রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২

Dakshina Kalika stotra


ওঁ কৃশোদরি মহাচণ্ডী মুক্তকেশিং বলীপ্রিয়ে।
কুলাচারপ্রসন্নাস্যে নমস্তে শঙ্করপ্রিয়ে।।

ঘোরদংষ্ট্রে কোটোরাক্ষি কিটিশব্দ প্রসাধিনী।
ঘুরঘোররাবাস্ফারে নমস্তে চিতাবাসিনী।।

বন্ধুকপুষ্পসঙ্কাশে ত্রিপুরে ভয়নাশিনী।
ভাগ্যোদয়সমুৎপন্নে নমস্তে বরবন্দিনী।।

জয় দেবি জগদ্ধাত্রী ত্রিপুরাদ্যে ত্রিদেবতে।
ভক্তেভ্যো বরদে দেবি মহষঘ্নি নমোহস্তুতে।।

ঘোরবিঘ্নবিনাশায় কুলাচারসমৃদ্ধয়ে।
নমমি বরদে দেবি মুণ্ডমালা বিভূষনে।।

রক্তধারাসমাকীর্ণে করকাঞ্চীবিভূষিতে।
সর্ব্ববিঘ্নহরে কালী নমস্তে ভৈরবপ্রিয়ে।।

নমস্তে দক্ষিণামূর্ত্তে কালী ত্রিপুরভৈরবী।
ভিন্নাঞ্জনচয়প্রক্ষে প্রবীণশবসংস্থিতে।।

গলচ্ছ্রোণিতধারাভিঃ স্মেরাননসরোরুহে।
পীনোন্নতকুচদ্বন্দ্বো নমস্তে ঘোরদক্ষিণে।।

আরক্তমুখশান্তাভির্নেত্রালিভির্বিরাজিতে।
শবদ্বয় কৃতোত্তংসে নমস্তে মদবিহ্বলে।।

পঞ্চাশন্মুণ্ডঘটিতমালা লোহিত লোহিতে।
নানামণিবিশোভাঢ্যে নমস্তে ব্রহ্মসেবিতে।।

শবাস্থিকৃতকেয়ুর, শঙ্খ-কঙ্কন-মণ্ডিতে।
শববক্ষঃ সমারুঢ়ে নমস্তে বিষ্ণুপূজিতে।।

শবমাংস কৃতগ্রাসে অট্টহাসে মুহুর্মুহু।
মুখশীঘ্রস্মিতামোদে নমস্তে শিববন্দিতে।।

খড়্গমুণ্ডধরে বামে সব্যে (অ) ভয়বরপ্রদে।
দন্তুরে চ মহারৌদ্রে নমস্তে চণ্ডনাদিতে।।

ত্বং গতিঃ পরমা দেবি ত্বং মাতা পরমেশ্বরী।
ত্রাহি মাং করুণাসাদ্রে নমস্তে চণ্ডনায়িকে।।

নমস্তে কালিকে দেবি নমস্তে ভক্তবৎসলে।
মুর্খতাং হর মে দেবি প্রতিভা জয়দায়িনী।।

গদ্যপদ্যময়ীং বাণীং তর্কব্যাকরণাদিকম্।
অনধীতগতাং বিদ্যাং দেহি দক্ষিণকালিকে।।

জয়ং দেহি সভামধ্যে ধনং দেহি ধনাগমে।
দেহি মে চিরজীবিত্বং কালিকে রক্ষ দক্ষিণে।।

রাজ্যং দেহি যশো দেহি পুত্রান্ দারান্ ধনং তথা।
দেহান্তে দেহি মে মুক্তিং জগন্মাতঃ প্রসীদ মে।।

ওঁ মঙ্গলা ভৈরবী দুর্গা কালিকা ত্রিদশেশ্বরী।
উমা হৈমবতীকন্যা কল্যাণী ভৈরবেশ্বরী।।

কালী ব্রাহ্মী চ মাহেশী কৌমারী বৈষ্ণবী তথা।
বারাহী বাসলী চণ্ডী ত্বাং জগুর্ম্মুনয়ঃ সদা।।

উগ্রতারেতি তারেতি শিবত্যেকজটেতি চ।
লোকোত্তরেতি কালেতি গীয়তে কৃতিভিঃ সদা।।

যথা কালী তথা তারা তথা ছিন্না চ কুল্লকা।
একমূর্ত্তিশ্চতুর্ভেদ দেবি ত্বং কালিকা পুরা।।

একত্রিবিধা দেবী কোটিধানন্তরূপিনী।
অঙ্গাঙ্গিকৈর্নামভেদৈঃ কালিকেতি প্রগীয়তে।।

শম্ভুঃ পঞ্চমুখেনৈব গুণান্ বক্তুং ন তে ক্ষমঃ।
চাপল্যৈর্যৎ কৃতং স্তোত্রং ক্ষমস্ব বরদা ভব।।

প্রাণান্ রক্ষ যশো রক্ষ পুত্রান্ দারান্ ধনং তথা।
সর্ব্বকালে সর্ব্বদেশে পাহি মাং দক্ষিণকালিকে।।

যঃ সংপূজ্য পঠেৎ স্তোত্রং দিবা বা রাত্রিসন্ধ্যায়োঃ।
ধনং ধান্যং তথা পুত্রং লভতে নাত্র সংশয়।।

শ্রীমন্মহাকালবিরচিত শ্রীমদ্দক্ষিণকালিকাস্তোত্রং সম্পূর্ণম্।।

রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০২২

বিল্ববৃক্ষ

বিল্ববৃক্ষ মাহাত্ম্যঃ

বেলগাছ হিন্দুধর্মে একটি পবিত্র বৃক্ষ। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম Aegle marmelos। 

বিল্ববৃক্ষ শিবস্বরূপ। এর তিনটি পাতার মাঝেরটি শিবস্বরূপ, বামপত্র ব্রহ্মাস্বরূপ ও ডানপত্র বিষ্ণুস্বরূপ। বেলপাতার সামনের অংশকে অমুর্যাম বলে। বেলের তিনটি পাতা সৃষ্টি-স্থিতি-লয় বা  ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর বা সত্ত্ব-রজ-তম কে নির্দেশ করে। 

ঋগ্বেদের শ্রী সূক্তে বেলের উপকারীতার কথা বলা আছে। নেপালে বিয়ের আগে যে অনুষ্ঠান করে তাকে বেল-বিবাহ বলে। বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিকে বেলগাছ লাগানো শুভ। এতে সম্পদ প্রাপ্তি হয়। দক্ষিনদিকে দূর্ঘটনা বা বাধামুক্তি, পশ্চিমে সন্তানভাগ্য, পূর্বে সম্পদ ও শান্তি আসে। 

বেলফলের অপর নাম শ্রীফল। কথিত আছে মহালক্ষ্মীর স্তন হতে বেলের সৃষ্টি বলে এই ফলের নাম শ্রীফল। 


বিল্ববৃক্ষের ধ্যানঃ

ওঁ চতুর্ভুজং বিল্ববৃক্ষং রজতাভং বৃষস্থিতম্।

নানালঙ্কার সংযুক্তং জটামণ্ডলধারিণম্।।

বরাভয়করং দেবং খড়্গখট্বাঙ্গ ধারিণম্।

ব্যাঘ্রচর্মাম্বরধরং শশিমৌলি ত্রিলোচনম্।।

ওঁ বিল্ববৃক্ষায় নমঃ

🔱🔱🔱🔱🔱🔱🔱🔱🔱🔱🔱🔱🔱

প্রণাম মন্ত্রঃ

ওঁ মহাদেবপ্রিয়করো বাসুদেব প্রিয়ঃ সদা।

উমাপ্রীতিকরো বৃক্ষো বিল্বরূপ নমোহস্তু তে।।

বিল্ববৃক্ষ যেখানে থাকে সেই স্থান বারাণসীপুরী। আর এই বৃক্ষ এতটাই পবিত্র যে এর ছায়া মাড়ালে আয়ু নাশ হয় ও পাদস্পর্শে শ্রী নাশ হয়।

বেলগাছের উপকারীতা :-

* বেলফল সরষের তেলের মিশ্রণে যদি কোনও ব্যথায় মালিশ করা হয় তবে খুব উপকার পাওয়া যায়।

* বেল ফলের গুঁড়ো দুধের সাঙ্গে পান করলে রক্তাল্পতার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

* বেলফল চিনির সঙ্গে সেবন করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

* হাই ব্লাড সুগার রোগে নিয়মিত বেল ফল খেলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

* বেলফল ঠাণ্ডা জলে ভিজিয়ে মিছরি সহকারে পান করলে লিভারের সমস্যা দূর হয়।

* বেলের গুঁড়ো যদি ক্ষত স্থানে লাগানো হয় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি উপশম হয়।

  

বৃহস্পতিবার, ৫ মে, ২০২২

শাম্ব সদাশিব

বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

সরস্বতী মহাভাগে

 সরস্বতী মহাভাগে
মূল পাতা ) : ছবি- রাজা রবি বর্মা 
          সময় বড় বেগবান, সে স্থির থাকতে চায় না মোটেই। আর যত সময় এগিয়ে চলে ততই মানুষের দক্ষতাগত বিকাশের সাথে সাথে বৌদ্ধিক বিকাশ আসতে থাকে কমে। এ যেন ভাষার বিকৃতি। একটা শব্দ ধীরে ধীরে তৎসম তদ্ভবের মাধ্যমে হারায় তার আসল উচ্চারণ ও অর্থ।  ঠিক তেমনি শাস্ত্র আর ধারনাতে লাগে লৌকিক গালগল্পের ধুলো। 

দীর্ঘদিন ধরেই একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় বারম্বার, যে বিদ্যার দেবী মা সরস্বতী কে ? সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা কি তার স্বামী না পিতা ? ব্রহ্মা কি নিজ কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন ?
প্রথমেই বলি, এইসব আজগুবি প্রশ্নের আবির্ভাব ঘটেছে পুরাণের মতো কিছু গ্রন্থের প্রক্ষেপন আর হিন্দুধর্মের প্রতি বিদ্বেষযুক্ত কিছু নরাধমের কারনে। আসুন এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর খুঁজি।
আমাদের সবার আগে জানতে হবে সরস্বতী কে, আর ব্রহ্মাই বা কে। ব্রহ্মা হলেন হিন্দু ত্রিদেবের অন্যতম। আর এই ত্রিদেব হলেন নির্গুণ নিরাকার ব্রহ্মের স্বগুণ সাকার রূপ। সুতরাং ব্রহ্মা কোনও মানব বা দেবতা নন যে তার উপর মানবিক বা দৈবিক গুণ বা নিয়ম আরোপিত হবে। 

এবার আসি তার সৃষ্টির কথায়। ব্রহ্মা তার প্রতি কল্পের সৃষ্টিতে সবকিছু সৃজন করেন এবং পরার্ধকল্পে সৃষ্টি ধ্বংস করে ঘুমোতে যান। এক কল্পে একাত্তর মন্বন্তর ও এক মন্বন্তরে একহাজার মহাযুগ। মোট ৪৩,২০,০০০ বছরে এক মহাযুগ। 
আর ব্রহ্মার সৃষ্টির জন্য স্ত্রীর প্রয়োজন হয় না। তার ইচ্ছামাত্রেই সৃষ্টি হয়। তার দশ হাজার মানসপুত্র ইচ্ছামাত্রেই সৃষ্টি হয়েছে। যারা এই কল্পের আদি পুরুষ। 

ঠিক এই কারণেই ব্রহ্মার মূর্তি প্রচলিত নয়। কারন স্রষ্টাকে নিরাকার দেখানোর রীতি প্রাচীন। তিনি সর্বময়। 

এবার আসি দেবী সরস্বতীর কথায়। 
দেবী সরস্বতী হলেন আদিদেবী। আদিশক্তি। কেনোও নারী নন। আমাদের হিন্দু দর্শন মতে সৃষ্টির মূল তত্ত্ব দুটি। প্রকৃতি ও পুরুষ। প্রকৃতি আর পুরুষের মাঝে মায়ারূপ আঁঠাই জগতকে ভৌতিক রূপ দান করেছে। ক্ষিতী, অপ, তেজ, মরূৎ ও ব্যোম হল এই প্রকৃতি-পুরুষের সম্মিলিত রূপ। আর প্রকৃতি অর্থাৎ শক্তিকে আমরা নারীরূপে কল্পনা করি। তাই দেবী সরস্বতীর নারীরূপ।

পরবর্তিতে এই দেবী সরস্বতী হতেই অন্যান্য দেবীর উৎপত্তি। পুস্পাঞ্জলি মন্ত্রেও তাই দেবীকে ভদ্রকালী বলা হয়েছে। 

নমঃভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
মা কালীর গলায় পঞ্চাশটি নরমুণ্ড আসলে পঞ্চাশটি বর্ণের প্রতীক। মা তো বাগেশ্বরী। তাই ঋকমন্ত্রে মাকে বাক রূপে ঘোষণা করা হয়েছে। অপরদিকে তান্ত্রিক দেবী তারা তো আসলে নীলসরস্বতী। নিরুক্তকার যাস্ক আবার দেবী সরস্বতীকে নদী বলে উল্লেখ করেছেন। যা সরস্বতী সভ্যতার ভিত্তি। ‘তত্র সরস্বতী ইতি এতস্য নদীবদ্বেতাবচ্চ নিগমা ভবন্তি।’ স্কন্দপুরাণের প্রভাসখণ্ডেও যাস্কের মতের সমর্থন দেখা যায়। আবার মোহদুষ্ট শুম্ভকে অদ্বৈত জ্ঞান দান করেছিলেন। 'একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়াকা মমাপরা'।

দেবী সরস্বতী কিন্তু আবার যে সে নদী নন।  দেহের মধ্যে প্রবহমান গঙ্গা যমুনা ও সরস্বতীর অন্যতমা। অর্থাৎ তিনিই জ্ঞানরূপিনী সুমুম্না। 

একজন প্রশ্ন তুলেছেন পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রে 'কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে' শব্দবন্ধ নিয়ে। মহাকবি কালীদাসের এই সরস্বতী স্তবের ভুল কপিপেষ্ট হয়েছে এখানে। কুচ নয় শব্দটি কুর্চ হবে। কুর্চ মানে মধ্যমা ও অঙ্গুষ্ঠের অগ্রভাগের স্পর্শস্থল। সরস্বতীর ছবি লক্ষ্য করুন ঠিক মধ্যমা ও অঙ্গুষ্ঠের স্পর্শস্থলেই মুক্তোর হার আছে। জপমালা। 
সুতরাং এটা পরিস্কার যে স্রষ্টা সত্ত্বার নারীরূপই হলেন দেবী সরস্বতী । তিনি না কারোর স্ত্রী না কারোর কন্যা। 

আবার প্রাচীন কালে রাজাকে বলা হত প্রজাপতি আর সভা ও সমিতিকে তার কন্যা বলা হত। অর্থাৎ রূপক। তাই কোথাও কন্যা বা স্ত্রী বলা হলেও তা রূপকার্থে হতে পারে। ( ঋগ্বেদ ১০/৬১/৭) 
শতপথ ব্রাহ্মণে দেবী সরস্বতীকে বাক বাণী ( 7/5/1/31), জিহ্বা ( 7/9/1/14), বাণী রশ্মি পৃথিবী ইন্দ্রিয় (2/5/1/11) বলা হয়েছে। তাই আবার প্রমাণিত যে দেবী সরস্বতী কারোর কন্যা বা স্ত্রী নন। 

দেবী সরস্বতীর সাথে ব্রহ্মা ও মনুর যৌনতা নিয়ে গল্প ফেঁদেছেন এক দেববিদ্বেষী। তিনি জানেনই না যে একমাত্র ব্রহ্মচারীরই অধিকার সরস্বতী মন্দিরে প্রবেশ করার। সুতরাং এসব গালগল্পের কোনও মান্যতা নেই। হ্যাঁ, কিছু নকল পুরাণে প্রক্ষিপ্ত শ্লোক দিয়ে এসব প্রমাণ করার চেষ্টাও হয়েছে যার কোনও অথেনটিকেশন নেই। মনে রাখবেন পুরাণে বহুবার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রক্ষেপন হয়েছে। তাই কিছু বলার আগে রেফারেন্স সহ দেবেন যেটা অনুসন্ধান করে বোঝা যাবে যে আপনি ঠিক না ভুল পথে চলেছেন। 

তবে রূপকার্থে ধরলে দেহস্থ সুমুম্না রূপিনী সরস্বতী মিলিত হয়েছেন ব্রহ্মরূপ সহস্রার সঙ্গে। আর যোগী তার ব্রহ্মবস্তুকে সুমুম্না সরস্বতী পথে সহস্রায় স্থাপন করলেই এই জন্ম জন্মান্তরের চক্র হতে মুক্তি ঘটে। তাই স্ত্রী বলা অন্যায় নয়। অপরদিকে সহস্রার হতেই সুমুম্না সরস্বতীর শুরু বলে কন্যা রূপকও অর্থহীন নয়। 

লক্ষ কোটি বছরেরও আগে-
ছিল যবে সব নিরাকার, মহাশূন্য মহাঅন্তহীন, 
সেথা কোন বৈষম্যের বশে পলকেরও ভগ্নাংশ সময়ে
ভীষণ প্রণবনাদে হল বিস্ফোরণ। 
সেই সে প্রণব হল তোমার প্রথম প্রকাশ, 
আদিপরাশক্তি শব্দব্রহ্ম বাগ-বাগীশ্বরী।
তোমার বীণার সুরে সৃষ্টি হয় গ্রহ নিহারিকা, 
তোমার বীণার সুরে সুপারনোভা ঘটে বারবার, 
জন্ম-মৃত্যু-জীবনের সুরের লহরী।
গায়ত্রীর চব্বিশ চরণে প্রাতঃ-সন্ধ্যা-মধ্যাহ্নে তোমার গমন, 
সবিতা তুমি প্রসবিছ জগৎ সংসার। 
হে বরদে ! তোমারর কুর্চমূলে যে মুকুতা হার
সে হারে জপিছ সদা সময়ের কাষ্ঠা-দন্ড-পল, 
গণিছ সৃষ্টি-স্থিতি ভীষণ সংহার। 
কি সাধ্য আমার দেবী গাহি তব মহিমা অপার, 
জগৎসার মাঝে ধূলিকণা আমি। 
নিন্দুকের কিবা সাধ্য ধরে তব দোষ, 
সমুদ্রের জলকণা সমুদ্রেরে করি পরিহাস 
নিজেরেই পরিহাসে জানি। 
শ্রী তুমি, তুমি বাণী, তুমি মাগো গুণের আকর, 
শ্বেতকমলের পরে মরালবাহিনী, 
তব নাম মুখরিত হোক সামগানে, 
ঋকমন্ত্রে ঘোষিত  হোক তোমার কাহিনী।

সবশেষে বলি মা সরস্বতী জ্ঞানের দেবী । তার আশীর্বাদের আলোকে মনের মলিনতা দূর হয়ে যাক।

শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২১

কার্তিক পুজো

         
          ( আরও দেখুন - সূচিপত্র
         বাংলা কার্তিক মাসের সংক্রান্তির দিন পুজা করা হয় দেবসেনাপতি কার্ত্তিকেয়র। দেবসেনাপতি কার্ত্তিকেয়  ভগবান শিবের পুত্র । তারকাসুর বর পেয়েছিলেন যে ভগবান শিবের পুত্র ছাড়া আর কারোর হাতেই তিনি নিহত হবেন না। সে উদ্দেশ্যে কামদেব যান লক্ষ লক্ষ বৎসর ধরে তপস্যালীণ শিবের তপোভঙ্গ করতে। 
ঘটনাক্রমে এসময় ভগবান শিবের জন্য তপস্যা করছিলেন হিমালয় কন্যা পার্বতী। মদনদেব শিবের তপোভঙ্গ করলে পার্বতীর সাথে শিবের মিলন হয়। আর শিববীর্য ধারন করেন পার্বতী। কিন্তু ভগবান শিবের সেই জ্বলন্ত সূর্য সমান বীর্য পার্বতীর পক্ষে ধারন করা অসম্ভব হলে তিনি তা অগ্নিদেবকে প্রদান করেন। অগ্নিদেবও তা ধারন করতে না পেরে শরবনে নিক্ষেপ করেন। সেখানেই কার্তিকের জন্ম হয়।
কৃত্তিকাগণ মানুষ করেন বলে নাম হয় কার্তিক বা কার্ত্তিকেয়। এছাড়াও তাকে একাধিক নামে ডাকা হয়। যথা - কৃত্তিকাসূত, অম্বিকেয়া, নমুচি, স্কন্দ, শিখিধ্বজ, অগ্নিজ, বাহুল্য, ক্রোণারতী, শরাজ, তারকারি, শক্তিপাণি, বিশাখা, সরণান, গুহ, শান্তমাতুর, কুমার, সৌর্সেন, দেবসেনাপতি গৌরী সুত ইত্যাদি।
কার্তিকের স্ত্রী হলেন দেবসেনা এবং বালি (বলি)। সুরপাদমানকে হত্যা করার পরে দেবরাজ ইন্দ্র কার্তিককে তাঁর কন্যা দেবসেনের সাথে বিবাহ করেছিলেন। কার্তিক পরে নাম্বিরাজের মেয়ে বালিকে বিয়ে করেছিলেন।

দেবসেনাপতি কার্তিক দক্ষিণ ভারতে প্রসিদ্ধ । তামিল বিশ্বাস অনুসারে, মুরুগান হলেন তামিলনাড়ুর রক্ষক। এছাড়াও  সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া এবং মরিশাসে যেখানে তামিল জাতিগোষ্ঠী প্রভাব রয়েছে সেখানে মুরুগান খুব জনপ্রিয়। 
তামিল ও মালায়ালামে তিনি  মুরুগান বা ময়ূরী স্কন্দস্বামী (তামিল: முருகன், মালায়ালাম: മുരുകൻ) নামে পরিচিত।  কন্নড় ও তেলেগুতে তিনি সুব্রহ্মণ্যম (কন্নড়: ಸುಬ್ರಹ್ಮಣ್ಯ, তেলেগু: స్వామి స్వామి‍) ।  শ্রীলঙ্কার দক্ষিণে কার্তিকেয়কে উত্সর্গীকৃত কাঠারগাম  মন্দিরে হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরাই উপাসনার জন্য হাজির হয় । 

কার্তিক পূজার মন্ত্র :-ও


ওঁ কার্ত্তিকেয়ং মহাভাগং ময়ুরোপরিসংস্থিতম্।
তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভং শক্তিহস্তং বরপ্রদম্।।
দ্বিভুজং শক্রহন্তারং নানালঙ্কারভূষিতম্।
প্রসন্নবদনং দেবং কুমারং পুত্রদায়কম্।।

ওঁ কার্ত্তিকের মহাভাগ দৈত্যদর্পনিসূদন।
প্রণোতোহং মহাবাহো নমস্তে শিখিবাহন।
রুদ্রপুত্র নমস্ত্তভ্যং শক্তিহস্ত বরপ্রদ।
ষান্মাতুর মহাভাগ তারকান্তকর প্রভো।
মহাতপস্বী ভগবান্ পিতুর্মাতুঃ প্রিয় সদা।
দেবানাং যজ্ঞরক্ষার্থং জাতস্ত্বং গিরিশিখরে।
শৈলাত্মজায়াং ভবতে তুভ্যং নিত্যং নমো নমঃ।

প্রণাম মন্ত্র:-

ওঁ কার্ত্তিকের মহাভাগ দৈত্যদর্পনিসূদন। প্রণোতোহং মহাবাহো নমস্তে শিখিবাহন। রুদ্রপুত্র নমস্ত্তভ্যং শক্তিহস্ত বরপ্রদ।


বর্ণনা:-

           পৌরাণিক বর্ননা অনুসারে দেবসেনাপতি কার্তিকেয়র গাত্র হলুদবর্ণের। তার ছয়টি মাথা, তাই তিনি ষড়ানন বলে খ্যাত । পাঁচটি ইন্দ্রিয় অর্থাৎ চোখ, কান, নাক, জিভ ও ত্বক ছাড়াও একাগ্র মন দিয়ে তিনি যুদ্ধ করেন বলেই তিনি ষড়ানন ।  তার বাহন ময়ূর। সৌন্দর্য এবং শৌর্য এই দুটি বৈশিষ্ট্যই ময়ূরের মধ্যে বিদ্যমান। তাঁর হাতে থাকে বর্শা-তীর-ধনুক। তিনি চিরকুমার । তবে কিছু কিছু পৌরাণিক বর্ণনাতে  তাঁর বিবাহের উল্লেখও পাওয়া গেছে। কারো মতে মানব জীবনের ষড়রিপু- কাম(কামনা), ক্রোধ (রাগ), লোভ(লালসা),মদ(অহং), মোহ (আবেগ), মাত্সর্য্য (ঈর্ষা)কে সংবরণ করে দেব সেনাপতি কার্তিক যুদ্ধক্ষেত্রে সদা সজাগ থাকেন।

লোকাচার:-

মা ষষ্ঠী কার্তিকেয়র স্ত্রী। কথিত আছে তারকাসুরের হাত হতে মা ষষ্ঠীই শিশু কার্তিকেয়কে রক্ষা করেন। এজন্যই মা ষষ্ঠী শিশুদের রক্ষাকর্ত্রী বলে মানা হয় ৷ আর কথিত আছে কার্তিক ঠাকুরের কৃপা পেলে পুত্রলাভ এবং ধনলাভ হয়। সেজন্য সদ্য বিয়ে হয়েছে অথবা বিয়ের এক বছর হয়ে গেছে কিন্তুু এখনও সন্তান আসেনি এমন দম্পতির বাড়ির সামনে কার্তিক ঠাকুরের মূর্তি ফেলা একটি জনপ্রিয় লোকাচারের মধ্যে পড়ে ।

বর্ধমানের কাটোয়ার কার্তিক পুজো এত বিখ্যাত তাই এখানে এক পুজোর সঙ্গে অন্য পুজোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে। একে কার্তিক লড়াই বলা হয়  । কার্তিকেয়কে  নিয়ে এই বাংলায় প্রচলিত আছে  বহু ছড়া। এদের মধ্যে পরিচিত একটি হল –

“কার্তিক ঠাকুর হ্যাংলা, একবার আসেন মায়ের সাথে, একবার আসেন একলা।”