বুধবার, ৬ জুন, ২০১৮

Raja Voja & stories


রাজা ভোজ ও অন্যান্য গল্প - - , , , 
মহাকবি কালিদাসের খ্যাতি দেখে অন্য কবিরা তাকে হিংসা করতেন  । একবার শতঞ্জয় বলে এক কবি কালিদাসকে নীচুদেখাবার জন্য রাজা ভোজের কাছে একটি স্বরচিত কবিতা পাঠ করে শোনান ।
অপশব্দং শতং মাঘে ভৈরবী চ শতত্রয়ং
কালিদাসে ন গণয়ন্তে কবিরেকো শতঞ্জয়ঃ
অর্থাৎ----
মাঘ কবির রচনায় ১০০ ভূল আছে,  ভৈরবীর রচনায় ভূল আছে ৩০০টি, আর কালিদাসের রচনায় ভূল তো অসংখ্য।
মহাকবি কালিদাস এই কবিতার একটি শব্দের একটি মাত্রা পরিবর্তন করে কবিতাটির অর্থ বদলে দেন।
কালিদাস দ্বারা সংশোধনের পর - -
আপশব্দং শতং মাঘে ভৈরবী চ শতত্রয়ং
কালিদাসে ন গণয়ন্তে কবিরেকো শতঞ্জয়ঃ
অর্থাৎ - - -
মাঘ কবি জলের ১০০টি পর্যায়বাচী শব্দ জানেন, ভৈরবী জানেন ৩০০টি, আর কালিদাস জলের পর্যায়বাচী শব্দ জানেন অগণিত । দুর্ভাগ্যবশত কবি শতঞ্জয় জলের একটিই পর্যায়বাচী শব্দ জানেন  ।



ব্রাহ্মণ, স্বর্ণকার ও মহাকবি কালিদাস 
Brahman goldsmith and Mahakavi Kaalidas
রাজা ভোজ খুবই ন্যায়প্রিয় রাজা ছিলেন । তার রাজ্যে জটিল হতে জটিলতর অপরাধেরও ন্যায় বিচার হত ।
অপরাধী যতই না চতুরতার সাথে সাক্ষ্য প্রমাণ মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুক রাজার ন্যায় বিচার হতে বাঁচত না  ।
তার রাজ্যের দুই গ্রাম্য প্রজা অর্থ উপার্জন করতে শহরে গেল  । দুইজনের মধ্যে একজন ছিল ব্রাহ্মণ ও অপরজন স্বর্ণকার  । দুজনেই বিদেশে পরিশ্রম করে প্রচুর ধন উপার্জন করল  । ব্রাহ্মণ পন্ডিতগিরি করে প্রচুর রোজগার করলেন  । স্বর্ণকারেরও সোনা চাঁদির ব্যবসা খুব চলল  । কিন্তু ব্রাহ্মণের উপার্জন স্বর্ণকারের উপার্জন অপেক্ষা অনেক বেশি হল । স্বর্ণকার ব্রাহ্মণের উপার্জন বেশি দেখে হিংসায় জ্বলতে লাগল ।  কিন্তু ধূর্ত স্বর্ণকার নিজের ঈর্ষার কথা ব্রাহ্মণকে বুঝতে দিত না ।
বহু দিন পরে দুজনে একসাথে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন ।  পথের অনেকটা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ।  আগের দিনে পথভ্রমন খুবই কষ্টকর ছিল ।  রাস্তা অনেক জঙ্গল ও বিহড়ে পরিপূর্ণ ছিল । রাস্তায় বন্য পশুর হাত হতে বাঁচতে যাত্রীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পথ চলত । পথে হিংস্র পশুর হাত হতে সুরক্ষার জন্য স্বর্ণকার একটা তলোয়ার নিল ও দুজনে রওনা দিল ।
ব্রাহ্মণ ও স্বর্ণকার দুজনের কাছেই স্বর্ণমুদ্রা ছিল ।  তাই দুজনেই যথাসম্ভব সাবধান হয়ে পথ চলছিল । ব্রাহ্মণের কাছে স্বর্ণকারের চেয়ে বেশি ধন ছিল ।  ব্রাহ্মণের পুঁটলি স্বর্ণকারের পুঁটলি অপেক্ষা ভারি ছিল । স্বর্ণকারের ব্রাহ্মণের ধনে লোভ জন্মাল । সে ব্রাহ্মণকে হত্যা করে সব ধন নিতে চাইছিল । সুযোগ পেয়ে স্বর্ণকার ব্রাহ্মণকে আক্রমণ করে বসল ।
ব্রাহ্মণ বুদ্ধিকরে স্বর্ণকারকে অনুনয়-বিনয় করলেন ।  বললেন - - "তুমি আমাকে মারো কিন্তু এই মন্ত্র আমার ঘরে পৌঁছে দিও ।
ব্রাহ্মণ একটি কাগজে চারটি অক্ষর "অ প্র শি খ " লিখে স্বর্ণকারকে দিল । স্বর্ণকার ঐ লেখাটি তার কোন সমস্যা করতে পারবে না ভেবে নিয়ে নিল । সে তখন ব্রাহ্মণকে হত্যা করে সব ধন নিয়ে নিজ ঘরে চলে গেল । এরপর স্বর্ণকার কুম্ভীরাশ্রু ফেলতে ফেলতে ব্রাহ্মণের বাড়ি গিয়ে সেই লেখাটি দিয়ে এল । ব্রাহ্মণপত্নীকে স্বর্ণকার বলল - - - "আমরা দুজন বাড়ি ফিরছিলাম, ব্রাহ্মণকে বাঘে ধরল ও মেরে খেয়ে নিল ।  কোনো রকমে আমি বেঁচে ফিরেছি ।"
 ব্রাহ্মণ পরিবার শোকে ভেঙ্গে পড়ল । কারোরই ঐ চিঠিতে লেখা চার অক্ষরের অর্থ বোধগম্য হচ্ছিল না । শোকাকুল ব্রাহ্মণ পরিবার রাজা ভোজের দরবারে আবেদন করল । রাজা ভোজ সভার সকল বিদ্বানকে চার অক্ষরের রহস্যটি সমাধান করতে বললেন । কিন্তু কেউই সফল হল না ।
শেষে এই সমস্যা সমাধানে মহাকবি কালিদাসকে ডাকা হল । কালিদাস তো আশুকবি ছিলেন, তাই তিনি শব্দগুলো ব্যবহার করে শীঘ্রই কাব্য রচনা করে দিলেন । যে কাব্য রচনা হল তা হতে বিরাট অপরাধের রহস্য সমাধান হল ।
অ তে -> অনেন স্বর্ণকারেণ
প্র তে -> প্রদেশে নির্জনে বনে
শি তে -> শিখামাদায় হস্তেন
 খ তে -> খড়্গেন নিহতঃ শিরঃ

অনেন স্বর্ণকারেণ, প্রদেশে নির্জনে বনে ।
শিখামাদায় হস্তেন,খড়্গেন নিহতঃ শিরঃ ।।
অর্থাৎ এই স্বর্ণকার রাজ্যের নির্জন এক বনে ব্রাহ্মণের শিখা ধরে খড়্গ দিয়ে শিরশ্ছেদ করেছে ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন