শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৮

শিউলি : Nyctanthes arbor-tristis

শিউলি

জগৎ/রাজ্য:                  Plantae
বিভাগ:                        Magnoliophyta
শ্রেণী:                           Magnoliopsida
বর্গ:                              Lamiales
পরিবার:                       Oleaceae
গণ:                              Nyctanthes
প্রজাতি:                        N. arbor-tristis
দ্বিপদী নাম:                   Nyctanthes arbor-tristis
বাংলা ভাষায় –              শিউলি বা শেফালি
সংস্কৃত :                        নালাকুমকুমাকা, হারসিঙ্গারাপুস্পক, সুকলাঙ্গি, রাজানিহাসা, মালিকা, অপরাজিতা, বিজয়া, নিসাহাসা, প্রহার্ষিনী, প্রভোলানালিকা, বাথারি, ভুথাকেশি, সীতামাঞ্জারি, সুবাহা, নিশিপুস্পিকা, প্রযক্তা, প্রযক্তি। ।
সীতামাঞ্জারি, সুবাহা, নিশিপুস্পিকা, প্রযক্তা, প্রযক্তি।
তামিল ভাষায় –            পাভাঝা মাল্লি বা পাভালা মাল্লি
ওড়িয়া ভাষায় –            গঙ্গা শিউলি
মনিপুরী ভাষায় –           সিঙ্গারেই
অসমিয়া ভাষায় –          শেওয়ালি (শেৱালি)
বাংলা সমনাম :               শিউলি, শেফালি, শেফালিকা
বৈজ্ঞানিক নাম :             Nyctanthes arbor-tristis

লাতিন Nyctanthes-এর অর্থ হচ্ছে “সন্ধ্যায় ফোটা” এবং arbor-tristis-এর মানে হচ্ছে “বিষণ্ন গাছ”। সন্ধ্যায় ফোটা আর সকালে ঝরা ফুলের মাঝে বিষণ্নভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটাই এই রকম নামকরণের কারণ বলে ধারণা করা হয়। শিউলিকে কখনও কখনও “tree of sorrow” বা “দুঃখের বৃক্ষ”-ও বলা হয় কারণ দিনের আলোতে এই ফুল তাদের উজ্জ্বলতা হারায়।

শিউলি ফুল, গাছে থাকতে এই ফুলের সৌন্দর্য্য চোখে পরেনা। এই ফুল চোখে পরে গাছ থেকে ঝরে পরার পর। তবে অন্যান্য ফুলের সাথে এই ফুলের পার্থক্য এইযে সূর্যের মুখ না দেখতেই শিউলি ফুল ঝরে যায়। নিছক মালা গাথা ছাড়া শিউলি ফুলের কোন কদর থাকে না।

কেন যে সূর্য্য ওঠার আগে শিউলি ফুল ঝরে যায় তার কোন কারন জানা যায়না। কিংবদন্তী আছে কৃষ্ণের দুই স্ত্রী-সত্যভামা ও রুক্মিণীর খুব ইচ্ছে তাদের বাগানও পারিজাতের ঘ্রাণে আমোদিত হোক। কিন্তু পারিজাত তো স্বর্গের শোভা! কৃষ্ণ স্ত্রীদের খুশি করতে চান। তাই লুকিয়ে স্বর্গের পারিজাত বৃক্ষ থেকে একটি ডাল ভেঙ্গে এনে সত্যভামার বাগানে রোপণ করেন, যার ফুল রুক্মিণীর বাগানেও ঝরে পড়ে সুগন্ধ ছড়ায়।

এদিকে স্বর্গের রাজা ইন্দ্র তো ঘটনাটা জেনে খুব রেগে যান! তিনি বিষ্ণু অবতারের উপর গোপনে ক্রুদ্ধ ছিলেন। এই অছিলায় তিনি কৃষ্ণকে শাপ দেন কৃষ্ণের বাগানের পারিজাত বৃক্ষ ফুল দেবে ঠিকই কিন্তু ফল কোনদিনও আসবেনা, তার বীজে কখনও নতুন প্রাণের সঞ্চার হবে না।

 একটি গল্প থেকে জানা যায় পারিজাতিকা নামে এক নাগরাজার অপরূপ সুন্দরী রাজকন্যা সূর্যের প্রেমে পড়ে তাকে কামনা করেন। কিন্তু শত চেষ্টা করেও সূর্যকে না পেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। তার দেহের ভস্ম পারিজাতবৃক্ষ রূপে ফুটে ওঠে। যে কিনা নিরব ব্যার্থ প্রেমের প্রতীক! সূর্যের স্পর্শমাত্র যে ঝরে পড়ে অশ্রুবিন্দুর মত।

শিউলিকে মাঝে মাঝে Nyctanthes arbortristis বা Nyctanthes arbor tristis নামেও উচ্চারণ করা হয়, যদিও সাধারণভাবে এটি শিউলি নামেই পরিচিত।

প্রচলিত নাম:  Night-flowering Jasmine (নাইট ফ্লাওয়ার জেসমিন), Harsingar (হারসিঙ্গার), কোরাল জেসমিন, পারিজাত, শেফালিকা, পারিজাতা, পারিজাতাকা, রাগাপুস্পি, খারাপাত্রাকা, প্রজক্তা ।

পরিচিতি: Oleaceae গোত্রের Nyctanthes গণের গুল্ম জাতীয় সুগন্ধি ফুলের উদ্ভিদ। ভারত, বাংলাদেশ,  নেপাল, পাকিস্তান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড এই গাছ প্রচুর জন্মে। এই ফুল পশ্চিমবঙ্গের ও থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুরি প্রদেশের রাষ্ট্রীয় ফুল। শিউলি মাঝারি আকারের গাছ। ১৫ বা ১০ ফুট পর্যন্ত বড় হতে দেখা যায়। মোটামুটি অনেক দিন বাঁচে। তবে গাছের গোড়ায় জল জমলে মরে যায়। বানে ডুবলে শিউলির মৃত্যু অনিবার্য। ভারতের  প্রায় সবখানে এ গাছ জন্মে। উঁচু ঝোপ-জঙ্গলে এর বাড়-বৃদ্ধি একটু বেশি। বাগানের শোভার জন্য শিউলি আদর্শ গাছ। অল্প জায়গায়, দেয়ালের পাশ, উঠানের কাণে, বেড়ার পাশে এক চিলতে জায়গায় অনায়াসে বেড়ে ওঠে।

শিউলি ফুল: এই ফুলে পাঁচ থেকে সাতটি সাদা পাপড়ি থেকে। ফুলের মাঝে লালচে-কমলা টিউবের মত বৃন্তযুক্ত। ফুলে সুগন্ধ আছে। ফুলগুলি রাতে ফোটে এবং সকালে ঝরে যায়। শরৎ ও হেমন্ত কালের শিশির ভেজা সকালে ঝরে পড়া শিউলি দেখা যায়। এর ফল চ্যাপ্টা ও বাদামী হৃদপিণ্ডাকৃতির। ফলের ব্যাস ২ সেন্টিমিটার এবং এটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগে একটি করে বীজ থাকে। আশ্বিন-কার্তিক ফল ধরতে দেখা যায়। তবে শীতকালেই এই গাছের বেশি ফল দেখা যায়। শিউলির যে বৈজ্ঞানিক নামের দ্বিতীয় অংশ আববরট্রেসটিস, তার অর্থ বিষাদিনী তরু। আর প্রথম অংশ নিকটেনথাস গ্রিক শব্দ। মানে রাতের ফুল। ল্যাটিন শব্দ নিক্টান্থেস অর্থ সন্ধ্যায় ফোটা। আরবর-ট্রিসটিস হচ্ছে বিষণ গাছ। চোখ জোড়ানো সৌন্দর্য নিয়ে সন্ধ্যায় ফুল ফোটে তার পর অল্প সময় বাঁচে এবং সকাল হতেই ঝরে যায় বলে এমন নামকরণ। একই কারণে শিউলিকে বলা হয় ট্রি অব সরো।
শিউলি পাতা: শিউলি গাছ নরম ধূসর ছাল বা বাকল বিশিষ্ট হয়। লম্বায় ১০ মিটারের মত হয়। গাছের পাতা গুলো ৬-৭ সেন্টিমিটার লম্বা ও সমান্তরাল প্রান্তের বিপরীতমুখী থাকে। পাতার দণ্ডে লোম থাকে। পাতার আকার ডিম্বাকৃতির হয়। পাতার উপরের দিকটা সবুজ কিন্তু নিচের সাদাটে। অধিকাংশ পাতার প্রান্তদেশ অখণ্ডিত। পাতাগুলো বেশ খসখসে।

ঔষধী গুনাগুন:

1. মেদ রোগঃ মেদ কমাতে বৈদ্যরা শিউলি ডালের চুর্ন দেড় গ্রাম মাত্রায় সকালে বিকালে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই ব্যাবস্থা অবলম্বনে কিছু দিনের মধ্যে মেদের হ্রাস লক্ষ্য করা যায়।

2. কৃমিঃ শিউলির পাতার রস চিনির সাথে মিশিয়ে খেলে, কিশোর বয়সীদের ক্রিমি দূর হয়।
শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল দুবেলা গরম জল দিয়ে খাওয়ালে কেচোর মত কৃমি মরে যায়।গুড়া কৃমির উপদ্রব ও কমে যায়।
3.  শিউলির পাতা পিত্ত ও কফ নাশক।
4. গলা বসাঃ গলা বসার ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস বেশ উপকারী। শ্লেশ্মার দোষে অনেকের গলার আওয়াজ বসে যায়।, এ ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল ২ বেলা খাওয়ালে উপকার পাওয়ার নিশ্চয়তা।
5. শিউলির পাতা টাটকা রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে পুরানো জ্বর উপশম হয়।
6. জ্বালাঃ কেউ কেউ দিনের কোন কোন সময় শরীরে জ্বালা অনুভব করেন এ ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল ২ বেলা খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘদিন খাবার প্রয়োজন হলে চালের চূর্নর সাথে ১ গ্রাম মাত্রায় দুবেলা খাওয়া ভাল।
7.  শিউলির ফুলের পাপড়ি বেটে, তার সাথে আদার রস মিশ্রিত করে খেলে জ্বরের আরাম হয়।
8.   মূর্ছা রোগঃ মূর্ছা রোগে শিউলি পাতার রস ২ চামচ মাত্রায় অল্প গরম করে দুবেলা খেতে হবে। তবে মূর্ছা রোগের শুরুর দিকে খাওয়ালে ভাল ফল দেয়।
9.     খাদ্যে বিষ ক্রিয়াঃ খাদ্যে বিষক্রিয়ার দরুন রোগী অত্যাধিক বমি করে রোগী দুর্ব্ল হয়ে পরলে, অল্প গরম জলে শিউলির রস ২ বেলা খেলে দূর্ব লতা কেটে যায়।
শিউলির পাতার ক্বাথ কোমরের বাতের ব্যথা উপশম করে।
10.   শিউলির বীজের গুঁড়ো  মাথায় ব্যবহার করলে খুসকি দূর হয়।

ঔষধবিজ্ঞান
Immunostimulant, Hepatoprotective, antileishmanial, Antiviral এবং Antifungal ঔষধ গুলো তৈরি করতে শিউলির বীজ, পাতা ও ফুল ব্যবহার করা হয়।
এর পাতা sciatica, arthritis, fevers, নানারকম যন্ত্রণাদায়ক সমস্যার চিকিৎসার জন্যে ঔষধ বা বড়ির মত করে আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়।

অন্যান্য ব্যবহার:
এই ফুল হলুদ রঙ তৈরী করতে ব্যবহার করা যায়। এই ফুলের বোঁটা গুলো শুকিয়ে গুঁড়ো করে পাউডার করে হালকা গরম জলে  মেশালে চমৎকার রঙ হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন