বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮

Guru bandana




(  শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শিষ্য শ্রী দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের উদ্দেশ্যে গানটি লেখেন।
ছন্দ - #তোটক
মাত্রা ৪|৪ |৪ ) 
রবি নন্দন বন্ধন খন্ডন হে।
শরনাগত কিঙ্কর ভীত মনে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
হৃদি কন্দর তামস ভাস্কর হে।
তুমি বিষ্ণু প্রজাপতি শঙ্কর হে।
পরব্রহ্ম পরাৎপর বেদ ভণে।
গুরুদেব দয়া কর দীনজনে।।
মন বারণ শাসন অঙ্কুশ হে।
নরত্রান তরে হরি চাক্ষুষ হে।
গুণগান পরায়ণ দেবগণে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
কুলকুণ্ডলিনী ঘুম ভঞ্জক হে।
হৃদিগ্রন্থি বিদারণ কারক হে
মম মানস চঞ্চল রাত্রি দিনে।।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
রিপুসূদন মঙ্গলনায়ক হে।
সুখ শান্তি বরাভয় দায়ক হে।
ত্রয় তাপ হরে তব নাম গুনে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
অভিমান প্রভাব বিনাশক হে।
গতিহীন জনে তুমি রক্ষক হে।
চিত শঙ্কিত বঞ্চিত ভক্তি ধনে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
তব নাম সদা শুভ সাধক হে।
পতিতাধাম মানব পাবক হে।
মহিমা তব গোচর শুদ্ধমনে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
জয় সদ্গুরু ঈশ্বর প্রাপক হে।
ভব রোগ বিকার বিনাশক হে।
মন যেন রহে তব শ্রীচরণে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
                                               

সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮

Bengali poem


( আরো কবিতা ভীরু প্রেম  )
হৈমন্তীকা
সুব্রত_মজুমদার
এতদিন ধানশীষে চুপচাপ শিশিরেরা পড়ছিল ঝুপঝাপ বোঝেনি কেউ তো আসবে।
এই মেয়ে আজ এলি সে শিশির মেখে নিলি তোর ছোঁয়ায় এই মাঠ জাগবে।।
ঐদিকে রৌদ্রের হরতাল কুয়াশার কু-আশায় বেসামাল হাজার মানিক যেন ঝরছে;
তোর হাতে রেখে হাত ধানের সবুজ পাত হৈমন্তী ভৈরবী ধরছে।।
ঐ দূরে শালেদের জটলায় শিশিরেরা টপটপ টপকায়, বনময় শিহরণ লাগলো
ঘাঁসে বসে চঞ্চল উচ্ছ্বল বিহ্বল ঘাঁসফড়িং এর ডানা জাগল।।
পুবদিক  রাঙিয়ে প্রানে সাড়া জাগিয়ে ক্ষীনরেখা ঐ দেখা যায় রে
ভাঁপ ওঠা দীঘি তে কালো জলে এ শীতে বাতাসের নিঃশ্বাস পাই রে।
দলবেঁধে বালি হাঁস কাটাইছে পরবাস কলকল অবিরল ডেকে যায়
জাগধরা চাদরে পেয়ালার আদরে কবি মন কল্পনা পেয়ে যায়।
হয়তো বা এরপরে কোলাহল নেবে কেড়ে সুপ্তির সুখভরা অবকাশ;
দ্বারকার বুক বেয়ে নির্জনে নির্ভয়ে খেলাকরে যাবে যত বালিহাঁস।
আবার দিনের পরে পেঁচাডাকা রাত্তিরে স্বপ্ন বালিকা সুর ধরবে,
আগামীর আয়োজনে নদীতীরে একমনে শিশিরের স্নেহকণা ঝরবে।।

রবিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৮

Nabanya


                                                              বাঙালি যেমন কৃষিপ্রধান তেমনি উৎসব পাগলও। অপরদিকে বাঙালি আবার ভীষন ধর্মপ্রাণ। তাই ধর্ম, কৃষি, সংস্কৃতি ও আনন্দের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে বাঙালি তার উৎসবানুষ্ঠানের মাধ্যমে। কৃষিপ্রধান বাঙালির এইরকম একটি উৎসব হল নবান্ন । কার্তিক মাস হতে শুরু হয় ধান কাটা। অগ্রহায়ণ বা অঘ্রান মাসে নতুন চালের ভাত প্রথমে দেবতাকে উৎসর্গ করার উৎসবই নবান্ন ।
                পশ্চিমবঙ্গে নবান্ন সাধারণত অন্নপূর্ণা পূজার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। তবে ব্যতিক্রমও আছে। যেমন বীরভূমের তারাপীঠে নবান্ন হয় কার্তিক পূজার সঙ্গে। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে বিয়ের  পর কৈলাশ শিখরে শিব ও পার্বতী বেশ সুখেই দাম্পত্যজীবন কাটাচ্ছিলেন।  আর্থিক অনটনের জেরে  বেশ কিছুদিন পরই শুরু হয় দাম্পত্যকলহ। দারিদ্র্যের কারণে পার্বতীর সঙ্গে কলহে ঘর ছেড়ে ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করেন শিব। কিন্তু কোথাও ভিক্ষা না পেয়ে শেষে  কৈলাশে ফেরেন। পার্বতীর মায়ায় তিনি যে ভিক্ষে পাচ্ছিলেন না, তা ঘুমাক্ষরেও টের পাননি শিব। কাশীতে তখন পার্বতী মা অন্নপূর্ণা রুপে অন্ন বিতরন করছেন। ভোলানাথ দেবী অন্নপূর্ণার কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করেন। দেবী অন্নপূর্ণার হাতে রন্ধনকৃত  সঘৃত পালান্ন, পায়েস ইত্যাদি ভোজন করেন। এই ঘটনাকেই নবান্নের শুরু মনে করা হয়। মনে করা হয় নতুন চালের অন্ন দেবী অন্নপূর্ণাকে নিবেদন করলে দেবী সংসার ধনধান্যে পরিপূর্ণ রাখেন।
পশ্চিমবঙ্গে নবান্য রন্ধন, পূজা ও উৎসর্গে আবদ্ধ থাকলেও পূর্ববঙ্গ তথা অধুনা বাংলাদেশের নবান্নের অনেকগুলো অংশ আছে। সেগুলি হল-
লক্ষ্মী পূজা :-
পিতৃশ্রাদ্ধ:- পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বীরবাশ:- বাড়ির উঠানে গর্ত করে তাতে জ্যান্ত কই মাছ, দুধ দিয়ে মাঝে একটি বাঁশ পোতা হয়। চারপাশে আলপনা আঁকা হয়।
কাকবলি:- একটি কলার পাতায় নতুন চাল, কলা, নাড়ু ইত্যাদি কাককে খেতে দেওয়া হয়। মনে করা হয় কাকের মাধ্যমে মৃত আত্মারা (পূর্বপুরুষের ) ঐ খাবার খান।
সব অনুষ্ঠান হয়ে গেলে রন্ধনকরা খাদ্য দেবতাদের নিবেদন করে একসাথে খাওয়া দাওয়া হয়।
  নবান্নের খাদ্য তালিকা :- 
সকালে পূজার পর নতুন চালের গুঁড়ো / চাল সেদ্ধ, মাখার জন্য দুধ, চিনি, কিসমিস, ফলের টুকরো, মিষ্টি।
দুপুরে পাঁচ, সাত বা নয় রকমের ভাজা। যেমন- আলু-ভাজা, পটলভাজা, বেগুন ভাজা, আখ ভাজা, বড়িভাজা ইত্যাদি।
তরকারি, মুগের ডাল,মাছের পদ, টক, চাটনি পায়েস, মিষ্টি, পান। নবান্নে ডিম বা মাংস রান্না হয় না।
অনেক জায়গায় পরেরদিন রান্না করা হয় না।

                                               

সোমবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৮

Labh Panchami

লাভ পঞ্চমী :-
                 দীপাবলীর তিনদিন পর ছট পূজার  মধ্যে যে পঞ্চমী পড়ে তা লাভ পঞ্চমী বা সৌভাগ্য পঞ্চমী হিসাবে গুজরাত ও অন্য কিছু রাজ্যে পালিত হয়। এই দিনটি খুবই মঙ্গলময় ও সৌভাগ্যদায়ক দিন। মনে করা হয় এই দিন গণেশের দুই স্ত্রী ঋদ্ধি ও সিদ্ধি এর  দুই পুত্র শুভ ও লাভের পূজা করলে সৌভাগ্য আসবে। গুজরাতে সমস্ত ব্যবসায়ীরা এই দিন হতে ব্যবসা শুরু করেন বা হালখাতা করেন। এই নতুন খাতাকে 'খাতু' বলে, যার বাম দিকে 'শুভ' ও ডান দিকে 'লাভ' লেখা হয়। জৈনরা এদিন বই এর পূজা করে। এ অনেকটা আমাদের বসন্তপঞ্চমীর মতো। এদিন জৈনরা জ্ঞানের উপাসনা করেন।
হালখাতর মাঝে আঁকা হয় স্বস্তিকা চিহ্ন যা জ্ঞান ও সিদ্ধির দেবতা গণেশের প্রতীক। আর স্বস্তিকার দুপাশে দুটি করে লাইন গণেশের দুই স্ত্রী ঋদ্ধি ও সিদ্ধির প্রতীক। গণেশের সাথে ঋদ্ধি ( বুদ্ধি ও পদ্ধতি) এর মিলনে শুভ অর্থাৎ মঙ্গলের জন্ম। আবার গণেশের সাথে সিদ্ধি (আত্মশক্তি  ) এর মিলনে লাভ অর্থাৎ মুনাফার জন্ম। 

শনিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৮

Chhath puja

(আরও দেখুন - সূচিপত্র
                                                     দীপাবলীর পর লাভ পঞ্চমীর  পরদিন  হিন্দুদের যে বড়ো উৎসব তা হল ছট পূজা। ছট্ অর্থাৎ ছটা যা কিনা সূর্যের রশ্মি। আবার সূর্যের পত্নীর নাম ছায়া - - যিনি 'ছট্ মাইয়া' নামে পরিচিত । এই উৎসব মূলত অবাঙ্গালীদের পালিত উৎসব। তুলারাশির শুক্লা চতুর্থী থেকে কার্তিক শুক্লা সপ্তমী এই চারদিন ধরে এই ব্রত পালন করা হয়।
 কথিত আছে ভগবান রামচন্দ্র  সূর্যদেবের বংশধর। তাই তিনি চৌদ্দ বছর বনবাসে কাটিয়ে যখন অযোধ্যায় ফেরেন তখন  তিনি এবং মা সীতা দুজনে সূর্যদেবের তপস্যার উপবাস রাখেন। 
পরদিন ভোরে সেই উপবাস ভঙ্গ করেন। পরিবর্তীতে এই রীতি কে ছট পূজা বলা হয়। 
কাহিনী :-
১।।        অথর্ববেদ অনুসারে মা ষষ্ঠী ভগবান সূর্য্যের ছোট বোন। তিনি প্রকৃতি দেবীর ষষ্ঠ অংশ হতে উৎপন্ন হয়েছেন। তাকে বাচ্চাদের রক্ষা করার জন্য সৃষ্ট ভগবান বিষ্ণুর মায়া বলেও বর্ননা করা হয়।
  ২।।            এই ছট্ পূজার পেছনে একটা পৌরাণিক কাহিনী আছে।  বর্ষায়  বৃষ্টি তেমন হয়নি। মাঠের ফসল মাঠেই মারা যাচ্ছে।  ঘরে ঘরে অন্নাভাব হাহাকার ওঠে।  সূর্যের তাপ হ্রাস করে বাঁচার জন্য মা অন্নপূর্ণা সূর্যদেবের ধ্যান করতে শুরু করেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়। সূর্যের প্রখর ছটায় মা অন্নপূর্ণা দিন দিন শ্রীভ্রষ্টা হয়ে ক্ষীয়মান হতে থাকেন। দেবলোকে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দেবতারা সম্মিলিতভাবে সূর্যদেবের কাছে গেলে তিনি মা অন্নপূর্ণার এই দশার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, মা অন্নপূর্ণা যেন গঙ্গাদেবীর আশ্রয় নেন। সূর্যদেব আরও বলেন, অস্তগমনকালে গঙ্গাদেবীর আশ্রয়ে থেকে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতে এবং সপ্তমীর উদয়কালে মা অন্নপূর্ণা গঙ্গাদেবীর আশ্রয়ে থেকে উদীয়মান ছটা বা রশ্মিকে দেখে আমার স্তব বা দ্বাদশনাম উচ্চারণ করলে আমার স্মরণকারীকে অন্নের কষ্ট পেতে হবে না। এইভাবে ব্রত করে সমস্ত পৃথিবী অন্নে পরিপূর্ণ হল। মা অন্নপূর্ণা আবার তাঁর শ্রী ফিরে পেলেন ।
৩।। অন্য একটি গল্পে আছে রাজা প্রীয়ব্রত নিঃসন্তান ছিলেন। অনেক যজ্ঞ করে মহর্ষি কাশ্যপের দেওয়া 'ক্ষীর' খেয়ে  রানী মালিনী গর্ভবতী হন। কিন্তু রানী মৃতসন্তান প্রসব করলে রাজা আত্মহত্যা করতে উদ্যত হন। তখন মা ষষ্ঠী ( ষষ্ঠী =ছয় =ছট ) এসে তাকে ছট পূজা করতে বলেন। রাজা ছট পূজার পর সন্তানের জীবন ফিরে পান। তখন তিনি সারা রাজ্যে এই পূজা ছড়িয়ে দেন। এখানে ছট তাই মা ষষ্ঠীর প্রতীকও।
৪।। মহাভারতের রাজা কর্ণ ছিলেন 'অঙ্গ' অর্থাৎ পূর্ববিহারের রাজা ।তিনি সূর্যের পুত্র ছিলেন ও সূর্যের পূজা করতেন। তার প্রচলিত সূর্যের পূজা 'ছট পরব' সারা বিহার ও উত্তরপ্রদেশে তাই বহুল প্রচলিত হয়।
৫।। মহাভারতের কাহিনী অনুসারে দ্রৌপদী তার পরিবারের দীর্ঘায়ু ও স্বাস্থ্য কামনা করে ছট পূজা করেন।
ব্রতের আচার :-
প্রথম দিন অর্থাৎ শুক্লা চতুর্থীর দিন স্নান সেরে শুদ্ধাচারে ভোজন করা হয় যা 'নাহায়-খায়' নামে পরিচিত।
দ্বিতীয় দিন হতে উপবাস শুরু হয়। সারাদিন নির্জলা উপবাসের পর ক্ষীর দিয়ে উপবাস ভাঙ্গ হয় যা 'খরনা' বা 'লোহণ্ডা' নামে পরিচিত ।
তৃতীয় দিন নিকটবর্তী জলাশয়ে গিয়ে অস্তায়মান সূর্য্যকে কাঁচা দুধের অর্ঘ্য দেওয়া হয়।
চতুর্থ তথা শেষদিনে জলাশয়ে গিয়ে উদীয়মান সূর্য্যকে অর্ঘ্য প্রদান করে উপবাসভঙ্গ করা হয়।
উপাচার:-
সাধারনত বাঁশের ঝুড়িতে করে উপাচারগুলি জলাশয়ে পূজার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আখ, ঝুনো নারকনা, কলা, বিভিন্ন ফল, মিষ্টি , ঠেকুয়া, লাড্ডু ইত্যাদি ।

বৃহস্পতিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৮

Gobardhan puja

                             (আরও দেখুন - সূচিপত্র
               দীপাবলীর উপলক্ষে পঞ্চোৎসব পালন করা হয়। এগুলি হল যথাক্রমে ধনতেরাস , নরকচতুর্দশী , দীপাবলী, গোবর্ধনপুজা ও ভাইফোঁটা । গোবর্ধনপুজা বা গরুর পরব  হল হিন্দু ক্যালেন্ডারের তুলারাশির শুক্লপক্ষের প্রথম দিন। আদিবাসী সমাজে আবার এই উৎসব  বাঁদনা পরব বা সহরায় উৎসব নামে পরিচিত । কথিত আছে এই দিনই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনবাসীর সাথে মিলে গিরিরাজ গোবর্ধন এর পুজা করেন। 
                                               কৃষিনির্ভর সমাজে গরু, মোষ ইত্যাদি গৃহপালিত পশুর গুরুত্ব অপরিসীম। গোবর্ধনপুজা বাঁষষ এদের উদ্দেশেই নিবেদিত।  এই দিন  গরুকে স্নান করিয়ে নানা রঙে অলঙ্কৃত করা হয়, সিং–এ সিঁদুর দেওয়া হয়, যথাসাধ্য ভালোমন্দ খাওয়ানো হয়। রং করার জন্য গিরি মাটি, আতপচাল বাঁটা, হলুদ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। তবে গর্ভবতী গাভীর গায়ে রং দেওয়া হয় না। বিকাল বেলায় গরুর পা ধুইয়ে গায়ে রং এর ছাপ দেওয়া হয়। খেতে দেওয়া হয় সদ্য পাকা ধানের শীষ ও শাঁওলতা। 

Bhratridwitia - ভ্রাতৃদ্বিতীয়া

                           
 ( আরও দেখুন - সূচিপত্র
                           দীপাবলীর উপলক্ষে পঞ্চোৎসব পালন করা হয়। এগুলি হল যথাক্রমে ধনতেরাস , নরকচতুর্দশী , দীপাবলী, গোবর্ধনপুজা ও ভাইফোঁটা । ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা হল হিন্দু ক্যালেন্ডারের তুলারাশির শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিন। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে  যমুনা তাঁর ভাই যমের মঙ্গল কামনায় এই ব্রত করেন। তাঁরই পুণ্যপ্রভাবে যমদেব অমরত্ব লাভ করেন। এই কাহিনীতে প্রেরিত  হয়ে বর্তমান কালের বোনেরাও এই অচার পালন করে আসছেন ।
বিভিন্ন নাম:-
বাংলায় এই উৎসব ভাইফোঁটা নামে পরিচিত হলেও নেপালে এর নাম 'ভাইটিকা'। বিহার, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি অবধি ও মৈথিলি ভাষাভাষী অঞ্চলে এই উৎসব 'ভাইয়াদুজ' নামে পরিচিত। মহারাষ্ট্র,গোয়া,গুজরাত, কর্ণাটক প্রভৃতি গুজরাটি, কোঙ্কনি ও মারাঠিভাষী আঞ্চলে এই উৎসবকে 'ভাউবীজ' বলে।
কাহিনী :-
ভাইফোঁটা উপলক্ষ্যে অনেক কাহিনীর প্রচলিত আছে। সেগুলি হল -
১।।  ঋকবেদ অনুযায়ী, মৃত্যুদন্ডদাতা যম ও তাঁর বোন যমুনা হচ্ছে সূর্য্যের যমজ সন্তান, অর্থাৎ তারা যমজ ভাই বোন। বড় হয়ে তারা পরস্পর থেকে অনেক দূরে থাকতেন। দীর্ঘকাল অদর্শনে থেকে বোন যমুনার খুব ইচ্ছে হলো ভাই যমকে একটু দেখার। ভাইকে নিমন্ত্রণ করতেই ভাই যমরাজ বোনের বাড়ীতে এসে উপস্থিত। ভাইকে যথাসাধ্য আপ্যায়ন শেষে ভাইয়ের জন্য মন ব্যাকুল হতেই বোন যমুনা ভাইয়ের সর্বাঙ্গীন কুশল কামনা করে প্রার্থনা করেন, ভাই যমরাজ খুব প্রীত হন বোনের এই আকুলতা দেখে।
২।।  নরকাসুরকে বধ করে শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকযয়  ফিরে গেলে। সেখানে ক্লান্ত শ্রীকৃষ্ণকে বোন সুভদ্রা প্রদীপ জ্বালিয়ে  অভ্যর্থনা করল। পিঁড়ি পেতে খেতে দিল কতরকমের সুস্বাদু খাবার । ভাই যেন পুনর্জন্ম পেল, অর্থাৎ হয়ে গেল দ্বিজ, তাই শুরু হল ভাই-দ্বিজ, অপভ্রংশে ভাইদুজ।
৩।। পুরাণ মতে দানবরাজ বলি পাতালে বামনরূপী ভগবান বিষ্ণু কর্তৃক বন্দি হলে  ভগবান বিষ্ণু বর দিতে চাইলে বলি বললেন, "প্রভূ , আপনি এখানেই দ্বারপাল হিসাবে থাকুন, যাতে আসতে যেতে আপনার দেখা পাই। ভগবান বিষ্ণু হলেন বলির দ্বারপাল । এদিকে স্বামীর জন্য বহুকাল অপেক্ষা করে মা লক্ষ্মী যান নারদের কাছে। সেখানে তিনি সবকিছু জানতে পারেন।
তখন পাতালে গিয়ে তিনি  বলির সাথে ভাইবোনের সম্পর্ক স্থাপন করেন। বলির কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে বললেন , "ভাই আমার  ! আজ থেকে তুমি আমার ভাই।"  বলি বললো,"বোন, তোর কি চায় বল। যা চায় তাই পাবি।" লক্ষ্মী বলল, "আমার স্বামীকে আটকে রেখেছ, ছেড়ে দাও।"  বলি তৎক্ষণাৎ ভগবান বিষ্ণুকে মুক্তি দিলেন।
৪।। জৈন ধর্ম অনুসারে রাজা নন্দীবর্ধন বহুদিন ভাইকে না দেখে মনোকষ্টে ভুগছে। ভাই মহাবীর তপস্যায় নির্বাণলাভ করে জৈনধর্ম প্রচার করে বেড়াচ্ছে। নন্দীবর্ধনের কষ্ট লাঘবের জন্যে বোন সুদর্শনা কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়ায় ভায়ের বাড়ি এসে তার সেবা করতে লাগল। এই ঘটনাকে মনে রেখে জৈনরা ভাইফোঁটা পালন করেন।
৫।। ভাইফোঁটা নিয়ে আবার একটি লোককথা আছে। সেই  গল্প অনুসারে, - -
                                                               একসময় একটা  জঙ্গলের পাশে এক বাড়িতে  এক পরিবার বাস করত । সেই বাড়ির ছেলেটির দিদির যখন বিয়ে হয় তখন সে খুব ছোট। বড় হয়ে দিদির কথা জানতে পেরে সে মাকে জিজ্ঞেস করে, "মা, আমারও তো দিদি আছে তুমি বলো, সে কেন আসে না?" মা বলে," তার  শ্বশুরবাড়ি অনেক দূর,  জঙ্গল, খরস্রোতা নদী পেরিয়ে সে কী করে আসবে ?"
ছেলেটি মায়ের কাছে বিদায় নিয়ে দিদির শ্বশুরবাড়ির দিকে চলে। জঙ্গলের পথে হাঁটছে ছেলে, ধেয়ে এল সাপ। ছেলে বলল, জানো, আমি আমার দিদির কাছে যাচ্ছি, কতদিন তাকে দেখিনি, এখন আমাকে কেটো না, প্লীজ, ফেরার পথে যা খুশি কোরো। সাপ বলল, ঠিক আছে। ছুটে এল বাঘ, তাকেও একই কথা বলল সে। পাহাড় শুরু করল তার ওপর পাথর ফেলতে, সে মিনতি করল, এখন আমায় মেরো না দয়া করে। ওরা মেনে নিল। নদী পার হতে গিয়ে দেখে প্রবল স্রোত, ভেসে যাবার উপক্রম। নদীর কাছেও সে চাইল তাকে যেন পার করে দেয়।  নদী তাকে পার করে দেয় । ভাইকে পেয়ে তো দিদির আনন্দের শেষ নেই। খাওয়া-দাওয়া ফোঁটা-টোঁটা তো হলই, কত গল্পগুজব, খুনসুটি, কত কী! অনেক দিন সেখানে থেকে ফেরার যখন সময় হল, দিদি বলল, আবার আসিস ভাই। ভাই বলল, "জানিস দিদি, আমাদের আর দেখা হবে না।" আসার সময় যা যা কাণ্ড হয়েছিল, সব দিদিকে বলল সে।দিদি বলল, "কী, আমার ভাইকে মেরে ফেলবে এরা? রসো, মজা দ্যাখাচ্ছি।" সেও পোঁটলা নিয়ে রেডি হয়ে গেল, বলল," চ' আমিও তোর সাথে যাব।"
নদীকে খুশি করতে পুজো দিল সে, নদী ছেড়ে দিল। বাঘ হালুম করে তেড়ে আসতেই পোঁটলা খুলে তার দিকে ছুঁড়ে দিল রান্না করা মাংস । বাঘ তাই খেয়ে ফুটে গেল। সাপকে দুধকলা দিয়ে আর পাহাড়কে সোনা-রূপো ঘুষ দিয়ে বশ করে ফেলল সে। ভাইয়ের সব অনিষ্ট দূর হয়ে গেল।
উপাচার:-
ধান, দূর্বা, শিশির দিয়ে ঘষা চন্দন, পৈতে ( ব্রাহ্মণ হলে ), পান, সুপারি, নাড়ু, মিষ্টি, পায়েস, জল ও উপহার সামগ্রী
আচার ও অনুষ্ঠান :-
এই দিন বোনেরা উপবাস রেখে ভাইয়ের কপালে বাঁ হাতের অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে চন্দন, ঘি, কাজল, মধু , শিশির, গোমূত্র  দিয়ে ফোঁটা দিয়ে ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে থাকে।  এই সময় বোনেরা বলেন  –
ভ্রাতস্তব ললাটে হি দদামি তিলকং শুভ। 
অতঃপরং যমদ্বারে ময়া দত্তং হি কন্টকম্।
“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা,
আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা।”

মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৮

রক্ত জবা

       
                  - সুব্রত মজুমদার
হে গৌরীসুত সিন্দূরচর্চিত গণজনাবৃত হে গণেশ
বন্দি তব পদ হরয়ে বিপদ ধরয়ে সতত রাজেন্দ্রবেশ।
নমি অতঃপর যোগীন্দ্র শঙ্কর গঙ্গাধর ভূতভর্তরি
সে মৃত্যুঞ্জয়ের চরণে সুব্রত বিরাজে রজরূপ ধরি ।
যমুনাপুলীনে শ্রীমতীর সনে রাসরসে মাতে নটবর
শ্যাম করে গান গোপী ধরে তাণ নাচে ব্রজপ্রাণ সুন্দর।
নমি সে চরণ, নগেন্দ্রগমন ঈশান মনহারিনী
বন্দি হরজায়া হরিনেত্রাশ্রয়া মহাকাল মনোরঞ্জনী।।

                  ।। ১ ।।
তারা পাপহারী তমনাশকারী উদ্ধার সন্তানে বিপদে
মনোদুখ হর ওমা হরজায়া এ প্রপঞ্চমায়া নাশ হে।
প্রলয়ের কালে তুমি নারায়ণী, বিষ্ণুনিদ্রারুপী তুমি সনাতনী ;
কৈলাশে আবার গণেশজননী, বিরাজ  ভবের সাথে হে।
তুমি কখনো ইন্দ্রাণী বজ্র ধরি হাতে, কখনো গো মা শঙ্খ-চক্র ধৃতে --
কালরমা কালি স্থিতি কালহৃদে, বস সুব্রতের হৃদয়ে।।
                  ---¤---

                  ।। ২ ।।
আয় মা এসে বস মা কোলে যতন করে সাজিয়ে দি
এলো চুল পড়েছে মুখে , কি অভিমান জমলে বুকে ?
শুকালো মা দুইগালে তোর অশ্রুজলের বারিধী।
বুঝাই তোরে কেমন করি তোর লাগি মা ঘরে ফিরি
(আমি)  তোর নয়নে জগৎ হেরি , আনন্দহাট বসিয়ে দি।
কে বলে তুই পাগলী মেয়ে ওরাই পাগল দেখুক গিয়ে ;
নাই পরেছিস বসন গায়ে,  তাতে বা যায় আসে কি  ?
সুব্রতের কঠোর হিয়া এলো কণ্যারুপা হরজায়া
দিলো ব্যথা না চিনিয়া,  এখন উথলিছে স্নেহনদী।।
                     ---¤---
                    ।। ৩ ।।
যদি ধুলোয় ফেলে রাখবি শ্যামা তবে মিছে মা বলি ক্যানে,
দেখলি না মা এলোকেশী তোর কোলের ছেলে রয় ঊপোষী
পেটভরালি প্রতিবেশীর চাইলি নাকো শিশুর পানে।
হত যদি গণপতি এমন কি হত মা গতি ? শিবজায়ার এ কি মতি
                 সদানন্দয়ী বলি কেমনে ¦
ভাল আমার পশুপতি নির্বিকল্প সরলমতি সুব্রতের হীনমতি
             উদ্ধারিল যার চরণে।
এরপরেও হরজায়া থাকিস গো মা পাষান হইয়া তবে এ সন্তান হিয়া
            কেমন করে প্রবোধ মানে!
সুব্রত বলে শোন মা তারা নিজমায়ায় নিজে হারা, বসে খাও সন্দেশ-প্যাড়া
                   দোষ কি দেবে অপর জনে ?
                     


                      ।। ৪ ।।
         
আমি কেন মার চরণ ছাড়া
কোলে লয় মা দুষ্টজনে অবোধ কেঁদে পায় না সাড়া।
কে বলে মা মহামায়া অন্ধ মা তুই মায়ার ঘোরে
বালকে ত্যজি তাইতো তারা ঠাঁই নিয়েছেন ডাকাতপুরে।
দুঃখ দিলি তমোময়ী দুধের শিশু ফেললি ভূমে
ওঠ জেগে দেখ ব্রহ্মময়ী ব্যাঘ্রেও শিশুর কপোল চুমে।
তাই বলি শোন মনের দুঃখে সুব্রত কয় শোন গো তারা
এই তারানাম কেউ লবে না যদি থাকিস জ্যান্তে মরা।।
             ।।৫।।


যাসনে মা উমা যাসনে মা, উমা দন্ডদুয়েক থাক মা ঘরে,
তুই গেলে গো মা হরমনোরমা মন যে গো মা কেমন করে।
বছরের পর এলি উমা ঘর সঙ্গেতে শঙ্কর আনিলি ক্যানে !
সে পাগল ভোলা লয়ে ভূতচেলা ঘুরুক এবেলা শ্মশানে শ্মশানে।
কে বলে পার্বতী তোর পিতা মূঢ়মতি, - সে কি জানে কত হৃদয় বিদারে?
হইয়ে পাষান বিদরে পরাণ সঁপেছি পরাণ পাগলের করে;-
যদি যাস উমা পরাণপ্রতীমা কি পরাণ লয়ে থাকিব ঘরে?
নয়নের জলে পাষান বিগলে তবু কি গো টলে পাগলের হিয়া
সুব্রত বলে দেখ দ্বার খুলে সে পাগল ভোলা দুয়ারে বসিয়া।


আমার কালি

আমার কালি

কালি বলতে তোমরা কি বোঝ জানি না, আমি বুঝি ছোট্ট ন্যাংটা মেয়ে
ঘুরে বেড়ায় আমার আশে পাশে ;-  শাসন বারন কোনকিছুই মানে না।
ফাগুন মাসে  কুল পেড়ে খায় বোশেখ মাসে লবণ মেখে আম
বার করে জিভ চাটে আমের আঁটি ; কালো বলে কালিই তো তার নাম।
যখন আমি আপনমনে লিখি পিছন হতে ছোট্ট দুটি হাত জড়িয়ে ধরে এসে;
'ছাড় নারে মা, এখন কত কাজ ;' - - বলি আমি তখন মুচকি হেসে।
খেলতে গিয়ে পাড়ার দুষ্ট ছেলে যখন তাকে দেয় কখনো গালি
মেয়ে আমার কেঁদে এসে পড়ে, কালো বরন হয় যে আরো কালি।
ধুলোমাখা কালোকেশে জট বেঁধে যায়, খুলে পড়ে যত্নে বাঁধা বেণী
আর যেই যা বলুক তারে সে তো আমার এই দু'চোখের মণি।
চলতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে ঠোঁটদুখানি রক্তে ভিজে ওঠে
মেয়ের আমার তবুও মুখে হাসি, - - কালোয় যেন হাজার আলো ফোটে।
রুক্ষকেশে গুঁজে জবার কলি মেয়ে আমার কালি।
তাই তো তার দেখতে মুখের হাসি সমস্ত সুখ অক্লেশে দিই বলি।
এ কালি আজ সবার ঘরে ঘরে, হয়তো আছে অবহেলায় পড়ে ;
এই কালি-ই লক্ষ্মী দশভূজা, তবে কেন অবহেলার সাজা ?
বদলেছে যুগ, - - এ যুগ আমার কালির
তার আলোতেই উঠবে জ্বলে প্রদীপ দীপাবলীর।।
          - সুব্রত মজুমদার 

রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮

Dhanterus - ধনতেরাস

                ধনতেরাস                
                             
(আরও দেখুন - সূচিপত্র
                               দীপাবলী উপলক্ষে পঞ্চোৎসব পালন করা হয়। এগুলি হল যথাক্রমে ধনতেরাস, নরকচতুর্দশী, দীপাবলী, গোবর্ধনপুজা ও ভাইফোঁটা । ধনতেরাস হল হিন্দু ক্যালেন্ডারের তুলারাশির কৃষ্ণপক্ষের তেরতম দিন। এখানে "তেরাস'' শব্দের অর্থ হল ত্রয়োদশী। এদিন ধনের দেবতা কুবের ও ধন দেবী মা লক্ষ্মী বাড়ি বাড়ি এসে ধন বিতরন করেন। ভারতসরকার এই দিনটিকে 'জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস' হিসাবে ঘোষণা করেছেন।
 ধনতেরাস সম্পর্কে অনেক পৌরাণিক ও লোককথা আছে। এগুলি হল :-
১।। পুরাণ অনুসারে একবার দুর্বাশা মুনির অভিশাপে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হন লক্ষ্মী। আর এই ধনতেরাসের দিনেই দেবতারা ফিরে পান দেবী লক্ষ্মীকে। এই আনন্দের উৎসবই  হচ্ছে ধনতেরাস।
২।। রাজা হিমের ষোড়শবর্ষীয় পুত্রের কোষ্ঠীতে লেখা - বিবাহের চতুর্থ দিবসে সর্পাঘাতে মৃত্যু। নবোঢ়া পুত্রবধূটি দিশাহারা, কী করবে সে?

ভেবে ভেবে সে এক উপায় বের করল - স্বামীকে কিছুতেই ঘুমাতে দেওয়া যাবে না। পতিদেবতাটি সাহসী ও পরাক্রমী, যত বিষধর সর্পই হোক, তার তরোয়ালের কাছে কিছুই না। কিন্তু ঘুমন্ত মানুষের পরাক্রম থাকে না। সুতরাং যে করেই হোক, তাকে জাগিয়ে রাখতে হবে।

বিবাহের পর চতুর্থ রাত্রি। কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর অমানিশায় সমস্ত জগৎ যখন সুষুপ্ত, তাদের শয্যাকক্ষের চতুর্দিকে তরুণী জ্বালিয়ে দিল রেড়ির তেলের অসংখ্য প্রদীপ। কক্ষে একটিমাত্রই প্রবেশদ্বার, সর্পকে প্রবেশ করতে হলে সেটিই একমাত্র পথ। দ্বার রুদ্ধ থাকলেও সর্প নাকি তার ক্ষুদ্র রন্ধ্রপথেও প্রবেশ করতে পারে, তাই সে তার অঙ্গের সমস্ত গহনা ও স্বর্ণাভরণ খুলে স্তূপীকৃত করে রাখল সেই দ্বারপ্রান্তে। প্রদীপের উজ্জ্বল আলোক রত্নরাজি, মণিমাণিক্য ও স্বর্ণাভরণে বিচ্ছুরিত হতে লাগল।

ঘুম দূরে রাখার জন্য এবার সে শুরু করল তার জীবনের চিত্তাকর্ষক গল্প। কোনো মতেই যেন রাজকুমার ঘুমিয়ে না পড়ে।

মৃত্যুদেব যম এলেন সর্পরূপ ধারণ করে। সূক্ষ্মদেহ ধারণ করে ঢুকেও পড়লেন শয্যাকক্ষের দ্বারের অতি ক্ষুদ্র রন্ধ্রপথে। কিন্তু ঢুকেই তার চোখ ধাঁধিয়ে গেল, রাত্রির অন্ধকারেও কক্ষের ভিতর হাজার সূর্যের প্রভা। তিনি দিকনির্ণয় করতে পারলেন না, গুটিসুটি মেরে পড়ে রইলেন রত্নরাজির ওপর। তিনি শুনছেন অনির্বচনীয় কণ্ঠে এক তরুণী গল্প শোনাচ্ছে তার দয়িতকে।

রাজকুমার মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেলেন। পেলেন দীর্ঘ আয়ু ধন্বন্তরীর কৃপায়।

আয়ুর্বেদের জনক, সমস্ত চিকিৎসকদের গুরু এই ধন্বন্তরীর পূজাই ধন্বন্তরী ত্রয়োদশীর মূলে। প্রাণের মূলে যে সূর্যদেব, তিনি হেলে পড়েছেন দক্ষিণে। বাতাসে হিমের পরশ। এ সময় রোগব্যাধির উপক্রম বেশি। এর ফলেই আয়ুক্ষয়।

আমাদের সমস্ত পূজাই কোনোভাবে আয়ু-বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত।

দেব-অসুরের সমুদ্রমন্থনে উঠে এসেছিলেন এই ধন্বন্তরী, এক হাতে অমৃতভাণ্ড ও অন্য হাতে আয়ুর্বেদ নিয়ে। তিনিই শেখালেন আয়ুর্বেদ। আয়ু-বৃদ্ধির উপায়। পরমায়ুই আমাদের একমাত্র ধন। তারই পূজা ধনতেরাসে। পিসিচন্দ্র বা সেনকো গোল্ডের গহনা দিয়ে তাকে কেনা যায় না।

দক্ষিণ ভারতে - তামিলনাড়ুতে - এইদিন উপাসনা হয় মারুন্দুর। মারুন্দু মানে ওষুধ। বাড়িতে প্রস্তুত করে পরের দিন - নরক চতুর্দশীর দিন - সূর্যোদয়ের প্রাক্কালে তা খাওয়ার নিয়ম। বাড়ির মেয়ে-বৌমাকে শেখানো হয় মারুন্দুর রেসিপি, যাতে তারা প্রজন্ম প্রজন্ম ধরে এই ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে চলে।

যমদেবের উদ্দেশে দীপ জ্বালানো হয়। লক্ষ লক্ষ প্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হয় ধরণী। প্রার্থনা ধ্বনিত হয় জীবনের উদ্দেশে, পরমায়ু বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে।

তোমাদের সকলের জীবন সেই পবিত্র আলোয় আলোকিত হোক। স্বাস্থ্যই সম্পদ, তার পূজা যেন আমরা কখনোই ভুলে না যাই।
৩।। এছাড়াও কথিত আছে যে, কুবের আজকের দিনে বিবাহের জন্য প্রয়োজনীয় কারণে ভগবান বিষ্ণুর কাছ থেকে কিছু অর্থ নিয়েছিলেন। যার ফলে, আজও বহু লোক ভগবান বিষ্ণুর মন্দিরে টাকা দান করেন, যাতে ভগবান বিষ্ণুর কাছে ধার শোধ করা যায়।
ধনতেরাসের পুজো পদ্ধতি:-
প্রথমে একটি নতুন কেনা ঘট বা পাত্রে চাল, পাঁচটি সুপারি ও ২১টি পদ্ম বীজ নিতে হবে। অন্য একটি পাত্রে গঙ্গাজল নিয়ে তাতে চিনি, ফুল ও সোনা বা রূপোর পয়সা দিতে হবে। লক্ষ্মী ও গণেশের মূর্তিতে মালা পরিয়ে পুজো করতে হবে। পুজোর সময় নতুন প্রদীপ জ্বালাতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন এই প্রদীপ কমপক্ষে দুই ঘন্টা জ্বলে।
পুণ্য ধন-ত্রয়োদশী (ধনতেরাস্)

ধন্বন্তরির ধ্যান :-
শঙ্খং চক্রমুপর্যধশ্চ করয়োর্দিব্যৌষধং দক্ষিণে
বামেনান্যকরেণ সম্ভৃতসুধাকুম্ভং জলৌকাবলিম্ |
বিভ্রাণঃ করুণাকরঃ শুভকরঃ সর্বাময়ধ্বংসকঃ
ক্ষিপ্রং নো দুরিতং ছিনত্তু ভগবান্ ধন্বন্তরিঃ পাতু নঃ ||

এদিনে কি কিনব ও কি কিনব না :-
এদিন সোনা ও রূপার দ্রব্য, পিতলের মূর্তি, মুদ্রা,কড়ি, ঝাঁটা, মাটির প্রদীপ ইত্যাদি কেনা শুভ।
অপর পক্ষে অ্যালুমিনিয়ামের দ্রব্য, তীক্ষ্ণ ও ধারালো দ্রব্য, কাঁচের দ্রব্য, কালো কিছু ও তেলনির্মিত দ্রব্য কেনা অশুভ। 

Surya kavacham

SURYA KAVACHAM


चमत्कारी सूर्य कवचम : आरोग्य और सौभाग्य का दिव्य वरदान देता है
(নিচে বাংলা অনুবাদ সহ বাংলা ফন্টে ) 
====
II अथ श्रीसूर्यकवचस्तोत्रम् II 
श्री गणेशाय नमः I
याज्ञवल्क्य उवाच I
श्रुणुष्व मुनिशार्दूल सूर्यस्य कवचं शुभम् I
शरीरारोग्यदं दिव्यं सर्व सौभाग्यदायकम् II १ II
दैदिप्यमानं मुकुटं स्फ़ुरन्मकरकुण्डलम् I
ध्यात्वा सहस्रकिरणं स्तोत्रमेतदुदीरयेत् II २ II
शिरो मे भास्करः पातु ललाटे मेSमितद्दुतिः I
नेत्रे दिनमणिः पातु श्रवणे वासरेश्वरः II ३ II
घ्राणं धर्म धृणिः पातु वदनं वेदवाहनः I
जिह्वां मे मानदः पातु कंठं मे सुरवंदितः II ४ II
स्कंधौ प्रभाकरं पातु वक्षः पातु जनप्रियः I
पातु पादौ द्वादशात्मा सर्वागं सकलेश्वरः II ५ II
सूर्यरक्षात्मकं स्तोत्रं लिखित्वा भूर्जपत्रके I
दधाति यः करे तस्य वशगाः सर्वसिद्धयः II ६ II
सुस्नातो यो जपेत्सम्यक् योSधीते स्वस्थ मानसः I
स रोगमुक्तो दीर्घायुः सुखं पुष्टिं च विंदति II ७ II
II इति श्री माद्याज्ञवल्क्यमुनिविरचितं सूर्यकवचस्तोत्रं संपूर्णं II
সূর্য্যকবচম

যাজ্ঞবল্ক্য উবাচ -
 শ্রণুষ্ব মুনিশার্দুল সূর্য্যস্য কবচং শুভম্  ।
শরীরারোগ্যদং   দিব্যং সর্ব সৌভাগ্যদায়কম্ ।1।

 ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য বললেন - হে মুনিশ্রেষ্ঠ ! ভগবান সূর্য্যের শুভ কবচ শ্রবণ কর , যা শরীরের আরোগ্য প্রদানকারী তথা সম্পূর্ণ দিব্য সৌভাগ্য প্রদান করে।

 দেদীপ্যমানং মুকুটং স্ফূরন্মকরকুণ্ডলম্ ।
ধ্যাত্বা সহস্রকিরনং স্তোত্রমেতদুদীরয়েৎ  ।2।

 উজ্জ্বল মুকুটধারী দোলয়মান মকর কুণ্ডলধারী সহস্রকিরনের ধ্যান করে এই স্তোত্র আরম্ভ করছি।

 শিরো মে ভাস্করঃ পাতু ললাট মেড়মিতদ্যূতিঃ ।
নেত্রে দিনমণিঃ পাতু শ্রবণে বাসরেশ্বরঃ ।3।

 ভাস্কর আমার মস্তক রক্ষা করুন, অপরিমিত কান্তি যুক্ত দেব আমার ললাট রক্ষা করুন। নেত্র রক্ষা করুন দিনমণি আর ঈশ্বর আমার কান রক্ষা করুন।

 ঘ্রাণং ধর্ম ঘৃণিঃ পাতু বদনং বেদবাহনঃ ।
জিহ্বাং মে মানদঃ পাতু কণ্ঠং মে সুরবন্দিতঃ  ।4।

 ধর্মঘৃণি আমার নাক রক্ষা করুন, মুখ রক্ষা করুন বেদবাহন । জিহ্বা রক্ষা করুন মানদ ও কণ্ঠ রক্ষা করুন সুরবন্দিত।

স্কন্ধৌ প্রভাকরং পাতু বক্ষঃ পাতু জনপ্রিয়ঃ।
পাতু পাদৌ দ্বাদশাত্মা সর্বাঙ্গ সকলেশ্বরঃ ।।

প্রভাকর আমার স্কন্ধদ্বয় রক্ষা করুন, বক্ষ রক্ষা করুন জনপ্রিয়। দ্বাদশাত্মা পদদ্বয় রক্ষা করুন আর সর্বাঙ্গ রক্ষা করুন সকলেশ্বর ।

সূর্য্য রক্ষাত্মকং স্তোত্রং লিখিত্বা ভূর্জপত্রকে  ।
দধাতি যঃ করে তস্য বশগাঃ সর্বসিদ্ধয়ঃ ।5।

 সূর্য্যরক্ষাত্মক এই স্তোত্র ভোজপত্রে লিখে যে হাতে ধারন করে সর্বসিদ্ধি তার বশীভূত হয়।

 সুস্নাতো যো জপেৎসম্যক্ যোৎধিতে স্বস্থ মানসঃ ।
স রোগমুক্তো দীর্ঘায়ুঃ  সুখং পুষ্টিং চ বিদন্তি। ।6।

 স্নান করে যে স্বচ্ছ মনে এই কবচ পাঠ করে সে সর্বরোগমুক্ত হয়ে সুখী ও দীর্ঘজীবন লাভ করে।
=====================================

বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৮

কিছু কবিতা - some poems

নিহারীকা
     সুব্রত মজুমদার 
আমি ছিলাম তোমার আশে তোমার প্রতীক্ষায়,
                                  শালের তলে মাদল যেথায় ধিতাং ধিতাং গায়
রুক্ষ মাটি গ্রীষ্মে তাপে' শ্রাবণ জলে নায়।
 সুপ্তিভরা আঁধার ঘেরা কাজল নদীর কূলে
                                       ঘুমিয়ে ছিলাম নরম ঘাসের কোলে ;
তন্দ্রাহরা তোমার কথা ভূলে।
ঘুমের মাঝে হঠাৎ এলো ডাক, -
                                       "শুনছো ! হোথায় চক্রবাক
উড়ছে দেখো ; - - হোথায় চক্রবাক !
ওদের ডানা রোদে ঝলমলিয়ে ওঠে;
                                        শান্ত নদীর নরম সবুজ তটে
 সোনার রবি চলছে অস্তপাটে।"
আমি বললাম - ' কোথায় নিহারীকা ?
                                  কোথায় তুমি  বসে একা একা ?
কোথায় তুমি? কোথায় নিহারীকা ?"
নিরব হেঁসে বাড়িয়ে দিলে তোমার নরম হাত,
                                              মেহেন্দীতে ভর করে তার নামল জ্যোৎস্নারাত ;
জ্যোৎস্না এসে চুমল চিকন হাত।
উঠল জোয়ার নদীর বুকে দীগন্তহীন জল
                                          ফেনায় ফেনায় ডুবল ঘাসের দল,
মরানদী হঠাৎ হলযেন  উচ্ছ্বল চঞ্চল।
গলা আমার উঠল কেঁপে দারুণ আশঙ্কায়
                                           - 'ও মেয়ে ! এ আমি কোথাই ?
ছিলাম বসে তোমার প্রতীক্ষায়।'
ভেঁসে এলো ললিত কণ্ঠে সুরের কলতাণ
                                                   - 'আমি তোমার নিহারীকা, - - জোয়ার ভাঁট আর গান।
আমার সুরে জাগবে আজি লক্ষ কোটি  প্রান।