সাঁওতালি উপকথা - - ২
সাঁওতালি উপকথা - - ১
মৃতসংস্কার ও ভূমিকম্প
ওঁরাওদের কাছে "ধার্মেশ" সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা ও পালনকর্তা। ........সকলে একত্রে একবার ভগবানের কাছে গেল; আকুতি জানিয়ে ধার্মেশকে বললেন, ‘ভগবান, আমাদের মাঝে মৃত্যু দাও।’ ধার্মেশ বললেন, ‘তোমরা কি সকলের জন্যই মৃত্যু চাও।’ উত্তরে সবাই বলে, ‘না, যারা বৃদ্ধ, তাদের জন্য শুধু মৃত্যু দাও।’ দেবতা ধার্মেশ তাদের আবেদন মঞ্জুর করেন। ওঁরাওদের বিশ্বাস, সে থেকেই পৃথিবীতে মৃত্যুর আবির্ভাব হয়েছে।
তাহলে অন্য বয়সীদের কেন মৃত্যু হয়?.... ‘মানব সমাজে পাপের কারণে আত্মার পবিত্রতা নষ্ট হয়। আর এই অপবিত্র আত্মা তখন দেবতা ধার্মেশের কাছে চলে যায় এবং মৃত্যু কামনা করে। ফলে তখনই মানুষের শরীরে রোগব্যাধি দেখা দেয় এবং দেহের মৃত্যু ঘটে।’ আদিবাসী ওঁরাওরা তাদের মৃত পূর্বপুরুষদের শক্তিতে বিশ্বাস করে। ওঁরাও ভাষায় এটি ‘পাকবলার’। এর অর্থ ‘অশরীরী আত্মা’। এদের বিশ্বাস পূর্বপুরুষদের আত্মার এই শক্তিই তাঁদের ভালো আদিবাসী এবং আদর্শ ঐক্যের পথে শক্তি জোগায়। বেঁচে থাকা ওঁরাওদের জন্য মৃতরা তাদের আশীর্বাদ রেখে যায়। তাই এরা মৃতদের ভক্তি করে। ভাত খেতে বসে এরা ভাতের কিছু অংশ পূর্বপুরুষদের নামে উৎসর্গ করে। কখনো কখনো নবজাতকের নাম রাখা হয় পূর্বপুরুষদের নামে, যাতে তাঁর আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
ভূমিকম্প নিয়ে ওঁরাওদের প্রচলিত বিশ্বাসটির কথা। তারা মনে করে, পৃথিবী একটি কচ্ছপের পিঠের ওপর। কেঁচো পাতাল থেকে মাটি তুলে কচ্ছপের পিঠে ফেলে মই দিয়ে ওই মাটি সমান করে দেয়। এ কারণে পৃথিবীর কোথাও সমতল, কোথাও বা পাহাড়-পর্বত। কচ্ছপের মুখের সামনে নাগিনী সাপ ফণা তুলে বসে থাকে, যাতে কচ্ছপ নাড়াচড়া না করতে পারে। কচ্ছপ নাড়াচড়া করলেই ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
ওঁরাওদের কাছে গোত্র মহামূল্যবান। তাঁদের কাছে একই গোত্রের সকলেই ভাইবোন। ফলে এক গোত্রের মাঝে বিয়ে সম্পন্ন নিষিদ্ধ এবং পাপের সমতুল্য।.... ওঁরাওদের রয়েছে ২০টি গোত্র; নানা প্রাণী ও বস্তুর নামেই নামকরণ হয়েছে গোত্রগুলোর।
যেমন:-
১. 'টিগ্গা' অর্থ বানর,
২. 'বান্ডো' অর্থ বনবিড়াল,
৩. 'বাড়া' অর্থ বটগাছ,
৪. 'বাঁড়োয়া' অর্থ বন্যকুকুর,
৫. 'বাখলা' অর্থ এক প্রকার ঘাস,
৬. 'বেক' অর্থ লবণ,
৭. 'কেরকোটা' অর্থ চড়ুই পাখি,
৮. 'কিন্ড' অর্থ এক প্রকার মাছ,
৯. 'কিসপট্রা' অর্থ শূকরের নাড়িভুঁড়ি,
১০. 'কুজুর' অর্থ এক প্রকার লতাজাতীয় গাছ,
১১. 'লাকড়া' অর্থ বাঘ,
১২. 'মিঞ্জি' অর্থ এক প্রকার মাছ,
১৩. 'পান্না' অর্থ লোথা,
১৪. 'তির্কী' অর্থ এক জাতীয় মাছ,
১৫. 'টপ্প' অর্থ এক জাতীয় পাখি,
১৬. 'খাখা' অর্থ এক জাতীয় কাক,
১৭. 'খালখো' অর্থ এক জাতীয় মাছ,
১৮. 'খেস' অর্থ ধান,
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন