ভাদু গান ( ক্লিক করুন )
ভাদু হল fertility cult বা উর্বরতার প্রতীক রুপে পালিত একটি লোক উৎসব। বহুকাল আগে থেকেই রাঢ়বঙ্গের পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া প্রভৃতি অঞ্চলে সমগ্র ভাদ্র মাস জুড়ে এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে।
মানভূমের গড় পঞ্চকোট এর কাশীপুর রাজ্যের রাজকন্যা ভাদু বা ভদ্রেশ্বরীর কাহিনী থেকে ভাদু উৎসবের উদ্ভব। বিবাহের রাত্রে বরের ডাকাতের হাতে মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় রাজকন্যা ভাদু আত্মহত্যা করেন। এই শোকাবহ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজকন্যার স্মৃতিকে অমর করে রাখার উদ্দেশ্যেই ভাদু উৎসব পালন প্রচলিত হয়।
লোককথা মতে, পুরুলিয়ার কাশিপুর অঞ্চলের পঞ্চকোট রাজপরিবারের মহারাজ নীলমণি সিং দেও। তার কন্যা ভদ্রাবতী ভাদু। তাদের পাশের গ্রামের অঞ্জনকুমার নামে এক যুবকের সাথে গড়ে উঠল ভাদুর প্রেমের সম্পর্ক। দুজনে দুজনকে চোখে হারায়। ভদ্রাবতী গান গায় , অঞ্জনকুমার সেই গানের সুরে বাঁশি বাজায়। রাজা তার কন্যাকে উচ্চ বংশীয় কোন পাত্রের সাথে বিয়ে দিতে অঞ্জনকুমারকে বন্দী করে করে রাখলেন । মনের দুঃখে ভাদু তার দুই সখিকে নিয়ে সারা রাজ্যে গান গেয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। সারাদিন সারারাত গান গেয়ে খুঁজে বেড়ায় তার প্রাণাধিক অঞ্জনকুমারকে। যদি তার গান শুনে একবার সে ছুটে আসে। কিন্তু হায়! অঞ্জনকুমার আর আসে না। রাজা নিরুপায় হয়ে যখন অঞ্জনকুমারকে মুক্তি দিলেন তখন ভদ্রাবতী আর নেই। শুধু রাজ্যের মানুষের মনে সে রয়ে গেছে ভাদু হয়ে। আর তার গান লোকমুখে হয়ে গেছে ভাদু-গান।
অন্য মতে রাজা নীলমণি সিং দেও-এর তৃতীয়া কন্যা ছিলেন ভদ্রাবতী। বিয়ে করতে আসার পথে ভদ্রাবতীর হবু স্বামী ও বরযাত্রীরা ডাকাত দলের কবলে পড়ে ও নিহত হয়। লগ্নভ্রষ্টা হওয়ার ভয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন রাজকুমারী ভদ্রাবতী।
আবার বীরভূমের প্রচলিত লোক গাথা হল ভদ্রাবতী হেতমপুরের রাজকন্যা। বর্ধমানের রাজপুত্রের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ে করতে আসার পথে ইলামবাজারের কাছে অবস্থিত চৌপারির শালবনে ডাকাতের আক্রমণে রাজপুত্রের মৃত্যু হলে ভদ্রাবতী রাজপুত্রের চিতার আগুনে প্রাণ বিসর্জন দেন।
কাহিনী যাই হোক, ভদ্রাবতীকে মানুষের মনে চিরস্মরনীয় করে রাখার জন্য রাজা নীলমণি সিং দেও তাঁর রাজ্যে ভাদু পুজা ও ভাদু-গানের প্রচলন করেন।ভাদু উৎসবে পূজারীরা ভদ্রেশ্বরীর একটি মূর্তি তৈরি করে এবং সারা মাস ধরে তার সম্মুখে নৃত্যগীত পরিবেশন করে। ভদ্রেশ্বরী কখনও কন্যা আবার কখনও জননীরূপেও পূজিত হন। পূর্বে ভাদুর কোন মূর্তি ছিল না। একটি পাত্রে ফুল বা গোবর রেখে তার উপর ধান ছড়িয়ে ভাদুর রূপ কল্পনা করা হত। পরবর্তী কালে ধীরে ধীরে মূর্তির প্রচলন ঘটে। সাধারণত ভাদু মুর্তি, হাঁস বা ময়ূর বা পদ্মের উপর উপবিষ্টা। গায়ের বর্ণ হলুদ। আবার কোথাও কোথাও হালকা গোলাপী বর্ণও হয়ে থাকে। মাথায় মুকুট, হাতে পদ্মফুল, গলায় পদ্মফুলের মালা ও হাতের তালুতে আলপনা থাকে। কখনও মূর্তির কোলে কৃষ্ণ মূর্তিও থাকে। ‘ভাদু ভাসান’ পর্ব অত্যন্ত বিষাদময়। ভাদ্র-সংক্রান্তিতে উপাসকরা মূর্তিসহ নদীর তীরে সমবেত হয়ে মূর্তি বিসর্জন দেয়।
পঞ্চকোটের ধ্রুবেশ্বর লাল, প্রকৃতীশ্বর লাল ও রাজেন্দ্র নারায়ণ সিং দেও 'দরবারী ভাদু' নামক ঘরানার সৃষ্টিকর্তা।পেশাদার নারীশিল্পী এবং সাধারণ সঙ্গীতশিল্পী উভয়েই গান পরিবেশনে অংশগ্রহণ করে। এ উৎসবে সমগ্র এলাকাবাসী স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে এবং পুরো অঞ্চল জুড়ে মেলা, লোকসংস্কৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠানমালা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। এই বিবাহ-প্রধান গান ভাদু উৎসবের মূল আকর্ষণ; এর কারণ হলো কুমারী ভাদুর স্মৃতি রোমন্থন করা। তবে মানুষের মুখে মুখে ফেরা ভাদু-গান, লোকসঙ্গীত হিসাবেই বেশী জনপ্রিয়তা পেয়েছে।গৃহনারীদের দৈনন্দিন জীবনের কাহিনী এই গান গুলির প্রাধান উপজীব্য। এছাড়া চার লাইনের ছড়া বা চুটকি জাতীয় ভাদু গানগুলিতে সমাজ জীবনের বিভিন্ন অসঙ্গতীর চিত্র সরস ভঙ্গীতে প্রকাশ করা হয়।
ভাদু হল fertility cult বা উর্বরতার প্রতীক রুপে পালিত একটি লোক উৎসব। বহুকাল আগে থেকেই রাঢ়বঙ্গের পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া প্রভৃতি অঞ্চলে সমগ্র ভাদ্র মাস জুড়ে এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে।
মানভূমের গড় পঞ্চকোট এর কাশীপুর রাজ্যের রাজকন্যা ভাদু বা ভদ্রেশ্বরীর কাহিনী থেকে ভাদু উৎসবের উদ্ভব। বিবাহের রাত্রে বরের ডাকাতের হাতে মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় রাজকন্যা ভাদু আত্মহত্যা করেন। এই শোকাবহ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজকন্যার স্মৃতিকে অমর করে রাখার উদ্দেশ্যেই ভাদু উৎসব পালন প্রচলিত হয়।
লোককথা মতে, পুরুলিয়ার কাশিপুর অঞ্চলের পঞ্চকোট রাজপরিবারের মহারাজ নীলমণি সিং দেও। তার কন্যা ভদ্রাবতী ভাদু। তাদের পাশের গ্রামের অঞ্জনকুমার নামে এক যুবকের সাথে গড়ে উঠল ভাদুর প্রেমের সম্পর্ক। দুজনে দুজনকে চোখে হারায়। ভদ্রাবতী গান গায় , অঞ্জনকুমার সেই গানের সুরে বাঁশি বাজায়। রাজা তার কন্যাকে উচ্চ বংশীয় কোন পাত্রের সাথে বিয়ে দিতে অঞ্জনকুমারকে বন্দী করে করে রাখলেন । মনের দুঃখে ভাদু তার দুই সখিকে নিয়ে সারা রাজ্যে গান গেয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। সারাদিন সারারাত গান গেয়ে খুঁজে বেড়ায় তার প্রাণাধিক অঞ্জনকুমারকে। যদি তার গান শুনে একবার সে ছুটে আসে। কিন্তু হায়! অঞ্জনকুমার আর আসে না। রাজা নিরুপায় হয়ে যখন অঞ্জনকুমারকে মুক্তি দিলেন তখন ভদ্রাবতী আর নেই। শুধু রাজ্যের মানুষের মনে সে রয়ে গেছে ভাদু হয়ে। আর তার গান লোকমুখে হয়ে গেছে ভাদু-গান।
অন্য মতে রাজা নীলমণি সিং দেও-এর তৃতীয়া কন্যা ছিলেন ভদ্রাবতী। বিয়ে করতে আসার পথে ভদ্রাবতীর হবু স্বামী ও বরযাত্রীরা ডাকাত দলের কবলে পড়ে ও নিহত হয়। লগ্নভ্রষ্টা হওয়ার ভয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন রাজকুমারী ভদ্রাবতী।
আবার বীরভূমের প্রচলিত লোক গাথা হল ভদ্রাবতী হেতমপুরের রাজকন্যা। বর্ধমানের রাজপুত্রের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ে করতে আসার পথে ইলামবাজারের কাছে অবস্থিত চৌপারির শালবনে ডাকাতের আক্রমণে রাজপুত্রের মৃত্যু হলে ভদ্রাবতী রাজপুত্রের চিতার আগুনে প্রাণ বিসর্জন দেন।
কাহিনী যাই হোক, ভদ্রাবতীকে মানুষের মনে চিরস্মরনীয় করে রাখার জন্য রাজা নীলমণি সিং দেও তাঁর রাজ্যে ভাদু পুজা ও ভাদু-গানের প্রচলন করেন।ভাদু উৎসবে পূজারীরা ভদ্রেশ্বরীর একটি মূর্তি তৈরি করে এবং সারা মাস ধরে তার সম্মুখে নৃত্যগীত পরিবেশন করে। ভদ্রেশ্বরী কখনও কন্যা আবার কখনও জননীরূপেও পূজিত হন। পূর্বে ভাদুর কোন মূর্তি ছিল না। একটি পাত্রে ফুল বা গোবর রেখে তার উপর ধান ছড়িয়ে ভাদুর রূপ কল্পনা করা হত। পরবর্তী কালে ধীরে ধীরে মূর্তির প্রচলন ঘটে। সাধারণত ভাদু মুর্তি, হাঁস বা ময়ূর বা পদ্মের উপর উপবিষ্টা। গায়ের বর্ণ হলুদ। আবার কোথাও কোথাও হালকা গোলাপী বর্ণও হয়ে থাকে। মাথায় মুকুট, হাতে পদ্মফুল, গলায় পদ্মফুলের মালা ও হাতের তালুতে আলপনা থাকে। কখনও মূর্তির কোলে কৃষ্ণ মূর্তিও থাকে। ‘ভাদু ভাসান’ পর্ব অত্যন্ত বিষাদময়। ভাদ্র-সংক্রান্তিতে উপাসকরা মূর্তিসহ নদীর তীরে সমবেত হয়ে মূর্তি বিসর্জন দেয়।
পঞ্চকোটের ধ্রুবেশ্বর লাল, প্রকৃতীশ্বর লাল ও রাজেন্দ্র নারায়ণ সিং দেও 'দরবারী ভাদু' নামক ঘরানার সৃষ্টিকর্তা।পেশাদার নারীশিল্পী এবং সাধারণ সঙ্গীতশিল্পী উভয়েই গান পরিবেশনে অংশগ্রহণ করে। এ উৎসবে সমগ্র এলাকাবাসী স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে এবং পুরো অঞ্চল জুড়ে মেলা, লোকসংস্কৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠানমালা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। এই বিবাহ-প্রধান গান ভাদু উৎসবের মূল আকর্ষণ; এর কারণ হলো কুমারী ভাদুর স্মৃতি রোমন্থন করা। তবে মানুষের মুখে মুখে ফেরা ভাদু-গান, লোকসঙ্গীত হিসাবেই বেশী জনপ্রিয়তা পেয়েছে।গৃহনারীদের দৈনন্দিন জীবনের কাহিনী এই গান গুলির প্রাধান উপজীব্য। এছাড়া চার লাইনের ছড়া বা চুটকি জাতীয় ভাদু গানগুলিতে সমাজ জীবনের বিভিন্ন অসঙ্গতীর চিত্র সরস ভঙ্গীতে প্রকাশ করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন