মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

নব পত্রিকা




কলা, কচু ,হলুদ ,জয়ন্তী ,মান ,বেল,ডালিম ,অশোক ,ধান - -  এই নয়টি গাছকে একত্রে বলা হয় নবপত্রিকা।  দুর্গাপূজাতে এই নবপত্রিকা  একটি অপরিহার্য্য অংশ   । 
শাস্ত্রে বলা হয়েছে 
"……… রম্ভা ,কাচ্চ, হরিদ্রা , জয়ন্তী , বিল্বদাড়িমৌ ।
অশোকা, মানকশ্বৈব, ধানাঞ্চ, নবপত্রিকা ।।"
 


অর্থাৎ কলা, কচু, হরিদ্রা, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, অশোক, মান ও ধান এরা নবপত্রিকা । এই সকল বৃক্ষের মধ্যে মাতৃ শক্তির অবস্থান চিন্তা করা হয় ।
রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী, কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা, হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা, জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী, বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা,
দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা, অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা, মানাধিষ্ঠাত্রী চামুণ্ডা ও ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী
কলার অধিষ্ঠাত্রি ব্রাহ্মনী, কচুর কালীকা, হরিদ্রার দুর্গা, জয়ন্তীর কার্ত্তিকী, বেলের শিবা, ডালিমের রক্তদন্তিকা, অশোকের দেবী শোকরহিতা (চামুন্ডা) , ধানের লক্ষ্মী ।
      এই  বৃক্ষগুলি আমাদের প্রয়োজনীয় ও  বিশেষ গুণসম্পন্ন   যা আমাদের মানব দেহের জন্যেও উপকারি। 
কলাঃ
এটি আমাদের একটি পরিচিত ফল। কলার বৈজ্ঞানিক নাম Musa Paradisiaca L. কলার ব্যাপক পুষ্টি গুণের জন্যে একে ফ্রুট অব ওয়ায়িজ বা জ্ঞানের ফল বলা হয়। কলাতে প্রায় সকল প্রকার ভিটামিন অর্থাৎ এ, বি, সি, ডি এবং ম্যাগনেশিয়াম, পটাসিয়াম, সুক্রোজ, ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজ ইত্যাদি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে যেগুলো মানব দেহের জন্যে প্রচুর দরকারি ।
কচুঃ
কচুর বৈজ্ঞানিক নাম Colocasia Esculenta(L) Schott . কচু শাঁকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ। এছাড়া রয়েছে প্রোটিন, শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন বি-১(থায়ামিন) বি-২(রিবোফ্লাবিন) সি ক্যালসিয়াম , লৌহ ইত্যাদি গুরুত্ত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান ।
হরিদ্রাঃ
হলুদ কে সংস্কৃতে হরিদ্রা বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Curcuma Longa L. এটি সাধারণত মশলা এবং রূপ চর্চাতে ব্যাবহৃত হয় । হলুদে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, খনিজ লবণ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, লোহা ইত্যাদি আছে। তাছাড়া হলুদ ক্যান্সার প্রতিরোধি এবং মানব দেহে টিউমারের বৃদ্ধি রোধ করে ।
জয়ন্তীঃ
এই গাছটির সংস্কৃত নাম জয়ন্তীকা ও বিজ্ঞানসম্মত নাম Sesbania sesban ।
গাছটি জমির নাইট্রোজেন আবদ্ধিকরনে সাহায্য করে জমি উর্বর করে ।
বেলঃ
সংস্কৃতে বেলকে  শ্রীফল বলা হয়। বেলের বৈজ্ঞানিক নাম Aegle marmelos correa । বেল গাছ শিব ঠাকুরের প্রিয়। বেলে রয়েছে শর্করা, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ক্যারোটিন, স্নেহ, থায়ামিন,রিবোফ্লাবিন, নায়াসিন, অ্যাসকোরিক আ্যাসিড, টার্টারিক আ্যাসিড, ইত্যাদি উপাদান । বেল কোষ্ঠ্যকাঠিন্য সমস্যায় খুব কার্যকর । এ ছাড়া অজীর্ন, পেটের গোলমাল ইত্যাদিতে খুবই উপকারি ।
দাড়িম্ব (ডালিম)ঃ এটি আমাদের পরিচিত ফল । বৈজ্ঞানিক নাম Punica granatum Linn । আমরা সবাই জানি রোগীদের পথ্য হিসাবে এটি বহুল ব্যাবহৃত। এটি রক্ত বর্ধক এবং মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে ।
অশোকঃ
এটি মাঝারি আকারের চির সবুজ গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Saraca indica । এই গাছ ভেষজ গুণ সম্পন্ন । আন্ত্রিক রোগ, উদারাময়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও স্ত্রীরোগ চিকিৎসায় এটি ব্যাবহৃত হয় ।
মানঃ
এটিও আমাদের পরিচিত । বৈজ্ঞানিক নাম Alocasia indica (Roxb)Schott । এটি রক্ত দুষ্টিনাশক।অশ্বরোগে উপকারি, সেই সাথে কোষ্ঠবদ্ধ রোগে কার্যকর । বাত ব্যাথা নিরাময়ে এটি ফলপ্রদ ।
ধানঃ
ধানের বৈজ্ঞানিক নাম Oryza sativaOryza glaberrima ।ধান Graminae/Poaceae গোত্রের উদ্ভিদ।  ধানের কথা বিস্তারিত নাই বা বলি, কারণ এ সম্পর্কে সবাই আমরা কম বেশি জানি ।
মহাসপ্তমীর দিন সকালে নিকটস্থ নদী বা কোনও জলাশয়ে  নিয়ে যাওয়া হয়। পুরোহিত নিজেই কাঁধে করে নবপত্রিকা নিয়ে যান। তাঁর পিছন পিছন ঢাকীরা ঢাক বাজাতে বাজাতে এবং মহিলারা শঙ্খ ও উলুধ্বনি করতে করতে যান।  স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে নতুন শাড়ি পরিয়ে দেবীর ডান দিকে  স্থাপন করা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশের পূর্বে পত্রিকার সম্মুখে দেবী চামুণ্ডার আবাহন ও পুজো করা হয়। পত্রিকাস্থ অপর কোনো দেবীকে পৃথকভাবে পুজো করা হয় না। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে স্নান করানো হয়। এরপর বাকি দিনগুলিতে নবপত্রিকা অন্যান্য দেবদেবীদের সঙ্গেই পূজিত হন। 
অনেকে বলেন নবপত্রিকা নাকি গণেশের বউ । যা কি না একটি ভ্রান্তিমূলক কথা । পৌরানিক কাহিনীতে আমরা গণেশের স্ত্রীর নাম পাই ঋদ্ধি এবং সিদ্ধি । আসলে নবপত্রিকা কে ঘোমটা দিয়ে নতুন বধূর মত করে সাজানো হয়, যার ফলে অনেক জায়গায় নবপত্রিকা কে কলাবৌ নামে ডাকা হয় এবং দুর্গা পূজার চালচিত্রে তার অবস্থান হল মাতৃভক্ত গণেশের পাশে । সম্ভবত এই কারণে সমাজে ভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে ।উপরের বর্ণনায় আমরা স্পষ্টই দেখেছি নবপত্রিকা অধিষ্ঠাত্রী দেবীরা যেমন ধানে লক্ষী, হলুদে দুর্গা এরা সবাই মায়ের অংশ , তাই নবপত্রিকা গণেশের মা, তথা প্রকৃতি স্বরূপিণী মা দুর্গা । নিঃসন্দেহে আমাদের এই মহাপাপজনক ভ্রান্ত ধারণা থেকে উত্তোরন প্রয়োজন ।

বুধবার, ২২ আগস্ট, ২০১৮

অ্যান্ড্রোয়েডের সাত সতেরো

HISTORY OF ANDROID
                              অ্যান্ড্রয়েড নামটি আজ একটি বহুল প্রচলিত না।  কম বেশি সবাই এখন অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ব্যবহার করছেন। তবে  অনেকেই আছেন যারা অ্যান্ড্রয়েড সম্পর্কে বিশদ কিছু জানেন না। আসুন এ সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করি।


অ্যান্ড্রয়েড এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন অ্যান্ড রুবি ।তিনি ছিলেন গুগল এর একজন ডেভলপার  । তিনি গুগল এ থাকা অবস্থায় এই জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমটি (OS ) আবষ্কিার করেন ।
অ্যান্ড্রয়েড আসলে লিনাক্স কার্নেল ভিত্তিক একটি অপারেটিং সিস্টেম ।অ্যান্ড্রয়েড প্রাথমিকভাবে টিভি  ইন্টারফেস , ঘড়ি ,স্মার্টফোনের এবং ট্যাবলেট কম্পিউটার হিসেবে touchscreen মোবাইল ডিভাইস ডিজাইন করা হয় । এই ডিভাইসে একটি ভার্চুয়াল কীবোর্ড ব্যবহার করা হয় ।প্রাথমিকভাবে touchscreen ইনপুট এর জন্য ডিজাইন করা হচ্ছে সত্ত্বেও এটি গেম কনসোল, ডিজিটাল ক্যামেরা , বিভিন্ন ধরনের সেন্সর যোগ করা হয় এর পর অন্যান্য
ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার করা হয়েছে ।

 অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড এর সোর্স কোড [ ওপেন সোর্স ] লাইসেন্সের অধীনে গুগল দ্বারা
প্রকাশ করা হয় ।
জুলাই ২০১৩ তে গুগল প্লে স্ট্ররে এক মিলিয়ন অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন প্রকাশিত হয়
এবং তখন অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড ছিল ৫৩৮ মিলিয়ন । তারপর ধীরে ধীরে
বাজারে অ্যান্ড্রয়েড এর চাহিদা বাড়তে থাকে । ২০১৪ সালে অ্যান্ড্রয়েড সব
থেকে বৃহত্তম অপারেটিং সিস্টেম এর জায়গা দখল করে ।

name
Version numberLinux kernel versionl Initial release dateAPI level
(No codename)1.0 ? sep. 23,20081
Petit Four1.12.6.X February 9, 20092
Cupcake1.5 2.6.27 April 27, 2009 3
Donut1.6 2.6.29 September 15, 20094
Eclair2.0 – 2.12.6.29October 26, 2009 5-7
Froyo2.2 – 2.2.32.6.32May 20, 20108
Gingerbread2.3 – 2.3.72.6.35 December 6, 2010 9-10
Honeycomb3.0-3.2.6 2.6.36 February 22, 2011 11-13
Ice Cream Sandwich4.0-4.0.43.0.1 October 18, 2011 14-15
Jelly bean4.1-4.3.1 3.0.31 to 3.4.39 July 9, 201216-18
kitkat4.4-4.4.4 3.10October 31, 201319-20
Lollipop 5.0-5.1.13.16.1November 12, 2014 21-22
Marshmallow6.0-6.0.13.18.10 October 5, 2015 23
Nougat 7.0-7.1.24.4.1 August 22, 201624-25
Oreo8.0-8.1 4.10 August 21, 201726-27
Pie9.04.4.107, 4.9.84, and 4.14.42 August 6, 2018 28

সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১৮

মা তারা 'র ইতিহাস - history of Maa Tara

🏵তারাপীঠের ২০০বছর ও ইতিহাস 🏵
                ************************
তারাপীঠের বর্তমান মন্দিরের ইতিহাস প্রায়  দুশো বছর হলেও তারাপীঠের ইতিহাস কিন্তু হাজার দেড়হাজার বছরেরও অধিক।   তার ইতিহাস প্রাচীন, আবছায়া, অস্পষ্ট এক অতীতের মধ্যে মিশে আছে। একদিকে ইতিহাস, দলিল-দস্তাবেজ আর অন্যদিকে পুরাণ ও লোককথা। সব মিলেই তারাপীঠের মন্দির এবং তারামায়ের কাহিনী এক অন্য স্থান দখল করেছে ।

তারাপীঠের বর্তমান মন্দির মল্লারপুরের জমিদার স্থাপন করলেনও গল্পের শুরু  জয়দত্ত সদাগরের কথা হতে। আজও মুখে মুখে চলে আসছে তাঁর কাহিনী। আজ থেকে প্রায় আটশো বছর আগের ঘটনা। তিনি ছিলেন বীরভূমের রত্নাগড় নিবাসী। একবার তিনি বাণিজ্যে প্রভূত সম্পদ, অর্থ লাভ করে বাড়ি ফিরছিলেন। চলার পথে অসুস্থতায় মৃত্যু হল তাঁর প্রাণাধিক পুত্রের। বাড়ি ফিরেই ছেলের অন্ত্যেষ্টি করবেন স্থির করে তিনি মাঝিদের বললেন, পুত্রের দেহটাকে ভালো করে ঘি মাখিয়ে রাখতে। তাতে পচন ধরবে না। এদিকে সন্ধ্যা নেমেছে। রাত্রিটা তাই পথেই বিশ্রাম নিতে হবে। চলতে চলতে থামলেন এক বিশাল জঙ্গলের পাশে। স্থানটির নাম চণ্ডীপুর।

রাতে ঘুম নেই জয়দত্তের। মৃত ছেলের দেহ আঁকড়ে রাত জাগছেন তিনি। সেই সময় তারামা এক কুমারী মেয়ের রূপ ধরে নৌকার কাছে এসে দাঁড়ালেন। তাঁর কালো রূপে যেন আলো ছিটকে পড়ছে। রাত্তির আকাশজুড়ে অপূর্ব এক জ্যোতি। অপূর্ব সুন্দরী সেই মেয়েটি জয়দত্তকে জিজ্ঞাসা করলেন,‘ও বাছা, এত নৌকা ভরে কী নিয়ে চলেছো গো?’ পুত্রশোকে জয়দত্তের মন ভারাক্রান্ত ছিল। তাই তিনি রাগত স্বরে মেয়েটিকে বললেন, ‘ছাই আছে’। সে কথা শুনে মেয়েটি ‘আচ্ছা’ বলে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে জয়দত্ত দেখলেন তাঁর নৌকার সব বাণিজ্যসামগ্রী, অর্থ ছাইতে পরিণত হয়েছে। পরদিন সকালে মাঝিরা রান্নায় বসল। খেয়েদেয়ে নৌকা নিয়ে যাত্রা করতে হবে। কাটা শোল মাছ কাছেই এক কুণ্ডের জলে ধুতে গেল তারা। কী আশ্চর্য! জলের স্পর্শ পেয়ে মাছটি জ্যান্ত হয়ে সাঁতরে চলে গেল। মাঝিরা দৌড়ে এসে জয়দত্তকে সব কথা জানাল। জয়দত্তের মনে পড়ল আগের রাতের কথা। সেই মেয়েটির কথা। তখন পুত্রশোকে কাতর হয়ে বারবার তিনি বলতে লাগলেন, ’মাগো দেখা দে। কে তুই মাগো আমাকে এমন পরীক্ষা করে গেলি। আমাকে ক্ষমা কর মা। আমার সন্তানকে বাঁচিয়ে দে।’

সেদিন রাতেই স্বপ্নের মধ্যে ফিরে এলেন সেই মেয়েটি। তাঁকে দেখে জয়দত্ত বললেন, ‘পুত্র মলো ধন ছাই কিসের লাগিয়া।’ কুমারী মেয়ে রূপী তারা মা তাঁকে বললেন, ‘ভবানী বলেন সাধু না হও কাতর /প্রাতে উঠি পাবে ধন নৌকার ভিতর।’ সেই সঙ্গে তারা মা তাঁকে বললেন, কুণ্ডের জল ছেলের গায়ে ছড়ালেই সে বেঁচে উঠবে। সকালে জয়দত্ত তাঁর হারানো সম্পদ ফিরে পেলেন এবং বশিষ্ঠকুণ্ডের জল ছেলের গায়ে ছেটাতেই ছেলে ‘তারা তারা’ বলে বেঁচে উঠল। ছেলের মুখে তারা নাম শুনে বিস্মিত জয়দত্ত বুঝতে পারলেন দেবী তারার অলৌকিক কৃপার কথা। পুত্রকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে তিনি সারাদিন বসে তারা মায়ের জপ করতে লাগলেন। রাতে আবার দেবী তাঁকে স্বপ্নে দর্শন দিলেন। তাঁকে আদেশ করে বললেন, ‘এই জঙ্গলের মধ্যে একটা শ্বেতশিমুল গাছের নীচে একটা শিলাবিগ্রহ রয়েছে। সেই বিগ্রহ একটা মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করে তার পুজোর ব্যবস্থা করবি। আমি হলাম উগ্রতারা। জঙ্গলের মধ্যে শ্মশানে আমার বাস।’ পরদিন সকালে লোকজন নিয়ে সেই বিশাল জঙ্গলে খুঁজে খুঁজে শ্বেতশিমুল গাছের নীচ থেকে শিলাবিগ্রহ আবিষ্কার করলেন জয়দত্ত। কাছেই পেলেন চন্দ্রচূড় শিবের মূর্তি। বশিষ্ঠকুণ্ড বা জীবিতকুণ্ডের সামনে তাড়াতাড়ি মন্দির নির্মাণ করে সেই শিলামূর্তি ও চন্দ্রচূড় শিবের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করলেন তিনি। শুধু তো মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেই হবে না। তার নিত্যপূজাও দরকার। তাই জয়দত্ত কাছেই মহুলা গ্রামের এক ব্রাহ্মণকে নিত্যপূজার দায়িত্ব দিয়ে বিদায় নেন।

এভাবেই তারাপীঠে প্রথম মন্দির নির্মাণ হয়। শুরু হয় মায়ের ভোগরাগ। কিন্তু তার আগে থেকেই এই স্থান তারামায়ের বিরাজক্ষেত্র। পুরাণেও এই স্থানের বর্ণনা মেলে। এখানকার সিদ্ধ শ্মশানে বহু সাধুসন্ত সিদ্ধিলাভ করেছেন। পুরাণের ঩সেই দক্ষযজ্ঞের কাহিনী আমরা জানি। পতিনিন্দা সহ্য করতে না পেরে দক্ষের যজ্ঞাগারে আত্মাহুতি দেন সতী। সেকথা শুনে শিব সতীর দেহ নিয়ে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করতে শুরু করেন। শিবকে থামাতে বিষ্ণু তাঁর চক্র দিয়ে সতীর দেহ খণ্ডবিখণ্ড করেন। সেই দেহখণ্ডগুলি বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখানে এক একটি সতীপীঠ গড়ে ওঠে। সতীর ঊর্ধ্ব নয়নতারা বা প্রজ্ঞানয়ন পড়েছিল তারাপীঠের সেই শ্বেতশিমূল গাছের নীচে। পুরাণের কাহিনী থেকে আরও জানা যায়, সতীহারা শিব দেবীকে কামনা করে এখানে এসে সাধনা করেন। তিন লক্ষ জপ করেছিলেন। তাঁর সাধনায় তুষ্ট হয়ে তারা বলেছিলেন, তিনি আবার উমারূপে তাঁর কাছে স্ত্রী রূপে যাবেন। আরও জানা যায়, মহামুনি বশিষ্ঠ বিষ্ণুর দ্বারা আদিষ্ট হয়ে এখানে এসে সাধনা করেছিলেন। সেই শ্বেতশিমুল, গাছের নীচে বসে তিনিও তিন লক্ষ তারা জপ করেছিলেন। তিনি সাধনলাভ করেছিলেন আশ্বিন মাসের কোজাগরী শুক্লা চতুর্দশীতে। আরও আশ্চর্যের ঘটনা হল, জয়দত্ত মন্দির প্রতিষ্ঠা করে প্রথম যেদিন দেবীর পুজো করেছিলেন, সেদিনটাও ছিল কোজাগরী শুক্লা চতুর্দশী। আজও এই বিশেষ দিনে তারামায়ের পুজো ধুমধাম করে হয়।

কেন এখানকার দেবী নাম তারা হল, তাই নিয়েও আছে পুরাণের এক কাহিনি। সমুদ্রমন্থনে ওঠা বিষ পান করে শিব হয়ে উঠলেন নীলকণ্ঠ। বিষে জর্জরিত তিনি। সেই যন্ত্রণা থেকে কীভাবে শিব মুক্তি পাবেন। সব দেবতা ‘দেবী তারার’ কাছে গিয়ে বললেন, শিবকে গরলমুক্ত করতে। ‘দেবী তারা’ তখন শিবকে আপন সন্তানের মতো কোলে নিয়ে আপন স্তন্য থেকে অমৃত পান করাতে লাগলেন। সেই অমৃত পান করে শিবের বিষজ্বালা দূর হল। সেই থেকে দেবীর নাম হল তারিণী। তিনি শিবকে তারণ করেছেন। এই বিশ্বকেও তিনি তারণ করেন। সেই তারিণী থেকেই তারা নামের সৃষ্টি।

পুরাণ থেকে মধ্যযুগ হয়ে ফেরা যাক আধুনিক বাস্তবের ইতিহাসে। জয়দত্তের তৈরি করা মন্দির একদিন ক্রমেই জীর্ণরূপ ধারণ করল। তখন সেই মন্দিরকে নতুনভাবে নির্মাণ করতে এগিয়ে এলেন বীরভূমের এড়োল গ্রামের রামজীবন রায়চৌধুরী। সেটি হল তারাপীঠের মন্দিরের দ্বিতীয় নির্মাণ। সেটা ছিল আনুমানিক ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দ। রামজীবন ছিলেন তারাপীঠের এলাকা ওই পুরো এলাকার পত্তনিদার। তারাপীঠের মন্দিরের ভগ্নদশা দেখে ভক্ত রামজীবনের মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু মন্দির সংস্কারের মতো অর্থ তাঁর ছিল না। তাই প্রজাদের কাছ থেকে তোলা খাজনার টাকায় তিনি আবার নতুন করে মন্দির গড়ে দিলেন। এর ফলে তিনি খাজনার টাকা তৎকালীন বাংলার নবাব আলিবর্দি খাঁকে দিতে পারলেন না। এর বিচার করার জন্য তাঁকে পেয়াদারা মুর্শিদাবাদে ধরে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, খাজনার টাকা দিয়ে তিনি তারামায়ের মন্দির নির্মাণ করেছেন। কোনওরকম তছরুপ তিনি করেননি। নবাব একথার সত্যতা বিচারের জন্য লোক পাঠালেন। তাঁরা ফিরে এসে নবাবকে জানালেন, রামজীবন সত্য কথাই বলেছেন। তাঁর সত্যবাদিতায় খুশি হয়ে নবাব সব খাজনা মকুব করে রামজীবনকে রেহাই দিলেন।

সময় পেরিয়ে যায়। দ্বারকা নদী দিয়ে গড়িয়ে যায় কত জল। কত সাধক এখানে আসেন আবার সিদ্ধিলাভ করে চলে যান। একদিন এলেন সাধক কমলাকান্ত। এসে দেখেন জীর্ণ তারামায়ের মন্দির। সেই ভাঙা মন্দিরের সামনে বসে তিনি মাকে শোনালেন একের পর এক গান। আর তাঁর দু’চোখ বেয়ে নেমে এল জলের ধারা।
🏵
মন্দিরের সেই ভগ্নদশা দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন জগন্নাথ রায়ও। তিনি ছিলেন মল্লারপুরের জমিদার। মায়ের মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে মানত করেছিলেন,‘মাগো আমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হলে তোমার নতুন মন্দির গড়ে দেব মা।’ তারামা তাঁর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেছিলেন। তারপরই জগন্নাথ রায় তারামায়ের মন্দির সংস্কার করে দেন। সেটা ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ এপ্রিল। মন্দির নির্মাণের পাশাপাশি নতুন করে তৈরি করলেন চন্দ্রচূড় শিবের মন্দির, মায়ের বিরামখানা, ভোগঘর, ভাণ্ডারঘর প্রভৃতি।

সেই হিসেবেই বলা হচ্ছে, তারাপীঠের মন্দিরের দু’শো বছর পূর্ণ হল। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কথাটা আংশিক সত্য। কেননা তারাপীঠের মন্দিরের ইতিহাসকে দুশো বছরের মধ্যে আটকানো যায় না। তার ইতিহাস প্রাচীন, আবছায়া, অস্পষ্ট এক অতীতের মধ্যে মিশে আছে। একদিকে পুরাণ আর একদিকে ইতিহাস। একদিকে লোককথা, অন্যদিকে দলিল। সব মিলেই তারাপীঠের মন্দির এবং তারামায়ের কাহিনী একাকার হয়ে গিয়েছে। ইতিহাসকার শুধু প্রমাণ খুঁজতে গেলে অতীতের আবছায়া কাহিনীগুলোকে অস্বীকার করতে হয়। কিন্তু তা সম্ভব নয়। যুগ যুগ ধরে ভক্তপ্রাণ বাঙালি হৃদয় সেসব আত্মসাৎ করে বসে আছে। তাই আপাতভাবে মন্দিরের দু’শো বছর কথাটা আংশিক সত্য। ইতিহাসকার থাকুন ইতিহাস নিয়ে, ভক্ত থাকুন তাঁর আপন বিশ্বাসে। কেননা এখানে ভক্তিই শেষ কথা। ‘তারাপীঠং মহাপীঠং গন্তব্যং যত্নতঃ সদা।’

শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৮

শিউলি : Nyctanthes arbor-tristis

শিউলি

জগৎ/রাজ্য:                  Plantae
বিভাগ:                        Magnoliophyta
শ্রেণী:                           Magnoliopsida
বর্গ:                              Lamiales
পরিবার:                       Oleaceae
গণ:                              Nyctanthes
প্রজাতি:                        N. arbor-tristis
দ্বিপদী নাম:                   Nyctanthes arbor-tristis
বাংলা ভাষায় –              শিউলি বা শেফালি
সংস্কৃত :                        নালাকুমকুমাকা, হারসিঙ্গারাপুস্পক, সুকলাঙ্গি, রাজানিহাসা, মালিকা, অপরাজিতা, বিজয়া, নিসাহাসা, প্রহার্ষিনী, প্রভোলানালিকা, বাথারি, ভুথাকেশি, সীতামাঞ্জারি, সুবাহা, নিশিপুস্পিকা, প্রযক্তা, প্রযক্তি। ।
সীতামাঞ্জারি, সুবাহা, নিশিপুস্পিকা, প্রযক্তা, প্রযক্তি।
তামিল ভাষায় –            পাভাঝা মাল্লি বা পাভালা মাল্লি
ওড়িয়া ভাষায় –            গঙ্গা শিউলি
মনিপুরী ভাষায় –           সিঙ্গারেই
অসমিয়া ভাষায় –          শেওয়ালি (শেৱালি)
বাংলা সমনাম :               শিউলি, শেফালি, শেফালিকা
বৈজ্ঞানিক নাম :             Nyctanthes arbor-tristis

লাতিন Nyctanthes-এর অর্থ হচ্ছে “সন্ধ্যায় ফোটা” এবং arbor-tristis-এর মানে হচ্ছে “বিষণ্ন গাছ”। সন্ধ্যায় ফোটা আর সকালে ঝরা ফুলের মাঝে বিষণ্নভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটাই এই রকম নামকরণের কারণ বলে ধারণা করা হয়। শিউলিকে কখনও কখনও “tree of sorrow” বা “দুঃখের বৃক্ষ”-ও বলা হয় কারণ দিনের আলোতে এই ফুল তাদের উজ্জ্বলতা হারায়।

শিউলি ফুল, গাছে থাকতে এই ফুলের সৌন্দর্য্য চোখে পরেনা। এই ফুল চোখে পরে গাছ থেকে ঝরে পরার পর। তবে অন্যান্য ফুলের সাথে এই ফুলের পার্থক্য এইযে সূর্যের মুখ না দেখতেই শিউলি ফুল ঝরে যায়। নিছক মালা গাথা ছাড়া শিউলি ফুলের কোন কদর থাকে না।

কেন যে সূর্য্য ওঠার আগে শিউলি ফুল ঝরে যায় তার কোন কারন জানা যায়না। কিংবদন্তী আছে কৃষ্ণের দুই স্ত্রী-সত্যভামা ও রুক্মিণীর খুব ইচ্ছে তাদের বাগানও পারিজাতের ঘ্রাণে আমোদিত হোক। কিন্তু পারিজাত তো স্বর্গের শোভা! কৃষ্ণ স্ত্রীদের খুশি করতে চান। তাই লুকিয়ে স্বর্গের পারিজাত বৃক্ষ থেকে একটি ডাল ভেঙ্গে এনে সত্যভামার বাগানে রোপণ করেন, যার ফুল রুক্মিণীর বাগানেও ঝরে পড়ে সুগন্ধ ছড়ায়।

এদিকে স্বর্গের রাজা ইন্দ্র তো ঘটনাটা জেনে খুব রেগে যান! তিনি বিষ্ণু অবতারের উপর গোপনে ক্রুদ্ধ ছিলেন। এই অছিলায় তিনি কৃষ্ণকে শাপ দেন কৃষ্ণের বাগানের পারিজাত বৃক্ষ ফুল দেবে ঠিকই কিন্তু ফল কোনদিনও আসবেনা, তার বীজে কখনও নতুন প্রাণের সঞ্চার হবে না।

 একটি গল্প থেকে জানা যায় পারিজাতিকা নামে এক নাগরাজার অপরূপ সুন্দরী রাজকন্যা সূর্যের প্রেমে পড়ে তাকে কামনা করেন। কিন্তু শত চেষ্টা করেও সূর্যকে না পেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। তার দেহের ভস্ম পারিজাতবৃক্ষ রূপে ফুটে ওঠে। যে কিনা নিরব ব্যার্থ প্রেমের প্রতীক! সূর্যের স্পর্শমাত্র যে ঝরে পড়ে অশ্রুবিন্দুর মত।

শিউলিকে মাঝে মাঝে Nyctanthes arbortristis বা Nyctanthes arbor tristis নামেও উচ্চারণ করা হয়, যদিও সাধারণভাবে এটি শিউলি নামেই পরিচিত।

প্রচলিত নাম:  Night-flowering Jasmine (নাইট ফ্লাওয়ার জেসমিন), Harsingar (হারসিঙ্গার), কোরাল জেসমিন, পারিজাত, শেফালিকা, পারিজাতা, পারিজাতাকা, রাগাপুস্পি, খারাপাত্রাকা, প্রজক্তা ।

পরিচিতি: Oleaceae গোত্রের Nyctanthes গণের গুল্ম জাতীয় সুগন্ধি ফুলের উদ্ভিদ। ভারত, বাংলাদেশ,  নেপাল, পাকিস্তান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড এই গাছ প্রচুর জন্মে। এই ফুল পশ্চিমবঙ্গের ও থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুরি প্রদেশের রাষ্ট্রীয় ফুল। শিউলি মাঝারি আকারের গাছ। ১৫ বা ১০ ফুট পর্যন্ত বড় হতে দেখা যায়। মোটামুটি অনেক দিন বাঁচে। তবে গাছের গোড়ায় জল জমলে মরে যায়। বানে ডুবলে শিউলির মৃত্যু অনিবার্য। ভারতের  প্রায় সবখানে এ গাছ জন্মে। উঁচু ঝোপ-জঙ্গলে এর বাড়-বৃদ্ধি একটু বেশি। বাগানের শোভার জন্য শিউলি আদর্শ গাছ। অল্প জায়গায়, দেয়ালের পাশ, উঠানের কাণে, বেড়ার পাশে এক চিলতে জায়গায় অনায়াসে বেড়ে ওঠে।

শিউলি ফুল: এই ফুলে পাঁচ থেকে সাতটি সাদা পাপড়ি থেকে। ফুলের মাঝে লালচে-কমলা টিউবের মত বৃন্তযুক্ত। ফুলে সুগন্ধ আছে। ফুলগুলি রাতে ফোটে এবং সকালে ঝরে যায়। শরৎ ও হেমন্ত কালের শিশির ভেজা সকালে ঝরে পড়া শিউলি দেখা যায়। এর ফল চ্যাপ্টা ও বাদামী হৃদপিণ্ডাকৃতির। ফলের ব্যাস ২ সেন্টিমিটার এবং এটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগে একটি করে বীজ থাকে। আশ্বিন-কার্তিক ফল ধরতে দেখা যায়। তবে শীতকালেই এই গাছের বেশি ফল দেখা যায়। শিউলির যে বৈজ্ঞানিক নামের দ্বিতীয় অংশ আববরট্রেসটিস, তার অর্থ বিষাদিনী তরু। আর প্রথম অংশ নিকটেনথাস গ্রিক শব্দ। মানে রাতের ফুল। ল্যাটিন শব্দ নিক্টান্থেস অর্থ সন্ধ্যায় ফোটা। আরবর-ট্রিসটিস হচ্ছে বিষণ গাছ। চোখ জোড়ানো সৌন্দর্য নিয়ে সন্ধ্যায় ফুল ফোটে তার পর অল্প সময় বাঁচে এবং সকাল হতেই ঝরে যায় বলে এমন নামকরণ। একই কারণে শিউলিকে বলা হয় ট্রি অব সরো।
শিউলি পাতা: শিউলি গাছ নরম ধূসর ছাল বা বাকল বিশিষ্ট হয়। লম্বায় ১০ মিটারের মত হয়। গাছের পাতা গুলো ৬-৭ সেন্টিমিটার লম্বা ও সমান্তরাল প্রান্তের বিপরীতমুখী থাকে। পাতার দণ্ডে লোম থাকে। পাতার আকার ডিম্বাকৃতির হয়। পাতার উপরের দিকটা সবুজ কিন্তু নিচের সাদাটে। অধিকাংশ পাতার প্রান্তদেশ অখণ্ডিত। পাতাগুলো বেশ খসখসে।

ঔষধী গুনাগুন:

1. মেদ রোগঃ মেদ কমাতে বৈদ্যরা শিউলি ডালের চুর্ন দেড় গ্রাম মাত্রায় সকালে বিকালে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই ব্যাবস্থা অবলম্বনে কিছু দিনের মধ্যে মেদের হ্রাস লক্ষ্য করা যায়।

2. কৃমিঃ শিউলির পাতার রস চিনির সাথে মিশিয়ে খেলে, কিশোর বয়সীদের ক্রিমি দূর হয়।
শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল দুবেলা গরম জল দিয়ে খাওয়ালে কেচোর মত কৃমি মরে যায়।গুড়া কৃমির উপদ্রব ও কমে যায়।
3.  শিউলির পাতা পিত্ত ও কফ নাশক।
4. গলা বসাঃ গলা বসার ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস বেশ উপকারী। শ্লেশ্মার দোষে অনেকের গলার আওয়াজ বসে যায়।, এ ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল ২ বেলা খাওয়ালে উপকার পাওয়ার নিশ্চয়তা।
5. শিউলির পাতা টাটকা রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে পুরানো জ্বর উপশম হয়।
6. জ্বালাঃ কেউ কেউ দিনের কোন কোন সময় শরীরে জ্বালা অনুভব করেন এ ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল ২ বেলা খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘদিন খাবার প্রয়োজন হলে চালের চূর্নর সাথে ১ গ্রাম মাত্রায় দুবেলা খাওয়া ভাল।
7.  শিউলির ফুলের পাপড়ি বেটে, তার সাথে আদার রস মিশ্রিত করে খেলে জ্বরের আরাম হয়।
8.   মূর্ছা রোগঃ মূর্ছা রোগে শিউলি পাতার রস ২ চামচ মাত্রায় অল্প গরম করে দুবেলা খেতে হবে। তবে মূর্ছা রোগের শুরুর দিকে খাওয়ালে ভাল ফল দেয়।
9.     খাদ্যে বিষ ক্রিয়াঃ খাদ্যে বিষক্রিয়ার দরুন রোগী অত্যাধিক বমি করে রোগী দুর্ব্ল হয়ে পরলে, অল্প গরম জলে শিউলির রস ২ বেলা খেলে দূর্ব লতা কেটে যায়।
শিউলির পাতার ক্বাথ কোমরের বাতের ব্যথা উপশম করে।
10.   শিউলির বীজের গুঁড়ো  মাথায় ব্যবহার করলে খুসকি দূর হয়।

ঔষধবিজ্ঞান
Immunostimulant, Hepatoprotective, antileishmanial, Antiviral এবং Antifungal ঔষধ গুলো তৈরি করতে শিউলির বীজ, পাতা ও ফুল ব্যবহার করা হয়।
এর পাতা sciatica, arthritis, fevers, নানারকম যন্ত্রণাদায়ক সমস্যার চিকিৎসার জন্যে ঔষধ বা বড়ির মত করে আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়।

অন্যান্য ব্যবহার:
এই ফুল হলুদ রঙ তৈরী করতে ব্যবহার করা যায়। এই ফুলের বোঁটা গুলো শুকিয়ে গুঁড়ো করে পাউডার করে হালকা গরম জলে  মেশালে চমৎকার রঙ হয়।

রবিবার, ৫ আগস্ট, ২০১৮

Char dham - - চার ধাম

চারধাম 

প্রত্যেক হিন্দুর মনেই সুপ্ত বাসনা থাকে তীর্থ ভ্রমণের  আর সেই তীর্থগুলির মধ্যে অন্যতম হল 'চারধাম' ভ্রমন। 
পুরাণ মতে  চারধাম যাত্রায় মুছে যায় সব পাপ | আর এই চারধাম যাত্রার কথা বলেন আদি শঙ্করাচার্য্য। এই চারধাম ছড়িয়ে আছে ভারতবর্ষের চার প্রান্তে | উত্তরে বদ্রীনাথ‚ দক্ষিণে রামেশ্বরম‚ পূর্বে পুরী এবং পশ্চিমে দ্বারকা |
বিংশ শতাব্দী থেকে চারধাম আবার পাল্টে যায় | নতুন চারধাম হয় গঙ্গোত্রী‚ যমুনোত্রী‚ কেদারনাথ এবং বদ্রীনাথ | অবশ্য আদি শঙ্করাচার্য চিহ্নিত চার ধাম কিন্তু প্রথম চারটি | চার যুগে সৃষ্টি হয়েছিল এই চার পুণ্যতীর্থ | একটি শৈব এবং তিনটি বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র। 
বদ্রীনাথ :-   কথিত‚ সত্যযুগে এখানে তপস্যা করেছিলেন বিষ্ণুর অবতার নরনারায়ণ | তখন এ জায়গা ভরা ছিল বদরী ফলের গাছে | সংস্কৃত ভাষায় বদরী কথার অর্থ কুল জাতীয় ফল | সেই থেকে এর নাম হল বদ্রিকা বন | বদ্রিকা বনের যিনি নাথ বা রক্ষাকর্তা‚ তিনি বদ্রীনাথ | গাড়োয়াল হিমালয়ের বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র বদ্রীনাথ হল প্রথম চারধাম |
রামেশ্বরম :-   চার ধামের মধ্যে একমাত্র শৈব তীর্থ‚ সৃষ্টি হয়েছিল ত্রেতা যুগে | রামায়ণে বর্ণিত‚ মান্নার উপসাগরের মুখে‚ ভারতীয় উপমাহাদেশের ঠিক প্রান্তভাগে এখান থেকেই শুরু হয়েছিল রামসেতু নির্মাণের কাজ | এই তীর্থক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিষ্ণুর এক অবতার রামচন্দ্রের নাম | তবে এটি শৈব তীর্থ | কারণ রামচন্দ্রের অবতারে নারায়ণ স্বয়ং আরাধনা করেছিলেন মহাদেবের | বলা হয়‚ দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম এই তীর্থে নাকি ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর একসঙ্গে অবস্থান করেন |
দ্বারকা:-    দ্বাপরযুগে সৃষ্ট এই ধাম হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাজধানী। জরাসন্ধের আক্রমণ হতে রক্ষা পেতে শ্রীকৃষ্ণ  মথুরা ত্যাগ করে দ্বারকায় রাজধানী স্থাপন করেন। 
পুরি :- এই ধাম দ্বাপর যুগের শেষে বা কলির শুরুতে প্রতিষ্ঠিত হয়। কথিত আছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যুর পর তার নাভি নীলমাধব রূপে নীলাচলে আবির্ভূত হয়। প্রথমে শবরদের দ্বারা পুজিত হলেও পরে ঊজ্জয়িনীর রাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন তার সভাপন্ডিত বিদ্যাপতির সাহায্যে নীলমাধবকে জগন্নাথ রূপে পুরিতে স্থাপন করেন।