শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৯

বিপদতারিণী পূজা ও ব্রতকথা


       বিপদতারিণী পূজা ব্রতকথা 
বাংলার বারো মাসে তেরো পার্বন। আর এইসব পালাপার্বনের মধ্যে জড়িয়ে আছে নিজের ও পরিবারের আপনজনদের বিপদ আপদ হতে মুক্তির প্রার্থনা। এই বিপদ থেকে যিনি উদ্ধার করেন তিনিই বিপদতারিণী। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া হতে দশমী পর্যন্ত বিপদতারিণী পূজার বিধান আছে। তবে রথযাত্রার পরের শনি ও মঙ্গলবার এই দুইদিন বিপদতারিণীর পূজা হয়। 
পূজার পদ্ধতি :-
ন্ত্রে এই দেবী বিপদতারিণীর  উল্লেখ রয়েছে। ‘বিপত্তারিণী কথামৃতম’ বা ‘তারিণ্যুপনিষদ’ নামে এক তন্ত্রগ্রন্থের হদিশ পাওয়া যায়, যার রচয়িতা জনৈক জনার্দন ঠাকুর যিনি  নিজেকে রামরাম ঠাকুরের বংশধর বলে বর্ণনা করেছেন। এই গ্রন্থ মতে - - 'জনার্দনঠাকুরের মা হরিপ্রিয়া দেবী বিপদতারিণীর কৃপা লাভ করেছিলেন।' এ ছাড়াও ‘বিপত্তারিণীতন্ত্রম’ নামে আরও একটি পুথির খোঁজ পাওয়া যায়। কিন্তু এই গ্রন্থগুলি ঠিক কোন সময়ে রচিত, তা জানা যায় না।
মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে এই পুজোয় ১৩টি ফল, ১৩টি ফুল, ১৩টি পান সুপারি ও ১৩টি নৈবেদ্যের কথা বলা হয়।  অনেক অঞ্চলে বিপত্তারিণী পূজা চারদিন ধরে চলে।  মেয়েরা দণ্ডী কাটে। 
বিপত্তারিণী পূজা উপলক্ষে সাধারণত মেয়েরা উপবাস করে। তবে ছেলেদেরকেও এই ব্রতে উপবাস করতে দেখা যায়।  পূ অনুসারে হাতে “তাগা” (এক গুচ্ছ পবিত্র লাল সুতো ও দূর্বাঘাস) বাঁধে।
বিপদতারিণী ব্রতকথা:-
কোনও একসময়ে বিদর্ভ নগরীতে ( মতান্তরে বাঁকুড়ার মল্লভূমে) রাজত্ব করতেন এক প্রবল পরাক্রান্তশীল রাজা । তাঁর পাটরানির ছিলেন খুবই ভক্তিমতী। পাটরাণীর এক মুচি সই ছিল।  রাণী তাকে প্রায়সময়ই নানারকম উপহার দিতেন। একদিন মুচিণী সইয়েরও ইচ্ছা হল রাণীকে কিছু দেওয়ার।
 সেইসময় গোমাংস ভক্ষণ করত। সইয়ের মুখে গোমাংসের কথা রাণী শুনেছিল। তাই রাণী  মুচিণী সইকে বলল—" সই তোমরা যে গোমাংস রান্না কর তা দেখার আমার খুব ইচ্ছা। তুমি আমাকে একদিন দেখাতে পারবে ?"
      মুচিণী সই কাপড় ঢাকা দিয়ে  সেই মাংস রাজবাড়িতে নিয়ে গেল।  এদিকে রাজার প্রহরী এই ঘটনা জানতে পেরে রাজাকে খবর দিল। উত্তেজিত রাজা শাণিত তরবারি নিয়ে এসে রানিকে বললেন,    " এই পাত্র যদি কোনওরূপ নিষিদ্ধ মাংস থাকে তাহলে তোমাকে হত্যা করব…। খোলো   পাত্র!"
রানিমা ছিলেন দেবী বিপদতারিণী পূজারি। তিনি তখন কাতর কন্ঠে দেবীকে ডাকতে শুরু করলেন। "রক্ষা কর মা বিপদতারিণী…।আমার জীবন রক্ষা কর!" 
পাত্র খোলা হল। কিন্তু একি! রাজা কি দেখলেন? পাত্রের মধ্যে সাজানো সদ্য ১৩টি ফুল। রানি সেই ফুলেই দেবী বিপদতারিণী পুজো করলেন ভক্তি ভরে!