শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

জীতাষ্টমী

 জিতাষ্টমী ব্রত

 দুর্গা মহাষ্টমীর আগের অষ্টমী তিথি হল জিতাষ্টমী। জিতাষ্টমীর পরপরই দুর্গাপুজো হয় বলে বলা হয় -'জিতার ডালায় বোধন আসে' । '
'জীতা' শব্দটি এসেছে সংস্কৃত 'জীবিত' শব্দ হতে। মায়েরা তাদের পুত্রকন্যার দীর্ঘায়ু কামনা করে এই ব্রত করেন। ওড়িশাতে আবার এই জিতাষ্টমী দুরকম- পুয়া জিউন্তিয়া বা পুত্র জীবক এবং ভাই জিউন্তিয়া বা ভাই জীবক। একে আবার বড়ষষ্ঠীও বলে। 
এই ব্রত মূলত জীমূতবাহনকে উপলক্ষ্য করে। এই আক্ষরিক অর্থে জীমূতবাহন হলেন মেঘের দেবতা ইন্দ্র ।
অনেকে জীমূতবাহন বলতে ইন্দ্রের কথা মনে করতেই পারেন। কিন্তু এই দেবতা ইন্দ্র নন। ইনি সূর্যপুত্র। ঘোড়ার উপর বসে এক হাতে তার লাগাম টেনে ধরেন আর আরেক হাতে থাকে ঘোড়াকে শাসন করার চাবুক। উজ্জ্বল গৌর বর্ণের এই দেবতা তার ব্রত যারা করেন সেই সমস্ত নিঃসন্তান মানুষদের সন্তান লাভের বর দেন। 
ব্রতের নিয়ম :-
ব্রতের আগেরদিন 'আঁকুরি পাতা' হয়। একটা পাত্রে ছোলা ভিজাতে দেওয়াকেই আঁকুরি পাতা বলে। শিশুদের মঙ্গল কামনায় এই আঁকুরি পাতা হয়। মানভূম বা তার আশেপাশের অঞ্চলে এদিন রাতে পাড়া-প্রতিবেশির কলা-মূলো-ফল-শব্জী ইত্যাদি চুরি করার প্রথা আছে। একে স্থানীয় ভাষায় 'চোখচান্দা' বা 'চোখছেন্দা' বলা হয়। 

এটি আসলে সূর্য ও ইন্দ্রের সাথে জড়িত বলে কৃষি উৎসবও বলা যেতে পারে। আখ, ধানের গাছ , ও বটের ডাল ইত্যাদি বেঁধে নদী বা পুকুরের ঘাটে পুজো হয়। অনেকে উঠোনে গর্ত করেও এই পুজো করেন। সেখানে থাকে শেয়াল শকুন। এই দুই প্রাণীকে অশুভ মনে করা হয় বলেই এই শেয়ল শকুনিকে দূরে পাঠিয়ে  শিশুদের দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়। এ

শেয়াল শকুনদের লোকালয় থেকে দূরে যেত বলে মহিলারা বলেন --
   শকুন গেল ডালে
  শেয়ল গেল খালে। 

ব্রতেরদিন বাড়ির উঠোনে বা যে কোনও জায়গায় ডাঁটশুদ্ধ শালুকফুল, আখগাছ, ধানের চারা, বটগাছের ডাল ইত্যাদি  দিয়ে জীমুতবাহনের প্রতীষ্ঠা করা হয়। গলায় দেওয়া হয় শালুক ফুলের মালা। গড়া হয়, শিয়াল-শকুনের মাটির মূর্তি। তাদের গায়ে একটি হলুদে ডোবান কাপড় দেওয়া হয়। 

সারারাত ঘি- এর প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা হয় সন্তানদের মঙ্গল কামনায়। এরপর ওই প্রদীপে কাজল পেড়ে ছেলেমেয়েদের পরানো হয়। কোথাও কোথাও আবার ভেলার টিপও দেওয়া হয় নজরদোষ এড়ানোর জন্য । এই ভেলা খুবই এলার্জিকারক বলে এলার্জির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এই টিপ দেওয়া হয় বলে ধারণা।  পান্নার দিন প্রসাদের মটর, ছোলা, কলাই, পুঁইশাক, জিঙা, শশা, আলু দিয়ে একটি বিশেষ পদ রান্না করা হয় । 

ব্রতীরা পুকুরপাড়ে  বা নদীতে ডালগুলি এবং মাটির শেয়াল শকুনকে জলে বিসর্জ্জন দিয়ে স্নান দই চিড়া দিয়ে পান্না (উপবাস ভঙ্গ ) করেন। 

জীমূতবাহনের ধ্যান :
     শ্রী মজ্জীমূত বাহনং সুরপতিং দিব্যাঙ্গনা সেবিতং
    শল্যগ্রাম বিনিস্মিতং সুনিয়তং বজ্রং দধানং করে ।
    দৈবাদৈঃ পরিবেষ্টিতং সুচরিতং পদ্মাসনে ধ্যানগং 
   সত্যং যা পুরুষোত্তমং শশীনিভং তং দেবরাজং ভজে ।।

জীমূতবাহনের স্তুতি:

ঔঁ পুরন্দর নমস্তেঽস্তু বজ্রহস্ত নমোঽস্তুতে।
শচীপতে নমস্তুভ্যং নমস্তে শালিবাহন।।
ঐরাবত সন্নিষন্ন সহস্রাক্ষ মহাকায়।
নৌমি ত্বাং  জীমুতাধীশ কৃপাদৃষ্টি প্রদো ভব।।

জীমূতবাহনের প্রণাম মন্ত্র :

নমামি ত্বাং সুরপতে প্রভো জীমুত বাহন।
বালকং রক্ষ রক্ষ শরণং ত্বাং ব্রজামহে।।

এটা প্রচলিত আছে যে  জিতার ডালায় দুর্গা আসে । কৃষ্ণ নবমীকল্পে আগামীকাল এই দুর্গার বোধন । অর্থাৎ অলিখিত দুর্গা পুজো শুরু হয়ে গেল । 

ব্রতকথা:-

পুরাকালে চন্দ্রভানু নামে এক রাজার রাজ্যে ধর্মদাস নামে এক ব্রাহ্মণ বাস করতেন। সেই ব্রাহ্মণের তেজবতী নামে এক পরমাসুন্দরী কন্যা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে তেজবতীর এক কুলিন পাত্রের সঙ্গে বিবাহ হয়। কিন্তু ভাগ্যের নিঠুর পরিহাসে সেই পাত্র মারা গেলে অকালেই বিধবা হয় তেজবতী। 
এক বর্ষাকালে রাজা চন্দ্রভানুর পিতার শ্রাদ্ধের জন্য আতপ চালের সঙ্কট দেখা দেয়। আতপ চাল সূর্যের রোদ ছাড়া তৈরি করা অসম্ভব। এদিকে সারাদিন মেঘের আড়ালে সূর্য রয়েছেন। এমতাবস্থায় রাজা ঘোষণা করেন, যে এক সপ্তাহের মধ্যে রাজাকে আতপ চাল এনে দিতে পারবে রাজা তাকে সোনার কলস উপহার দেবে।
সেই ঘোষণা শুনে বিধবা বাহ্মনী তেজবতী আতপ চাল তৈরির মনস্থির করলেন। কিন্তু সূর্যের আলো কি ? তখন তিনি আতপ চাল তৈরির জন্য সূর্যদেবের প্রার্থনা শুরু করলেন।
সূর্যদেব তার ডাকে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে তার মনোবাসনা জানাতে বললেন। তখন তেজবতী প্রার্থনা করলেন যে, তিনি যেন তার গৃহে অবস্থান করেন, যাতে সে সূর্যদেবের তেজরশ্মি দ্বারা আতপচাল তৈরি করতে পারে।
তখন সূর্যদেব বললেন, যদি সে সূর্যদেবকে পতিরূপে গ্রহণ করে তবেই তিনি তার গৃহে অবস্থান করবেন। প্রথমে তেজবতী এই কথা শুনে অবাক হলেও উপায়ান্তর না দেখে রাজি হলেন।
এবার কথা মত সূর্যদেব তেজবতীর গৃহে অবস্থান করলেন এবং তেজবতী আতপচাল তৈরি করলেন। সূর্যদেব পরদিন প্রভাতে বিছানা ত্যাগ করার পূর্বে তার তেজকিরণের অংশ দ্বারা পুঁইশাক সৃষ্টি করলেন। এবং তার গৃহ ত্যাগ করলেন। তেজবতী রাজার কাছে আতপ চাল পৌঁছে দিয়ে এসে দেখলেন যে বিছানার উপর একটি পুঁইশাক রয়েছে।
পরদিন ছিল দ্বাদশী। সেদিন পুঁইশাক ভক্ষণ করলেন সেই বিধবা ব্রাহ্মণী। আর এই ভক্ষণের ফলশ্রুতিতে তেজবতী গর্ভবতী হয়ে পড়লেন। 
অচিরেই এই খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। রাজা এই সংবাদ শুনে তেজবতীকে সুশ্চরিত্রা ভেবে বন্দী করলেন। 
রাত্রিতে স্বপ্নাদেশে রাজা দেখলেন যে, হংসবাহনে চড়ে জটাধারী এক দিব্যপুরুষ তাকে বলছেন যে, “ হে রাজন তুমি ভুল করছ। তুমি ভুল করছ তেজবতীকে দুশ্চরিত্রা ভেবে বন্দী করে। এ এক দিব্যলীলা। কাল প্রভাতে তুমি তাকে মুক্ত করে দেবে।“ এই বলে সেই দিব্যপুরুষ অন্তর্ধান হলেন।
পরদিন রাত ভোর হতে না হতেই তেজবতীকে মুক্ত করলেন রাজা।

এর কিছুদিন পর তেজবতী এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। সেই সন্তান তেজস্বী, চতুর্বাহু বিশিষ্ট, কানে কুন্ডল এবং মাথায় জটা। তার নাম রাখা হল জীমূতবাহন। 
সময় যায়। জীমূতবাহন বড় হতে থাকে। একদিন পাঠশালায় সকলে তার পিতার নাম জিজ্ঞাসা করে। জীমূতবাহন ফিরে এসে মায়ের কাছে পিতৃপরিচয় জানতে চাইলে তিনি বললেন সূর্যদেব তার পিতা। পিতার সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য যে পথে সূর্যদেব উদয়গিরি যান সেই পথে তিনি তার পুত্রকে নিয়ে গেলেন। 

সূর্যদেব যখন সেই পথে রথে করে যাচ্ছেন সেই সময় জীমূতবাহন সূর্যদেবের রথের দড়ি ধরে টান দিলেন। সূর্যদেব তার পরিচয় জানতে চাইলে তেজবতী বললেন যে জীমূতবাহন তার সন্তান। 

কিন্তু সূর্যদেব সব অস্বীকার করলেন। তেজবতী তখন তাকে পূর্বের সব কথা বললেন। সাক্ষী হিসাবে চিল আর শিয়ালীর কথা বললেন। তারাও সমস্ত কথা সূর্যকে জানাল। তাতেও সূর্যদেব মানতে না চাইলে তেজবতী সূর্যকে অভিশাপ দিতে উদ্যত হলেন। এইসময় সূর্য সমস্ত কিছু স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। জীমূতবাহনকে নিজের সন্তানের স্বীকৃতি দিয়ে বললেন, “দেবতাদের মত তার এই পুত্রেরও মর্ত্যলোকে পূজা হবে, সকল মর্ত্যবাসী বিশেষ করে নারীরা সন্তান লাভ এবং সন্তানের দীর্ঘায়ু কামনায় আশ্বিন মাসে কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে সন্ধ্যের পর এই ব্রত পালন করবে। পূজা শেষে রাত্রি জাগরন ও পরদিন পারন পালন করবে অর্থাৎ ব্রাহ্মণ ভোজন করিয়ে নিজেরা খাবেন।

জিতাষ্টমীর আরো একটি ব্রতকথা আছে। সেটি হল - 

কোন এক দেশে শালিবাহন নামে এক রাজা ছিলেন। তিনি ছিলেন খুব নিষ্ঠাবান ও ধার্মিক। তাঁর বিপুল ঐশ্বর্য থাকলেও ছিল না কোন সন্তান। এই কারণে রাজা আর রানীর মনে সুখ, শান্তি ছিল না। রাজা বহুবার বহু যজ্ঞ করালেন ছেলেমেয়ে হওয়ার জন্যে, কিন্তু তাতে কোন কাজ হল না। কত তাবিজ, কবজ ধারণ করলেন। কিন্তু নাহ ফল কিছুই হল না। দুঃখে ম্রিয়মান রানী একদিন রাতে এক স্বপ্ন দেখলেন, এক দেবতা হাঁসে চড়ে এসে বলছেন, “রানী তুমি জিতাষ্টমীর ব্রত কর। তোমার ছেলেমেয়ে হবে।“ 
পরদিন সকালে রাজাকে রানী সব জানাতে তিনি শুধু মতই দিলেন না সমস্ত আয়োজনও করতে থাকলেন।
ক্রমে এল আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি। রাজার আদেশ মত উঠোনে একটি ছোট পুকুর কাটিয়ে তাতে কলাগাছ আর বেল গাছ পুঁতে দিলেন। রানীও ব্রতের প্রথা অনুযায়ী সারাদিন উপোষ থেকে সন্ধ্যের সময় মটর ও ফলের নৈবিদ্য দিয়ে জীমূতবাহনের পুজো করলেন ও নিজে প্রসাদ খেয়ে বাকিদেরও প্রসাদ দিলেন। পরেরদিন সকালে উঠে রানী চান করে আবার সেই পুকুরের কাছে গিয়ে নিয়মিত পুজো করলেন সন্তান কামনায়। 

এর কিছুদিন পর রাজা আর রানীর এক ছেলে আর এক মেয়ে হল। শালিবাহন ছেলের নাম রাখলেন জীমূতবাহন আর মেয়ের নাম সুশীলা। 

দিন যায়। জীমূতবাহন বিবাহযোগ্য হলে এক সুন্দরী রাজকন্যার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়ে গেল। বউটি ভালো হল বটে কিন্তু একটি বিষয়ে দুঃখ রয়ে গেল। জীমূতবাহন আর রাজকন্যের কয়েকটি ছেলেমেয়ে হল কিন্তু তারা অকালেই মারা গেল।

এদিকে শাশুড়ি কিন্তু উঠোনে পুকুর কাটিয়ে নিয়মমত জিতাষ্টমীর ব্রত পালন করতে থাকেন। কিন্তু বউটি এসব দেখে শুধু হাসে আর উপহাস করে শাশুড়িকে। এই উপহাসই যে তার সন্তানের মৃত্যুর কারণ সে বুঝতেও পারে না।
এই ভাবে সময় যেতে যেতে আবার এল আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী। শাশুড়ি এবার অনেক কষ্টে বুঝিয়ে সুজিয়ে বউকে রাজি করালো ব্রত করাতে। প্রথমে হাসি আর উপোষ করতে পারবে না বললেও শেষে সে রাজি হল ব্রত করতে। ব্রত শেষে সে সন্তান কামনা করল।
কিছুদিন পর সে গর্ভবতী হল। নির্দিষ্ট সময়ে তার এক ছেলে হল। এরপর তার সমস্ত ছেলেমেয়ে বেঁচে থাকল এই ব্রতের কারনে

                                 - - -



শনিবার, ৩ জুলাই, ২০২১

একাদশী মাহাত্ম্য

( দেখুন - সূচিপত্র
কথাতেই আছে, 'ব্রতের মধ্যে একাদশী আর তীর্থের মধ্যে বারাণসী'। একাদশী পালন করলেই সব ব্রতের ফললাভ হয়। এখন আমরা জানব এই একাদশী ব্রত কি ও কেন। 
      চান্দ্রমাসের  শুক্ল ও কৃষ্ণ পকর  এ এগারোতম তিথি হল একাদশী।  উপবাস থেকে নিজের সৎপ্রবৃত্তিগুলোকে জাগিয়ে নিরন্তর ঈশ্বরের নাম মনন শ্রবণ ও কীর্তনের মাধ্যমে এই তিথি অতিবাহিত করতে হয়। 
    একাদশীর আরেক নাম হরি বাসর, হরিকথা  শ্রবণ মনন কীর্তনের দিন। কারণ এ তিথিতে ভগবান বিষ্ণু ভক্তের নিকটে থাকেন। একাদশী করলে যে কেবলমাত্র নিজের জীবনের সদগতি হবে তা নয়। একাদশীপালন কারি ব্যক্তির প্রয়াত পিতা-মাতা যদি নিজ কর্ম দোষে নরকবাসী হন, তবে সেই পুত্র ই একাদশী ব্রত পালন করে স্বীয় পিতা- মাতাকে নরক থেকে উদ্ধার করতে পারেন । 

               এই তিথিতে  সকল প্রকার ক্ষৌরকর্ম নিষিদ্ধ কারন একাদশীতে রক্তক্ষরণ বর্জনীয়। একাদশীতে পঞ্চ রবিশস্য বর্জন করত- ফল মূলাদি অনুকল্প গ্রহণের বিধান রয়েছে। দশমী বিদ্ধা একাদশীর দিন বাদ দিয়ে দ্বাদশী যুক্তা একাদশী ব্রত পালন করতে হয়। 

        পদ্মপুরাণে রয়েছে মহর্ষি জৈমিনী আর বেদব্যাসের কথোপকথনে একাদশীর প্রসঙ্গ। মহর্ষি জৈমিনি  মহর্ষি বেদব্যাসকে জিজ্ঞাসা করলেন, "হে মহর্ষি এই একাদশী তিথি কি? আর কেনই বা একাদশী ব্রত করতে হবে ? আর একাদশী ব্রত না করলেই কি ক্ষতি?" 
ব্যাসদেব বললেন, "হে জৈমিনী, সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান এই জগৎ সৃষ্টি করেন তখন মর্ত্যলোকবাসী মানুষদের অপকর্ম শাসনের জন্য একটি পাপপুরুষ নির্মাণ করলেন, সেই পাপপুরুষের অঙ্গণ্ডলি বিভিন্ন পাপ দিয়ে নির্মিত হয়, পাপপুরুষের মাথাটি ব্রহ্মহত্যা পাপ দিয়ে, চক্ষুদুটি মদ্যপান, মুখ স্বর্ণ অপহরণ, দুই কর্ণ গুরুপত্নী গমন, দুই নাসিকা স্ত্রীহত্যা, দুই বাহু গোহত্যা পাপ, গ্রীবা ধন অপহরণ, গলদেশ ভ্রুণহত্যা, বক্ষ পরস্ত্রী গমন, উদর আত্মীয়স্বজন বধ, নাভি শরণাগত বধ, কোমর আত্মশ্লাঘা, দুই ঊরু ণ্ডরুনিন্দা, শিশুকন্যা বিক্রি, মলদ্বার গুপ্তপ্রকাশের পাপ, দুই পা পিতৃহত্যা, শরীরের রোম সমস্ত উপপাতক পাপ দ্বারা ভয়ঙ্কর পাপপুরুষ নির্মিত করেন। তার শাসনে পাপী মানব জাতি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যায়। 
পাপপুরুষের ভয়ঙ্কর রূপ দর্শন করে ভগবান শ্রীবিষ্ণু মর্ত্যের মানব জাতির দুঃখ মোচন করবার কথা চিন্তা করতে লাগলেন।
 তখন যমরাজের অনুগ্রহে ভগবান শ্রীহরি সেই পাপাচারীদের সামনে একাদশী তিথি রূপে এক দেবীমুর্তিতে প্রকাশিত হয়ে সেই পাপীদেরকে একাদশী ব্রত আচরণ করান সেই একাদশী ব্রতের ফলে তারা সর্বপাপ মুক্ত হয়ে বৈকূণ্ঠ ধামে গমন করে। 
  তখন ভগবানের সৃষ্ট পাপ পুরুষ এসে শ্রীহরির কাছে  প্রার্থণা করে বলে, "হে ভগবান ! আমি আপনার প্রজা, আমাকে যারা আশ্রয় করে থাকে, তাদের কর্ম অনূযায়ী তাদের দুঃখ দান করাই আমার কাজ তার জন্য আপনি আমার সৃস্টি করেন,  কিন্তু  একাদশীর প্রভাবে আমি পাপীদের শাসন করতে পারছি না, বরং  নিজে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছি। হে ভগবান, যদি আপনার এই সৃষ্ট বিশ্বে ক্রীড়া করবার ইচ্ছা থাকে তবে, আমার দুঃখ দূর করুন,  আমি আপনার শরণাপন্ন।"

পাপপুরুষের প্রার্থনা শুনে ভগবান শ্রীহরি বললেন, "হে -পাপপুরুষ! তুমি দুঃখ কোরনা, যে দিবসে একাদশী তিথি পাপীদের উদ্ধার হেতু আবির্ভুত হবে, সে দিবসে তুমি  রবিশস্য মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করবে তা হলে আমার মুর্তি একাদশী তোমাকে বধ করতে পারবে না।"   
একাদশী বিষয়ে কতগুলো অনুপপত্তি-
 এক। সধবা নারী একাদশী পালন করতে পারে না  

  পত্যৌ জীবতি যা যোষিদুপবাসব্রতং চরেৎ। 
      আয়ুঃ সা হরতে ভর্ত্তুর্নরকঞ্চৈব গচ্ছতি।। 
                               (  বিষ্ণু সংহিতা ২৫-১৬)
অর্থাৎঃ- যে স্ত্রী স্বামী জীবিত থাকতে উপবাস ব্রতের আচরন করে, সে স্বামীর আয়ু হরণ ও নরক গমন করে। তাই স্বামী জীবিত থাকতে উপবাস বাঞ্ছনীয় নয়।  

দুই ।  সকলের জন্য এই একাদশী ব্রত পালনের কোন বাধ্য বাধকতার শাস্ত্রীয় তথ্য প্রমান নেই।

শাস্ত্রে বলা হয়েছে,  ত্রিসন্ধ্যাহ্নিক কৃত ব্রাহ্মণ, সন্ন্যাসী, ব্রক্ষ্মচারী, বিধবা, দীক্ষিতশিষ্য (শিষ্যা নয় ) এরা হিন্দুধর্মের ঐতিহ্য অনুযায়ী একাদশী তিথিতে ব্রতী হতে পারে।। 
তবে, 
উপবাসস্তথায়াসো বিত্তোৎসর্গস্তথা কলৌ।
ধর্ম্মো যথাভিরুচিতৈরনুষ্ঠানৈরনুষ্ঠিতঃ""।।  
        (ব্রহ্মপুরাণ ২৩০ অধ্যায়ে  শ্লোক ১৫)

       কলি যুগে  -উপবাস,আয়াস,ধন-দানাদি ধর্ম্মকর্ম্ম নিশ্চয় যথেচ্ছা রুপে অনুষ্ঠিত হতে থাকবে।

তিন। সধবা স্ত্রীলোকের উপবাসাদি ব্রত নাই।

এ প্রসঙ্গে  ভগবান ব্যাসদেব বলেছেন-
সধবানাং হি নারীণাংনেপবাসাদিকংব্রতম।
         (বৃহদ্ধর্ম্মপুরাণ, উত্তরখণ্ডম ৮ম অধ্যায় ৭নং শ্লোকে) 
অর্থাৎঃ- সধবা স্ত্রীলোকের উপবাসাদি ব্রত নাই।

চার। তাহলে সধবা স্ত্রীলোক একাদশী উপবাস ব্রত পালন করেন তবে কি হবে?

 এর উত্তরে অত্রিমুনি বলেছেন-
জীবদ্ভর্ত্তরি যা নারী উপোষ্য ব্রতচারিণী।
আয়ুষ্যং হরতে ভর্ত্তুঃ সা নারী নরকং ব্রজেৎ।।
                  (অত্রিসংহিতা ১৩৬নং শ্লোক।) 

অর্থাৎঃ- যে নারী স্বামী জীবিত থাকিতে উপবাস করিয়া ব্রত করে,সে নারী স্বামীর আয়ু হরণ করে ও নরকে গমন করেন।

এই বচন অনুসারে কোন হিন্দু সধবা নারী, একাদশী উপবাস ব্রত পালন করে স্বর্গে যাওয়া ত দুরের কথা, সাথে স্বামীর আয়ু হরণ কারিনী হন।

একাদশীতে নিষিদ্ধ পাঁচ প্রকার রবিশস্য :—

১। ধান জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – চাল,চিড়া, মুড়ি, সুজি, পায়েশ, খিচুড়ি, চালের পিঠে, খৈ ইত্যাদি

২। গম জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – আটা,ময়দা, সুজি ,  রুটি ,  বিস্কুট ,হরলিক্স ইত্যাদি ।

৩। যব বা ভূট্টা জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন — ছাতু , খই , রুটি ইত্যাদি ।

৪। ডাল জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন —

 মুগ, মাসকলাই , খেসারী , মসুরী, ছোলা অড়হর ,মটরশুটি, বরবঢী ও সিম ইত্যাদি ।

৫। সরিষার তেল , সয়াবিন তেল, তিল তেল ইত্যাদি । 

উপরোক্ত পঞ্চ রবিশস্য যেকোন একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয় ।

এছাড়াও  চা , কফি, ধুমপান, মদ্যপান, আমিষ আহার, পরনিন্দা,হিংসা, দেব-দ্বিজের প্রতি খারাপ ব্যবহার ও নিন্দা, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি একাদশীর উপবাস নষ্ট করে। 

বিভিন্ন একাদশী :-
এক সৌর বছরে মোট ছাব্বিশটি একাদশীতিথি আসে। 
সাধারণত বারোমাসে চব্বিশটি একাদশী। 
এইগুলি হচ্ছে-
১. উৎপন্না একাদশী  
  ২. মোক্ষদা একাদশী 
৩. সফলা একাদশী 
 ৪. পুত্রদা একাদশী 
৫. ষটতিলা একাদশী   
৬. জয় একাদশী 
৭. বিজয়া একাদশী     
৮. আমলকী একাদশী
৯. পাপমোচনী একাদশী
১০. কামদা একাদশী 
১১. বরুথিনী একাদশী
১২. মোহিনী একাদশী 
১৩. অপরা একাদশী 
১৪. নির্জলা একাদশী 
১৫. যোগিনী একাদশী 
১৬. শয়ন একাদশী 
১৭. কামিকা একাদশী 
১৮. পবিত্রা একাদশী
১৯. অন্নদা একাদশী
২০. পরিবর্তিনী বা পার্শ্ব একাদশী 
২১. ইন্দিরা একাদশী 
২২. পাশাঙ্কুশা একাদশী 
২৩. রমা একাদশী 
২৪. উত্থান একাদশী 
এছি  যে বৎসরে অধিকমাস বা পুরুষোত্তমমাস বা মলমাস থাকে, সেই বৎসর পদ্মিনীপরমা  নামে আরও দুটি একাদশীর আবির্ভাব হয়।  তাই একাদশী মোট  ।

শয়ন একাদশী ব্রতকথা :

যুধিষ্ঠির বললেন — ‘ হে কেশব ! আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি ? এর মহিমাই বা কি ? তা আমাকে কৃপাপূর্ব্বক বলুন ।’

শ্রীকৃষ্ণ বললেন , "হে মহারাজ, ব্রহ্মা এই একাদশী সম্পর্কে দেবর্ষি নারদকে যা বললেন আমি সেই আশ্চর্যজনক কথা আপনাকে বলছি শ্রবণ করুন।

সৃষ্টিকর্তা কমলযোনি ব্রহ্মা বললেন ," হে নারদ ! এ সংসারে একাদশীর মতো পবিত্র আর কোন ব্রত নেই । সকল পাপ বিনাশের জন্য এই বিষ্ণুব্রত পালন করা একান্ত আবশ্যক । যে ব্যক্তি এই প্রকার পবিত্র পাপনাশক এবং সকল অভিষ্ট প্রদাতা একাদশী ব্রত না জেনে করে তাকে নরকগামী হতে হয় । আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের এই একাদশী ‘ শয়নী ‘ নামে বিখ্যাত । শ্রীভগবান হৃষিকেশের জন্য এই ব্রত পালন করতে হয় । এই ব্রতের সমন্ধে এক মঙ্গলময় পৌরণিক কাহিনী আছে । আমি এখন তা বলছি ।

বহু বহু বছর পূর্বে সূর্যবংশে মান্ধাতা নামে একজন রাজর্ষি ছিলেন । তিনি ছিলেন সত্যপ্রতিজ্ঞ এবং প্রতাপশালী চক্রবর্তী রাজা। প্রজাদের তিনি নিজের সন্তানের মতো পালন করতেন । সেই রাজে্য কোন রকম দুঃখ , রোগ- ব্যাধি , দুর্ভিক্ষ , আতঙ্ক , খাদ্যভাব অথবা কোন অন্যায় আচরণ ছিল না । এইভাবে বহুদিন অতিবাহিত হলো । কিন্তু একসময় হঠাৎ দৈবদুর্বিপাকে ক্রমাগত তিনবছর সে রাজ্যে কোন বৃষ্টি হয় নি । দুর্ভিক্ষের ফলে সেখানে দেবতাদের উদ্দেশ্যে দান মন্ত্রের ‘ 'স্বাহা'  'স্বধা'র মতো  শব্দও বন্ধ হয়ে গেল । এমনকি বেদপাঠও ক্রমশ বন্ধ হল । তখন প্রজারা রাজার কাছে এসে বলতে লাগল — মহারাজ দয়া করে আমাদের কথা শুনুন । শাস্ত্রে জলকে নাল বলা হয় আর সেই জলে ভগবানের অয়ন অর্থাৎ নিবাস । তাই ভগবানের এক নাম নারায়ণ । মেঘরূপে ভগবান বিষ্ণু সর্বত্র বারিবর্ষণ করেন । সেই বৃষ্টি থেকে অন্ন এবং অন্ন খেয়ে প্রজাগণ জীবন ধারণ করেন । এখন সেই অন্নের অভাবে প্রজারা ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে । অতএব হে মহারাজ , আপনি এমন কোন উপায় অবলম্বন করুন যাতে আপনার রাজ্যের শান্তি এবং কল্যাণ সাধন হয় । রাজা মান্ধাতা বললেন – তোমরা ঠিকই বলেছ । অন্ন থেকে প্রজার উদ্ভব । অন্ন থেকেই প্রজার পালন । তাই অন্নের অভাবে প্রজারা বিনষ্ট হয় । আবার রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট হয় । আমি নিজের বুদ্ধিতে আমার নিজের কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছি না । তবুও প্রজাদের কল্যাণের জন্য আমি অাপ্রাণ চেষ্টা করব ।

তারপর রাজা ব্রহ্মাকে প্রণাম করে সৈন্যসহ বনে গমন করলেন । সেখানে প্রধান প্রধান ঋষিদের আশ্রমে ভ্রমন করলেন । এভাবে তিনি ব্রহ্মার পুত্র মহাতেজস্বী অঙ্গিরা ঋষির সাক্ষাৎ লাভ করলেন । তাঁকে দর্শনমাত্রই রাজা মহানন্দে ঋষির চরণ বন্দনা করলেন । মুনিবর তাকে আশীর্বাদ ও কুশল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন । রাজা তখন তার বনে আগমনের কারণ সবিস্তারে ঋষির কাছে জানালেন । ঋষি অঙ্গিরা কিছু সময় ধ্যানস্থ থাকার পর বলতে লাগলেন – ‘ হে রাজন ! এটি সত্যযুগ । এই যুগে সকললোক বেদ পরায়ণ এবং ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য তপস্যা করে না । এই নিয়ম থাকা সত্ত্বেও এব শুত্র রাজ্যে তপস্যা করছে । তার এই অকার্যের জন্যই রাজ্যের এই দুর্দশা । তাকে হত্যা করলেই সকল দোষ দূর হবে । রাজা বললেন – হে মুনিবর ! তপস্যাকারী নিরপরাধ ব্যক্তিকে আমি কিভাবে বধ করব ? আমার পক্ষে সহজসাধ্য অন্য কোন উপায় থাকলে আপনি দয়া করে আমাকে বলুন ।

তদুত্তরে মহর্ষি অঙ্গিরা বললেন – আপনি আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের শয়নী নামে প্রসিদ্ধা একাদশী ব্রত পালন করুন । এই ব্রতের প্রভাবে নিশ্চয়ই রাজ্যে বৃষ্টি হবে । এই একাদশী সর্বসিদ্ধি দাত্রী এবং সর্ব উপদ্রব নাশকারিনী । হে রাজন – প্রজা ও পরিবারবর্গ সহ আপনি এই ব্রত পালন করুন। মুনিবরের কথা শুনে রাজা নিজের প্রাসাদে ফিরে গেলেন । আষাঢ় মাস উপস্থিত হলে রাজ্যের সকল প্রজা রাজার সাথে এই একাদশী ব্রতের অনুষ্ঠান করলেন। ব্রত প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলো কিছুকালের মধ্যেই অন্নভাব দূর হল । ভগবান হৃষিকেশের কৃপায় প্রজাগণ সুখী হল । এ কারণে সুখ ও মুক্তি প্রদানকারী এই উত্তম ব্রত পালন করা সকলেই অবশ্য কর্তব্য । ভবিষোত্তরপুরানে যুধিষ্ঠির -শ্রীকৃষ্ণ তথা নারদ – ব্রহ্মা সংবাদ রূপে এই মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে ।

একাদশীর পারণ মন্ত্র - 

একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।

প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।


সোমবার, ২১ জুন, ২০২১

আপেল কি সত্যিই পড়েছিল ?

আপেল কি সত্যিই পড়েছিল ?
(দেখুন - সূচিপত্র
মহাকর্ষ আর গতিসূত্র নিয়ে আলোচনার সময় বিখ্যাত গণিতজ্ঞ স্যার আইজ্যাক নিউটনের নাম উঠে আসে। তিনি নাকি আপেল বাগানে আপেল পড়তে দেখে মহাকর্ষের কথা চিন্তা করেন। 
আবার গতিসূত্রও নাকি তার অবদান। এসব কি সত্যি নাকি হিন্দু জ্ঞান টুকে দিয়েছিলেন ? 
নিউটনের 1800 বছর পূর্বে ঋষি কণাদ তার বৈশেষিক দর্শনে বলেছেন Laws of Motion এর তিনটি সূত্র।

প্রথম সূত্র

वेगः निमित्तविशेषात कर्मणो जायते |

ইংরেজি : Change of motion is due to impressed force.
(The law stated that an object at rest tends to stay at rest and an object in motion tends to stay in motion with the same speed and in the same direction unless acted upon by an unbalanced force.)
বাংলা : বাহ্যিক বল প্রয়োগে বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন করতে বাধ্য না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থিরই থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সমবেগে অর্থাৎ সমদ্রুতিতে চলতে থাকবে।

দ্বিতীয় সূত্র

वेगः निमित्तापेक्षात कर्मणो जायते नियतदिक क्रियाप्रबन्धहेतु |

ইংরাজি : Change of motion is proportional to the impressed force and is in the direction of the force.
বাংলা: বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার তার উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ক্রিয়া করে।

তৃতীয় সূত্র

वेगः संयोगविशेषविरोधी |

ইংরাজি : Action and reaction are equal and opposite.
বাংলা: প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।
অর্থাৎ সূত্র একই আছে, কেবল ভাষা বদলেছে

মহাকর্ষ

এবার আসুন মহাকর্ষের ধারণা সম্পর্কে আলোচনায়। নিউটনের আপেল পড়ার কয়েক হাজার বছর পূর্বেই মহাকর্ষের ধারণা দিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থ ঋগ্বেদ।

সবিতা যন্ত্রৈঃ পৃথিবী মরভণাদস্কম্ভনে সবিতা দ্যামদৃংহৎ।
অশ্বমিবাধুক্ষদ্ধু নিমন্তরিক্ষমতূর্তে বদ্ধং সবিতা সমুদ্রম।। (ঋগ্বেদ ১০/১৪৯/১) 

অর্থাৎ : সূর্য্য রজ্জুবৎ আকর্ষণ দ্বারা পৃথিবীকে বাঁধিয়া রাখিয়াছে। নিরাধার আকাশে দ্যুলোকের অন্যান্য গ্রহকেও ইহা সুদৃঢ় রাখিয়াছে। অচ্ছেদ্য আকর্ষণ রর্জ্জুতে আবদ্ধ, গর্জনশীল গ্রহসমূহ নিরাধার আকাশে অশ্বের ন্যায় পরিভ্রমণ করিতেছে।
আবার 
মহাবিজ্ঞানী ভাস্করাচার্য্য (১১৫০ খ্রিঃ) তাঁর সিদ্ধান্ত শিরোমণি নামক জ্যোতিঃশাস্ত্রের গোলাধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন-
“আকৃষ্টি শক্তিশ্চ মহী তয়া যৎ স্বস্থং স্বাভিমুখী করোতি।
আকৃষ্যতে তৎ পততীব ভাতি সমে সমন্তাৎ কুবিয়ং প্রতীতিঃ।।”

অর্থাৎ : সর্ পদার্থের মধ্যে এক আকর্ষণ শক্তি বিদ্যমান আছে, যে শক্তি দ্বারা পৃথিবী আকাশস্থ পদার্থকে নিজের দিকে নিয়ে আসে। যাকে এ আকর্ষণ করে তা পতিত হল বলে মনে হয়।
সুতরাং বলাই যায় ইউরোপের বিজ্ঞানের বিজয়রথ তৈরি হয়েছিল বহুশতাব্দ সহস্রাব্দ পূর্বে ভারতে। 

সোমবার, ৩১ মে, ২০২১

অর্জুন কৃত দুর্গাস্তোত্রম (মহাভারতোক্ত)

-মহাভারতোক্ত  অর্জুন কৃত শ্রীশ্রীদুর্গা স্তোত্রম্ - 

( দেখুন - সূচিপত্র
শ্রীঅর্জুন উবাচ.....
নমস্তে সিদ্ধসেনানি আর্যে মন্দরবাসিনী।
কুমারি কালি কাপালি কপিলে কৃষ্ণপিঙ্গলে।। ১

ভদ্রকালি নমস্তুভ্যম্ মহাকালি নমোহস্তুতে।
চণ্ডি চণ্ডে নমস্তুভ্যম্ তারিণি বরবর্ণিনি।। ২

কাত্যায়নি মহাভাগে করালি বিজয়ে জয়ে।
শিখিপিচ্ছধ্বজধরে নানাভরণভূষিতে।। ৩

অটুটশূলপ্রহরণে খড়্গখেটকধারিণে।
গোপেন্দ্রস্যানুজে জ্যেষ্ঠে নন্দগোপকুলোদ্ভবে।। ৪

মহিষাসৃকপ্রিয়ে নিত্যে কৌশিকী পীতবাসিনী।
অট্টহাসে কোকমুখে নমোহস্তেহস্তু রণপ্রিয়ে।। ৫

উমে শাকম্ভরি শ্বেতে কৃষ্ণে কৈটভনাশিনি।
হিরণ্যাক্ষি বিরুপাক্ষি সুধুম্রাক্ষি নমোহস্তুতে।। ৬

বেদশ্রুতিমহাপুণ্যে ব্রহ্মণ্যে জাতবেদসি।
জম্বুকটকচৈত্যেষু নিত্যম্ সন্নিহিতালয়ে।। ৭

ত্বং ব্রহ্ম বিদ্যানাং মহানিদ্রা চ দেহিনাম্।
স্কন্দমাতর্ভগবতি দুর্গে কান্তারবাসিনী।। ৮

স্বাহাকারঃ স্বধা চৈব কলাকাষ্ঠা সরস্বতী।
সাবিত্রী বেদমাতা চ তথা বেদান্ত উচ্যতে।। ৯

স্তুতাসি ত্বং মহাদেবী বিশুদ্ধেনান্তরাত্মা।
জয়ো ভবতু মে নিত্যম্ ত্বৎপ্রসাদাৎ রণাজিরে।। ১০

কান্তারভয়দুর্গেষু ভক্তানাং চালকেষু চ।
নিত্যম্ বসসি পাতালে যুদ্ধে জয়সি দানবান্।। ১১

ত্বং জম্ভিনী মোহিনী চ মায়া হ্রীঃ শ্রীস্তথৈব চ।
সন্ধ্যা প্রভাবতী চৈব সাবিত্রী জননী তথা।। ১২

তুষ্টিঃ পুষ্টির্ধৃতিদীপ্তিশ্চন্দ্রাদিত্যবিবর্ধনী।
ভুতির্ভুতিমনাং সঙ্খ্যে বীক্ষসে সিদ্ধচারণৈঃ।।১৩

মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল, ২০২১

নর্মদাষ্টকম

 নর্মদাষ্টকম
শ্রীমদ ভগবদ্পাদ শঙ্করাচার্য্য রচিতম
(দেখুন - সূচিপত্র
সবিন্দু- সিন্ধুসুস্থলত্তরঙ্গভঙ্গ রঞ্জিতম্ ,
দ্বিষৎসু পাপজাতজাতকারিবারিসংযুতম্। 
কৃতান্তদূতকালভূত-ভীতিহারি বর্মদে, 
ত্বদীয় পাদ পঙ্কজং নমামি দেবী নর্মদে। । 

ত্বদম্বুলীন-দীনমীন-দিব্য-সম্প্রদায়কং ,
কলৌ মলৌঘভারহারি সর্ব্বতীর্থ নায়কম্। 
সুমচ্ছ কচ্ছ-নক্র-চক্র চক্র বাক শর্মদে, তদ্বীয় পাদ পঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে। । 

মহাগভীর-নীরপুর পাপধূত ভূতলং,
ধনৎসমস্ত -পাতকারি -দারিতাপদাচলম্। 
জগল্লয়ে মহাভয়ে মৃকণ্ডুসূনু হর্মদে, 
ত্বদীয় পাদ পঙ্কজং নমামি দেবী নর্মদে। । 

গতং তদৈব মে ভয়ং তদম্বু বীক্ষিতং যদা
মৃকণ্ডুসূনুশৌনকাসুরারি সেবি সর্বদা। 
পুনর্ভবাদ্ধিজন্মজং ভবাদ্ধি দুঃখ বর্মদে
ত্বদীয় পাদ পঙ্কজং নমামি দেবী নর্মদে। । 

অলক্ষ লক্ষকিন্নরামরাসুরাদি পূজিতং
সুলক্ষ-নীর-তীর-ধীরপক্ষি লক্ষ কূজিতম্। বশিষ্ঠ-শিষ্ঠ পিপ্পলাদ -কর্দমাদি শর্মদে,
ত্বদীয় পাদ পঙ্কজং নমামি দেবী নর্মদে। । 

সনৎকুমার-নাচিকেত -কশ্যপাত্রিষটপদৈ
ধৃতং স্বকীয় মানসেষু নারদাদিষটপদৈঃ,
রবিন্দুরণন্তিদেব-দেবরাজ কর্মশর্মদে
ত্বদীয় পাদ পঙ্কজং নমামি দেবী নর্মদে। । 

অলক্ষ-লক্ষ -লক্ষপাপ-লক্ষসারসায়ুধং
ততস্তু জীবজন্ত্ততন্ত্ত-ভুক্তি-মুক্তিদায়কম্। 
বিরণ্চি-বিষ্ণু-শঙ্কর স্বকীয় ধাম শর্মদে
ত্বদীয় পাদ পঙ্কজং নমামি দেবী নর্মদে। । 

অহোঅমৃতং স্বনং শ্রূতং মহেশকেশজাতটে
কিরাতসূতবাড়বেষু পন্ডিতে শঠে নঠে। 
দুরন্তপাপতাপহারি সর্বজন্তু শর্মদে,
ত্বদীয় পাদ পঙ্কজং নমামি দেবী নর্মদে। । 

ইদং তু নর্মদাষ্টকং ত্রিকালমেব য়ে সদা
পঠন্তি তে নিরন্তরং ন যান্তি দুর্গতিং কদা। 
সুলভ্য দেহদুর্লভং মহেশ ধাম গৌরবং
পুনর্ভবা নরা ন বৈ বিলোকয়ন্তি রৌরবং।।  

হর হর নর্মদে।  হর হর নর্মদে।  হর হর নর্মদে। 

ঔঁ জয় জয়  শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্য বিরচিতং নর্মদাষ্টক স্তোত্রং সম্পূর্ণম্।।