শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৯

Dharmapuja

ধর্মপুজো
                                       
                            ধর্মরাজ পুজো বা ধরম পুজা বুদ্ধপূর্ণীমার তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়।  ধর্মঠাকুর সাধারণত গ্রামের শেষে একটা বটগাছের ( ক্ষেত্রবিশেষে অন্য কোন গাছের তলায় ) একটি সিঁদুর-মাখানো নির্দিষ্ট আকারবিহীন প্রস্তরখণ্ডে ধর্মঠাকুরের পূজা করা হয়। প্রধানত বাউড়ি, বাগদি, হাড়ি, ডোম ইত্যাদি বর্ণের মানুষেরা ধর্মঠাকুরের পূজা করে থাকে।ধর্মঠাকুর বিভিন্ন চর্মরোগ বিশেষ করে কুষ্ঠব্যাধি নিরাময় করেন, ভক্তকে সন্তানের বরদান করেন বলে মনে করা হয়।
আকার :-
ধর্মঠাকুর হলেন  নিরঞ্জন অর্থাৎ শূন্যতার প্রতীক ।  সূর্যের  মতো তিনিও সাদা এবং তার বাহন ঘোড়ায় টানা রথ বা ঘোড়া । এজন্য রাঢ়বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্মঠাকুরের পূজার সময় মাটির ঘোড়া  দেওয়ার প্রথাও প্রচলিত আছে। ধর্মঠাকুরের বাহন সাদা ঘোড়া এবং সাদা ফুল তাঁর প্রিয়। তাঁর আসল প্রতীক পাদুকা বা খড়ম।
আসলে  ধর্মঠাকুর  হলেন  বুদ্ধ, সূর্য, শিব এবং বিষ্ণুর মিলিত দেবতা । অধ্যাপক শ্রীসুকুমার সেন ধর্মঠাকুর কে মিশ্রিত দেবতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাঁর ” ডিসকভারী অফ লিভিং বুদ্ধিজম অফ বেংগল” নিবন্ধে ধর্মঠাকুরকে বৌদ্ধ দেবতা আখ্যায়িত করেছেন।  “তারকেশ্বরের শিবতত্ত্ব”  পুঁথিতে আছেঃ

” বহু দেব বহু মঠ না হয় কথন।
 নীচ জাতি গৃহে দেখ ধর্ম সনাতন
বৌদ্ধধর্ম বৌদ্ধ চর্চা করিতে নির্মুল।
এতাদৃশ অনুষ্ঠান করে সাধুকুল “
অর্থাৎ বৌদ্ধধর্ম নির্মূল করে তার স্থলে ধর্মঠাকুরের উদ্ভব হয়।
ধর্মঠাকুরের মূর্তি বা প্রতীক বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে–যেমন
১। ঘট,  শিলা, মুণ্ডমূর্তী, পোড়ামাটির ঘোড়া, ঘটপ্রতীক
২। রাজবেশধারী মূর্তি।
৩। পৌরাণিক দেবতার অনুরুপ
৪। মহাদেবের অনুরূপ (জটা ও ত্রিশুল ছাড়া )
৫। সাধারণ শিলাখন্ড প্রতীক যা ধর্মশীলা নামে পরিচিত
৬। ধ্যানী বুদ্ধের মতো।


পুজা :-
বহু জায়গায় ধর্মঠাকুরের নিত্যপুজা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত তিন প্রকারে অনুষ্ঠিত হয়: নিত্য, বারমতি এবং বাৎসরিক। এই নিত্যপুজা সাধারণত অনারম্বড় হয়।
বুদ্ধপূর্ণীমার দিন   পূজায়  পাঁঠা, হাঁস ও পায়রা এমনকি শূকর বলি দেওয়ার রীতি আছে।
পূজায় যারা ব্রতধারন করে বেত হাতে সন্নাসীবেশ ধারন করে তাদের ভক্ত বলে। ভক্তরা  প্রচুর পরিমানে মাদক সেবন করে, জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর নৃত্য করে ও সারা শরীরে বানবিদ্ধ করে। ধর্মঠাকুরের পূজায় কোন জাতিভেদ নেই তাই বহুস্থানে তাঁর পূজায়  হাঁড়ি, ডোম, বাগ্দী প্রভৃতি জাতির লোক পৌরহিত্য করে । তবে বর্তমানে ধীরে ধীরে সেই স্থান ব্রাহ্মণ পুরোহিতরা দখল করছেন। পূজার সময় অনেক ভক্তের ভর হয়। মনে করা হয় যে ধর্মঠাকুর তার শরীরে অবস্থান করে আদেশ দান করেন। পূজা শেষে পুরোহিত বিগ্রহের উপর ফুল রাখেন, ঢাক ঢোল বেজে উঠে, বিগ্রহ থেকে ফুল সহজে পড়ে গেলে মঙ্গল মনে করা হয়। একে ফুলপড়া বলে।
অনেকে অভীষ্ট কামনায় মন্দিরের গাছে ঢিল ও মাটির ঘোড়া ঝুলিয়ে দেন। এই পূজায় পদ্ম ফুলের বিশেষ প্রয়োজন হয়।
ধর্মমঙ্গল:-
                                         ধর্মঠাকুরের পূজার প্রাধান্য কাল পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত। এই সময়কালে বহু ধর্মমঙ্গলের কবিদের রচনা পাওয়া গিয়েছে, মুদ্রিতও হয়েছে। মনে করা হয় রামাই পন্ডিত ছিলেন ধর্মঠাকুরের এর প্রথম পুরোহিত ও প্রচারক । রামাই পন্ডিতের 'শূণ্যপুরাণ' ধর্মমঙ্গলের আদিরুপ। রামাই পন্ডিতের কাল সম্পর্কে মতভেদ আছে। তিনি আনুমানিক  ১০০০ খ্রীষ্টাব্দে  হতে  ১৫০০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে বিদ্যমান ছিলেন।
কিন্তু ধর্মমঙ্গল ধারার  প্রথম কবি হলেন ময়ূরভট্ট। তাঁর রচিত 'হাকন্দপূরান' বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিল । এরপর আসে পরবর্তী কবি খেলারাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল। এছাড়াও শ্যাম পণ্ডিত, ধর্মদাস , সীতারাম দাস, রামদাস আদক, মাণিকরাম গাঙ্গুলি ও যদুনাথ পণ্ডিত উল্লেখযোগ্য।

মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০১৯

Akshay tritiya

                      অক্ষয় তৃতীয়া

অক্ষয় তৃতীয়া হল চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। অক্ষয় তৃতীয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তিথি। অক্ষয় শব্দের অর্থ হল যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। বৈদিক বিশ্বাসানুসারে এই পবিত্র তিথিতে কোন শুভকার্য সম্পন্ন হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে।
যদি ভালো কাজ করা হয় তার জন্যে আমাদের লাভ হয় অক্ষয় পূণ্য। আর যদি খারাপ কাজ করা হয় তবে লাভ হয় অক্ষয় পাপ। তাই এদিন খুব সাবধানে প্রতিটি কাজ করা উচিত। খেয়াল রাখতে হয় ভুলেও যেন কোনো খারাপ কাজ না হয়ে যায়। কখনো যেন কটু কথা না বেরোয় মুখ থেকে। কোনো কারণে যেন কারো ক্ষতি না করে ফেলি বা কারো মনে আঘাত দিয়ে না ফেলি। তাই এদিন যথাসম্ভব মৌন জরুরী। আর এদিন পূজা,জপ,ধ্যান,দান,অপরের মনে আনন্দ দেয়ার মত কাজ করা উচিত। যেহেতু এই তৃতীয়ার সব কাজ অক্ষয় থাকে তাই প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয় সতর্কভাবে।
এবারের অক্ষয়তৃতীয়া সবার ভালো কাটুক – এই কামনায় করি।
এদিন যে,সকল তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল।
১) এদিনই বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম জন্ম নেন পৃথিবীতে।
২) এদিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন।
৩) এদিনই গণপতি গনেশ বেদব্যাসের মুখনিঃসৃত বাণী শুনে মহাভারত রচনা শুরু করেন।
৪) এদিনই দেবী অন্নপূর্ণার আবির্ভাব ঘটে।
৫) এদিনই সত্যযুগ শেষ হয়ে ত্রেতাযুগের সূচনা হয়।
৬) এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। এদিনই কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
৭) এদিনই ভক্তরাজ সুদামা শ্রী কৃষ্ণের সাথে দ্বারকায় গিয়ে দেখা করেন এবং তাঁর থেকে সামান্য চালভাজা নিয়ে শ্রী কৃষ্ণ তাঁর সকল দুঃখ মোচন করেন।
৮) এদিনই দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে যান এবং ভগবান তার সখীকে রক্ষা করেন শ্রীকৃষ্ণ।
শরনাগতের পরিত্রাতা রূপে এদিন শ্রী কৃষ্ণা দ্রৌপদীকে রক্ষা করেন।
৯) এদিন থেকেই পুরীধামে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষ্যে রথ নির্মাণ শুরু হয়।
১০) কেদার বদরী গঙ্গোত্রী যমুনত্রীর যে মন্দির ছয়মাস বন্ধ থাকে এইদিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয়। দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল।
১১) এদিনই সত্যযুগের শেষ হয়ে প্রতি কল্পে ত্রেতা যুগ শুরু হয়।
অক্ষয় তৃতীয়া সম্পর্কে একটি পুরানিক গল্প দেয়া হল :
ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির একবার মহামুনি শতানিককে অক্ষয় তৃতীয়া তিথির মাহাত্ম্য কীর্তন করতে বললেন ।
শতানিক বললেন পুরাকালে খুব ক্রোধসর্বস্ব , নিষ্ঠুর এক ব্রাহ্মণ ছিলেন । ধর্মকর্মে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল,না । একদিন এক দরিদ্র ক্ষুধার্ত ব্রাহ্মণ তার নিকট অন্ন এবং জল ভিক্ষা চাইলেন । রণচন্ডী হয়ে ব্রাহ্মণ কর্কশ স্বরে তাঁর দুয়ার থেকে ভিখারীকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলেন আর বললেন যে অন্যত্র ভিক্ষার চেষ্টা করতে ।
ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর ভিখারী চলে যেতে উদ্যত হল ।
ব্রাহ্মণ পত্নী সুশীলা অতিথির অবমাননা দেখতে না পেরে দ্রুত স্বামীর নিকট উপস্থিত হয়ে ভরদুপুরে অতিথি সত্কার না হলে সংসারের অমঙ্গল হবে এবং গৃহের ধন সমৃদ্ধি লোপ পাবে … একথা জানালেন ।
স্বামীর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ভিখারীকে তিনি ডাক দিলেন এবং ভিখারীর অন্যত্র যাবার প্রয়োজন নেই সে কথা জানালেন । সুশীলা ত্রস্তপদে তার জন্য অন্নজল আনবার ব্যবস্থা করলেন । কিছুপরেই তিনি অতিথি ভিক্ষুকের সামনে সুশীতল জল এবং অন্ন-ব্যঞ্জন নিয়ে হাজির হলেন । ভিখারী বামুন অতীব সন্তুষ্ট হলেন এবং সে যাত্রায় সুশীলাকে আশীর্বাদ করে সেই অন্নজল দানকে অক্ষয় দান বলে অভিহিত করে চলে গেলেন ।
বহুবছর পর সেই উগ্রচন্ড ব্রাহ্মণের অন্তিমকাল উপস্থিত হল । যমদূতেরা এসে তার শিয়রে হাজির । ব্রাহ্মণের দেহপিঞ্জর ছেড়ে তার প্রাণবায়ু বের হ’ল বলে । তার শেষের সেই ভয়ঙ্কর সময় উপস্থিত । ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় তার কন্ঠ ও তালু শুকিয়ে গেল । তার ওপর যমদূতেদের কঠোর অত্যাচার । ব্রাহ্মণ তাদের কাছে দুফোঁটা জল চাইল এবং তাকে সে যাত্রায় উদ্ধার করতে বলল ।
যমদূতেরা তখন একহাত নিল ব্রাহ্মণের ওপর ।
তারা বলল ” মনে নেই ? তুমি তোমার গৃহ থেকে অতিথি ভিখারীকে নির্জ্জলা বিদেয় করেছিলে ?”
বলতে বলতে তারা ব্রাহ্মণকে টানতে টানতে ধর্মরাজের কাছে নিয়ে গেল ।
ধর্মরাজ ব্রাহ্মণের দিকে তাকিয়ে বললেন ” এঁকে কেন আমার কাছে এনেছ্? ইনি মহা পুণ্যবান ব্যক্তি ।বৈশাখমাসের শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে এনার পত্নী তৃষ্ণার্ত অতিথিকে অন্নজল দান করেছেন । এই দানঅক্ষয় দান ।
সেই পুণ্যে ইনি পুণ্যাত্মা । আর সেই পুণ্যফলে এনার নরক গমন হবেনা । ব্রাহ্মণকে তোমরা জল দাও । শীঘ্রই ইনি স্বর্গে গমন করবেন !👏

রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৯

Choitra sankranti / charak puja

    চৈত্র সংক্রান্তি বা চড়ক

             বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তিতে পালিত হয় চড়ক উৎসব । জনশ্রতি অনুসারে ১৪৮৫ খ্রিষ্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই পূজা প্রথম শুরু করেন।
রীতিনীতি :-

‘‘চৈত্র মাস্যথ মাঘেবা যোহর্চ্চয়েৎ শঙ্করব্রতী।
করোতি নর্ত্তনং ভক্ত্যা বেত্রবানি দিবাশিনম্।।
 মাসং বাপ্যর্দ্ধমাসং বা দশ সপ্তদিনানি বা।
 দিনমানং যুগং সোহপি শিবলোক মহীয়তে।।’’ ( ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, প্রকৃতি খণ্ড  )
                      অর্থাৎ, চৈত্রমাসে বা  মাঘ মাসে একমাস বা পনেরো দিন বা দশ দিন বা সাত দিন অথবা এক  দিন হাতে বেতের লাঠি নিয়ে শিবব্রতী হয়ে নৃত্যাদি করলে সেই ব্যক্তি  শিবলোক প্রাপ্ত হয়।
পূজোর আগের দিন চড়ক গাছটিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ বা সিঁদুরমথিত শিবের পাটা বা বুড়ো শিব কে রাখা হয়।
গাজন উৎসবের তিনটি অংশ— সন্ন্যাস, নীলব্রত এবং চড়ক।  চৈত্র সংক্রান্তির সাত দিন বা তিন দিন আগে থেকে কঠোর নিয়ম পালন করা হয় যাকে সন্ন্যাস পালন করা হয় বলে। গেরুয়া বা সাদা বস্ত্র ধারণ করে হবিষ্যি গ্রহণ করা আবশ্যিক।
সন্ন্যাস নেওয়া / চড়ক ঘোরা:- 
পূজোর উৎসবে বহু প্রকারের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ বলে বিবেচিত হয়। চড়কগাছে ভক্ত্যা বা সন্ন্যাসীকে লোহার হুড়কা দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানো হয়। যারা শরীরে বড়শি বিঁধিয়ে শূন্যে ঘোরেন তাদের ‘হাজরা’  বলা হয়। তার পিঠে, হাতে, পায়ে, জিহ্বায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বাণ শলাকা বিদ্ধ করা হয়। কখনো কখনো জ্বলন্ত লোহার শলাকা তার গায়ে ফুঁড়ে দেয়া হয়। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার আইন করে এ নিয়ম বন্ধ করলেও কিছু কিছু স্থানে এখনো দেখা যায়।
ফুল-খেলা :— লম্বা গর্ত। এক ফুট গভীর, সাত-আট লম্বা গর্তে জ্বলন্ত কাঠকয়লার আংরা বিছিয়ে দেওয়া হয়। এবং তার ওপর দিয়ে ভক্ত সন্ন্যাসীরা হেঁটে যান। বীরভূম জেলার মল্লারপুরের মল্লেশ্বর শিব মন্দিরের ফুল খেলা বিখ্যাত।
হাকুণ্ড: — জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর হাঁটা, কুমিরের পূজা, বাণফোঁড়া , কাঁটা আর ছুঁড়ির ওপর লাফানো,  শিবের বিয়ে, অগ্নিনৃত্য, চড়কগাছে দোলা এবং দানো-বারনো বা হাজরা পূজা করা ইত্যাদি হল চড়ক পুজোর বিশেষ রীতিনীতি। লম্বা সার দিয়ে সন্ন্যাসীরা বসে। তাদের জিভে ফোঁড়া লম্বা শলাকা। রক্ত-লালা ঝরছে। প্রত্যেক জনের সামনে গর্তে জ্বলন্ত কাঠকয়লার আগুন। তার সামনে হাঁড়ির মধ্যে জাগ-পিদিম, সামনে পিছনে এয়োস্ত্রী। সন্ন্যাসীর কোলে ওই অবস্থায় শিশুপুত্র বসে।

শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০১৯

Ghetu puja / Ghantakarna puja

                               ঘেঁটু


ঘেঁটু বা  ঘন্টাকর্ণ হলেন  চর্ম রোগের দেবতা।  ফাল্গুন মাসের শেষ দিনে এই পূজা হয়। ঘেঁটু  ঠাকুর হলেন সূর্য ও ধর্মঠাকুরের লৌকিক রূপ।
আবার জৈন মতে ইনি ৫২ বীরের অন্যতম। পূর্বে বাংলায় জৈনধর্মের প্রতিপত্তি ছিল  । সম্ভবত  ব্রাহ্মণ্যধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠার সাথে সাথে ইনি কৌলিন্য হারান ।
কারণ, সূর্য ও ধর্মঠাকুর দুজনই কুষ্ঠ ও নানারকম চর্মরোগ থেকে মুক্তি দেন। চর্মদেবতা ঘেঁটুর নাম ও আচরণে মত  মূর্তিটিও অদ্ভুত। আধভাঙা ব্যবহৃত মাটির হাড়ি উল্টো করে রাখা হয়, এটি আসন। এর ওপরে একদলা গোবর দিয়ে করা হয় ঘাঁটু দেবতার মুখ। চোখ তৈরি করা হয় দুটি কড়ি দিয়ে। কপালের অংশে দেয়া হয় সিঁদুরের তিলক। হাড়ির ওপরে রাখা হয় দুর্বা ঘাস ও ভাঁট ( ঘেঁটু ) ফুল। কোনো কোনো এলাকায় ঘাঁটুর পোশাক হিসেবে হাড়িতে জড়িয়ে দেয়া হয় হলুদ ছাপানো কাপড়। আর ভাঙাহাড়ির ভেতর জ্বালানো হয় মোমবাতি।
ঘেঁটু ঠাকুরের গল্প :-
ঘেঁটু দেবকুমার থাকা অবস্থায় বড়সড়  অপরাধ করে বসেন। এর জন্য বিষ্ণু তাকে অভিশাপ দেন। এই অভিশাপের ফলে তাকে  জন্ম নিতে হয় পিশাচ কুলে। রাগে ফুলে থাকতেন। কোনোভাবেই যেন বিষ্ণু নাম কানে না আসে সেজন্য দুই কানে ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখার কারণে নাম হয় ঘণ্টাকর্ণ। কোনো মন্দিরে ঘেঁটু ঠাকুরের  পূজা হয় না। পূজা হয় জলাশয়ের  পাশে রাস্তার মোড়ে।
ভাঁট বা ঘেঁটু  ফুল :-
এর বৈজ্ঞানিক নাম: Clerodendrum infortunatum L. ।  এই গাছের রস তিতো। দীর্ঘমেয়াদী  জ্বর, গেটেবাত,  আমাশয় ও পেট ব্যথায় ভাঁটের কচি ডগার রস কয়েক দিন সকালে খেলে রোগ ভালো হয়ে যায়। ভাঁটপাতার রস কৃমিনাশক। এর পাতা অ্যাজমা, টিউমার, সাপের কামড় ও চর্ম রোগে ব্যবহার হয়। মূলের নির্যাস দাঁতের ক্ষয়রোগ, পেটব্যথা, ও হিস্টিরিয়ার উপশম করে। যে কোনো চর্মরোগে ভাঁটপাতার রস ৩-৪ দিন লাগালে আশ্চর্যজনক ফল পাওয়া যায়। উকুন হলে ভাঁট পাতার রস লাগিয়ে ১ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলবেন। উকুন থাকবে না। ম্যালেরিয়াতেও এর ব্যবহার দেখা যায়।
রীতিনীতি :-
এই দিনে গ্রাম বাংলার ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা কলার পাতা দিয়ে পালকি তৈরী করে পালকির ভিতরে প্রদীপ জালিয়ে এবং পালকিটিকে ঘেঁটু ফুল দিয়ে সাজিয়ে ঘেঁটু ঠাকুরের পুজো করেন।

ঘেঁটু গান :-
ছেলে মেয়েরা ঘেঁটু গান গেয়ে পাড়ায় পাড়ায় চাল ডাল টাকা আদায় করে বেড়ায়।
১।।  শোন শোন সর্বজন ঘাঁটুর জন্ম বিবরণ।
পিশাচ কুলে জন্মিলেন শাস্ত্রে লিখন।
বিষ্ণুনাম কোনমতে করবে না শ্রবণ
তাই দুই কানে দুই ঘন্টা করেছে বন্ধন।
২।।  ঘেঁটু যায় ঘেঁটু যায় গৃহস্থের বাড়ি
এক কাঠা চাল দাও কুমড়োর বড়ি
যে দেবে থালা থালা তার হবে কোঠা-বালা
যে দেবে মুঠো মুঠো তার হবে হাত ঠুটো
যে দেবে এক পলা তেল তার হবে সোনার দেল।
৩।।  আলোর মালা চাল-ডাল দাও
নয় খোসপচড়া লও।
যে দেবে ধামা ধামা
তারে ঘাঁটু দেবে জরির জামা
যে দেবে শুধু বকুনি।
ঘাঁটু দেবে তাকে খোস-চুলকানি।

মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৯

Holi / Dol jatra / Basanta panchami

        দোলযাত্রা বা হোলি

হোলি বা দোলযাত্রা হল হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ ধর্মের একটি অন্যতম প্রধান উৎসব। এটি একাধারে রঙের উৎসব ও প্রেমের উৎসব প্রধানত ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে হোলি বা দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। নারদ পুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ ও ‘জৈমিনি মীমাংসা’য় রঙের উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায়। হর্ষবর্ধনের নাটক ‘রত্মাবলী’তে ও সপ্তম  শতাব্দীর এক শিলালিপিতে রাজা হর্ষবর্ধন কর্তৃক ‘হোলিকোৎসব’ পালনের উল্লেখ পাওয়া যায়।
হোলির প্রথম সন্ধ্যাকে বলে ছোট হোলি। এদিন হোলিকা দহন বা মেড়াপোড়া অনুষ্ঠিত হয়। পরের দিনকে বলা হয় ফাগুয়া, ধুলেন্দি বা রঙ্গোলি হোলি।
হোলিকে নেপালি ও হিন্দিতে  होली (হোলি ) , মারাঠিতে होळी,পাঞ্জাবীতে  ਹੋਲੀ, কানাড়ায়   ಹೋಳಿ, তেলেগুতে   హోళి, অসমীয়া ভাষায়  ফাকুৱা ও  দ’ল যাত্ৰা , ওড়িয়ায়  ଦୋଳଯାତ୍ରା (দোলযাত্রা ), আর বাংলাভাষার দোলযাত্রা বলে।
হোলি উৎসবের সূচনা :-
১।।   উত্তর ভারতে হোলি উৎসবটি বাংলার দোলযাত্রার পরদিন পালিত হয়। হোলি নামটা এসেছে  দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকার নাম থেকে । হোলিকা ছিলেন মহর্ষি কশ্যপ ও তাঁর পত্নী দিতির পুত্র হিরণ্যকশিপুর বোন ।  হিরণ্যকশিপু ছিলেন অপরাজেয়। তাই সে নিজেকে ভগবান হিসেবে ঘোষণা করেন । আরো ঘোষণা করেন যে তাই কোনও দেবতাকে  নয়, পুজো তাকেই করতে হবে। কিন্তু হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুর ভক্ত। সে তার বাবার আদেশ মানতে রাজি নয়। হিরণ্যকশিপু ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। নানা ভাবে ছেলেকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু ফল হল না। শেষে প্রহ্লাদকে ভুলিয়ে জ্বলন্ত চিতায় বসল হোলিকা। হোলিকার  ছিল  অগ্নিনিরোধক শাল । নিজে গায়ে দিল সেই অগ্নি-নিরোধক শাল। কিন্তু আগুন জ্বলে উঠতেই সেই শাল উড়ে গিয়ে প্রহ্লাদকে ঢেকে ফেলল। অগ্নিদগ্ধ হল হোলিকা।  ওই আগুন হল অশুভের বিরুদ্ধে শুভের জয়ের প্রতীক।একে আমরা প্রতীকীভাবে প্রকাশ করি চাঁচর পোড়ানোর মধ্য দিয়ে। আমরা বলি চাঁচর বা মেড়াপোড়া। ওড়িশায় একই বলে মেন্টপোড়াই। হোলিকা দগ্ধ হওয়ার পরের দিন পালিত হয় হোলি।
২।।  শৈব মতানুসারে এদিনে ভগবান শিব মদনকে দগ্ধ করেন তাই এই দিনটি কামপঞ্চমী বা বসন্তপঞ্চমী হিসাবে পালন করা হয়।মহাদেবের ধ্যানভঙ্গ করতে মদন পুষ্পধনুতে শরসন্ধান করে দেবাদিদেবকে বিদ্ধ করলেন। মহাদেবের ধ্যানভঙ্গ হল বটে কিন্তু রুষ্ট শঙ্করের তৃতীয় নয়নের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেলেন মদনদেব। মদনের স্ত্রী রতি শিবের পায়ের উপর পড়ে স্বামীর প্রাণভিক্ষা চাইলেন। তাতে মহাদেবের হৃদয় একটু নরম হল। দেহ আর ফিরে পেলেন না মদন। তিনি রয়ে গেলেন অনঙ্গ হয়ে। এটিকে স্মরণ করেই দক্ষিণ ভারতে হোলির সময় ‘কামদহনম’ বা ‘কামাহন’ উৎসব পালিত হয়।
৩।।   দ্বাপরযুগে বসন্তপূর্ণিমার এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেশি নামক অসুরকে ( মতান্তরে অরিষ্টাসুরকে  ) বধ করেন। অত্যাচারী এই অসুরকে বধ করার পর সকলে আনন্দে রঙের উৎসব পালন করে।
৪।।  বৈষ্ণবমত অনুসারে  ফাল্গুনীপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ  রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সাথে আবির বা গুলাল নিয়ে রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়।
৫।।  স্কন্দপুরাণের একটি অধ্যায়ে দোলযাত্রার কথা বলা হয়েছে। যুধিষ্ঠির দোলযাত্রার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে বলেন, সত্যযুগে রঘু নামে এক ধার্মিক ও গুণবান রাজা ছিলেন। তাঁর রাজ্যে দুর্ভিক্ষ, ব্যাধি, মহামারী বা অকালমৃত্যু বলে কিছু ছিল না। কিন্তু একবার ঢুনঢা নামে এক রাক্ষসীর প্রভাবে রাজ্যে নানা অমঙ্গল সূচিত হয়। নানা রোগে ভুগে ভুগে মানুষের মৃত্যু হতে থাকে। প্রজারা বিপদ দেখে রাজার শরণাপন্ন হলেন। রাজা সব কথা শুনে ডেকে পাঠালেন প্রধান পুরোহিতকে। পুরোহিত এসে গণনা করে রাজাকে বললেন, পুরাকালে মালিনীর কন্যা ঢুনঢা কঠোর তপস্যা করে শিবকে তুষ্ট করেন। শিব তাঁকে বর প্রার্থনা করতে বললে ঢুনঢা অমরত্ব বর প্রার্থনা করে। শিব তাঁকে বরদান করে বলেন, স্বর্গ, মর্ত্য, পাতালে তাঁকে কেউ বধ করতে পারবে না। শুধু ঋতু পরিবর্তনের সময় উন্মাদগ্রস্ত ব্যক্তি বা বালকগণের কাছ থেকে তাঁকে দূরে থাকতে হবে। পুরোহিতের কাছ থেকে মৃত্যুর পন্থা জানতে পেরে রাজ্যের বালকরা সবাই একত্রিত হয়ে শুকনো কাঠ জ্বালিয়ে রাক্ষসী ঢুনঢাকে পুড়িয়ে মারে। হোলিকা, পুতনা, ঢুনঢা এরা সবাই অশুভের প্রতীক। একদিকে যেমন শীতের অবসানে বসন্তের আগমন হয়। তেমনই ফেলে আসা শীতের ঝরাপাতা, শুকনো আবর্জনাকে পুড়িয়ে ফেলে নতুন রংয়ে নিজেদের মনকে রাঙিয়ে তোলার উৎসব দোল।
৬।।  শুধু হোলিকা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে পুতনা রাক্ষসীর কাহিনিও। কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য পুতনা রাক্ষসীকে পাঠিয়েছিল রাজা কংস। পুতনার বুকের বিষদুধ পান করে যাতে মৃত্যু হয় কৃষ্ণের। কিন্তু কৃষ্ণের মরণ কামড়ে মৃত্যু হল পুতনার। এরপর গোপবালকেরা সেই রাক্ষসীর প্রতিকৃতি আগুনে পুড়িয়ে উৎসব পালন করে। এখানেও তো আমরা দেখি সেই দুষ্টের দমনের স্মরক।

৭।।    এই দোলপূর্ণিমা তিথিতেই চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মনিয়েছিলেন বলে একে গৌরপূর্ণিমা বলা হয়।শ্রীচৈতন্য বৃন্দাবনের হোরিখেলার অনুকরণে বাংলাতেও দোলযাত্রার সূচনা করেছিলেন। তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে আবির ও রং দেওয়ার মাধ্যমে নিজের মনের শুভ রংটি দেবতার কাছে সমর্পণ করার তত্ত্বকে তুলে ধরেন । সেই রংই মনের শুদ্ধ ভক্তির প্রতীক হয়ে যায়।
৮।।  শিখ গুরু গোবিন্দ সিং তিনদিনের হোলা মহল্লা পালন শুরু করেন।
৯।। রাজা রণজিৎ সিং রাধাকৃষ্ণের পটচিত্র সামনে রেখে হোলি পালন করতেন।
১০।। এই উৎসবে ফাগুনের রঙিন আনন্দের ঘোর লাগে মানুষের দেহে ও মনে।
ধর্ম ও পুরাণের জীবন থেকে রংয়ের উৎসব নেমে এল ইতিহাসের সরণি বেয়ে আমাদের আজকের জীবনে। ইতিহাসের পাতাতেও হোলিখেলার বহু কাহিনি পাই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা ‘হোরিখেলা’র উল্লেখ করা যেতে পারে। পাঠান বীর কেসর খাঁকে হোরি খেলতে আমন্ত্রণ জানালেন ভুনাগ রানি। দোলকে কেন্দ্র করে সে এক রাজনৈতিক লড়াই। প্রতিশোধের রংয়ে রাঙা হল মাটি।
ইতিহাসে প্রথম হোলির উল্লেখ পাই আমরা বাণভট্টের রত্নাবলী নাটকে। সপ্তম শতকে হর্ষবর্ধনের সময় লেখা এই নাটকে হোলি উৎসবের বর্ণনা পাওয়া যায়। একাদশ শতাব্দীতে পর্যটক আলবেরুণী এসেছিলেন ভারত ভ্রমণে। তাঁর লেখায় হোলির বর্ণনা পাওয়া যায়। ‘আইনি আকবরী’তে বলা হয়েছে তখন কেবল শূদ্ররাই হোলি খেলত। অবশ্য সেই অর্থে সম্প্রদায়গত বিভেদ বলে একসময় কিছু ছিল না। তখন সব উৎসবে এদেশে সবাই মিলেমিশে একাত্ম হয়ে যেতেন। তখন মুসলমানরাও রং-আবির খেলায় যোগ দিতেন। সেই রং পৌঁছে গিয়েছিল রাজদরবারেও। আবির-গুলাল উড়ত প্রাসাদের বাগানে, অলিন্দে। দোল নিয়ে লেখা হতো কবিতা আর বসত গানের আসর। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম তাঁর দরবারে হোলি খেলতেন। ফাগের সঙ্গে ছড়ানো হত গোলাপ জল। হোলি নিয়ে নিজেও বেশ কয়েকটি দিওয়ান বা কবিতা ও গান লিখেছিলেন। সেই গান তিনি দরবারে বসে শুনতেন। হোলির দিন বসত কাওয়ালির আসর। আর প্রাসাদের ভিতরে তাঁর বালক পুত্র সুলেমান শুকোহ কৃষ্ণ সেজে অন্যদের সঙ্গে হোলি খেলত। সেই সময়কার লেখা বইতে তার উল্লেখ পাওয়া যায়। বিভিন্ন বইতে পাওয়া যায় আওধের রাজাদের হোলি খেলারও প্রসঙ্গ। আওধের রাজদরবারে হোলি খেলা নিয়ে লিখে গিয়েছেন উর্দু কবি মির তাকি মির। হোলি খেলার সময় রাধাকৃষ্ণ সাজিয়ে শোভাযাত্রা বের করা হতো। এছাড়া বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌল্লা আবির খেলতে ভালোবাসতেন বলে শোনা যায়।
শান্তিনিকেতনে দোলযাত্রা :-
শান্তিনিকেতনে প্রভাতফেরীর মাধ্যমে দোলউৎসব আরম্ভ হয়। 'ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল..' গানের মাধ্যমে প্রভাতফেরী হয়। একে  বসন্তোৎসবও বলা হয়। রবিন্দ্রসঙ্গীত ও রবিন্দ্রনৃত্যের মাধ্যমে দোলউৎসব পালনের রীতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকেই চলে আসছে। রবি ঠাকুর ১৯২৫ সালে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন।  এখনো সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
রীতিনীতি :-
দোলের পূর্বদিন খড়, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি জ্বালিয়ে এক বিশেষ বহ্ন্যুৎসবের আয়োজন করা হয়।শুকনো গাছের ডাল, কাঠ ইত্যাদি দাহ্যবস্তু অনেক আগে থেকে সংগ্রহ করে সু-উচ্চ একতা স্তুপ করে তাতে অগ্নি সংযোগ করে ‘হোলিকা দহন’ হয় ।
দোলযাত্রার দিন সকালে তাই ভগবান শ্রীরাম ও সীতা বা রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির ও গুলালে রাঙিয়ে   কীর্তনগান সহকারে শোভাযাত্রায় বের করা হয়। এরপর ভক্তেরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রং খেলেন।
ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলে সিদ্ধি ও ভাঙের সরবত বা লাড্ডু খেয়ে লোকেরা হোলিতে মাতে।
ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও আমেরিকা, রাশিয়া, ফিজি, কানাডা, মরিশাস, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি দেশে ইস্কন প্রভৃতি হিন্দু সংগঠনের উদ্যোগে বিপুল সংখ্যক মানুষ হোলি পালন করেন।