মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৮

অকাল বোধন

অকাল বোধন


“মৃগকর্কটসংক্রান্তিঃ দ্বে তূদগ্দক্ষিণায়নে।
বিষুবতী তুলামেষে গোলমধ্যে তথাপরাঃ ॥”

অর্থাৎ সুর্য ধনুরাশি ত্যাগ করে মকর রাশিতে সঞ্চার হওয়াকে উত্তরায়ণসংক্রান্তি, মিথুনরাশি হতে কর্কটরাশিতে সঞ্চার হওয়াকে দক্ষিণায়ন সংক্রান্তি, কন্যারাশি হতে তুলারাশিতে সঞ্চার হওয়াকে জলবিষুবসংক্রান্তি আর মীনরাশি হতে মেষরাশিতে সঞ্চার হওয়াকে মহাবিষুব সংক্রান্তি বলা হয়ে থাকে।  
                                                               উত্তরায়ণে দেবতারা জেগে থাকেন, - তখন তাদের দিন। দক্ষিণায়ণে রাত্রিকাল। শরৎ কালে দক্ষিণায়ণ, এসময় তাই দেবপুজায় দেবতাদের জাগাতে হয়। এই জাগানোই হল বোধন।  এজন্য বাসন্তী পূজায় বোধন করতে হয় না। মাঘ থেকে আষাঢ় ছ’মাস উত্তরায়ণ; এ সময় দেবতারা জাগ্রত। শরৎ ঋতু দক্ষিণায়নে পড়ে, তখন দেবী নিদ্রিতা, এজন্য শারদীয়া দুর্গাপূজায় দেবীর জাগরণের জন্য বোধন করতে হয়। অকাল বোধন মানে অকালে জাগরণ।হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথি অথবা শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে হিন্দু দেবী দুর্গার পূজারম্ভের প্রাক্কালে এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
                    ওঁ ঐং রাবণস্য বধার্থায় রামস্যানুগ্রহায় চ।
              অকালে ব্রহ্মণা বোধো দেব্যস্তয়ি কৃতঃ পুরা।।
                  অহমপাশ্বিনে ষষ্ঠ্যাং সায়াহ্নে বোধয়মি বৈ।
অর্থাৎ, রাবণকে নাশ করার জন্য শ্রীরামচন্দ্রকে অনুগ্রহ করার জন্য অকালে দেবীকে জাগরিত করা হয়েছিল।  কালিকা পুরাণ অনুসারে ব্রহ্মরাত্রিতে দেবীর বোধন করেছিলেন শ্রীরামচন্দ ।
                  চণ্ডীপাঠ করি রাম করিল উৎসব।
                   গীত নাট করে জয় দেয় কপি সব।।
                    সায়াহ্নকালেতে রাম করিল বোধন।
                     আমন্ত্রণ অভয়ার বিল্বাধিবাসন।। …
                    আচারেতে আরতি করিলা অধিবাস।
                    বান্ধিলা পত্রিকা নব বৃক্ষের বিলাস।।

ভগবান শ্রীরামচন্দ্র ১০৮ পদ্ম দ্বারা দেবীপূজার সঙ্কল্প করেন। হনুমান পদ্মগুলি সংগ্রহ করে আনেন । দেবী ভক্তের ভক্তি পরীক্ষা করার জন্য ছলনা করলেন। তিনি একটি পদ্ম লুকিয়ে রাখলেন। পূজার সময় একটি পদ্মের অভাব হওয়ায় শ্রীরামচন্দ্র বিপদে পড়লেন। পূজা পূর্ণাঙ্গ না হলে দেবী অসন্তুষ্ট হবেন, সঙ্কল্পও সিদ্ধ হবে না। শ্রীরামচন্দ্র পদ্মলোচন নামে অভিহিত। সেজন্য তিনি নিজের একটি চক্ষুু উৎপাটিত করে তা মায়ের শ্রীচরণে অঞ্জলি দেবেন- এরূপ সঙ্কল্প করলেন। তিনি ধনুর্বাণ হস্তে চক্ষু উৎপাটন করবার উপক্রম করতেই দেবী আবির্ভূত হয়ে তাঁকে অভীষ্ট বর প্রদান করলেন।

আদ্যাশক্তি যদিও স্বরূপত : নামরূপাতীতা, তথাপি তিনিই মায়ারূপ মহিমাদ্বারা সমস্ত বস্তুরূপে সম্ভূতা হন। শাস্ত্রে রয়েছে- ত্বমেব সূক্ষ্মা স্থূলা ত্বং ব্যক্তাব্যক্তস্বরূপিণী। নিরাকারাপি সাকারা কস্ত¡াং বেদিতুমর্হতি ॥ অর্থাৎ, তুমিই আদ্যাশক্তি ভগবতী সূক্ষ্মা ও স্থূলা, ব্যক্ত ও অব্যক্ত স্বরূপিণী, নিরাকারা হয়েও সাকারা, তোমাকে কে জানতে পারে? কল্পনাময়ীর সঙ্কল্পশক্তি অমোঘ। কেননা কল্পনাময়ী চিন্ময়ী। সঙ্কল্প মাত্রই ইনি অনন্তকোটি বিশ্ব প্রসব করে থাকেন। অবাধ সৃষ্টি করাই তাঁর স্বভাব। সর্বজীবের জননী তিনি।

শ্রী শ্রী চন্ডী অনুসারে , দুর্গম নামক অসুরকে বধ করে দেবী দুর্গা নামে খ্যাত হন । দুর্গমাসুর  জীবকে দুর্গতি প্রদান করত । সংসার পথে এ অসুরের নাম স্বার্থান্ধতা। আধ্যাত্মিক পথে এ অসুরের নাম অবিদ্যা। দুর্গম স্বার্থান্ধতায় পতিত হয়ে জীব অশেষ দুর্গতি ভোগ করে। লোককল্যাণ বুদ্ধি জাগ্রত করে মা দুর্গা রক্ষা করেন।আবার সনাতন ধর্মশাস্ত্রে ‘দুর্গা’ নামটির ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে ‘দ’ অক্ষর দৈত্যনাশক, ‘উ-কার’ বিঘ্ননাশক, ‘রেফ’ রোগনাশক, ‘গ’ অক্ষর পাপনাশক ও অ-কার ভয়-শত্রুনাশক। অর্থাৎ দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন তিনিই দুর্গা। বিপদনাশিনী দেবীমাতা দুর্গা। দুর্গা শব্দের অপরার্থ  দুর্জ্ঞেয়া। মায়ের তত্ত্ব দুরধিগম্য;--  আমাদের জ্ঞানবুদ্ধির সামর্থ্য নেই তাঁকে জানা। তিনি কৃপা করে জানালে তবে জানতে পারি। সকল বস্তুতে যিনি মাতৃরূপে বিরাজিতা তিনিই বিশ্বজননী মা দুর্গা। 
আবার এই অকাল বোধনের সাথে জড়িত শরৎবিষুব। বৈদিক যুগে এক সময় শরৎকালে বছর শুরু হতো।আর নতুন বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হতো রুদ্রযজ্ঞ  । তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে শরৎকেই অম্বিকা বলা হয়েছে। রুদ্রের বোন অম্বিকা। অম্বিকার সাহায্যে রুদ্র ধ্বংস করেন। তার সাহায্যে যাকে ধ্বংস করেন, তুষ্ট হয়ে তিনিই তাকে শান্ত করেন।তাই আচার্য মহীধর লিখেছেন, যিনি রুদ্র নামক নিষ্ঠুর দেবতা, তার বিরোধীকে হত্যা করতে ইচ্ছে করেন এবং অম্বিকার সাহায্যে সে ইচ্ছা পূরণ করেন।
শরৎকালে নানা রোগে দেশে মড়ক দেখা দিত। নতুন বছরের শুরুতে সবাই রুদ্রযজ্ঞের অনুষ্ঠান করতেন সব জীবের শান্তি কামনায়। তারা বিশ্বাস করতেন, অম্বিকাই শরৎরূপ ধারণ করে রুদ্রের ধ্বংস কাজে রোগ সৃষ্টির দ্বারা সাহায্য করে থাকেন। তাই রুদ্রযজ্ঞে রুদ্রের সঙ্গে অম্বিকাকেও খুশি করার আয়োজন করা হতো। এই অনুষ্ঠানই পরবর্তীতে দুর্গাপূজার রূপ নেয়। সংক্ষেপে দুর্গাপুজো সম্পর্কে বলা হয় - 

বোধয়েদ্বিল্বশাখায়াং ষষ্ঠ্যাং দেবীং ফলেষু চ।
সপ্তম্যাং বিল্বশাখাং তামাহৃত্য প্রতিপূজয়েৎ ॥
পুনঃ পূজাং তথাষ্ঠম্যাং বিশেষেণ সমাচরেৎ।
জাগরঞ্চ স্বয়ং কুর্য্যাদ্বলিদানং তথা নিশি ৷।
প্রভূতবলিদানন্ত নবম্যাং বিধিবচ্চরেৎ
ধ্যায়েদ্দশভুজাং দেবীং দুর্গা মন্ত্রেণ পূজয়েৎ।
বিসর্জ্জনং দশম্যান্ত কুর্য্যাদ্বৈ শারদোৎসবৈঃ ॥
                                 - কালিকা পুরাণম
অর্থাৎ  শারদ আশ্বিন মাসের মুখ্যচান্দ্র ষষ্ঠী তিথিতে দেবীকে ফলযুক্ত বিল্বশাখায় বোধন করতে হবে। সপ্তমী তিথিতে সেই বিল্বশাখা আহরন পুর্বক তাতে দেবীর পুজা করতে হবে। অষ্টমী তিথিতে বিশেষভাবে দেবীর পুজা করে ও রাত্রি জাগরণ পুর্বক বলিদান সহকারে দেবীর পুজা করতে হবে। নবমী তিথিতে দশভুজা দুর্গার ধ্যান সহকারে, বিবিধ উপচারে পুজা, বলিদান পুর্বক দেবীর নবমী পুজা বিহিত হোম সম্পন্ন করতে হবে।  দশমী তিথিতে শারদোৎসব বিহিত দেবীর বিসর্জ্জন করতে হবে।



সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮

Loonar dynasty - চন্দ্রবংশ

চন্দ্রবংশ
সূর্যবংশ<=এই পাতায়)
পুরাণ অনুসারে চন্দ্র বংশের বিবর্তন :-
ব্রহ্মা
=> ঋষি অত্রি। ইনার স্ত্রী অনসূয়া।
=> চন্দ্র
=> বুধ +ইলা ( নারী রুপ )
=> পুরুরবা => আয়ু, শ্রুতায়ু, সত্যায়ু, রয়, বিজয়, জয় ।
 আয়ু +  ইন্দুমতী
=> নহুষ,    ক্ষত্র, রজি, রভ,  অনেন ।
রজির 500 পুত্র।
রভ => রভস => গম্ভীর => অক্রীয় => ব্রহ্মভিট ।
অনেন => শুদ্ধ => শুচি => চিত্রক => সন্তরজস ।
ক্ষত্রবৃদ্ধ=> সুহোত্র => কস্য, কুশ, গ্রৎসমদ। কস্য => কাশী => রাষ্ট্র
=> দীর্ঘতমা => ধন্বন্তরি (আয়ুর্বেদাচার্য্য )
=> কেতুমান => ভীমরথ => দিবোদাস => দ্যুমত (প্রতর্দন/শত্রুজিত/রতিধ্বজ )
=> অলর্ক (66000 বছর ) ও অন্যান্য => সন্ততি => সুনিথা => নিকেতনা
=> ধর্মকেতু => সত্যকেতু => ধৃষ্টকেতু => সুকুমার => বীতিহোত্র
=> ভর্গ => ভর্গভূমি ।
কুশের => প্রতি => সঞ্জয় => জয় => হর্নবল => সহদেব => হীন
=> জয়সেন => সুকৃতি => জয়।
গ্রৎসমদার পুত্র সুনক
=> সুনকের পুত্র সৌনক ঋষি।
1. নহুষ 
=> যাতি, যযাতি, সংযাতি আয়াতি, বিয়াতি ও কৃতি।
   যযাতি + শুক্র কন্যা দেবযানী ও শর্মিষ্ঠা
=> যদু, তূর্বসু, দ্রহু, অনু,। যদু ও তূর্বসু শুক্র কন্যা দেবযানীর পুত্র।
এবং দ্রহু, অনু ও পুরু দৈত্যরাজ বৃষপর্বার কন্যা শর্মিষ্ঠার পুত্র।
তূর্বসুর ছয়পুরুষ (যবন বংশ ) ও দ্রুহুর নয় পুরুষ যারা( ত্বিপ্র বংশ ) ।
অনুর পুত্র স্ববর্ণ, চক্ষু ও প্রেন্সু। এরা ম্লেচ্ছ বংশ সৃষ্টি করে।
স্ববর্ণের চারপুরুষ পর মহামানা।
=> মহামানার পুত্র ঊষিনর ও তীক্ষু
তীক্ষুর একুশ পুরুষ।
ঊষিনরের শিবি ও আরো তিন পুত্র
=> শিবির চার পুত্র।
=================================
যদু বংশ
 যদুর চার পুত্র, - - সহস্রজিৎ, ক্রোষ্ট , নল ও রীপু।
সহস্রাজিত =>সত্যজিৎ => মহাভয়, রেণুহয় ও হৈহয়।
হৈহয় => ধর্ম  => নেত্র  => কুন্তী  => সোহানজী
 => মাহীস্মত  => দ্রুমদ ও ধানুকা
ধানুকা  => কার্ত্তাবীর্য , কৃতগ্নী, কৃত বর্মন, কৃতুযাস।
 =>কার্ত্তাবীর্য => কার্ত্তাবীর্য অর্জুন
=>  জয়ধ্বজ, শূরসেন, বৃষভ, মধু, ঊর্জিতা ও 995 জন পুত্র।
জয়ধ্বজের  => তালজঙ্ঘ  => বীতিহোত্র ও 99 পুত্র (এরা তালজঙ্ঘ ) ।
 মধুর পুত্র বৃষ্ণী।
ক্রোষ্টের  => বৃজিনাবৎ  => স্বহিতা  =>বিষাদগু  =>চিত্ররথ
 => শশবিন্দু  ( শশবিন্দুর দশহাজার স্ত্রী)  ও দশকোটি সন্তান।
=> পৃধুশ্রবা  => ধর্ম  => রুচক   =>জমখা  =>  বিদর্ভ
=> বিদর্ভের তিন পুত্র, কুশ, ক্রথ ও রোমপাদ
 => ভদ্রু  => কৃত  => ঊশিকা  => চেদি
=>  দমঘোষ  => শিশুপাল, ইনাকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বধ করেন।
ক্রথের উনিশ পুরুষ পর সত্ত্বত।
=> সত্ত্বতের সাত পুত্র । ভজমান, বৃষ্ণী, দেবব্রত, ভজি, দিব্য, অন্ধক ও মহাভোজ।
ভজমানের => নিমলোচি, কিঙ্কনা, ধৃষ্টি, সত্যজিৎ, সহস্রজিৎ ও আয়ুজিৎ ।
দেবব্রতের পুত্র বভ্রূ।
মহাভোজ হতে ভোজ বংশের উৎপত্তি।
================
অন্ধক বংশ
অন্ধক
 => কুকুর ভজমান, শুচি ও কম্বলবরীষ ।
=>কুকুর  => বাহনী  => বিলোমান  => কপোট-রোমান
 => অনু  => অন্ধক  => দুন্দুভি  => অবিদ্যতা  => পুনর্বসু
=> আহুক ও আহুকি।
=> আহুকের দুই পুত্র। দেবক ও উগ্রসেন।
 দেবকের চার পুত্র ও ছয় কণ্যা। দেবব্রত , উপদেব, সুদেব , দেববর্ধন, ধৃতিদেবা,
শান্তিদেবা, উপদেবা, শ্রীদেবা, সহদেবা ও দেবকী।
উগ্রসেনের আট পুত্র, পাঁচ কণ্যা ও কংস। কংস, সুনাম, ন্যাগ্রোধ,
কঙ্ক, শঙ্কু, সুহু, ধৃষ্টি তুষ্টিমত ও রাষ্ট্রপাল । পাঁচ কন্যা বসুদেবের স্ত্রী।
================================
বৃষ্ণী বংশ
বৃষ্ণী
=> সুমিত্র ও যুধাজিৎ।
যুধাজিৎ => নিঘ্ন, সিনি ও অনামিত্র।
নিঘ্নের দুই পুত্র। সত্রাজিৎ ও প্রসেন।
অনামিত্র  => সিনয় 2 ও বৃষ্ণী।
 সিনি 2 =>সাত্যক => যুযুধন্য => জয়  =>কুনি  =>যুগন্ধর।
বৃষ্ণীর  => সাফল্যক ও চিত্ররথ।
সাফল্যক  => অক্রূর ও অন্য বারো পুত্র ও এক কণ্যা সুচারু।
অক্রূরের => উপদেব ও দেবব্রত ।
চিত্ররথের   => পৃথু, বিদূরথ ও অন্যান্যরা।
বিদূরথ =>শূর => ভোজমৎ => দুই পুরুষ পর হৃদিক।
হৃদিকের তিন পুত্র। দেবমিধ, শতধনু ও কৃতবর্মা।
দেবমিধের পুত্র শূরসেন।
=> শূরসেনের বসুদেব, কুন্তী, ছয়টি কণ্যা, নয় পুত্র ।
বসুদেবের কৃষ্ণ, বলরাম, শুভদ্রা ও অন্যান্যরা।
কুন্তীর কর্ণ ও পাণ্ডবগন।
=======================
কৃষ্ণ
রুক্মিনী ( ভীস্মক কন্যা) => নয় পুত্র ও এক কন্যা। প্রদ্যুম্ন, সুচারু, হস্ব, চকভদ্র, সদস্ব,
                 চারুগুপ্ত, চারুক,কন্যা চারুহাসি।
সত্যভামা ( যাদব, শত্রাজিৎ কন্যা ) => সাত পুত্র । ভানু, ভীমরথ, খাদ, রোহিত, দীপ্তিমান,
                তমবন্ধ, জলন্ধম।
সূর্য্যা ( সূর্য কন্যা) =>
মন্ত্রবৃন্দা (মন্ত্রবৃন্দ কন্যা ) => তিন পুত্র। সুমিত্র, চারুমিত্র, মিত্রবৃন্দ।
সত্যা (সত্যজিৎ কন্যা ) =>
লক্ষ্মণা (রাজা মন্দ্রের কন্যা ) =>
জাম্বুবতী (জাম্বুবান কন্যা ) => পুত্র শাম্ব ।
ভদ্রা (রাজা ভদ্রসেন কন্যা ) =>
==========================
পুরু বংশ
পুরু (স্ত্রী কৌশল্যা ) => জনমেনজয় (স্ত্রী অনন্তা ) => প্রাচীনবৎ(স্ত্রী অস্মকী ) => প্রবির
=> মনস্য => চারুবেদা => সুধন্বা => ভোগ্য
=> সন্যাতি => অহন্যাতি => রুদেউস্ব
=> ঋতেয়ু, কাকস্য, স্থনদিলেয়ু, কৃতেয়ু, জলেয়ু, বন্যেয়ু,
          ব্রতেয়ু, সন্নিটেয়ু,ধর্মেয়ু, শতেয়ু।
ঋতেয়ু => রন্তিনভ => সুমতি, ধ্রুব, অপরিরথ।
অপরিরথ => কান্ব => মেধাতিথী => প্রস কান্ব ও অন্য ব্রাহ্মণগন।
সুমতি => রেভি => দুষ্মন্ত (স্ত্রী শকুন্তলা ) => ভরত
        => ভরদ্বাজ => মেতু => ভরত (2) => সহস্ত্র => হস্তি (হস্তিনাপুর নগরের প্রতিষ্ঠাতা )
        => যান => অক্ষয় => বিলক্ষ => সম্ভ => বিশ্বামিত্র
       => দেবরাত => ইনকা => অকসন => সমরন => কুরু (কুরু বংশ )।
       => বরক => শতগীর => জনু => সরাট => সরাভূম =>জাতুসোন
       => ওয়াদিকা => অন্য-ভয়ো => দলীপ  => প্রতীপ
      => দেবাপী(কুষ্ঠ হয়) , বহ্লীক(বহ্লীকের রাজা ) , শান্তনু
       শান্তনু => দেবব্রত (ভীস্ম ), চিত্রবীর্য্য, বিচিত্রবীর্য্য
বিচিত্রবীর্য্য => পাণ্ডু, ধৃতরাষ্ট্র, বিদূর ।
ধৃতরাষ্ট্র => শত পুত্র ও এক কন্যা দুঃশলা।
  পাণ্ডু      =>  যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন (কুন্তী হতে )
                     নকল ও সহদেব (মাদ্রী হতে )   ।
ঋক্ষ => সম্বরন (স্ত্রী সূর্য কন্যা তপতী ) => কুরু => পরিক্ষী, সুধন্ব, জন্হু, নিষধ ।
সুধন্ব => সুহোত্র => চ্যাবন => কৃতি => উপরিচর বসু
=> বৃহদ্রথ, কুশিম্ব, প্রতিগ্র, মাত্য, চেদীপ্য ও অন্যান্য ।
বৃহদ্রথ =>কুশাগ্র, জরাসন্ধ ।
জরাসন্ধ => সহদেব => সোমাপি => শ্রুতশ্রবা ।
কুশাগ্র => ঋষভ => সত্যহিতা => পুষ্পবৎ => জহু
জন্হু => সুরথ => বিদূরথ => সার্বভৌম => জয়সেন
=> রাধিক => আয়ুত্যু => অক্রোধন্ব => দেবতিথি
=> ঋক্ষ => দিলীপ => প্রতীপ => দেবাপী(প্রবজ্যা নেন ) , শান্তনু, বহ্লীক।
বহ্লীক => সোমদত্ত => ভূরিশ্রবা => সল


শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

করম ও জাওয়া পরব

                                      করম
                                   করম পূজা হল ভূঁইয়্যা, মাহাতো, হো, মহুলি, করবা, মুন্ডা প্রভৃতি উপজাতির এক অন্যতম পর্ব।  ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশীতে ‘করম’ দেবতার পূজা পালিত হয়। এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সমগ্র জঙ্গলমহল,মানভূম, ছোটনাগপুর এবং উড়িষ্যারও কোন কোন অঞ্চলে অর্থাৎ আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলেই এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ।  করম(কদম) গাছের ডাল, যা কিনা করম দেবতার প্রতীক, তাকেই পুজো করা হয়ে থাকে।  আদিবাসী যুবকেরা জঙ্গলে গিয়ে ফুল ও ফল সংগ্রহ করে। করম রাজা’ কে মাটিতে পুঁতে জল দিয়ে , বাতি জ্বালিয়ে, দুধ- ঘি দিয়ে পুজো করা হয়। পরের দিন করম ঠাকুরকে ফুল দিয়ে পুজো করে চাল এবং দই প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয়। প্রসাদ দেওয়ার নির্দিষ্ট নিয়মটি হল লাল ঝুড়িতে গম রেখে শসা ও হলুদ দেওয়া হয়। পুজোতে যারা উপোস করে থাকে পুজো শেষে তারা এগুলো খায়। আবার অনেকসময় একটি করম গাছকে ঘিরেও চলে পূজার প্রস্তুতি, নৃত্য-গীত। আদিবাসীদের জীবনের  সমস্ত কিছুকে ঘিরেই আছে নৃত্য ও গীত। তাই স্বাভাবিক ভাবেই করম পূজাও পালন করা হয় নৃত্য ও সঙ্গীতের মাধ্যমে।
করম পূজার সঙ্গেই জড়িয়ে আছে আরো একটি আদিবাসী পরব ‘জাওয়া’।   একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয় এই পরবটিও। এটি একেবারেই প্রজজন দেবীর পূজা। পালন করেন অবিবাহিতা মহিলারা বা কুমারী মেয়েরা।  তবে, কোন কোন স্থানে বিবাহিতা মহিলারাও সেখানে উপস্থিত হয়ে নির্দেশ দিয়ে থাকেন, যদিও পুজোর  অধিকারী কুমারী মেয়েরাই। জাওয়া পরবের কয়েকদিন আগে থেকে একটি বেতের টুকরি বা চুবড়ীতে বালি ভরে তার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয় শস্যের বীজ। নির্দিষ্ট সময়ে এবং পরিমাণে ওই বালিতে জল সিঞ্চন করা হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই চুবড়িটি ভরে ওঠে শস্য অঙ্কুরে। যার চুবড়ি যত বেশি শস্য অঙ্কুরে ভর্তি হয়, তার উর্বরতা তত বেশি মনে করা হয়। আদিমকালে যখন পৃথিবীতে মানুষ কম ছিল, তখন মানুষের দেবতার কাছে একটাই প্রার্থনা ছিল—সন্তানসন্ততির জন্ম হোক, শূন্য পৃথিবী পূর্ণ হোক। আদিমকাল থেকে চলে আসা এই প্রার্থনা আজও ততটাই মূল্যবান আদিবাসীদের কাছে, পিতামাতার কাছে। এই উৎসবটি তাই উর্বরতার দেবী বা প্রজনন দেবীর পূজা ।এরপর প্রতি সন্ধ্যায় কুমারী মেয়েরা সবাই মিলে ডালাটির চারপাশে ধরে গান গাইতে গাইতে উঠোনে নিয়ে গিয়ে পরস্পর হাত ধরাধরি করে নৃত্য পরিবেশন করে থাকে
ঈদ করম ল’জকাল্য ভাই আল্য লিতে ল
আস্য ভাই বস্য পিড়ায় বেউনী দলাই দিব।
                                 বিভিন্ন সূত্র হতে জানা যায় করম ঠাকুর সিং  ছিলেন মেবারের কাছে এক প্রদেশের রাজা। পার্শ্ববর্তী  শিরোহির রাজা  করম ঠাকুর কে বাংলাদেশ জয়ে সাহায্যের জন্য যুদ্ধে আমন্ত্রণ করেন। করম ঠাকুর সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সৈন্য-সামন্ত সহকারে যোগ দেন যুদ্ধে। কিন্তু জঙ্গলমহলের এই ঘন জঙ্গলে তাঁরা পথ হারান। কিছুতেই সেই বন জঙ্গলের দেশ থেকে আর ফিরে যেতে পারেন না। অনাহারে, অভাবে, কাতরতায় দিন কাটতে থাকে। বহুদিন পর বেঁচে থাকার জন্য তাঁরা চাষবাসের কাজ শুরু করেন। এর পর  সেইসব  রাজা, সৈন্য-সামন্তদের বংশধরেরা চাষী রূপেই জঙ্গলমহলে অবস্থান করতে থাকেন।  করম পূজার কিছু কিছু গানে  তাই মিশে আছে ধার, ইন্দোর, শিরোহি স্থানের নাম। ছৌ আর ঝুমুরের তালে তালে চলে নাচ-গান। আজ সেই রাজা করম সিং এর কাহিনিটি ধীরে ধীরে আদিবাসীদের উৎসব হিসাবেই মান্যতা পেয়েছে।
 এই পূজার পিছনের কাহিনীটি জেনে নেওয়া যাক :-
এক গ্রামে ছিল সাত ভাই। সাত ভাইয়ের সাত বৌ। তারা ছিল চাষী, চাষবাস করে  তাদের দিন কাটত।  সাতভাই ক্ষেতে কাজ করতে এলে তাদের বৌরা দুপুরে মাথায় করে বয়ে নিয়ে আসত দুপুরের খাবার। সাতভাইয়ের খাওয়া হয়ে গেলে তারা আবার ফিরে যেত নিজেদের বাড়িতে।  এমনি একদিন সাত ভাইয়ের বৌ দুপুরবেলায়  দেখা দিলনিয়ে এসেছে খাবার। কিন্তু সাত ভাই তা না খেয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে রইল। সময় যায়, সাতভাইয়ের আর খাবার সময় হয় না। সাত বৌ শেষে সেই খাবার মাথায় করে ফিরিয়ে নিয়ে গেল।  পরের দিন দুপুরে খাবার আর আসে না। দুপুর গেল, বিকেল হল, সন্ধ্যার সময় সাত ভাই ঘরে ফিরে এল। খিদে, তেষ্টায় তারা তখন কাতর। বাড়িতে এসে দ্যাখে, সেই সাত ভাইয়ের সাত বৌ বাড়ির উঠোনে এক করম গাছের নিচে নৃত্য-গীতে ব্যস্ত হয়ে আছে। তাদের আনন্দ দেখে সাত ভাই রাগে দুঃখে ভেঙ্গে ফেলল গাছ, তিরস্কার করল সাত বৌকে। তারপর থেকেই তাদের আর মনে আনন্দ নেই, ঘরে ভাত কাপড়ের অভাব দেখা দিল।, শেষে তাদের পারিবারিক অবস্থার হল অবনতি। তারা গরীব হয়ে গেল।অনেক দুঃখে এর প্রতিকার খুঁজতে লাগল সাত ভাই। এক ব্রাহ্মণ উপায় বললেন, করম পূজার। করম দেবতা শক্তি, যৌবন ও সমৃদ্ধির প্রতীক। তাঁর পূজা করলে সাত ভাই আবার তাদের কর্মক্ষমতা ফিরে পাবে,আবার চাষের জমিতে ফসল ফলবে, আবার সংসারে আগের অবস্থা ফিরে আসবে। কিন্তু রাজি হল না সাত ভাই।অনেক দুঃখ কষ্টের পর শেষে আর থাকতে না পেরে আয়োজন করল করম পূজার। কিন্তু করম গাছ তো তারা ভেঙ্গে ফেলেছে। ব্রাহ্মণ আবার উপায় বললেন। যে কোন জায়গা থেকে ভেঙ্গে নিয়ে আসতে হবে করম গাছের ডাল, বন থেকে সংগ্রহ করতে হবে ফুল, ফল। আর তাই দিয়ে পুজো দিতে হবে করম দেবতার। সাতভাই আর সাত বৌ মিলে পুজো দিল। ধীরে ধীরে আবার আগের অবস্থা তারা ফিরে পেল।
গোটা উত্সবের সময় জুড়ে ধামসা, মাদলের সঙ্গে নাচ গান আর আকণ্ঠ হাড়িয়া পান চলে।

সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বিশ্বকর্মা




দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা হলেন যন্ত্র ও শিল্পের দেবতা। পুরাণ মতে বিশ্বকর্মা  হলেন  বিশ্বের সকল কর্মের সম্পাদক।  বিশ্বকর্মা চতুর্ভুজ ও গজারূঢ়।বিষ্ণুপুরাণের মতে প্রভাসের ঔরসে বৃহস্পতির ভগিনীর গর্ভে বিশ্বকর্মার জন্ম হয়।  ইনি সর্বমেধ-যজ্ঞে নিজেকে নিজের কাছে বলি দেন। 

শুক্ল যজুর্বেদের অধ্যায় ১ মন্ত্র ৪ এ বলা হয়েছে - 

সা বিশ্বায়ুঃ, সা বিশ্বকর্মা, সা বিশ্বধায়াঃ।
ইন্দস্য ত্বা ভাগং সোমেনা-তনচ্মি।
বিষ্ণো হব্যং রক্ষ।

অর্থাৎ তিনি বিশ্যবায়ু অর্থাৎ জগতের প্রাণ বা সামান্যার্থে দীর্ঘায়ু, তিনি শিল্পবিদ্যার জনক এবং  সমগ্র ক্রিয়াকাণ্ড সম্পাদক, সর্ববিদ্যার প্রকাশক ও বিশ্বধারক।

ইনি একাধারে বিষ্ণু ও ইন্দ্রের সাথে সম্পৃক্ত।


                            তিনি শিল্পসমূহের প্রকাশক, অলঙ্কার শিল্পের স্রষ্টা, দেবতাদের গমনাগমনের জন্য বিমান নির্মাতা ইত্যাদি। অর্থাৎ শিল্পবিদ্যায় তাঁর একচ্ছত্র অধিকার। তাই যাঁরা শিল্পকর্মে পারদর্শিতা লাভ করতে চান, তাঁরা বিশ্বকর্মার অনুগ্রহ কামনা করেন। এঁর চক্ষু, মুখমণ্ডল, বাহু  ও পা সর্বদিক বিদ্যমান। বাহু ও পায়ের সাহায্যে তিনি স্বর্গ ও মর্ত্য নির্মাণ করেন। তিনি শিল্পসমূহের প্রকাশক ও অলঙ্কারের স্রষ্টা, দেবতাদের বিমান-নির্মাতা। এঁর কৃপায় মানুষ শিল্পপকলায় পারদর্শিতা লাভ করে। 
                                  রাবণের অপূর্ব শোভা ও সম্পদবিশিষ্ট লঙ্কা নগরীর নির্মান করেক স্বয়ং  বিশ্বকর্মা । তিনি উপবেদ, স্থাপত্যবেদ ও চতুঃষষ্টিকলারও প্রকাশক। দেবশিল্পিরূপে তিনি দেবপুরী, দেবাস্ত্র ইত্যাদিরও নির্মাতা।তিনি ইন্দ্র ,  যম ও বরুণের রাজসভারা নির্মাণ করেন।জনশ্রুতি আছে যে, পুরীর প্রসিদ্ধ জগন্নাথমূর্তিও বিশ্বকর্মা নির্মাণ করেন।

বিশ্বকর্মা রামের সেতু বন্ধনের জন্য নলকে সৃষ্টি করেন। পুরাণ অনুসারে তিনি ত্বষ্টার শক্তি আত্মীভূত করেন বলে তাকে ত্বষ্টা ও বলা হয়। বিশ্বকর্মার কন্যার নাম সংজ্ঞা । তিনি এই কন্যাকে সুর্যের সাথে বিবাহ দেন। সংজ্ঞা সুর্যের প্রখর তাপ সহ্য করতে না পারায়, ইনি সুর্যকে শানচক্রে স্থাপন করে তাঁর উজ্জ্বলতার এক অষ্টমাংশ কেটে ফেলেন। এই কর্তিত অংশের  দ্বারা তিনি  বিষ্ণুর সুদর্শনচক্র, শিবের ত্রিশূল, কুবেরের  অস্ত্র, কার্তিকেয়ের শক্তি ও অন্যান্য দেবতাদের অস্ত্রশস্ত্রাদি নির্মাণ করেন।
    বিশ্বকর্মার প্রনাম মন্ত্র :-
                  দংশপালঃ মহাবীরঃ সুচিত্রঃ কর্মকারকঃ।                        বিশ্বকৃৎ বিশ্বধৃকতঞ্চ বাসনামানো দণ্ডধৃক।।
                  ওঁ বিশ্বকর্মণে নমঃ।
                      
                       হভাদ্রমাসের সংক্রান্তিতে কলকারখানায় বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে বিশ্বকর্মার পূজা অনুষ্ঠিত হয়।এইদিনে সমস্ত যানবাহন ও যন্ত্রাদি বিশ্বকর্মা রুপে পুজিত হয়। দুপুরে মাংস-ভাত খেয়ে বিকালে ঘুড়ি ওড়ায় আপামর বাঙালি। 

  প্রনাম মন্ত্র 
                    দেবশিল্পী মহাভাগ দেবানাং কার্য্যসাধক।  
                     বিশ্বকর্মা নমস্তুভ্যং  সর্বাভীষ্টপ্রদায়ক।।

বিশ্বকর্মার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র —

ফুলচন্দন দূর্বা তুলসী পাতা বেলপাতা হাতে করে নিয়ে করজোরে নিচের মন্ত্রগুলি পাঠ করবেন।

দেবশিল্পীন্ মহাভাগ দেবানাং কার্যসাধকঃ। পূজাং গৃহাণ বিধিবৎ কল্যাণং কুরু মে সদা৷৷

প্রনাম করে বিশ্বকর্মার চরণে বা ঘটে বিশ্বকর্মার পুষ্পাঞ্জলি দিবেন, তারপর আবার ফুলচন্দন দূর্বা তুলসী পাতা বেলপাতা হাতে করে নিয়ে হাতজোড় করে দ্বিতীয় মন্ত্রটি পাঠ করবেন।

আয়ুৰ্যশঃ বলং দেহি শিল্পে দেহি শুভাং মতি। ধনং দেহি যশো দেহি বিশ্বকৰ্ম্মণ প্রসীদ মে৷৷

আবার প্রনাম করে বিশ্বকর্মার চরণে বা ঘটে পুষ্পাঞ্জলি দিবেন, তারপর আবার ফুলচন্দন দূর্বা তুলসী পাতা বেলপাতা হাতে করে নিয়ে হাতজোড় করে তৃতীয় মন্ত্রটি পাঠ করবেন।

শিল্পাচার্য্যং নমস্তুভ্যং নানালঙ্কার ভূষিতম্। মম বিঘ্নবিনাশায় কল্যাণং কুরু মে সদা ৷৷

এইভাবে বিশ্বকর্মার চরণে বা ঘটে তিনবার পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করবেন এবং তারপর ভগবান বিশ্বকর্মার প্রনাম মন্ত্র পাঠ পূর্বক প্রণাম করবেন।


বিশ্বকর্মার ব্রতকথা :-
কাশী শহরে একজন সুত ছিলেন। তিনি রথের সাহায্যে মানুষকে এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতেন। ফলে তাকে এক দেশ হতে অন্য দেশের ভ্রমন করতে হতো। সংসার চালিনোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হতো তাকে। কিন্তু এই কঠোর পরিশ্রম করা সত্ত্বেও তাঁর এবং পরিবারে দারিদ্রতা যেন কাটতেই চাইত না। মাসের পর মাস পরিশ্রম করেও দিনের আহার ছাড়া অতিরিক্ত ধন সম্পত্তি সঞ্চয় হত না।

অন্যদিকে তার ঘর ছিল শূন্য। এত বছরের বৈবাহিক জীবনে সন্তানসুখ প্রাপ্তি ঘটেনথা তাদের। ফলে তার ও তার স্ত্রীর মনে সুখ ছিল না মোটেও। আর এই সন্তান প্রাপ্তির আশাতে দুজনে বিভিন্ন তীর্থস্থানে তীর্থস্থানে গিয়ে মানত উপবাস করতেন। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। 

একদিন এভাবেই এক তীর্থে এক সাধুর সাথে দেখা হয়। সেই সাধু তাদের ভাদ্রমাসের সংক্রান্তি পালন করার কথা বলেন। বলেন সেদিনে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার পূজো করার কথা। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সন্তান প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক সমস্যাও দূরীভূত হবে। বাবা বিশ্বকর্মার কৃপায় সন্তান প্রাপ্তি তো হবেই সাথে ধন সম্পদ ও শ্রী বৃদ্ধি পাবে। 

এরপর সেই সুত স্বামী স্ত্রী দুজনায় মিলিতভাবে খুব ধুমধাম সহকারে ভাদ্র সংক্রান্তের দিন বাবা বিশ্বকর্মার পূজা করলেন। অল্প দিনের মধ্যেই তাদের সংসারের সমস্ত দারিদ্রতা দূর হলো। রথ চালানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজের একটি কারখানাও খুললেন রথচালক। এবং যথাসময়ে তাদের সংসারে একটি সুন্দর ফুটফুটে পুত্র সন্তান এল। 

এরপর থেকেই যন্ত্র যানবাহন পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা তাদের ব্যবসা এবং কর্মস্থলে বিশ্বকর্মা দেবের কৃপাপ্রাপ্তির আশাতে নিয়মিত প্রত্যেক বছর বিশ্বকর্মা পূজার আয়োজন করেন। এইভাবে বিশ্বকর্মা পূজার প্রচলন হয়।




রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

Bhadu - ভাদু

ভাদু

ভাদু গান  ( ক্লিক করুন )
           
                                                                          ভাদু  হল fertility cult বা উর্বরতার প্রতীক রুপে পালিত একটি  লোক উৎসব। বহুকাল আগে থেকেই রাঢ়বঙ্গের পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া প্রভৃতি অঞ্চলে সমগ্র ভাদ্র মাস জুড়ে এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে।
মানভূমের গড় পঞ্চকোট এর কাশীপুর রাজ্যের রাজকন্যা ভাদু বা ভদ্রেশ্বরীর  কাহিনী থেকে ভাদু উৎসবের উদ্ভব। বিবাহের রাত্রে বরের ডাকাতের হাতে মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় রাজকন্যা ভাদু আত্মহত্যা করেন। এই শোকাবহ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজকন্যার স্মৃতিকে অমর করে রাখার উদ্দেশ্যেই ভাদু উৎসব পালন প্রচলিত হয়।
লোককথা মতে, পুরুলিয়ার কাশিপুর অঞ্চলের পঞ্চকোট রাজপরিবারের মহারাজ নীলমণি সিং দেও।  তার কন্যা ভদ্রাবতী ভাদু। তাদের পাশের গ্রামের অঞ্জনকুমার নামে এক যুবকের সাথে গড়ে উঠল ভাদুর প্রেমের সম্পর্ক। দুজনে দুজনকে চোখে হারায়। ভদ্রাবতী গান গায় , অঞ্জনকুমার সেই গানের সুরে বাঁশি বাজায়। রাজা তার কন্যাকে উচ্চ বংশীয় কোন পাত্রের সাথে বিয়ে দিতে অঞ্জনকুমারকে বন্দী করে  করে রাখলেন । মনের দুঃখে ভাদু তার দুই সখিকে নিয়ে সারা রাজ্যে গান গেয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। সারাদিন সারারাত গান গেয়ে খুঁজে বেড়ায় তার প্রাণাধিক অঞ্জনকুমারকে। যদি তার গান শুনে একবার সে ছুটে আসে। কিন্তু হায়! অঞ্জনকুমার আর আসে না। রাজা নিরুপায় হয়ে যখন অঞ্জনকুমারকে মুক্তি দিলেন তখন ভদ্রাবতী আর নেই। শুধু রাজ্যের মানুষের  মনে সে রয়ে গেছে ভাদু হয়ে। আর তার গান লোকমুখে হয়ে গেছে ভাদু-গান।
                                             অন্য মতে রাজা নীলমণি সিং দেও-এর তৃতীয়া কন্যা ছিলেন ভদ্রাবতী। বিয়ে করতে আসার পথে ভদ্রাবতীর হবু স্বামী ও বরযাত্রীরা ডাকাত দলের কবলে পড়ে ও নিহত হয়। লগ্নভ্রষ্টা হওয়ার ভয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন রাজকুমারী ভদ্রাবতী।
                                                  আবার বীরভূমের প্রচলিত লোক গাথা হল ভদ্রাবতী হেতমপুরের রাজকন্যা। বর্ধমানের রাজপুত্রের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ে করতে আসার পথে ইলামবাজারের কাছে অবস্থিত চৌপারির শালবনে ডাকাতের আক্রমণে রাজপুত্রের মৃত্যু হলে ভদ্রাবতী রাজপুত্রের চিতার আগুনে প্রাণ বিসর্জন দেন।
                                                  কাহিনী যাই হোক, ভদ্রাবতীকে মানুষের মনে চিরস্মরনীয় করে রাখার জন্য রাজা নীলমণি সিং দেও তাঁর রাজ্যে ভাদু পুজা ও ভাদু-গানের প্রচলন করেন।ভাদু উৎসবে পূজারীরা ভদ্রেশ্বরীর একটি মূর্তি তৈরি করে এবং সারা মাস ধরে তার সম্মুখে নৃত্যগীত পরিবেশন করে। ভদ্রেশ্বরী কখনও কন্যা আবার কখনও জননীরূপেও পূজিত হন। পূর্বে ভাদুর কোন মূর্তি ছিল না। একটি পাত্রে ফুল বা গোবর রেখে তার উপর ধান ছড়িয়ে ভাদুর রূপ কল্পনা করা হত। পরবর্তী কালে ধীরে ধীরে মূর্তির প্রচলন ঘটে। সাধারণত ভাদু মুর্তি, হাঁস বা ময়ূর বা পদ্মের উপর উপবিষ্টা। গায়ের বর্ণ হলুদ। আবার কোথাও কোথাও হালকা গোলাপী বর্ণও হয়ে থাকে। মাথায় মুকুট, হাতে পদ্মফুল, গলায় পদ্মফুলের মালা ও হাতের তালুতে আলপনা থাকে। কখনও মূর্তির কোলে কৃষ্ণ মূর্তিও থাকে। ‘ভাদু ভাসান’ পর্ব অত্যন্ত বিষাদময়। ভাদ্র-সংক্রান্তিতে উপাসকরা মূর্তিসহ নদীর তীরে সমবেত হয়ে মূর্তি বিসর্জন দেয়।

                                                   পঞ্চকোটের  ধ্রুবেশ্বর লাল, প্রকৃতীশ্বর লাল ও রাজেন্দ্র নারায়ণ সিং দেও 'দরবারী ভাদু' নামক ঘরানার সৃষ্টিকর্তা।পেশাদার নারীশিল্পী এবং সাধারণ সঙ্গীতশিল্পী উভয়েই গান পরিবেশনে অংশগ্রহণ করে। এ উৎসবে সমগ্র এলাকাবাসী স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে এবং পুরো অঞ্চল জুড়ে মেলা,  লোকসংস্কৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠানমালা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। এই বিবাহ-প্রধান গান ভাদু উৎসবের মূল আকর্ষণ; এর কারণ হলো কুমারী ভাদুর স্মৃতি রোমন্থন করা। তবে মানুষের মুখে মুখে ফেরা ভাদু-গান, লোকসঙ্গীত হিসাবেই বেশী জনপ্রিয়তা পেয়েছে।গৃহনারীদের দৈনন্দিন জীবনের কাহিনী এই গান গুলির প্রাধান উপজীব্য। এছাড়া চার লাইনের ছড়া বা চুটকি জাতীয় ভাদু গানগুলিতে সমাজ জীবনের বিভিন্ন অসঙ্গতীর চিত্র সরস ভঙ্গীতে প্রকাশ করা হয়।