রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮

Dhanterus - ধনতেরাস

                ধনতেরাস                
                             
(আরও দেখুন - সূচিপত্র
                               দীপাবলী উপলক্ষে পঞ্চোৎসব পালন করা হয়। এগুলি হল যথাক্রমে ধনতেরাস, নরকচতুর্দশী, দীপাবলী, গোবর্ধনপুজা ও ভাইফোঁটা । ধনতেরাস হল হিন্দু ক্যালেন্ডারের তুলারাশির কৃষ্ণপক্ষের তেরতম দিন। এখানে "তেরাস'' শব্দের অর্থ হল ত্রয়োদশী। এদিন ধনের দেবতা কুবের ও ধন দেবী মা লক্ষ্মী বাড়ি বাড়ি এসে ধন বিতরন করেন। ভারতসরকার এই দিনটিকে 'জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস' হিসাবে ঘোষণা করেছেন।
 ধনতেরাস সম্পর্কে অনেক পৌরাণিক ও লোককথা আছে। এগুলি হল :-
১।। পুরাণ অনুসারে একবার দুর্বাশা মুনির অভিশাপে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হন লক্ষ্মী। আর এই ধনতেরাসের দিনেই দেবতারা ফিরে পান দেবী লক্ষ্মীকে। এই আনন্দের উৎসবই  হচ্ছে ধনতেরাস।
২।। রাজা হিমের ষোড়শবর্ষীয় পুত্রের কোষ্ঠীতে লেখা - বিবাহের চতুর্থ দিবসে সর্পাঘাতে মৃত্যু। নবোঢ়া পুত্রবধূটি দিশাহারা, কী করবে সে?

ভেবে ভেবে সে এক উপায় বের করল - স্বামীকে কিছুতেই ঘুমাতে দেওয়া যাবে না। পতিদেবতাটি সাহসী ও পরাক্রমী, যত বিষধর সর্পই হোক, তার তরোয়ালের কাছে কিছুই না। কিন্তু ঘুমন্ত মানুষের পরাক্রম থাকে না। সুতরাং যে করেই হোক, তাকে জাগিয়ে রাখতে হবে।

বিবাহের পর চতুর্থ রাত্রি। কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর অমানিশায় সমস্ত জগৎ যখন সুষুপ্ত, তাদের শয্যাকক্ষের চতুর্দিকে তরুণী জ্বালিয়ে দিল রেড়ির তেলের অসংখ্য প্রদীপ। কক্ষে একটিমাত্রই প্রবেশদ্বার, সর্পকে প্রবেশ করতে হলে সেটিই একমাত্র পথ। দ্বার রুদ্ধ থাকলেও সর্প নাকি তার ক্ষুদ্র রন্ধ্রপথেও প্রবেশ করতে পারে, তাই সে তার অঙ্গের সমস্ত গহনা ও স্বর্ণাভরণ খুলে স্তূপীকৃত করে রাখল সেই দ্বারপ্রান্তে। প্রদীপের উজ্জ্বল আলোক রত্নরাজি, মণিমাণিক্য ও স্বর্ণাভরণে বিচ্ছুরিত হতে লাগল।

ঘুম দূরে রাখার জন্য এবার সে শুরু করল তার জীবনের চিত্তাকর্ষক গল্প। কোনো মতেই যেন রাজকুমার ঘুমিয়ে না পড়ে।

মৃত্যুদেব যম এলেন সর্পরূপ ধারণ করে। সূক্ষ্মদেহ ধারণ করে ঢুকেও পড়লেন শয্যাকক্ষের দ্বারের অতি ক্ষুদ্র রন্ধ্রপথে। কিন্তু ঢুকেই তার চোখ ধাঁধিয়ে গেল, রাত্রির অন্ধকারেও কক্ষের ভিতর হাজার সূর্যের প্রভা। তিনি দিকনির্ণয় করতে পারলেন না, গুটিসুটি মেরে পড়ে রইলেন রত্নরাজির ওপর। তিনি শুনছেন অনির্বচনীয় কণ্ঠে এক তরুণী গল্প শোনাচ্ছে তার দয়িতকে।

রাজকুমার মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেলেন। পেলেন দীর্ঘ আয়ু ধন্বন্তরীর কৃপায়।

আয়ুর্বেদের জনক, সমস্ত চিকিৎসকদের গুরু এই ধন্বন্তরীর পূজাই ধন্বন্তরী ত্রয়োদশীর মূলে। প্রাণের মূলে যে সূর্যদেব, তিনি হেলে পড়েছেন দক্ষিণে। বাতাসে হিমের পরশ। এ সময় রোগব্যাধির উপক্রম বেশি। এর ফলেই আয়ুক্ষয়।

আমাদের সমস্ত পূজাই কোনোভাবে আয়ু-বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত।

দেব-অসুরের সমুদ্রমন্থনে উঠে এসেছিলেন এই ধন্বন্তরী, এক হাতে অমৃতভাণ্ড ও অন্য হাতে আয়ুর্বেদ নিয়ে। তিনিই শেখালেন আয়ুর্বেদ। আয়ু-বৃদ্ধির উপায়। পরমায়ুই আমাদের একমাত্র ধন। তারই পূজা ধনতেরাসে। পিসিচন্দ্র বা সেনকো গোল্ডের গহনা দিয়ে তাকে কেনা যায় না।

দক্ষিণ ভারতে - তামিলনাড়ুতে - এইদিন উপাসনা হয় মারুন্দুর। মারুন্দু মানে ওষুধ। বাড়িতে প্রস্তুত করে পরের দিন - নরক চতুর্দশীর দিন - সূর্যোদয়ের প্রাক্কালে তা খাওয়ার নিয়ম। বাড়ির মেয়ে-বৌমাকে শেখানো হয় মারুন্দুর রেসিপি, যাতে তারা প্রজন্ম প্রজন্ম ধরে এই ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে চলে।

যমদেবের উদ্দেশে দীপ জ্বালানো হয়। লক্ষ লক্ষ প্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হয় ধরণী। প্রার্থনা ধ্বনিত হয় জীবনের উদ্দেশে, পরমায়ু বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে।

তোমাদের সকলের জীবন সেই পবিত্র আলোয় আলোকিত হোক। স্বাস্থ্যই সম্পদ, তার পূজা যেন আমরা কখনোই ভুলে না যাই।
৩।। এছাড়াও কথিত আছে যে, কুবের আজকের দিনে বিবাহের জন্য প্রয়োজনীয় কারণে ভগবান বিষ্ণুর কাছ থেকে কিছু অর্থ নিয়েছিলেন। যার ফলে, আজও বহু লোক ভগবান বিষ্ণুর মন্দিরে টাকা দান করেন, যাতে ভগবান বিষ্ণুর কাছে ধার শোধ করা যায়।
ধনতেরাসের পুজো পদ্ধতি:-
প্রথমে একটি নতুন কেনা ঘট বা পাত্রে চাল, পাঁচটি সুপারি ও ২১টি পদ্ম বীজ নিতে হবে। অন্য একটি পাত্রে গঙ্গাজল নিয়ে তাতে চিনি, ফুল ও সোনা বা রূপোর পয়সা দিতে হবে। লক্ষ্মী ও গণেশের মূর্তিতে মালা পরিয়ে পুজো করতে হবে। পুজোর সময় নতুন প্রদীপ জ্বালাতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন এই প্রদীপ কমপক্ষে দুই ঘন্টা জ্বলে।
পুণ্য ধন-ত্রয়োদশী (ধনতেরাস্)

ধন্বন্তরির ধ্যান :-
শঙ্খং চক্রমুপর্যধশ্চ করয়োর্দিব্যৌষধং দক্ষিণে
বামেনান্যকরেণ সম্ভৃতসুধাকুম্ভং জলৌকাবলিম্ |
বিভ্রাণঃ করুণাকরঃ শুভকরঃ সর্বাময়ধ্বংসকঃ
ক্ষিপ্রং নো দুরিতং ছিনত্তু ভগবান্ ধন্বন্তরিঃ পাতু নঃ ||

এদিনে কি কিনব ও কি কিনব না :-
এদিন সোনা ও রূপার দ্রব্য, পিতলের মূর্তি, মুদ্রা,কড়ি, ঝাঁটা, মাটির প্রদীপ ইত্যাদি কেনা শুভ।
অপর পক্ষে অ্যালুমিনিয়ামের দ্রব্য, তীক্ষ্ণ ও ধারালো দ্রব্য, কাঁচের দ্রব্য, কালো কিছু ও তেলনির্মিত দ্রব্য কেনা অশুভ। 

Surya kavacham

SURYA KAVACHAM


चमत्कारी सूर्य कवचम : आरोग्य और सौभाग्य का दिव्य वरदान देता है
(নিচে বাংলা অনুবাদ সহ বাংলা ফন্টে ) 
====
II अथ श्रीसूर्यकवचस्तोत्रम् II 
श्री गणेशाय नमः I
याज्ञवल्क्य उवाच I
श्रुणुष्व मुनिशार्दूल सूर्यस्य कवचं शुभम् I
शरीरारोग्यदं दिव्यं सर्व सौभाग्यदायकम् II १ II
दैदिप्यमानं मुकुटं स्फ़ुरन्मकरकुण्डलम् I
ध्यात्वा सहस्रकिरणं स्तोत्रमेतदुदीरयेत् II २ II
शिरो मे भास्करः पातु ललाटे मेSमितद्दुतिः I
नेत्रे दिनमणिः पातु श्रवणे वासरेश्वरः II ३ II
घ्राणं धर्म धृणिः पातु वदनं वेदवाहनः I
जिह्वां मे मानदः पातु कंठं मे सुरवंदितः II ४ II
स्कंधौ प्रभाकरं पातु वक्षः पातु जनप्रियः I
पातु पादौ द्वादशात्मा सर्वागं सकलेश्वरः II ५ II
सूर्यरक्षात्मकं स्तोत्रं लिखित्वा भूर्जपत्रके I
दधाति यः करे तस्य वशगाः सर्वसिद्धयः II ६ II
सुस्नातो यो जपेत्सम्यक् योSधीते स्वस्थ मानसः I
स रोगमुक्तो दीर्घायुः सुखं पुष्टिं च विंदति II ७ II
II इति श्री माद्याज्ञवल्क्यमुनिविरचितं सूर्यकवचस्तोत्रं संपूर्णं II
সূর্য্যকবচম

যাজ্ঞবল্ক্য উবাচ -
 শ্রণুষ্ব মুনিশার্দুল সূর্য্যস্য কবচং শুভম্  ।
শরীরারোগ্যদং   দিব্যং সর্ব সৌভাগ্যদায়কম্ ।1।

 ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য বললেন - হে মুনিশ্রেষ্ঠ ! ভগবান সূর্য্যের শুভ কবচ শ্রবণ কর , যা শরীরের আরোগ্য প্রদানকারী তথা সম্পূর্ণ দিব্য সৌভাগ্য প্রদান করে।

 দেদীপ্যমানং মুকুটং স্ফূরন্মকরকুণ্ডলম্ ।
ধ্যাত্বা সহস্রকিরনং স্তোত্রমেতদুদীরয়েৎ  ।2।

 উজ্জ্বল মুকুটধারী দোলয়মান মকর কুণ্ডলধারী সহস্রকিরনের ধ্যান করে এই স্তোত্র আরম্ভ করছি।

 শিরো মে ভাস্করঃ পাতু ললাট মেড়মিতদ্যূতিঃ ।
নেত্রে দিনমণিঃ পাতু শ্রবণে বাসরেশ্বরঃ ।3।

 ভাস্কর আমার মস্তক রক্ষা করুন, অপরিমিত কান্তি যুক্ত দেব আমার ললাট রক্ষা করুন। নেত্র রক্ষা করুন দিনমণি আর ঈশ্বর আমার কান রক্ষা করুন।

 ঘ্রাণং ধর্ম ঘৃণিঃ পাতু বদনং বেদবাহনঃ ।
জিহ্বাং মে মানদঃ পাতু কণ্ঠং মে সুরবন্দিতঃ  ।4।

 ধর্মঘৃণি আমার নাক রক্ষা করুন, মুখ রক্ষা করুন বেদবাহন । জিহ্বা রক্ষা করুন মানদ ও কণ্ঠ রক্ষা করুন সুরবন্দিত।

স্কন্ধৌ প্রভাকরং পাতু বক্ষঃ পাতু জনপ্রিয়ঃ।
পাতু পাদৌ দ্বাদশাত্মা সর্বাঙ্গ সকলেশ্বরঃ ।।

প্রভাকর আমার স্কন্ধদ্বয় রক্ষা করুন, বক্ষ রক্ষা করুন জনপ্রিয়। দ্বাদশাত্মা পদদ্বয় রক্ষা করুন আর সর্বাঙ্গ রক্ষা করুন সকলেশ্বর ।

সূর্য্য রক্ষাত্মকং স্তোত্রং লিখিত্বা ভূর্জপত্রকে  ।
দধাতি যঃ করে তস্য বশগাঃ সর্বসিদ্ধয়ঃ ।5।

 সূর্য্যরক্ষাত্মক এই স্তোত্র ভোজপত্রে লিখে যে হাতে ধারন করে সর্বসিদ্ধি তার বশীভূত হয়।

 সুস্নাতো যো জপেৎসম্যক্ যোৎধিতে স্বস্থ মানসঃ ।
স রোগমুক্তো দীর্ঘায়ুঃ  সুখং পুষ্টিং চ বিদন্তি। ।6।

 স্নান করে যে স্বচ্ছ মনে এই কবচ পাঠ করে সে সর্বরোগমুক্ত হয়ে সুখী ও দীর্ঘজীবন লাভ করে।
=====================================

বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৮

কিছু কবিতা - some poems

নিহারীকা
     সুব্রত মজুমদার 
আমি ছিলাম তোমার আশে তোমার প্রতীক্ষায়,
                                  শালের তলে মাদল যেথায় ধিতাং ধিতাং গায়
রুক্ষ মাটি গ্রীষ্মে তাপে' শ্রাবণ জলে নায়।
 সুপ্তিভরা আঁধার ঘেরা কাজল নদীর কূলে
                                       ঘুমিয়ে ছিলাম নরম ঘাসের কোলে ;
তন্দ্রাহরা তোমার কথা ভূলে।
ঘুমের মাঝে হঠাৎ এলো ডাক, -
                                       "শুনছো ! হোথায় চক্রবাক
উড়ছে দেখো ; - - হোথায় চক্রবাক !
ওদের ডানা রোদে ঝলমলিয়ে ওঠে;
                                        শান্ত নদীর নরম সবুজ তটে
 সোনার রবি চলছে অস্তপাটে।"
আমি বললাম - ' কোথায় নিহারীকা ?
                                  কোথায় তুমি  বসে একা একা ?
কোথায় তুমি? কোথায় নিহারীকা ?"
নিরব হেঁসে বাড়িয়ে দিলে তোমার নরম হাত,
                                              মেহেন্দীতে ভর করে তার নামল জ্যোৎস্নারাত ;
জ্যোৎস্না এসে চুমল চিকন হাত।
উঠল জোয়ার নদীর বুকে দীগন্তহীন জল
                                          ফেনায় ফেনায় ডুবল ঘাসের দল,
মরানদী হঠাৎ হলযেন  উচ্ছ্বল চঞ্চল।
গলা আমার উঠল কেঁপে দারুণ আশঙ্কায়
                                           - 'ও মেয়ে ! এ আমি কোথাই ?
ছিলাম বসে তোমার প্রতীক্ষায়।'
ভেঁসে এলো ললিত কণ্ঠে সুরের কলতাণ
                                                   - 'আমি তোমার নিহারীকা, - - জোয়ার ভাঁট আর গান।
আমার সুরে জাগবে আজি লক্ষ কোটি  প্রান।

রবিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৮

হিন্দু পঞ্চাঙ্গ কি ও কেন?

        হিন্দু পঞ্চাঙ্গ
             
               
পঞ্চাঙ্গ কথার অর্থ হল 'পঞ্চ-অঙ্গ'  অর্থাৎ পাঁচটি অঙ্গের সমাহার। এই পাঁচটি অঙ্গ হল   :- নক্ষত্র, তিথি, বার, যোগ ও করণ।
নক্ষত্র :-
               নক্ষত্র হল কোন বিশেষ মুহূর্তে চন্দ্র যে নক্ষত্রে থাকে ।  আবার জন্ম সময়ে চন্দ্র যে নক্ষত্রে থাকে তাকে জন্মনক্ষত্র বলে। নক্ষত্র 27 টি। আর অভিজিৎ কে ধরলে নক্ষত্র 28 টি।
এরা হল :- ১) অশ্বিনী, ২) ভরণী, ৩) কৃত্তিকা, ৪) রোহিণী, ৫) মৃগশিরা, ৬) আর্দ্রা, ৭) পুনর্বসু, ৮) পুষ্যা, ৯) অশ্লেষা, ১০) মঘা, ১১) পূর্ব-ফাল্গুনী, ১২) উত্তর-ফাল্গুনী, ১৩) হস্তা, ১৪) চিত্রা, ১৫) স্বাতী, ১৬) বিশাখা, ১৭) অনুরাধা, ১৮) জ্যেষ্ঠা, ১৯) মূলা, ২০) পূর্বাষাঢ়া, ২১) উত্তরাষাঢ়া, ২২) শ্রবণা, ২৩) ধনিষ্ঠা, ২৪) শতভিষা, ২৫) পূর্ব-ভাদ্রপদ, ২৬) উত্তর-ভাদ্রপদ ও ২৭) রেবতী।
নক্ষত্র বের করার পদ্ধতি :- প্রথমে জন্মসময়ে চন্দ্রের অবস্থান বের করে তার ভোগাংশ লিখে রাখতে হবে। ধরা যাক ঐসময় চন্দ্র নবম রাশিতে আছে ও তার ভোগাংশ  6o 5' । এখন একে মিনিটে পরিবর্তন করে পাই  16,565"। এবার একে 800 দিয়ে ভাগ করে পাই   20.70625 । এর মানে দাঁড়ায় কুড়িটি নক্ষত্র পেরিয়ে একুশতম নক্ষত্র চলছে। এখন একুশতম নক্ষত্র হল উত্তর-আষাঢ়া। দশমিকের আগের সংখ্যা হল পেরিয়ে যাওয়া নক্ষত্র। এইভাবে নক্ষত্র নির্ণয় করতে হবে।
বার
                            এক সূর্য্যোদয় হতে পরবর্তী সূর্য্যোদয় পর্যন্ত সময়কালকে বার বলা হয়। বার মোট সাতটি। বারগুলি হল :- রবিবার, সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার, শনিবার।
তিথি
                                            তিথি হলো সূর্য্য ও চন্দ্রের মধ্যের কৌণিক দশা। মোটামুটি 12o  নিয়ে একটি তিথি হয়। চন্দ্র ও পৃথিবীর গতির কারণে চন্দ্রের কলা যত বৃদ্ধি পায় তত তা সূর্য্য হতে দূরে সরে যায়। যখন সূর্য্য হতে চন্দ্র দূরে সরে যায় তখন চন্দ্রের কলা বৃদ্ধি পায়, একে শুক্লপক্ষ বলে।  আর চন্দ্র যত সূর্যের কাছে আসে তত চন্দ্রের কলা হ্রাস পায়, একে কৃষ্ণপক্ষ বলে। তিথি বের করার নিয়মটি হল :-
তিথি = ( চন্দ্রের ভোগাংশ - সূর্যের ভোগাংশ )/12
                                   এখন উপরের ফর্মুলায় যেটা দরকার সেটা হল তিথির চন্দ্র ও সূর্যের ভোগাংশ। চন্দ্র ও সূর্যের ভোগাংশ কিভাবে নির্ণয় করব তা আলোচনা করছি।  উপরের ফর্মুলায় প্রাপ্ত সংখ্যাটি তিথি। যদি তিথি 1—15 হয় তবে কৃষ্ণপক্ষ আর 16 এর বেশি হলে শুক্লপক্ষ। মনে করা যাক আমরা পেলাম 17, এর অর্থ এটি শুক্লপক্ষের দ্বাদশী । জ্ঞাতার্থে জানাই উত্তরভারতে কৃষ্ণপক্ষ হতে মাসের শুরু হয়।
যোগ
                        যোগ গণনা করা হয় চন্দ্র ও সূর্যের অবস্থান গণনা করে।
এরা হল :-  ১) বিকুম্ভ, ২) প্রীতি, ৩) আয়ুষ্মান, ৪) সৌভাগ্য, ৫) শোভন, ৬) অতিগ-, ৭) সুকর্মা, ৮) ধৃতি, ৯) শূল, ১০) গ-, ১১) বৃদ্ধি, ১২) ধ্রুব, ১৩) ব্যাঘাত, ১৪) হর্ষণ, ১৫) বজ্র, ১৬) অসৃক, ১৭) ব্যতীপাত, ১৮) বরীয়ান্, ১৯) পরিঘ, ২০) শিব, ২১) সাধ্য, ২২) সিদ্ধ, ২৩) শুভ, ২৪) শুক্র, ২৫) ব্রহ্ম, ২৬) ইন্দ্র ও ২৭) বৈধৃতি।
যোগ 27 রকমের। তিথি বের করার নিয়মটি হল :-
যোগ = ( চন্দ্রের ভোগাংশ +সূর্যের ভোগাংশ )/13o20'
        = ( চন্দ্রের ভোগাংশ +সূর্যের ভোগাংশ )/800
(এই 13o20' কে মিনিটে করলে 800 মিনিট হয়।)
করণ
                                                              করণ হল তিথির অর্ধেক। অর্থাৎ একটা তিথিতে দুটো করণ।মাসে মোট করণ 11 টি।  এগুলি হল :-
বব, বালব, কৌলব,তৌতিল, গর, বণিজ, বিষ্টি, শকুণি, চতুষ্পাদ, নাগ এবং কিস্তুঘ্ন। 

শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮

ভূতচতুর্দশী ও চৌদ্দ শাক

     ভূত চতুর্দিকে ও চৌদ্দ শাক
                                                 দীপাবলী উপলক্ষে পঞ্চোৎসব পালন করা হয়। এগুলি হল যথাক্রমে ধনতেরাস , নরকচতুর্দশী , দীপাবলী, গোবর্ধনপুজা  ও   ভাইফোঁটা । 
( দেখুন - সূচিপত্র
কার্তিক মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিকে 'ভূতচতুর্দশী' বা 'যমচতুর্বদশী'ও বলে। এই দিন চৌদ্দশাক ও চৌদপ্রদীপ দেওয়ার রীতি আছে। সন্ধ্যায় পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে চৌদপ্রদীপ দেওয়া হয়। চৌদ্দ পুরুষের উদ্দেশ্যে চৌদপ্রদীপ। এই চৌদ্দপুরুষ হচ্ছেন, পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতা, পিতামহী ও প্রপিতামহী, মাতামহ, প্রমাতামহ ও বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতামহী, প্রমাতামহী ও বৃদ্ধপ্রমাতামহী এবং শ্বশুর ও শাশুড়ি।

দীপদান মন্ত্রঃ-

নমঃ পিতৃভ্যঃ প্রেতেভ্যো নমঃধর্মায় বিষ্ণবে।
নমো ধর্ম্মায়(ধুম্রায়)রুদ্রায় কান্তায় পতয়ে নমঃ।। 
                           পুরাণে আছে প্রাগজ্যোতিষপুরের রাজা নরকাসুর ১৬০০০ কন্যাকে বন্দি  করে রাখেন। তিনি দেবমাতা অদিতির কানের বালা ছিনিয়ে নেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করেন এই দিনে। তা দিনটি নরকচতুর্দশী বা ভূতচতুর্দশী নামে পরিচিত।
                   এছারাও - দানবরাজ বলি যখন স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল দখল করে নিলেন। তখন বলির অত্যাচারে   দেবতা-মানব কেউই রেহাই পেলেন না। এমতাবস্থায়  দেবগুরু বৃহস্পতির পরামর্শে ভগবান বিষ্ণু নিলেন বামনের অবতার। বলি তখন ইন্দ্রত্ব লাভের জন্যে শতাশ্বমেধ যজ্ঞে রত ।ভগবান বামন তখন বলির কাছে তিন পা সমান জমি ভিক্ষা চাইলেন । দানবরাজ বলি কিন্তু শুরুতেই বুঝেছিলেন এই বামন আর কেউ নন, স্বয়ং বিষ্ণু। কিন্তু এরপরও তিনি দানে প্রতিশ্রুত হলেন।  দু'পা দিয়ে স্বর্গ ও মর্ত্য দখল করে ফেললেন বিষ্ণু। এরপর নাভি থেকে বের হয়ে এলো আরেক পা, যা রাখার স্থান নেই। জ্ঞানী বলি তখন মাথা পেতে দিলেন তৃতীয় পা রাখার জন্য। সঙ্গে সঙ্গেই পাতালে নেমে গেলেন দানবরাজ বলি। সেই থেকে পাতালই হলো তার আবাস।
                                                       ভগবানের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করায় বলির জন্য একটি বিশেষ সুবিধা রেখে দিলেন বিষ্ণু। প্রতি বছর মর্ত্যে, অর্থাৎ পৃথিবীতে তাকে পূজা দিবে মানুষ। সেই থেকে কালীপূজার আগের রাতে বলি রাজা পাতাল থেকে উঠে আসেন পূজা নিতে, তার সহচর হিসেবে থাকে শত সহস্র ভূত, প্রেতাত্মা এবং অশরীরী, বেতার, পিশাচ । তাই এই দিনটিকে বলা হয় ভূতচতুর্দশী।  তুলারাশির শুক্লপক্ষের  চতুর্দশী তিথিতে  চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালিয়ে চৌদ্দ পুরুষের আত্মাকে তুষ্ট করে অশুভ শক্তিকে দূর করার প্রথা পালন করা হয় বলে এই দিনটাকে ভূত চতুর্দশীও বলে। এক সঙ্গে অনেকগুলি প্রদীপ জ্বালিয়ে ক্ষতিকারক কীটের হাত থেকে হৈমন্তিক ফসল রক্ষা করার তাগিদে কৃষিজীবী বাঙালীকে এই উপাচার পালন করতে হত ।
                                                                এই ভূতচতুর্দশী দিনটি উপলক্ষ্যে রান্না হয় চৌদ্দ শাক ভাজা । ওল, কেঁউ, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ, ভাঁট  ও শুষণী- এই চৌদ্দ রকমের শাক একসঙ্গে রান্না হয় সেদিন। চৌদ্দ শাক ধোয়ার পর তার জল বস্তুর চতুর্দিকে।বাংলার নব্য-স্মৃতিশাস্ত্রকার রঘুনন্দন (১৬ শতাব্দী) তাঁর অষ্টবিংশতি তত্ত্বের অন্যতম গ্রন্থ কৃত্যতত্ত্বে এই ভূত চতুর্দশীর উল্লেখ করে চৌদ্দ শাক খাবার কথা বলেছেন । আশ্বিন ও কার্ত্তিক মাস দুটিকে যমদংস্টা কাল বলে। কারন এসময় রোগের প্রকোপ অনেক বৃদ্ধি পায়। মন্ত্রে তাই বলা হয়েছে :-
“ওলং কেমুকবাস্তূকং, সার্ষপং নিম্বং জয়াং।
শালিঞ্চীং হিলমোচিকাঞ্চ পটুকং শেলুকং গুড়ূচীন্তথা।
ভণ্টাকীং সুনিষন্নকং শিবদিনে খাদন্তি যে মানবাঃ,
প্রেতত্বং ন চ যান্তি কার্ত্তিকদিনে কৃষ্ণে চ ভূতে তিথৌ।”
চৌদ্দ শাকের নিচে বর্ণনা দেওয়া হল :-
  ওল (Amorphophalluscampanulatus) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: কচি পাতা, পাতার বৃন্ত এবং কন্দ।
ভেষজ গুণাবলী: ওলের শুকনো কন্দের গুঁড়ো অর্শ, হাঁপানি, টিউমার, প্লিহার বৃদ্ধি ও রক্ত আমাশার ঔষধ হিসেবে প্রাচীনকাল থেকে ভারতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। টাটকা মূল ব্যবহৃত হয় কফনাশক ও বাতের চিকিৎসায়। কাঁকড়া বিছার কামড়ে পত্রবৃন্তের রস ব্যবহৃত হয়।

কেঁউ (Costus speciosus.) :- 
যে অংশ খাওয়া যায়: নরম পাতা
ভেষজ গুণাবলীঃ কেঁউ পাতার রস ভালো হজমকারক ও ক্ষুধাবর্ধক। জ্বর, আমাশা, ডায়েরিয়া, কফ, কাটা-ছেঁড়া, ক্ষত, চর্মরোগ, জন্ডিস, আরথ্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, কুষ্ঠ, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, রক্তাল্পতা, কৃমি, চুলকানি, বমিভাব ইত্যাদি রোগের ঔষধ ও সাপে কাটার প্রতিষেধক হিসেবে কেঁউ পাতার নির্যাস প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় সমাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বথুয়া বা বেথুয়া ( Chenopodium album) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: ছোটো গাছের পুরো বিটপ অংশ, আর বড়ো গাছের পাতাসহ ডগা।
ভেষজ গুণাবলী: কোষ্ঠবদ্ধতা, রক্তাল্পতা, অম্বল, কৃমি, বৃক্ক-পাথুরি, মুখে ঘা, পায়েরিয়া, ত্বকের রোগ, বাত ও অর্শ প্রতিরোধে বেথুয়া শাক খুব উপকারী। গর্ভরোধক হিসেবে এর ব্যবহার রয়েছে।

কালকাসুন্দা ( Senna  sophera ) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: নরম পাতা ও কাঁচা শুঁটি।
ভেষজ গুণাবলীঃ অ্যালার্জি, কোষ্ঠবদ্ধতা, হুপিং কাশি, কফ, জ্বর, বেতো জ্বর, ম্যালেরিয়া, কঞ্জাংকটিভাইটিস ও ক্ষত নিরাময়ে কালকাসুন্দার পাতার রস খাওয়া হয়। মৃগি রোগীদের চিকিৎসায় গোটা উদ্ভিদের রস ব্যবহার হয়। রজঃস্রাবের সময় যন্ত্রণা হলে মূলের ক্বাথ কাজ দেয়। আবার ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় কালকাসুন্দার বাকল ভেজানো জল খেলে উপকার হয়।
নিম ( Azadirachta indica) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: কচি পাতা ও ফুল।
ভেষজ গুণাবলীঃ নিম পাতা বা পাতার রস কুষ্ঠ, চর্মরোগ, বহুমুত্র, জন্ডিস, একজিমার ভালো ঔষধ। ব্লাড সুগারের রোগীরা প্রতিদিন সকালে ১০-১২টা করে নিমপাতা চিবিয়ে খেলে সুগার কমে। পোকামাকড়ের কামড়ে মূলের ছাল বা পাতা বেটে লাগালে উপকার হয়। পাতা বাটা মাথায় মাখলে উকুন মরে। মূলের গুঁড়ো জলে মিশিয়ে খাওয়ালে বাচ্চাদের কৃমি নাশ হয়। নিম তেলের শুক্রানুনাশক ক্ষমতা থাকায় এটি জন্মনিয়ন্ত্রক হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। নিমের ছাল ভিজিয়ে জল খেলে অজীর্ণ রোগ সারে।
 সরিষা ( Brassica juncea) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতা ও পাতাসহ কচি কান্ড এবং বীজ।
ভেষজ গুণাবলীঃ ত্বক, যকৃৎ ও চোখের পক্ষে সরষে শাক খুব উপকারি। ভিটামিন K, C ও E এবং ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও লোহার সমৃদ্ধ উৎস হল এই শাক। এই শাক খেলে ক্যানসার, হৃদরোগ ও অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হবার সম্ভাবনা কমে। এছাড়া আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস ও রক্তাল্পতা রোগের নিরাময়ে সরষে শাক যথেষ্ট উপকারি।

শালিঞ্চা ( Alternanthera sessilis  ) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতাসহ ডগা।
ভেষজ গুণাবলীঃ চোখ, চুল ও ত্বকের জন্য শালিঞ্চা শাক খুব উপকারী। ডায়েরিয়া, অজীর্ন, হাঁপানি, কফ, জ্বর, রাতকানা, খোসপাঁচড়া, একজিমা, অর্শ ও অন্ত্রে ঘায়ের চিকিৎসায় এই শাক খেলে উপকার হয়। এই শাক খেলে মায়ের স্তনদুগ্ধের পরিমাণ বাড়ে। প্রতিদিন ৭৫ গ্রাম করে শালিঞ্চা শাক খেলে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে সুগারের পরিমাণ কমে। চোখে জল পড়া, কনজাংক্টিভাইটিস, মায়োপিয়া ও ছানির চিকিৎসায় মূলের রস ব্যবহৃত হয়। গোরুর দুধের সাথে শালিঞ্চা পাতার রস মিশিয়ে খেলে শরীরে শক্তি ও জীবনীশক্তি বাড়ে। কাঁটা বা হুল বিঁধলে ক্ষতস্থানে শালিঞ্চা পাতা বেটে লাগালে কাজ দেয়।

জয়ন্তী ( Sesbania sesban) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: কচি সবুজ টাটকা পাতা।
ভেষজ গুণাবলীঃ উদরাময়, বহুমূত্র, শ্বেতি, মৃগী, মানসিক সমস্যা, জ্বর, ফুসফুসের যক্ষ্মা, কিডনির সংক্রমণ, গনোরিয়া ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ও কৃমিনাশকের কাজ করে। সদ্য প্রসূতিদের জন্য এই শাক খুব উপকারি। মেধা ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও জয়ন্তী পাতার রস খাওয়ানো হয়।

গুলঞ্চ (  Tinospora cordifolia) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতা।
ভেষজ গুণাবলীঃ গুলঞ্চকে স্বর্গীয় উদ্ভিদ বলে গণ্য করা হয় এর ভেষজ গুণের জন্য। ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, পাকস্থলীর গোলমাল, লিম্ফোমা সহ অন্যান্য ক্যানসার, কুষ্ঠ, যক্ষ্মা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বাত, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, হেপাটাইটিস, পেপটিক আলসার, গনোরিয়া, সিফিলিস, শোথ, জ্বর ইত্যদি নানা রোগের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় গুলঞ্চ ব্যবহৃত হয়। গুলঞ্চ শাক খেলে অনাক্রম্যতন্ত্র উজ্জীবিত হয়। গুলঞ্চের রস নিয়মিত খেলে আয়ু বাড়ে, যৌবন দীর্ঘস্থায়ী হয়, সুস্বাস্থ্য হয়, ত্বকের রঙ উজ্জ্বল হয়, ক্ষুধা বাড়ে ও বন্ধ্যাত্ব দূর হয়। গুলঞ্চ খেলে বৃক্কে পাথর জমার সম্ভাবনা থাকে না এবং রক্তে ইউরিয়ার মাত্রা সঠিক থাকে।

পলতা বা পটল পাতা ( Trichosanthesdioica) :-
যে অংশখাওয়া যায়: পাতা ও ফল।
ভেষজ গুণাবলীঃ শ্বাসতন্ত্রঘটিত যে কোনও রোগ সারাতে পটল পাতা উপকারি। রক্তবর্ধক ও রক্তশোধক হিসেবে এবং লিভার ও চর্ম রোগ সারাতে পটল পাতা খুব কার্যকর। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে এবং রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে পটল পাতার কার্যকরী ভূমিকা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন। পটল পাতা নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও মানসিক অস্থিরতা দূর হয়। পটল পাতা ক্ষিদে ও হজমশক্তি বাড়ায়। জন্ডিস, কফ, জ্বর, পিত্তজ্বর, টাইফয়েড, অর্শ, কৃমি, ডায়েরিয়া ইত্যাদি রোগে পটল পাতা খেলে কাজ দেয়। ক্ষতস্থানে পটল পাতার রস লাগালে তাড়াতাড়ি সারে।১) পটোল একটি সুস্বাদু, নির্দোষ সব্জী ও সর্বরোগে সমপথ্য৷ বিশেষ করে অর্শ, আমাশয়, বহুমূত্র ও অম্লরোগে প্রাত্যহিক ভোজন তালিকায় পটোলের তরকারী সুপথ্য৷

(২) পটোলের লতার ডগার অংশকে পলতা বলে৷ পলতা একটি তিক্ত ভোজ্য ও ঔষধীয় গুণে পরিপূর্ণ৷ পলতা লিবার তথা যকৃতের পক্ষে উপকারী, এ রক্ত–পরিষ্কারক, রক্ত–বর্দ্ধক, ক্ষুধা–বর্দ্ধক ও নিদ্রাহীনতার ঔষধ৷ প্রমেহ (গণোরিয়া), উপদংশ (সিফিলিসগ্গ, চর্মরোগে, কুষ্ঠে ও বহুমূত্র রোগে পলতার তরকারী আবশ্যিক ভোজন৷

গ্রন্থিবাত অর্থাৎ আর্থরাইটিস্ রোগে মুখ্যতঃ পলতা ও অন্যান্য উপকরণ সহযোগে একটি ভাল ঔষধ তৈরী হয়–এক মুঠো অড়হর ডাল ১/২ দিন জলে ভিজিয়ে রেখে তারপরে শিলে পিষে নিতে হয়৷ পলতা পাতা (ধরা যাক ১০০টি) ও তার অর্ধেক কালমেঘের পাতা একত্রে পিষে নিতে হয়৷ তারপর দুই ধরনের পেষা বস্তু একত্রে মিশিয়ে মাখো মাখো অবস্থায় ছোট ছোট ওষুধের পিলের মত বানিয়ে শুকিয়ে নিতে হয়৷ তারপর প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২টি করে পিল ১/২ ফোঁটা মধুসহ খেতে হয়৷ অড়হর ডাল বাদ দিয়ে কালমেঘ পাতা ও পলতা পাতা থেকে একই প্রক্রিয়ায় বটিকা তৈরী করে নিয়ে ব্যবহার করলেও ফল পাওয়া যায়৷

ভাঁট বা ঘেঁটু ( Clerodendrum infortunatum) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতা।
ভেষজ গুণাবলীঃ ঘেঁটুতে প্রচুর ফ্ল্যাভোনয়েড থাকায় এটি ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম। এছাড়া চুল পড়া, হাঁপানি, কফ, বাত, জ্বর, চর্মরোগ, লিভারের রোগ, মাথার যন্ত্রণা, কৃমি, কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার, উদরাময় ইত্যদি রোগ প্রতিরোধে ঘেঁটু পাতা খুব কার্যকর। ঘেঁটু পাতা বেটে ঘা বা ফোলা জায়গার ওপর লাগালে তাড়াতাড়ি সারে।

হেলেঞ্চা বা হিংচে ( Enhydra fluctuans ) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতাসহ ডগা।
ভেষজ গুণাবলীঃ আয়ুর্বেদে হেলেঞ্চাকে রক্তশোধক, পিত্তনাশক, ক্ষুধাবর্ধক, ব্যথানাশক, জীবানুনাশক ও জ্বরনাশক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই শাক নিয়মিত খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে। কোষ্ঠকাঠিন্য, হাঁপানি, ডায়েরিয়া ও স্নায়ুরোগের ভেষজ চিকিৎসায় হেলেঞ্চা ব্যবহৃত হয়। দীর্ঘ জ্বরভোগের পর হেলেঞ্চা শাক দিয়ে মাছের ঝোল খেলে ক্ষুধা বাড়ে ও মুখে রুচি ফেরে। হেলেঞ্চা শাকে যথেষ্ট অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকায় এর ক্যানসার প্রতিরোধী ভূমিকা রয়েছে। মাথার যন্ত্রণায় মাথায় এই শাক বেটে লাগালে যন্ত্রণা কমে। হেলেঞ্চা শাক নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগার কমে।

শুষনি ( Marsileaquadrifolia / Marsileaminuta ) :-
যে অংশ খাওয়া যায়: পাতা।
ভেষজ গুণাবলীঃ  শুষনি শাক খেলে ঘুম পায়। তাই নিদ্রাহীনতায় যাঁরা ভোগেন তাঁদের নিয়মিত শুষনি শাক খেলে কাজ দেয়। এ ছাড়া নিয়মিত শুষনি শাক খেলে মাথার যন্ত্রণা, তীব্র মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, গায়ে ব্যথা, পায়ের পেশির অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন, বাত, জিভে ও মুখে ক্ষত, চর্মরোগ ইত্যদি দূর হয়। শুষনির কাশি ও কফ নিরাময়কারী ভূমিকা বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রমাণিত। চোখের রোগ, ডায়াবেটিস ও ডায়েরিয়া নিরাময়ে শুষনি পাতার রস কার্যকর। সন্তান প্রসবের পর মায়েরা শুষনি শাক খেলে দুগ্ধক্ষরণ বাড়ে। সাপের কামড়ে শুষনি পাতার রস দিয়ে চিকিৎসা করার প্রচলিত রীতি রয়েছে।

শেলুকা বা শুলফা (Peucedanum graveolens / Anethumsowa) :-
যে অংশ খাওয়ায যায়: পাতাসহ ডগা এবং বীজ।
ভেষজ গুণাবলীঃ মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ বাড়াতে ও বাচ্চাদের পেটের রোগ সারাতে শুলফা শাক খুব উপকারী। বাচ্চাদের গ্রাইপ ওয়াটারের একটা উপাদান এই শুলফা শাক থেকে আসে। চোখের রোগ, চোখে ঘা, পুরানো ক্ষত, জ্বর, স্নায়ু রোগ, জরায়ুর ফাইব্রয়েড ইত্যদি রোগের নিরাময়ে শুলফা খুবই কার্যকর। বাচ্চাদের পেটফাঁপায় শুলফা বীজ জলে ভিজিয়ে সেই জল খেলে দারুণ কাজ দেয়। শুলফা বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল সায়াটিকা বাত, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, স্পন্ডাইলোসিস, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, কফ ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। মৌরি তেল পচন রোধে, মূর্চ্ছা রোধে ব্যবহৃত হয়।

ভূতচতুর্দশী পূজাপদ্ধতি :-


 দীপদান মন্ত্রঃ-
নমঃ পিতৃভ্যঃ প্রেতেভ্যো নমঃধর্মায় বিষ্ণবে।
নমো ধর্ম্মায়(ধুম্রায়)রুদ্রায় কান্তায় পতয়ে নমঃ।। "

 মাষভক্তবলি :- 

 নিজের বামে গোময়ের দ্বারা ত্রিকোণ মণ্ডল লিখিয়া তাহার উপরে  "এতে অন্ধপুস্পে ওঁ ক্ষেত্রপালাদিভূতগণেভ্যো নমঃ"  মন্ত্রে পাদ্যাদি দ্বারা পূজা করিয়া খুরি বা বিল্বপত্রের উপরে মাষকলাই, দধি ও হরিদ্রাচুর্ণ একত্রে মিশ্রিত করিয়া তাহার অর্চ্চনা করে  নিবেদন করতে হবে , -
ওঁ মাষভক্তবলয়ে নমঃ। এষ মাষভক্তবলিঃ ওঁ ক্ষেত্রপালাদিভূত-গণেভ্যো নমঃ।।

নিবেদনান্তে প্রার্থনা মন্ত্র য: -
ওঁ ভূতপ্রেতপিশাচাশ্চ দানবা রাক্ষসাশ্চ যে। 
শান্তিং কুর্ব্বন্তুতে সর্ব্বে ইমং গৃহ্নন্তু মদ্‌বলিম্‌।

তারপরে সাদা সর্ষে নিয়ে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠপূর্ব্বক উহার দশদিকে ছড়িয়ে দেবে। 
ওঁ বেতালাশ্চ পিশাচাশ্চ রাক্ষসাশ্চ সরীসৃপাঃ। অপসর্পন্তু তে সর্ব্বে নারসিংহেন তাড়িতাঃ।। "

 এই মাস কলাই,দই আর আতপচাল কলা পাতা বা মৃত্ পাত্রে ভূতের উদ্দেশ্য দেওয়া হয়,যাকে মাসভক্তবলী বলে। 
                                   - - - -