শুক্রবার, ২৭ জুলাই, ২০১৮

Surya vansham - - The Solar dynasty

পুরাণ অনুসারে সূর্য বংশের বিবরন:
চন্দ্রবংশ  => এই পাতায়) 

 ব্রহ্মা
=>ব্রহ্মা সৃষ্টি করলেন 10 জন প্রজাপতি। মরীচি তাদের অন্যতম।
=>মরীচি ও কলা'র পুত্র কশ্যপ। তিনি মানবজাতির পিতা।
=>কশ্যপ ও অদিতী হতে আদিত্যগণ (অংশ, অর্য্যামা, ভগ , ধৃতি, মিত্র,পূষন ,শক্র , সবিতৃ , ত্বষ্টা , বরুণ, বিষ্ণু , ও বিবস্বন) । এর অন্যতম বিবস্বন বা সূর্য।
=>সূর্য হতে বৈবস্বতমনু। যিনি মানবদের মধ্যে প্রথম রাজা। পুরান অনুসারে 14 টি মনুর শাসনকাল বা মন্বন্তর আছে। এই বৈবস্বতমনু হলেন সপ্তম মনু। "শতপথ ব্রাহ্মণ" এ মনুকে রাজা বলা হয়েছে।
 => বৈবস্বতমনুর নয় পুত্র। তারা হলেন - - বেন , ধৃষ্ণু , নৃষ্যন , নভগ , ঈক্ষ্বাকু  , করুষ , সর্য্যাতি, পৃষধ্রু , নভগারিষ্ট ও এক কণ্যা ইলা। ইলা বিবাহ করেন বুধকে, - - যা হতে চন্দ্র বংশের শুরু হয়।
 => ঈক্ষ্বাকু হন পরবর্তী রাজা। অন্যমতে এই ঈক্ষ্বাকু বৈবস্বতমনুর ভাই শরভদেবের পুত্র।
 =>  ঈক্ষ্বাকুর পুত্র বিকুক্ষি । যিনি শ্রাদ্ধের সময় শশকের মাংস খান বলে শশদ বলে পরিচিত হন। অনেকে তাকে ঈক্ষ্বাকুর নাতি বলেন।
=> বিকুক্ষির পুত্র কাকুস্থ বা পুরঞ্জয়। কাকুস্থ দেবাসুর যুদ্ধে লড়েন। অসুরদের সাথে যুদ্ধের সময় ষাঁড়ের 'কুকুদ' বা কুঁজে বসতেন বলে তার নাম হয় কাকুস্থ। তার নামে তার বংশ কাকুস্থবংশ বলে পরিচিত হন।
=>  কাকুস্থের পুত্র অনেনা বা অনরণ্য।
=>অনরণ্যের পুত্র পৃথু ।
=> পৃথুর পুত্র বিশ্বগশ্ব    => বিশ্বগশ্বের পুত্র আর্দ্র বা চন্দ্র  => আর্দ্রের পুত্র যুবনাশ্ব ।
=> যুবনাশ্বের পুত্র শ্রাবস্ত, যিনি শ্রাবস্তি নগরীর প্রতিষ্ঠা করেন।
=> শ্রাবস্তের পুত্র বৃহদশ্ব
=> বৃহদশ্বের পুত্র কুবলয়াশ্ব ।ইনি ধুন্ধু নামে রাক্ষসকে বধ করে 'ধুন্ধুমার' নামে খ্যাত হন। বলা হয় ধুন্ধার অঞ্চল ও ধুন্ধ নদী ধুন্ধুর নাম হতে নামাঙ্কিত। ধুন্ধের সাথে যুদ্ধে  কুবলয়াশ্বের আঠারো জন পুত্র নিহত হয়।
=> কুবলয়াশ্বের পুত্র দৃঢ়শ্রবা  => দৃঢ়শ্রবার পুত্র প্রমোদ
=> প্রমোদের পুত্র হর্যশ্ব  => হর্যশ্বের পুত্র নিকুম্ভ  => নিকুম্ভের পুত্র সন্তশ্ব
=> সন্তশ্বের পুত্র কৃশশ্ব
=> কৃশশ্বের পুত্র প্রথম প্রসেনজিৎ। এই প্রথম প্রসেনজিৎ এর কন্যা রেণুকার ঋষি জমদগ্নির সাথে বিবাহ হয়। রেণুকা হলেন ভগবান পরশুরামের মা।
=> প্রথম প্রসেনজিৎ এর পুত্র দ্বিতীয় যুবনাশ্ব। ইনি চন্দ্রবংশীয় রাজা মতিনারের কন্যা গোরিকে কে বিবাহ করেন।
=> দ্বিতীয় যুবনাশ্বের পুত্র মান্ধাতা। এই চক্রবর্তী রাজা চন্দ্রবংশীয় রাজকন্যা বিন্দুমতিকে কে বিবাহ করেন।
=> মান্ধাতার পুত্র অম্বরীষ । ইনি বিখ্যাত বিষ্ণুভক্ত ছিলেন।
=> অম্বরীষের পুত্র পুরুকুৎস ও হারিত। পুরুকুৎস অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন। ইনি নাগকণ্যা 'নর্মদা' কে বিবাহ করেন । রাজা পুরুকুৎস গন্ধর্বদের সাথে যুদ্ধে নাগদের সাহায্য করেন।
এখান হতেই হরিতাশ্ব গোত্রের সৃষ্টি।
=> এরপুত্র ত্রসদস্যু  => ত্রসদস্যুর পুত্র সম্ভূত  => সম্ভূতের পুত্র দ্বিতীয় অনরণ্য
=> দ্বিতীয় অনরণ্যের পুত্র ত্রসদশ্ব  => ত্রসদশ্বের পুত্র দ্বিতীয় হর্যশ্ব
=> দ্বিতীয় হর্যশ্বের পুত্র বসুমান  => বসুমানের পুত্র ত্রিধন্বা   => ত্রিধন্বার পুত্র ত্রয়রুণা
=> ত্রয়রুনার পুত্র সত্যব্রত বা ত্রিশঙ্কু। ইনি ত্রয় বা তিন পাপ করেন বলে ত্রিশঙ্কু নাম হয়। প্রথমবার যুবরাজ অবস্থায় দুর্ব্যবহার এর জন্য রাজ্য হতে বহিষ্কৃত হন। দ্বিতীয়বার তিনি বশিষ্ঠের গাভী বধ করেন।  তার তৃতীয় পাপ হলো তিনি অপবিত্র মাংস শিকার করে খান। স্বশরীরে স্বর্গ যাবার জন্য তিনি বশিষ্ঠের কাছে গেলে বশিষ্ঠ ফিরিয়ে দেন। এরপর বিশ্বামিত্রের কাছে গেলে ঋষি বিশ্বামিত্র 'ত্রিশঙ্কু স্বর্গ' মাঝখানে একটি স্বর্গ নির্মাণ করেন।
=> ত্রিশঙ্কুর পুত্র ধুন্ধুমার ও হরিশচন্দ্র। হরিশচন্দ্র তার দান, সততার ও ধর্মের জন্য বিখ্যাত।
=> হরিশচন্দ্রের পুত্র রোহিতাশ্ব ।তিনি বিহারের রোহতাস জেলার রোহতাসগড় শহর এবং রোহতক (রোহিতকুল ) প্রতিষ্ঠা করেন।
=> রোহিতাশ্বের পুত্র হারিত  => হারিতের পুত্র চঞ্চু ।  => চঞ্চুর পুত্র  বিজয়
=> বিজয়ের পুত্র রুরুক   => রুরুকের পুত্র বৃক
=> বৃকের পুত্র বাহু বা অসিত। তিনি অন্য এক ক্ষত্রিয়গোষ্ঠী দ্বারা পরাজিত হন। এরপর তিনি স্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে অযোধ্যা ত্যাগ করে হিমালয়ে গিয়ে সাধুর জীবন যাপন করেন।  এসময় যাদবী রানীর গর্ভে সগর জন্মগ্রহণ করেন।
=> অসিতের পুত্র সগর । তিনি 'হৈহয়' ও 'তালজঙ্ঘী'  ক্ষত্রিয়গোষ্ঠীর কাছ থেকে অযোধ্যা পুনরুদ্ধার করেন। তিনি অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেন।দেবরাজ ইন্দ্র রাজা সগরের যজ্ঞাশ্ব হরন সমুদ্রের দক্ষিণ -পশ্চিম দিকে কপিলমুনির আশ্রমে বেঁধে দেন। সেখানে যজ্ঞাশ্ব উদ্ধারে গিয়ে কপিলমুনির শাপে সগরের দশহাজার (মতান্তরে ষাট হাজার ) পুত্র ভস্ম হয়ে যায়।
=> সগরের পুত্র অসমঞ্জ ।ইনি বাজে আচরণের জন্য রাজা হতে পারেননি।
=> সগরের নাতি অংশুমান। ইনি গঙ্গাকে মর্ত্যে আনার জন্য তপস্যা করেন, যাতে মা গঙ্গা তার পূর্বপুরুষদের পাপ ধুয়ে দেন ।
=> অংশুমানের পুত্র প্রথম দিলীপ। তিনিও মা গঙ্গাকে মর্ত্যে আনার জন্য তপস্যা করেন।
=> প্রথম দিলীপের পুত্র ভগীরথ। ইনি তপস্যা দ্বারা মা গঙ্গাকে মর্ত্যে আনেন। গঙ্গার তাই আরেকনাম ভাগীরথী। এভাবে তিনি পূর্বপুরুষদের আত্মার মুক্তি ঘটান।
=> ভগীরথের পুত্র শ্রুত   =>  শ্রুতের পুত্র নাভাগ
=> নাভাগের পুত্র অম্বরিষ । বৌদ্ধমতে ইনি তপোবনে চলে যান তপস্যার জন্য। কিন্তু প্রজাদের আহ্বানে আবার রাজকার্য্য গ্রহন করেন।
=> অম্বরিষের পুত্র সিন্ধুদ্বীপ   => সিন্ধুদ্বীপের পুত্র প্রত্যায়ু ।
=> প্রত্যায়ুর পুত্র শ্রুতপর্ণ    => শ্রুতপর্ণের পুত্র সর্বকামা ।
=> সর্বকামার পুত্র সুদাস বা মিত্রেশ। ইনি অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন। কিন্তু রাক্ষসের ছলনায় যজ্ঞের শেষে নরমাংস বশিষ্ঠ সহ ব্রাহ্মণদের খেতে দেন। ইনি ব্রহ্মশাপে রাক্ষস হন। প্রতিশাপ দিতে গেলে স্ত্রীর অনুরোধে বিরত হয়ে হাতের জল পায়ে ফেলেন ও পা কালো হয়ে যায়। নাম হয় কল্মষাপাদ । বারো বছর রাক্ষস হয়ে বনে নির্বাসিত থাকেন।
=> সুদাসের পুত্র দ্বিতীয় সর্বকর্মা। => দ্বিতীয় সর্বকর্মার পুত্র তৃতীয় অনরণ্য ।
=> তৃতীয় অনরণ্যের পুত্র নিঘ্ন।  => নিঘ্নের পুত্র প্রথম রঘু। => প্রথম রঘুর পুত্র দুলিদুহ।
=> দুলিদুহের পুত্র খট্টাঙ্গ দিলীপ
=> খট্টাঙ্গ দিলীপের পুত্র দ্বিতীয় রঘু বা দীর্ঘবাহু।  ইনি বিরাট বীর ছিলেন। মহাকবি কালিদাস কৃত রঘুবংশে তার বিশ্বজয়ের বর্ণনা আছে। তার পরবর্তীতে সূর্যবংশ রঘুবংশ নামে খ্যাত হয়।
=> রঘুর পুত্র অজ  =>  অজ এর পুত্র দশরথ।
=> দশরথ এর চার পুত্র। রাম ,লক্ষ্মণ, ভরত, ও শত্রুঘ্ন। ভগবান রাম ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার।  সকল হিন্দুই তাকে পুজো করে। কিছু বড় বোঝাতে বা নামের শেষে রাম ব্যবহৃত হয়। তার জীবনচরিত রামায়ণ নামে খ্যাত। তিনি অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন। ভাই ভরত গান্ধার জয় করে সেখানে বসতি স্থাপন করেন।
=> ভগবান শ্রীরাম ও মাতা সিতার দুই পুত্র - - - লব ও কুশ । লব দক্ষিণ কোশল ও কুশ উত্তর কোশলের (অযোধ্যা সহ ) রাজা হন। কুশ নাগকণ্যা 'কুমুদ্বতী' (কুমুদ নাগের ভাই ) কে বিবাহ করেন।
কুশের পর অযোধ্যার সূর্যবংশী শাসন :-
অতিথি + নিষাদ কণ্যা => নিষধ   => নল   => নভগ  => পুণ্ডরীক  => ক্ষেমধন্ব
=>  দেবানীক  => অহিনগু, রুপ ও রুরু  => পারিয়াত্র
=>  নাম অজানা  => বল  =>উক্ত  => বজ্রণাভ => শঙ্খন
=>  বিশ্বসহ => হিরণ্যভ  =>পূষ্য  => ধ্রুবসন্ধি =>  সুদর্শন  => অগ্নিবর্ণ
=> শিঘ্রগ  => মরু  => প্রসূত => সুসন্ধি  => অমরেষ
=> বিশ্রুত্মন => বিশ্রবাহু => প্রসেনজিৎ l  ।
=> তক্ষক, - - ইনি নাগবংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
=> বৃহদ্বল, - - ইনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবদের পক্ষে লড়াই করেন ও নিহত হন ।
=>  বৃহৎক্ষেত্র  =>  অরুক্ষয় => বৎসবাহু =>  প্রতিব্যোম
=> দিবাকর  => সহদেব => বৃহদশ্ব => ভানুরথ  => প্রতিতশ্ব
=> সুপ্রতিক  => মরুদেব  => সুনক্ষেত্র  => অন্তরীক্ষ
=> সুষেন  => অনিভজিৎ => বৃহদ্ভানু  => রাওয়াত => ধর্মী
=> কৃতঞ্জয়  => রণঞ্জয় => সঞ্জয়
=> প্রসেনজিৎ ll । ইনি মগধরাজ বিম্বিসার এবং গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক। ইনার বোন কোশলা দেবী ছিলেন মগধরাজ বিম্বিসারের স্ত্রী। ইনি কোশলা দেবীকে যৌতুক হিসাবে কাশী বা বারাণসী শহর দান করেন। পুত্র অজাতশত্রুর হাতে বিম্বিসারের মৃত্যুর পর অজাতশত্রুর সাথে রাজা প্রসেনজিৎ দীর্ঘ যুদ্ধে লিপ্ত হন। সূর্যবংশের অপর এক মহাপুরুষ গৌতম বুদ্ধকে তিনি শ্রদ্ধা করতেন। বৌদ্ধ সাহিত্যে তিনি 'পসেনাদি' নামে খ্যাত।
=> ক্ষুদ্রক   => কুলক  =>সুরথ
=> সুমিত্র, - - ইনিই অযোধ্যার সূর্যবংশের শেষ রাজা। খ্রীষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে নন্দবংশীয় রাজা মহাপদ্মনন্দ সুমিত্রকে অযোধ্যা হতে বিতাড়িত করেন। সুমিত্র পুত্রসহ রোহতাসে চলে যান।
=> সুমিত্রের পুত্র কূর্ম রোহতাসে রাজ্য নির্মাণ করেন। 

বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮

51 satipith

সতীর ৫১পীঠ




Sl. no Part of body Place Vairav Devi
1হিঙ্গুলা পাকিস্তান ব্রহ্মরন্ধ্রভীমলোচন কোট্টরী
2শর্করাত্রিনেত্র মহারাষ্ট্র ক্রোধীশ মহিষমর্দিনী
3সুগন্ধা নাসিকা বাংলাদেশ ত্রিম্বক সুনন্দা
4কাশ্মীর কণ্ঠ জম্মু ও কাশ্মীর ত্রিসন্ধ্যেশ্বর মহামায়া
5জ্বালামুখীজিহ্বা হিমাচলপ্রদেশ উন্মত্ত অম্বিকা
6জলন্ধর বামস্তন পাঞ্জাব ভীষনা ত্রিপুরামালিনী
7বৈদ্যনাথহৃদয় বিহার বৈদ্যনাথ জয়দুর্গা
8নেপাল জানুদ্বয় নেপাল কপালিমহামায়া
9মানস দক্ষিণ হস্ত তিব্বত অমর দাক্ষায়ণী
10উৎকল নাভি ওড়িশা জগন্নাথ বিমলা
11গন্ধকী দক্ষিণ গন্ড নেপাল চক্রপাণী গন্ধকী চণ্ডী
12বহুলা বাম বাহু পঃবঙ্গ ভীরুক বহুলা
13ঊজ্জৈয়িনী মধ্যপ্রদেশ কপিলাম্বর মঙ্গলচণ্ডী
14চট্টল দক্ষিণ বাহু বাংলাদেশ চন্দ্রশেখর ভবানী
15ত্রিপুরা দক্ষিণ পদ ত্রিপুরা ত্রিপুরেশ ত্রিপুরাসুন্দরী
16ত্রিস্রোতা বামপদ পঃবঙ্গ অম্বর ভ্রামরী
17কামগিরি মহামুদ্রা আসাম উমানন্দ কামাক্ষ্যা
18যোগাদ্যা দক্ষিণ পদাঙ্গুষ্ঠ পঃবঙ্গ ক্ষীরকণ্টক ভূতধাত্রী
19কালীঘাট দক্ষিণ পদাঙ্গুলি পঃবঙ্গ নকুলেশ কালি
20প্রয়াগ হস্তাঙ্গুলি উত্তরপ্রদেশ ভব ললিতা
21জয়ন্তী বামজঙ্ঘা বাংলাদেশ ক্রমদ্দেশ্বর জয়ন্তী
22কীরিট কীরিট কোণ পঃবঙ্গ কীরিট সম্বর্ত বিমলা
23মণিকর্ণীকা উত্তরপ্রদেশ কর্ণকুণ্ডল কালভৈরব বিশ্বলক্ষ্মী
24কণ্যাশ্রম পৃষ্ঠ বাংলাদেশ নিমিষ সর্বাণী
25কুরুক্ষেত্র দক্ষিণ গুল্ফ হরিয়ানা স্থাণু সাবিত্রী
26মণিবেদিকা মণিবন্ধ রাজস্থান সর্বানন্দ গায়ত্রী
27শ্রীশৈল গ্রীবা অন্ধ্রপ্রদেশ শম্বরানন্দ মহালক্ষ্মী
28কাঞ্চী কঙ্কাল তামিলনাড়ু রুরু দেবগর্ভা
29কালমাধব বামনিতম্ব আসাম অসিতাঙ্গ কালি
30শোণ দক্ষিণনিতম্ব মধ্যপ্রদেশ ভদ্রসেন নর্মদা
31রামগিরি দক্ষিণ স্তণ উত্তরপ্রদেশ চণ্ড শিবাণী
32বৃন্দাবন কেশজাল উত্তরপ্রদেশ ভূতেশ কাত্যায়ণী
33শুচী উর্ধদন্তপংক্তি তামিলনাড়ু সংহার নারায়ণী
34পঞ্চসাগর অধঃদন্তপংক্তি মহারাষ্ট্র মহারুদ্র বরাহী
35করতোয়াতটে বামতল্প বাংলাদেশ বামন অপর্ণা
36শ্রী পর্বত দক্ষিণতল্প অন্ধ্রপ্রদেশ সুন্দরানন্দ সুন্দরী
37বিভাষ বামগুল্ফ পঃবঙ্গ সর্বানন্দ কপালি/ভীমরুপা
38প্রভাষ উদর গুজরাত বক্রতুণ্ড চন্দ্রভাগা
39ভৈরব পর্বত উর্ধওষ্ঠ মধ্যপ্রদেশ লম্বকর্ণ অবন্তী
40জনস্থান চিবুক মহারাষ্ট্র বিকৃতেশ ভ্রামরি
41গোদাবরী তীর বামগণ্ড অন্ধ্রপ্রদেশ দণ্ডপাণি/বৎসণাভ বিশ্বমাতৃকা /রাকিণি
42রত্নাবলী দক্ষিণস্কন্ধ পঃবঙ্গ শিব কুমারী
43মিথিলা নেপাল বামস্কন্ধ মহোদরা উমাদেবী/মহাদেবী
44নলহাটি নলা পঃবঙ্গ যোগেশ্বর কালি
45কর্ণাট কর্ণ কর্ণাটক অভিরু জয়দূর্গা
46বক্রেশ্বর মন পঃবঙ্গ বক্রনাথ মহিষমর্দিনী
47যশোর বামহস্ত বাংলাদেশ চণ্ড যোগেশ্বরী
48অট্টহাস পঃবঙ্গ অধঃওষ্ঠ বিশ্বেশ্বর ফুল্লরা
49নন্দীপুর কণ্ঠহার পঃবঙ্গ নন্দীকেশ্বর নন্দিনী নী
50লঙ্কা নূপুর শ্রীলঙ্কা রাক্ষসেশ্বর ইন্দ্রাক্ষী
51মগধ দক্ষিণজঙ্ঘা বিহার ব্যোমকেশ সর্বানন্দকারিনী

বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই, ২০১৮

Ratha yatra - - The chariot festival

রথযাত্রা 

( দেখুন - সূচিপত্র
রথযাত্রা হল বাংলা তথা সারা ভারতের অন্যতম প্রধান উৎসব। আর এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। রথযাত্রা কি ও কেন আসুন জেনে নিই। মানুষের শরীরটাই যেন একটা রথ । আমরা দেখি, কঠোপনিষদে সেই রথের এক অপূর্ব বর্ণনা । আমাদের শরীর-রূপ রথখানি বিজয়পথে অবিরাম ছুটে চলেছে । মানবদেহের ইন্দ্রিয়গুলি হচ্ছে এই রথের ধাবমান ঘোড়া । আমাদের বুদ্ধি-রূপ সারথি, জন-রূপ লাগাম জুড়ে দিয়ে ইন্দ্রিয়-রূপ ধাবমান ঘোড়াগুলির গতিকে সবলে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে । আর সেই রথের অধিপতি হচ্ছে আত্মা, যা কিনা অচঞ্চল শান্ত মূর্তিতে রথোপরি বিরাজিত, রথের গতিবেগ তাঁকে আদৌ স্পর্শ করছে না । অনেক পন্ডিত মনে করেন শ্রীশ্রীজগন্নাথকে নিয়ে এই রথযাত্রা উৎসব ওই চিরন্তন আধ্যাত্মিক আদর্শকেই সর্বজনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এক লৌকিক আয়োজন । জনসমষ্টি নিয়েই জগৎ এবং সেই জনগণের অধিনায়ক হচ্ছে প্রভু জগন্নাথ । জগন্নাথ স্বামী “অঙ্গুষ্ঠ মাত্রঃ পুরুষঃ ” রূপে সকলের মধ্যে রয়েছেন । অনন্তকালের এই বিশ্বাস পোষণ করেই ভক্তরা মনি করেন, তাঁকে জানলে ও বুঝলে আর পুনর্জন্ম হয় না ।
শাস্ত্রগ্রন্থ ও কিংবদন্তী অনুসারে বলা হয়ে বলা হয়, কৃষ্ণের মৃত্যুর পর দ্বারকার সমুদ্রীতীরে মৃতদেহ পোড়াবার সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সত্‍‌কার কার্য অসমাপ্ত থেকে যায়। ওই অর্ধদগ্ধ দেহাংশ সমুদ্রের জলে ভাসতে ভাসতে পশ্চিম উপকূল থেকে পূর্ব উপকূলে কলিঙ্গ রাজ্যে এসে পৌঁছয়। ওই অঞ্চলে বসবাসকারী এক দল শবর তাদের নেতা বিশ্বাবসুর নেতৃত্বে গভীর জঙ্গলে মন্দির নির্মাণ করে ওই দেহাংশকে ‘নীলমাধব’ দেবতাজ্ঞানে পুজো করতে আরম্ভ করে। নীলমাধবের খ্যাতি শুনে প্রাচীন অবন্তী নগরীর বিষ্ণুভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন তা হস্তগত করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন। বিশ্বাবসুর কাছে পরাজিত ইন্দ্রদ্যুম্ন তখন বিষ্ণুর প্রার্থনা আরম্ভ করেন।  
ইন্দ্রদ্যুম্নর প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু তাঁকে নির্দেশ দেন যে পুরীর সমুদ্রতীরে এক নিমকাষ্ঠ খণ্ড ভেসে আসবে তা থেকে যোগ্য কারিগর দিয়ে বিগ্রহ তৈরি করে পুজো করতে হবে। যথা সময়ে পুরীর সমুদ্রতীরে চক্রতীর্থ অঞ্চলে একটি বড়ো নিমকাঠের গুঁড়ি ভেসে আসে। তা দিয়ে বিশ্বকর্মা ভাস্করের ছদ্মবেশে দেবতার বিগ্রহ তৈরি আরম্ভ করেন। বিশ্বকর্মা মূর্তি তৈরির আগে রাজাকে শর্ত দেন যে, মূর্তি তৈরির জন্য একুশ দিন সময় দিতে হবে এবং মূর্তির নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ ওই ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না। 
               বিশ্বকর্মা সময় চাইলেও নির্মাণকার্যে দেরি দেখে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ও রানি গুণ্ডিচা অধৈর্য হয়ে পনের দিনের মাথায় দরজা খুলে ফেললে মূর্তি অসম্পূর্ণ রেখেই বিশ্বকর্মা অন্তর্হিত হন। তখন বিষ্ণুর নির্দেশে ইন্দ্রদ্যুম্ন ওই অর্ধসমাপ্ত জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন।
জগন্নাথ মন্দির দর্শন সেড়ে “মার্কণ্ডেয় পুষ্করিণী” পুরান গুলি বিশেষত স্কন্দপুরাণে লেখা আছে ভগবান হরির নির্দেশে মার্কণ্ড মুনি এই পুষ্করিণী খনন করেছিলেন , এখানে অনেক ঘাট, শিব মন্দির অষ্ট মাতৃকা মন্দির আছে । এবার দর্শনীয় স্থান ইন্দ্রদুম্ন্য সরোবর । মহারাজ ইন্দ্রদুম্ন্য অশ্বমেধ যজ্ঞ করার সময় ব্রাহ্মণ দের যে গাভী দান করেছিলেন সেই গাভীগুলির ক্ষুরের আঘাতে এই পুষ্করিণী সৃষ্টি হয় ও গোমূত্র, জলে পুষ্করিণী ভরাট হয় । এই জলের দ্বারা মহাপ্রভু তাঁর পার্ষদ সহিত গুণ্ডিচা মন্দির মার্জন করতেন । এরপর “মহাদধি সমুদ্র” । পুরাণ মতে মা লক্ষ্মীর আবির্ভাব সমুদ্র মন্থন থেকে হয়েছিলো। বলা হয় এইস্থানে মা লক্ষ্মী প্রকট হয়েছিলেন । জগন্নাথের স্ত্রী লক্ষ্মী দেবীর আবির্ভাব এইস্থানে হওয়ায় ওড়িশা বাসী হাস্যচ্ছলে এইস্থান কে জগন্নাথের শ্বশুর গৃহ বলেন । এই স্থানেই মহাপ্রভু পরম ভক্ত হরিদাস ঠাকুরকে সমাধিস্থ করেন বালি দিয়ে ।
এরপর “নরেন্দ্র পুষ্করিণী” । এটিকে জগন্নাথ দেবের পিসির বাড়ী বলা হয় । পিসি হলেন কুন্তী । মহাভারতে কিছু স্থানে দেখা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কুন্তীদেবীকে ‘পিসি’ সম্বোধন করতেন । এখানে জগন্নাথ দেব এসে মালপোয়া সেবা নেন। এখানেই প্রভুর চন্দনযাত্রা হয় । তারপর আছে “শ্বেতগঙ্গা” বলা হয় এখানে মা গঙ্গা অবস্থান করেন। এখানে স্নানে গঙ্গা স্নানের ফল পাওয়া যায় । এখানে ভগবান মৎস্য ও মা গঙ্গার মন্দির আছে । এরপর স্বর্গদ্বার সমুদ্র তট । অপরূপ সৌন্দর্য মণ্ডিত সমুদ্র তট । সমুদ্র চরে বসে আপনার মন কোনো এক মধুমাখা কল্পনা লোকে চলে যাবে, হোটেলের বেলকোণি থেকে এই সমুদ্র তরঙ্গ দেখতে দেখতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় যেনো কেটে যায়, বিরক্ত আসে না ।


পুরীর রথযাত্রার এই তথ্যগুলি কি জানেন?

পুরীর রথযাত্রার এই তথ্যগুলি আজ রথযাত্রা ৷ আজকের দিনে রথে চড়ে সুভদ্রা ও বলরামকে সঙ্গে নিয়ে মাসির বাড়ি রওনা দেবেন জগন্নাথ ৷ জগন্নাথদেবের এই রথযাত্রা ঘিরে সাজো সাজো রব গোটা দেশে ৷ পুরী থেকে কলকাতা, হুগলি থেকে আমেদাবাদ জুড়ে পালিত হচ্ছে। 

* জগন্নাথ প্রতিবছর নব রথে উঠে। নব মানে নতুন আবার নব মানে নববিধা ভক্তি। মানে ভক্তির রথে জগন্নাথ উঠে। ভক্তি দিয়ে গড়া রথ।

   * গুণ্ডিচা মন্দিরে যান জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা- মন্দির থেকে গুণ্ডিচা মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ২ কিমি- প্রতি বছরই নতুন করে প্রতিটি রথ তৈরি হয় । 

* জগন্নাথের রথের নাম নন্দীঘোষ বা কপিধ্বজ । এই রথের ১৬টি চাকা। রথের রঙ পীত। ষোল চাকা মানে দশ ইন্দ্রিয় আর ছয় রিপূ । যা থাকে ভগবানের নীচে। রথে জগন্নাথের সঙ্গী হন মদনমোহন- নন্দীঘোষের উচ্চতা ৪৫ ফুট, ১৬ চাকা- ৮৩২ কাঠের টুকরো দিয়ে গড়া হয় রথ- লাল ও হলুদ কাপড়ে সাজানো হয়- নন্দীঘোষের সারথির নাম দারুকা- রথের মাথায় থাকা পতাকার নাম ত্রৈলোক্যমোহিনী- এই রথে ৪ ঘোড়া থাকে- জগন্নাথের রথের রশির নাম ‘শঙ্খচূড়া নাগুনি’- জগন্নাথের রথে সওয়ার হন আরও ৯ দেবতা- এঁদের মধ্যে আছেন গোবর্ধন, কৃষ্ণ, নরসিংহ, রাম, নারায়ণ, হনুমান, রুদ্র- জগন্নাথের রথে একজন রক্ষীও থাকেন- এই রক্ষীর নাম গারুদা। 

*রথের দড়ি - বাসুকি। সেজন্যে বলা হয়, রথের দড়ি ধরলে পুণ্য হয়। মূলত, বাসুকির কৃপা লাভ হয়।  
      
*পুরীর রথের ৪২ টি চাকা। (বলদেবের রথের ১৪ টি, জগন্নাথের রথের ১৬ টি, সুভদ্রাদেবীর ১২ টি)।

       *পুরীর রথ চলার সময় রাস্তায় চাকার তিনটি দাগ পড়ে - তা হল গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী। যারা বার্ধক্যজনিত কারণে বা অন্যান্য কারণে রথের দড়ি ধরতে পারেন না, তারা যদি চাকার এই তিনটি দাগের ধুলি গ্রহণ করেন, বা এই ত্রিদাগে গড়াগড়ি দেন, তাহলে গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীতে অবগাহনের ফল লাভ করেন। 


* বলভদ্রের রথের নাম হল তালধ্বজ বা হলধ্বজ। ১৪টি চাকা আছে। ১৪টি চাকা মানে ১৪টি ভুবন। বলভদ্র হল গুরুতত্ত্ব। গুরুতত্ত্বের অধীন ১৪টি ভূবন।


*দেবতাদের দ্বারা প্রদত্ত সুভদ্রা দেবীর রথের নাম ‘দর্পদলন’ বা 'পদ্মধ্বজ'। রথের উচ্চতা ৩১ হাত। এই রথে ১২ টি চাকা আছে। এর অর্থ ভজনের সময় বার মাস। প্রতিদিন ভক্তিঙ্গ যাজন করতে হবে।


* সম্পূর্ণ রথ শুধুমাত্র কাঠের তৈরি, ফলে রথ চলার সময় কাঠের কড়কড় শব্দ হয়, এটিকে বলা হয় বেদ।


* ২০৬ টি কাঠ দিয়ে জগন্নাথের রথ হয়। ঠিক আমাদের দেহেও ২০৬ টি হাড়।


* রথ যখন চলে প্রথমে থাকে বলদেবের রথ। কারণ বলদেব দাদা। আবার জগত গুরুতত্ত্ব। তিনিই তো নিত্যানন্দ ।সবার জীবনে আগে গুরুকৃপা আসতে হবে।

তারপর চলে সুভদ্রার রথ। সুভদ্রা হল ভক্তি তত্ত্ব। গুরুকৃপার পর আসে ভক্তিমহারাণী। কারণ ভক্তির ঠিকানা শ্রীগুরুপদে। “শ্রীগুরুচরণপদ্ম কেবল ভকতিসদ্ম। বন্দো মুই সাবধান মতে।” গুরুদেব হল ভগবানের করুনার মুর্তি।
তারপর যায় জগন্নাথের রথ।
প্রথমে গুরুদেব, তারপর ভক্তি, তারপর ভগবান জগন্নাথ।

                    রথের দর্শনে শ্রী চৈতন্যমহাপ্রভু নৃত্য করছেন। অপলক নয়নে দর্শন করছেন জগন্নাথ। রথ চলতে চলতে মাঝে মাঝে থেমে যায়।

এর কারন রাধা ভাবে বিভোর মহাপ্রভুকে ভাল করে দেখার জন্য রথ একটু থামে আবার চলে। অনেক ভক্তের মাঝে মহাপ্রভুকে না দেখে জগন্নাথ থেমে যায়। রথ অপ্রকৃতি কারন তা প্রভু জগন্নাথের ইচ্ছা শক্তিতে রথ চলে।
আজও রথে অচল জগন্নাথকে দেখে রাধা ভাবে বিভোর মহাপ্রভু আনন্দে নেচে নেচে যায়।


জগন্নাথদেবের রথযাত্রা পালন করলে কি হয়?

শ্রীমদ্ভাগবতে আছে ,যে ব্যক্তি রথে চড়ে জগন্নাথদেবকে বিশ্বব্রহ্মান্ড দর্শন করাবেন অথবা রথস্থ শ্রী ভগবানের রূপ দর্শন করাবেন ভগবান তাদের প্রতি অশেষ কৃপা বর্ষণ করেন।

                        বৃহন্নারদীয় পুরাণে আছে,ভগবান নারায়ন লক্ষ্মী দেবীকে বলেছেন, " পুরুষোত্তম ক্ষেত্র নামক ধামে আমার কেশব-মূর্তি বিরাজমান । মানুষ যদি কেবল সেই শ্রীবিগৃহ দর্শন করে তবে অনায়াসে আমার ধামে আমার কাছে ফিরে আসতে পারেন। "

রথযাত্রার দিন ভগবান জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রাকে দেওয়া ছাপ্পান্ন ভোগ:-


১) উকখুড়া অর্থাৎ মুড়ি, ২) নাড়িয়া কোড়া অর্থাৎ নারকেল নাড়ু, ৩) খুয়া অর্থাৎ খোয়া ক্ষীর, ৪) দই, ৫) পাচিলা কাঁদালি অর্থাৎ টুকরো টুকরো কলা, ৬) কণিকা অর্থাৎ সুগন্ধী ভাত, ৭) টাটা খিঁচুড়ি অর্থাৎ শুকনো খিঁচুড়ি, ৮) মেন্ধা মুন্ডিয়া অর্থাৎ বিশেষ ধরণের কেক, ৯) বড়া কান্তি অর্থাৎ বড় কেক, ১০) মাথা পুলি অর্থাৎ পুলি পিঠে, ১১) হামসা কেলি অর্থাৎ মিষ্টি কেক, ১২) ঝিলি অর্থাৎ এক ধরণের প্যান কেক, ১৩) এন্ডুরি অর্থাৎ নারকেল দিয়ে তৈরি কেক, ১৪) আদাপচেদি অর্থাৎ আদা দিয়ে তৈরি চাটনি, ১৫) শাক ভাজা, ১৬) মরীচ লাড্ডু অর্থাৎ লঙ্কার লাড্ডু, ১৭) করলা ভাজা, ১৮) ছোট্ট পিঠে, ১৯) বারা অর্থাৎ দুধ তৈরি মিষ্টি, ২০) আরিশা অর্থাৎ ভাত দিয়ে তৈরি মিষ্টি, ২১) বুন্দিয়া অর্থাৎ বোঁদে, ২২) পানা, ২৩)খিড়ি অর্থাৎ দুধভাত, ২৪)কাদামবা অর্থাৎ বিশেষ মিষ্টি ২৫) পাত মনোহার মিষ্টি ২৬) তাকুয়া মিষ্টি, ২৭) ভাগ পিঠে, ২৮) গোটাই অর্থাৎ নিমকি, ২৯) দলমা অর্থাৎ ভাত ও সবজি, ৩০) কাকারা মিষ্টি ৷ ৩১) লুনি খুরুমা অর্থাৎ নোনতা বিস্কুট, ৩২) আমালু অর্থাৎ মিষ্টি লুচি, ৩৩) বিড়ি পিঠে, ৩৪) চাড়াই নাডা মিষ্টি, ৩৫) খাস্তা পুরি, ৩৬) কাদালি বারা, ৩৭) মাধু রুচী অর্থাৎ মিষ্টি চাটনি, ৩৮) সানা আরিশা অর্থাৎ রাইস কেক, ৩৯) পদ্ম পিঠে, ৪০) পিঠে, ৪১) কানজি অর্থাৎ চাল দিয়ে বিশেষ মিষ্টি. ৪২) ডাল,  ৪৩) বড় আরিশা, ৪৪) ত্রিপুরি, ৪৫) সাকারা অর্থাৎ সুগার ক্যান্ডি, ৪৬) সুজি ক্ষীর, ৪৭) মুগা সিজা, ৪৮) মনোহরা মিষ্টি, ৪৯) মাগাজা লাড্ডু, ৫০)পাখাল অর্থাৎ পান্তা ভাত,   ৫১) অন্ন, ৫২) ঘি ভাত, ৫৩)দাহি পাখাল অর্থাৎ দই ভাত,  ৫৪)সাগা নাড়িয়া অর্থাৎ নারকেলের দুধ দিয়ে মাখা ভাত, ৫৫) মাহুর অর্থাৎ লাবরা, ৫৬)  বিসার অর্থাৎ সব্জি। 

শনিবার, ৭ জুলাই, ২০১৮

Dwadas Jyotirlinga


সৃষ্টির দেবতা ব্রহ্মা | স্থিতির অধীশ্বর বিষ্ণু | শিবপুরাণে কথিত‚ একদিন দুজনের মধ্যে শুরু হল বিবাদ | কে বড় ? ব্রহ্মা বলেন‚ তিনি বড় | বিষ্ণু বলেন‚ না তিনি বেশি মহৎ | সমাধান চাওয়া হল মহেশ্বরের কাছে |
মহাদেব তখন জ্যোতি বা আলোর স্তম্ভ দিয়ে এঁফোর ওফোঁড় করে দিলেন স্বর্গ‚ পৃথিবী‚ নরক‚ তিন লোক | ব্রহ্মা‚ বিষ্ণু দুজনকে তিনি বললেন‚ এই স্তম্ভের শেষ খুঁজে বের করতে | এই আলোর স্তম্ভই হল জ্যোতির্লিঙ্গ | যা নাকি আলো এবং সৃষ্টির প্রতীক |
এদিকে জ্যোতির্লিঙ্গের শেষ খুঁজতে গিয়ে নাজেহাল ব্রহ্মা-বিষ্ণু | মিথ্যে করে শিবকে ব্রহ্মা বললেন‚ তিনি খুঁজে পেয়েছেন | অন্যদিকে‚ বিষ্ণু হার স্বীকার করে নিলেন | ব্রহ্মার ছলনা বুঝতে পেরে শিব তাঁকে অভিশাপ দিলেন‚ কোনও উৎসবে তিনি পূজিত হবেন না | আর বিষ্ণু পেলেন আশীর্বাদ | যতদিন পৃথিবী থাকবে‚ ততদিন তিনি পূজিত হবেন |
যে সমস্ত শিবলিঙ্গ স্বয়ম্ভু--অর্থাত্‍ নিজেই স্বয়ং শিবলিঙ্গরূপে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, এইরূপে সারা ভারতবর্ষে ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ আছে, সেই সব শিবলিঙ্গকে বলা হয় জ্যোতির্লিঙ্গ।
             বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে জ্যোতির্লিঙ্গ হতে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বের হচ্ছে । আআ  জ্যোতির্লিঙ্গের আকারও নিউক্লিয়ার রিয়েক্টারের মতো। রিয়েক্টার ঠান্ডা রাখতে যেমন সবসময় জলের দরকার হয় তেমনি শিবলিঙ্গেও জল ঢালা হয়।
          








দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ স্তোত্রম্




সৌরাষ্ট্রদেশে বিশদেঽতিরম্যে জ্যোতির্মযং চন্দ্রকলাবতংসম্ |

ভক্তিপ্রদানায কৃপাবতীর্ণং তং সোমনাথং শরণং প্রপদ্যে || ১||

শ্রীশৈলশৃঙ্গে বিবুধাতিসঙ্গে তুলাদ্রিতুঙ্গেঽপি মুদা বসন্তম্ |

তমর্জুনং মল্লিকপূর্বমেকং নমামি সংসারসমুদ্রসেতুম্ || ২||

অবন্তিকাযাং বিহিতাবতারং মুক্তিপ্রদানায চ সজ্জনানাম্ |

অকালমৃত্যোঃ পরিরক্ষণার্থং বন্দে মহাকালমহাসুরেশম্ || ৩||
কাবেরিকানর্মদযোঃ পবিত্রে সমাগমে সজ্জনতারণায |
সদৈবমান্ধাতৃপুরে বসন্তমোঙ্কারমীশং শিবমেকমীডে || ৪||
পূর্বোত্তরে প্রজ্বলিকানিধানে সদা বসন্তং গিরিজাসমেতম্ |
সুরাসুরারাধিতপাদপদ্মং শ্রীবৈদ্যনাথং তমহং নমামি || ৫||
যাম্যে সদঙ্গে নগরেঽতিরম্যে বিভূষিতাঙ্গং বিবিধৈশ্চ ভোগৈঃ |
সদ্ভক্তিমুক্তিপ্রদমীশমেকং শ্রীনাগনাথং শরণং প্রপদ্যে || ৬||
মহাদ্রিপার্শ্বে চ তটে রমন্তং সম্পূজ্যমানং সততং মুনীন্দ্রৈঃ |
সুরাসুরৈর্যক্ষ মহোরগাঢ্যৈঃ কেদারমীশং শিবমেকমীডে || ৭||
সহ্যাদ্রিশীর্ষে বিমলে বসন্তং গোদাবরিতীরপবিত্রদেশে |
যদ্ধর্শনাত্পাতকমাশু নাশং প্রযাতি তং ত্র্যম্বকমীশমীডে || ৮||
সুতাম্রপর্ণীজলরাশিযোগে নিবধ্য সেতুং বিশিখৈরসংখ্যৈঃ |
শ্রীরামচন্দ্রেণ সমর্পিতং তং রামেশ্বরাখ্যং নিযতং নমামি || ৯||
যং ডাকিনিশাকিনিকাসমাজে নিষেব্যমাণং পিশিতাশনৈশ্চ |
সদৈব ভীমাদিপদপ্রসিদ্দং তং শঙ্করং ভক্তহিতং নমামি || ১০||
সানন্দমানন্দবনে বসন্তমানন্দকন্দং হতপাপবৃন্দম্ |
বারাণসীনাথমনাথনাথং শ্রীবিশ্বনাথং শরণং প্রপদ্যে || ১১||
ইলাপুরে রম্যবিশালকেঽস্মিন্ সমুল্লসন্তং চ জগদ্বরেণ্যম্ |
বন্দে মহোদারতরস্বভাবং ঘৃষ্ণেশ্বরাখ্যং শরণম্ প্রপদ্যে || ১২||
জ্যোতির্মযদ্বাদশলিঙ্গকানাং শিবাত্মনাং প্রোক্তমিদং ক্রমেণ |
স্তোত্রং পঠিত্বা মনুজোঽতিভক্ত্যা ফলং তদালোক্য নিজং ভজেচ্চ ||
  || ইতি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গস্তোত্রং সংপূর্ণম্ ||
১. শ্রী সোমনাথ--- সোমনাথের মন্দির অতি প্রাচীন। সোমনাথের প্রাচীন মন্দির ধ্বংস হওয়ায় নতুন মন্দির তৈরি হয়েছে। গুজরাটের এই মন্দিরের কাছেই পুরশুরামের মন্দির, শঙ্করাচার্যের মন্দির, সারদা মঠ, সূর্ষ মন্দির, সরস্বতী, হিরণ্য ও কপিলা নদীর সঙ্গম প্রভাস তীর্থ, শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধানের স্থান, গীতা ভবন প্রভৃতি। ভেরাবল থেকে সোমনাথের দুরত্ব মাত্র ৫কিমি। ভেরাবল থেকে বাসেও সোমনাথ যেতে পারেন।
সোম মানে চন্দ্র | তার দেবতা হিসেবে শিব পূজিত হন গুজরাতের এই মন্দিরে | পুরাণে বলে‚ দক্ষের অভিশাপে চন্দ্র নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে | তখন এই তীর্থে শিবের উপাসনায় আবার হারানো প্রভা ফিরে পান চন্দ্রদেব | 
২. শ্রীমল্লিকার্জুন--- অন্ধ্রপ্রদেশের তুর্ণুল জেলায় শ্রীশৈলম নামক স্থানে পাহাড় দিয়ে ঘেরা বিখ্যাত শিবক্ষেত্র। এখানকার ঋষভ পাহাড়ে শিব-পার্বতী আসেন বাহন বৃষের প্রায়শ্চিত্তে সন্তুষ্ট হয়ে | পরে শিব এখানে জ্যোতির্লিঙ্গ হয়ে আবির্ভূত হন | কৃষ্ণা নদীর দক্ষিণ পাড়ে দেবাদিদেব মহাদেব‚ মল্লিকার্জুন নামে উপাস্য | 

হায়দরাবাদ থেকে ২৩০ কিমি বাসে যেতে হয়। বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, তিরুপতি প্রভৃতি স্থান থেকেও বাসে যাওয়া যায়। অদূরে কৃষ্ণা নদী প্রবাহিত। শিব এখানে জলবেষ্টিত। কৃষ্ণা নদীকে বাঁধ দেওয়ার ফলে নদীর জলধারার দৃশ্য অতি মনোরম। মহাশিবরাত্রিতে বহু পুর্ণাথীদের সমাগম হয়।
৩. শ্রীমহাকাল--- মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে শিপ্রা নদীর তীরে মহাকালের মন্দির। এখানে মাটির নীচে আছে মূল মন্দির, আর তার ওপরে আছেন ওংকারেশ্বর শিব।কথিত আছে, শ্রীরামচন্দ্র সব তীর্থের জল এনে পিতার পিন্ড দান করেছিলেন এই মহাকালে।

৪. ওঁকারেশ্বর---মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর-মৌ-খান্ডোয়া রেলে ওঁকারেশ্বর রোডে পৌঁছে ৯কিমি দূরে পাবেন ওঁকারেশেবর মন্দির। ইন্দোর থেকে দুরত্ব বাসে ৭৭ কিমি পথ। তিন চার ঘন্টা পথ। নর্মদা নদীর মধ্যে দ্বীপ বিশেষ। এই স্থানেই আদি শঙ্করাচার্য-দীক্ষাগ্রহণ এবং সিদ্ধিলাভ করেন। দ্বীপের বিপরীত দিকে ওঁকারেশ্বর মন্দির অবস্থিত।

৫. শ্রীকেদারনাথ-- পঞ্চকেদারের মধ্যমনি ৩৫৮৪ মিটার উঁচু হিমালয়ের পাদদেশে নৈসর্গিক শোভার মাঝে বিরাজমান এই কেদারনাথ মন্দির। উত্তরপ্রদেশের গাড়োয়াল জেলায় অবস্থিত কেদারনাথ পর্বতের পাদদেশে এই মন্দির অবস্থিত। 
ভগবান নর নারায়ণ মাটি দিয়ে মূর্তি গড়েন শিবের | আরাধনায় তুষ্ট হয়ে তাঁকে দর্শন দেন মহাদেব | 
পাশাপাশি প্রচলিত‚ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পাপ স্খালন করার জন্য হিমালয়ে শিবের আরাধনায় ব্রতী হন পঞ্চপাণ্ডব | কিন্তু শিব তখন পালিয়ে বেড়ান | অবশেষে মধ্যম পাণ্ডব ভীম জাপটে ধরেন মহিষরূপী মহাদেবকে |
 তারপর থেকে তিনি‚ জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে অধিষ্ঠিত হন কেদারে | এবং তিনি এখানে কেদারনাথ |
ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে কেদারনাথ মন্দিরে যাওয়ার পথ আপাতত বন্ধ রয়েছে।

৬. শ্রীভীমাশঙ্কর-- ভীম নদীর তীরে মহারাষ্ট্রে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার উপরে অবস্থিত এক প্রসিদ্ধ তীর্থক্ষেত্র। ঔরঙ্গাবাদ থেকে ২৩০ কিমি , পুনে থেকে ১২৩ কিমি। শিখ গুরু গোবিন্দ সিংহের স্মৃতিবিজরিত নানডেড থেকে ১০৯ কিমি। বাসেও যাওয়া যায়, আবার হায়দরাবাদ থেকে রেলে পারালি গিয়ে মন্দিরে যাওয়া যায়। ভীমাশঙ্করজী এখানে কালো পাথরের ছোট শিবলিঙ্গরূপে বিজারিত। এখানে শিবরাত্রিতে জমকালো উত্‍সব হয়। এই দেবস্থানের প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি মনোরম।

৭. শ্রীবিশ্বেস্বর--- কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরে স্থাপিত শিব মূর্তি। বাদশা আকবরের আমলে মূল মন্দিরটির সংস্কার করেন তাঁর রাজস্ব মন্ত্রী টোডরমল।১৮৮৬ সালে ইন্দোর মহারাণী অহল্যাবাঈ পাঞ্জাবকেশরী রমজিত্‍ সিংহ মন্দিরের শিখরগুলি তামার উপর সোনা দিয়ে মুড়ে দেন।

৮. শ্রীবৈজনাথ-- মহারাষ্ট্রের প্যারলে বৈজনাথ মন্দিরটি অবস্থিত। ঔরঙ্গাবাদ থেকে ১৩০ কিমি দুরে বাসে যেতে হয়। বাস স্টেশনের নিচুতে কয়েকধাপ নেমে প্রায় ৮০৪ বছরের প্রাচীন শ্রী বৈজনাথ শিবের মন্দির। প্রবাদ আছে, পাণ্ডবরা মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন।

৯. শ্রীনাগেশ্বর--গুজরাটের দ্বারকা থেকে ওখার পথে প্রায় ১৭কিমি গিয়ে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম মন্দির নাগেশ্বর মাহাদেব মন্দির।

১০. শ্রীত্র্যম্বকেশর--- মহারাষ্ট্রের নাসিক রেল স্টেশন থেকে ৫০ কিমি দুরে ত্র্যম্বকেশর মন্দির অবস্থিত। মন্দিরে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিবের সমন্বয়ে শিব মূর্তি। মুম্বই থেকে পঞ্চবটী এক্সপ্রেসে নাসিক যাওয়া যায়। নাসিক রোড রেল স্টেশন থেকে মাত্র ৫০ কিমি দুরে অবস্থিত। এখানে ১২ বছর পর পর পূর্ণকুম্ভ অনুষ্ঠিত হয়।

১১. শ্রীরামেশ্বরম--- চার ধামের এক ধাম। দক্ষিণ পূর্ব ভারতের শেষ প্রান্তে এক প্রণালীতে অবস্থিত। শ্রীরামেশ্বরম। সীতাদেবীর গড়া শিবমূর্তি এবং শ্রীরামচন্দ্র কর্ত্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শ্রীরামেশ্বরম।ধনুষ্কোটি থেকে প্রায় ২০ কিমি দুরে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের মিলন স্থলে অবস্থিত।

১২. শ্রীঘৃষ্নেস্বর---
ঔরঙ্গাবাদ শহর থেকে ২৮ কিমি দুরে অবস্থিত মহারাষ্ট্রের বিখ্যাত ইলোরা গুহা থেকে ১ কিমি। দুরে শ্রীঘৃষ্নে শ্বর শিব মন্দির অ

শনিবার, ২৩ জুন, ২০১৮

Mohamudgar - - By Acharya Shankar

শঙ্করাচার্য্য-কৃত মোহমুদগর-


মুঢ় জহীহি ধনাগমতৃষ্ণাম কুরু তনুবুদ্ধে মনসি বিতৃষ্ণাম্‌।
যল্লভতে নিজকর্ম্মোপাত্তম্‌ বিত্তং তেন বিনোদয় চিত্তম্‌॥১॥
অর্থ- হে মূঢ় জন কেবলমাত্র অর্থ উপার্জনের তৃষ্ণা পরিত্যাগ কর। এই ধরনের চিন্তা তোমার মনকে কেবলমাত্র জাগতিক করে দেবে সুতারং মনে এর জন্য বিতৃষ্ণা সৃষ্টি কর। তোমার উত্তম কর্ম্মের দ্বারা উপার্জিত যে অর্থ তোমাকে স্বচ্ছল রাখে তার দ্বারাই তোমার মনকে খুশী রাখো।
কা তব কান্তা কস্তে পুত্রঃ সংসারোহয়মতীববিচিত্রঃ।
কস্য ত্বং বা কুতঃ আয়াতঃ তত্ত্বং চিন্তয় তদিদং ভাতঃ॥২॥
অর্থ- কে তোমার স্ত্রী? কেই বা তোমার সন্তান? এই সংসার হল অতীব বিচিত্র। তুমি কার? তুমি কোথা থেকে এসেছ? তত্ত্ব সহকারে এই বিষয়ে চিন্তা করে দেখ।
মা কুরু ধনজনযৌবনগর্বম্‌ হরতি নিমেষাৎ কালঃ সর্ব্বম্‌।
মায়াময়মিদমখিলং হিত্বা ব্রহ্মপদং প্রবিশাশু বিদিত্বা॥৩॥
অর্থ- ধন, জন ও যৌবনের গর্ব না করাই ভাল কারন সময় এই সকলকে নিমেষে গ্রাস করে ফেলে। এই অখিল জগতকে মায়াময় জেনে সেই পরম ব্রহ্ম পরমপুরুষের চরণে আশ্রয় গ্রহন করাই তোমার পক্ষে ভালো।
নলিনীদলগতজলমতিতরলং তদ্বজ্জীবনমতিশয়চপলং।
ক্ষণমিহ সজ্জনসঙ্গতিরেকা ভবতি ভবার্ণবতরণে নৌকা॥৪॥
অর্থ- পদ্মপাত্রার উপর জলবিন্দু যে রকম অস্থির প্রানীর মধ্যে প্রাণও সেই রকম অস্থির। তাই এই ক্ষণজীবনে যদি ক্ষণকালের জন্যও সাধুসঙ্গ করে থাকো তাহলে এই ভব সাগরে হতে সেই সাধু সঙ্গ নৌকা হয়ে তোমাকে পার করে দেবে।
যাবজ্জনমং তাবন্মরনণং তাবজ্জননীজঠরে শয়নং।
ইহ সংসারে স্ফূটতরদোষঃ কথমিহ মানব তব সন্তোষঃ॥৫॥
অর্থ- প্রাক প্রসব অবস্থা, জন্ম, মৃত্যু এগুলি ক্রমাগত, এই সংসারের এই ক্ষণ ভঙ্গুর রূপ তুমি স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাও। তাহলে হে মানুষ তুমি কিসে সন্তুষ্ট থাকো?
দিনযামিন্যৌ সায়ম্প্রাতঃ শিশিরবসন্তৌ পুনরায়াতঃ।
কালঃ ক্রীড়তি গচ্ছত্যায়ুঃ তদপি ন মুঞ্চত্যাশাবায়ুঃ॥৭॥
অর্থ- দিন-রাত্রি, সন্ধ্যা-সকাল, শীত-বসন্ত কতবার আসে কতবার চলে যায়, সময়ের এই খেলা দেখতে দেখতে আয়ু শেষ হয়ে যায় কিন্তু তবুও এই বায়ুর মত অফুরন্ত আশা মানুষের আর ফুরায় না।
অঙ্গং গলিতং পলিতং মুণ্ডম্‌ দন্ত-বিহীনং জাতং তুণ্ডম্‌।
করধৃতকম্পিতশোভিতদণ্ডম্‌ তদপি ন মুঞ্চত্যাশাভাণ্ডম্‌॥৭॥
অর্থ- অঙ্গ সকল কুঁচকে গিয়ে এমন হয় যেন গলে গলে পড়ছে, মাথা থেকে সব চুল উঠে যায়, দাঁত পড়ে গিয়ে মুখ বিবর চুপসে যায়, ঠুকরে ঠুকরে হাঁটে, হাতে ধরে থাকা লাঠিটাও যখন থর থর করে কাঁপতে থাকে তখনো মানুষ এই আশা নামক ফাঁকা মাটির হাঁড়িটা ছাড়তে চায় না।
সুরবরমন্দিরতরুতলবাসঃ শয্যাভূতলমজিনং বাসঃ।
সর্ব্বপরিগ্রহভোগত্যাগঃ কস্য সুখং ন করোতি বিরাগঃ॥৮॥
অর্থ- সেই দেবতাদের মন্দির স্বরূপ তরুতলে যদি বাস করা হয়, পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ কে শয্যা করা হয় এবং অজিন বসন যদি পরিধান করা হয় এবং সংসারের সকল ভোগে ত্যাগে আগ্রহ না রেখে সব কিছু পরিত্যাগ করে দেওয়ার এই বৈরাগ্যভাব কাকে না খুশি করে।
শত্রৌ মিত্রে পুত্রে বন্ধৌ মাকুরু যত্নং বিগ্রহসন্ধৌ।
ভব সমচিত্তঃ সর্ব্বত্র ত্বং বাঞ্ছস্যচিরাদ্‌ যদি বিষ্ণুত্বং॥৯॥
অর্থ- শত্রু-মিত্র পুত্র-বন্ধু বান্ধব আদি যা কিছু সম্পর্ক আছে এদের সাথে এবং ঝগড়া সন্ধি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ যত্ন করার কোন দরকার নেই। ভগবান চারিপাশে ব্যাপ্ত আছেন এই কথাটি মনে রেখে সকলের প্রতি সমান যত্ন নেওয়ার চেষ্টা সব সময়েই করা উচিত।
অষ্টকুলাচলসপ্তসমুদ্রাঃ ব্রহ্মাপুরন্দরদিনকররুদ্রাঃ।
ন ত্বং নাহং নায়ং লোকঃ তদপি কিমর্থং ক্রিয়তে শোকঃ॥১০॥
অর্থ- এই মহাদেশ সসাগরা জগৎ সংসার ব্রহ্মা (সৃষ্টি কর্তা), ইন্দ্র (ভোগ কর্তা), সূর্য্য (পালন কর্তা), রুদ্র (সংহার কর্তা) কতৃক পরিচালিত হয়। তুমি-আমি এই লোক সমূহে ক্ষণ ভঙ্গুর পদার্থ মাত্র। তাহলে কিসের জন্য তুমি দুখঃ শোকে জর্জরিত হয়ে থাকো!
ত্বয়ি ময়ি চান্যত্রৈকোবিষ্ণুঃ ব্যর্থং কুপ্যসি ময্যসহিষ্ণুঃ।
সর্ব্বং পশ্য আত্মনাত্মানং সর্ব্বতোৎসৃজ ভেদজ্ঞানম্‌॥১১॥
অর্থ- তুমি আমি আর কেউ নই আমরা সেই এক সর্ব্বঘটে পরিব্যাপ্ত ব্যাপ্তময় বিষ্ণু এর জন্য ব্যর্থই আমার প্রতি অসিহষ্ণুতা বশত রাগ করে থাকো। চেয়ে দেখ চারিদিকে যা কিছু দেখতে পাচ্ছ সব তোমারই আত্মারই অংশ, আত্মার আত্মীয়। সুতারং যত্ন সহকারে মন থেকে এই ভেদজ্ঞান দূর করে দাও।
বালস্তাবৎ ক্রীড়াসক্ত-স্তরুণস্তাবৎ তরুনীরক্তঃ।
বৃদ্ধস্তাবচ্চিন্তামগ্নঃ পরমে ব্রহ্মণি কোহপি ন লগ্নঃ॥১২॥
অর্থ- বালকেরা যেরকম খেলার প্রতি আসক্ত, তরুনরা যেরকম তরুনীদের প্রতি আসক্ত, বৃদ্ধেরা যে রকম বিষয় চিন্তার প্রতি আসক্ত থাকে, পরম ব্রহ্মেকে জানার জন্য সেই রকম আকুল করা আসক্তি দেখ কারো মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।
অর্থমনর্থং ভাবয় নিত্যং নাস্তি ততঃ সুখলেশঃ সত্যং।
পুত্রাদপি ধনভাজাং ভীতিঃ সর্ব্বত্রৈষা কথিতা নীতিঃ॥১৩॥
অর্থ- অনর্থকারী অর্থ চিন্তায় সব সময়ে ডুবে আছো কিন্তু জেনে রাখো তাতে লেশ মাত্র সত্যিকারের সুখ নেই। হে ধনী, সংসারের লোকেরা এমনকী নিজের সন্তানরাও তোমাকে যে শ্রদ্ধা ভক্তি প্রদর্শন করে তা তোমার ধন প্রাপ্ত করার জন্য। সব সময় এমনি হয়ে থাকে নীতিকথাতে তাই বলা আছে।
যাবদ্বিত্তোপার্জ্জনশক্তঃ তাবন্নিজপরিবারো রক্তঃ।
তদনু চ জরয়া জর্জ্জরদেহে বার্ত্তাং কোহপি ন পৃচ্ছতি গেহে॥১৪॥
অর্থ- যতদিন তুমি অর্থ উপার্জন করতে পারবে ততদিন তোমার পরিবারের সকলে তোমার খুব অনুরক্ত থাকবে। তুমি যা বলবে তাই হবে, তোমার কথায় সবাই ওঠা বসা করবে। তারপরে যখন সময়ের চক্রে জরা ব্যাধি ইত্যাদি এসে তোমার দেহে বাসা বাধবে, নড়বড়ে হয়ে তুমি বিছানায় শুয়ে থাকবে, তোমার বাড়িতেই তোমারই পরিবারের কেউ আর তোমার কথা জিজ্ঞেস করবে না, তোমার সাথে কথা বলবে না, তোমার সঞ্চিত অর্থের দ্বারা কোন সেবাদাসী নিয়োজিত হয়ে তোমার সামনে বসে খবরের কাগজ পড়বে।
কামং ক্রোধং লোভং মোহং ত্যক্ত্বাত্মানং পশ্যতি কোহহং।
আত্মজ্ঞানবিহিনা মূঢ়া স্তে পচ্যন্তে নরকে নিগূঢ়াঃ॥১৫॥
অর্থ- কাম, ক্রোধ, লোভ ও মোহ চেষ্টা করে পরিত্যাগ কর। নিজের আত্মাকে জানার চেষ্টা কর, তুমি কে? এই আত্মজ্ঞান না হলে তুমি মূর্খই রয়ে যাবে। এই জীবন-মৃত্যু ময় সংসারে জন্ম জন্মান্তর ধরে পচতে হবে।
ষোড়শপজ্ঝটিকাভিরশেষঃ শিষ্যানাং কথিতোহভ্যুপদেশঃ।
যেষাং নৈব করোতি বিবেকং তেষাং কঃ কুরুতে মতিরেকং॥১৬॥
অর্থ- এই ঝাড়া ষোলটি পদের দ্বারা শিষ্যদের সবাইকে আমি উপদেশ প্রদান করলাম। কিন্তু এতেও যার বিবেক জাগ্রত হয় না তার সেই এক পরব্রহ্মে মতি কিভাবে হবে?





ন তাতো ন মাতা ন বন্ধুর্ন দাতা ন পুত্রো ন পুত্ৰী ন ভৃত্যো ন ভর্তা।
ন জায়া ন বিদ্যা ন বৃত্তির্মমৈব গতিস্ত্বং গতিস্ত্বং ত্বমেকা ভবানী ॥
অর্থ- আমার পিতা নাই, মাতা নাই, বন্ধু নাই, পৌত্র নাই, পুত্র নাই, কন্যা নাই, ভৃত্য নাই, প্রভু নাই, স্ত্রী নাই, বিদ্যা নাই, জীবিকা নাই; হে ভবানি তুমিই আমার গতি, একমাত্র তুমিই গতি।
ভবাদ্ধিপারে মহাদুঃখভিরৌ পপাত প্রকামী প্রলোভী প্ৰমত্তঃ।
সংসার-পাশ-প্রবন্ধঃ সদাহং গতিস্ত্বং গতিস্ত্বং ত্বমেকা ভবানী ॥
অর্থ- অপার সংসারসাগরে আমি সর্বদাই মহাদুঃখে ভীত ; আমি বাসনাগ্রস্ত , লোভযুক্ত, বুদ্ধিশূন্য এবং কুৎসিত সংসারবন্ধনে আবদ্ধ হইয়া তোমার শরণাগত হইয়াছি ; হে ভবানি -তুমিই আমার গতি, একমাত্র তুমিই গতি।
ন জানামি দানং ন চ ধ্যানযোগম্‌ ন জানামি তস্ত্ৰং ন চ স্তোত্রমন্ত্ৰম।
ন জানামি পুজাং ন চ ন্যাসযোগম গতিস্ত্বং গতিস্ত্বং ত্বমেকা ভবানী ॥
অর্থ- আমি দান ও ধ্যানযোগ জানি না; তন্ত্র, মন্ত্র, স্ত্রোত্র এবং পূজা জানি না, সন্ন্যাসযোগও জানি না; হে ভবানি – তুমিই আমার গতি, একমাত্র তুমিই গতি।
ন জানামি পুণ্যং ন জানামি তীর্থম্ ন জানামি মুক্তিং লয়ং বা কদাচিৎ।
ন জানামি ভক্তিং ব্রতং বাপি মাতর্গতিস্ত্বং গতিস্ত্বং ত্বমেক ভবানী ॥
অর্থ- মা, আমি কখনও পুণ্য জানি না, তীর্থ জানি না, মুক্তি জানি না, চিত্তবৃত্তি নিরোধ জানি না অথবা ব্রতও জানি না; হে ভবানি –তুমিই আমার গতি, একমাত্র তুমিই গতি।
কুকৰ্ম্মী কুসঙ্গী কুবুদ্ধিঃ কুদাসঃ কুলাচারহীনঃ কদাচারলীনঃ ।
কুদৃষ্টি কুবাক্যপ্রবন্ধঃ সদাহম্ গতিস্ত্বং গতিস্ত্বং ত্বমেকা ভবানী ॥
অর্থ- আমি সর্বদাই কুকর্মে রত, কুসঙ্গে মগ্ন, কুবুদ্ধিপূর্ণ, কুজনের দাস, কুলহীন, আচারহীন, কদাচারশীল, কুৎসিত বিষয়ে অভিনিবিষ্ট এবং কুবাক্যে তৎপর; হে ভবানি – তুমিই আমার গতি, একমাত্র তুমিই গতি।
প্রজেশং রমেশং মহেশং সুরেশম্‌ দীনেশং নিশীথেশ্বরং বা কদাচিৎ।
ন জানামি চান্যৎ সদাহং শরণ্যে গতিস্ত্বং গতিস্ত্বং ত্বমেকা ভবানী ॥
অর্থ- হে শরণ্যে, আমি প্রজাপতি , বিষ্ণু, শিব, ইন্দ্র, সূর্য বা বিশ্বনাথকে অথবা দেবগণমধ্যে অপর কাহাকেও কখনও জানি না, হে ভবানি-তুমিই আমার গতি, একমাত্র তুমিই গতি।
বিবাদে বিষাদে প্রমাদে প্রবাসে জলে চানলে পৰ্ব্বতে শক্রমধ্যে।
অরণ্যে শরণ্যে সদা মাং প্রপাহি গতিস্ত্বং গতিস্ত্বং ত্বমেকা ভবানী ॥
অর্থ- হে শরণ্যে, আমাকে বিবাদে, বিষাদে , প্রমোদে, প্রবাসে, জলে, অনলে, পর্বতে, শত্রুমধ্যে বা অরণ্যে সর্বদা রক্ষা কর ; হে ভবানি –তুমিই আমার গতি, একমাত্র তুমিই গতি।
অনাথো দরিদ্রো জরারোগযুক্তো মহাক্ষীণদীনঃ সদা জাড্যবক্ত্রঃ।
বিপত্তৌ প্রবিষ্টঃ প্রনষ্টঃ সদাহম গতিস্ত্বং গতিস্ত্বং ত্বমেক ভবানী ॥
অর্থ- আমি সদাই অনাথ, দরিদ্র, জীর্ণ, রোগগ্রস্ত , অতি ক্ষীণ, দীন, বাক্যে অপারগ, সর্বদা বিপদে মগ্ন এবং সর্বপ্রকারে বিনষ্ট হইয়াছি- হে ভবানি-তুমিই আমার গতি, একমাত্র তুমিই গতি।
এ আর এক স্তর! কেহ পিতা নয়, কেহ মাতা নয়, কেহ বন্ধু নয়, কেহ পুত্র নয়, কেহ পুত্রী নয়,-একমাত্র জগদম্বাই সকলের সারভূত! এখানে মায়ার বন্ধন ছিন্ন হয়েছে। মরীচিকা দূরে সরে গেছে। তবে এখানেও তিনি আমি-জননী আর তনয়-এটুকু যেন ভেদ-ভাব রয়েছে!
জগত গুরু শঙ্করাচার্য্যকৃত।