, ১৫) স্বাতী, ১৬) বিশাখা, ১৭) অনুরাধা, ১৮) জ্যেষ্ঠা, ১৯) মূলা, ২০) পূর্বাষাঢ়া, ২১) উত্তরাষাঢ়া, ২২) শ্রবণা, ২৩) ধনিষ্ঠা, ২৪) শতভিষা, ২৫) পূর্ব-ভাদ্রপদ, ২৬) উত্তর-ভাদ্রপদ ও ২৭) রেবতী।
নক্ষত্র বের করার পদ্ধতি :- প্রথমে জন্মসময়ে চন্দ্রের অবস্থান বের করে তার ভোগাংশ লিখে রাখতে হবে। ধরা যাক ঐসময় চন্দ্র নবম রাশিতে আছে ও তার ভোগাংশ  6o 5' । এখন একে মিনিটে পরিবর্তন করে পাই  16,565"। এবার একে 800 দিয়ে ভাগ করে পাই   20.70625 । এর মানে দাঁড়ায় কুড়িটি নক্ষত্র পেরিয়ে একুশতম নক্ষত্র চলছে। এখন একুশতম নক্ষত্র হল উত্তর-আষাঢ়া। দশমিকের আগের সংখ্যা হল পেরিয়ে যাওয়া নক্ষত্র। এইভাবে নক্ষত্র নির্ণয় করতে হবে।
বার
                            এক সূর্য্যোদয় হতে পরবর্তী সূর্য্যোদয় পর্যন্ত সময়কালকে বার বলা হয়। বার মোট সাতটি। বারগুলি হল :- রবিবার, সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার, শনিবার।
তিথি
                                            তিথি হলো সূর্য্য ও চন্দ্রের মধ্যের কৌণিক দশা। মোটামুটি 12o  নিয়ে একটি তিথি হয়। চন্দ্র ও পৃথিবীর গতির কারণে চন্দ্রের কলা যত বৃদ্ধি পায় তত তা সূর্য্য হতে দূরে সরে যায়। যখন সূর্য্য হতে চন্দ্র দূরে সরে যায় তখন চন্দ্রের কলা বৃদ্ধি পায়, একে শুক্লপক্ষ বলে।  আর চন্দ্র যত সূর্যের কাছে আসে তত চন্দ্রের কলা হ্রাস পায়, একে কৃষ্ণপক্ষ বলে। তিথি বের করার নিয়মটি হল :-
তিথি = ( চন্দ্রের ভোগাংশ - সূর্যের ভোগাংশ )/12
                                   এখন উপরের ফর্মুলায় যেটা দরকার সেটা হল তিথির চন্দ্র ও সূর্যের ভোগাংশ। চন্দ্র ও সূর্যের ভোগাংশ কিভাবে নির্ণয় করব তা আলোচনা করছি।  উপরের ফর্মুলায় প্রাপ্ত সংখ্যাটি তিথি। যদি তিথি 1—15 হয় তবে কৃষ্ণপক্ষ আর 16 এর বেশি হলে শুক্লপক্ষ। মনে করা যাক আমরা পেলাম 17, এর অর্থ এটি শুক্লপক্ষের দ্বাদশী । জ্ঞাতার্থে জানাই উত্তরভারতে কৃষ্ণপক্ষ হতে মাসের শুরু হয়।
যোগ
                        যোগ গণনা করা হয় চন্দ্র ও সূর্যের অবস্থান গণনা করে।
এরা হল :-  ১) বিকুম্ভ, ২) প্রীতি, ৩) আয়ুষ্মান, ৪) সৌভাগ্য, ৫) শোভন, ৬) অতিগ-, ৭) সুকর্মা, ৮) ধৃতি, ৯) শূল, ১০) গ-, ১১) বৃদ্ধি, ১২) ধ্রুব, ১৩) ব্যাঘাত, ১৪) হর্ষণ, ১৫) বজ্র, ১৬) অসৃক, ১৭) ব্যতীপাত, ১৮) বরীয়ান্, ১৯) পরিঘ, ২০) শিব, ২১) সাধ্য, ২২) সিদ্ধ, ২৩) শুভ, ২৪) শুক্র, ২৫) ব্রহ্ম, ২৬) ইন্দ্র ও ২৭) বৈধৃতি।
যোগ 27 রকমের। তিথি বের করার নিয়মটি হল :-
যোগ = ( চন্দ্রের ভোগাংশ +সূর্যের ভোগাংশ )/13o20'
        = ( চন্দ্রের ভোগাংশ +সূর্যের ভোগাংশ )/800
(এই 13o20' কে মিনিটে করলে 800 মিনিট হয়।)
করণ
                                                              করণ হল তিথির অর্ধেক। অর্থাৎ একটা তিথিতে দুটো করণ।মাসে মোট করণ 11 টি।  এগুলি হল :-
বব, বালব, কৌলব,তৌতিল, গর, বণিজ, বিষ্টি, শকুণি, চতুষ্পাদ, নাগ এবং কিস্তুঘ্ন। 

শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮

ভূতচতুর্দশী ও চৌদ্দ শাক

     ভূত চতুর্দিকে ও চৌদ্দ শাক
                                                 দীপাবলী উপলক্ষে পঞ্চোৎসব পালন করা হয়। এগুলি হল যথাক্রমে ধনতেরাস , নরকচতুর্দশী , দীপাবলী, গোবর্ধনপুজা  ও   ভাইফোঁটা । 
( দেখুন - সূচিপত্র
কার্তিক মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিকে 'ভূতচতুর্দশী' বা 'যমচতুর্বদশী'ও বলে। এই দিন চৌদ্দশাক ও চৌদপ্রদীপ দেওয়ার রীতি আছে। সন্ধ্যায় পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে চৌদপ্রদীপ দেওয়া হয়। চৌদ্দ পুরুষের উদ্দেশ্যে চৌদপ্রদীপ। এই চৌদ্দপুরুষ হচ্ছেন, পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতা, পিতামহী ও প্রপিতামহী, মাতামহ, প্রমাতামহ ও বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতামহী, প্রমাতামহী ও বৃদ্ধপ্রমাতামহী এবং শ্বশুর ও শাশুড়ি।

দীপদান মন্ত্রঃ-

নমঃ পিতৃভ্যঃ প্রেতেভ্যো নমঃধর্মায় বিষ্ণবে।
নমো ধর্ম্মায়(ধুম্রায়)রুদ্রায় কান্তায় পতয়ে নমঃ।। 
                           পুরাণে আছে প্রাগজ্যোতিষপুরের রাজা নরকাসুর ১৬০০০ কন্যাকে বন্দি  করে রাখেন। তিনি দেবমাতা অদিতির কানের বালা ছিনিয়ে নেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করেন এই দিনে। তা দিনটি নরকচতুর্দশী বা ভূতচতুর্দশী নামে পরিচিত।
                   এছারাও - দানবরাজ বলি যখন স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল দখল করে নিলেন। তখন বলির অত্যাচারে   দেবতা-মানব কেউই রেহাই পেলেন না। এমতাবস্থায়  দেবগুরু বৃহস্পতির পরামর্শে ভগবান বিষ্ণু নিলেন বামনের অবতার। বলি তখন ইন্দ্রত্ব লাভের জন্যে শতাশ্বমেধ যজ্ঞে রত ।ভগবান বামন তখন বলির কাছে তিন পা সমান জমি ভিক্ষা চাইলেন । দানবরাজ বলি কিন্তু শুরুতেই বুঝেছিলেন এই বামন আর কেউ নন, স্বয়ং বিষ্ণু। কিন্তু এরপরও তিনি দানে প্রতিশ্রুত হলেন।  দু'পা দিয়ে স্বর্গ ও মর্ত্য দখল করে ফেললেন বিষ্ণু। এরপর নাভি থেকে বের হয়ে এলো আরেক পা, যা রাখার স্থান নেই। জ্ঞানী বলি তখন মাথা পেতে দিলেন তৃতীয় পা রাখার জন্য। সঙ্গে সঙ্গেই পাতালে নেমে গেলেন দানবরাজ বলি। সেই থেকে পাতালই হলো তার আবাস।
                                                       ভগবানের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করায় বলির জন্য একটি বিশেষ সুবিধা রেখে দিলেন বিষ্ণু। প্রতি বছর মর্ত্যে, অর্থাৎ পৃথিবীতে তাকে পূজা দিবে মানুষ। সেই থেকে কালীপূজার আগের রাতে বলি রাজা পাতাল থেকে উঠে আসেন পূজা নিতে, তার সহচর হিসেবে থাকে শত সহস্র ভূত, প্রেতাত্মা এবং অশরীরী, বেতার, পিশাচ । তাই এই দিনটিকে বলা হয় ভূতচতুর্দশী।  তুলারাশির শুক্লপক্ষের  চতুর্দশী তিথিতে  চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালিয়ে চৌদ্দ পুরুষের আত্মাকে তুষ্ট করে অশুভ শক্তিকে দূর করার প্রথা পালন করা হয় বলে এই দিনটাকে ভূত চতুর্দশীও বলে। এক সঙ্গে অনেকগুলি প্রদীপ জ্বালিয়ে ক্ষতিকারক কীটের হাত থেকে হৈমন্তিক ফসল রক্ষা করার তাগিদে কৃষিজীবী বাঙালীকে এই উপাচার পালন করতে হত ।
                                                                এই ভূতচতুর্দশী দিনটি উপলক্ষ্যে রান্না হয় চৌদ্দ শাক ভাজা । ওল, কেঁউ, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ, ভাঁট  ও শুষণী- এই চৌদ্দ রকমের শাক একসঙ্গে রান্না হয় সেদিন। চৌদ্দ শাক ধোয়ার পর তার জল বস্তুর চতুর্দিকে।বাংলার নব্য-স্মৃতিশাস্ত্রকার রঘুনন্দন (১৬ শতাব্দী) তাঁর অষ্টবিংশতি তত্ত্বের অন্যতম গ্রন্থ কৃত্যতত্ত্বে এই ভূত চতুর্দশীর উল্লেখ করে চৌদ্দ শাক খাবার কথা বলেছেন । আশ্বিন ও কার্ত্তিক মাস দুটিকে যমদংস্টা কাল বলে। কারন এসময় রোগের প্রকোপ অনেক বৃদ্ধি পায়। মন্ত্রে তাই বলা হয়েছে :-
“ওলং কেমুকবাস্তূকং, সার্ষপং নিম্বং জয়াং।
শালিঞ্চীং হিলমোচিকাঞ্চ পটুকং শেলুকং গুড়ূচীন্তথা।
ভণ্টাকীং সুনিষন্নকং শিবদিনে খাদন্তি যে মানবাঃ,
প্রেতত্বং ন চ যান্তি কার্ত্তিকদিনে কৃষ্ণে চ ভূতে তিথৌ।”
চৌদ্দ শাকের নিচে বর্ণনা দেওয়া হল :-
  ওল (Amorphophalluscampanulatus) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: কচি পাতা, পাতার বৃন্ত এবং কন্দ।
ভেষজ গুণাবলী: ওলের শুকনো কন্দের গুঁড়ো অর্শ, হাঁপানি, টিউমার, প্লিহার বৃদ্ধি ও রক্ত আমাশার ঔষধ হিসেবে প্রাচীনকাল থেকে ভারতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। টাটকা মূল ব্যবহৃত হয় কফনাশক ও বাতের চিকিৎসায়। কাঁকড়া বিছার কামড়ে পত্রবৃন্তের রস ব্যবহৃত হয়।

কেঁউ (Costus speciosus.) :- 
যে অংশ খাওয়া যায়: নরম পাতা
ভেষজ গুণাবলীঃ কেঁউ পাতার রস ভালো হজমকারক ও ক্ষুধাবর্ধক। জ্বর, আমাশা, ডায়েরিয়া, কফ, কাটা-ছেঁড়া, ক্ষত, চর্মরোগ, জন্ডিস, আরথ্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, কুষ্ঠ, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, রক্তাল্পতা, কৃমি, চুলকানি, বমিভাব ইত্যাদি রোগের ঔষধ ও সাপে কাটার প্রতিষেধক হিসেবে কেঁউ পাতার নির্যাস প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় সমাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বথুয়া বা বেথুয়া ( Chenopodium album) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: ছোটো গাছের পুরো বিটপ অংশ, আর বড়ো গাছের পাতাসহ ডগা।
ভেষজ গুণাবলী: কোষ্ঠবদ্ধতা, রক্তাল্পতা, অম্বল, কৃমি, বৃক্ক-পাথুরি, মুখে ঘা, পায়েরিয়া, ত্বকের রোগ, বাত ও অর্শ প্রতিরোধে বেথুয়া শাক খুব উপকারী। গর্ভরোধক হিসেবে এর ব্যবহার রয়েছে।

কালকাসুন্দা ( Senna  sophera ) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: নরম পাতা ও কাঁচা শুঁটি।
ভেষজ গুণাবলীঃ অ্যালার্জি, কোষ্ঠবদ্ধতা, হুপিং কাশি, কফ, জ্বর, বেতো জ্বর, ম্যালেরিয়া, কঞ্জাংকটিভাইটিস ও ক্ষত নিরাময়ে কালকাসুন্দার পাতার রস খাওয়া হয়। মৃগি রোগীদের চিকিৎসায় গোটা উদ্ভিদের রস ব্যবহার হয়। রজঃস্রাবের সময় যন্ত্রণা হলে মূলের ক্বাথ কাজ দেয়। আবার ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় কালকাসুন্দার বাকল ভেজানো জল খেলে উপকার হয়।
নিম ( Azadirachta indica) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: কচি পাতা ও ফুল।
ভেষজ গুণাবলীঃ নিম পাতা বা পাতার রস কুষ্ঠ, চর্মরোগ, বহুমুত্র, জন্ডিস, একজিমার ভালো ঔষধ। ব্লাড সুগারের রোগীরা প্রতিদিন সকালে ১০-১২টা করে নিমপাতা চিবিয়ে খেলে সুগার কমে। পোকামাকড়ের কামড়ে মূলের ছাল বা পাতা বেটে লাগালে উপকার হয়। পাতা বাটা মাথায় মাখলে উকুন মরে। মূলের গুঁড়ো জলে মিশিয়ে খাওয়ালে বাচ্চাদের কৃমি নাশ হয়। নিম তেলের শুক্রানুনাশক ক্ষমতা থাকায় এটি জন্মনিয়ন্ত্রক হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। নিমের ছাল ভিজিয়ে জল খেলে অজীর্ণ রোগ সারে।
 সরিষা ( Brassica juncea) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতা ও পাতাসহ কচি কান্ড এবং বীজ।
ভেষজ গুণাবলীঃ ত্বক, যকৃৎ ও চোখের পক্ষে সরষে শাক খুব উপকারি। ভিটামিন K, C ও E এবং ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও লোহার সমৃদ্ধ উৎস হল এই শাক। এই শাক খেলে ক্যানসার, হৃদরোগ ও অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হবার সম্ভাবনা কমে। এছাড়া আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস ও রক্তাল্পতা রোগের নিরাময়ে সরষে শাক যথেষ্ট উপকারি।

শালিঞ্চা ( Alternanthera sessilis  ) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতাসহ ডগা।
ভেষজ গুণাবলীঃ চোখ, চুল ও ত্বকের জন্য শালিঞ্চা শাক খুব উপকারী। ডায়েরিয়া, অজীর্ন, হাঁপানি, কফ, জ্বর, রাতকানা, খোসপাঁচড়া, একজিমা, অর্শ ও অন্ত্রে ঘায়ের চিকিৎসায় এই শাক খেলে উপকার হয়। এই শাক খেলে মায়ের স্তনদুগ্ধের পরিমাণ বাড়ে। প্রতিদিন ৭৫ গ্রাম করে শালিঞ্চা শাক খেলে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে সুগারের পরিমাণ কমে। চোখে জল পড়া, কনজাংক্টিভাইটিস, মায়োপিয়া ও ছানির চিকিৎসায় মূলের রস ব্যবহৃত হয়। গোরুর দুধের সাথে শালিঞ্চা পাতার রস মিশিয়ে খেলে শরীরে শক্তি ও জীবনীশক্তি বাড়ে। কাঁটা বা হুল বিঁধলে ক্ষতস্থানে শালিঞ্চা পাতা বেটে লাগালে কাজ দেয়।

জয়ন্তী ( Sesbania sesban) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: কচি সবুজ টাটকা পাতা।
ভেষজ গুণাবলীঃ উদরাময়, বহুমূত্র, শ্বেতি, মৃগী, মানসিক সমস্যা, জ্বর, ফুসফুসের যক্ষ্মা, কিডনির সংক্রমণ, গনোরিয়া ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ও কৃমিনাশকের কাজ করে। সদ্য প্রসূতিদের জন্য এই শাক খুব উপকারি। মেধা ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও জয়ন্তী পাতার রস খাওয়ানো হয়।

গুলঞ্চ (  Tinospora cordifolia) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতা।
ভেষজ গুণাবলীঃ গুলঞ্চকে স্বর্গীয় উদ্ভিদ বলে গণ্য করা হয় এর ভেষজ গুণের জন্য। ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, পাকস্থলীর গোলমাল, লিম্ফোমা সহ অন্যান্য ক্যানসার, কুষ্ঠ, যক্ষ্মা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বাত, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, হেপাটাইটিস, পেপটিক আলসার, গনোরিয়া, সিফিলিস, শোথ, জ্বর ইত্যদি নানা রোগের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় গুলঞ্চ ব্যবহৃত হয়। গুলঞ্চ শাক খেলে অনাক্রম্যতন্ত্র উজ্জীবিত হয়। গুলঞ্চের রস নিয়মিত খেলে আয়ু বাড়ে, যৌবন দীর্ঘস্থায়ী হয়, সুস্বাস্থ্য হয়, ত্বকের রঙ উজ্জ্বল হয়, ক্ষুধা বাড়ে ও বন্ধ্যাত্ব দূর হয়। গুলঞ্চ খেলে বৃক্কে পাথর জমার সম্ভাবনা থাকে না এবং রক্তে ইউরিয়ার মাত্রা সঠিক থাকে।

পলতা বা পটল পাতা ( Trichosanthesdioica) :-
যে অংশখাওয়া যায়: পাতা ও ফল।
ভেষজ গুণাবলীঃ শ্বাসতন্ত্রঘটিত যে কোনও রোগ সারাতে পটল পাতা উপকারি। রক্তবর্ধক ও রক্তশোধক হিসেবে এবং লিভার ও চর্ম রোগ সারাতে পটল পাতা খুব কার্যকর। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে এবং রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে পটল পাতার কার্যকরী ভূমিকা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন। পটল পাতা নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও মানসিক অস্থিরতা দূর হয়। পটল পাতা ক্ষিদে ও হজমশক্তি বাড়ায়। জন্ডিস, কফ, জ্বর, পিত্তজ্বর, টাইফয়েড, অর্শ, কৃমি, ডায়েরিয়া ইত্যাদি রোগে পটল পাতা খেলে কাজ দেয়। ক্ষতস্থানে পটল পাতার রস লাগালে তাড়াতাড়ি সারে।১) পটোল একটি সুস্বাদু, নির্দোষ সব্জী ও সর্বরোগে সমপথ্য৷ বিশেষ করে অর্শ, আমাশয়, বহুমূত্র ও অম্লরোগে প্রাত্যহিক ভোজন তালিকায় পটোলের তরকারী সুপথ্য৷

(২) পটোলের লতার ডগার অংশকে পলতা বলে৷ পলতা একটি তিক্ত ভোজ্য ও ঔষধীয় গুণে পরিপূর্ণ৷ পলতা লিবার তথা যকৃতের পক্ষে উপকারী, এ রক্ত–পরিষ্কারক, রক্ত–বর্দ্ধক, ক্ষুধা–বর্দ্ধক ও নিদ্রাহীনতার ঔষধ৷ প্রমেহ (গণোরিয়া), উপদংশ (সিফিলিসগ্গ, চর্মরোগে, কুষ্ঠে ও বহুমূত্র রোগে পলতার তরকারী আবশ্যিক ভোজন৷

গ্রন্থিবাত অর্থাৎ আর্থরাইটিস্ রোগে মুখ্যতঃ পলতা ও অন্যান্য উপকরণ সহযোগে একটি ভাল ঔষধ তৈরী হয়–এক মুঠো অড়হর ডাল ১/২ দিন জলে ভিজিয়ে রেখে তারপরে শিলে পিষে নিতে হয়৷ পলতা পাতা (ধরা যাক ১০০টি) ও তার অর্ধেক কালমেঘের পাতা একত্রে পিষে নিতে হয়৷ তারপর দুই ধরনের পেষা বস্তু একত্রে মিশিয়ে মাখো মাখো অবস্থায় ছোট ছোট ওষুধের পিলের মত বানিয়ে শুকিয়ে নিতে হয়৷ তারপর প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২টি করে পিল ১/২ ফোঁটা মধুসহ খেতে হয়৷ অড়হর ডাল বাদ দিয়ে কালমেঘ পাতা ও পলতা পাতা থেকে একই প্রক্রিয়ায় বটিকা তৈরী করে নিয়ে ব্যবহার করলেও ফল পাওয়া যায়৷

ভাঁট বা ঘেঁটু ( Clerodendrum infortunatum) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতা।
ভেষজ গুণাবলীঃ ঘেঁটুতে প্রচুর ফ্ল্যাভোনয়েড থাকায় এটি ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম। এছাড়া চুল পড়া, হাঁপানি, কফ, বাত, জ্বর, চর্মরোগ, লিভারের রোগ, মাথার যন্ত্রণা, কৃমি, কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার, উদরাময় ইত্যদি রোগ প্রতিরোধে ঘেঁটু পাতা খুব কার্যকর। ঘেঁটু পাতা বেটে ঘা বা ফোলা জায়গার ওপর লাগালে তাড়াতাড়ি সারে।

হেলেঞ্চা বা হিংচে ( Enhydra fluctuans ) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতাসহ ডগা।
ভেষজ গুণাবলীঃ আয়ুর্বেদে হেলেঞ্চাকে রক্তশোধক, পিত্তনাশক, ক্ষুধাবর্ধক, ব্যথানাশক, জীবানুনাশক ও জ্বরনাশক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই শাক নিয়মিত খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে। কোষ্ঠকাঠিন্য, হাঁপানি, ডায়েরিয়া ও স্নায়ুরোগের ভেষজ চিকিৎসায় হেলেঞ্চা ব্যবহৃত হয়। দীর্ঘ জ্বরভোগের পর হেলেঞ্চা শাক দিয়ে মাছের ঝোল খেলে ক্ষুধা বাড়ে ও মুখে রুচি ফেরে। হেলেঞ্চা শাকে যথেষ্ট অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকায় এর ক্যানসার প্রতিরোধী ভূমিকা রয়েছে। মাথার যন্ত্রণায় মাথায় এই শাক বেটে লাগালে যন্ত্রণা কমে। হেলেঞ্চা শাক নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগার কমে।

শুষনি ( Marsileaquadrifolia / Marsileaminuta ) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতা।
ভেষজ গুণাবলীঃ  শুষনি শাক খেলে ঘুম পায়। তাই নিদ্রাহীনতায় যাঁরা ভোগেন তাঁদের নিয়মিত শুষনি শাক খেলে কাজ দেয়। এ ছাড়া নিয়মিত শুষনি শাক খেলে মাথার যন্ত্রণা, তীব্র মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, গায়ে ব্যথা, পায়ের পেশির অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন, বাত, জিভে ও মুখে ক্ষত, চর্মরোগ ইত্যদি দূর হয়। শুষনির কাশি ও কফ নিরাময়কারী ভূমিকা বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রমাণিত। চোখের রোগ, ডায়াবেটিস ও ডায়েরিয়া নিরাময়ে শুষনি পাতার রস কার্যকর। সন্তান প্রসবের পর মায়েরা শুষনি শাক খেলে দুগ্ধক্ষরণ বাড়ে। সাপের কামড়ে শুষনি পাতার রস দিয়ে চিকিৎসা করার প্রচলিত রীতি রয়েছে।

শেলুকা বা শুলফা (Peucedanum graveolens / Anethumsowa) :-
যে অংশ খাওয়ায যায়: পাতাসহ ডগা এবং বীজ।
ভেষজ গুণাবলীঃ মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ বাড়াতে ও বাচ্চাদের পেটের রোগ সারাতে শুলফা শাক খুব উপকারী। বাচ্চাদের গ্রাইপ ওয়াটারের একটা উপাদান এই শুলফা শাক থেকে আসে। চোখের রোগ, চোখে ঘা, পুরানো ক্ষত, জ্বর, স্নায়ু রোগ, জরায়ুর ফাইব্রয়েড ইত্যদি রোগের নিরাময়ে শুলফা খুবই কার্যকর। বাচ্চাদের পেটফাঁপায় শুলফা বীজ জলে ভিজিয়ে সেই জল খেলে দারুণ কাজ দেয়। শুলফা বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল সায়াটিকা বাত, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, স্পন্ডাইলোসিস, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, কফ ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। মৌরি তেল পচন রোধে, মূর্চ্ছা রোধে ব্যবহৃত হয়।

ভূতচতুর্দশী পূজাপদ্ধতি :-


 দীপদান মন্ত্রঃ-
নমঃ পিতৃভ্যঃ প্রেতেভ্যো নমঃধর্মায় বিষ্ণবে।
নমো ধর্ম্মায়(ধুম্রায়)রুদ্রায় কান্তায় পতয়ে নমঃ।। "

 মাষভক্তবলি :- 

 নিজের বামে গোময়ের দ্বারা ত্রিকোণ মণ্ডল লিখিয়া তাহার উপরে  "এতে অন্ধপুস্পে ওঁ ক্ষেত্রপালাদিভূতগণেভ্যো নমঃ"  মন্ত্রে পাদ্যাদি দ্বারা পূজা করিয়া খুরি বা বিল্বপত্রের উপরে মাষকলাই, দধি ও হরিদ্রাচুর্ণ একত্রে মিশ্রিত করিয়া তাহার অর্চ্চনা করে  নিবেদন করতে হবে , -
ওঁ মাষভক্তবলয়ে নমঃ। এষ মাষভক্তবলিঃ ওঁ ক্ষেত্রপালাদিভূত-গণেভ্যো নমঃ।।

নিবেদনান্তে প্রার্থনা মন্ত্র য: -
ওঁ ভূতপ্রেতপিশাচাশ্চ দানবা রাক্ষসাশ্চ যে। 
শান্তিং কুর্ব্বন্তুতে সর্ব্বে ইমং গৃহ্নন্তু মদ্‌বলিম্‌।

তারপরে সাদা সর্ষে নিয়ে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠপূর্ব্বক উহার দশদিকে ছড়িয়ে দেবে। 
ওঁ বেতালাশ্চ পিশাচাশ্চ রাক্ষসাশ্চ সরীসৃপাঃ। অপসর্পন্তু তে সর্ব্বে নারসিংহেন তাড়িতাঃ।। "

 এই মাস কলাই,দই আর আতপচাল কলা পাতা বা মৃত্ পাত্রে ভূতের উদ্দেশ্য দেওয়া হয়,যাকে মাসভক্তবলী বলে। 
                                   - - - - 

সোমবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৮

শ্রী শ্রী লক্ষ্মী দেবীর ব্রতকথা - Sri Sri Laxmi Devi Bratakatha


 শ্রী শ্রী  লক্ষ্মী দেবীর  ব্রতকথা


( আরও দেখুন - কোজাগরী লক্ষীপুজা   * অষ্টলক্ষ্মী
গণেশ বন্দনা
বন্দ দেব গজানন বিঘ্ন বিনাশন।
নমঃ প্রভু মহাকায় মহেশ নন্দন।।
সর্ববিঘ্ন নাশ হয় তোমার শরণে।
অগ্রেতে তোমার পূজা করিনু যতনে।।
নমো নমো লম্বোদর নমঃ গণপতি।
মাতা যার আদ্যাশক্তি দেবী ভগবতী।।
সর্বদেব গণনায় অগ্রে যার স্থান।
বিধি-বিষ্ণু মহেশ্বর আর দেবগণ।।
ত্রিনয়নী তারার বন্দিনু শ্রীচরণ।
বেদমাতা সরস্বতীর লইনু শরণ।।

শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর আবাহন
এস মা লক্ষ্মী, কমল বরণী, কমলালতিকা দেবী কমলিনী-
কমল আসনে, বিরাজ কমলা, কমলময়ী ফসলবাসিনী।।
কমল বসন, কমল ভূষণ, কমনীয় কান্তি অতি বিমোহন।
কোমল করে, শোভিছে কমল, ধান্যরূপা, মাতঃ জগৎপালিনী।।
কমল কিরিটি মণি মনোহরে, কমল সিঁদুরে শোভে দেখি শিরে।
কোমল কন্ঠে কমল হারে, কোমল বদন দেখি যে সুন্দরে।।
কমল চরণে কমল নূপুর, কমল অলক্ত মরি কি সুন্দর।
দীন মধুসূদনের সন্তাপ হর তুমি নারায়ণী শান্তিপ্রদায়িনী।।

শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর বরণ
তুমি মাগো লক্ষ্মীদেবী কমল বরণী।
কমললতিকা কৃপা কর নারায়ণী।।
সাজায়ে রেখেছি মাগো ধান্য-গুয়া-পান।
আসিয়া মাগো কর ঘটেতে অধিষ্ঠান।।
ঘরেতে ধূপ ধূনা আর ঘৃতবাতি।
হৃদয় কমলে ওমা করহ বসতি।।
পদ্মাসনে পদ্মদল রাখি থরে থরে।
শঙ্খ বাদ্যে বরণ করি তোমা ছরে।।
সবে করি লক্ষ্মীপূজা অতি সযতনে।
আশিস করহ মাতঃ আমা সব জনে।।

শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর বারমাসি পাঁচালী
বছরে বৈশাখ মাস প্রথম যে হয়।
পূজা নিতে এস গো মা আমার আলয়ে।।
জৈষ্ঠ্য মাসে ষষ্ঠী পূজা হয় ঘরে ঘরে।
কৃপা করি এস ওমা পূজা যে বা করে।।
আষাঢ়ে আসিতে মাগো নাহি কর দেরী।
পূজা হেতু রাখি মোরা ধান্য-দূর্বা ধরি।।
শ্রাবণের ধারা দেখ চারিধারে পড়ে।
পূজিবারে শ্রীচরণ ভেবেছি অন্তরে।।
ভাদরের ভরা নদী কূল বয়ে যায়।
কৃপা করে এস গো মা যত শীঘ্র হয়।।
আশ্বিনে অম্বিকা সাথে পূজা আয়োজন।
কোজাগরী রাতে পুনঃ করিব পূজন।।
কার্তিকে কেতকী ফুল চারিধারে ফোটে।
বসো এসে মাগো মোর পাতা এ ঘটে।।
অঘ্রাণে আমন ধান্যে মাঠ গেছে ভরে।
লক্ষ্মীপূজা করি মোরা অতি যত্ন করে।।
পৌষ পার্বণে মা গো যে মনের সাধেতে।
প্রতি ঘরে লক্ষ্মী পূজি নবান্ন দানেতে।।
মাঘমাসে মহালক্ষ্মী মহলে রহিবে।
নতুন ধান্য দিয়া পূজা করি মোরা সবে।।
ফাল্গুনে ফাগের খেলা চারিধারে হয়।
এস গো মা বিষ্ণুজায়া পূজিব তোমায়।।
চৈত্রেতে চাতকসম চাহি তব পানে।
এস ওমা পদ্মালয়া অধিনী ভবনে।।
লক্ষ্মীদেবী বারমাসি হৈল সমাপন।
দীন ভক্তজন দুঃখ কর নিবারণ।।
কাতরে ডাকিছে যত ভক্ত সন্তান।
ভক্তজন মাতা হয়ে করহ কল্যাণ।।

বৃহস্পতিবারের ব্রতকথা
শরৎ পূর্ণিমার নিশি নির্মল গগন।
মন্দ মন্দ বহিতেছে মলয় পবন।।
লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ।
বৈকুন্ঠধামেতে বসি করে আলাপন।।
হেনকালে বীণা হাতে আসি মুনিবর।
হরিগুণগানে মত্ত হইয়া বিভোর।।
গান সম্বরিয়া উভে বন্দনা করিল।
বসিতে আসন তারে নারায়ণ দিল।।
মধুর বচনে লক্ষ্মী জিজ্ঞাসিল তায়।
কিবা মনে করি মুনি আসিলে হেথায়।।
কহে মুনি তুমি চিন্ত জগতের হিত।
সবার অবস্থা আছে তোমার বিদিত।।
সুখেতে আছয়ে যত মর্ত্যবাসীগণ।
বিস্তারিয়া মোর কাছে করহ বর্ণন।।
লক্ষ্মীমার হেন কথা শুনি মুনিবর।
কহিতে লাগিলা তারে জুড়ি দুই কর।।
অপার করুণা তোমার আমি ভাগ্যবান।
মর্ত্যলোকে নাহি দেখি কাহার কল্যাণ।।
সেথায় নাই মা আর সুখ শান্তি লেশ।
দুর্ভিক্ষ অনলে মাগো পুড়িতেছে দেশ।।
রোগ-শোক নানা ব্যাধি কলিতে সবায়।
ভুগিতেছে সকলেতে করে হায় হায়।।
অন্ন-বস্ত্র অভাবেতে আত্মহত্যা করে।
স্ত্রী-পুত্র ত্যাজি সবাই যায় দেশান্তরে।।
স্ত্রী-পুরুষ সবে করে ধর্ম পরিহার।
সদা চুরি প্রবঞ্চনা মিথ্যা অনাচার।।
তুমি মাগো জগতের সর্বহিতকারী।
সুখ-শান্তি সম্পত্তির তুমি অধিকারী।।
স্থির হয়ে রহ যদি প্রতি ঘরে ঘরে।
তবে কি জীবের এত দুঃখ হতে পারে?
নারদের বাক্য শুনি লক্ষ্মী বিষাদিতা।
কহিলেন মুনি প্রতি দোষ দাও বৃথা।।
নিজ কর্মফলে সবে করে দুঃখভোগ।
অকারণে মোর প্রতি কর অনুযোগ।।
শুন হে নারদ বলি যথার্থ তোমায়।
মম অংশে জন্ম লয় নারী সমুদয়।।
তারা যদি নিজ ধর্ম রক্ষা নাহি করে।
তবে কি অশান্তি হয় প্রতি ঘরে ঘরে।।
লক্ষ্মীর বচন শুনি মুনি কহে ক্ষুণ্ন মনে।
কেমনে প্রসন্ন মাতা হবে নারীগণে।।
কিভাবেতে পাবে তারা তব পদছায়া।
দয়াময়ী তুমি মাগো না করিলে দয়া।।
মুনির বাক্যে লক্ষ্মীর দয়া উপজিল।
মধুর বচনে তারে বিদায় করিল।।
নারীদের সর্বদুঃখ যে প্রকারে যায়।
কহ তুমি নারায়ণ তাহার উপায়।।
শুনিয়া লক্ষ্মীর বচন কহে লক্ষ্মীপতি।
কি হেতু উতলা প্রিয়ে স্থির কর মতি।।
প্রতি গুরুবারে মিলি যত বামাগণে।
করিবে তোমার ব্রত ভক্তিযুক্ত মনে।।
নারায়ণের বাক্যে লক্ষ্মী অতি হৃষ্টমন।
ব্রত প্রচারিতে মর্ত্যে করিল গমন।।
মর্ত্যে আসি ছদ্মবেশে ভ্রমে নারায়ণী।
দেখিলেন বনমধ্যে বৃদ্ধা এক বসিয়া আপনি।।
সদয় হইয়া লক্ষ্মী জিজ্ঞাসিল তারে।
কহ মাগো কি হেতু এ ঘোর কান্তারে।।
বৃদ্ধা কহে শোন মাতা আমি অভাগিনী।
কহিল সে লক্ষ্মী প্রতি আপন কাহিনী।।
পতি-পুত্র ছিল মোর লক্ষ্মীযুক্ত ঘর।
এখন সব ছিন্নভিন্ন যাতনাই সার।।
যাতনা সহিতে নারি এসেছি কানন।
ত্যাজিব জীবন আজি করেছি মনন।।
নারায়ণী বলে শুন আমার বচন।
আত্মহত্যা মহাপাপ নরকে গমন।।
যাও মা গৃহেতে ফিরি কর লক্ষ্মী ব্রত।
আবার আসিবে সুখ তব পূর্ব মত।।
গুরুবারে সন্ধ্যাকালে মিলি এয়োগণ।
করিবে লক্ষ্মীর ব্রত করি এক মন।।
কহি বাছা পূজা হেতু যাহা প্রয়োজন।
মন দিয়া শুনি লও আমার বচন।।
জলপূর্ণ ঘটে দিবে সিঁদুরের ফোঁটা।
আম্রের পল্লব দিবে তাহে এক গোটা।।
আসন সাজায়ে দিবে তাতে গুয়া-পান।
সিঁদুর গুলিয়া দিবে ব্রতের বিধান।।
ধূপ-দীপ জ্বালাইয়া রাখিবে ধারেতে।
শুনিবে পাঁচালী কথা দূর্বা লয়ে হাতে।।
একমনে ব্রত কথা করিবে শ্রবণ।
সতত লক্ষ্মীর মূর্তি করিবে চিন্তন।।
ব্রত শেষে হুলুধ্বনি দিয়ে প্রণাম করিবে।
এয়োগণে সবে মিলি সিঁদুর পরিবে।।
দৈবযোগে একদিন ব্রতের সময়।
দীন দুঃখী নারী একজন আসি উপনীত হয়।।
পতি তার চির রুগ্ন অক্ষম অর্জনে।
ভিক্ষা করি অতি কষ্টে খায় দুই জনে।।
অন্তরে দেবীরে বলে আমি অতি দীনা।
স্বামীরে কর মা সুস্থ আমি ভক্তি হীনা।।
লক্ষ্মীর প্রসাদে দুঃখ দূর হৈল তার।
নীরোগ হইল স্বামী ঐশ্বর্য অপার।।
কালক্রমে শুভক্ষণে জন্মিল তনয়।
হইল সংসার তার সুখের আলয়।।
এইরূপে লক্ষ্মীব্রত করি ঘরে ঘরে
ক্রমে প্রচারিত হল দেশ দেশান্তরে।।
এই ব্রত করিতে যেবা দেয় উপদেশ।
লক্ষ্মীদেবী তার প্রতি তুষ্ট সবিশেষ।।
এই ব্রত দেখি যে বা করে উপহাস।
লক্ষ্মীর কোপেতে তার হয় সর্বনাশ।।
পরিশেষে হল এক অপুর্ব ব্যাপার।
যে ভাবে ব্রতের হয় মাহাত্ম্য প্রচার।।
বিদর্ভ নগরে এক গৃহস্থ ভবনে।
নিয়োজিত বামাগণ ব্রতের সাধনে।।
ভিন দেশবাসী এক বণিক তনয়।
সি উপস্থিত হল ব্রতের সময়।।
বহুল সম্পত্তি তার ভাই পাঁচজন।
পরস্পর অনুগত ছিল সর্বক্ষণ।।
ব্রত দেখি হেলা করি সাধুর তনয়।
বলে এ কিসের ব্রত এতে কিবা ফলোদয়।।
বামাগণ বলে শুনি সাধুর বচন।
লক্ষ্মীব্রত করি সবে সৌভাগ্য কারণ।।
সদাগর শুনি ইহা বলে অহঙ্কারে।
অভাবে থাকিলে তবে পূজিব উহারে।।
ধনজন সুখভোগ যা কিছু সম্ভব।
সকল আমার আছে আর কিবা অভাব।।
কপালে না থাকে যদি লক্ষ্মী দিবে ধন।
হেন বাক্য কভু আমি না করি শ্রবণ।।
ধনমদে মত্ত হয়ে লক্ষ্মী করি হেলা।
নানা দ্রব্যে পূর্ণ তরি বানিজ্যেতে গেলা।।
গর্বিত জনেরে লক্ষ্মী সইতে না পারে।
সর্ব দুঃখে দুঃখী মাগো করেন তাহারে।।
বাড়ি গেল, ঘর গেল, ডুবিল পূর্ণ তরি,
চলে গেল ভ্রাতৃভাব হল যে ভিখারী।।
কি দোষ পাইয়া বিধি করিলে এমন।
অধম সন্তান আমি অতি অভাজন।।
সাধুর অবস্থা দেখি দয়াময়ী ভাবে।
বুঝাইব কেমনে ইহা মনে মনে ভাবে।।
নানা স্থানে নানা ছলে ঘুরাইয়া ঘানি।
অবশেষে লক্ষ্মীর ব্রতের স্থানে দিলেন আনি।।
মনেতে উদয় হল কেন সে ভিখারী।
অপরাধ ক্ষম মাগো কুপুত্র ভাবিয়া।।
অহঙ্কার দোষে দেবী শিক্ষা দিলা মোরে।
অপার করুণা তাই বুঝালে দীনেরে।।
বুঝালে যদি বা মাগো রাখগো চরণে।
ক্ষমা কর ক্ষমাময়ী আশ্রিত জনেরে।।
সত্যরূপিনী তুমি কমলা তুমি যে মা।
ক্ষমাময়ী নাম তব দীনে করি ক্ষমা।।
তুমি বিনা গতি নাই এ তিন ভুবনে।
স্বর্গেতে স্বর্গের লক্ষ্মী ত্রিবিধ মঙ্গলে।
তুমি মা মঙ্গলা দেবী সকল ঘরেতে।
বিরাজিছ মা তুমি লক্ষ্মী রূপে ভূতলে।।
দেব-নর সকলের সম্পদরূপিনী।
জগৎ সর্বস্ব তুমি ঐশ্বর্যদায়িনী।।
সর্বত্র পূজিতা তুমি ত্রিলোক পালিনী।
সাবিত্রী বিরিঞ্চিপুরে বেদের জননী।।
ক্ষমা কর এ দাসের অপরাধ যত।
তোমা পদে মতি যেন থাকে অবিরত।।
শ্রেষ্ঠ হতে শ্রেষ্ট তারা পরমা প্রকৃতি।
কোপাদি বর্জিতা তুমি মূর্তিমতি ধৃতি।
সতী সাধ্বী রমণীর তুমি মা উপমা।।
দেবগণ ভক্তি মনে পূজে সবে তোমা।।
রাস অধিষ্ঠাত্রী দেবী তুমি রাসেশ্বরী।
সকলেই তব অংশ যত আছে নারী।।
কৃষ্ণ প্রেমময়ী তুমি কৃষ্ণ প্রাণাধিকা।
তুমি যে ছিলে মাগো দ্বাপরে রাধিকা।।
প্রস্ফুটিত পদ্মবনে তুমি পদ্মাবতী।
মালতি কুসুমগুচ্ছে তুমি মা মালতি।।
বনের মাঝারে তুমি মাগো বনরাণী।
শত শৃঙ্গ শৈলোপরি শোভিত সুন্দরী।
রাজলক্ষ্মী তুমি মাগো নরপতি পুরে।
সকলের গৃহে লক্ষ্মী তুমি ঘরে ঘরে।
দয়াময়ী ক্ষেমঙ্করী অধমতারিণী।
অপরাধ ক্ষমা কর দারিদ্র্যবারিণী।।
পতিত উদ্ধার কর পতিতপাবনী।
অজ্ঞান সন্তানে কষ্ট না দিও জননী।।
অন্নদা বরদা মাতা বিপদনাশিনী।
দয়া কর এবে মোরে মাধব ঘরণী।।
এই রূপে স্তব করি ভক্তিপূর্ণ মনে।
একাগ্র মনেতে সাধু ব্রত কথা শোনে।।
ব্রতের শেষে নত শিরে করিয়া প্রণাম।
মনেতে বাসনা করি আসে নিজধাম।।
গৃহেতে আসিয়া বলে লক্ষ্মীব্রত সার।
সবে মিলি ব্রত কর প্রতি গুরুবারে।।
বধুরা অতি তুষ্ট সাধুর বাক্যেতে।
ব্রত আচরণ করে সভক্তি মনেতে।।
নাশিল সাধুর ছিল যত দুষ্ট সহচর।
দেবীর কৃপায় সম্পদ লভিল প্রচুর।।
আনন্দে পূর্ণিত দেখে সাধুর অন্তর।
পূর্ণতরী উঠে ভাসি জলের উপর।।
সাধুর সংসার হল শান্তি ভরপুর।
মিলিল সকলে পুনঃ ঐশ্বর্য প্রচুর।।
এভাবে নরলোকে হয় ব্রতের প্রচার।
মনে রেখ সংসারেতে লক্ষ্মীব্রত সার।।
এ ব্রত যে রমণী করে এক মনে।
দেবীর কৃপায় তার পূর্ণ ধনে জনে।।
অপুত্রার পুত্র হয় নির্ধনের ধন।
ইহলোকে সুখী অন্তে বৈকুন্ঠে গমন।।
লক্ষ্মীর ব্রতের কথা বড়ই মধুর।
অতি যতনেতে রাখ তাহা আসন উপর।
যে জন ব্রতের শেষে স্তব পাঠ করে।
অভাব ঘুচিয়া যায় লক্ষ্মীদেবীর বরে।।
লক্ষ্মীর পাঁচালী কথা হল সমাপন।
ভক্তি করি বর মাগো যার যাহা মন।।
সিঁথিতে সিঁদুর দাও সব এয়োমিলে।
হুলুধ্বনি কর সবে অতি কৌতুহলে।।
দুই হাত জোড় করি ভক্তিযুক্ত মনে।
নমস্কার করহ সবে দেবীর চরণে।।

লক্ষ্মীদেবীর স্তুতি
লক্ষ্মীস্তং সর্বদেবানাং যথাসম্ভব নিত্যশঃ।
স্থিরাভাব তথা দেবী মম জন্মনি জন্মনি।।
বন্দে বিষ্ণু প্রিয়াং দেবী দারিদ্র্য দুঃখনাশিনী।
ক্ষীরোদ সম্ভবাং দেবীং বিষ্ণুবক্ষ বিলাসিনীঃ।।

লক্ষ্মীদেবীর ধ্যান মন্ত্র
ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ সৃণিভির্যাম্য সৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনাস্থাং ধায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্য মাতরং।।
গৌরবর্ণাং স্বরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কারভূষিতাম্।
রৌক্‌নোপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।

শ্রীশ্রীলক্ষ্মী স্তোত্রম্
ত্রৈলোক্য পূজিতে দেবী কমলে বিষ্ণুবল্লভে।
যথাস্তং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভবময়ি স্থিরা।।
ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতি হরিপ্রিয়া।
পদ্মা পদ্মালয়া সম্পদ সৃষ্টি শ্রীপদ্মধারিণী।।
দ্বাদশৈতানি নামানি লক্ষ্মীং সম্পূজ্য যঃ পঠেত।
স্থিরা লক্ষ্মীর্ভবেৎ তস্য পুত্রদারারদিভিংসহ।।
(তিন বার পাঠ করতে হবে)

পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র
নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে।
যা গতিস্তং প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্বদর্চবাৎ।।

শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর প্রণাম মন্ত্র
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমোহস্তু তে।।

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা


কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা

                              (আরও পড়ুন- সূচিপত্র *   শ্রী শ্রী লক্ষ্মী দেবীর ব্রতকথা, * অষ্টলক্ষ্মী )                      'কোজাগরী' শব্দটির উৎপত্তি 'কো জাগতী' অর্থাৎ 'কে জেগে আছ? ' কথাটি থেকে। কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে সারারাত জেগে লক্ষ্মীদেবীর উপাসনা করা হয়। আর তাই এই লক্ষ্মীপূজাকে বলা হয় কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা। যার কিছু নেই সে পাওয়ার আশায় জাগে, আর যার আছে সে না হারানোর আশায় রাত জাগে । আর সারারাত জেগে লক্ষ্মীর আরাধনা করাই এই পুজোর বিশেষ আচার। কথিত আছে কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন দেবী লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা রাত্রে খোঁজ নেন - কে জেগে আছেন ? যে জেগে অক্ষক্রীড়া করে , লক্ষ্মী তাঁকে ধন সম্পদ দান করেন ।
       কৌমুদ্যাং পূজয়েল্লক্ষীমিন্দ্রমৈরাবতস্থিতম্।
        সুগন্ধির্নিশি সদ্বেশঃ অক্ষৈর্জাগরণং চরেৎ।।
        নিশীথে বরদা লক্ষ্মীঃ জাগরত্তীতিভাষিণী ।
তস্মৈ বিত্তং প্রযচ্ছামি অক্ষৈঃ ক্রীড়াং করোতি যঃ।।" (লিঙ্গ পুরাণ ) 
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজা প্রদোষের পুজো 
'প্রদোষ ব্যাপিনী গ্রাহ্যা তিথির্নক্তব্রতে সদা।
  প্রদোষোহ স্তময়াদুর্দ্ধঃ ঘটিকাদ্বয়মিষ্যতে।।'
অর্থাৎ সুর্যাস্ত হবার পরের দুই মুহুর্তকাল বা ১ ঘন্টা ৩৬ মিনিট, অথবা চার দণ্ড সময়কাল যা ২৪×৪ = ৯৬ মিনিট হলো প্রদোষকাল। 
তাহলে সুর্যাস্তের পরে এই ৯৬ মিনিটের মধ্যে যদি পূর্ণিমা থাকে বা প্রবেশ করে বা আংশিকও থাকে তাহলে এই সময়ের মধ্যেই কোজাগরী লক্ষীপুজা করতে হবে। 
 লক্ষ্মীপুজোয় যে আল্পনা দেওয়া হয়, তাতে মায়ের পায়ের ছাপও আঁকা হয়। বিশ্বাস ওই পথেই মা ঢুকবেন গৃহস্থের ঘরে।
কে এই লক্ষ্মী  ? 
                                                   পুরাণে আছে দুর্বাসা মুনি দেবরাজ ইন্দ্রকে একটি পারিজাতের মালা উপহার দেন। দেবরাজ অবজ্ঞাভরে সেই মালা নিজের বাহন ঐরাবতের গলায় পরিয়ে দেন। ঐরাবত তো হাতি-ই, আর হাতি তো মালার কদর বোঝে না। ঐরাবত শুঁড় দিয়ে মালা গলা হতে পায়ে ফেলে পদদলিত করে। তখন ঋষি দেবরাজ ইন্দ্রকে অভিশাপ দেন, - - "ক্ষমতা ও ধনের গর্বে গর্বিত হয়ে আমার দেওয়া মালা মাটিতে ফেলে দিলে, তাই তোমার ত্রিলোক এখন লক্ষ্মীছাড়া হবে।" ঋষিশাপে ইন্দ্রের ইন্দ্রপুরী হলো শ্রীহীন, লক্ষ্মীর আড়াল । লক্ষ্মী  প্রবেশ করলেন পাতালে ।
                                         সমুদ্র মন্থর সময় পর  উত্থিতা হলেন দেবী লক্ষ্মী । তার এক হাতে পদ্ম, আরেক হাতে অমৃতের কলস।  তিনি পদ্মাসনা আর বাহন শ্বেত পেঁচা । ইনি বিষ্ণু পত্নী। জ্যোৎস্না প্লাবিত এই পৃথিবীর হেমন্তে আসেন শুধু একটি রাতের অতিথি হয়ে।অপর মতে দেবী  ভৃগুর কন্যা, মায়ের নাম খ্যাতি। লক্ষ্মী চঞ্চা, - তবে ক্রোধী  নন।
 লক্ষ্মী পূজা 
                                                               গৃহস্থ তার লক্ষ্মীর ঝাঁপি করে লক্ষ্মীর পিঁড়ি পাতেন গৃহেরকোণে - বা কুলুঙ্গিতে। উপাচার তো সামান্যই। প্রতি বৃহস্পতিবারে (লক্ষ্মীবারে ) সামান্য ফুল-বাতাসা আর ধোয়া পিঁড়িতে চাল পিটুলির আলপনা। সেটাই একটু বড় আকারের এই কোজাগরীর রাতে। আগে আমাদের সমাজে বিশেষ করে গ্রামে দুর্গাপূজা নিয়ে এত মাতামাতি ছিল না। বরং কোজাগরী লক্ষ্মীপূজাই ছিল বড় উৎসব। এই উৎসবে মহিলারাই প্রধান। তারা আলপনা এঁকে লক্ষ্মীর ঝাঁপি সাজিয়ে বলেন :-
  ‘আঁকিলাম পদ দু’টি, তাই মাগো নিই লুটি।
দিবারাত পা দু’টি ধরি, বন্দনা করি।
 আঁকি মাগো আল্পনা, এই পূজা এই বন্দনা।’
 ‘আমি আঁকি পিটুলির গোলা, আমার হোক ধানের গোলা।
  আমি আঁকি পিটুলির বালা, আমার হোক সোনার বালা।’
  ‘আঁকিলাম আল্পনা, দূরে ফেলি আবর্জনা।
শুভ-শুদ্ধ মন নিয়ে, করি তব আরাধনা।’
পূজাপ্রণালী:-

প্রথমে মাথায় একটু গঙ্গাজল নিয়ে নারায়ণকে স্মরণ করে নিন। পূজার আগে মাথায় জল নিয়ে দেহ ও নারায়ণকে স্মরণ করে মন শুদ্ধ করে নেবেন। তারপর সূর্যের উদ্দেশ্যে একটু জল দিন। যে কোনো পূজার আগে আমাদের প্রাণশক্তির উৎস সূর্যকে জল দেওয়ার নিয়ম, তাই জল দেওয়ার জন্য ঠাকুরের সিংহাসনে একটি ছোটো তামার পাত্র সর্বদা রাখবেন। সূর্যের নাম করে সেই কুশীতে জল নিয়ে সেই তামার পাত্রে দেবেন। তারপর সংসারের সকলের মঙ্গলকামনা করবেন। এরপর একটু গঙ্গাজল আপনার পূজার আসন, পূজার ফুল-নৈবেদ্য ইত্যাদি উপকরণের উপর ছিটিয়ে দেবেন। এইভাবে পূজাদ্রব্যগুলিকে শুদ্ধ করে নিতে হয়।

এরপর লক্ষ্মীর সামনে সামান্য ধান ও এক চিমটি মাটি ছড়িয়ে দিয়ে তার উপর জলভরা ঘট স্থাপন করবেন। ঘটের গায়ে সিঁদুর দিয়ে মঙ্গলচিহ্ন এঁকে নিতে ভুলবেন না। ঘটে একটি আমপল্লব (যাতে বিজোড় সংখ্যায় আমপল্লব থাকে) ও তার উপর একটি কলা বা হরীতকী দিয়ে উপরে একটি ফুল দেবেন। ইচ্ছা করলে ঘটে ও লক্ষ্মীকে একটি করে মালাও পরাতে পারেন। এবার লক্ষ্মীকে ধ্যান করবেন। লক্ষ্মীর ধ্যানমন্ত্র হল—

নমঃ   পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-সৃণিভির্ষাম্য-সৌম্যয়োঃ।

পদ্মাসনাস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।।

গৌরবর্ণাং সুরুপাঞ্চ সর্বলঙ্কার-ভূষিতাম্।

রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।

মন্ত্রটি পাঠ করতে ভাল। নয়তো লক্ষ্মীর রূপটি চোখ বুজে মনে মনে খানিকক্ষণ চিন্তা করবেন। এরপর মা লক্ষ্মীকে আপনার ঘরে আবাহন করবেন। আবাহন মন্ত্রটি হল—

নমঃ লক্ষ্মীদেবী ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ ইহ সন্নিধেহি ইহ সন্নিরুদ্ধস্য অত্রাধিষ্ঠান কুরু মম পূজান গৃহাণ।

সংস্কৃতে মন্ত্র পড়তে অক্ষম হলে বাংলায় বলবেন,
এসো মা লক্ষ্মী, বসো মা লক্ষ্মী, যতক্ষণ তোমার পূজা করি, ততক্ষণ তুমি স্থির হয়ে থাকো মা।

তারপর ভাববেন, মা লক্ষ্মী আপনার হৃদয়ে এসে বসে আপনার দেওয়া ফুল-নৈবেদ্য গ্রহণ করছেন। একে বলে মানসপূজা।

এরপর আপনার পূজাদ্রব্যগুলি একে একে লক্ষ্মীকে দেবেন। লক্ষ্মী আপনার গৃহে পূজা নিতে এলেন, তাই প্রথমেই একটুখানি জল ঘটের পাশে লক্ষ্মীপদচিহ্নে দেবেন। এটি মা লক্ষ্মীর পা ধোয়ার জল। এরপর দুর্বা ও একটু আতপ চাল ঘটে দেবেন। এটি হল অর্ঘ্য। এর সঙ্গে একটি ফুলও দিতে পারেন। এরপর লক্ষ্মীকে একটি চন্দনের ফোঁটা দেবেন। লক্ষ্মীর প্রতিমা না থাকলে ফুলে চন্দন মাখিয়ে ঘটে দেবেন। এরপর লক্ষ্মীকে ফুল দেবেন। তারপর প্রথমে ধূপ ও তারপর প্রদীপ দেখাবেন। শেষে নৈবেদ্যগুলি নিবেদন করে দেবেন। তারপর ফুল দিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দেবেন। মন্ত্র—এষ সচন্দনপুষ্পাঞ্জলি নমঃ শ্রীং লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ।পুষ্পাঞ্জলি এক, তিন বা পাঁচ বার দিতে পারেন। পুষ্পাঞ্জলির পর নারায়ণের উদ্দেশ্যে একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা ঘটে দেবেন। তারপর ইন্দ্র ও কুবেরের নামে দুটি ফুলও ঘটে দেবেন। মা লক্ষ্মীর পেচককেও একটি ফুল দেবেন। আপনি যদি দীক্ষিত হন, তবে এরপর আপনার গুরুমন্ত্র যথাশক্তি জপ করে মা লক্ষ্মীর বাঁ হাতের উদ্দেশ্যে জপসমর্পণ করবেন। শেষে নিম্নোক্ত মন্ত্রে প্রণাম করবেন—

নমঃ   বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।

সর্বতঃ পাহি মাং দেবি মহালক্ষ্মী নমঽস্তু তে।।

মন্ত্র পড়তে অক্ষম হলে বিনা মন্ত্রেই ভক্তিভরে মা-কে প্রণাম করবেন। এরপর ব্রতকথা  পাঠ করবেন বা শুনবেন।
উপসংহার :-
                                             এই কোজাগরী লক্ষ্মী পূজায় অনেকে অক্ষক্রীড়া করেন  অর্থাৎ  এক শ্রেণির লোক এই দিন পাশা খেলার মাধ্যমে টাকা পয়সা বাজি রেখে জুয়া খেলায় মেতে ওঠেন । আবার কেউ কেউ এই দিন পরের বাগানের ফলমূল চুরি করে গাছপালা তছনছ করে । এই সব অর্থহীন কাজের মাধ্যমে তারা ভাবে যে লক্ষ্মী দেবী তাদের কৃপা করবেন । লক্ষ্মীপূজা আমাদের জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আসলে কেবল টাকাকড়িই ধন নয়। চরিত্রধন মানুষের মহাধন। যার টাকাকড়ি নেই সে যেমন লক্ষ্মীহীন, যার চরিত্রধন নেই সে তেমনি লক্ষ্মীছাড়া।  লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা কেন? কেউ কেউ বলেন, লক্ষ্মীর দেওয়া ধন যারা অপব্যবহার করে, তাদের কপালে লেখা আছে যমের দণ্ড—এই কথা ঘোষণা করে লক্ষ্মীর বাহন। তাই কথায় বলে, ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’। এছাড়া ধনসম্পত্তি, সে টাকাকড়ি হোক বা সাধনধনই হোক, সদাজাগ্রত অবস্থায় রক্ষা করতে হয়। রাতে সবাই যখন ঘুমায়, তখন পেঁচা জেগে থাকে। পেঁচাই সেই ধনসম্পদ পাহারা দেয়। লক্ষ্মী তাই বাঙালির কাছে সংযম, নিয়মানুবর্তিতা ও জাগরণ তথা উন্নয়নের প্রতীক।




শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৮

বিজয়া


শুভ বিজয়া 

যাসনে মা উমা যাসনে মা, উমা দন্ডদুয়েক থাক মা ঘরে,
তুই গেলে গো মা হরমনোরমা মন যে গো মা কেমন করে।
বছরের পর এলি উমা ঘর সঙ্গেতে শঙ্কর আনিলি ক্যানে !
সে পাগল ভোলা লয়ে ভূতচেলা ঘুরুক এবেলা শ্মশানে শ্মশানে।
কে বলে পার্বতী তোর পিতা মূঢ়মতি, - সে কি জানে কত হৃদয় বিদারে?
হইয়ে পাষান বিদরে পরাণ সঁপেছি পরাণ পাগলের করে;-
যদি যাস উমা পরাণপ্রতীমা কি পরাণ লয়ে থাকিব ঘরে?
নয়নের জলে পাষান বিগলে তবু কি গো টলে পাগলের হিয়া
সুব্রত বলে দেখ দ্বার খুলে সে পাগল ভোলা দুয়ারে বসিয়া।
আমার লেখা বিজয়ার গান। প্রথা ভেঙে এই গানে পিতৃহৃদয়ের যে ব্যাথা তা তুলে ধরা হয়েছে। এখানে মেনকা নন পাষান গিরিই উমার বিচ্ছেদ ভাবনায় কাতর। ) 

মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৮

Durga dhyaan - দুর্গাধ্যান

শ্রী শ্রী দুর্গা ধ্যান 

জটাজুট সমাযুক্তাং অর্ধেন্দু কৃতশেখরাম্।
লোচনত্রয় সংযুক্তাং পূর্ণেন্দু সদৃশাননাম্।।২।।
অতসীপুষ্প বর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাম্।
নবযৌবন সম্পন্নাং সর্ব্বাভরণ ভূষিতাম্।।৪।।

সূচারু দশনাং তদ্বৎ পীনোন্নত পয়োধরাম্।
ত্রিভঙ্গস্থান সংস্থানাং মহিসাসুরমর্দীনিম্।।৬।।
মৃণালায়াত সংস্পর্শ দশবাহু সমন্বিতাম্।
ত্রিশুলং দক্ষিণে ধ্যেয়ং খর্গং-চক্রং ক্রমাদধঃ।।৮।।

তীক্ষ্ণবাণং তথা শক্তিং দক্ষিণেষু বিচিন্তয়েৎ।
খেটকং পূর্ণচাপঞ্চ পাশমঙ্কুশমেব চ।।১০।।
ঘণ্টাং বা পরশুং বাপি বামতঃ সন্নিবেশয়েৎ।
অধস্থান মহিষং তদ্বৎবিশিরক্ষং প্রদর্শয়েৎ।।১২।।

শিরোচ্ছেদোদ্ভবং তদ্বৎ দানবং খর্গপাণিনম্।
হৃদি শুলেন নির্ভিন্নং নির্যদন্ত্র বিভূষিতম্।।১৪।।
রক্তারক্তী কৃতাঙ্গঞ্চ রক্তবিস্ফুরিতেক্ষণম্।
বেষ্টিতং নাগপাশেন ভ্রূকুটি ভীষণাননাম্।।১৬।।

সপাশ বামহস্তেন ধৃতকেশঞ্চ দুর্গয়া।
বমদ্রুধির বক্ত্রঞ্চ দেব্যা সিংহং প্রদর্শয়েৎ।।১৮।।
দেব্যাস্তু দক্ষিণাং পাদং সমং সিংহোপরিস্থিতম্।
কিঞ্চিৎ ঊর্ধ্বং তথা বামঅঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি।।২০।।
স্তুয়মানঞ্চ তদ্রূপ মমরৈঃ সন্নিবেশয়েৎ।
প্রসন্নবদনাং দেবীং সর্ব্বকাম ফলপ্রদাং।।২২।।

উগ্রচন্ডা প্রচন্ডা চ চন্ডোগ্রা চন্ডনায়িকা।
চন্ডা চন্ডবতী চৈব চন্ডরূপাতিচন্ডিকা।।২৪।।
অষ্টাভি শক্তিভিরষ্টাভিঃ সততং পরিবেষ্টিতাম্।
চিন্তয়েৎ জগতাং ধাত্রিং ধর্মকামার্থ মোক্ষদাম্।।২৬।।

ব্যাখ্যা

দেবীর মাথায় জটা, সাথে অর্ধচন্দ্রের মত কপাল। পূর্ণিমার চাঁদের মত মুখ তাঁর ও গায়ের রঙ অতসীফুলের মতো। তিনি সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত এবং তাঁর সর্বাঙ্গ বিভিন্ন অলঙ্কার দ্বারা ভূষিত। ।২-৪।

তাঁর দাঁত সুন্দর এবং ধারালো, স্তন সম্পূর্ণ। তিন ভাঁজে দাঁড়িয়ে তিনি দৈত্যনিধন করছেন। দশহাতভর্তি অস্ত্র তাঁর যা দেখতে শাখা-প্রশাখা সমন্বিত পদ্ম গাছের মতো। ডানদিকের উপরের হাতে অবস্থান করে ত্রিশুল, তারপর ক্রমান্বয়েখর্গ এবং চক্র। ।৬-৮।

দেবীর দক্ষিণের সর্বনিম্ন দুই হাতের অস্ত্র ধারালো তীর এবং বর্শা। দেবীর ধ্যানে বর্ণিত হয় তাঁর বাঁ হস্ত। সেদিকে সবচেয়ে নিচের হাতে থাকে চামড়ার ঢাল ও তার উপরের হাতে ধনুক। সেগুলির উপরের হাতে থাকে সর্প, অঙ্কুশ এবং কুঠার (ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে)। দেবীর পায়ের কাছে দৈত্যরাজের মাথার স্থান। ।১০-১২।

মহিষের কাটা মাথা থেকে মহিসাসুরের দেহ অর্ধেক উত্থাপিত, হাতে তাঁর খর্গ এবং হৃদয়ে দেবীর ত্রিশূল দ্বারা বিদ্ধ। তাঁর পেট থেকে নাড়িভূঁড়ি নির্গত হয়েছে। শরীর রক্তলিপ্ত। দেবীর হাতে ধরা সাপ দ্বারা অসুরের দেহ বেষ্টিত। তবে উত্থিত ভ্রূ তে দৈত্যের রূপও ভয়ঙ্কর। ।১৪-১৬।

দেবী তাঁর বাম হাত দিয়ে দৈত্যরাজের চুল টেনে রেখেছেন। দেবীর ডান পা বাহন সিংহের উপরে এবং বাঁ পা কিঞ্চিৎ উর্ধে মহিষের উপরে অবস্থান করে। প্রবল যুদ্ধরত অবস্থাতেও দেবী তাঁর শান্তিপূর্ণ মুখাবয়ব ও আশীর্বাদী রূপ বজায় রেখেছেন এবং সমস্ত দেবতা দেবীর এই রূপের স্তুতি করেন। ।১৮-২২।
                             
দেবীর উপরোক্ত রূপ দেবতাদের আট শক্তি উগ্রচন্ডা, প্রচন্ডা, চন্ডোগ্রা, চন্ডনায়িকা, চন্ডা, চন্ডবতী, চন্ডরূপ ও অতিচন্ডিকা দ্বারা পরিবেষ্টিত। গৃহকর্তার মানব জীবনের সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ করেন এই দেবী। তাই ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ লাভের জন্য জগন্মাতৃকা দেবী দুর্গার ধ্যানই মানবজাতির হওয়া উচিত। ।২৪-২৬।
নবদুর্গা 
ওঁ প্রথমং শৈলপুত্রী দ্বিতীয়ম ব্রহ্মচারিনী , তৃতীয় চন্দ্রঘনটে , কুস্মানডেতি চতুরথাকম , পঞ্চমম স্কন্দমাতেতি ,ষষ্ঠম কাত্যায়নী তথা , সপ্তমম কালরাত্রিতি মহাগৌরী , তিচাস্তমাম , নবমাম সিদ্ধিদ্ধাত্রিতি নবদুর্গা প্রকীতিতা ।


বুধবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৮

গান্ধারীর শতপুত্রের নাম

সূচিপত্র
                    একনজরে দেখে নেওয়া যাক গান্ধারী ও ধৃতরাষ্ট্রের ১০০ পুত্রের নাম:
১. দুর্যোধন, ২. যুযুত্‍সু, ৩. দুঃশাসন, ৪. দুঃসহ, ৫. দুঃশল, ৬. দুর্মুখ, ৭. বিবিংশতি, ৮. বিকর্ণ, ৯. জলসন্ধ, ১০.সুলোচন, ১১. বিন্দ, ১২. অনুবিদ, ১৩. দুর্ধর্ষ, ১৪. সুবাহু, ১৫. দুষ্প্রধর্ষণ, ১৬. দুমর্শণ, ১৭. দুর্মুখ ১৮. দুস্কর্ণ, ১৯. কর্ণ, ২০. চিত্র, ২১. উপচিত্র, ২২. চিত্রাক্ষ, ২৩. চারুচিত্র, ২৪. অঙ্গদ, ২৫. দুর্মদ, ২৬. দুস্পহরশ, ২৭. বিবিত্‍সু, ২৮. বিকট ২৯. মম, ৩০. ঊর্ণনাভ, ৩১. পদ্মনাভ, ৩২. নন্দ, ৩৩. উপনন্দ, ৩৪. সেনাপতি, ৩৫. সুষেণ, ৩৬. কুন্দদর, ৩৭. মহোদর, ৩৮. চিত্রবাহু, ৩৯. চিত্রবর্মা, ৪০. সুবর্মা, ৪১. দুরোবিরোচন, ৪২. অয়োবাহু, ৪৩. মহাবাহু, ৪৪. চিত্রচাপ, ৪৫. সুকুন্ডল, ৪৬. ভীমবেগ, ৪৭. ভীমবল, ৪৮. বলাকা, ৪৯. ভাবাবক্রম, ৫০. উগায়ুধ ৫১. ভীমশ্বর, ৫২. কনকায়ু, ৫৩. দৃরায়ুধ, ৫৪. দৃঢ়বর্মা, ৫৫. দৃঢ়ক্ষেত্র, ৫৬. সোমকীর্তি, ৫৭. অনুদর, ৫৮. জরাসন্ধ, ৫৯. ধৃঢ়সন্ধ, ৬০. সত্যসন্ধ, ৬১. সহস্রবাক, ৬২. উগ্রসবা, ৬৩. উগ্রসেন, ৬৪. ক্ষেমমূর্তি, ৬৫. অপরাজিত, ৬৬. পন্ডিততস্ক, ৬৭. বিশাললক্ষ, ৬৮. দুরাধন, ৬৯. দৃঢ়হস্ত, ৭০. সুহস্ত, ৭১. বাতবেগ, ৭২. সুবরচা, ৭৩. আদিত্যকেতু, ৭৪. বহবাশী, ৭৫. নাগদত্ত, ৭৬. অনুযায়ী, ৭৭. নিসঙ্গী, ৭৮. কবচী, ৭৯. দণ্ডি, ৮০. দণ্ডধার ৮১. ধনুরগ্রহ, ৮২. উগ্র, ৮৩.ভীমরথ, ৮৪. বীর, ৮৫. বীরবাহু, ৮৬. অলুলোপ, ৮৭. অভয়, ৮৮. রৌদ্রকর্মা, ৮৯. দৃঢ়রথ, ৯০. চয়, ৯১. অনাধৃশ্য, ৯২. কুন্দভেদী, ৯৩. বিবারী, ৯৪. দীর্ঘলোচন, ৯৫. দীর্ঘবাহু, ৯৬. মহাবাহু, ৯৭. বুঢরু, ৯৮. কনকাঙ্গদ, ৯৯. কুন্ডজ, ১০০. চিত্রক।

মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৮

অকাল বোধন

অকাল বোধন


“মৃগকর্কটসংক্রান্তিঃ দ্বে তূদগ্দক্ষিণায়নে।
বিষুবতী তুলামেষে গোলমধ্যে তথাপরাঃ ॥”

অর্থাৎ সুর্য ধনুরাশি ত্যাগ করে মকর রাশিতে সঞ্চার হওয়াকে উত্তরায়ণসংক্রান্তি, মিথুনরাশি হতে কর্কটরাশিতে সঞ্চার হওয়াকে দক্ষিণায়ন সংক্রান্তি, কন্যারাশি হতে তুলারাশিতে সঞ্চার হওয়াকে জলবিষুবসংক্রান্তি আর মীনরাশি হতে মেষরাশিতে সঞ্চার হওয়াকে মহাবিষুব সংক্রান্তি বলা হয়ে থাকে।  
                                                               উত্তরায়ণে দেবতারা জেগে থাকেন, - তখন তাদের দিন। দক্ষিণায়ণে রাত্রিকাল। শরৎ কালে দক্ষিণায়ণ, এসময় তাই দেবপুজায় দেবতাদের জাগাতে হয়। এই জাগানোই হল বোধন।  এজন্য বাসন্তী পূজায় বোধন করতে হয় না। মাঘ থেকে আষাঢ় ছ’মাস উত্তরায়ণ; এ সময় দেবতারা জাগ্রত। শরৎ ঋতু দক্ষিণায়নে পড়ে, তখন দেবী নিদ্রিতা, এজন্য শারদীয়া দুর্গাপূজায় দেবীর জাগরণের জন্য বোধন করতে হয়। অকাল বোধন মানে অকালে জাগরণ।হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথি অথবা শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে হিন্দু দেবী দুর্গার পূজারম্ভের প্রাক্কালে এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
                    ওঁ ঐং রাবণস্য বধার্থায় রামস্যানুগ্রহায় চ।
              অকালে ব্রহ্মণা বোধো দেব্যস্তয়ি কৃতঃ পুরা।।
                  অহমপাশ্বিনে ষষ্ঠ্যাং সায়াহ্নে বোধয়মি বৈ।
অর্থাৎ, রাবণকে নাশ করার জন্য শ্রীরামচন্দ্রকে অনুগ্রহ করার জন্য অকালে দেবীকে জাগরিত করা হয়েছিল।  কালিকা পুরাণ অনুসারে ব্রহ্মরাত্রিতে দেবীর বোধন করেছিলেন শ্রীরামচন্দ ।
                  চণ্ডীপাঠ করি রাম করিল উৎসব।
                   গীত নাট করে জয় দেয় কপি সব।।
                    সায়াহ্নকালেতে রাম করিল বোধন।
                     আমন্ত্রণ অভয়ার বিল্বাধিবাসন।। …
                    আচারেতে আরতি করিলা অধিবাস।
                    বান্ধিলা পত্রিকা নব বৃক্ষের বিলাস।।

ভগবান শ্রীরামচন্দ্র ১০৮ পদ্ম দ্বারা দেবীপূজার সঙ্কল্প করেন। হনুমান পদ্মগুলি সংগ্রহ করে আনেন । দেবী ভক্তের ভক্তি পরীক্ষা করার জন্য ছলনা করলেন। তিনি একটি পদ্ম লুকিয়ে রাখলেন। পূজার সময় একটি পদ্মের অভাব হওয়ায় শ্রীরামচন্দ্র বিপদে পড়লেন। পূজা পূর্ণাঙ্গ না হলে দেবী অসন্তুষ্ট হবেন, সঙ্কল্পও সিদ্ধ হবে না। শ্রীরামচন্দ্র পদ্মলোচন নামে অভিহিত। সেজন্য তিনি নিজের একটি চক্ষুু উৎপাটিত করে তা মায়ের শ্রীচরণে অঞ্জলি দেবেন- এরূপ সঙ্কল্প করলেন। তিনি ধনুর্বাণ হস্তে চক্ষু উৎপাটন করবার উপক্রম করতেই দেবী আবির্ভূত হয়ে তাঁকে অভীষ্ট বর প্রদান করলেন।

আদ্যাশক্তি যদিও স্বরূপত : নামরূপাতীতা, তথাপি তিনিই মায়ারূপ মহিমাদ্বারা সমস্ত বস্তুরূপে সম্ভূতা হন। শাস্ত্রে রয়েছে- ত্বমেব সূক্ষ্মা স্থূলা ত্বং ব্যক্তাব্যক্তস্বরূপিণী। নিরাকারাপি সাকারা কস্ত¡াং বেদিতুমর্হতি ॥ অর্থাৎ, তুমিই আদ্যাশক্তি ভগবতী সূক্ষ্মা ও স্থূলা, ব্যক্ত ও অব্যক্ত স্বরূপিণী, নিরাকারা হয়েও সাকারা, তোমাকে কে জানতে পারে? কল্পনাময়ীর সঙ্কল্পশক্তি অমোঘ। কেননা কল্পনাময়ী চিন্ময়ী। সঙ্কল্প মাত্রই ইনি অনন্তকোটি বিশ্ব প্রসব করে থাকেন। অবাধ সৃষ্টি করাই তাঁর স্বভাব। সর্বজীবের জননী তিনি।

শ্রী শ্রী চন্ডী অনুসারে , দুর্গম নামক অসুরকে বধ করে দেবী দুর্গা নামে খ্যাত হন । দুর্গমাসুর  জীবকে দুর্গতি প্রদান করত । সংসার পথে এ অসুরের নাম স্বার্থান্ধতা। আধ্যাত্মিক পথে এ অসুরের নাম অবিদ্যা। দুর্গম স্বার্থান্ধতায় পতিত হয়ে জীব অশেষ দুর্গতি ভোগ করে। লোককল্যাণ বুদ্ধি জাগ্রত করে মা দুর্গা রক্ষা করেন।আবার সনাতন ধর্মশাস্ত্রে ‘দুর্গা’ নামটির ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে ‘দ’ অক্ষর দৈত্যনাশক, ‘উ-কার’ বিঘ্ননাশক, ‘রেফ’ রোগনাশক, ‘গ’ অক্ষর পাপনাশক ও অ-কার ভয়-শত্রুনাশক। অর্থাৎ দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন তিনিই দুর্গা। বিপদনাশিনী দেবীমাতা দুর্গা। দুর্গা শব্দের অপরার্থ  দুর্জ্ঞেয়া। মায়ের তত্ত্ব দুরধিগম্য;--  আমাদের জ্ঞানবুদ্ধির সামর্থ্য নেই তাঁকে জানা। তিনি কৃপা করে জানালে তবে জানতে পারি। সকল বস্তুতে যিনি মাতৃরূপে বিরাজিতা তিনিই বিশ্বজননী মা দুর্গা। 
আবার এই অকাল বোধনের সাথে জড়িত শরৎবিষুব। বৈদিক যুগে এক সময় শরৎকালে বছর শুরু হতো।আর নতুন বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হতো রুদ্রযজ্ঞ  । তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে শরৎকেই অম্বিকা বলা হয়েছে। রুদ্রের বোন অম্বিকা। অম্বিকার সাহায্যে রুদ্র ধ্বংস করেন। তার সাহায্যে যাকে ধ্বংস করেন, তুষ্ট হয়ে তিনিই তাকে শান্ত করেন।তাই আচার্য মহীধর লিখেছেন, যিনি রুদ্র নামক নিষ্ঠুর দেবতা, তার বিরোধীকে হত্যা করতে ইচ্ছে করেন এবং অম্বিকার সাহায্যে সে ইচ্ছা পূরণ করেন।
শরৎকালে নানা রোগে দেশে মড়ক দেখা দিত। নতুন বছরের শুরুতে সবাই রুদ্রযজ্ঞের অনুষ্ঠান করতেন সব জীবের শান্তি কামনায়। তারা বিশ্বাস করতেন, অম্বিকাই শরৎরূপ ধারণ করে রুদ্রের ধ্বংস কাজে রোগ সৃষ্টির দ্বারা সাহায্য করে থাকেন। তাই রুদ্রযজ্ঞে রুদ্রের সঙ্গে অম্বিকাকেও খুশি করার আয়োজন করা হতো। এই অনুষ্ঠানই পরবর্তীতে দুর্গাপূজার রূপ নেয়। সংক্ষেপে দুর্গাপুজো সম্পর্কে বলা হয় - 

বোধয়েদ্বিল্বশাখায়াং ষষ্ঠ্যাং দেবীং ফলেষু চ।
সপ্তম্যাং বিল্বশাখাং তামাহৃত্য প্রতিপূজয়েৎ ॥
পুনঃ পূজাং তথাষ্ঠম্যাং বিশেষেণ সমাচরেৎ।
জাগরঞ্চ স্বয়ং কুর্য্যাদ্বলিদানং তথা নিশি ৷।
প্রভূতবলিদানন্ত নবম্যাং বিধিবচ্চরেৎ
ধ্যায়েদ্দশভুজাং দেবীং দুর্গা মন্ত্রেণ পূজয়েৎ।
বিসর্জ্জনং দশম্যান্ত কুর্য্যাদ্বৈ শারদোৎসবৈঃ ॥
                                 - কালিকা পুরাণম
অর্থাৎ  শারদ আশ্বিন মাসের মুখ্যচান্দ্র ষষ্ঠী তিথিতে দেবীকে ফলযুক্ত বিল্বশাখায় বোধন করতে হবে। সপ্তমী তিথিতে সেই বিল্বশাখা আহরন পুর্বক তাতে দেবীর পুজা করতে হবে। অষ্টমী তিথিতে বিশেষভাবে দেবীর পুজা করে ও রাত্রি জাগরণ পুর্বক বলিদান সহকারে দেবীর পুজা করতে হবে। নবমী তিথিতে দশভুজা দুর্গার ধ্যান সহকারে, বিবিধ উপচারে পুজা, বলিদান পুর্বক দেবীর নবমী পুজা বিহিত হোম সম্পন্ন করতে হবে।  দশমী তিথিতে শারদোৎসব বিহিত দেবীর বিসর্জ্জন করতে হবে।



সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮

Loonar dynasty - চন্দ্রবংশ

চন্দ্রবংশ
সূর্যবংশ<=এই পাতায়)
পুরাণ অনুসারে চন্দ্র বংশের বিবর্তন :-
ব্রহ্মা
=> ঋষি অত্রি। ইনার স্ত্রী অনসূয়া।
=> চন্দ্র
=> বুধ +ইলা ( নারী রুপ )
=> পুরুরবা => আয়ু, শ্রুতায়ু, সত্যায়ু, রয়, বিজয়, জয় ।
 আয়ু +  ইন্দুমতী
=> নহুষ,    ক্ষত্র, রজি, রভ,  অনেন ।
রজির 500 পুত্র।
রভ => রভস => গম্ভীর => অক্রীয় => ব্রহ্মভিট ।
অনেন => শুদ্ধ => শুচি => চিত্রক => সন্তরজস ।
ক্ষত্রবৃদ্ধ=> সুহোত্র => কস্য, কুশ, গ্রৎসমদ। কস্য => কাশী => রাষ্ট্র
=> দীর্ঘতমা => ধন্বন্তরি (আয়ুর্বেদাচার্য্য )
=> কেতুমান => ভীমরথ => দিবোদাস => দ্যুমত (প্রতর্দন/শত্রুজিত/রতিধ্বজ )
=> অলর্ক (66000 বছর ) ও অন্যান্য => সন্ততি => সুনিথা => নিকেতনা
=> ধর্মকেতু => সত্যকেতু => ধৃষ্টকেতু => সুকুমার => বীতিহোত্র
=> ভর্গ => ভর্গভূমি ।
কুশের => প্রতি => সঞ্জয় => জয় => হর্নবল => সহদেব => হীন
=> জয়সেন => সুকৃতি => জয়।
গ্রৎসমদার পুত্র সুনক
=> সুনকের পুত্র সৌনক ঋষি।
1. নহুষ 
=> যাতি, যযাতি, সংযাতি আয়াতি, বিয়াতি ও কৃতি।
   যযাতি + শুক্র কন্যা দেবযানী ও শর্মিষ্ঠা
=> যদু, তূর্বসু, দ্রহু, অনু,। যদু ও তূর্বসু শুক্র কন্যা দেবযানীর পুত্র।
এবং দ্রহু, অনু ও পুরু দৈত্যরাজ বৃষপর্বার কন্যা শর্মিষ্ঠার পুত্র।
তূর্বসুর ছয়পুরুষ (যবন বংশ ) ও দ্রুহুর নয় পুরুষ যারা( ত্বিপ্র বংশ ) ।
অনুর পুত্র স্ববর্ণ, চক্ষু ও প্রেন্সু। এরা ম্লেচ্ছ বংশ সৃষ্টি করে।
স্ববর্ণের চারপুরুষ পর মহামানা।
=> মহামানার পুত্র ঊষিনর ও তীক্ষু
তীক্ষুর একুশ পুরুষ।
ঊষিনরের শিবি ও আরো তিন পুত্র
=> শিবির চার পুত্র।
=================================
যদু বংশ
 যদুর চার পুত্র, - - সহস্রজিৎ, ক্রোষ্ট , নল ও রীপু।
সহস্রাজিত =>সত্যজিৎ => মহাভয়, রেণুহয় ও হৈহয়।
হৈহয় => ধর্ম  => নেত্র  => কুন্তী  => সোহানজী
 => মাহীস্মত  => দ্রুমদ ও ধানুকা
ধানুকা  => কার্ত্তাবীর্য , কৃতগ্নী, কৃত বর্মন, কৃতুযাস।
 =>কার্ত্তাবীর্য => কার্ত্তাবীর্য অর্জুন
=>  জয়ধ্বজ, শূরসেন, বৃষভ, মধু, ঊর্জিতা ও 995 জন পুত্র।
জয়ধ্বজের  => তালজঙ্ঘ  => বীতিহোত্র ও 99 পুত্র (এরা তালজঙ্ঘ ) ।
 মধুর পুত্র বৃষ্ণী।
ক্রোষ্টের  => বৃজিনাবৎ  => স্বহিতা  =>বিষাদগু  =>চিত্ররথ
 => শশবিন্দু  ( শশবিন্দুর দশহাজার স্ত্রী)  ও দশকোটি সন্তান।
=> পৃধুশ্রবা  => ধর্ম  => রুচক   =>জমখা  =>  বিদর্ভ
=> বিদর্ভের তিন পুত্র, কুশ, ক্রথ ও রোমপাদ
 => ভদ্রু  => কৃত  => ঊশিকা  => চেদি
=>  দমঘোষ  => শিশুপাল, ইনাকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বধ করেন।
ক্রথের উনিশ পুরুষ পর সত্ত্বত।
=> সত্ত্বতের সাত পুত্র । ভজমান, বৃষ্ণী, দেবব্রত, ভজি, দিব্য, অন্ধক ও মহাভোজ।
ভজমানের => নিমলোচি, কিঙ্কনা, ধৃষ্টি, সত্যজিৎ, সহস্রজিৎ ও আয়ুজিৎ ।
দেবব্রতের পুত্র বভ্রূ।
মহাভোজ হতে ভোজ বংশের উৎপত্তি।
================
অন্ধক বংশ
অন্ধক
 => কুকুর ভজমান, শুচি ও কম্বলবরীষ ।
=>কুকুর  => বাহনী  => বিলোমান  => কপোট-রোমান
 => অনু  => অন্ধক  => দুন্দুভি  => অবিদ্যতা  => পুনর্বসু
=> আহুক ও আহুকি।
=> আহুকের দুই পুত্র। দেবক ও উগ্রসেন।
 দেবকের চার পুত্র ও ছয় কণ্যা। দেবব্রত , উপদেব, সুদেব , দেববর্ধন, ধৃতিদেবা,
শান্তিদেবা, উপদেবা, শ্রীদেবা, সহদেবা ও দেবকী।
উগ্রসেনের আট পুত্র, পাঁচ কণ্যা ও কংস। কংস, সুনাম, ন্যাগ্রোধ,
কঙ্ক, শঙ্কু, সুহু, ধৃষ্টি তুষ্টিমত ও রাষ্ট্রপাল । পাঁচ কন্যা বসুদেবের স্ত্রী।
================================
বৃষ্ণী বংশ
বৃষ্ণী
=> সুমিত্র ও যুধাজিৎ।
যুধাজিৎ => নিঘ্ন, সিনি ও অনামিত্র।
নিঘ্নের দুই পুত্র। সত্রাজিৎ ও প্রসেন।
অনামিত্র  => সিনয় 2 ও বৃষ্ণী।
 সিনি 2 =>সাত্যক => যুযুধন্য => জয়  =>কুনি  =>যুগন্ধর।
বৃষ্ণীর  => সাফল্যক ও চিত্ররথ।
সাফল্যক  => অক্রূর ও অন্য বারো পুত্র ও এক কণ্যা সুচারু।
অক্রূরের => উপদেব ও দেবব্রত ।
চিত্ররথের   => পৃথু, বিদূরথ ও অন্যান্যরা।
বিদূরথ =>শূর => ভোজমৎ => দুই পুরুষ পর হৃদিক।
হৃদিকের তিন পুত্র। দেবমিধ, শতধনু ও কৃতবর্মা।
দেবমিধের পুত্র শূরসেন।
=> শূরসেনের বসুদেব, কুন্তী, ছয়টি কণ্যা, নয় পুত্র ।
বসুদেবের কৃষ্ণ, বলরাম, শুভদ্রা ও অন্যান্যরা।
কুন্তীর কর্ণ ও পাণ্ডবগন।
=======================
কৃষ্ণ
রুক্মিনী ( ভীস্মক কন্যা) => নয় পুত্র ও এক কন্যা। প্রদ্যুম্ন, সুচারু, হস্ব, চকভদ্র, সদস্ব,
                 চারুগুপ্ত, চারুক,কন্যা চারুহাসি।
সত্যভামা ( যাদব, শত্রাজিৎ কন্যা ) => সাত পুত্র । ভানু, ভীমরথ, খাদ, রোহিত, দীপ্তিমান,
                তমবন্ধ, জলন্ধম।
সূর্য্যা ( সূর্য কন্যা) =>
মন্ত্রবৃন্দা (মন্ত্রবৃন্দ কন্যা ) => তিন পুত্র। সুমিত্র, চারুমিত্র, মিত্রবৃন্দ।
সত্যা (সত্যজিৎ কন্যা ) =>
লক্ষ্মণা (রাজা মন্দ্রের কন্যা ) =>
জাম্বুবতী (জাম্বুবান কন্যা ) => পুত্র শাম্ব ।
ভদ্রা (রাজা ভদ্রসেন কন্যা ) =>
==========================
পুরু বংশ
পুরু (স্ত্রী কৌশল্যা ) => জনমেনজয় (স্ত্রী অনন্তা ) => প্রাচীনবৎ(স্ত্রী অস্মকী ) => প্রবির
=> মনস্য => চারুবেদা => সুধন্বা => ভোগ্য
=> সন্যাতি => অহন্যাতি => রুদেউস্ব
=> ঋতেয়ু, কাকস্য, স্থনদিলেয়ু, কৃতেয়ু, জলেয়ু, বন্যেয়ু,
          ব্রতেয়ু, সন্নিটেয়ু,ধর্মেয়ু, শতেয়ু।
ঋতেয়ু => রন্তিনভ => সুমতি, ধ্রুব, অপরিরথ।
অপরিরথ => কান্ব => মেধাতিথী => প্রস কান্ব ও অন্য ব্রাহ্মণগন।
সুমতি => রেভি => দুষ্মন্ত (স্ত্রী শকুন্তলা ) => ভরত
        => ভরদ্বাজ => মেতু => ভরত (2) => সহস্ত্র => হস্তি (হস্তিনাপুর নগরের প্রতিষ্ঠাতা )
        => যান => অক্ষয় => বিলক্ষ => সম্ভ => বিশ্বামিত্র
       => দেবরাত => ইনকা => অকসন => সমরন => কুরু (কুরু বংশ )।
       => বরক => শতগীর => জনু => সরাট => সরাভূম =>জাতুসোন
       => ওয়াদিকা => অন্য-ভয়ো => দলীপ  => প্রতীপ
      => দেবাপী(কুষ্ঠ হয়) , বহ্লীক(বহ্লীকের রাজা ) , শান্তনু
       শান্তনু => দেবব্রত (ভীস্ম ), চিত্রবীর্য্য, বিচিত্রবীর্য্য
বিচিত্রবীর্য্য => পাণ্ডু, ধৃতরাষ্ট্র, বিদূর ।
ধৃতরাষ্ট্র => শত পুত্র ও এক কন্যা দুঃশলা।
  পাণ্ডু      =>  যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন (কুন্তী হতে )
                     নকল ও সহদেব (মাদ্রী হতে )   ।
ঋক্ষ => সম্বরন (স্ত্রী সূর্য কন্যা তপতী ) => কুরু => পরিক্ষী, সুধন্ব, জন্হু, নিষধ ।
সুধন্ব => সুহোত্র => চ্যাবন => কৃতি => উপরিচর বসু
=> বৃহদ্রথ, কুশিম্ব, প্রতিগ্র, মাত্য, চেদীপ্য ও অন্যান্য ।
বৃহদ্রথ =>কুশাগ্র, জরাসন্ধ ।
জরাসন্ধ => সহদেব => সোমাপি => শ্রুতশ্রবা ।
কুশাগ্র => ঋষভ => সত্যহিতা => পুষ্পবৎ => জহু
জন্হু => সুরথ => বিদূরথ => সার্বভৌম => জয়সেন
=> রাধিক => আয়ুত্যু => অক্রোধন্ব => দেবতিথি
=> ঋক্ষ => দিলীপ => প্রতীপ => দেবাপী(প্রবজ্যা নেন ) , শান্তনু, বহ্লীক।
বহ্লীক => সোমদত্ত => ভূরিশ্রবা => সল