শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২১

কার্তিক পুজো

         
          ( আরও দেখুন - সূচিপত্র
         বাংলা কার্তিক মাসের সংক্রান্তির দিন পুজা করা হয় দেবসেনাপতি কার্ত্তিকেয়র। দেবসেনাপতি কার্ত্তিকেয়  ভগবান শিবের পুত্র । তারকাসুর বর পেয়েছিলেন যে ভগবান শিবের পুত্র ছাড়া আর কারোর হাতেই তিনি নিহত হবেন না। সে উদ্দেশ্যে কামদেব যান লক্ষ লক্ষ বৎসর ধরে তপস্যালীণ শিবের তপোভঙ্গ করতে। 
ঘটনাক্রমে এসময় ভগবান শিবের জন্য তপস্যা করছিলেন হিমালয় কন্যা পার্বতী। মদনদেব শিবের তপোভঙ্গ করলে পার্বতীর সাথে শিবের মিলন হয়। আর শিববীর্য ধারন করেন পার্বতী। কিন্তু ভগবান শিবের সেই জ্বলন্ত সূর্য সমান বীর্য পার্বতীর পক্ষে ধারন করা অসম্ভব হলে তিনি তা অগ্নিদেবকে প্রদান করেন। অগ্নিদেবও তা ধারন করতে না পেরে শরবনে নিক্ষেপ করেন। সেখানেই কার্তিকের জন্ম হয়।
কৃত্তিকাগণ মানুষ করেন বলে নাম হয় কার্তিক বা কার্ত্তিকেয়। এছাড়াও তাকে একাধিক নামে ডাকা হয়। যথা - কৃত্তিকাসূত, অম্বিকেয়া, নমুচি, স্কন্দ, শিখিধ্বজ, অগ্নিজ, বাহুল্য, ক্রোণারতী, শরাজ, তারকারি, শক্তিপাণি, বিশাখা, সরণান, গুহ, শান্তমাতুর, কুমার, সৌর্সেন, দেবসেনাপতি গৌরী সুত ইত্যাদি।
কার্তিকের স্ত্রী হলেন দেবসেনা এবং বালি (বলি)। সুরপাদমানকে হত্যা করার পরে দেবরাজ ইন্দ্র কার্তিককে তাঁর কন্যা দেবসেনের সাথে বিবাহ করেছিলেন। কার্তিক পরে নাম্বিরাজের মেয়ে বালিকে বিয়ে করেছিলেন।

দেবসেনাপতি কার্তিক দক্ষিণ ভারতে প্রসিদ্ধ । তামিল বিশ্বাস অনুসারে, মুরুগান হলেন তামিলনাড়ুর রক্ষক। এছাড়াও  সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া এবং মরিশাসে যেখানে তামিল জাতিগোষ্ঠী প্রভাব রয়েছে সেখানে মুরুগান খুব জনপ্রিয়। 
তামিল ও মালায়ালামে তিনি  মুরুগান বা ময়ূরী স্কন্দস্বামী (তামিল: முருகன், মালায়ালাম: മുരുകൻ) নামে পরিচিত।  কন্নড় ও তেলেগুতে তিনি সুব্রহ্মণ্যম (কন্নড়: ಸುಬ್ರಹ್ಮಣ್ಯ, তেলেগু: స్వామి స్వామి‍) ।  শ্রীলঙ্কার দক্ষিণে কার্তিকেয়কে উত্সর্গীকৃত কাঠারগাম  মন্দিরে হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরাই উপাসনার জন্য হাজির হয় । 

কার্তিক পূজার মন্ত্র :-ও


ওঁ কার্ত্তিকেয়ং মহাভাগং ময়ুরোপরিসংস্থিতম্।
তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভং শক্তিহস্তং বরপ্রদম্।।
দ্বিভুজং শক্রহন্তারং নানালঙ্কারভূষিতম্।
প্রসন্নবদনং দেবং কুমারং পুত্রদায়কম্।।

ওঁ কার্ত্তিকের মহাভাগ দৈত্যদর্পনিসূদন।
প্রণোতোহং মহাবাহো নমস্তে শিখিবাহন।
রুদ্রপুত্র নমস্ত্তভ্যং শক্তিহস্ত বরপ্রদ।
ষান্মাতুর মহাভাগ তারকান্তকর প্রভো।
মহাতপস্বী ভগবান্ পিতুর্মাতুঃ প্রিয় সদা।
দেবানাং যজ্ঞরক্ষার্থং জাতস্ত্বং গিরিশিখরে।
শৈলাত্মজায়াং ভবতে তুভ্যং নিত্যং নমো নমঃ।

প্রণাম মন্ত্র:-

ওঁ কার্ত্তিকের মহাভাগ দৈত্যদর্পনিসূদন। প্রণোতোহং মহাবাহো নমস্তে শিখিবাহন। রুদ্রপুত্র নমস্ত্তভ্যং শক্তিহস্ত বরপ্রদ।


বর্ণনা:-

           পৌরাণিক বর্ননা অনুসারে দেবসেনাপতি কার্তিকেয়র গাত্র হলুদবর্ণের। তার ছয়টি মাথা, তাই তিনি ষড়ানন বলে খ্যাত । পাঁচটি ইন্দ্রিয় অর্থাৎ চোখ, কান, নাক, জিভ ও ত্বক ছাড়াও একাগ্র মন দিয়ে তিনি যুদ্ধ করেন বলেই তিনি ষড়ানন ।  তার বাহন ময়ূর। সৌন্দর্য এবং শৌর্য এই দুটি বৈশিষ্ট্যই ময়ূরের মধ্যে বিদ্যমান। তাঁর হাতে থাকে বর্শা-তীর-ধনুক। তিনি চিরকুমার । তবে কিছু কিছু পৌরাণিক বর্ণনাতে  তাঁর বিবাহের উল্লেখও পাওয়া গেছে। কারো মতে মানব জীবনের ষড়রিপু- কাম(কামনা), ক্রোধ (রাগ), লোভ(লালসা),মদ(অহং), মোহ (আবেগ), মাত্সর্য্য (ঈর্ষা)কে সংবরণ করে দেব সেনাপতি কার্তিক যুদ্ধক্ষেত্রে সদা সজাগ থাকেন।

লোকাচার:-

মা ষষ্ঠী কার্তিকেয়র স্ত্রী। কথিত আছে তারকাসুরের হাত হতে মা ষষ্ঠীই শিশু কার্তিকেয়কে রক্ষা করেন। এজন্যই মা ষষ্ঠী শিশুদের রক্ষাকর্ত্রী বলে মানা হয় ৷ আর কথিত আছে কার্তিক ঠাকুরের কৃপা পেলে পুত্রলাভ এবং ধনলাভ হয়। সেজন্য সদ্য বিয়ে হয়েছে অথবা বিয়ের এক বছর হয়ে গেছে কিন্তুু এখনও সন্তান আসেনি এমন দম্পতির বাড়ির সামনে কার্তিক ঠাকুরের মূর্তি ফেলা একটি জনপ্রিয় লোকাচারের মধ্যে পড়ে ।

বর্ধমানের কাটোয়ার কার্তিক পুজো এত বিখ্যাত তাই এখানে এক পুজোর সঙ্গে অন্য পুজোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে। একে কার্তিক লড়াই বলা হয়  । কার্তিকেয়কে  নিয়ে এই বাংলায় প্রচলিত আছে  বহু ছড়া। এদের মধ্যে পরিচিত একটি হল –

“কার্তিক ঠাকুর হ্যাংলা, একবার আসেন মায়ের সাথে, একবার আসেন একলা।”


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন