শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শ্রীশঙ্করাচার্যের গণেশভুজঙ্গ-স্তোত্রম্

শ্রীশঙ্করাচার্যের গণেশভুজঙ্গ-স্তোত্রম্

রণৎ-ক্ষুদ্র-ঘণ্টা-নিনাদাভিরামং
চলৎ-তাণ্ডবোদ্দণ্ডবৎ পদ্মতালম্।
লসৎ-তুন্দিলাঙ্গোপরি-ব্যাল-হারং 
গণাধীশমীশানসূনুং তমীড়ে ॥১

যাঁর অঙ্গে মুখরিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘণ্টিকানিনাদ মনোরম ধ্বনির সৃষ্টি করছে। যিনি উদ্দণ্ড তাণ্ডবনৃত্য সঞ্চালনে করপদ্মে তাল প্রদান করছেন, যাঁর দীপ্যমান অঙ্গে সর্পের হার বিরাজমান; সেই ঈশানতনয় গণপতিদেবকে স্তব করি।

ধ্বনিধ্বংসবীণালয়োল্লাসি-বক্ত্রং
স্ফুরচ্ছুণ্ডদণ্ডোল্লসদ্ববীজপূরম।
গলদ্দপসৌগন্ধ্যলোলালিমালং
গণাধীশমীশানসূনুং তমীড়ে ॥২

"যাঁর মুখের উচ্চারিত শব্দে বীণাধ্বনিও বিড়ম্বিত হচ্ছে, যাঁর বদনমণ্ডল উল্লসিত, যিনি মনোহর শুণ্ডদণ্ডে বীজপূর ধারণপূর্ব্বক শোভা পাইতেছেন, গণ্ডদেশ হতে যাঁর ক্ষরিত বারির সৌগন্ধে ভ্রমরকুল চঞ্চলভাবে পরিভ্রমণ করছে, সেই ঈশানতনয় গণপতিদেবকে স্তব করি।

চকাসজ্জবারক্তরক্তপ্রসূন- প্রবালপ্রভাতারুণজ্যোতিরেকম্।
প্রলম্বোদরং বক্রতুণ্ডৈকদন্তং
গণাধীশমীশানসূনুং তমীড়ে ॥৩

"প্রফুল্ল জবাফুলের মত যাঁর কান্তি রক্তবর্ণ; যিনি রক্তপুষ্প, প্রবাল ও প্রাতঃকালীন অরুণের ন্যায় অদ্বিতীয় জ্যোতিঃস্বরূপ, যিনি লম্বোদর, বক্রতুণ্ড এবং একদন্ত; সেই ঈশানতনয় গণপতিদেবকে স্তব করি।"

বিচিত্রস্ফুদ্রত্নমালাকিরীটং
কিরীটোল্লসচ্চন্দ্ররেখাবিভূষম্।
বিভূষৈকভূষং ভবধ্বংসহেতুং 
গণাধীশমীশানসূনুং তমীড়ে ॥৪

"যিনি মস্তকে বিচিত্র জ্যোতির্ময়ী রত্নমালা ও মুকুট ধারণ করে আছেন, যাঁর শীর্ষদেশে দেদীপ্যমান শশিকলা বিভূষণরূপে সুশোভিত, যিনি সৌন্দর্যবর্ধক অলংকারেরও অলংকারস্বরূপ, যিনি জীবকে সংসারবন্ধন থেকে মুক্ত করেন; সেই ঈশানতনয় গণপতিদেবকে স্তব করি।

উদঞ্চভুজাবল্লরীদৃশ্যমূলো-
চলদ্ ভূলতাবিভ্রমভ্রাজিতাক্ষম্।
মরুৎসুন্দরীচামরৈঃ সেব্যমানং 
গণাধীশমীশানসূনুং তমীড়ে ॥৫

" যাঁর বাহুলতা ঊর্দ্ধে উত্তোলিত করলে বোধ হয় যেন, চঞ্চল মহীলতা ভ্রমণ করছে। চামরবীজন দ্বারা সুররমণীগণ-সেবিত; সেই ঈশানতনয় গণপতিদেবকে স্তব করি।" 

স্ফূরন্নিষ্ঠুরালোলপিঙ্গাক্ষিতারং
কৃপাকোমলোদারলীলাবতারম্।
কলাবিন্দুগং গীয়তে যোগিবৰ্য্যৈ 
 গণাধীশমীশানসূনুং তমীড়ে ॥ ৬ 

"যাঁর চোখের তারকা জ্যোতির্বিমণ্ডিত, কঠোর, চপল ও পিঙ্গবর্ণ; যিনি কৃপা, কোমলতা ও ঔদার্য্যের লীলাবতারস্বরূপ। যোগিশ্রেষ্ঠগণ যাঁকে সকল কলাবিদ্যা, বিভূতি ও মুক্তির লক্ষ্যবিন্দু বলে বর্ণনা করেন; সেই ঈশানতনয় গণপতিদেবকে স্তব করি।"

যমেকাক্ষরং নিৰ্মলং নির্বিকল্পং গুণাতীতমানন্দমাকারশূন্যম্।
পরং পারমোঙ্কারমাম্নায়গর্ভং
বদন্তি প্রগলভং পুরাণং তমীড়ে॥৭

"যাঁকে একাক্ষর, নির্মল, নির্বিকল্প, ত্রিগুণের অতীত, আনন্দময়, নিরাকার, অনন্ত, পরিত্রাতা, প্রণবস্বরূপ, বেদগর্ভ এবং শাশ্বত পুরাতন পুরুষ বলে মুনিগণ মুক্তির আত্মবিশ্বাস সহকারে বর্ণনা করেন; সেই গণপতিদেবকে স্তব করি।"

চিদানন্দসান্দ্রায় শান্তায় তুভ্যং
নমো বিশ্বকর্ত্রে চ হর্ত্রে চ তুভ্যম্।
নমোঽনন্তলীলায় কৈবল্যভাসে 
নমো বিশ্ববীজ প্রসীদীশসূনো ॥৮

"হে জগৎকারণ! তুমি চিদানন্দঘন ও শান্তমূর্ত্তি; তোমাকে প্রণাম করি। তুমি বিশ্বচরাচরের কর্তা ও হর্ত্তা; তোমাকে প্রণাম করি।তুমি অনন্ত লীলাময়, কৈবল্যস্বরূপ, তোমাকে প্রণাম করি। হে শিবতনয়, আমার প্রতি প্রসন্ন হও।"

ইমং সুস্তবং প্রাতরুথায় ভক্ত্যা 
পঠেদ্‌যস্তু মর্ত্যো লভেৎ সর্বকামান। 
গণেশপ্রসাদেন সিদ্ধন্তি বাচো
গণেশে বিভৌ দুর্লভং কিং প্রসন্নে ॥৯
ইতি গণেশভুজঙ্গপ্রয়াতস্তোত্রং সম্পূর্ণম্।

" যে ব্যক্তি প্রভাতে ঘুম থেকে উঠে অত্যন্ত ভক্তিসহকারে এই উত্তমস্তব পাঠ করে, জগতে তাঁর সর্ব প্রকার প্রার্থিত অভীষ্ট লাভ হয়। ভগবান গণেশের কৃপায় তাঁর বাক্যসিদ্ধি লাভ হয়। পরমেশ্বর গণেশ প্রসন্ন হলে, জগতে কোন কিছুই অপ্রাপ্য থাকে না; সকলই লাভ হয়।

সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কুশোৎপাটিনী অমাবস্যা

                      কুশোৎপাটিনী অমাবস্যা

ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যাকে কুশোৎপাটিনী বা কুশগ্রহণী অমাবস্যা বলে। এই অমাবস্যাকে পিঠোরা অমাবস্যাও বলে কারণ এদিন পিতৃগণ পৃথিবীর উদ্দেশ্যে পিতৃলোক হতে বের হন। তবে এই অমাবস্যা কখনোই কৌশিকী বা কৌষিকী অমাবস্যা নয়। যদিও কুশ সম্বন্ধীয় বলে কৌশিকী শব্দটা কিছুটা কাছাকাছি।

এই দিনে ব্রাহ্মণগণ কুশ সম্বৎসরের পুজোর জন্য কুশ তোলেন। এই দিনে কুশ তুললে তা বারো বৎসর পর্যন্ত বাসি হয় না। অন্যথায় অমাবস্যায় তোলা কুশ একমাস এবং বাকি দিনে তোলা কুশ একদিন পর বাসি হয়ে যায়।
শাস্ত্রানুসারে কুশের অগ্রভাগে শিব, মধ্যে বিষ্ণু ও মূলে ব্রহ্মার নিবাস। তাই কুশ পিতৃকার্য হতে বিবাহাদি সব কাজে ব্যবহৃত হয়।

তিথিতত্ত্বমে  মরীচি বচনে আছে - 

মাসে নভস্যামাবস্যা তস্যাং দর্ভচয়ো মতঃ।
অযাতযামাস্তে দর্ভা বিনিযোজ্যাঃ পুনঃ পুনঃ।।

তাৎপর্য, সৌর ভাদ্রমাসের অমাবস্যাতে কুশ কেটে সঞ্চয় করে রাখবে। সেই সকল কুশ বাসি হয়না। সেগুলিকে বারেবার ব্যবহার করা যায়। 

এসময় শিবার্চনার বিধি আছে। লিঙ্গপুরণ অনুসারে সূর্য যখন সিংহরাশিতে অবস্থান করেন সেই কৃষ্ণপক্ষীয় চতুর্দশী সেই তিথিতে যে শিবার্চ্চন করবে, তাকে কখনো নরকে পতিত হতে হয়না৷

সিংহরাশি গতে ভানৌ কৃষ্ণা যা চ চতুর্দ্দশী৷
মামর্চ্চয়ন্তি তত্রন্তি নরকং ন ব্রজন্তি তে৷৷


মৎস্যপুরাণ অনুসারে ভগবান বিষ্ণু যখন বরাহ অবতার ধারন করেন তখন তার শরীরের রোম পৃথিবীর উপর ঝরে পড়লে তা থেকে কুশের উৎপত্তি হয়।
কুশ দশ প্রকার।

কুশাঃ কাশা যবা দূর্বা উশীরাচ্ছ সকুন্দকাঃ।
গোধূমা ব্রাহ্ময়ো মৌঞ্জা দশ দর্ভ সবল্বজাঃ।।

কুশ উত্তোলনের জন্য প্রাতঃকালই শ্রেষ্ঠ। এই অমাবস্যার দিন উত্তরমুখে বসে নিম্নের মন্ত্র পড়ে কুশ উত্তোলন করতে হবে।

বিরিঞ্চিনা সহোৎপন্ন পরমেষ্ঠিন্নিসর্গজ।
নুদ সর্বাণি পাপানি দর্ভ স্বস্তিকরো ভব।।

বা ' ॐ হুং ফট্ স্বাহা' ( ব্রাহ্মণপক্ষে ) 

তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কুশের অগ্রভাগ ছেঁড়া না হয়। এবং কুশকে কোনও চাকু বা ছুরি দিয়ে কাটা যাবে না, হাত দিয়ে মূলসহ উৎপাটন করতে হবে।