শনিবার, ৭ জুলাই, ২০১৮

Dwadas Jyotirlinga


সৃষ্টির দেবতা ব্রহ্মা | স্থিতির অধীশ্বর বিষ্ণু | শিবপুরাণে কথিত‚ একদিন দুজনের মধ্যে শুরু হল বিবাদ | কে বড় ? ব্রহ্মা বলেন‚ তিনি বড় | বিষ্ণু বলেন‚ না তিনি বেশি মহৎ | সমাধান চাওয়া হল মহেশ্বরের কাছে |
মহাদেব তখন জ্যোতি বা আলোর স্তম্ভ দিয়ে এঁফোর ওফোঁড় করে দিলেন স্বর্গ‚ পৃথিবী‚ নরক‚ তিন লোক | ব্রহ্মা‚ বিষ্ণু দুজনকে তিনি বললেন‚ এই স্তম্ভের শেষ খুঁজে বের করতে | এই আলোর স্তম্ভই হল জ্যোতির্লিঙ্গ | যা নাকি আলো এবং সৃষ্টির প্রতীক |
এদিকে জ্যোতির্লিঙ্গের শেষ খুঁজতে গিয়ে নাজেহাল ব্রহ্মা-বিষ্ণু | মিথ্যে করে শিবকে ব্রহ্মা বললেন‚ তিনি খুঁজে পেয়েছেন | অন্যদিকে‚ বিষ্ণু হার স্বীকার করে নিলেন | ব্রহ্মার ছলনা বুঝতে পেরে শিব তাঁকে অভিশাপ দিলেন‚ কোনও উৎসবে তিনি পূজিত হবেন না | আর বিষ্ণু পেলেন আশীর্বাদ | যতদিন পৃথিবী থাকবে‚ ততদিন তিনি পূজিত হবেন |
যে সমস্ত শিবলিঙ্গ স্বয়ম্ভু--অর্থাত্‍ নিজেই স্বয়ং শিবলিঙ্গরূপে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, এইরূপে সারা ভারতবর্ষে ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ আছে, সেই সব শিবলিঙ্গকে বলা হয় জ্যোতির্লিঙ্গ।
             বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে জ্যোতির্লিঙ্গ হতে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বের হচ্ছে । আআ  জ্যোতির্লিঙ্গের আকারও নিউক্লিয়ার রিয়েক্টারের মতো। রিয়েক্টার ঠান্ডা রাখতে যেমন সবসময় জলের দরকার হয় তেমনি শিবলিঙ্গেও জল ঢালা হয়।
          








দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ স্তোত্রম্




সৌরাষ্ট্রদেশে বিশদেঽতিরম্যে জ্যোতির্মযং চন্দ্রকলাবতংসম্ |

ভক্তিপ্রদানায কৃপাবতীর্ণং তং সোমনাথং শরণং প্রপদ্যে || ১||

শ্রীশৈলশৃঙ্গে বিবুধাতিসঙ্গে তুলাদ্রিতুঙ্গেঽপি মুদা বসন্তম্ |

তমর্জুনং মল্লিকপূর্বমেকং নমামি সংসারসমুদ্রসেতুম্ || ২||

অবন্তিকাযাং বিহিতাবতারং মুক্তিপ্রদানায চ সজ্জনানাম্ |

অকালমৃত্যোঃ পরিরক্ষণার্থং বন্দে মহাকালমহাসুরেশম্ || ৩||
কাবেরিকানর্মদযোঃ পবিত্রে সমাগমে সজ্জনতারণায |
সদৈবমান্ধাতৃপুরে বসন্তমোঙ্কারমীশং শিবমেকমীডে || ৪||
পূর্বোত্তরে প্রজ্বলিকানিধানে সদা বসন্তং গিরিজাসমেতম্ |
সুরাসুরারাধিতপাদপদ্মং শ্রীবৈদ্যনাথং তমহং নমামি || ৫||
যাম্যে সদঙ্গে নগরেঽতিরম্যে বিভূষিতাঙ্গং বিবিধৈশ্চ ভোগৈঃ |
সদ্ভক্তিমুক্তিপ্রদমীশমেকং শ্রীনাগনাথং শরণং প্রপদ্যে || ৬||
মহাদ্রিপার্শ্বে চ তটে রমন্তং সম্পূজ্যমানং সততং মুনীন্দ্রৈঃ |
সুরাসুরৈর্যক্ষ মহোরগাঢ্যৈঃ কেদারমীশং শিবমেকমীডে || ৭||
সহ্যাদ্রিশীর্ষে বিমলে বসন্তং গোদাবরিতীরপবিত্রদেশে |
যদ্ধর্শনাত্পাতকমাশু নাশং প্রযাতি তং ত্র্যম্বকমীশমীডে || ৮||
সুতাম্রপর্ণীজলরাশিযোগে নিবধ্য সেতুং বিশিখৈরসংখ্যৈঃ |
শ্রীরামচন্দ্রেণ সমর্পিতং তং রামেশ্বরাখ্যং নিযতং নমামি || ৯||
যং ডাকিনিশাকিনিকাসমাজে নিষেব্যমাণং পিশিতাশনৈশ্চ |
সদৈব ভীমাদিপদপ্রসিদ্দং তং শঙ্করং ভক্তহিতং নমামি || ১০||
সানন্দমানন্দবনে বসন্তমানন্দকন্দং হতপাপবৃন্দম্ |
বারাণসীনাথমনাথনাথং শ্রীবিশ্বনাথং শরণং প্রপদ্যে || ১১||
ইলাপুরে রম্যবিশালকেঽস্মিন্ সমুল্লসন্তং চ জগদ্বরেণ্যম্ |
বন্দে মহোদারতরস্বভাবং ঘৃষ্ণেশ্বরাখ্যং শরণম্ প্রপদ্যে || ১২||
জ্যোতির্মযদ্বাদশলিঙ্গকানাং শিবাত্মনাং প্রোক্তমিদং ক্রমেণ |
স্তোত্রং পঠিত্বা মনুজোঽতিভক্ত্যা ফলং তদালোক্য নিজং ভজেচ্চ ||
  || ইতি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গস্তোত্রং সংপূর্ণম্ ||
১. শ্রী সোমনাথ--- সোমনাথের মন্দির অতি প্রাচীন। সোমনাথের প্রাচীন মন্দির ধ্বংস হওয়ায় নতুন মন্দির তৈরি হয়েছে। গুজরাটের এই মন্দিরের কাছেই পুরশুরামের মন্দির, শঙ্করাচার্যের মন্দির, সারদা মঠ, সূর্ষ মন্দির, সরস্বতী, হিরণ্য ও কপিলা নদীর সঙ্গম প্রভাস তীর্থ, শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধানের স্থান, গীতা ভবন প্রভৃতি। ভেরাবল থেকে সোমনাথের দুরত্ব মাত্র ৫কিমি। ভেরাবল থেকে বাসেও সোমনাথ যেতে পারেন।
সোম মানে চন্দ্র | তার দেবতা হিসেবে শিব পূজিত হন গুজরাতের এই মন্দিরে | পুরাণে বলে‚ দক্ষের অভিশাপে চন্দ্র নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে | তখন এই তীর্থে শিবের উপাসনায় আবার হারানো প্রভা ফিরে পান চন্দ্রদেব | 
২. শ্রীমল্লিকার্জুন--- অন্ধ্রপ্রদেশের তুর্ণুল জেলায় শ্রীশৈলম নামক স্থানে পাহাড় দিয়ে ঘেরা বিখ্যাত শিবক্ষেত্র। এখানকার ঋষভ পাহাড়ে শিব-পার্বতী আসেন বাহন বৃষের প্রায়শ্চিত্তে সন্তুষ্ট হয়ে | পরে শিব এখানে জ্যোতির্লিঙ্গ হয়ে আবির্ভূত হন | কৃষ্ণা নদীর দক্ষিণ পাড়ে দেবাদিদেব মহাদেব‚ মল্লিকার্জুন নামে উপাস্য | 

হায়দরাবাদ থেকে ২৩০ কিমি বাসে যেতে হয়। বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, তিরুপতি প্রভৃতি স্থান থেকেও বাসে যাওয়া যায়। অদূরে কৃষ্ণা নদী প্রবাহিত। শিব এখানে জলবেষ্টিত। কৃষ্ণা নদীকে বাঁধ দেওয়ার ফলে নদীর জলধারার দৃশ্য অতি মনোরম। মহাশিবরাত্রিতে বহু পুর্ণাথীদের সমাগম হয়।
৩. শ্রীমহাকাল--- মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে শিপ্রা নদীর তীরে মহাকালের মন্দির। এখানে মাটির নীচে আছে মূল মন্দির, আর তার ওপরে আছেন ওংকারেশ্বর শিব।কথিত আছে, শ্রীরামচন্দ্র সব তীর্থের জল এনে পিতার পিন্ড দান করেছিলেন এই মহাকালে।

৪. ওঁকারেশ্বর---মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর-মৌ-খান্ডোয়া রেলে ওঁকারেশ্বর রোডে পৌঁছে ৯কিমি দূরে পাবেন ওঁকারেশেবর মন্দির। ইন্দোর থেকে দুরত্ব বাসে ৭৭ কিমি পথ। তিন চার ঘন্টা পথ। নর্মদা নদীর মধ্যে দ্বীপ বিশেষ। এই স্থানেই আদি শঙ্করাচার্য-দীক্ষাগ্রহণ এবং সিদ্ধিলাভ করেন। দ্বীপের বিপরীত দিকে ওঁকারেশ্বর মন্দির অবস্থিত।

৫. শ্রীকেদারনাথ-- পঞ্চকেদারের মধ্যমনি ৩৫৮৪ মিটার উঁচু হিমালয়ের পাদদেশে নৈসর্গিক শোভার মাঝে বিরাজমান এই কেদারনাথ মন্দির। উত্তরপ্রদেশের গাড়োয়াল জেলায় অবস্থিত কেদারনাথ পর্বতের পাদদেশে এই মন্দির অবস্থিত। 
ভগবান নর নারায়ণ মাটি দিয়ে মূর্তি গড়েন শিবের | আরাধনায় তুষ্ট হয়ে তাঁকে দর্শন দেন মহাদেব | 
পাশাপাশি প্রচলিত‚ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পাপ স্খালন করার জন্য হিমালয়ে শিবের আরাধনায় ব্রতী হন পঞ্চপাণ্ডব | কিন্তু শিব তখন পালিয়ে বেড়ান | অবশেষে মধ্যম পাণ্ডব ভীম জাপটে ধরেন মহিষরূপী মহাদেবকে |
 তারপর থেকে তিনি‚ জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে অধিষ্ঠিত হন কেদারে | এবং তিনি এখানে কেদারনাথ |
ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে কেদারনাথ মন্দিরে যাওয়ার পথ আপাতত বন্ধ রয়েছে।

৬. শ্রীভীমাশঙ্কর-- ভীম নদীর তীরে মহারাষ্ট্রে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার উপরে অবস্থিত এক প্রসিদ্ধ তীর্থক্ষেত্র। ঔরঙ্গাবাদ থেকে ২৩০ কিমি , পুনে থেকে ১২৩ কিমি। শিখ গুরু গোবিন্দ সিংহের স্মৃতিবিজরিত নানডেড থেকে ১০৯ কিমি। বাসেও যাওয়া যায়, আবার হায়দরাবাদ থেকে রেলে পারালি গিয়ে মন্দিরে যাওয়া যায়। ভীমাশঙ্করজী এখানে কালো পাথরের ছোট শিবলিঙ্গরূপে বিজারিত। এখানে শিবরাত্রিতে জমকালো উত্‍সব হয়। এই দেবস্থানের প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি মনোরম।

৭. শ্রীবিশ্বেস্বর--- কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরে স্থাপিত শিব মূর্তি। বাদশা আকবরের আমলে মূল মন্দিরটির সংস্কার করেন তাঁর রাজস্ব মন্ত্রী টোডরমল।১৮৮৬ সালে ইন্দোর মহারাণী অহল্যাবাঈ পাঞ্জাবকেশরী রমজিত্‍ সিংহ মন্দিরের শিখরগুলি তামার উপর সোনা দিয়ে মুড়ে দেন।

৮. শ্রীবৈজনাথ-- মহারাষ্ট্রের প্যারলে বৈজনাথ মন্দিরটি অবস্থিত। ঔরঙ্গাবাদ থেকে ১৩০ কিমি দুরে বাসে যেতে হয়। বাস স্টেশনের নিচুতে কয়েকধাপ নেমে প্রায় ৮০৪ বছরের প্রাচীন শ্রী বৈজনাথ শিবের মন্দির। প্রবাদ আছে, পাণ্ডবরা মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন।

৯. শ্রীনাগেশ্বর--গুজরাটের দ্বারকা থেকে ওখার পথে প্রায় ১৭কিমি গিয়ে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম মন্দির নাগেশ্বর মাহাদেব মন্দির।

১০. শ্রীত্র্যম্বকেশর--- মহারাষ্ট্রের নাসিক রেল স্টেশন থেকে ৫০ কিমি দুরে ত্র্যম্বকেশর মন্দির অবস্থিত। মন্দিরে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিবের সমন্বয়ে শিব মূর্তি। মুম্বই থেকে পঞ্চবটী এক্সপ্রেসে নাসিক যাওয়া যায়। নাসিক রোড রেল স্টেশন থেকে মাত্র ৫০ কিমি দুরে অবস্থিত। এখানে ১২ বছর পর পর পূর্ণকুম্ভ অনুষ্ঠিত হয়।

১১. শ্রীরামেশ্বরম--- চার ধামের এক ধাম। দক্ষিণ পূর্ব ভারতের শেষ প্রান্তে এক প্রণালীতে অবস্থিত। শ্রীরামেশ্বরম। সীতাদেবীর গড়া শিবমূর্তি এবং শ্রীরামচন্দ্র কর্ত্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শ্রীরামেশ্বরম।ধনুষ্কোটি থেকে প্রায় ২০ কিমি দুরে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের মিলন স্থলে অবস্থিত।

১২. শ্রীঘৃষ্নেস্বর---
ঔরঙ্গাবাদ শহর থেকে ২৮ কিমি দুরে অবস্থিত মহারাষ্ট্রের বিখ্যাত ইলোরা গুহা থেকে ১ কিমি। দুরে শ্রীঘৃষ্নে শ্বর শিব মন্দির অ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন