শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০২২

মৃতের দোষ ও ত্রিপুষ্কর কি

 মৃতের দোষ ও তার খন্ডন :
       এ জগতে সবকিছুই অনিশ্চিত। যা নিশ্চিত তা হল কর্মফল। কর্মফল হতে রেহাই নেই। এ জগতের পাপ এ জগতে ও পরজগতে ভোগ করতে হবে। নশ্বর এই পঞ্চভৌতিক দেহ এ জন্মের ও গতজন্মের প্রারব্ধ ভোগ করে। বাকিটুকু ভোগ করে যাতনাদেহ ও পরজন্মের পঞ্চভৌতিক দেহ। আর এই প্রারব্ধের জন্যই মৃত্যু হয় বিশেষ বিশেষ শুভ বা অশুভ মূহুর্তে। অশুভ মূহুর্তে মৃত্যু হলে মৃত্যুদোষ হয় ও যাতনাদেহ প্রেতত্ব প্রাপ্ত হয়। 
মৃতের এই দোষ ও পুষ্কর-ত্রিপুষ্কর দোষ নিয়ে গরুড় পুরাণে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। যেখানে ভগবান নারায়ণ বলেছেন আর প্রশ্ন করেছেন তার বাহন গরুড়। 

মহাভারত বলে -
বিধাতৃ‌বি‌হিতং মার্গং ন ক‌শ্চিদ‌তিবর্ত‌তে । 
কালমূল মিদং সর্বং ভাবাভা‌বৌ সুখাসুখম্ ।। 
 কালঃ সৃজ‌তি ভূতা‌নি কালঃ সংহর‌তে প্রজাঃ।। 
 সংহরন্তং প্রজাকালং কালঃ শময়‌তে পুনঃ।। 
কা‌লো হি কুরু‌তে ভবান্  সর্বান্ লো‌কে শুভাশুভান্ ।
 কালঃ সং‌ক্ষিপ‌তে সর্বাঃ প্রজাঃ বিসৃজ‌তে পুনঃ ।।
 কালঃ সু‌প্তেষু জাগ‌র্তি কা‌লো হি দুর‌তিক্রমঃ ।
 কালঃ স‌র্বেষু ভু‌তেষু চরত্য‌বিধৃতঃ সমঃ।।
               (মহাভারত আ‌দিপর্ব /শ্লোক ২০৮-২১১)
অর্থাৎ, বিধাতার নি‌দিষ্ট পথকে কারোরই অ‌তিক্রম করার সাধ্য নেই। তে পা‌রে না, ভাব-অভাব, সুখ-দুঃখ সবই কালের নিয়ন্ত্রণে। কালই শুভাশুভ নির্ণয় করে ও জীবের সৃজন-সংহার ক‌রে । কাল সবসময়ই জাগ্রত থাকে আর সে দুরতিক্রম্য। সে সর্সবভুতে বিচরণ করে। 
অর্থাৎ, সবকিছুর মূলেই এই কাল বা সময়। তাই কালই সমস্ত প্রারব্ধের মূল। এই কালকে অতিক্রম না করা গেলেও বোঝার চেষ্টা করেছেন ঋষিরা। তারা কালের শুভাশুভের ভিত্তিতে মৃতের দোষ নির্ধারণ করেছেন। যা বিভিন্ন পুরাণ ও জ্যোতিষশাস্ত্রে উল্লেখিত হয়েছে। 
এ বিষয়ে গ্রহযামল তন্ত্রের চতুর্থ পটলে বলা হয়েছে - 
"পূনর্বসুত্তরাষাঢ়া কৃত্তিকাশ্চফাল্গুনি।
পূর্ব্বভদ্রং বিশাখা চ রবিভৌমশনৈশ্চরঃ।।
দ্বীতিয়া সপ্তমীশ্চৈব দ্বাদশীতিথিরেব চ।
এত্তেবামেকদং যোগে ভবতীতি ত্রিপুষ্কর।। 
জাতে তুঃ জারজো যোগং মৃতে ভবতি পুষ্করঃ।।
                         [জ্যোতিষ তত্ত্বঃ,বারাহসংহিতা]
অর্থাৎ - 
নক্ষত্র দোষ : পুনর্বসু, উত্তর আষাঢ়া, কৃত্তিকা, ফাল্গুনী, পূর্বভাদ্রপদ ও বিশাখা নক্ষত্রে মারা গেলে মৃতের দ্বিপাদ দোষ হয়। মান =২ । 
বারদোষ : শনি, মঙ্গল এবং রবিবারে মৃত্যু হলে মৃতের  একপাদ দোষ হয়। মান =১ ।
তিথি দোষ :   দ্বিতীয়া, সপ্তমী এবং দ্বাদশী তিথিতে  মৃত্যু হলে মৃতের একপাদ দোষ হয়। মান = ১ । 

এখন মৃতের দোষ নির্ণয় করতে হলে নিচের সূত্রটি অনুসরণ করতে হবে। 
মোট দোষ = নক্ষত্র দোষ + বার দোষ + তিথি দোষ 
এখন নক্ষত্র, বার বা তিথি কোনোটাই উপরোক্ত সূচির মধ্যে না পড়লে মোট দোষ = ০+০+০ অর্থাৎ শূন্য হবে। নক্ষত্র, বার, তিথির মধ্যে যদি এক বা একাধিক উপরোক্ত সূচিতে পড়ে তবে তাদের জন্য নির্দিষ্ট মান বসবে। 
আর তিনটিই যদি উপরোক্ত সূচিতে পড়ে তবে মোট দোষ =২+১+১ =৪ হবে। আর একেবারেই পুষ্কর বলে। এই যোগে মৃতে পুষ্কর দোষ আর জন্মে জারজ যোগ হয়। 
আবার মৃতে নক্ষত্র দোষের সাথে সাথে বার বা তিথি যে কোনও একটি দোষ হয় তবে যোগফল তিন হয়। একে ত্রিপুষ্কর যোগ বলে। 
আবার, 
"বারাণাং প্রথমে ভাগে তিথিনাং চাদ্যমধ্যয়োঃ।
   নক্ষত্রে প্রথমে পাদে ত্রিপুষ্কর ইতি স্মৃতঃ।।"
অর্থাৎ, বা‌রের প্রথম ভাগে , তি‌থির আ‌দি ও মধ্যভা‌গে এবং নক্ষ‌ত্রের  প্রথম ভা‌গে মৃত্যু হলে ত্রিপুষ্কর হয়।

  মৃত্যু দোষের ফলাফল :
মৃত্যুকালীন দোষ তার পরিবার আর বাস্তুর উপর কুপ্রভাব ফেলে। অনেক সময় ওই পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজনও এই কুপ্রভাব থেকে অব্যাহতি পায় না। এই বিষয়ে বরাহ সংহিতার স্পষ্ট উক্তি - 
"ধমাসাভান্ত্যরে তস্য সুতহানিং বিনিশ্চিতঃ।
অথবা স্বামিনাং হন্তি  দ্বীতিয়ং ভ্রাতরস্তথা।।
তৃতীয়ং সর্ব্বহানিং স্যাৎ সুতবিত্তবিনাশনম্।" 
                  [শব্দকল্পোদ্রুমোক্ত বরাহ সংহিতা]  
অর্থাৎ, নক্ষত্র দোষে গোত্র নাশ হয়।  বার দোষে শস্য ও পুত্র নাশ হয়। এবং তিথি দোষে গো ধন নাশ হয়।
আবার ত্রিপুষ্কর দোষের ফলাফল সম্পর্কে বরাহসং‌হিতায় বলা হ‌য়ে‌ছে - 
               
 "সু‌তো ভ্রাতা তথা জায়া প‌তিঃ শ্বশুর এব চ্
   মাতা পিতা স্বসা বা‌পি পিতৃব্যো ভগিনী।" 

 অর্থাৎ, ত্রিপুষ্কর দো‌ষে মাতা পিতা ভ‌গিনী পিতৃব্য ভ‌গিনীপ‌তি পুত্র ভ্রাতা স্ত্রী স্বামী শ্বশুর সক‌লেই নানা  বিষয়ে অবশ্য পী‌ড়িত হ‌বে।

এ বিষয়ে বলতে গিয়ে গ্রহযামল তন্ত্র আবার আরেককাঠি এগিয়ে গিয়েছে। এখানে চতুর্থ পটলে শিব-পার্বতী সংবাদে স্বয়ং ভগবান শিব বলছেন - 
"নক্ষত্রে গোত্রহানিঃ স্যাদ বাস্তু বৃক্ষ ন জীবিতঃ।।

যার সরল অর্থ হল, পুষ্কর দোষে বাস্তু বৃক্ষ পর্যন্ত জীবিত থাকেনা। ষোলো মাসের মধ্যে পুষ্কর দোষের কারণে গৃহকর্ত্তার সর্ব্বনাশ হয়।অর্থ-সম্পদ,পুত্র এমনকি নিজ জীবন ও বিনাশ হতে পারে। তাহলে ভাবতেই পারছেন যে পুষ্কর দোষ কি ভয়ানক বালাই। 

পুষ্কর দোষ খণ্ডনের উপায় - 
দোষ থাকলে তা খণ্ডনের উপায়ও আছে । সুতরাং পুষ্কর দোষ কাটানোর উপায়ও  আছে। আমাদের শাস্ত্রে সেগুলি বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে উপায়গুলো সঠিক ব্রাহ্মণ ডেকে করাতে হবে। নাহলে উপায়ের কোনও ফল হবে না। 
এ সম্পর্কে গ্রহযামল তন্ত্রের পঞ্চম পটলে শিব-পার্বতী সংবাদে বলা হয়েছে - 

"পুষ্করোধ্বরকে দেবি হোতা ব্রাহ্মা চ পুস্তকী।
সদস্যো গ্রহভূদেবহন্যথা স্যাদ বিফলা ক্রিয়া।
পুষ্করোরিষ্ট শমনে পূজাদ্রব্যবরাননে।
গ্রহদ্বিজ সমাহূয়া পূজয়িত্বা নিবেদয়েৎ।।
গ্রহদ্বিজাদ্ বিভিন্নায় পুষ্করা দ্রব্যাকার্পনে।
ন নস্যেৎ তস্য তদ্রিষ্টং পুনরেব প্রবর্ততে।।" 

যার অর্থ, ভগবান শিব মাতা পার্বতীকে বলেন,
হে দেবী !পুষ্কর যজ্ঞে হোতা,ব্রহ্মা ও পুস্তক ধারী সদস্য ইহারা গ্রহদ্বিজ বা আচার্য্য ব্রাহ্মণ হলে কাজ সিদ্ধ হয়, অন্যথায় কাজ বিফল হয়।
পুষ্কর দোষ পেলেই শান্তি করাতে হবে। নাহলে পরিবারের সদস্যদের দেবতারাও রক্ষা করতে পারবেন না। 
তাই পুষ্কর শান্তি করাতে হবে গ্রহবিপ্র ডেকে এবং শাস্ত্রীয় বিধি মেনে। এজন্য সাধারণত হোম করতে হয় বা  সোনা দান করতে হয়। এই দান বা হোম মৃত ব্যক্তির অশৌচ কালের মধ্যেই করতে হবে।

এবিষয়ে শুদ্ধিকারিকার মত হল - 
“মুখ্যকালে স্তিদং সৰ্ব্ং সুতকং পরিকীর্তিতম্। আপাদগতস্য সৰ্ব্বস্য সুতকোঽপি ন সুতকম্॥" 

তবে এই সমস্ত কাজ এই শ্মশানেই করা উচিত ।অভাবে উঠোনে, দরজায় করা যায়, যা সঠিক ফল দেয় না।  
এছাড়াও  একপাদ দোষ হলে অষ্টোত্তর মাত্র তুলসীপত্র দ্বারা শ্রীবিষ্ণুর পূজা, শিবপুজা, বিষ্ণুর সহস্রনামের একাবৃত্তি পাঠ, ১০৮ দূর্গানাম ও মধূসূদন, শ্রী বিষ্ণুর সহস্রনাম একাবৃত্তি পাঠ বিধেয়।

দ্বিপাদ দোষ হলে অষ্টোত্তর শত তুলসীপত্র দ্বারা শ্রীবিষ্ণুপূজা, সহস্র দূর্গানাম ও মধূসূদন নাম জপ, চারবার শিবপূজা , দেবীমাহাত্ম্যপাঠ একরূপ, যথাশক্তি কাঞ্চানদান।

ত্রিপাদ দোষ হলে অষ্টোত্তরসহস্রসংখ্যক তুলসীপত্রদ্বারা শ্রীবিষ্ণুর পূজা, দশসহস্র দূর্গানাম, শ্রী মধূসূদন নাম জপ, দ্বাদশ শিবপূজা , তিনের অধিকবার চন্ডীপাঠ , কাঞ্চনদান, শ্রী বিষ্ণুহোম ১০৮ ষোড়শোপচারে শ্রী বিষ্ণু পূজা আবশ্যক। 

ত্রিপুষ্করদোষ হলে অষ্টোত্তরসহস্রসংখ্যক তুলসীপত্রদ্বারা শ্রীবিষ্ণুর পূজা, দশসহস্র দূর্গানাম, শ্রী মধূসূদন নাম জপ, দ্বাদশ শিবপূজা , তিনের অধিকবার চন্ডীপাঠ , নবগ্রহ হোম , সভোজ্য কাঞ্চনদান , শ্রী বিষ্ণুহোম ১০৮ ষোড়শোপচারে শ্রী বিষ্ণু পূজা আবশ্যক । 

তবে এই কাজে সঠিক গ্রহবিপ্র প্রয়োজন। সঠিক ছন্দ ও উচ্চারণের সঙ্গে মন্ত্রোচ্চারণ করতে পারে এমন গ্রহবিপ্রই  পুষ্কর শান্তির জন্য উপযুক্ত। এই কাজ  এতটাই সাবধানতার সাথে করতে হয় যে সামান্য ভুলের জন্য  ব্রাহ্মণ ও কর্তার বিপদ উপস্থিত হয়। ও কাজ নিষ্ফল হয়। 


তবে এ বিষয়ে একটা কথা জানা আবশ্যক যে সব পুষ্কর দোষ ক্ষতিকর হয়না। এজন্য পুষ্করের নির্ণয় দরকার। পুষ্কর যদি স্বর্গে অবস্থান করে  তবে তা ক্ষতিকর নয় এবং শান্তি  আবশ্যক হয় না। অপরদিকে পুষ্কর পাতালে  অবস্থান পাতালে করলে  ক্ষতির পরিমাণ কম হয়। কিন্তু  পুষ্কর যদি  মর্ত্যে অবস্থান করে তবে তা খুবই ক্ষতিকারক  এবং দ্রুত শান্তি আবশ্যক ।

শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২২

বসন্ত পঞ্চম বা সরস্বতী পুজো

 বসন্ত পঞ্চমী বা সরস্বতী পুজো


সূচিপত্র * সরস্বতী স্তোত্রম্ 



  সূর্য যখন মকর রাশিতে অবস্থান করেন তখন শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় বাগদেবীর সরস্বতীর আরাধনা। আর এই পঞ্চমী তিথিকেই বসন্ত পঞ্চমী বলে। এদিন অধ্যয়ন বন্ধ থাকে। 

মাঘে মাসি সিতে পক্ষে পঞ্চমী যা শ্রিয়ঃ প্রিয়া।

তস্যাঃ পূৰ্ব্বাহু এবেহ কাৰ্যঃ সারস্বততাৎসবঃ ॥

শ্রীপঞ্চম্যাং লিখেম্নৈব ন স্বাধ্যায়ং কদাচন।

বাণীকোপমবাপ্পেতি লিখনে পঠনেহপি চ ৷।

স্মার্তপ্রবর রঘুনন্দনের মতে-

পঞ্চমাং পূজয়েল্লক্ষীং পুষ্পধূপান্নবারিভিঃ।

মস্যাধারং লেখনীঞ্চ পূজয়েন্ন লিখেত্ততঃ ॥

অর্থাৎ, এদিন লক্ষ্মী পুজোও করতে হয়।  

তিনি এও বলেছেন-

তিনি বলেছিলেন......

পঞ্চমাং পূজয়েল্লক্ষীং পুষ্পধূপান্নবারিভিঃ।

মস্যাধারং লেখনীঞ্চ পূজয়েন্ন লিখেত্ততঃ ॥

মাঘে মাসি সিতে পক্ষে পঞ্চমী যা শ্রিয়ঃ প্রিয়া।

তস্যাঃ পূৰ্ব্বাহু এবেহ কাৰ্যঃ সারস্বততাৎসবঃ ॥

শ্রীপঞ্চম্যাং লিখেম্নৈব ন স্বাধ্যায়ং কদাচন।

বাণী কোপম্ আনোতি লিখনে পঠনেহপি চ ।। 

মা সরস্বতী সম্মন্ধে ওঠা কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পড়ুন সরস্বতী মহাভাগে। এছাড়াও মূল সূচিপত্রের জন্য দেখুন সূচিপত্র । 

  দেবী সরস্বতী হলেন আদিদেবী। সৃষ্টির আদি যে প্রণব সেই প্রণবের উদগাতা হলেন সরস্বতী। তাই তো তিনি সৃষ্টিকর্ত্রী। এজন্যই অনেকসময় তাকে ব্রহ্মার শক্তি বলা হয়েছে। এই শক্তি মানে কিন্তু স্ত্রী নয়, ব্রহ্মা অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার নারীরূপ বিশেষ। 

দেবী সরস্বতীর বাহন হংস। এই হংস হল সূর্যের প্রতীক। সূর্য বা সবিতাই হলেন জগৎ প্রসবিতা। অর্থাৎ এখানেও সেই সৃষ্টি। ঋগ্বেদেও রয়েছে দেবী সরস্বতীর প্রশস্তি। 

অম্বিতমে নদীতমে সরস্বতী। 
অপ্রশস্তা ইব স্মসি প্রশস্তিমন্ব নস্কৃধি।। 
                                  (ঋগ্বেদ ২/৪১/১৬ ) 
অর্থাৎ “মাতৃকাদের  মধ্যে শ্রেষ্ঠ তুমি, নদীগণের মধ্যে তুমি শ্রেষ্ট,  হে সরস্বতী, আমরা অসমৃদ্ধের ন্যায় রয়েছি, আমাদের সমৃদ্ধশালী কর।”
শুধু সৃষ্টি নয় দন্ডনীতিরও প্রবক্তা দেবী সরস্বতী।মহাভারত বলছে, - 
 ‘সসৃজে দণ্ডনীতি সা ত্রিষু লোকেষু বিশ্রুতা’
অর্থাৎ দেবী সরস্বতী দণ্ডনীতির সৃষ্টি করেছিলেন।

 ঋকবেদ অনুসারে-

শন্নো দেবী বিশ্বদেবী ভবন্তু শং সরস্বতী সহ ধীতিরস্তু।

শমভিষাশ্চঃ শমু রাতিষশ্চঃ শংনাে দিব্যাঃ পার্থিবাঃ শন্নো অপ্যাঃ।।

এই বসন্তপঞ্চমী সম্পর্কে বলা হয় যে  মহাভারত লেখার পূর্বে ভগবান বেদব্যাস মা সরস্বতীর আরাধনা করেন। মা সরস্বতী তখন ভগবান বেদব্যাসের হাতে একটি কুল বা বদরি দিয়ে বলেন যে এই কুল হতে যে গাছ হবে সেই গাছ হতে প্রথম কুলটি যখন ব্যাসের কোলে পড়বে তখনই সাধনায় সিদ্ধ হবেন ব্যাস। কুলখানা মাটিতে পুঁতে তার পাশেই তপস্যায় বসেন ব্যাসদেব। আর সেই কুলের বীজ অঙ্কুরিত হয়ে ধীরে ধীরে তা বৃক্ষে পরিণত হয়। এবং যেদিন সেই গাছ হতে একখানা পাকা কুল ব্যাসদেবের কোলে পড়ে সেই দিনটি ছিল এই বসন্ত পঞ্চমী। আর ওই কুলগাছ বা বদরি বৃক্ষের নাম অনুসারেই জায়গাটির নাম হয় বদরিকাশ্রম।

আর এজন্যই কুল দিয়ে মা সরস্বতীর আরাধনা করা হয়। এবং সরস্বতী পুজো পর্যন্ত কুল খাওয়া হয় না।

দেবী সরস্বতী শুধু যে হিন্দুদের দেবী তাই নন তিনি বৌদ্ধ ও জৈন্যদের দ্বারাও সমানভাবে উপাস্য। তিব্বতি ভাষায় দেবীর নাম 'ইয়েং চেনমা', জাপিনে আবার তিনি দেবী বেনজো। 

বৌদ্ধ সাধনমালায় তাঁর পাঁচটি রূপ দেখতে  পাই। মহাসরস্বতী, বজ্রবীণা সরস্বতী, আর্য সরস্বতী, সরস্বতী, বজ্র শারদা এবং বজ্র সরস্বতী।  বিহারের নালন্দা এবং ওড়িশার রত্নগিরিতে মহাসরস্বতীর মূর্তি পাওয়া গিয়েছে। যদিও দেবী সরস্বতীর সঙ্গে দেবী মাতঙ্গীর অনেক প্রভেদ আছে তবুও বিচার করে দেখলে বোঝা যায় দেবী মাতঙ্গীই দেবী সরস্বতীর তান্ত্রিক রূপ। 

পুজার উপকরণ :-

সরস্বতী পুজোয় অন্যান্য পুজোর সাধারণ উপকরণের সাথে সাথে আম, জাম, ধান ও গমের শিষ, শরকাঠি ( কলম তৈরির জন্য ) , দোয়াত, কালি, টোপাকুল, পলাশ ইত্যাদি বসন্তের ফুল প্রয়োজন। 

হাতেখড়ি :-

অনেকে সরস্বতী পুজোর দিন নিজের পুত্রকন্যার বিদ্যারম্ভ বা হাতেখড়ি দেওয়া করান। অনেকে আবার এর একদিন পর মাকুড়ি সপ্তমীর দিনেও হাতেখড়ি দেন। একটা শ্লেটে গণেশের নাম লিখে তারপর অক্ষরগুলো লেখা করান। পুরোহিতমশাই বালক বা বালিকার হাতে ধরে এই কাজ সুসম্পন্ন করান। এদিন হতেই ওই বালক বা বালিকার বিদ্যারম্ভ হয়। বিদ্যারম্ভ বৃহস্পতিবারে শ্রেষ্ঠ। শুক্র ও রবিবার মধ্যম, শনি ও মঙ্গলবারে অল্পায়ু, বুধ ও সোমবারে বিদ্যাহীন হয়। 

এ নিয়ে জ্যোতিষতত্ত্বম সুস্পষ্ট ভাবে বলেছে-

সংপ্রাপ্তে পঞ্চমে বর্ষে অপ্রসুপ্তে জনার্দনে।

ষষ্ঠীং প্রতিপদঞ্চৈব বৰ্জ্জয়িত্বা তথাষ্টমীম্‌ ॥

রিক্তাং পঞ্চদশীঞ্চৈব সৌরিভৌমদিনং তথা।

এবং সুনিশ্চিতে কালে বিদ্যারম্ভন্তু কারয়েৎ।।  

 অর্থাৎ পাঁচ বছর বয়স হলেই হরিশয়নকাল, ষষ্ঠী, প্রতিপদ, অষ্টমী, রিক্তা, পূর্ণিমা, অমাবস্যা তিথি, শনি ও মঙ্গলবার পরিত্যাগ করে উত্তম দিনে বিদ্যারম্ভ করা উচিত ।

বিদ্যারম্ভের তিথি নিয়েও সঠিক নির্দেশিকা আছে এই  জ্যোতিষতত্ত্বমে। 

লঘুচরশিবমুলাধোমুখত্বষ্টৃপৌঞ্চশশিষু

 চ হরিরোধে শুক্রজীবার্কবারে।

উদিতবতি চ জীবে কেন্দ্রকোণেষু 

সৌম্যেরপঠনদিনবর্জং পাঠরেৎ পঞ্চমেহবৌ।।

বিদ্যারম্ভে গুরুঃ শ্রেষ্ঠো মধ্যমৌ ভৃগুভাস্করৌ।

মরণং শনিভৌমাভ্যামবিদ্যা বুধসোময়োঃ।

ষষ্ঠীং প্রতিপদঞ্চৈব বৰ্জ্জয়িত্বা তথাষ্টমীম্।।

রিক্তাং পঞ্চদশীঞ্চৈব শনিভৌমদিনং তথা।

শুভে সুনিশ্চিতে কালে বিদ্যারম্ভ প্রশস্যতে।।

অর্থাৎ, - 

চন্দ্র যখন পুষ্যা, অশ্বিনী, হস্তা,স্বাতী, পুনৰ্ব্বষু, শ্রবণা, ধনিষ্ঠা, শতভিষা, আর্দ্রা, মূলা, অশ্লেষা,কৃত্তিকা, ভরণী, মঘা, বিশাখা, পূর্বফাল্গুনী, পূর্ব্বাষাঢ়া, পূর্ব্বভাদ্রপদ, চিত্রা, রেবতী ও মৃগশিরা নক্ষত্রে অবস্হান করেন তখন হরিশয়ন সময় পরিত্যাগ করে উত্তরায়ণে শুক্র, বৃহস্পতি ও রবিবারে কালশুদ্ধিতে লগ্নের কেন্দ্র, পঞ্চম, ও নবম শুভগ্রহযুক্ত হলে পাঁচ বছর বয়সী সন্তানের বিদ্যারম্ভ করবে। 

সরস্বতীর ধ্যান মন্ত্র

ওঁ তরুণশকলমিন্দোর্ব্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ। 

কুচভরণমিতাঙ্গী সন্নিষন্না সিতাব্জে।।

নিজকর কমলোদ্যল্লেখণী পুস্তকশ্রীঃ।

সকল বিভবসিদ্ধৌ পাতু বাগদেবতা নমঃ।।


মুকুলপুষ্প নিবেদন মন্ত্র : 


একটি  পাত্রে যবের শীষ, কুন্দ ফুল, পাঁচটি নারিকেল কুল, পলাশ ফুল, আমের মুকুল ,আবীর (ফল্গুচূর্ণ) নিম্নলিখিত মন্ত্রে উৎসর্গ করতে হবে - 

" ওঁ ইদং যবশীর্ষ কুন্দ বদর পলাশাম্রমুকুলাভ্রফল্গুচুর্ণাদিকম্ ওঁ লেখনী পুস্তক মস্যাধার বাদ্যযন্ত্রসহিতায়  ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ। "

এছাড়াও নিম্নমন্ত্রে আমের মুকুল দেওয়াল যায় - 

ওঁ ক্ষীরসিক্তং চ্যুতপুষ্পং চন্দনেন সুবাসিতম্। নৈবেদ্যং বিশেষং তব ভক্তিতোহহং সমুৎসৃজে।।


সরস্বতী দেবীর গায়ত্রীঃ

ওঁ বাগ্দেব্যৈ বিদ্মহে কামরাজায় ধীমহি তন্নো দেবী প্রচোদয়াৎ।। 

সরস্বতী প্রণাম মন্ত্র

ওঁ সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।

বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।।

ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।

বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।

সরস্বতীর স্তবঃ

ওঁ শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা।

শ্বেতাম্ভরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা।।

শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা।

শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারব‌ভূষিতা

বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ।

পূঝিতা মুনিভি: সর্ব্বৈঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা।।

স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্।

যে স্মরতি ত্রিসন্ধ্যায়ং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে।।

সরস্বতী দেবীর স্তোত্রঃ

সরস্বতী মহাদৃষ্টা বীণাপুস্তকধারিণী।

হংসবাহন সংযুক্তা বিদ্যাদান করোম্যহম্।

প্রথমং ভারতীনাম দ্বিতীয়ঞ্চ সরস্বতী।

তৃতীয়ং সারদা দেবী চতুর্থে হংসবাহিনী। 

পঞ্চমে জগদ্বিখ্যাতা ষষ্ঠে বাকশ্বরীস্তথা।

সপ্তমে প্রখরতা চ অষ্টমে বরদায়িনী।

নবমে সিদ্ধিদাতা চ দশমে ব্রহ্মচারিণী। 

একাদশে চন্দ্রঘন্টা দ্বাদশে ভুবনেশ্বরী।।


সরস্বতীর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র

ওঁ ভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।

বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ স্বাহা।।

এস স-চন্দন পুষ্পবিল্ব পত্রাঞ্জলি ওঁ সরস্বতৈ দেবৈ নমঃ।।

সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০২২

দুর্গাপুজো ও নবরাত্রি

              সেদিন দুর্গাপুজো নিয়ে কথা হচ্ছিল। আমাদের বৃদ্ধ তান্ত্রিক বগলাচরণ ভট্টাচার্য্য মশাই চায়ের কাপে দীর্ঘ চুমুক দিয়ে বললেন, "দুর্গাপুজো নিয়ে বলতে গেলে অনেক কিছুই বলতে হয়। তবে স্বল্প পরিসরে তো সব বলা সম্ভব নয়। তবু যেটুকু বলি শোনো। 
                  হিন্দু ধর্মের প্রধান পাঁচটি সম্প্রদায়ের অন্যতম হল শাক্ত সম্প্রদায়।  সৌর আশ্বিনের শুক্লা প্রতিপদ হতে শুরু করে মোট নয়দিন ধরে চলে দেবী মহামায়া আদ্যাশক্তির আরাধনা। দশমীর দিন দেবী সপরিবারে চলে যান কৈলাশে। আবার শুরু হয় একবছরের অপেক্ষা। 
এই নয়দিনে দেবীর নয়টি রূপের পুজো হয়। যাদের নবদুর্গা বলে। আর নয়দিনের এই ব্রতকে নবরাত্রি বলে। দেবীর নয়টি রূপ হল-

প্রথমং শৈলপুত্রী চ দ্বিতীয়ং ব্রহ্মচারিণী |
তৃতীয়ং চন্দ্রঘণ্টেতি কূষ্মাণ্ডেতি চতুর্থকম || ৩ ||

পঞ্চমং স্কন্দমাতেতি ষষ্ঠং কাত্যায়নীতি চ |
সপ্তমং কালরাত্রীতি মহাগৌরীতি চাষ্টমম || ৪ ||

নবমং সিদ্ধিদাত্রী চ নবদুর্গাঃ প্রকীর্তিতাঃ |
উক্তান্যেতানি নামানি ব্রহ্মণৈব মহাত্মনা || ৫ ||

                        যদিও আমাদের দুর্গাপুজো শুরু হয় ষষ্ঠীর বোধনের মাধ্যমে কিন্তু ভারতবর্ষের বাকি অংশে প্রতিপদ হতেই পুজো শুরু হয়। 

প্রতিপদ - শৈলপুত্রী
নবরাত্রির প্রথম দিন দেবী  শৈলপুত্রী ( পর্বতের কন্যা)। হিমালয় ও মেনকার ঘরে জন্ম নেন দেবীশৈলপুত্রী। প্রণাম মন্ত্রে তাই বলা হয়েছে - 
'.. শৈলপুত্রীং প্রপদ্যে, পুনর্ভুং ময়োতুম্।
 কন্যাং শিখলিনি পাশহন্তাং যুবতীং কুমারীণীম্।।’
শৈলপুত্রী সূর্যগ্রহকে নিয়ন্ত্রণ করেন। গাওয়া ঘি দিয়ে তার পুজো করা হয়। শৈলপুত্রী মেষ ও বৃশ্চিক রাশিকে  নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি ভক্তদের আরোগ্য প্রদান করেন । 

ধ্যান :-
বন্দে বাঞ্ছিতলাভায় চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাম্ ।
বৃষারূঢাং শূলধরাং শৈলপুত্রীং য়শস্বিনীম্ ॥
পূর্ণেন্দুনিভাঙ্গৌরীং মূলাধারস্থিতাং প্রথমদুর্গাং ত্রিনেত্রাম্ ।
পটাম্বরপরিধানাং রত্নকিরীটাং নানালঙ্কারভূষিতাম্ ॥
প্রফুল্লবদনাং পল্লবাধরাং কান্তকপোলাং তুঙ্গকুচাম্ ।
কমনীয়াং লাবণ্যস্নেহমুখীং ক্ষীণমধ্যাং নিতম্বনীম্ ॥

স্তোত্রম্ -
প্রথমদুর্গা ত্বং হি ভবসাগরতারিণী ।
ধন ঐশ্বর্যদায়িনী শৈলপুত্রী প্রণমাম্যহম্ ॥
ত্রিলোকজননী ত্বং হি পরমানন্দপ্রদায়িনী ।
সৌভাগ্যারোগ্যদায়নী শৈলপুত্রী প্রণমাম্যহম্ ॥
চরাচরেশ্বরী ত্বং হি মহামোহবিনাশিনী ।
ভুক্তিমুক্তিদায়নী শৈলপুত্রী প্রণমাম্যহম্ ॥

কবচম্ -
ওঙ্কারঃ মে শিরঃ পাতু মূলাধারনিবাসিনী ।
হ্রীঙ্কারঃ পাতু ললাটে বীজরূপা মহেশ্বরী ॥
শ্রীকারঃ পাতু বদনে লজ্জারূপা মহেশ্বরী ।
হূঙ্কারঃ পাতু হৃদয়ে তারিণী শক্তিঃ স্বধৃতা ॥
ফট্কারঃ পাতু সর্বাঙ্গে সর্বসিদ্ধিফলপ্রদা ।

দ্বিতীয়া - ব্রহ্মচারিণী
হিমালয়ের কন্যা শিবকে পতি হিসেবে পাওয়ার জন্য শুধুমাত্র বায়ুসেবন করে দীর্ঘ তপস্যা করেন। এসময় একটা পাতাও আহার করতেন না বলে তাকে অপর্ণা বলা হয়। এই সময় দেবী তপস্যার্থে ব্রহ্মচারিণী রূপ ধারণ করেন। তার তপস্যারয় কাতর হয়ে তার মা বলেন- 'উ মা !' অর্থাৎ আর না। 
দেবী জ্ঞানদা, তিনি ভক্তকে  ব্রহ্মপ্রাপ্তি করান। ব্রহ্মচারিণী রাহুগ্রহকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাকে    চিনি ভোগ দেওয়া হয় । ব্রহ্মচারিণী তুলা রাশিকে  নিয়ন্ত্রণ করেন ও  দীর্ঘায়ু দেন। 

দধানা  করপদ্মাভ্যামক্ষমালাকমণ্ডলূ ।
দেবী প্রসীদতু ময়ি ব্রহ্মচারিণ্যনুত্তমা ॥

ধ্যানং -
বন্দে বাঞ্ছিতলাভায় চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাম্ ।
জপমালাকমণ্ডলুধরাং ব্রহ্মচারিণীং শুভাম্ ।
গৌরবর্ণাং স্বাধিষ্ঠানস্থিতাং দ্বিতীয়দুর্গাং ত্রিনেত্রাম্ ।
ধবলবর্ণাং ব্রহ্মরূপাং পুষ্পালঙ্কারভূষিতাম্ ।
পদ্মবদনাং পল্লবাধরাং কান্তঙ্কপোলাং পীনপয়োধরাম্ ।
কমনীয়াং লাবণ্যাং স্মেরমুখীং নিম্ননাভিং নিতম্বনীম্ ॥

স্তোত্রং -
তপশ্চারিণী ত্বং হি তাপত্রয়নিবারিণী ।
ব্রহ্মরূপধরাং ব্রহ্মচারিণীং প্রণমাম্যহম্ ॥
নবচক্রভেদিনী ত্বং হি নব ঐশ্বর্যপ্রদায়িনী ।
ধনদাং সুখদাং ব্রহ্মচারিণীং প্রণমাম্যহম্ ॥
শঙ্করপ্রিয়া ত্বং হি ভুক্তি-মুক্তিদায়িনী ।
শান্তিদাং মানদাং ব্রহ্মচারিণীং প্রণমাম্যহম্ ।।

কবচম্ -
ত্রিপুরা মে হৃদয়ং পাতু ললাটং পাতু শঙ্করভামিনী
অর্পণা সদা পাতু নেত্রৌ অধরৌ চ কপোলৌ ॥
পঞ্চদশী কণ্ঠং পাতু মধ্যদেশং পাতু মাহেশ্বরী
ষোডশী সদা পাতু নভো গৃহো চ পাদয়ো ।
অঙ্গপ্রত্যঙ্গং সততং পাতু ব্রহ্মচারিণী ॥

তৃতীয়া - চন্দ্রঘন্টা
শিব ও পার্বতীর বিবাহ নির্বিঘ্ন করতে দেবী  চন্দ্রঘন্টা রূপ ধারণ করেন। অষ্টভূজা দেবী শার্দূলের পিঠে চেপে চন্দ্রের মতো স্বরূপ নিয়ে বিশাল শ্বেতঘন্টা বাজাতে বাজাতে ভূত পিশাচ রাক্ষসদের অপসারণ করেন। মতান্তরে এই ঘন্টা মহিষাসুর বধের জন্য দেবরাজ ইন্দ্রের প্রদত্ত ঘন্টা যার মধ্যে গজরাজ ঐরাবতের মহাশক্তি নিহিত ছিল। 
 চন্দ্রঘন্টা কেতুগ্রহকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি কন্যা ও মিথুনের নিয়ন্ত্রক।  গরুর দুধ দিয়ে পুজো করলে  চন্দ্রঘন্টা প্রসন্ন হন এবং  শত্রুনাশ করেন। 

পিণ্ডজপ্রবরারূঢা চন্দ্রকোপাস্ত্রকৈর্যুতা ।
প্রসাদং তনুতাং মহ্যং চন্দ্রঘণ্টেতি বিশ্রুতা ॥

ধ্যানং -
বন্দে বাঞ্ছিতলাভায় চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাম্ ।
সিংহারূঢাং দশভুজাঞ্চন্দ্রঘণ্টাং য়শস্বনীম্ ॥
কঞ্জনাভাং মণিপুরস্থিতাং তৃতীয়দুর্গাং ত্রিনেত্রাম্ ।
খড্গগদাত্রিশূলচাপধরাং পদ্মকমণ্ডলুমালাবরাভয়করাম্ ।
পটাম্বরপরিধানাং মৃদুহাস্যাং নানালঙ্কারভূষিতাম্ ।
মঞ্জীর-হার-কেয়ূর-কিঙ্কিণীরত্নকুণ্ডলমণ্ডিতাম্ ॥
প্রফুল্লবন্দনাং বিম্বাধারাং কান্তঙ্কপোলাং তুঙ্গকুচাম্ ।
কমনীয়াং লাবণ্যাং ক্ষীণকটিং নিতম্বনীম্ ॥

স্ত্রোত্রঃ-
আপদুদ্ধারিণী ত্বং হি আদ্যাশক্তিঃ শুভা পরা ।
অণিমাদিসিদ্ধিদাত্রি চন্দ্রঘণ্টে প্রণমাম্যহম্ ॥
চন্দ্রমুখী ইষ্টদাত্রী ইষ্টমন্ত্রস্বরূপণী ।
ধনদাত্র্যানন্দদাত্রী চন্দ্রঘণ্টে প্রণমাম্যহম্ ॥
নানারূপধারিণী ইচ্ছাময়ী ঐশ্বর্যদায়নী ।
সৌভাগ্যারোগ্যদায়নী চন্দ্রঘণ্টে প্রণমাম্যহম্ ॥

কবচঃ-
রহস্যং শৃণু বক্ষ্যামি শৈবেশি কমলাননে ।
শ্রীচন্দ্রঘণ্টাকবচং সর্বসিদ্ধিপ্রদায়কম্ ॥
বিনা ন্যাসং বিনা বিনিয়োগং বিনা শাপোদ্ধারং বিনা হোমম্ ।
স্নানং শৌচাদিকং নাস্তি শ্রদ্ধামাত্রেণ সিদ্ধিদম্ ॥
কুশিষ্যায় কুটিলায় বঞ্চকায় নিন্দাকায় চ ।
ন দাতব্যং ন দাতব্যং ন দাতব্যঙ্কদাচন ॥

চতুর্থী - কুষ্মাণ্ডা
কু শব্দের অর্থ কুৎসিত আর উষ্মা শব্দের অর্থ তাপ। অন্ড এখানে উদর। মহাদেব যেমন সমুদ্র মন্থনের সময় সমস্ত গরল নিজের কণ্ঠে ধরে জগৎ সংসারকে রক্ষা করেছিলেন তেমনি দেবী কুষ্মান্ডা যত শোক তাপ যন্ত্রণা সমস্তকিছু নিজের মধ্যে ধারণ করে ভক্তকে রক্ষা করেন। 

দেবী কুষ্মান্ডা চন্দ্রকে নিয়ন্ত্রণ করেন। । তিনি  ধনু রাশিকে  নিয়ন্ত্রণ করেন। কুষ্মাণ্ডা নির্ণয় শক্তি দেন ও সব প্রকার বাসনা নাশ করেন। মালপোয়া ভোগ দিলে তিনি প্রসন্ন হন। 

সুরাসম্পূর্ণকলশং রুধিরাপ্লুতমেব চ ।
দধানা হস্তপদ্মাভ্যাং কূষ্মাণ্ডা শুভদাঽস্তু মে ॥

ধ্যানং -
বন্দে বাঞ্ছিতকামর্থং চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাম্ ।
সিংহারূঢামষ্টভুজাং কুষ্মাণ্ডাং চ য়শস্বিনীম্ ॥
ভাস্বরাং ভানুনিভামনাহতস্থিতাং চতুর্থদুর্গাং ত্রিনেত্রাম্ ।
কমণ্ডলুচাপবাণপদ্মসুধাকলশচক্রগদাজপবটীধরাম্ ॥
পটাম্বরপরিধানাং কমনীয়াং মৃদুহাস্যা নানালঙ্কারভূষিতাম্ ।
মঞ্জীরহারকেয়ূরকিঙ্কিণীরত্নকুণ্ডলমণ্ডিতাম্ ।
প্রফুল্লবদনাং  চারুচিবুকাং কান্তকপোলাং তুঙ্গকুচাম্ ।
কোলাঙ্গীং স্মেরমুখীং ক্ষীণকটিং নিম্ননাভিং নিতম্বনীম্ ॥


স্ত্রোত্রঃ-
দুর্গতিনাশিনী ত্বং হি দারিদ্র্যাদিবিনাশিনী ।
জয়দা ধনদা কূষ্মাণ্ডে প্রণমাম্যহম্ ॥
জগন্মাতা জগত্কর্ত্রি জগদাধাররূপিণী ।
চরাচরেশ্বরী কূষ্মাণ্ডে প্রণমাম্যহম্ ॥
ত্রৈলোক্যসুন্দরী ত্বং হি দুঃখশোকনিবারিণী ।
পরমানন্দময়ী কূষ্মাণ্ডে প্রণমাম্যহম্।। 
-------------------------------
সুরাসম্পূর্ণকলশং রুধিরাপ্লুতমেব চ ।
দধানা হস্তপদ্মাভ্যাং কূষ্মাণ্ডা শুভদাঽস্তু মে ॥
বন্দে বাঞ্ছিত কামার্থে চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাম্।
সিংহরূঢ়া অষ্টভূজা কুষ্মান্ডাং যশস্বিনীম্।।

ওঁ হ্রীম্ শ্রী কুষ্মান্ডা দুর্গায়ৈ নমঃ।।

কবচং -
হসরৈ মে শিরঃ পাতু কূষ্মাণ্ডা ভবনাশিনী ।
হসলকরী নেত্রঽথ, হসরৌশ্চ ললাটকম্ ॥
কৌমারী পাতু সর্বগাত্রে বারাহী উত্তরে তথা ।
পূর্বে পাতু বৈষ্ণবী ইন্দ্রাণী দক্ষিণে মম ।
দিগ্দিক্ষু  সর্বত্রৈব কূম্বীজং সর্বদাঽবতু ॥

পঞ্চমী - স্কন্দমাতা
দেব সেনাপতি কার্তিকেয়র অপর নাম স্কন্দ। দেবী পার্বতী স্কন্দের মাতা বলে তিনি স্কন্দমাতা বলে প্রসিদ্ধ। ইনি কার্তিকেয়কে কোলে করে অবস্থান করেন। 
স্কন্দমাতা মঙ্গলগ্রহকে  নিয়ন্ত্রণ করেন।  স্কন্দমাতা  কুম্ভ রাশিকে  নিয়ন্ত্রণ করেন। ইনি মর্তমান কলা দ্বারা পুজো করলে তুষ্ট হন এবং বুদ্ধি বিকাশ ঘটান ও সন্তান দেন। 

সিংহাসনগতা নিত্যং পদ্মাশ্রিতকরদ্বয়া ।
শুভদাস্তু সদা দেবী স্কন্দমাতা য়শস্বিনী ॥

ধ্যানম্ -
বন্দে বাঞ্ছিতকামার্থে চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাম্ ।
সিংহারূঢা চতুর্ভুজা স্কন্ধমাতা য়শস্বনী ॥
ধবলবর্ণা বিশুদ্ধচক্রস্থিতা পঞ্চমদুর্গা ত্রিনেত্রা ।
অভয়পদ্ময়ুগ্মকরাং দক্ষিণ ঊরুপুত্রধরাং ভজেঽম্ ॥
পটাম্বরপরিধানা মৃদুহাস্যা নানালঙ্কারভূষিতাম্ ।
মঞ্জীরহারকেয়ূরকিঙ্কিণীরত্নকুণ্ডলধারিণীম্ ॥
প্রভুল্লবদনাং পল্লবাধরাং কান্তকপোলাং পীনপয়োধরাম্ ।
কমনীয়াং লাবণ্যাং চারূত্রিবলীং নিতম্বনীম্ ॥

স্তোত্রম্ -
নমামি স্কন্দমাতরং স্কন্ধধারিণীম্ ।
সমগ্রতত্ত্বসাগরামপারপারগহরাম্ ॥
শশিপ্রভাং সমুজ্জ্বলাং স্ফুরচ্ছশাঙ্কশেখরাম্ ।
ললাটরত্নভাস্করাং জগত্প্রদীপ্তভাস্করাম্ ॥
মহেন্দ্রকশ্যপার্চিতাং সনত্কুমারসংস্তুতাম্ ।
সুরাসুরেন্দ্রবন্দিতাং য়থার্থনির্মলাদ্ভুতাম্ ॥
অতর্ক্যরোচিরূবিজাং বিকার দোষবর্জিতাম্ ।
মুমুক্ষুভির্বিচিন্তিতাং বিশেষতত্ত্বমূচিতাম্ ॥
নানালঙ্কারভূষিতাং মৃগেন্দ্রবাহনাগ্রতাম্ ।
সুশুদ্ধতত্ত্বতোষণাং ত্রিবেদমারভাষণাম্ ॥ ??মার
সুধার্মিকৌপকারিণীং সুরেন্দ্রবৈরিঘাতিনীম্ ।
শুভাং সুপুষ্পমালিনীং সুবর্ণকল্পশাখিনীম্ ॥
তমোঽন্ধকারয়ামিনীং শিবস্বভাবকামিনীম্ ।
সহস্ত্রসূর্যরাজিকাং ধনঞ্জয়োগ্রকারিকাম্ ॥
সুশুদ্ধকালকন্দলাং সুভৃঙ্গকৃন্দমঞ্জুলাম্ ।
প্রজায়িনীং প্রজাবতীং নমামি মাতরং সতীম্ ॥
স্বকর্মধারণে গতিং হরিং প্রয়চ্ছ পার্বতীম্ । ??প্রয়চ্ছ
অনন্তশক্তিকান্তিদাং য়শোঽথ ভুক্তিমুক্তিদাম্ ॥
পুনঃপুনর্জগদ্ধিতাং নমাম্যহং সুরার্চিতাম্ ।
জয়েশ্বরি ত্রিলাচনে প্রসীদ দেবি পাহি মাম্ ॥

কবচম্ -
ঐং বীজালিকা দেবী পদয়ুগ্মধরা পরা ।
হৃদয়ং পাতু সা দেবী কার্তিকেয়য়ুতা সতী ॥
শ্রীং হ্রীং হুং ঐং দেবী পূর্বস্যাং পাতু সর্বদা ।
সর্বাঙ্গ মেং সদা পাতু স্কন্দমাতা পুত্রপ্রদা ॥
বাণবাণামৃতে হুং ফট্ বীজসসমন্বিতা ।
উত্তরস্যাং তথাগ্নে চ বারূণে নৈৠতেঽবতু ॥
ইন্দ্রাণী ভৈরবী চৈবাসিতাঙ্গী চ সংহারিণী ।
সর্বদা পাতু মাং দেবী চান্যান্যাসু হি দিক্ষু বৈ ॥

ষষ্ঠী - কাত্যায়ণী 
দেবগণের অসীম তেজে মহর্ষি কাত্যায়ণের আশ্রমে আবির্ভূত হন দেবী আদ্যাশক্তি। কাত্যায়ণের কন্যা বলে কাত্যায়ণী বলে খ্যাত হন।  ইনি বৃন্দাবনে শ্রীরাধা, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও অন্যান্য গোপগোপীদের দ্বারা পূজিতা হন।  ব্রজের গোপবালারা এই কাত্যায়নীর কাছে প্রার্থণা করেছিলেন নন্দের নন্দন শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে পাওয়ার জন্য। 

কাত্যায়নী  বুধগ্রহকে   নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি মকর রাশির নিয়ন্ত্রক।  মধু দিয়ে পুজো করলে দেবী প্রসন্ন হন ও  ভক্তদের আকর্ষণ শক্তি ও সৌন্দর্য প্রদান করেন। 

চন্দ্রহাসোজ্জ্বলকরা শার্দূলবরবাহনা ।
কাত্যায়নী চ শুভদা দেবী দানবঘাতিনী ॥

ধ্যানম্ -
বন্দে বাঞ্ছিতমনোরথার্থায় চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাম্ ।
সিংহারূঢাং চতুর্ভুজাং কাত্যায়নীং য়শস্বনীম্ ॥
স্বর্ণবর্ণামাজ্ঞাচক্রস্থিতাং ষষ্ঠদুর্গাং ত্রিনেত্রাম্ ।
বরাভীতকরাং সগপদধরাং কাত্যায়নসুতাং ভজামি ॥
পটাম্বরপরিধানাং স্মেরমুখীং নানালঙ্কারভূষিতাম্ ।
মঞ্জীরহারকেয়ুরকিঙ্কিণীরত্নকুণ্ডলমণ্ডিতাম্ ॥
প্রসন্নবদনাং পল্লবাধরাং কান্তকপোলাং তুঙ্গকুচাম্ ।
কমনীয়াং লাবণ্যাং ত্রিবলীবিভূষিতনিম্ননাভিম্ ॥

স্তোত্রম্ -
কাঞ্চনাভাং বরাভয়পদ্মধরাং মুকুটোজ্জ্বলাং ।
স্মেরমুখীং শিবপত্নীং কাত্যায়নসুতে নমোঽস্তুতে ॥
পটাম্বরপরিধানাং নানালঙ্কারভূষিতাং ।
সিংহাস্থিতাং পদ্মহস্তাং কাত্যায়নসুতে নমোঽস্তুতে ॥
পরমানন্দময়ী দেবি পরব্রহ্ম পরমাত্মা ।
পরমশক্তি,পরমভক্তি, কাত্যায়নসুতে নমোঽস্তুতে ॥
বিশ্বকর্ত্রীং,বিশ্বভর্ত্রীং,বিশ্বহর্ত্রীং,বিশ্বপ্রীতাম্ ।
বিশ্বচিত্তাং,বিশ্বাতীতাং কাত্যায়নসুতে নমোঽস্তুতে ॥
কাং বীজা, কাং জপানন্দা কাং বীজজপতোষিতা ।
কাং কাং বীজজপাসক্তাং কাং কাং সন্তুতা ॥ ??  কাং বীজজপসংস্তুতাম্
কাঙ্কারহর্ষিণীং কাং কাং ধনদাং ধনমানসাম্ ।
কাং বীজজপকারিণীং কাং বীজতপমানসাম্ ॥
কাং কারিণীং কাং সূত্রপূজিতাং কাং বীজধারিণীম্ ।
কাং কীং কূং কৈং কৌং কঃ ঠঃ ছঃ স্বাহারূপণী ॥

কবচম্ -
কাত্যায়নী মুখং পাতু কাং কাং স্বাহাস্বরূপণী ।
ললাটং বিজয়া পাতু মালিনী নিত্যসুন্দরী ॥
কল্যাণী হৃদয়ং পাতু জয়া চ ভগমালিনী ॥

সপ্তমী - কালরাত্রি 
গর্দভবাহনা এই দেবী চতুর্ভূজা। বর, অভয়মুদ্রা, লোহার কাঁটা ও খড়্গ রয়েছে তার হাতে। রাত্রির মতো ঘন কালো রং বলে দেবীর নাম কালরাত্রি।  ঋগ্বেদের রাত্রিসুক্তে পরমাত্মাই রাত্রিদেবী। মহাপ্রলয়কালে এই রাত্রিরূপিণী মাতার কোলেই বিলয় হয় বিশ্বের।অনন্ত মহাকাশে নৃত্যরত কালভৈরবের দেহ থেকেই আবির্ভূতা ইনি দেবী যোগনিদ্রা মহাকালিকা বা কালরাত্রি নামে আখ্যাত । 

কালরাত্রি শনিগ্রহ এবং সিংহ রাশিকে   নিয়ন্ত্রণ করেন।  আখের গুড় দিয়ে পুজো করলে দেবী প্রসন্না হন । কালরাত্রি সব গ্রহের বাধা নাশ করেন। 

একবেণীজপাকর্ণপুরাননা খরাস্থিতা ।
লম্বোষ্ঠীকর্ণিকাকর্ণীতৈলাভ্যঙ্গশরীরিণী ॥
বামপাদোল্লসল্লোহলতাকণ্টকভূষণা ।
বর্ধনামূর্ধজা কৃষ্ণা কালরাত্রির্ভয়ঙ্করী ॥

ধ্যানম্ -
করালবদনাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাম্ ।
কালরাত্রিং করালীং চ বিদ্যুন্মালাবিভূষিতাম্ ॥
দিব্যলৌহবজ্রখড্গবামাধোর্ধ্বকরাম্বুজাম্ ।
অভয়ং বরদাং চৈব দক্ষিণোর্ধ্বাধঃ পাণিকাম্ ॥
মহামেঘপ্রভাং শ্যামাং তথা চ গর্দভারূঢাম্ ।
ঘোরদংষ্ট্রাকারালাস্যাং পীনোন্নতপয়োধরাম্ ॥
সুখপ্রসন্নবদনাং স্মেরাননসরোরুহাম্ ।
এবং সঞ্চিয়ন্তয়েত্কালরাত্রিং সর্বকামসমৃদ্ধিদাম্ ॥

স্তোত্রম্ -
হ্রীং কালরাত্রিঃ শ্রীং করালী চ ক্লীং কল্যাণী কলাবতী ।
কালমাতা কলিদর্পঘ্নী কপদীংশকৃপন্বিতা ॥
কামবীজজপানন্দা কামবীজস্বরূপিণী ।
কুমতিঘ্নী কুলীনাঽঽর্তিনশিনী কুলকামিনী ॥
ক্লীং হ্রীং শ্রীং মন্ত্রবর্ণেন কালকণ্টকঘাতিনী ।
কৃপাময়ী কৃপাধারা কৃপাপারা কৃপাগমা ॥

কবচম্ -
ওঁ ক্লীং মে হৃদয়ং পাতু পাদৌ শ্রীং কালরাত্রিঃ ।
ললাটং সততং পাতু দুষ্টগ্রহনিবারিণী ॥
রসনাং পাতু কৌমারী ভৈরবী চক্ষুষী মম ।
কটৌ পৃষ্ঠে মহেশানী কর্ণৌ শঙ্করভামিনী ।
বর্জিতানি তু স্থানানি য়ানি চ কবচেন হি ।
তানি সর্বাণি মে দেবী সততং পাতু স্তম্ভিনী ॥

মহা অষ্টমী - মহাগৌরী
জুঁই ফুলের মতো শ্বেত শুভ্র রং বলে দেবী মহাগৌরী। তিনি সন্তানবৎসলা, শিবসোহাগিনী, বিদ্যুদ্বর্ণা প্রসন্না । চতুর্ভূজা দেবী দুইহাতে ত্রিশূল, ডমরু ও অভয়মুদ্রা। দেবী বৃষবাহিনী ও শিবস্বরূপা। দেহের তিনি গুরুচক্র। 

মহাগৌরী বৃহস্পতি গ্রহ এবং বৃষ রাশিকে নিয়ন্ত্রণ করেন। মহাগৌরী ছোলা,হালুয়া ও শ্রী ফল (নারিকেল) দ্বারা পুজোয় তুষ্ট হন ।  মহাগৌরী অসত্য বিনাশ করেন। 

শ্বেতে বৃষে সমারূঢা শ্বেতাম্বরধরা শুচিঃ ।
মহাগৌরী শুভং দদ্যান্মহাদেবপ্রমোদদা ॥

ওঁ নমো ভগবতি মহাগৌরি বৃষারূঢে শ্রীং হ্রীং ক্লীং হুং ফট্ স্বাহা ।

ধ্যান-
বন্দে বাঞ্ছিতকামার্থং চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাম্ ।
সিংহারূঢাং চতুর্ভুজাং মহাগৌরীং য়শস্বীনীম্ ॥
পুর্ণেন্দুনিভাং গৌরীং সোমবক্রস্থিআতাং অষ্টমদুর্গাং ত্রিনেত্রাম্ ।
বরাভীতিকরাং ত্রিশূলডমরূধরাং মহাগৌরীং ভজেঽহম্ ॥
পটাম্বরপরিধানাং মৃদুহাস্যাং নানালঙ্কারভূষিতাম্ ।
মঞ্জীরহারকেয়ূরকিঙ্কিণীরত্নকুণ্ডলমণ্ডিতাম্ ॥
প্রফুল্লবদনাং পল্লবাধরাং কান্তকপোলাং ত্রৈলোক্যমোহনীম্ ।
কমনীয়াং লাবণ্যাং মৃণালাং চন্দনগন্ধলিপ্তাম্ ॥

স্তোত্রম্ -
সর্বসঙ্কটহন্ত্রী ত্বং ধনৈশ্বর্যপ্রদায়নী ।
জ্ঞানদা চতুর্বেদময়ী মহাগৌরীং প্রণমাম্যহম্ ॥
সুখশান্তিদাত্রীং, ধনধান্যপ্রদায়নীম্ ।
ডমরূবাদনপ্রিয়াং মহাগৌরীং প্রণমাম্যহম্ ॥
ত্রৈলোক্যমঙ্গলা ত্বং হি তাপত্রয়বিনাশিনীং প্রণমাম্যহম্ ।
বরদা চৈতন্যময়ী মহাগৌরীং প্রণমাম্যহম্ ॥

কবচম্ -
ওঙ্কারঃ পাতু শীর্ষে মাং, হ্রীং বীজং মাং হৃদয়ে ।
ক্লীং বীজং সদা পাতু নভো গৃহো চ পাদয়োঃ ॥
ললাটকর্ণৌ হূং বীজং পাতু মহাগৌরী মাং নেত্রঘ্রাণৌ ।
কপোলচিবুকৌ ফট্ পাতু স্বাহা মাং সর্ববদনৌ ॥
সিদ্ধগন্ধর্বয়ক্ষাদ্যৈরসুরৈরমরৈরপি ।
সেব্যমানা সদা ভূয়াত্ সিদ্ধিদা সিদ্ধিদায়িনী ॥

মহা নবমী - সিদ্ধিদাত্রী 
দেবী সিদ্ধিদাত্রী অণিমা, লঘিমা, মহিমা, গরিমা, প্রাপ্তি, প্রকাম্য, ঈশিত্ব ও বশিত্ব, - এই আট প্রকার সিদ্ধি প্রদান করেন। দেবী অপরূপ লাবণ্যময়ী চতুর্ভুজা, ত্রিনয়নী, প্রাতঃসূর্যের মত রঞ্জিত। নয়দিন পুজোর শেষে দেবী সিদ্ধিদাত্রী সমস্ত সিদ্ধি প্রদান করেন। 

 সিদ্ধিদাত্রী শুক্রগ্রহ এবং কর্কট ও মীন রাশিকে নিয়ন্ত্রণ করেন।   চালের পায়েস ও কালো তিল দিয়ে পুজো করলে দেবী প্রসন্না হন । দেবী সিদ্ধিদাত্রী অকাল মৃত্যু থেকে রক্ষা করেন। 

ধ্যানম্ -
বন্দে বাঞ্ছিতমনোরথার্থং চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাম্ ।
কমলস্থিতাং চতুর্ভুজাং সিদ্ধিদাং য়শস্বনীম্ ॥
স্বর্ণবর্ণনির্বাণচক্রস্থিতাং নবমদুর্গাং ত্রিনেত্রাম্ ।
শঙ্খচক্রগদা পদ্মধরাং সিদ্ধিদাত্রীং ভজেঽহম্ ॥
পটাম্বরপরিধানাং সুহাস্যাং নানালঙ্কারভূষিতাম্ ।
মঞ্জীরহারকেয়ূরকিঙ্কিণীরত্নকুণ্ডলমণ্ডিতাম্ ॥
প্রফুল্লবদনাং পল্লবাধরাং কান্তকপোলাং পীনপয়োধরাম্ ।
কমনীয়াং লাবণ্যাং ক্ষীণকটিং নিম্ননাভিং নিতম্বনীম্ ॥

স্তোত্রম্ -
কঞ্জনাভাং শঙ্খচক্রগদাধরাং মুকুটোজ্জ্বলাম্ ।
স্মেরমুখি শিবপত্নি সিদ্ধিদাত্রি নমোঽস্তু তে ॥
পটাম্বরপরিধানাং নানালঙ্কারভূষিতাম্ ।
নলিনস্থিতা নলিনাক্ষী সিদ্ধিদাত্রী নমোঽস্তু তে ॥
পরমানন্দময়ী দেবী পরব্রহ্ম পরমাত্মা ।
পরমশক্তি পরমভক্তি সিদ্ধিদাত্রী নমোঽস্তু তে ॥
বিশ্বকর্ত্রী বিশ্বভর্ত্রী বিশ্বহর্ত্রী বিশ্বপ্রীতা ।
বিশ্বার্চিতা বিশ্বাতীতা সিদ্ধিদাত্রী নমোঽস্তু তে ॥
ভুক্তিমুক্তিকারণী ভক্তকষ্টনিবারিণী ।
ভবসাগরতারিণী সিদ্ধিদাত্রী নমোঽস্তু তে ॥
ধর্মার্থকামপ্রদায়িনী মহামোহবিনাশিনী ।
মোক্ষদায়িনী সিদ্ধিদাত্রী ঋদ্ধিদাত্রী নমোঽস্তু তে ॥

কবচম্ -
ওঙ্কারঃ পাতু শীর্ষে মাং, ঐং বীজং মাং হৃদয়ে ।
হ্রীং বীজং সদা পাতু নভো গৃহো চ পাদয়োঃ ॥
ললাটকর্ণৌ শ্রীং বীজং পাতু ক্লীং বীজং মাং নেত্রঘ্রাণৌ ।
কপোলচিবুকৌ হসৌঃ পাতু জগত্প্রসূত্যৈ মাং সর্ববদনে ॥

সন্ধিপুজো 
অষ্টমী তিথির শেষ দুই দন্ড আর নবমী তিথির প্রথম দুই দন্ড এই আটচল্লিশ মিনিট ব্যাপি সন্ধিকাল। এসময় দেবী চামুন্ডার পুজো হয়। এই সময় বলি প্রশস্ত। 
বিজয়া দশমী
দীর্ঘ নয়দিন ব্যাপি মাতৃ আরাধনার পর আসে দশমীর সকাল। মা ফিরে যান কৈলাশে। আমরা প্রতীক্ষা করি আরেকটা বছরের। বলি - "পুনরাগমনায় চ। মা আবার ফিরে এসো।"
কথিত আছে চতুর্বিংশতি ত্রেতাযুগে ভগবান শ্রীরাম  বিজয়াদশমীর
অপরাজিতা পুজো :-
দেবীর দর্পনে  বিসর্জনের পর অপরাজিতা পুজো করা হয়। একটা অপরাজিতার লতা নিয়ে তাকে দেবী জ্ঞানে পুজো করা হয়। পূর্বে রাজারা এই অপরাজিতার লতা হাতে বেঁধে যুদ্ধে বের হতেন। এই লতা অপরাজয়ের প্রতীক। 

রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২

Dakshina Kalika stotra


ওঁ কৃশোদরি মহাচণ্ডী মুক্তকেশিং বলীপ্রিয়ে।
কুলাচারপ্রসন্নাস্যে নমস্তে শঙ্করপ্রিয়ে।।

ঘোরদংষ্ট্রে কোটোরাক্ষি কিটিশব্দ প্রসাধিনী।
ঘুরঘোররাবাস্ফারে নমস্তে চিতাবাসিনী।।

বন্ধুকপুষ্পসঙ্কাশে ত্রিপুরে ভয়নাশিনী।
ভাগ্যোদয়সমুৎপন্নে নমস্তে বরবন্দিনী।।

জয় দেবি জগদ্ধাত্রী ত্রিপুরাদ্যে ত্রিদেবতে।
ভক্তেভ্যো বরদে দেবি মহষঘ্নি নমোহস্তুতে।।

ঘোরবিঘ্নবিনাশায় কুলাচারসমৃদ্ধয়ে।
নমমি বরদে দেবি মুণ্ডমালা বিভূষনে।।

রক্তধারাসমাকীর্ণে করকাঞ্চীবিভূষিতে।
সর্ব্ববিঘ্নহরে কালী নমস্তে ভৈরবপ্রিয়ে।।

নমস্তে দক্ষিণামূর্ত্তে কালী ত্রিপুরভৈরবী।
ভিন্নাঞ্জনচয়প্রক্ষে প্রবীণশবসংস্থিতে।।

গলচ্ছ্রোণিতধারাভিঃ স্মেরাননসরোরুহে।
পীনোন্নতকুচদ্বন্দ্বো নমস্তে ঘোরদক্ষিণে।।

আরক্তমুখশান্তাভির্নেত্রালিভির্বিরাজিতে।
শবদ্বয় কৃতোত্তংসে নমস্তে মদবিহ্বলে।।

পঞ্চাশন্মুণ্ডঘটিতমালা লোহিত লোহিতে।
নানামণিবিশোভাঢ্যে নমস্তে ব্রহ্মসেবিতে।।

শবাস্থিকৃতকেয়ুর, শঙ্খ-কঙ্কন-মণ্ডিতে।
শববক্ষঃ সমারুঢ়ে নমস্তে বিষ্ণুপূজিতে।।

শবমাংস কৃতগ্রাসে অট্টহাসে মুহুর্মুহু।
মুখশীঘ্রস্মিতামোদে নমস্তে শিববন্দিতে।।

খড়্গমুণ্ডধরে বামে সব্যে (অ) ভয়বরপ্রদে।
দন্তুরে চ মহারৌদ্রে নমস্তে চণ্ডনাদিতে।।

ত্বং গতিঃ পরমা দেবি ত্বং মাতা পরমেশ্বরী।
ত্রাহি মাং করুণাসাদ্রে নমস্তে চণ্ডনায়িকে।।

নমস্তে কালিকে দেবি নমস্তে ভক্তবৎসলে।
মুর্খতাং হর মে দেবি প্রতিভা জয়দায়িনী।।

গদ্যপদ্যময়ীং বাণীং তর্কব্যাকরণাদিকম্।
অনধীতগতাং বিদ্যাং দেহি দক্ষিণকালিকে।।

জয়ং দেহি সভামধ্যে ধনং দেহি ধনাগমে।
দেহি মে চিরজীবিত্বং কালিকে রক্ষ দক্ষিণে।।

রাজ্যং দেহি যশো দেহি পুত্রান্ দারান্ ধনং তথা।
দেহান্তে দেহি মে মুক্তিং জগন্মাতঃ প্রসীদ মে।।

ওঁ মঙ্গলা ভৈরবী দুর্গা কালিকা ত্রিদশেশ্বরী।
উমা হৈমবতীকন্যা কল্যাণী ভৈরবেশ্বরী।।

কালী ব্রাহ্মী চ মাহেশী কৌমারী বৈষ্ণবী তথা।
বারাহী বাসলী চণ্ডী ত্বাং জগুর্ম্মুনয়ঃ সদা।।

উগ্রতারেতি তারেতি শিবত্যেকজটেতি চ।
লোকোত্তরেতি কালেতি গীয়তে কৃতিভিঃ সদা।।

যথা কালী তথা তারা তথা ছিন্না চ কুল্লকা।
একমূর্ত্তিশ্চতুর্ভেদ দেবি ত্বং কালিকা পুরা।।

একত্রিবিধা দেবী কোটিধানন্তরূপিনী।
অঙ্গাঙ্গিকৈর্নামভেদৈঃ কালিকেতি প্রগীয়তে।।

শম্ভুঃ পঞ্চমুখেনৈব গুণান্ বক্তুং ন তে ক্ষমঃ।
চাপল্যৈর্যৎ কৃতং স্তোত্রং ক্ষমস্ব বরদা ভব।।

প্রাণান্ রক্ষ যশো রক্ষ পুত্রান্ দারান্ ধনং তথা।
সর্ব্বকালে সর্ব্বদেশে পাহি মাং দক্ষিণকালিকে।।

যঃ সংপূজ্য পঠেৎ স্তোত্রং দিবা বা রাত্রিসন্ধ্যায়োঃ।
ধনং ধান্যং তথা পুত্রং লভতে নাত্র সংশয়।।

শ্রীমন্মহাকালবিরচিত শ্রীমদ্দক্ষিণকালিকাস্তোত্রং সম্পূর্ণম্।।

রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০২২

বিল্ববৃক্ষ

বিল্ববৃক্ষ মাহাত্ম্যঃ

বেলগাছ হিন্দুধর্মে একটি পবিত্র বৃক্ষ। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম Aegle marmelos। 

বিল্ববৃক্ষ শিবস্বরূপ। এর তিনটি পাতার মাঝেরটি শিবস্বরূপ, বামপত্র ব্রহ্মাস্বরূপ ও ডানপত্র বিষ্ণুস্বরূপ। বেলপাতার সামনের অংশকে অমুর্যাম বলে। বেলের তিনটি পাতা সৃষ্টি-স্থিতি-লয় বা  ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর বা সত্ত্ব-রজ-তম কে নির্দেশ করে। 

ঋগ্বেদের শ্রী সূক্তে বেলের উপকারীতার কথা বলা আছে। নেপালে বিয়ের আগে যে অনুষ্ঠান করে তাকে বেল-বিবাহ বলে। বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিকে বেলগাছ লাগানো শুভ। এতে সম্পদ প্রাপ্তি হয়। দক্ষিনদিকে দূর্ঘটনা বা বাধামুক্তি, পশ্চিমে সন্তানভাগ্য, পূর্বে সম্পদ ও শান্তি আসে। 

বেলফলের অপর নাম শ্রীফল। কথিত আছে মহালক্ষ্মীর স্তন হতে বেলের সৃষ্টি বলে এই ফলের নাম শ্রীফল। 


বিল্ববৃক্ষের ধ্যানঃ

ওঁ চতুর্ভুজং বিল্ববৃক্ষং রজতাভং বৃষস্থিতম্।

নানালঙ্কার সংযুক্তং জটামণ্ডলধারিণম্।।

বরাভয়করং দেবং খড়্গখট্বাঙ্গ ধারিণম্।

ব্যাঘ্রচর্মাম্বরধরং শশিমৌলি ত্রিলোচনম্।।

ওঁ বিল্ববৃক্ষায় নমঃ

🔱🔱🔱🔱🔱🔱🔱🔱🔱🔱🔱🔱🔱

প্রণাম মন্ত্রঃ

ওঁ মহাদেবপ্রিয়করো বাসুদেব প্রিয়ঃ সদা।

উমাপ্রীতিকরো বৃক্ষো বিল্বরূপ নমোহস্তু তে।।

বিল্ববৃক্ষ যেখানে থাকে সেই স্থান বারাণসীপুরী। আর এই বৃক্ষ এতটাই পবিত্র যে এর ছায়া মাড়ালে আয়ু নাশ হয় ও পাদস্পর্শে শ্রী নাশ হয়।

বেলগাছের উপকারীতা :-

* বেলফল সরষের তেলের মিশ্রণে যদি কোনও ব্যথায় মালিশ করা হয় তবে খুব উপকার পাওয়া যায়।

* বেল ফলের গুঁড়ো দুধের সাঙ্গে পান করলে রক্তাল্পতার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

* বেলফল চিনির সঙ্গে সেবন করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

* হাই ব্লাড সুগার রোগে নিয়মিত বেল ফল খেলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

* বেলফল ঠাণ্ডা জলে ভিজিয়ে মিছরি সহকারে পান করলে লিভারের সমস্যা দূর হয়।

* বেলের গুঁড়ো যদি ক্ষত স্থানে লাগানো হয় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি উপশম হয়।

  

বৃহস্পতিবার, ৫ মে, ২০২২

শাম্ব সদাশিব

বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

সরস্বতী মহাভাগে

 সরস্বতী মহাভাগে
মূল পাতা ) : ছবি- রাজা রবি বর্মা 
          সময় বড় বেগবান, সে স্থির থাকতে চায় না মোটেই। আর যত সময় এগিয়ে চলে ততই মানুষের দক্ষতাগত বিকাশের সাথে সাথে বৌদ্ধিক বিকাশ আসতে থাকে কমে। এ যেন ভাষার বিকৃতি। একটা শব্দ ধীরে ধীরে তৎসম তদ্ভবের মাধ্যমে হারায় তার আসল উচ্চারণ ও অর্থ।  ঠিক তেমনি শাস্ত্র আর ধারনাতে লাগে লৌকিক গালগল্পের ধুলো। 

দীর্ঘদিন ধরেই একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় বারম্বার, যে বিদ্যার দেবী মা সরস্বতী কে ? সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা কি তার স্বামী না পিতা ? ব্রহ্মা কি নিজ কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন ?
প্রথমেই বলি, এইসব আজগুবি প্রশ্নের আবির্ভাব ঘটেছে পুরাণের মতো কিছু গ্রন্থের প্রক্ষেপন আর হিন্দুধর্মের প্রতি বিদ্বেষযুক্ত কিছু নরাধমের কারনে। আসুন এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর খুঁজি।
আমাদের সবার আগে জানতে হবে সরস্বতী কে, আর ব্রহ্মাই বা কে। ব্রহ্মা হলেন হিন্দু ত্রিদেবের অন্যতম। আর এই ত্রিদেব হলেন নির্গুণ নিরাকার ব্রহ্মের স্বগুণ সাকার রূপ। সুতরাং ব্রহ্মা কোনও মানব বা দেবতা নন যে তার উপর মানবিক বা দৈবিক গুণ বা নিয়ম আরোপিত হবে। 

এবার আসি তার সৃষ্টির কথায়। ব্রহ্মা তার প্রতি কল্পের সৃষ্টিতে সবকিছু সৃজন করেন এবং পরার্ধকল্পে সৃষ্টি ধ্বংস করে ঘুমোতে যান। এক কল্পে একাত্তর মন্বন্তর ও এক মন্বন্তরে একহাজার মহাযুগ। মোট ৪৩,২০,০০০ বছরে এক মহাযুগ। 
আর ব্রহ্মার সৃষ্টির জন্য স্ত্রীর প্রয়োজন হয় না। তার ইচ্ছামাত্রেই সৃষ্টি হয়। তার দশ হাজার মানসপুত্র ইচ্ছামাত্রেই সৃষ্টি হয়েছে। যারা এই কল্পের আদি পুরুষ। 

ঠিক এই কারণেই ব্রহ্মার মূর্তি প্রচলিত নয়। কারন স্রষ্টাকে নিরাকার দেখানোর রীতি প্রাচীন। তিনি সর্বময়। 

এবার আসি দেবী সরস্বতীর কথায়। 
দেবী সরস্বতী হলেন আদিদেবী। আদিশক্তি। কেনোও নারী নন। আমাদের হিন্দু দর্শন মতে সৃষ্টির মূল তত্ত্ব দুটি। প্রকৃতি ও পুরুষ। প্রকৃতি আর পুরুষের মাঝে মায়ারূপ আঁঠাই জগতকে ভৌতিক রূপ দান করেছে। ক্ষিতী, অপ, তেজ, মরূৎ ও ব্যোম হল এই প্রকৃতি-পুরুষের সম্মিলিত রূপ। আর প্রকৃতি অর্থাৎ শক্তিকে আমরা নারীরূপে কল্পনা করি। তাই দেবী সরস্বতীর নারীরূপ।

পরবর্তিতে এই দেবী সরস্বতী হতেই অন্যান্য দেবীর উৎপত্তি। পুস্পাঞ্জলি মন্ত্রেও তাই দেবীকে ভদ্রকালী বলা হয়েছে। 

নমঃভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
মা কালীর গলায় পঞ্চাশটি নরমুণ্ড আসলে পঞ্চাশটি বর্ণের প্রতীক। মা তো বাগেশ্বরী। তাই ঋকমন্ত্রে মাকে বাক রূপে ঘোষণা করা হয়েছে। অপরদিকে তান্ত্রিক দেবী তারা তো আসলে নীলসরস্বতী। নিরুক্তকার যাস্ক আবার দেবী সরস্বতীকে নদী বলে উল্লেখ করেছেন। যা সরস্বতী সভ্যতার ভিত্তি। ‘তত্র সরস্বতী ইতি এতস্য নদীবদ্বেতাবচ্চ নিগমা ভবন্তি।’ স্কন্দপুরাণের প্রভাসখণ্ডেও যাস্কের মতের সমর্থন দেখা যায়। আবার মোহদুষ্ট শুম্ভকে অদ্বৈত জ্ঞান দান করেছিলেন। 'একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়াকা মমাপরা'।

দেবী সরস্বতী কিন্তু আবার যে সে নদী নন।  দেহের মধ্যে প্রবহমান গঙ্গা যমুনা ও সরস্বতীর অন্যতমা। অর্থাৎ তিনিই জ্ঞানরূপিনী সুমুম্না। 

একজন প্রশ্ন তুলেছেন পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রে 'কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে' শব্দবন্ধ নিয়ে। মহাকবি কালীদাসের এই সরস্বতী স্তবের ভুল কপিপেষ্ট হয়েছে এখানে। কুচ নয় শব্দটি কুর্চ হবে। কুর্চ মানে মধ্যমা ও অঙ্গুষ্ঠের অগ্রভাগের স্পর্শস্থল। সরস্বতীর ছবি লক্ষ্য করুন ঠিক মধ্যমা ও অঙ্গুষ্ঠের স্পর্শস্থলেই মুক্তোর হার আছে। জপমালা। 
সুতরাং এটা পরিস্কার যে স্রষ্টা সত্ত্বার নারীরূপই হলেন দেবী সরস্বতী । তিনি না কারোর স্ত্রী না কারোর কন্যা। 

আবার প্রাচীন কালে রাজাকে বলা হত প্রজাপতি আর সভা ও সমিতিকে তার কন্যা বলা হত। অর্থাৎ রূপক। তাই কোথাও কন্যা বা স্ত্রী বলা হলেও তা রূপকার্থে হতে পারে। ( ঋগ্বেদ ১০/৬১/৭) 
শতপথ ব্রাহ্মণে দেবী সরস্বতীকে বাক বাণী ( 7/5/1/31), জিহ্বা ( 7/9/1/14), বাণী রশ্মি পৃথিবী ইন্দ্রিয় (2/5/1/11) বলা হয়েছে। তাই আবার প্রমাণিত যে দেবী সরস্বতী কারোর কন্যা বা স্ত্রী নন। 

দেবী সরস্বতীর সাথে ব্রহ্মা ও মনুর যৌনতা নিয়ে গল্প ফেঁদেছেন এক দেববিদ্বেষী। তিনি জানেনই না যে একমাত্র ব্রহ্মচারীরই অধিকার সরস্বতী মন্দিরে প্রবেশ করার। সুতরাং এসব গালগল্পের কোনও মান্যতা নেই। হ্যাঁ, কিছু নকল পুরাণে প্রক্ষিপ্ত শ্লোক দিয়ে এসব প্রমাণ করার চেষ্টাও হয়েছে যার কোনও অথেনটিকেশন নেই। মনে রাখবেন পুরাণে বহুবার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রক্ষেপন হয়েছে। তাই কিছু বলার আগে রেফারেন্স সহ দেবেন যেটা অনুসন্ধান করে বোঝা যাবে যে আপনি ঠিক না ভুল পথে চলেছেন। 

তবে রূপকার্থে ধরলে দেহস্থ সুমুম্না রূপিনী সরস্বতী মিলিত হয়েছেন ব্রহ্মরূপ সহস্রার সঙ্গে। আর যোগী তার ব্রহ্মবস্তুকে সুমুম্না সরস্বতী পথে সহস্রায় স্থাপন করলেই এই জন্ম জন্মান্তরের চক্র হতে মুক্তি ঘটে। তাই স্ত্রী বলা অন্যায় নয়। অপরদিকে সহস্রার হতেই সুমুম্না সরস্বতীর শুরু বলে কন্যা রূপকও অর্থহীন নয়। 

লক্ষ কোটি বছরেরও আগে-
ছিল যবে সব নিরাকার, মহাশূন্য মহাঅন্তহীন, 
সেথা কোন বৈষম্যের বশে পলকেরও ভগ্নাংশ সময়ে
ভীষণ প্রণবনাদে হল বিস্ফোরণ। 
সেই সে প্রণব হল তোমার প্রথম প্রকাশ, 
আদিপরাশক্তি শব্দব্রহ্ম বাগ-বাগীশ্বরী।
তোমার বীণার সুরে সৃষ্টি হয় গ্রহ নিহারিকা, 
তোমার বীণার সুরে সুপারনোভা ঘটে বারবার, 
জন্ম-মৃত্যু-জীবনের সুরের লহরী।
গায়ত্রীর চব্বিশ চরণে প্রাতঃ-সন্ধ্যা-মধ্যাহ্নে তোমার গমন, 
সবিতা তুমি প্রসবিছ জগৎ সংসার। 
হে বরদে ! তোমারর কুর্চমূলে যে মুকুতা হার
সে হারে জপিছ সদা সময়ের কাষ্ঠা-দন্ড-পল, 
গণিছ সৃষ্টি-স্থিতি ভীষণ সংহার। 
কি সাধ্য আমার দেবী গাহি তব মহিমা অপার, 
জগৎসার মাঝে ধূলিকণা আমি। 
নিন্দুকের কিবা সাধ্য ধরে তব দোষ, 
সমুদ্রের জলকণা সমুদ্রেরে করি পরিহাস 
নিজেরেই পরিহাসে জানি। 
শ্রী তুমি, তুমি বাণী, তুমি মাগো গুণের আকর, 
শ্বেতকমলের পরে মরালবাহিনী, 
তব নাম মুখরিত হোক সামগানে, 
ঋকমন্ত্রে ঘোষিত  হোক তোমার কাহিনী।

সবশেষে বলি মা সরস্বতী জ্ঞানের দেবী । তার আশীর্বাদের আলোকে মনের মলিনতা দূর হয়ে যাক।