শীতলা ষষ্ঠী ও মাকুড়ি সপ্তমী
সূর্য্য যখন মকর রাশিতে থাকে তখন শুক্লপক্ষের সপ্তমী
তিথিকে মাকুড়ি সপ্তমী বলা হয়। সাধারণত সরস্বতী পুজো হয় পঞ্চমীতে। আর তার পরের দিন শীতলা ষষ্ঠী। শীতলা ষষ্ঠীর পরদিনই মাকুড়ি সপ্তমী।
শীতলা ষষ্ঠী :-
শিলের নীচে নোড়া রেখে হলুদে ছাপানো কাপড় মুড়ে রাখা হয় । এরপর সেই শীলকে পুজো করে দই-হলুদের ফোঁটা লাগিয়ে দেওয়া হয় সন্তানের কপালে । দুপুরে শীতলা ষষ্ঠীর ভোগ-পান্তা ভাত, তেল, পাঁচরকমের ভাজা, বিভিন্ন তরকারি, গোটা সেদ্ধ, আগের দিন বেঁটে রাখা পোস্ত, লঙ্কা ভাজা দিয়ে জব্বর খ্যাটন । এবার আসা যাক গোটা সিদ্ধর প্রক্রিয়ায়—বেতো শাক, গোটা মুগ,কালোকলাই, গোটা শিম, গোটা আলু (অবশ্যই নতুন), সাদা বেগুন দিয়ে সেদ্ধ করা হয় । অনেক জায়গায় সেদ্ধতে গাছশুদ্ধ রসুন ও লঙ্কা দেওয়া হয়। এই সেদ্ধ দিয়ে মুড়ি খাওয়াটা রাঢ়বঙ্গের বিশেষ পার্বন।
দেবী শীতলা :-
এদিনের নাম শীতলা ষষ্ঠী হওয়ার আরেকটি কারণ এদিন মা শীতলার পূজা করা হয়। দেবী একদা কাত্যায়ন নামে এক ঋষির কন্যা কাত্যায়নী নামে জন্মগ্রহণ করেন। তখন জ্বরাসুর নামের এক দানব এমন এক জ্বর ছড়াতে শুরু করে । কাত্যায়নীর সঙ্গীসাথীরা সেই জ্বরে আক্রান্ত হয়। সেই সঙ্গে দেখা দেয় কলেরা, বসন্ত ইত্যাদির মতো রোগও। কাত্যায়নী তাঁর দৈবশক্তি দিয়ে বেশ কিছু বন্ধুর অসুখ নিরাময় করেন। কিন্তু সেই রোগগুলিকে একেবারে নির্মূল করা যায়নি। তখনই কাত্যায়নী দেবী শীতলার রূপ ধারণ করেন।
শীতলার চার হাত। এক হাতে ঝাঁটা, এক হাতে জলপূর্ণ পাত্র, অন্য হাতে একটা হাতপাখা এবং বাকি হাতে একটি ঔষধের পাত্র। স্কন্দপুরাণের পিচ্ছিলাতন্ত্রে শীতলা শ্বেতবর্ণা, গর্দভবাহিনী, দুই হাতে পূর্ণকুম্ভ ও সম্মার্জনীধারিণী হিসেবে বর্ণিত হয়েছেন। সম্মার্জনীর দ্বারা অমৃতময় জল ছিটিয়ে তিনি রোগ-তাপ দূর করে শান্তি স্থাপন করেন বলে ভক্তরা বিশ্বাস করে। তিনি এই রূপ ধারণ করে রোগ নিরাময় শুরু করেন ও তাঁর এক সহচর বটুককে পাঠান জ্বরাসুরকে মোকাবিলা করতে। কিন্তু বটুককে পরাস্ত করে হত্যা করে জ্বরাসুর। বটুকের মৃতদেহ মুহূর্তে ধুলোয় মিশে যায়। কিন্তু তার ক্ষণিক পরেই বটুক ভৈরব মূর্তি ধারণ করে আবির্ভূত হয়। ঘোর কৃষ্ণবর্ণ বটুকভৈরব তাঁর ত্রিশূল দিয়ে জ্বরাসুরকে হত্যা করেন। শীতলা-বটুকভৈরব-জ্বরাসুরের এই কাহিনি পরে অন্য রূপ নিতে শুরু করে। শীতলার হাতের জলপূর্ণ পাত্রকে ধরা হতে থাকে বসন্ত রোগের বিষপূর্ণ পাত্র। চতুর্ভুজা শীতলাকে দ্বিভুজা হিসেবেও চিত্রিত করা শুরু হয়। তাঁর এক হাতে ঝাঁটা ও অন্য হাতে বিষপাত্র। কল্পনা করা হয়, তিনিই একহাতে রোগ ছড়ান ও অন্য হাতে তা ঝাঁটা দিয়ে দূর করেন। মহাযান বৌদ্ধ ধর্মে শীতলাকে দেবী পর্ণশর্বরীর সঙ্গিনী হিসেবে কল্পনা করা হতে থাকে। পর্ণশর্বরী রোগব্যাধির দেবী। বজ্রযানী মতে, তিনি আবার দেবী তারার সঙ্গিনী। পাল যুগ থেকে বাংলায় শীতলা মূর্তির সঙ্গী হতে শুরু করে জ্বরাসুর। শীতলা কাল্টে আজ জ্বরাসুর নেই।
মাকুড়ি সপ্তমী :-
এদিন কন্যা সন্তানদের (অনেক ক্ষেত্রে ছেলেদের ও ) কান ফুটো করে মাকুড়ি পরানো হয় বলে একে মাকুড়ি সপ্তমী বলে। উত্তর ভারতে একে রথ আরোগ্য সপ্তমী বা অচলা সপ্তমী বা সূর্য্যসপ্তমী বলা হয়।
অচলা সপ্তমী ব্রতকথা :-
একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুত্র শাম্ব নিজের শক্তির দম্ভে মত্ত হয়ে উঠেছিল। একদিন ঋষি দুর্বাশা শ্রীকৃষ্ণের সাথে দেখা করতে এলে তপোক্লিষ্ট ঋষির শরীর নিয়ে উপহাস করেন। তখন ঋষি দুর্বাশা রেগে গিয়ে শাম্বকে কুষ্ঠরোগাক্রান্ত হবার শাপ দেন। শাম্বের এই অবস্থা দেখে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শাম্বকে ভগবান সূর্য্যের উপাসনা করার নির্দেশ দেন। পিতার আজ্ঞা মেনে নিয়ে শাম্ব ভগবান সূর্য্যের উপাসনা আরম্ভ করেন। এর ফলে সূর্যের বরে শাম্ব কুষ্ঠরোগমুক্ত হন।
এই অচলা সপ্তমীর দিনেই শাম্ব কুষ্ঠরোগমুক্ত হন বলে এদিন মানুষ ভগবান সূর্য্যের আরাধনা করেন । এই ব্রতের ফলে ধন, পুত্র ও আরোগ্য প্রাপ্তি হয়। এই ব্রত করলে শারীরিক দূর্বলতা, হাড়ের দূর্বলতা ও জয়েন্টের ব্যাথা দূর হয় বলে বিশ্বাস। এছাড়াও এই ব্রতের প্রভাবে কুষ্ঠের মতো চর্মরোগ নাশ হয় বলে বিশ্বাস।
সূর্য্য যখন মকর রাশিতে থাকে তখন শুক্লপক্ষের সপ্তমী
তিথিকে মাকুড়ি সপ্তমী বলা হয়। সাধারণত সরস্বতী পুজো হয় পঞ্চমীতে। আর তার পরের দিন শীতলা ষষ্ঠী। শীতলা ষষ্ঠীর পরদিনই মাকুড়ি সপ্তমী।
শীতলা ষষ্ঠী :-
শিলের নীচে নোড়া রেখে হলুদে ছাপানো কাপড় মুড়ে রাখা হয় । এরপর সেই শীলকে পুজো করে দই-হলুদের ফোঁটা লাগিয়ে দেওয়া হয় সন্তানের কপালে । দুপুরে শীতলা ষষ্ঠীর ভোগ-পান্তা ভাত, তেল, পাঁচরকমের ভাজা, বিভিন্ন তরকারি, গোটা সেদ্ধ, আগের দিন বেঁটে রাখা পোস্ত, লঙ্কা ভাজা দিয়ে জব্বর খ্যাটন । এবার আসা যাক গোটা সিদ্ধর প্রক্রিয়ায়—বেতো শাক, গোটা মুগ,কালোকলাই, গোটা শিম, গোটা আলু (অবশ্যই নতুন), সাদা বেগুন দিয়ে সেদ্ধ করা হয় । অনেক জায়গায় সেদ্ধতে গাছশুদ্ধ রসুন ও লঙ্কা দেওয়া হয়। এই সেদ্ধ দিয়ে মুড়ি খাওয়াটা রাঢ়বঙ্গের বিশেষ পার্বন।
দেবী শীতলা :-
এদিনের নাম শীতলা ষষ্ঠী হওয়ার আরেকটি কারণ এদিন মা শীতলার পূজা করা হয়। দেবী একদা কাত্যায়ন নামে এক ঋষির কন্যা কাত্যায়নী নামে জন্মগ্রহণ করেন। তখন জ্বরাসুর নামের এক দানব এমন এক জ্বর ছড়াতে শুরু করে । কাত্যায়নীর সঙ্গীসাথীরা সেই জ্বরে আক্রান্ত হয়। সেই সঙ্গে দেখা দেয় কলেরা, বসন্ত ইত্যাদির মতো রোগও। কাত্যায়নী তাঁর দৈবশক্তি দিয়ে বেশ কিছু বন্ধুর অসুখ নিরাময় করেন। কিন্তু সেই রোগগুলিকে একেবারে নির্মূল করা যায়নি। তখনই কাত্যায়নী দেবী শীতলার রূপ ধারণ করেন।
শীতলার চার হাত। এক হাতে ঝাঁটা, এক হাতে জলপূর্ণ পাত্র, অন্য হাতে একটা হাতপাখা এবং বাকি হাতে একটি ঔষধের পাত্র। স্কন্দপুরাণের পিচ্ছিলাতন্ত্রে শীতলা শ্বেতবর্ণা, গর্দভবাহিনী, দুই হাতে পূর্ণকুম্ভ ও সম্মার্জনীধারিণী হিসেবে বর্ণিত হয়েছেন। সম্মার্জনীর দ্বারা অমৃতময় জল ছিটিয়ে তিনি রোগ-তাপ দূর করে শান্তি স্থাপন করেন বলে ভক্তরা বিশ্বাস করে। তিনি এই রূপ ধারণ করে রোগ নিরাময় শুরু করেন ও তাঁর এক সহচর বটুককে পাঠান জ্বরাসুরকে মোকাবিলা করতে। কিন্তু বটুককে পরাস্ত করে হত্যা করে জ্বরাসুর। বটুকের মৃতদেহ মুহূর্তে ধুলোয় মিশে যায়। কিন্তু তার ক্ষণিক পরেই বটুক ভৈরব মূর্তি ধারণ করে আবির্ভূত হয়। ঘোর কৃষ্ণবর্ণ বটুকভৈরব তাঁর ত্রিশূল দিয়ে জ্বরাসুরকে হত্যা করেন। শীতলা-বটুকভৈরব-জ্বরাসুরের এই কাহিনি পরে অন্য রূপ নিতে শুরু করে। শীতলার হাতের জলপূর্ণ পাত্রকে ধরা হতে থাকে বসন্ত রোগের বিষপূর্ণ পাত্র। চতুর্ভুজা শীতলাকে দ্বিভুজা হিসেবেও চিত্রিত করা শুরু হয়। তাঁর এক হাতে ঝাঁটা ও অন্য হাতে বিষপাত্র। কল্পনা করা হয়, তিনিই একহাতে রোগ ছড়ান ও অন্য হাতে তা ঝাঁটা দিয়ে দূর করেন। মহাযান বৌদ্ধ ধর্মে শীতলাকে দেবী পর্ণশর্বরীর সঙ্গিনী হিসেবে কল্পনা করা হতে থাকে। পর্ণশর্বরী রোগব্যাধির দেবী। বজ্রযানী মতে, তিনি আবার দেবী তারার সঙ্গিনী। পাল যুগ থেকে বাংলায় শীতলা মূর্তির সঙ্গী হতে শুরু করে জ্বরাসুর। শীতলা কাল্টে আজ জ্বরাসুর নেই।
মাকুড়ি সপ্তমী :-
এদিন কন্যা সন্তানদের (অনেক ক্ষেত্রে ছেলেদের ও ) কান ফুটো করে মাকুড়ি পরানো হয় বলে একে মাকুড়ি সপ্তমী বলে। উত্তর ভারতে একে রথ আরোগ্য সপ্তমী বা অচলা সপ্তমী বা সূর্য্যসপ্তমী বলা হয়।
অচলা সপ্তমী ব্রতকথা :-
একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুত্র শাম্ব নিজের শক্তির দম্ভে মত্ত হয়ে উঠেছিল। একদিন ঋষি দুর্বাশা শ্রীকৃষ্ণের সাথে দেখা করতে এলে তপোক্লিষ্ট ঋষির শরীর নিয়ে উপহাস করেন। তখন ঋষি দুর্বাশা রেগে গিয়ে শাম্বকে কুষ্ঠরোগাক্রান্ত হবার শাপ দেন। শাম্বের এই অবস্থা দেখে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শাম্বকে ভগবান সূর্য্যের উপাসনা করার নির্দেশ দেন। পিতার আজ্ঞা মেনে নিয়ে শাম্ব ভগবান সূর্য্যের উপাসনা আরম্ভ করেন। এর ফলে সূর্যের বরে শাম্ব কুষ্ঠরোগমুক্ত হন।
এই অচলা সপ্তমীর দিনেই শাম্ব কুষ্ঠরোগমুক্ত হন বলে এদিন মানুষ ভগবান সূর্য্যের আরাধনা করেন । এই ব্রতের ফলে ধন, পুত্র ও আরোগ্য প্রাপ্তি হয়। এই ব্রত করলে শারীরিক দূর্বলতা, হাড়ের দূর্বলতা ও জয়েন্টের ব্যাথা দূর হয় বলে বিশ্বাস। এছাড়াও এই ব্রতের প্রভাবে কুষ্ঠের মতো চর্মরোগ নাশ হয় বলে বিশ্বাস।