আপেল কি সত্যিই পড়েছিল ?
(দেখুন - সূচিপত্র )
মহাকর্ষ আর গতিসূত্র নিয়ে আলোচনার সময় বিখ্যাত গণিতজ্ঞ স্যার আইজ্যাক নিউটনের নাম উঠে আসে। তিনি নাকি আপেল বাগানে আপেল পড়তে দেখে মহাকর্ষের কথা চিন্তা করেন।
আবার গতিসূত্রও নাকি তার অবদান। এসব কি সত্যি নাকি হিন্দু জ্ঞান টুকে দিয়েছিলেন ?
নিউটনের 1800 বছর পূর্বে ঋষি কণাদ তার বৈশেষিক দর্শনে বলেছেন Laws of Motion এর তিনটি সূত্র।
প্রথম সূত্র
वेगः निमित्तविशेषात कर्मणो जायते |
ইংরেজি : Change of motion is due to impressed force.
(The law stated that an object at rest tends to stay at rest and an object in motion tends to stay in motion with the same speed and in the same direction unless acted upon by an unbalanced force.)
বাংলা : বাহ্যিক বল প্রয়োগে বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন করতে বাধ্য না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থিরই থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সমবেগে অর্থাৎ সমদ্রুতিতে চলতে থাকবে।
দ্বিতীয় সূত্র
वेगः निमित्तापेक्षात कर्मणो जायते नियतदिक क्रियाप्रबन्धहेतु |
ইংরাজি : Change of motion is proportional to the impressed force and is in the direction of the force.
বাংলা: বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার তার উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ক্রিয়া করে।
তৃতীয় সূত্র
वेगः संयोगविशेषविरोधी |
ইংরাজি : Action and reaction are equal and opposite.
বাংলা: প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।
অর্থাৎ সূত্র একই আছে, কেবল ভাষা বদলেছে
মহাকর্ষ
এবার আসুন মহাকর্ষের ধারণা সম্পর্কে আলোচনায়। নিউটনের আপেল পড়ার কয়েক হাজার বছর পূর্বেই মহাকর্ষের ধারণা দিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থ ঋগ্বেদ।
সবিতা যন্ত্রৈঃ পৃথিবী মরভণাদস্কম্ভনে সবিতা দ্যামদৃংহৎ।
অশ্বমিবাধুক্ষদ্ধু নিমন্তরিক্ষমতূর্তে বদ্ধং সবিতা সমুদ্রম।। (ঋগ্বেদ ১০/১৪৯/১)
অর্থাৎ : সূর্য্য রজ্জুবৎ আকর্ষণ দ্বারা পৃথিবীকে বাঁধিয়া রাখিয়াছে। নিরাধার আকাশে দ্যুলোকের অন্যান্য গ্রহকেও ইহা সুদৃঢ় রাখিয়াছে। অচ্ছেদ্য আকর্ষণ রর্জ্জুতে আবদ্ধ, গর্জনশীল গ্রহসমূহ নিরাধার আকাশে অশ্বের ন্যায় পরিভ্রমণ করিতেছে।
আবার
মহাবিজ্ঞানী ভাস্করাচার্য্য (১১৫০ খ্রিঃ) তাঁর সিদ্ধান্ত শিরোমণি নামক জ্যোতিঃশাস্ত্রের গোলাধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন-
“আকৃষ্টি শক্তিশ্চ মহী তয়া যৎ স্বস্থং স্বাভিমুখী করোতি।
আকৃষ্যতে তৎ পততীব ভাতি সমে সমন্তাৎ কুবিয়ং প্রতীতিঃ।।”
অর্থাৎ : সর্ পদার্থের মধ্যে এক আকর্ষণ শক্তি বিদ্যমান আছে, যে শক্তি দ্বারা পৃথিবী আকাশস্থ পদার্থকে নিজের দিকে নিয়ে আসে। যাকে এ আকর্ষণ করে তা পতিত হল বলে মনে হয়।
সুতরাং বলাই যায় ইউরোপের বিজ্ঞানের বিজয়রথ তৈরি হয়েছিল বহুশতাব্দ সহস্রাব্দ পূর্বে ভারতে।