মলমাস /অধিকমাস / পুরুষোত্তম মাস
আমরা প্রায়শই মলমাসের কথা শুনে থাকি। এই মাসে নাকি শুভকাজ হয় না। কিন্তু কি এই মলমাস ?
এই মলমাস সম্পর্কে জানতে গেলে আগে জানতে হবে চান্দ্রমাস আর সৌরমাস সম্মন্ধে। চান্দ্রমাস হচ্ছে চাঁদের পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করতে যা সময় লাগে সেই সময়কাল। আর সৌরমাস হলো পৃথিবীর সূর্যের চারপাশে একপাক ঘুরে আসতে যে সময় লাগে তার বারো ভাগের একভাগ সময়কাল।
চান্দ্রমাসের সময়কাল প্রায় সাড়ে 29.53 দিন। এই 29.53 দিনে মোট ৩০টি চান্দ্রতিথি দেখা যায়, তাদের দুই ভাগে ভাগ করে দুটি পক্ষে পনেরোটি করে তিথি বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমটি কৃষ্ণপক্ষের গৌণ চান্দ্রমাসের প্রতিপদ থেকে অমাবস্যা এবং দ্বিতীয়টি শুক্লপক্ষের মুখ্য চান্দ্রমাসের প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত।
অপরপক্ষে এক সৌরমাসে মোট 30 দিন। ফলে ক্যালেন্ডারে এই সৌরমাস আর চান্দ্রমাসের সমতা আনতে গেলে প্রতি আড়াই বছর অন্তর 29 টি অধিক সৌরদিবস পাই, যা হিসেবে ত্রুটি আনে। এই ত্রুটি দূর করতেই মলমাস বা ত্রয়োদশ অধিক চান্দ্রমাসের উৎপত্তি।
আরও বিষদে বলতে গেলে এক চান্দ্রবৎসরে মোট 360 টি তিথি যাদের পুর্ণ হতে সময় লাগে 354 সৌরদিবস 3 ঘন্টা সময়। অন্যদিকে এক সৌরবৎসরের মোট 365 দিন। অর্থাৎ প্রতি সৌরবছরে ও চান্দ্রবছরে 10 দিন 21 ঘন্টা 35 মিনিটের ব্যাবধান দেখা যায়। এই ব্যাবধান 32 সৌরমাসের মাথায় 29 দিনের অর্থাৎ একটি চান্দ্রমাসের সময়কে অতিক্রমিত করতে চেষ্টা করে। এই অতিরিক্ত দিনগুলো নিয়ে গঠিত মাসই মলমাস বা অধিকমাস।
এখন প্রশ্ন হল বছরের ঠিক কোন মাসটিকে মলমাস বলে গণ্য করা হবে ? এবিষয়ে স্মার্ত্তপ্রবর পণ্ডিত রঘুনন্দন ভট্টাচার্য্যে তার মলমাসতত্ত্বম গ্রন্থে বলেছেন-
"অমাবস্যাদ্বয়ং যত্র রবিসংক্রান্তিবর্জিতম্।
মলমাসঃ স বিজ্ঞেয়ো বিষ্ণুঃ স্বপতি কর্কটে।।"
অর্থাৎ - যে মুখ্য সৌর মাসে দুইটি চান্দ্র অমাবস্যা রবিসংক্রান্তি বর্জিত হবে সেই পরবর্তী চান্দ্রমাস কে মলমাস বলে জানবে।
আবার স্মার্ত্তপ্রবর ঘুনন্দন ভট্টাচার্য্য মহাশয় অন্যত্র বলেছেন যে সৌরমাসের মধ্যে একই রাশিতে সুর্য পরপর দুটি অমাবস্যা অতিক্রমিত করবে ও রবি সংক্রান্তি বর্জন করবে এবং তার পরবর্তী সৌরমাসের চান্দ্রমাসব্যাপী অন্য রাশির অমাবস্যা তিথি পর্যন্ত যে সময়কাল তা সেই সৌরমাসের নাম অনুসারে ত্রয়োদশ অধিক চান্দ্রমাস বা মলমাস হবে।
এই অতিরিক্ত চান্দ্রমাসকে মলমাস বা অধিকমাস বা অধিক চান্দ্রমাস বা পুরুষোত্তম মাস বা মলিম্লুচ বলা হয়। মলিম্লুচ শব্দের অর্থ চোর। যেন এই মাসটি চুরি করে আনা হয়েছে।
নারদপুরাণে এই মা টিকে পুরুষোত্তম মাস বলা হয়েছে। কারন এই মাস কর্মশূন্য। তাই কর্মফল শূন্য। স্বয়ং পুরুষোত্তম দ্বারা অলঙ্কৃত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন