শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২০

কালী রহস্যম

 "শ্যামা মা কি আমার কা‌লো রে ,
কা‌লো রু‌পে দিগম্বরী, 
হৃ‌দিপদ্ম ক‌রে মোর আ‌লো‌রে ।" 
কমলাকান্তের এই বহুল শ্রুত পদটি শুনেই মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন জাগে, কালী কি সত্যিই কালো ? যিনি জগৎপ্রসবিনী তার এই অসিতরুপ কেন ? 

যদি আমরা তন্ত্রের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, মহানির্বানতন্ত্রের চতুর্থ উল্লাসের ২৫ তম শ্লোকে বলা হয়েছে  "সৃ‌ষ্টেরা‌দৌ ত্ব‌মেকাসীৎ ত‌মোরুপম্ অ‌গোচরম্ ।" অর্থাৎ সৃ‌ষ্টির আ‌দি‌তে দেবী একা‌কিন তামসীরু‌পে অদৃশ্য ভা‌বে বিরা‌জিতা ছি‌লেন । 
বিজ্ঞান বলে বর্ণমণ্ডলের সাতটা রং একসাথে মিলিয়ে দিলে কালো রংয়ে পরিণত হয়। অর্থাৎ সকল রং, সকল বর্ণ, সকল সৃষ্টি যেখানে একসাথে মিশেছে সেই সত্তাই হলো কালী। এজন্যই এই  ত‌মোময়ী আ‌দিমূ‌র্তির রং কা‌লো । জগ‌তের সব রং মি‌শে‌ছে এই  গাত্রব‌র্ণে । 
ত‌বে কোনও কোনও সাধক ভিন্ন ব্যাখ্যা দি‌য়ে‌ছেন । ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ ব‌লে‌ছেন,  কা‌লী কি আমার কা‌লো ? দু‌রে তাই কা‌লো । জান‌তে পার‌লে কা‌লো নয়।আকা‌শের নীল বর্ণ ,দুর ‌থে‌কে কা‌ছে গি‌য়ে দে‌খো, কোন রং নেই। 

 এবার আসি কালীর  করালবদনা মূর্তির প্রসঙ্গে  
কালীমূ‌র্তিতেমরা দে‌খি যে  দেবী তার দাঁত দি‌য়ে জিভ চে‌পে রে‌খে‌ছেন। মু‌খের দু পাশ দি‌য়ে রুধিরধার‌া গড়িয়ে পড়‌ছে। এখানে জিভ লোভের প্রতীক, আর দাঁত সংযমের। লোভাদি রিপুকে সংযমের দশন দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখাটাই এই রুপের ব্যাখ্যা। 
অপরদিকে কালী সংহারকর্ত্রী । 
“কলয়তি ভক্ষয়তি সর্বমেতদত্র প্রলয়কালে ইতি কালী”- অর্থাৎ প্রলয়কালে যিনি জগৎপ্রপঞ্চকে ভক্ষষ করেন তিনিই কালী। প্রলয়কা‌লে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মান্ড তার করালবদনে লয়প্রাপ্ত হয়।সব‌কিছু গ্রাস ক‌রেন তি‌নি । তাই রক্তধারা তার ও‌ষ্ঠের দু'পাশ দি‌য়ে ঝ‌ড়ে প‌ড়ে‌ছে। 

দেবীর ত্রিনয়ণা 
আমরা যদি শ্রী শ্রী চণ্ডী দেখি তবে তাতে পাই, 
' প্রলয়ানল ধূম্রাভে চন্দ্রসূর্য্যাগ্নি লোচনে।' 
অর্থাৎ দেবীর তিনটি নেত্র চন্দ্র সূর্য ও অগ্নিস্বরূপ।আবার অতীত,বর্তমান,ভ‌বিষ্যৎ বা স্বর্গ,মর্ত্য,পাতালও বলতে পারেন। রামপ্রসাদের গা‌নেও আ‌ছে, মা‌য়ের আ‌ছে তিন‌টি নয়ণ ,চন্দ্র,সূর্য্য আর হুতাশন ।‌

দেবীর গলায় মুণ্ডমালা :
দেবী কালীকার গলায় পঞ্চাশটি সদ্যছিন্ন মুণ্ডের মালা। যেগুলো হতে রক্তের স্রোত ঝরে পড়ছে। এই সদ্যছিন্ন মুণ্ডগুলির এক একটি এক একটি বর্ণের প্রতীক।   অ কার থে‌কে ক্ষ কার পর্যন্ত ৫০ টি ব‌র্ণের প্রতীক এই পঞ্চাশটি মুণ্ড । কালী পঞ্চশৎ বর্ণময়ী। এই  বর্ণমালাই সর্বশা‌স্ত্রের একক ,শব্দসৃ‌ষ্টির মূল। দেবী সর্ব‌বিদ্যার অ‌ধিষ্ঠাত্রী ব‌লে ওই মূল বর্ণগু‌লি‌কে ক‌ন্ঠমালায় ধারণ ক‌রে‌ছেন। 

আর এখানে  ব‌র্ণের প্রতীক হিসা‌বে সদ্যছিন্ন নরমুন্ড কেন ? কারণ মুণ্ডই মানুষের দেহের প্রধান অংশ যা মানুষকে মানুষ করে। এখানেই থাকে প্রজ্ঞা ও বুদ্ধি । তাইতো দেবী মুণ্ডমালিনী। 

শবরূপী শিব মায়ের পা‌য়ের তলায়  :
'মুন্ডমালিনীং দিব্যা সতত অট্টহাস্যকারীনিম, শবরুপি মহাদেব হৃদয়পরি সংস্থিতাম।'
মহাদেব শবরুপে দেবীর পদতলে বিরাজ করছেন। কিন্তু কেন ? কারণ শিব নিষ্ক্রিয় পুরুষ আর কালী হলেন সক্রিয় প্রকৃতি । তাই তি‌নি শবরুপী শিব, মা আদিপ্রকৃতির অধীনস্থ ।   ‌নি‌ষ্ক্রিয়তার উপরে ক্রিয়‌াশীলতার  আ‌ধিপত্য। সাংখ্য অনুসারে  পুরুষ সা‌ক্ষিস্বরুপ আর প্রকৃতি ক্রিয়াময়ী। তাই শ‌ক্তির পদত‌লে শি‌ব । শঙ্করাচার্য্যও বলে‌ছেন, শ‌ক্তিযুক্ত না হ‌লে শিবেরও স্পন্দন ক্ষমতা নেই । তাই দেবীর পা‌য়ের তলায় নিশ্চল হ‌য়ে প‌ড়ে র‌য়ে‌ছেন শিব ।‌ তন্ত্রমতে , শ‌ক্তির দু‌টি অবস্থা, নি‌ষ্ক্রিয় ও ক্রিয়‌াশীল। শ‌ক্তি যখন নি‌ষ্ক্রিয় তখন সে শিব ।আর যখন ক্রিয়াশীল ওজাগ্রত তখন সে কালী। তাই কালী ও শিব দুই নিত্যরু‌পে এই  মূ‌র্তি‌তে প্রকা‌শিত । 
প্রকৃতপ‌ক্ষে  শবরুপ শি‌বের উপর দন্ডায়মান কালী।  দ‌ক্ষিণা কালীর মূ‌র্তি‌তে দেবী শি‌বের উপর বিপরীতরতাতুরা বা র‌তি‌ক্রিয়ার বিপরীত ভ‌ঙ্গিতে উপ‌বিষ্টা ।
অপরদিকে ভক্তকবি সাধককবি রামপ্রসাদ বলেছেন অন্য তত্ত্ব। তিনি বলেছেন - 
'দৈত্য‌বেটা ভূ‌মে প‌ড়ে,
মা দা‌ড়ি‌য়ে তার উপ‌রে, 
মা‌য়ের পাদস্প‌র্শে দানব‌দেহ শিবরুপ হয় রনস্থ‌লে।' 
অর্থাৎ মায়ের পাদস্পর্শে দৈত্য অর্থাৎ অশিব শিবে রূপান্তরিত হয়েছে। 

মায়ের কানে শিশুশবের কর্ণাভরণ :
 
তন্ত্র অনুনা‌রে দেবীর দুই কা‌নে দু‌টি শিশুর শব হল তার কর্ণাভরণ। বালকবৎ সরল নি‌র্বিকার তত্ত্বজ্ঞ সাধকই দেবীর প্রিয়। তারই প্র‌তীক স্বরুপ ওই দু‌টি শিশুর শরীর তি‌নি কা‌নের অলঙ্কার হিসা‌বে গ্রহন ক‌রে‌ছেন । 
খড়্গ :
দেবীর বাম দি‌কের উপ‌রের হা‌তে খড়্গ। এটি জ্ঞানের প্রতীক। জ্ঞানখড়্গের আঘাতে সাধ‌কের সবরকম বন্ধন মুক্ত ক‌রেন কালী। নিষ্কাম সাধ‌কের মোহপাশ তি‌নি জ্ঞানের অস্ত্র দি‌য়ে ছিন্ন ক‌রেন। 

ছিন্ন মুণ্ড :
 দেবীর বাঁদি‌কের নি‌চের হা‌তে রয়েছে ছিন্ন মুণ্ড  । ছিন্নমুণ্ডটি তত্ত্বজ্ঞা‌নের আধার। নিষ্কাম সাধ‌কের মোহপাশ থে‌কে তা‌কে মুক্ত ক‌রে‌ছেন দেবী উপ‌রের হাতেরধরা খড়্গ দি‌য়ে। আর তত্ত্বজ্ঞা‌নের আধার‌টি‌কে ধ‌রে রে‌খে‌ছেন নি‌চের হা‌তে। মু‌ক্তি সম্ভবা‌য়িত ক‌রে‌ছেন যি‌নি, তি‌নিই  মুক্ত জ্ঞানী‌কে আশ্রয় দিয়ে‌ছেন অভয়হ‌স্তে। 
অভয়মুদ্রা :
ডান‌দি‌কের উপ‌রের হাতে অভয় মুদ্রা আর নি‌চের হা‌তে বরদানের মুদ্রা দু‌টি হা‌তে মা সন্তান‌কে অভয় প্রদান করছেন। 
দিগম্বরী :
মা আমার দিগম্বরী। কারন তিনি  সর্বব্যা‌পিনী, ভূমাস্বরু‌পিনী। সামান্য বস্ত্রখন্ড দিয়ে তাকে আবৃত কর‌া যায় ন‌া । দশ‌দিক তার আভরণ। দিক অম্বর তার। সর্ববন্ধনহা‌রিনী মা‌য়ের যোগ্যবস্ত্র অ‌মিল ব‌লেই তি‌নি উল‌ঙ্গিনী । অসীম অম্বর সম্ব‌রিত না‌রে, তাই‌তে নাম ধ‌রে‌ছে দিগম্বরী। 
নরকরমালা:
দেবীর কোম‌রে কাটা হাতের মালা। জীব দেহত্যা‌গের পর সূক্ষ্ম শরী‌রে কালীকার  বিরাটরশরী‌রে অবস্থান ক‌রে। পুনর্জন্ম না হওয়া পর্যন্ত তার এই  দশা বহাল থা‌কে । হাত জী‌বের ক্রিয়াশ‌ক্তির আধার।সেই  হাত  মা নি‌জের  কোম‌রে জ‌ড়ি‌য়ে নি‌য়ে‌ছেন । তার ক‌টি‌দেশ তাই ন এছাড়াও আরও দু‌টি বিষয় এই  মালায়  নি‌হিত। প্রথমত, প্রলয়কা‌লেজী‌বের সর্বকর্ম্ম কালস্বরুপা কালীতেই  লীন হয়। আড়াল ক‌রে‌ছেন তার যো‌নি । অর্থাৎ সৃ‌ষ্টির স্থান।  সৃ‌ষ্টিস্থা‌নের অবরণ পরবর্তী কল্প প্রকা‌শের বীজ আধার, ক্রিয়াশ‌ক্তির হা‌তে ।

কালীপুজোর উপযুক্ত সময় :
শাস্ত্রানুসারে, 
'দিবাচার্দ্ধ প্রহরিকা চাদ‍্যন্তে পরমেশ্বরী।
ঋতু দণ্ডাত্নিকা সা চ রাত্রিরুক্তা মনীষিভিঃ।।
ততো বৈ দশ নাদ্যন্ত নিশা মহানিশা স্মৃতাঃ।
সর্বদা চ সমাখ‍্যাতা সর্ব সাধন কর্মনি।।' 

অর্থাৎ, সূর্যাস্তের পর অর্দ্ধ প্রহর বা  চার দণ্ড অর্থাৎ  ছিয়ানব্বই মিনিট সময়কে বলা হয় দিবাকাল, এবং তার পরবর্তী ছয়দণ্ড বা ১৪৪ মিনিট সময়কালকে বলে  রাত্রিকালে।  কার্ত্তিকমাসে সুর্যাস্ত যাবার সময় মোটামুটিভাবে ৫:২৫ মি ধরে  রাত্রিকালের সময় রাত ৯:২৫ মি পর্যন্ত। সূর্যাস্তের পর এই দশদন্ড সময় হলো দিবারাত্রকাল।

 এই দিবারাত্রকালের সময় বাদ দিয়ে পরবর্তী দশদণ্ড (২৪০ মিনিট) বা চারঘন্টা সময়কে বলা হয় নিশা ও মহানিশা।  তাহলে রাত ৯:২৫ মি থেকে গভীর রাত্রি ১:২৫ মি সময় হলো  নিশা মহানিশা সময়কাল। যা সর্ব সাধন মার্গের পথে  উৎকৃষ্ট সময় কাল। এই নিশা ও মহানিশা সময়কালই দেবী কালীকার পূজার সর্বোত্তমকাল। এই সময়ের মধ‍্যেই দেবীপূজা সম্পন্ন করার কথা শাস্ত্রে বলা হয়েছে।  

কালীপুজোর কিছু নিয়ম:-
তোড়লতন্ত্রে সদাশিব পার্বতীকে বলছেন, "হে পার্বতী, দেবী কালিকা, দেবী তারিণী ও ত্রিপুরসুন্দরীকে   পঞ্চতত্ত্বসহকারে ষোড়শোপচারে পূজা করা উচিত।

পূজয়েদ্ কালিকাং দেবী তারিণীং বাথ সুন্দরীম্।
ষোড়শেন উপচারেণ পঞ্চতত্ত্বেণ পার্ব্বতী।।



শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২০

দারিদ্র্য দহনকারী শিবাষ্টক

           দারিদ্র্য দহন শিবাষ্টক
    
        বিশ্বেশ্বরায় নরকার্ণব তারণায়
        কর্ণামৃতায় শশিশেখর ধারণায় |
        কর্পূরকান্তি ধবলায় জটাধরায়
        দারিদ্র্য দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায় || ১ ||

        গৌরীপ্রিয়ায় রজনীশ কলাধরায়
        কালান্তকায় ভুজগাধিপ কংকণায় |
        গঙ্গাধরায় গজরাজ বিমর্ধনায়
        দারিদ্র্য দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায় || ২ ||

        ভক্তপ্রিয়ায় ভবরোগ ভয়াপহায়
        উগ্রায় দুঃখ ভবসাগর তারণায় |
        জ্যোতির্ময়ায় গুণনাম সুৃনর্তকায়
        দারিদ্র্য দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায় || ৩ ||

        চর্ম্মবরায় শবভস্ম বিলেপনায়
        ফালেক্ষণায় মণিকুন্ডল মন্ডিতায় |
        মন্জীরপাদযুগলায় জটাধরায়
        দারিদ্র্য দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায় || ৪ ||

        পঞ্চাননায় ফণিরাজ বিভূষণায়
        হেমাঙ্গকুশায় ভুবনত্রয় মন্ডিতায়
        আনন্দ ভূমি বরদায় তমোপয়ায় |
        দারিদ্র্য দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায় || ৫ ||
        ভানুপ্রিয়ায় ভবসাগর তারণায়
        কালান্তকায় কমলাসন পূজিতায় |
        নেত্রত্রয়ায় শুভলক্ষণ লক্ষিতায়
        দারিদ্র্য দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায় || ৬ ||

        রামপ্রিয়ায় রঘুনাথ বরপ্রদায়
        নাগপ্রিয়ায় নরকার্ণব তারণায় |
        পুণ্যায় পুণ্যভরিতায় সুরার্চিতায়
         দারিদ্র্য দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায় || ৭ ||

         মুক্তেশ্বরায় ফলদায় গণেশ্বরায়
         গীতপ্রিয়ায় বৃষভেশ্বর বাহনায় |
         মাতঙ্গচর্ম বসনায় মহেশ্বরায়
         দারিদ্র্য দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায় || ৮ ||

         বসিষ্ঠেন কৃতং স্তোত্রং সর্বরোগ নিবারণম |
         সর্বসঙ্গপত্যকরং শীঘ্রং পুত্রপৌত্রাদি বর্ধনম |
         ত্রিসন্ধ্যায়ং য়ঃ পঠেন নিত্যং ন হি স্বর্গ মবাপ্নুয়াত || ৯ ||
         
|| শ্রী বশিষ্ঠ বিরচিতং দারিদ্র্য দহন শিবাষ্টকম স্তোত্রম সম্পূর্ণম ।।

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

অয়ি গিরি নন্দিনী... // শ্রীমদ শঙ্করাচার্য্য


শ্রীমৎ আদি শঙ্করাচার্য রচিত মহিষাসুরমর্দিনী স্তোত্রম্

।।১।।
অয়ি গিরিনন্দিনি নন্দিতমেদিনি বিশ্ব-বিনোদিনি নন্দনুতে
গিরিবরবিন্ধ  শিরো‌ধিনিবাসিনি বিষ্ণু-বিলাসিনি জিষ্ণুনুতে,
ভগবতি হে শিতিকণ্ঠ-কুটুম্বিণি ভূরিকুটুম্বিণি ভূরিকৃতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।২।।
সুরবরবর্ষিণি দুর্ধর ধর্ষিণি দুর্মুখমর্ষিণি হর্ষরতে
ত্রিভুবন পোষিণি শংকরতোষিণি কিল্বিষমোষিণি ঘোষরতে,
দনুজনিরোষিণি দিতিসুতরোষিণি দুর্মদ শোষিণি সিন্ধুসুতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।৩।।
অযি জগদম্ব মদম্ব কদম্ব বনপ্রিয়বাসিনি হাসরতে
শিখরিশিরোমণি তুঙ্গহিমালয় শৃংগনিজালয় মধ্যগতে,
মধু মধু রে মধুকৈটভ গঞ্জিনি কৈটভ ভঞ্জিনি রাসরতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।৪।।
অয়ি শতখণ্ড বিখণ্ডিতরুণ্ড বিতুণ্ডিতশুণ্ড গজাধিপতে
রিপুগজগণ্ড বিদারণচণ্ড পরাক্রমশুণ্ড মৃগাধিপতে,
নিজভুজ-দণ্ড নিপাতিত-খণ্ড বিপাতিত-মুণ্ড ভটাধিপতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।৫।।
অয়ি রণদুর্মদ শত্রুবধোদিত দুর্ধরনির্জর শক্তিভৃতে
চতুরবিচার ধুরীণ মহাশিবদূতকৃত প্রমথাধিপতে,
দুরিত দুরীহ দুরাশয় দুর্মতি দানবদূত কৃতান্তমতে
জয় জয় হে মহিষাসুর মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।৬।।
অয়ি শরণাগত বৈরিবধূবর বীরবরাভয দায়করে
ত্রিভুবন মস্তক শূলবিরোধি শিরোধি কৃতামল শূলকরে,
দুমিদুমি তামর দুন্দুভিনাদ মহো মুখরীকৃত তিগ্মকরে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।৭।।
অয়ি নিজ হুংকৃতি মাত্র নিরাকৃত ধূম্র বিলোচন ধূম্রশতে
সমর বিশোষিত শোণিত বীজ সমুদ্ভব শোণিত বীজলতে,
শিব শিব শুম্ভ নিশুম্ভ মহাহব তর্পিত ভূত পিশাচরতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।৮।।
ধনুরনুষঙ্গ রণক্ষণসঙ্গ পরিস্ফুরদঙ্গ নটৎকটকে
কনক পিশঙ্গ পৃষৎকনিষঙ্গ রসদ্ভট শৃংগ হতাবটুকে,
কৃত চতুরঙ্গ বলক্ষিতি রঙ্গ ঘটদ্বহুরঙ্গ রটদ্বটুকে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।৯।।
সুরললনা ততথেয়ি তথেয়ি তথাভিনয়োদর নৃত্য় রতে
কৃত কুকুথ কুকুথো গডদাদিক তাল কুতূহল দানরতে,
ধুধুকুট ধুককুট দিহিং ধিমিত ধ্বনি ধীর মৃদঙ্গ নিনাদরতে
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্য়কপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১০।।
জয় জয় জপ্যজয়ে জয় শব্দপরস্তুতি তৎপর বিশ্বনুতে
ঝণঝণ ঝিঞ্জিমি ঝিঙ্কৃতনূপুর সিঞ্জিত মোহিত ভূতপতে,
নটিত নটার্ধ নটীনটনায়ক নাটিতনাট্য সুগানরতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১১।।
অয়ি সুমনঃ সুমনঃ সুমনঃ সুমনঃ সুমনোহর কান্তিয়ুতে
শ্রিত রজনী রজনী রজনী রজনী রজনীকর বক্ত্রবৃতে,
সুনয়ন বিভ্রমর ভ্রমর ভ্রমর ভ্রমর ভ্রমরাধিপতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১২।।
সহিত মহাহব মল্লম তল্লিক মল্লিত রল্লক মল্লরতে
বিরচিত বল্লিক পল্লিক মল্লিক ঝিল্লিক ভিল্লিক বর্গবৃতে,
সিতকৃত ফুল্লি সমুল্ল সিতা‌রুণ তল্লজ পল্লব সল্ললিতে
জয় জয় হে মহিষাসুর মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১৩।।
অবিরল গণ্ডগলন মদ মেদুর মত্ত মতঙ্গজ রাজপতে
ত্রিভুবন ভূষণভূত কলানিধি রূপ পয়োনিধি রাজসুতে,
অয়ি সুদতী জন লালস মানস মোহন মন্মধ রাজসুতে
জয় জয় হে মহিষাসুর মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১৪।।
কমল দলামল কোমল কান্তি কলা কলিতা‌মল ভালতলে
সকল বিলাস কলা নিলয়ক্রম কেলি চলতকল হংসকুলে,
অলিকুল সংকুল কুবলয় মন্ডল মৌলিমিলদভ কুলালিকুলে
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১৫।।
কর মুরলী রব বীজিত কূজিত লজ্জিত কোকিল মঞ্জু মতে
মিলিত পুলিন্দ মনোহর গুঞ্জিত রঞ্জিত শৈল নিকুঞ্জগতে,
নিজগণভূত মহাশবরীগণ সদগুণ-সংভৃত কেলিতলে
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১৬।।
কটিতট পীত দুকূল বিচিত্র ময়ূখ তিরস্কৃত চন্দ্ররুচে
প্রণত সুরাসুর মৌলিমণিস্ফুর দংশুল সন্নথ চন্দ্ররুচে,
জিত কনকাচল মৌলি পদোর্জিত নির্ভর কুঞ্জর কুম্ভকুচে
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১৭।।
বিজিত সহস্র করৈক সহস্র করৈক সহস্র করৈকনুতে
কৃত সুরতারক সঙ্গর তারক সঙ্গর তারকসূনু সুতে।
সুরথ সমাধি সমান সমাধি সমাধি সমাধি সুজাত রতে
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১৮।।
পদকমলং করুণানিলয়ে বরিবস্য়তি য়ো‌নুদিনং ন শিবে
অয়ি কমলে কমলানিলয়ে কমলানিলয়ঃ স কথং ন ভবেত,
তব পদমেব পরম্পদ-মিত্য়নুশীলয়তো মম কিং ন শিবে
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১৯।।
কনকলসত্কল-সিন্ধুজলৈরনু সিঞ্জিনুতে গুণ রঙ্গভুবম
ভজতি স কিং নু শচীকুচকুম্ভত তটী পরিরম্ভ সুখানুভবম,
তব চরণং শরণং করবাণি নতামরবাণি নিবাশি শিবম
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।২০।।
তব বিমলে‌ন্দু কলং বদনেন্দু মলং সকলং ননু কূলয়তে
কিমু পুরুহূত-পুরীংদুমুখী-সুমুখীভিরসৌ-বিমুখী-ক্রিয়তে,
মম তু মতং শিবনাম-ধনে ভবতী-কৃপয়া কিমুত ক্রিয়তে
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।২১।।
অয়ি ময়ি দীনদয়ালুতয়া করুণাপরয়া ভবিতব্য়মুমে
অয়ি জগতো জননী কৃপয়াসি য়থাসি তথানু মিতাসি রতে,
য়দুচিতমত্র ভবত্য়ুররী কুরুতা-দুরুতাপম পাকুরুতে
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে,
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্য়কপর্দিনি শৈলসুতে।।

মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

মলমাস / অধিকমাস / পুরুষোত্তম মাস

মলমাস /অধিকমাস / পুরুষোত্তম মাস

আমরা প্রায়শই মলমাসের কথা শুনে থাকি। এই মাসে নাকি শুভকাজ হয় না। কিন্তু কি এই মলমাস ? 
এই মলমাস সম্পর্কে জানতে গেলে আগে জানতে হবে চান্দ্রমাস আর সৌরমাস সম্মন্ধে। চান্দ্রমাস হচ্ছে চাঁদের পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করতে যা সময় লাগে সেই সময়কাল। আর সৌরমাস হলো পৃথিবীর সূর্যের চারপাশে  একপাক ঘুরে আসতে যে সময় লাগে তার বারো ভাগের একভাগ সময়কাল। 
চান্দ্রমাসের সময়কাল প্রায় সাড়ে 29.53 দিন। এই 29.53 দিনে  মোট ৩০টি চান্দ্রতিথি দেখা যায়, তাদের দুই ভাগে ভাগ করে দুটি পক্ষে পনেরোটি করে তিথি বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমটি কৃষ্ণপক্ষের গৌণ চান্দ্রমাসের প্রতিপদ থেকে অমাবস্যা এবং দ্বিতীয়টি শুক্লপক্ষের মুখ্য চান্দ্রমাসের প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত।
অপরপক্ষে এক সৌরমাসে মোট 30 দিন। ফলে ক্যালেন্ডারে এই সৌরমাস আর চান্দ্রমাসের সমতা আনতে গেলে প্রতি আড়াই বছর অন্তর 29 টি অধিক সৌরদিবস পাই, যা হিসেবে ত্রুটি আনে। এই ত্রুটি দূর করতেই মলমাস বা ত্রয়োদশ অধিক চান্দ্রমাসের উৎপত্তি। 
আরও বিষদে বলতে গেলে এক চান্দ্রবৎসরে মোট 360 টি তিথি যাদের পুর্ণ হতে সময় লাগে 354 সৌরদিবস 3 ঘন্টা সময়। অন্যদিকে এক সৌরবৎসরের মোট 365 দিন। অর্থাৎ প্রতি সৌরবছরে ও চান্দ্রবছরে 10 দিন 21 ঘন্টা 35 মিনিটের ব্যাবধান দেখা যায়। এই ব্যাবধান  32 সৌরমাসের মাথায় 29 দিনের অর্থাৎ একটি চান্দ্রমাসের সময়কে অতিক্রমিত করতে চেষ্টা করে। এই অতিরিক্ত দিনগুলো নিয়ে গঠিত মাসই মলমাস বা অধিকমাস। 
এখন প্রশ্ন হল বছরের ঠিক কোন মাসটিকে মলমাস বলে গণ্য করা হবে ? এবিষয়ে স্মার্ত্তপ্রবর পণ্ডিত রঘুনন্দন ভট্টাচার্য্যে তার মলমাসতত্ত্বম গ্রন্থে বলেছেন- 
 "অমাবস্যাদ্বয়ং য‌ত্র রবিসংক্রান্তিবর্জিতম্।
মলমাসঃ স বিজ্ঞেয়ো বিষ্ণুঃ স্বপতি কর্কটে।।" 

অর্থাৎ -  যে মুখ্য সৌর মাসে দুইটি চান্দ্র অমাবস্যা রবিসংক্রান্তি বর্জিত হ‌বে সেই  পরবর্তী চান্দ্রমাস ক‌ে মলমাস বলে জানবে। 
আবার স্মার্ত্তপ্রবর ঘুনন্দন ভট্টাচার্য্য মহাশয় অন্যত্র বলেছেন যে সৌরমাসের মধ্যে একই রাশিতে সুর্য পরপর দুটি অমাবস্যা অতিক্রমিত করবে ও রবি সংক্রান্তি বর্জন করবে এবং তার পরবর্তী সৌরমাসের চান্দ্রমাসব্যাপী অন্য রাশির অমাবস্যা তিথি পর্যন্ত যে সময়কাল তা সেই সৌরমাসের নাম অনুসারে ত্রয়োদশ অধিক চান্দ্রমাস বা মলমাস  হবে।
এই অতিরিক্ত চান্দ্রমাসকে মলমাস বা অধিকমাস বা অধিক চান্দ্রমাস বা পুরুষোত্তম মাস বা মলিম্লুচ বলা হয়। মলিম্লুচ শব্দের অর্থ চোর। যেন এই মাসটি চুরি করে আনা হয়েছে। 
নারদপুরাণে এই মা টিকে পুরুষোত্তম মাস বলা হয়েছে। কারন এই মাস কর্মশূন্য। তাই কর্মফল শূন্য। স্বয়ং পুরুষোত্তম দ্বারা অলঙ্কৃত। 

     

বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

পিতৃগণ ও তর্পণ

                         পিতৃপক্ষ
সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলেই শুরু হয় সৌর আশ্বিন মাস। এই সৌর আশ্বিনের প্রথম পক্ষ অর্থাৎ প্রতিপদ হতে অমাবস্যা হলো পিতৃপক্ষ। 

                            তর্পণ 
তর্পণ শব্দের ব্যুৎপত্তি হল তৃপ্+অনট। এই তৃপ্ ধাতুর অর্থ হল তৃপ্তি দেওয়া। দেবতা, ঋষি ও পিতৃগণের তৃপ্তির জন্য এই তর্পণ। 
এসময় পিতৃগণ নেমে আসেন তাদের বংশধরদের দেয় তিলোদকে তৃপ্ত হওয়ার জন্য। 
এই পিতৃতর্পণ সৌর আশ্বিনের এই পক্ষেই কেন করা হয় তা নিয়ে একটি গল্প আছে। গল্প অনুসারে দানবীর কর্ণ স্বর্গে গিয়ে এক অভিনব সমস্যার সম্মুখীন হন। তাকে খাদ্য পানীয় কিছুই দেওয়া হচ্ছিল না। দেওয়া হচ্ছিল সোনাদানা ও মণিমুক্তো। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে যম (মতান্তরে ইন্দ্র ) বলেন যে যেহেতু মর্তে তিনি সোনাদানা মণিমুক্তোই দান করেছেন পিতৃগণকে জল বা খাবার কিছুই উৎসর্গ করেননি তাই এই অবস্থা । 
উত্তরের কর্ণ বলেন যে তিনি নিজের পরিচয় জেনেছেন মৃত্যুর আগের রাতে। পিতৃতর্পণের সূযোগটাই তার ছিল না, তাই কিভাবে তর্পণ করবেন। 
বিষয়টার গুরুত্ব বুঝে যম তাকে পনেরো দিন সময় দেন। সেই সময়ে কর্ণ পৃথিবীতে এসে পিতৃতর্পণ করেন। আর ঐ সময়টা ছিল এই সৌর আশ্বিন। সেই থেকে পিতৃপক্ষ ও তর্পণের প্রথা শুরু হয়। 

তর্পণ পদ্ধতি :-
কেবলমাত্র পিতৃহীন  ব্যক্তি  এবং বিধবা পিতৃতর্পণের অধিকারী। কুমারী বা সধবা মহিলার সেই অধিকার নেই।
 
 পিতৃপক্ষে প্রতিদিন বা মহালয়ার প্রান্তে এই তর্পণ আবশ্যক। অপরদিকে প্রতিদিন প্রাতঃসন্ধ্যার সময় তর্পণ করা যায়। 

তর্পণকারী প্রথমে অবগাহন স্নান করে ভিজেকাপড়ে জলাশয়ে  নাভীপ্রমান জলে দাঁড়িয়ে, গঙ্গামাটির তিলক ধারণ ও শিখাবন্ধন করবেন। 
এরপর বামহাতে কুশি ধরে তার সাহায্যে কোষা থেকে একটু জল গোকর্ণাকৃতি ডান হাতের (হাতের সব আঙ্গুল যোগ করে বুড়ো আঙ্গুল বাদে অন্য সব আঙ্গুল একটু তুলতে হবে যাতে একটু জল ধরে) ব্রাহ্মতীর্থে (অঙ্গুষ্ঠ মূলে জল নিয়ে) তিন বার পান করুন এবং তারপর হস্ত অঙ্গুষ্ঠ দ্বারা দুই বার মুখ মার্জনা করুন, তর্জনী মধ্যমা অনামিকাগ্র দ্বারা মুখ স্পর্শ করুন, অঙ্গুষ্ঠ তর্জনী দ্বারা নাসিকা দ্বয় স্পর্শ করুন,  অঙ্গুষ্ঠ অনামিকাগ্র দ্বারা নেত্র ও কর্ণ দ্বয় স্পর্শ করুন, অঙ্গুষ্ঠ কনিষ্ঠা দ্বারা নাভি স্পর্শ করে তারপর হাত ধুয়ে নিবেন। 

তারপর আবার নিম্নলিখিতভাবে অঙ্গ মার্জন বা স্পর্শ করুন  করতল দ্বারা হৃদয় স্পর্শ করবেন, অঙ্গুলীগুলি একত্র করে মস্তক স্পর্শ করবেন এবং
 অঙ্গুলী অগ্রভাগ দ্বারা নিজের দুই বাহুমূল স্পর্শ করে আবার  হাত ধুয়ে নিন এবং বিষ্ণুর প্রসন্ন মুখ স্মরণ করে করজোড় করে পাঠ করবেন।
 (দ্বিজাতি সংস্কারহীন মানব, ওঁ পরিবর্তে নমঃ বলবেন আর দেবশর্মা স্থলে দাস বা দাসী বলবেন।)

 জোড়হাত করে ওঁ বিষ্ণুঃ বা ওঁ বিষ্ণোঃ তিনবার  বলুন।
এবার বিষ্ণুস্মরণ করে দেহ ও মন পবিত্র  হবার পর বিষ্ণুর প্রসন্ন মুখ স্মরণ করে জোড় হাত করে পাঠ করুন.......

ঔঁ শঙ্খচক্র ধরং বিষ্ণুং দ্বিভুজং পীতবাসসম্।
প্রারম্ভে কৰ্মণাং বিপ্রঃ পুণ্ডরীক্ষং স্মরেদ্ধরিম্।।

ঔঁ তদবিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ। দিবীব চক্ষুরাততম্।

ঔঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোপিবা।
যঃ স্মরেৎ পুন্ডরীকাক্ষং সবাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।।

এরপর নিম্নলিখিত মন্ত্রে বামহস্তে অনামিকাতে কুশের অঙ্গুরীধারণ করতে হবে  নিম্ন মন্ত্রে  - 

অস্য বটুধারণ মন্ত্রস্য মহাবামদেব ঋযিৰ্বিরাড় গায়ত্রীচ্ছন্দো বটু দেবতা গ্রহণে বিনিয়োগ।
ওঁ ত্বং ব্রহ্মা, ত্বঞ্চ বিষ্ণুশ্চ, ত্বং রুদ্রং প্রজাপতিঃ।।
ত্বমেব ভগবন্দেব বটুদেব নমোহস্তুতে।।
ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লীং বিবস্রং বং বটুকায় নমঃ।।

এরপর ডানহাতের অনামিকাতে কুশাঙ্গুরীয় ধারণঃ-

ওঁ বিরিঞ্চিনা সহোৎপন্নঃ পরমেষ্ঠিনিসর্গজঃ।
নুদঃ সৰ্বাণি পাপানি দর্ভ স্বস্তিকরো ভব।।

 এবার জোড় হাত করে সাক্ষীসুত্র পাঠ করতে হবে - 
ঔঁ সূর্যঃ সোমো যমঃ কালো মহাভূতানি পঞ্চ বৈঃ।
এতে শুভাশুভসেহ কর্মণো নবসাক্ষিণঃ।।

গায়ত্রী জপ ও সমর্পণ অনন্তর অন্তত ১০ বার গায়ত্রী এবং / অথবা দীক্ষামন্ত্র জপ করুন। 
ডান হাতে একটু জল নিয়ে নিম্নলিখিত মন্ত্রে সেই জল ভূমিতে ফেলে দিন।

ঔঁ গুহ্যাতি গুহ্যগোপৃত্রী ত্বং গৃহাণাস্মকৃতং জপং।
সিদ্ধির্ভবতু মে দেবি ত্বৎপ্রসাদান্মহেশ্বরী।।

জোড় হাতে কোষার জলে তীর্থ আবাহনঃ-

ঔঁ কুরুক্ষেত্রং গয়া গঙ্গা প্রভাসপুষ্করাণি চ।
তির্থান্যেতানি পুণ্যানি তর্পণকালে ভবহি।।

 প্রথমে করবেন, দেব তর্পণঃ-

প্রয়োগ – উপবীতী (পৈতা স্বাভাবিক – বাঁ কাঁধে), পুর্বমুখ, দৈবতীর্থে শুদ্ধ জলে তর্পণ (তিল দিবেন না), অন্বার (বাঁ হাতে ডানহাত ধরে) তর্পণ বা জলদান, কোষাতে বিল্বপত্র, জল, যব ও ফুল নিয়ে - 
নিম্নলিখিত মন্ত্রে প্রত্যেককে ১ বার করে তর্পণ করুন।
১। ঔঁ ব্রহ্মা তৃপ্যতু।। যার অর্থ- ব্রহ্মা তৃপ্ত হোন।
২। ঔঁ বিষ্ণুস্তৃপ্যতু।। যার অর্থ-বিষ্ণু তৃপ্ত হোন।
৩। ঔঁ রুদ্ৰস্তৃপ্যতু।।  যার অর্থ-রুদ্র তৃপ্ত হোন।
৪। ঔঁ প্রজাপতিস্তৃপ্যতু।। যার অর্থ-প্রজাপতি তৃপ্ত হোন।
৫।ঔঁ দেবা যক্ষাস্তথা নাগা গন্ধৰ্বাষ্পরসোহসুরাঃ।
রাঃ সর্পাঃ সুপর্ণাশ্চ তরবো জিহ্মগাঃ খগাঃ।
বিদ্যাধরা জলাধারাস্তথৈবাকাশগামিনঃ।
নিরাহারাশ্চ যে জীবাঃ পাপে ধর্মেরতাশ্চ যে।
তেষামাপ্যায়নায়ৈতদ্দীয়তে সলিলং ময়া।।

 এবার মনুষ্য তর্পণ - 

নিবীতী (পৈতে গলায় মালার মত), পশ্চিমমুখ, অন্বারব্ধ (বাঁ হাতে ডানহাত ধরে), কায়তীর্থে (ডান হাতের কনিষ্ঠার মূল) শুদ্ধ জলে (তিল দিবেন না) অঞ্জলি দান করবেন।

তর্পণ-নিম্নলিখিত মন্ত্রে ২ বার করে তর্পণ করুন

ঔঁ সনকশ্চ সনশ্চ তৃতীয়শ্চ সনাতনঃ।
কপিলশ্চাসুরিশ্চৈব বোঢ়ঃ পঞ্চশিখস্থথা।।
সৰ্ব্বেতে তৃপ্তিমায়ান্তু মদ্দত্তেনাম্বুনা সদা।।

 এবার ঋষি তর্পণ-
উপবীতী (পৈতা স্বাভাবিক, বাঁ কাঁধে), পুর্বমুখ, দৈবতীর্থদ্বারা শুদ্ধ জলে (তিল দিবেন না) তর্পণ, অম্বারব্ধ (বাঁ হাতে ডানহাত ধরে)।
তর্পণঃ- নিম্নলিখিত মন্ত্রে ১ বার করে তর্পণ করুন।

১। ঔঁ মরীচিস্তৃপ্যতু।  যার অর্থ-মরীচি তৃপ্ত হোন।
২। ঔঁ অত্রিস্তৃপ্যতু।  যার অর্থ-অত্রি তৃপ্ত হোন।
৩। ঔঁ অঙ্গিরাস্তৃপ্যতু।  যার অর্থ-অঙ্গিরা তৃপ্ত হোন।
৪। ঔঁ পুলস্ত্যস্তৃপ্যতু। যার অর্থ- পুলস্ত্য তৃপ্ত হোন।
৫। ঔঁ পুলহস্তৃপ্যতু।  যার অর্থ- পুলহ তৃপ্ত হোন।
৬। ঔঁ ক্রতুস্তৃপ্যতু।  যার অর্থ-ক্রতু তৃপ্ত হোন।
৭। ঔঁ প্রচেতাস্তৃপ্যতু।  যার অর্থ-প্রচেতা তৃপ্ত হোন।
৮। ঔঁ বশিষ্ঠস্তৃপ্যতু।  যার অর্থ-বশিষ্ঠ তৃপ্ত হোন।
৯। ঔঁ ভৃগুস্তৃপ্যতু।  যার অর্থ-ভৃগু তৃপ্ত হোন।
১০। ঔঁ নারদস্তৃপ্যতু।  যার অর্থ-নারদ তৃপ্ত হোন।

এরপর দিব্যপিতৃতর্পণ-
প্রাচিনাবীতী, দক্ষিণমুখ, সতিল জল পিতৃতীর্থে প্রদান করবেন।
তর্পণঃ- নিম্নলিখিত মন্ত্রে ১ বার করে তর্পণ করুন।

১/ওঁ অগ্নিষ্বাত্তাঃ পিতরস্তৃপ্যনতামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ / স্বধা।
২/সৌম্যাঃ পিতরস্তৃপ্যনতামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ / স্বধা।
৩/ হবিষ্মন্তঃ পিতরস্তৃপ্যনতামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ / স্বধা।
৪/উষ্মপাঃ পিতরস্তৃপ্যনতামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ / স্বধা।
৫/সুকালিনঃ পিতরস্তৃপ্যনতামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ / স্বধা।
৬/বর্হিষদঃ পিতরস্তৃপ্যনতামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ / স্বধা।
৭/আজপ্যাঃ পিতরস্তৃপ্যনতামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ / স্বধা।

 এবার যম তর্পণ - 
  প্রাচিনাবীতী, দক্ষিণমুখ, সতিল জল পিতৃতীর্থে প্রদান
তর্পণঃ- নিম্নলিখিত মন্ত্রে ৩ বার করে তর্পণ করুন।

ঔঁ যমায় ধর্মরাজায় মৃত্যবে চান্তকায় চ।
বৈবস্বতায় কালায় সৰ্ব্বভূতক্ষয়ায় চ।
ঔঁড়ম্বরায় দধূণায় নীলায় পরমেষ্ঠিনে।
বৃকোদরায় চিত্রায় চিত্রগুপ্তায় বৈ নমঃ।

এরপর ভীষ্মতর্পণ - 
প্রাচিনাবীতী, দক্ষিণমুখ, সতিল জল পিতৃতীর্থে প্রদান করবেন।
তর্পণঃ- নিম্নলিখিত মন্ত্রে  ১ বার তর্পণ করুন।

ওঁ বৈয়াঘ্রপদ্যগোত্রায় সাঙ্কৃত্যপ্রবরায় চ্।
অপুত্রায় দদাম্যেতৎ সলিলং ভীষ্মবর্মণে।।
এরপর জোড়হাতে প্রার্থনা - 

ওঁ ভীষ্মঃ শান্তনবো বীরঃ সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়ঃ।
আভিরদ্ভিরবাপ্নোতু পিত্রপৌত্রাচিতাং ক্রিয়াং।।

এবার পিতৃগণের আবাহন - 
জোড় হাত করে ভক্তিভরে সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে পিতৃমাতৃপুরুষ বা মাতাদের আবাহন করুনঃ–

ঔঁ আগচ্ছন্তু মে পিতর ইমং গৃহ্নপোহঞ্জলিম।

এবার পিতৃতর্পণ - 
চিন্তা করুন আপনার পিতৃপুরুষ এবং অন্যান্যরা এসেছেন এবং তাদের উপস্থিতি অনুভব করুন।

পিতৃতর্পণ প্রয়োগঃ- প্রাচিনাবীতী, দক্ষিণ মুখ, সতিল জল পিতৃতীর্থে প্রদান তর্পণ-অনন্তর নিম্নোক্ত মন্ত্রে তর্পণ করুন। 
প্রত্যেক বার মন্ত্র বলতে হবে।

১/পিতা ৩ বার.....
 ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্র পিতঃ......... দেবশর্ম্মন্ তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্মৈ স্বধা নমঃ।

২/পিতামহ ৩ বার.... …
 ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্র পিতা মহং ...... দেবশর্ম্মন্ তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্মৈ স্বধা নমঃ।

৩/প্রপিতামহ ৩ বার......
 ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্র প্রপিতা মহং ...... দেবশর্ম্মন্ তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্মৈ স্বধা নমঃ।

৪/মাতামহ ৩ বার........
 ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্র মাতা মহং ...... দেবশর্ম্মন্ তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্মৈ স্বধা নমঃ।
 
৫/প্রমাতামহ ৩ বার......
 ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্র প্রমাতামহং ...... দেবশর্ম্মন্ তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্মৈ স্বধা নমঃ।

৬/বৃদ্ধ প্রমাতামহ ৩ বার........
 ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্র বৃদ্ধ প্রমাতামহং ...... দেবশর্ম্মন্ তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্মৈ স্বধা নমঃ।

৭/মাতা ৩ বার.......
 ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্রে মাতঃ  ...... দেবী তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্যৈ স্বধা নমঃ।

৮/পিতামহী ৩ বার........ 
ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্রে পিতামহী ...... দেবী তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্যৈ স্বধা নমঃ।

৯/প্রপিতামহী ৩ বার.......
ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্রে প্রপিতামহী ...... দেবী তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্যৈ স্বধা নমঃ।

এরপরে নিম্নলিখিতদের ১ বার করে তৰ্পণ করুন। একাধিক পিতৃব্য, মাতুল ইত্যাদি পরিজন যদি মৃত থাকে তবে প্রত্যেককে আলাদা ভাবে একবার তর্পণ করুন।

মাতামহী ১ বার - 
 ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্রে মাতামহী  ...... দেবী তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্যৈ স্বধা নমঃ।

প্রমাতামহী ১ বার...... 
 ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্রে প্রমাতামহী  ...... দেবী তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্যৈ স্বধা নমঃ।

 বৃদ্ধপ্রমাতামহী ১ বার.....
 ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্রে বৃদ্ধপ্রমাতামহী  ...... দেবী তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্যৈ স্বধা নমঃ।

ভ্রাতুস্পুত্র ১ বার......
ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্র ভাতুস্পুত্রঃ......... দেবশর্ম্মন্ তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্মৈ স্বধা নমঃ।

পিতৃব্য ১ বার......... 
ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্র প্রথমপিতৃব্যং......... দেবশর্ম্মন্ তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্মৈ স্বধা নমঃ।
ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্র পিতৃব্যঃ......... দেবশর্ম্মন্ তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্মৈ স্বধা নমঃ।

মাতুল ১ বার...... 
ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্র মাতুলঃ......... দেবশর্ম্মন্ তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্মৈ স্বধা নমঃ।

পিতৃম্বসা ১ বার.......
 ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্রে পিতৃম্বসাঃ  ...... দেবী তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্যৈ স্বধা নমঃ।

ভগিনী ১ বার......
 ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্রে ভগিনী  ...... দেবী/ কুমারী তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্যৈ স্বধা নমঃ।

স্ত্রীর পিতামহ ও পিতামহী ১ বার.......
ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্রে পত্নাঃ পিতামহং ......... দেবশর্ম্মন্ তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্মৈ স্বধা নমঃ।
ওঁবিষ্ণুরোম....... গোত্রা পত্নাঃ পিতামহীং ......... দেবী তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্যৈ স্বধা নমঃ।

স্ত্রীর মাতামহ ও মাতামহী ১বার করে......
ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্রে পত্নাঃ মাতামহং ......... দেবশর্ম্মন্ তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্মৈ স্বধা নমঃ।
ওঁবিষ্ণুরোম....... গোত্রা পত্নাঃ মাতামহীং ......... দেবী তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্যৈ স্বধা নমঃ।

স্ত্রীর মাতুল ১ বার
ওঁ বিষ্ণুরোম....... গোত্রে পত্নাঃ মাতুলং ......... দেবশর্ম্মন্ তৰ্পয়ামি/ তৃপ্যস্ব, এতৎ সতিলোকং তস্মৈ স্বধা নমঃ।

এবার অগ্নিদগ্ধে মৃতদের জন্য......

প্রয়োগঃ- প্রাচিনাবীতী, দক্ষিণমুখ, পিতৃতীর্থ তর্পণ সতিল জলে নিম্নোক্ত মন্ত্রে ১ বার তর্পণ করুন।

ওঁ অগ্নিদগ্ধাশ্চ যে জীবা যেহপ্যদগ্ধাঃ কুলে মম।
ভূমৌ দত্তেন তৃপ্যন্তু তৃপ্তা যান্তু পরাং গতিম্।।
অর্থাৎঃ-
যারা আমার কুলে জন্মে বা যে কোন প্রাণী অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত হয়েছেন, তারা আমার ভূমিতে দেওয়া জলে তৃপ্ত হোন এবং মুক্ত হয়ে পরম গতি প্রাপ্ত হোন।

 এবার মৃত বন্ধুবান্ধবদের জন্য ১ বার....

প্রয়োগঃ- প্রাচিনাবীতী, দক্ষিণমুখ, পিতৃতীর্থ। 
সতিল জলে নিম্নোক্ত মন্ত্রে ১ বার তর্পণ করুন।

ওঁ যেহবান্ধবা বান্ধবা বা যেহন্যজন্মনি বান্ধবাঃ।
তে তৃপ্তিমখিলাং যান্তু যে চাম্মত্তোয়কাক্ষিণঃ।।
অর্থাৎঃ-
যারা বন্ধু নয় বা যারা বন্ধু অথবা যারা জন্মান্তরে বন্ধু ছিল এবং যারা আমার কাছে জলের প্রত্যাশা করে, তারা সম্পূর্ণ তৃপ্তি লাভ করুন।

এবার বস্ত্রনীপিড়োদক দ্বারা তর্পন করবেন.....

অর্থাৎ, তর্পনকারী তার পরিহিত ভিজে কাপড়টি নিংড়ে মাটিতে সেই নিংড়ানো জল ফেলবেন.....
প্রয়োগঃ- জলাশয় থেকে স্থলে উঠে প্রাচিনাবীতী, দক্ষিণমুখ, পিতৃতীর্থ দ্বারা সেই নিংড়ানো  সতিল জল ফেলবেন । 
সতিল জলে নিম্নোক্ত মন্ত্রে ১ বার তর্পণ করুন।

ওঁ যে চাস্মাকং কুলে জাতা অপুত্রাগোত্রিণো মৃতাঃ।
তে তৃপ্যন্তু ময়া দত্তং বস্ত্রনীপিড়োদকং। 
অর্থাৎঃ-
যারা আমাদের বংশে জন্মগ্রহন করে পুত্রহীন ও বংশহীন ভাবে মারা গেছেন, তারা এই বস্ত্রনীপিড়োদক দ্বারা তৃপ্ত হোন। 

উপরোক্ত বিধি অনুসারে তর্পণে যদি অসমর্থ হোন তখন রামতর্পণ করতে পারেন..... 
রামতর্পণ (আব্রহ্মলোক বা সমস্ত লোক) 
প্রয়োগঃ-প্রাচিনাবীতী, দক্ষিণমুখ, পিতৃতীর্থ তর্পণ সতিল জলে নিম্নোক্ত মন্ত্রে ৩ বার তর্পণ করুন।

ঔঁ আব্রহ্ম ভুবনাল্লোকা দেবর্ষিপিতৃমানবাঃ।
তৃপ্যন্তু পিতরঃ সৰ্ব্বে মাতৃমাতামহাদয়ঃ।।
অতীতকুলকোটীনাং সপ্তদ্বীপনিবাসিনা
ময়া দত্তেন তোয়েন তৃপ্যন্তু ভুবনত্রয়।
অর্থাঃ- 
ভু:লোক থেকে ব্রহ্মলোক অবধি যাবতীয় লোকে  অবস্থিত দেবগণ, ঋষিগণ, পিতৃগণ, মনুষ্যগণ, পিতৃকুল ও মাতৃকুল প্রভৃতি সকলে তৃপ্ত হোন।  
আমার পূর্ব পুৰ্ব্ব বহু কোটি জন্মের কুলের সবাই ও সপ্তদ্বীপনিবাসী সকল প্রাণী, ত্রিভুবন আমার দেওয়া এই রামতর্পণের জলে তৃপ্ত হোক। 

এতেও অপারগ হলে কেবলমাত্র লক্ষণ তর্পণ প্রশস্ত.... 
প্রয়োগঃ-প্রাচিনাবীতী, দক্ষিণমুখ, পিতৃতীর্থ তর্পণ সতিল জলে নিম্নোক্ত মন্ত্রে ৩ বার তর্পণ করুন।

আব্রহ্মস্তম্বপর্য্যন্তং জগৎ তৃপ্যতু।।

অর্থাৎ, ব্রহ্মা থেকে শুরু করে তৃণপর্যন্ত সকলেই তৃপ্ত হোন।

 এবার অছিদ্রাবরণ কর্ম সম্পাদিত করতে হবে.... 

ঔঁ অদ্য কৃত্যৈতৎ তর্পণকৰ্ম অচ্ছিদ্রম্ অন্তু।
ঔঁ অদ্য ইত্যাদি কৃতঃ অস্মিন্ তর্পণকৰ্ম্মাণ
যদ যদ বৈগুণ্যং জাতং তৎ দোষ প্রশমনায় ঔঁ বিষ্ণুস্মরণং করিষ্যে।।

অর্থাৎঃ- আজকের এই তর্পণকৰ্ম দোষমুক্ত হোক। আজকের এই তর্পণকৰ্ম্মে যে যে দোষ বা ত্রুটি হয়েছে, তার নিবারণের জন্য আমি শ্রীবিষ্ণু স্মরণ করব।

ঔঁ তদৃবিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ। দিবীব চক্ষুরাততং।

অর্থাৎঃ- সেই বিষ্ণু পরম আশ্রয় এবং জ্ঞানীরা ওনাকে সৰ্ব্বদা দর্শন করেন।

ঔঁ বিষ্ণুঃ – এই মন্ত্র দশবার পাঠ করুন।

জোড় হাত করে পাঠ করুন

ঔঁ অজ্ঞানা যদি বা মোহাৎ প্রচ্যবেতাধ্বরেষু
যৎ স্মরণাদেব তদ্বিষ্ণোঃ সম্পূর্ণং স্যাদিতি শ্রুতিঃ।।

অর্থাৎঃ- অজ্ঞানে বা ভুলে রুটি হয়ে থাকলে, বিষ্ণুস্মরণদ্বারা দোষমুক্ত হয়ে তাহা সম্পূর্ণ হয় এটিই  শ্রুতিতে  বলা হয়েছে ।

এবার বিষ্ণু সমর্পণ দক্ষিণ হাতে এক গণ্ডুষ জল নিয়ে পাঠ করুনঃ- 

ঔঁ প্রিয়তাং পুন্ডরীকাক্ষঃ সৰ্ব্বযজ্ঞেশ্বরো হরিঃ।
তস্মিংস্তুষ্টে জগতুষ্টং প্রীণিতে প্রীণিতং জগৎ।।
ময়া যদিদং তর্পণকৰ্মকৃতং তৎ সৰ্ব্বং ভগবদৃবিষ্ণুচরণে সমর্পিতম্।।ওঁ বিষ্ণুঃ। ওঁ বিষ্ণুঃ। ওঁ বিষ্ণুঃ।
অর্থাৎঃ– 
সমস্ত যজ্ঞের ঈশ্বর পুন্ডরীকাক্ষঃ শ্রীহরি বা বিষ্ণুর তৃপ্তি হোক।
ওনার সন্তুষ্টিতে জগৎ সন্তুষ্ট হয়,ওনার প্রীতিতে জগৎ প্রীত হয়।
 আমার এই সমস্ত তর্পণকৰ্ম্ম ভগবান শ্রীবিষ্ণু চরণে সমর্পণ করলাম।
বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে হাতের জল ত্যাগ করুন। 
চিন্তা করুন বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে সমস্ত ফলত্যাগ করলেন ও তিনি সানন্দে সমস্ত কৰ্ম্মফল গ্রহণ করলেন।

এবার পিতৃস্তুতি ও পিতৃপ্রণাম করবেন......
জোড়হাতে পুর্বমুখে সুর্যের দিকে তাকিয়ে বলবেন....

পিতা স্বর্গঃ পিতা ধর্ম্মঃ পিতা হি পরমং তপঃ।
পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রীয়ন্তে সর্ব্বদেবতাঃ।।

ওঁ পিতৃন্নমস্যে দিবি যে চ্ মুর্ত্তাঃ স্বধাভুজঃ কাম্যফলা ভিসন্ধৌ।
প্রদানশক্তাঃ সকলেপ্সিতানাং বিমুক্তিদা যেহনভিসংহিতেষু।।


                        পিতৃস্তোত্রম্
রুচিরুবাচঃ-
অর্চিতানাম মূর্তানাং পিতৃণাং দীপ্ততেজসাম্।
নমস্যামি সদা তেষাং ধ্যানিনাং দিব্যচক্ষুষাম্।। ১
ইন্দ্রদীনাং চ নেতারো দক্ষমারীচয়োস্তথা।
সপ্তর্ষিণাং তথান্যেষাং তান্ নমস্যামি কামদান্।। ২
মন্বাদীনাং মুনীন্দ্রাণাং সূর্যাচন্দ্রূসোস্তযথা।
তান্ নমস্যাহং সর্বান পিতৃনপ্সুদধাবপি।। ৩
নক্ষত্রাণাং গ্রহণাং চ বাচ্ব্যগ্ন্যোর্নভসস্তথা।
দ্যাবাপৃথিব্যোশ্চ তথা নমস্যামি কৃতাঞ্জলি।। ৪
দেবর্ষিণাং জনিতৃশ্চ সর্বলোকনমস্কৃতান্।
অক্ষচ্চস্য সদাদাতৃন নমস্যেঘহং কৃতাঞ্জলিঃ।। ৫
প্রজাতেঃ কশ্যপায় সোমায় বরুণায় চ।
যোগেশ্বরেভ্যশ্চ সদা নমস্যামি কৃতাঞ্জলি।। ৬
নমো গণেভ্যঃ সপ্তভ্যস্তথা লোকেষু সপ্তেসু।
স্বয়ম্ভূবে নমস্যামি ব্রহ্মণে যোগক্ষুষে।। ৭
সোমাধারান্ পিতৃগণানয়োমূর্তি ধরাংস্তথা।
নমস্যামি তথা সোমং পিতরং জগতামহম্।। ৮
অগ্নিরুপাংস্তথৈবান্যাম্ নমস্যামি পিতৃনহম্।
অগ্নিষোমময়ং বিশ্বং য়ত এতদশেষতঃ।। ৯
য়ে  তু তেজসি য়ে চৈতে সোমসূর্যাগ্নিমূর্তয়ঃ ।
জগত্স্বরুপিণশ্চৈবতথা ব্রহ্মস্বরুপিণঃ
তেভ্যোঘখিলেভ্যো যোগিভ্যঃ পিতৃভ্যো য়তমানসঃ।
নমো নমো নমস্তে মে প্রসীদন্তু স্বধাভুজঃ।। ১০

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

Kailash parbat



    মহাতীর্থ কৈলাস

কৈলাস পর্বত হিন্দু, শিখ বৌদ্ধ, বন ও জৈনদের কাছে অতি পবিত্র একটা স্থান। হিন্দুদের ধর্মবিশ্বাস অনুসারে এটি ভগবান শিব ও দেবী পার্টিবতীর লীলাভূমি। জৈন্যদের মতে তাদের প্রথম তীর্থঙ্কর ঋষভদেব এই কৈলাসেই শান্তির খোঁজ পেয়েছিলেন। একে তারা অষ্টাপদও বলে থাকেন। বৌদ্ধমত অনুসারে কৈলাসের অধীশ্বর হলেন ডোমচেক বা চক্রসম্ভর ।

সংস্কৃত, বাংলা সহ সমস্ত ভারতীয় ভাষাতে এই পর্বতকে কৈলাস পর্বত  বলা হয়। ইংরেজীতে এই পর্বতকে বলা হয় Mount Kailasa । 6638 মিটার (21778 ফুট ) উঁচু এই পর্বত শৃঙ্গটিকে তিব্বতি ভাষায় གངས་རིན་པོ་ཆེ (গ্যাং রিম্পোচে), চিনা ভাষায় 冈仁波齐峰 বা =岡仁波齊峰 বলা হয়। এটি বর্তমানে চিনের স্বয়ংশাসিত অঞ্চল তিব্বতের অংশ। 
পুরাণ অনুযায়ী কৈলাস পর্বতের চারটি পাশ স্ফটিক, চুনি, সোনা এবং লাপিস লাজুলি দ্বারা গঠিত। 
লোকবিশ্বাস অনুসারে একমাত্র মিলারেপা ছাড়া কেউই কৈলাস শৃঙ্গে  চড়তে  পারেনি। যে এই পাহাড়ে ওঠার চেষ্টা করেছে, তাঁরই মৃত্যু হয়েছে। আর এটা নিয়ে অনেক কথাও প্রচলিত আছে। এটাও শোনা যায় যে, ১৯ এবং ২০ শতাব্দীতে কিছু পর্বতআরোহী এই পাহাড়ে চড়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাঁরা সবাই উধাও হয়ে গেছেন। চীন সরকার কৈলাস পর্বতে চড়া  নিষিদ্ধ করেছে। 
ক্তার কয়েক বছর আগে কৈলাস মান সরোবরের যাত্রা করেছিলেন। উনি এই যাত্রার পর দাবি করেছিলেন যে, কৈলাস পর্বতে বাস্তবেই একটি প্রাচীন পিরামিড আছে, আর সেই পিরামিড ছোট ছোট পিরামিড দিয়ে ঘেরা। এর সুত্র গিজা এবং মেক্সিকোর Teotihuacan পিরামিডের সাথে যুক্ত। পর্বতমালা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ৭১৮ মিটার উঁচুতে কৈলাস প


রাশিয়ার নেত্ররোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ এর্নেস্ট মুলদাশেভকে (Ernst Muldashev )  সাইবেরিয়ার একদল পর্বতারোহীরা বলেছিলেন যে, কিছু পর্বতআরোহী কৈলাস পর্বতের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছেছিল। আর তাঁর একবছর পর বৃদ্ধাবস্থার জন্য তাঁদের মৃত্যু হয়। 1999 সালে ডাঃ মুলদাশেভ একটি টিম নিয়ে তিব্বতে যান। ওনার টিমে  ভুবিজ্ঞানী, ঐতিহাসিক হতে শুরু করে প্যারানর্মাল অ্যাক্টিভিটি বিশেষজ্ঞরাও ছিলেন। পবিত্র কৈলাসের আশেপাশে অনেক মাস ধরে সময় কাটিয়ে 'Where do we come from' নামে একটি বই লেখেন।  সেখানে তিনি কৈলাস পর্বতের যাত্রার বিবরণ দেন। 
 বিখ্যাত রাশিয়ার চিত্রকার নিকোলায় রেরিখ এর বিশ্বাস অনুযায়ী, কৈলাসের আসেপাশে শাম্বালা নামের একটি রহস্যময়ি রাজ্য আছে। এই বক্তব্যকে ডাঃ মুলদাশেভ সমর্থন করেন। তিনি বলেন, বাস্তবে কৈলাস পর্বতে একটি মানব নির্মিত  সুপ্রাচীন  পিরামিড আছে।  উনি দাবি করেছিলেন যে, একটি বড় পিরামিডকে অনেক ছোট ছোট পিরামিড ঘিরে আছে আর সেখানে অলৌকিক ঘটনা ঘটে।
কৈলাস পাহাড়ের আর তাঁর আশেপাশের পরিবেশের উপর গবেষণা করা বৈজ্ঞানিক নিকোলাই রোমনভ আর ওনার টিম তিব্বতের মন্দিরের ধর্মগুরুদের সাথে সাক্ষাৎ করেন।  
সেখান থেকে ফেরার পর এর্নেস্ট মুলদাশিফ লেখেন, ‘রাতের নিশ্তব্দতায় পাহাড়ের ভিতর থেকে একটি আজব ফিসফিস এর শব্দ আসে। এক রাতে আমি আর আমার দুই সহযোগী পাথর পড়ার আওয়াজ পেয়েছি। আর এই আওয়াজ কৈলাস পর্বতের পেটের ভিতর থেকে আসছিল। আমারা ভেবেছিলাম যে, পিরামিডের ভিতরে অন্য কোন মানুষ আছে।”
উনি আরও লিখেছিলেন, ‘তিব্বতি গ্রন্থে লেখা আছে যে শাম্বালা একটি আধ্মাতিক দেশ, এটা কৈলাস পর্বতের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন দিয়ে এই বিষয়ে চর্চা করা আমার পক্ষে কঠিন। তবে আমি পরিস্কার ভাবে বলতে পারি, কৈলাস পর্বতের এলাকা সোজাসুজি পৃথিবীর জীবনের সাথে জড়িত। যখন আমরা তপস্যিদের রাজ্য তথা পিরামিড আর পাথরের দর্পণকে মিলিয়ে একটি যোজনাবদ্ধ নকশা বানাই, তখন আমরা সেটা দেখে হয়রান হয়ে যাই! কারণ সেই নকশা ডিএনএ এর অণুর স্থানিক সংরচনার নকশা ছিল।”



বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

বেদে সালোকসংশ্লেষের সপক্ষে প্রমাণ

বেদে সালোকসংশ্লেষ


ইহ ব্রবীতু য ঈমঙ্গ বেদাস্য বামস্য নিহিতং পদং বেঃ।
শীর্ষ্ণ ক্ষীরং দুহ্রতে গাবো অস্যবব্রিং বসানা উদকং পদাপুঃ।।  (ঋগ্বেদ মণ্ডল ১, সূক্ত১৬৪, মন্ত্র ৭)

অনুবাদ-হে মিত্র, যিনি  সর্বজ্ঞানী পরমাত্মা তিনিই বলতে পারেনএই রহস্য । পবিত্র আলোক যখন গাছের উপর পড়ে আর গাছ যখন তার পা দিয়ে(মূল) মাটি থেকে জল গ্রহন করে এবং এর মাধ্যমেই আমাদের উপর খাদ্য ও জীবন বর্ষিত হয়!


এই মন্ত্র হতে সালোকসংশ্লেষের দিকটি উঠে আসে।  আমরা  জানি উদ্ভিদ তার ক্লোরোপ্লাস্টের থাইলাকয়েডে অবস্থিত ক্লোরফিল দানাসমূহ সূর্যালোক থেকে ফোটনকণার আকারে শক্তি গ্রহন করে  মূলের সাহায্যে  জল ও খনিজলবণের মিশ্রণ গ্রহন করে। এরপর খাদ্য তৈরি করে ফোটনকণারুপী সৌরশক্তিকে সেই খাদ্যে আবদ্ধ করে।   প্রানীকুল সেই খাদ্য খেয়ে জীবনধারন করতে সক্ষম হয়। অপরদিকে এই মন্ত্রটিও বলছে যে উদ্ভিদ সূর্যালোক এবং মূলের সাহায্যে জল গ্রহন করে এবং এর মাধ্যমেই আমাদের উপর খাদ্য ও জীবন বর্ষিত হয়।



অপর একটি মন্ত্র যেখানে সালোকসংশ্লেষনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়-

"... ত্বয়া মর্তাসঃ স্বদন্ত আসুতিং ত্বং গর্ভো বীরুধাং জনিষে শুচিঃ।।"
(ঋগ্বেদ ২.১.১৪)
অর্থাত্  হে অগ্নি(আলোকশক্তিরুপে) তুমি বৃক্ষসমূহের গর্ভরুপ শক্তি হয়ে প্রানীগনকে অন্নাদির আস্বাদ প্রাপ্ত কর।"




অর্থাত্ আলো উদ্ভিদের গর্ভে শক্তিরুপে খাদ্য উত্পন্ন করে প্রানীগনের খাদ্যের চাহিদা মেটায়!
বৈদিক এই মহাসত্যের বানী ছড়িয়ে দিন সকলের মাঝে।