সোমবার, ৩১ মে, ২০২১

অর্জুন কৃত দুর্গাস্তোত্রম (মহাভারতোক্ত)

-মহাভারতোক্ত  অর্জুন কৃত শ্রীশ্রীদুর্গা স্তোত্রম্ - 

( দেখুন - সূচিপত্র
শ্রীঅর্জুন উবাচ.....
নমস্তে সিদ্ধসেনানি আর্যে মন্দরবাসিনী।
কুমারি কালি কাপালি কপিলে কৃষ্ণপিঙ্গলে।। ১

ভদ্রকালি নমস্তুভ্যম্ মহাকালি নমোহস্তুতে।
চণ্ডি চণ্ডে নমস্তুভ্যম্ তারিণি বরবর্ণিনি।। ২

কাত্যায়নি মহাভাগে করালি বিজয়ে জয়ে।
শিখিপিচ্ছধ্বজধরে নানাভরণভূষিতে।। ৩

অটুটশূলপ্রহরণে খড়্গখেটকধারিণে।
গোপেন্দ্রস্যানুজে জ্যেষ্ঠে নন্দগোপকুলোদ্ভবে।। ৪

মহিষাসৃকপ্রিয়ে নিত্যে কৌশিকী পীতবাসিনী।
অট্টহাসে কোকমুখে নমোহস্তেহস্তু রণপ্রিয়ে।। ৫

উমে শাকম্ভরি শ্বেতে কৃষ্ণে কৈটভনাশিনি।
হিরণ্যাক্ষি বিরুপাক্ষি সুধুম্রাক্ষি নমোহস্তুতে।। ৬

বেদশ্রুতিমহাপুণ্যে ব্রহ্মণ্যে জাতবেদসি।
জম্বুকটকচৈত্যেষু নিত্যম্ সন্নিহিতালয়ে।। ৭

ত্বং ব্রহ্ম বিদ্যানাং মহানিদ্রা চ দেহিনাম্।
স্কন্দমাতর্ভগবতি দুর্গে কান্তারবাসিনী।। ৮

স্বাহাকারঃ স্বধা চৈব কলাকাষ্ঠা সরস্বতী।
সাবিত্রী বেদমাতা চ তথা বেদান্ত উচ্যতে।। ৯

স্তুতাসি ত্বং মহাদেবী বিশুদ্ধেনান্তরাত্মা।
জয়ো ভবতু মে নিত্যম্ ত্বৎপ্রসাদাৎ রণাজিরে।। ১০

কান্তারভয়দুর্গেষু ভক্তানাং চালকেষু চ।
নিত্যম্ বসসি পাতালে যুদ্ধে জয়সি দানবান্।। ১১

ত্বং জম্ভিনী মোহিনী চ মায়া হ্রীঃ শ্রীস্তথৈব চ।
সন্ধ্যা প্রভাবতী চৈব সাবিত্রী জননী তথা।। ১২

তুষ্টিঃ পুষ্টির্ধৃতিদীপ্তিশ্চন্দ্রাদিত্যবিবর্ধনী।
ভুতির্ভুতিমনাং সঙ্খ্যে বীক্ষসে সিদ্ধচারণৈঃ।।১৩

মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল, ২০২১

নর্মদাষ্টকম

 নর্মদাষ্টকম
শ্রীমদ ভগবদ্পাদ শঙ্করাচার্য্য রচিতম
(দেখুন - সূচিপত্র
সবিন্দু- সিন্ধুসুস্থলত্তরঙ্গভঙ্গ রঞ্জিতম্ ,
দ্বিষৎসু পাপজাতজাতকারিবারিসংযুতম্। 
কৃতান্তদূতকালভূত-ভীতিহারি বর্মদে, 
ত্বদীয় পাদ পঙ্কজং নমামি দেবী নর্মদে। । 

ত্বদম্বুলীন-দীনমীন-দিব্য-সম্প্রদায়কং ,
কলৌ মলৌঘভারহারি সর্ব্বতীর্থ নায়কম্। 
সুমচ্ছ কচ্ছ-নক্র-চক্র চক্র বাক শর্মদে, তদ্বীয় পাদ পঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে। । 

মহাগভীর-নীরপুর পাপধূত ভূতলং,
ধনৎসমস্ত -পাতকারি -দারিতাপদাচলম্। 
জগল্লয়ে মহাভয়ে মৃকণ্ডুসূনু হর্মদে, 
ত্বদীয় পাদ পঙ্কজং নমামি দেবী নর্মদে। । 

গতং তদৈব মে ভয়ং তদম্বু বীক্ষিতং যদা
মৃকণ্ডুসূনুশৌনকাসুরারি সেবি সর্বদা। 
পুনর্ভবাদ্ধিজন্মজং ভবাদ্ধি দুঃখ বর্মদে
ত্বদীয় পাদ পঙ্কজং নমামি দেবী নর্মদে। । 

অলক্ষ লক্ষকিন্নরামরাসুরাদি পূজিতং
সুলক্ষ-নীর-তীর-ধীরপক্ষি লক্ষ কূজিতম্। বশিষ্ঠ-শিষ্ঠ পিপ্পলাদ -কর্দমাদি শর্মদে,
ত্বদীয় পাদ পঙ্কজং নমামি দেবী নর্মদে। । 

সনৎকুমার-নাচিকেত -কশ্যপাত্রিষটপদৈ
ধৃতং স্বকীয় মানসেষু নারদাদিষটপদৈঃ,
রবিন্দুরণন্তিদেব-দেবরাজ কর্মশর্মদে
ত্বদীয় পাদ পঙ্কজং নমামি দেবী নর্মদে। । 

অলক্ষ-লক্ষ -লক্ষপাপ-লক্ষসারসায়ুধং
ততস্তু জীবজন্ত্ততন্ত্ত-ভুক্তি-মুক্তিদায়কম্। 
বিরণ্চি-বিষ্ণু-শঙ্কর স্বকীয় ধাম শর্মদে
ত্বদীয় পাদ পঙ্কজং নমামি দেবী নর্মদে। । 

অহোঅমৃতং স্বনং শ্রূতং মহেশকেশজাতটে
কিরাতসূতবাড়বেষু পন্ডিতে শঠে নঠে। 
দুরন্তপাপতাপহারি সর্বজন্তু শর্মদে,
ত্বদীয় পাদ পঙ্কজং নমামি দেবী নর্মদে। । 

ইদং তু নর্মদাষ্টকং ত্রিকালমেব য়ে সদা
পঠন্তি তে নিরন্তরং ন যান্তি দুর্গতিং কদা। 
সুলভ্য দেহদুর্লভং মহেশ ধাম গৌরবং
পুনর্ভবা নরা ন বৈ বিলোকয়ন্তি রৌরবং।।  

হর হর নর্মদে।  হর হর নর্মদে।  হর হর নর্মদে। 

ঔঁ জয় জয়  শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্য বিরচিতং নর্মদাষ্টক স্তোত্রং সম্পূর্ণম্।।

শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২০

কালী রহস্যম

 "শ্যামা মা কি আমার কা‌লো রে ,
কা‌লো রু‌পে দিগম্বরী, 
হৃ‌দিপদ্ম ক‌রে মোর আ‌লো‌রে ।" 
কমলাকান্তের এই বহুল শ্রুত পদটি শুনেই মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন জাগে, কালী কি সত্যিই কালো ? যিনি জগৎপ্রসবিনী তার এই অসিতরুপ কেন ? 

যদি আমরা তন্ত্রের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, মহানির্বানতন্ত্রের চতুর্থ উল্লাসের ২৫ তম শ্লোকে বলা হয়েছে  "সৃ‌ষ্টেরা‌দৌ ত্ব‌মেকাসীৎ ত‌মোরুপম্ অ‌গোচরম্ ।" অর্থাৎ সৃ‌ষ্টির আ‌দি‌তে দেবী একা‌কিন তামসীরু‌পে অদৃশ্য ভা‌বে বিরা‌জিতা ছি‌লেন । 
বিজ্ঞান বলে বর্ণমণ্ডলের সাতটা রং একসাথে মিলিয়ে দিলে কালো রংয়ে পরিণত হয়। অর্থাৎ সকল রং, সকল বর্ণ, সকল সৃষ্টি যেখানে একসাথে মিশেছে সেই সত্তাই হলো কালী। এজন্যই এই  ত‌মোময়ী আ‌দিমূ‌র্তির রং কা‌লো । জগ‌তের সব রং মি‌শে‌ছে এই  গাত্রব‌র্ণে । 
ত‌বে কোনও কোনও সাধক ভিন্ন ব্যাখ্যা দি‌য়ে‌ছেন । ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ ব‌লে‌ছেন,  কা‌লী কি আমার কা‌লো ? দু‌রে তাই কা‌লো । জান‌তে পার‌লে কা‌লো নয়।আকা‌শের নীল বর্ণ ,দুর ‌থে‌কে কা‌ছে গি‌য়ে দে‌খো, কোন রং নেই। 

 এবার আসি কালীর  করালবদনা মূর্তির প্রসঙ্গে  
কালীমূ‌র্তিতেমরা দে‌খি যে  দেবী তার দাঁত দি‌য়ে জিভ চে‌পে রে‌খে‌ছেন। মু‌খের দু পাশ দি‌য়ে রুধিরধার‌া গড়িয়ে পড়‌ছে। এখানে জিভ লোভের প্রতীক, আর দাঁত সংযমের। লোভাদি রিপুকে সংযমের দশন দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখাটাই এই রুপের ব্যাখ্যা। 
অপরদিকে কালী সংহারকর্ত্রী । 
“কলয়তি ভক্ষয়তি সর্বমেতদত্র প্রলয়কালে ইতি কালী”- অর্থাৎ প্রলয়কালে যিনি জগৎপ্রপঞ্চকে ভক্ষষ করেন তিনিই কালী। প্রলয়কা‌লে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মান্ড তার করালবদনে লয়প্রাপ্ত হয়।সব‌কিছু গ্রাস ক‌রেন তি‌নি । তাই রক্তধারা তার ও‌ষ্ঠের দু'পাশ দি‌য়ে ঝ‌ড়ে প‌ড়ে‌ছে। 

দেবীর ত্রিনয়ণা 
আমরা যদি শ্রী শ্রী চণ্ডী দেখি তবে তাতে পাই, 
' প্রলয়ানল ধূম্রাভে চন্দ্রসূর্য্যাগ্নি লোচনে।' 
অর্থাৎ দেবীর তিনটি নেত্র চন্দ্র সূর্য ও অগ্নিস্বরূপ।আবার অতীত,বর্তমান,ভ‌বিষ্যৎ বা স্বর্গ,মর্ত্য,পাতালও বলতে পারেন। রামপ্রসাদের গা‌নেও আ‌ছে, মা‌য়ের আ‌ছে তিন‌টি নয়ণ ,চন্দ্র,সূর্য্য আর হুতাশন ।‌

দেবীর গলায় মুণ্ডমালা :
দেবী কালীকার গলায় পঞ্চাশটি সদ্যছিন্ন মুণ্ডের মালা। যেগুলো হতে রক্তের স্রোত ঝরে পড়ছে। এই সদ্যছিন্ন মুণ্ডগুলির এক একটি এক একটি বর্ণের প্রতীক।   অ কার থে‌কে ক্ষ কার পর্যন্ত ৫০ টি ব‌র্ণের প্রতীক এই পঞ্চাশটি মুণ্ড । কালী পঞ্চশৎ বর্ণময়ী। এই  বর্ণমালাই সর্বশা‌স্ত্রের একক ,শব্দসৃ‌ষ্টির মূল। দেবী সর্ব‌বিদ্যার অ‌ধিষ্ঠাত্রী ব‌লে ওই মূল বর্ণগু‌লি‌কে ক‌ন্ঠমালায় ধারণ ক‌রে‌ছেন। 

আর এখানে  ব‌র্ণের প্রতীক হিসা‌বে সদ্যছিন্ন নরমুন্ড কেন ? কারণ মুণ্ডই মানুষের দেহের প্রধান অংশ যা মানুষকে মানুষ করে। এখানেই থাকে প্রজ্ঞা ও বুদ্ধি । তাইতো দেবী মুণ্ডমালিনী। 

শবরূপী শিব মায়ের পা‌য়ের তলায়  :
'মুন্ডমালিনীং দিব্যা সতত অট্টহাস্যকারীনিম, শবরুপি মহাদেব হৃদয়পরি সংস্থিতাম।'
মহাদেব শবরুপে দেবীর পদতলে বিরাজ করছেন। কিন্তু কেন ? কারণ শিব নিষ্ক্রিয় পুরুষ আর কালী হলেন সক্রিয় প্রকৃতি । তাই তি‌নি শবরুপী শিব, মা আদিপ্রকৃতির অধীনস্থ ।   ‌নি‌ষ্ক্রিয়তার উপরে ক্রিয়‌াশীলতার  আ‌ধিপত্য। সাংখ্য অনুসারে  পুরুষ সা‌ক্ষিস্বরুপ আর প্রকৃতি ক্রিয়াময়ী। তাই শ‌ক্তির পদত‌লে শি‌ব । শঙ্করাচার্য্যও বলে‌ছেন, শ‌ক্তিযুক্ত না হ‌লে শিবেরও স্পন্দন ক্ষমতা নেই । তাই দেবীর পা‌য়ের তলায় নিশ্চল হ‌য়ে প‌ড়ে র‌য়ে‌ছেন শিব ।‌ তন্ত্রমতে , শ‌ক্তির দু‌টি অবস্থা, নি‌ষ্ক্রিয় ও ক্রিয়‌াশীল। শ‌ক্তি যখন নি‌ষ্ক্রিয় তখন সে শিব ।আর যখন ক্রিয়াশীল ওজাগ্রত তখন সে কালী। তাই কালী ও শিব দুই নিত্যরু‌পে এই  মূ‌র্তি‌তে প্রকা‌শিত । 
প্রকৃতপ‌ক্ষে  শবরুপ শি‌বের উপর দন্ডায়মান কালী।  দ‌ক্ষিণা কালীর মূ‌র্তি‌তে দেবী শি‌বের উপর বিপরীতরতাতুরা বা র‌তি‌ক্রিয়ার বিপরীত ভ‌ঙ্গিতে উপ‌বিষ্টা ।
অপরদিকে ভক্তকবি সাধককবি রামপ্রসাদ বলেছেন অন্য তত্ত্ব। তিনি বলেছেন - 
'দৈত্য‌বেটা ভূ‌মে প‌ড়ে,
মা দা‌ড়ি‌য়ে তার উপ‌রে, 
মা‌য়ের পাদস্প‌র্শে দানব‌দেহ শিবরুপ হয় রনস্থ‌লে।' 
অর্থাৎ মায়ের পাদস্পর্শে দৈত্য অর্থাৎ অশিব শিবে রূপান্তরিত হয়েছে। 

মায়ের কানে শিশুশবের কর্ণাভরণ :
 
তন্ত্র অনুনা‌রে দেবীর দুই কা‌নে দু‌টি শিশুর শব হল তার কর্ণাভরণ। বালকবৎ সরল নি‌র্বিকার তত্ত্বজ্ঞ সাধকই দেবীর প্রিয়। তারই প্র‌তীক স্বরুপ ওই দু‌টি শিশুর শরীর তি‌নি কা‌নের অলঙ্কার হিসা‌বে গ্রহন ক‌রে‌ছেন । 
খড়্গ :
দেবীর বাম দি‌কের উপ‌রের হা‌তে খড়্গ। এটি জ্ঞানের প্রতীক। জ্ঞানখড়্গের আঘাতে সাধ‌কের সবরকম বন্ধন মুক্ত ক‌রেন কালী। নিষ্কাম সাধ‌কের মোহপাশ তি‌নি জ্ঞানের অস্ত্র দি‌য়ে ছিন্ন ক‌রেন। 

ছিন্ন মুণ্ড :
 দেবীর বাঁদি‌কের নি‌চের হা‌তে রয়েছে ছিন্ন মুণ্ড  । ছিন্নমুণ্ডটি তত্ত্বজ্ঞা‌নের আধার। নিষ্কাম সাধ‌কের মোহপাশ থে‌কে তা‌কে মুক্ত ক‌রে‌ছেন দেবী উপ‌রের হাতেরধরা খড়্গ দি‌য়ে। আর তত্ত্বজ্ঞা‌নের আধার‌টি‌কে ধ‌রে রে‌খে‌ছেন নি‌চের হা‌তে। মু‌ক্তি সম্ভবা‌য়িত ক‌রে‌ছেন যি‌নি, তি‌নিই  মুক্ত জ্ঞানী‌কে আশ্রয় দিয়ে‌ছেন অভয়হ‌স্তে। 
অভয়মুদ্রা :
ডান‌দি‌কের উপ‌রের হাতে অভয় মুদ্রা আর নি‌চের হা‌তে বরদানের মুদ্রা দু‌টি হা‌তে মা সন্তান‌কে অভয় প্রদান করছেন। 
দিগম্বরী :
মা আমার দিগম্বরী। কারন তিনি  সর্বব্যা‌পিনী, ভূমাস্বরু‌পিনী। সামান্য বস্ত্রখন্ড দিয়ে তাকে আবৃত কর‌া যায় ন‌া । দশ‌দিক তার আভরণ। দিক অম্বর তার। সর্ববন্ধনহা‌রিনী মা‌য়ের যোগ্যবস্ত্র অ‌মিল ব‌লেই তি‌নি উল‌ঙ্গিনী । অসীম অম্বর সম্ব‌রিত না‌রে, তাই‌তে নাম ধ‌রে‌ছে দিগম্বরী। 
নরকরমালা:
দেবীর কোম‌রে কাটা হাতের মালা। জীব দেহত্যা‌গের পর সূক্ষ্ম শরী‌রে কালীকার  বিরাটরশরী‌রে অবস্থান ক‌রে। পুনর্জন্ম না হওয়া পর্যন্ত তার এই  দশা বহাল থা‌কে । হাত জী‌বের ক্রিয়াশ‌ক্তির আধার।সেই  হাত  মা নি‌জের  কোম‌রে জ‌ড়ি‌য়ে নি‌য়ে‌ছেন । তার ক‌টি‌দেশ তাই ন এছাড়াও আরও দু‌টি বিষয় এই  মালায়  নি‌হিত। প্রথমত, প্রলয়কা‌লেজী‌বের সর্বকর্ম্ম কালস্বরুপা কালীতেই  লীন হয়। আড়াল ক‌রে‌ছেন তার যো‌নি । অর্থাৎ সৃ‌ষ্টির স্থান।  সৃ‌ষ্টিস্থা‌নের অবরণ পরবর্তী কল্প প্রকা‌শের বীজ আধার, ক্রিয়াশ‌ক্তির হা‌তে ।

কালীপুজোর উপযুক্ত সময় :
শাস্ত্রানুসারে, 
'দিবাচার্দ্ধ প্রহরিকা চাদ‍্যন্তে পরমেশ্বরী।
ঋতু দণ্ডাত্নিকা সা চ রাত্রিরুক্তা মনীষিভিঃ।।
ততো বৈ দশ নাদ্যন্ত নিশা মহানিশা স্মৃতাঃ।
সর্বদা চ সমাখ‍্যাতা সর্ব সাধন কর্মনি।।' 

অর্থাৎ, সূর্যাস্তের পর অর্দ্ধ প্রহর বা  চার দণ্ড অর্থাৎ  ছিয়ানব্বই মিনিট সময়কে বলা হয় দিবাকাল, এবং তার পরবর্তী ছয়দণ্ড বা ১৪৪ মিনিট সময়কালকে বলে  রাত্রিকালে।  কার্ত্তিকমাসে সুর্যাস্ত যাবার সময় মোটামুটিভাবে ৫:২৫ মি ধরে  রাত্রিকালের সময় রাত ৯:২৫ মি পর্যন্ত। সূর্যাস্তের পর এই দশদন্ড সময় হলো দিবারাত্রকাল।

 এই দিবারাত্রকালের সময় বাদ দিয়ে পরবর্তী দশদণ্ড (২৪০ মিনিট) বা চারঘন্টা সময়কে বলা হয় নিশা ও মহানিশা।  তাহলে রাত ৯:২৫ মি থেকে গভীর রাত্রি ১:২৫ মি সময় হলো  নিশা মহানিশা সময়কাল। যা সর্ব সাধন মার্গের পথে  উৎকৃষ্ট সময় কাল। এই নিশা ও মহানিশা সময়কালই দেবী কালীকার পূজার সর্বোত্তমকাল। এই সময়ের মধ‍্যেই দেবীপূজা সম্পন্ন করার কথা শাস্ত্রে বলা হয়েছে।  

কালীপুজোর কিছু নিয়ম:-
তোড়লতন্ত্রে সদাশিব পার্বতীকে বলছেন, "হে পার্বতী, দেবী কালিকা, দেবী তারিণী ও ত্রিপুরসুন্দরীকে   পঞ্চতত্ত্বসহকারে ষোড়শোপচারে পূজা করা উচিত।

পূজয়েদ্ কালিকাং দেবী তারিণীং বাথ সুন্দরীম্।
ষোড়শেন উপচারেণ পঞ্চতত্ত্বেণ পার্ব্বতী।।



শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২০

দারিদ্র্য দহনকারী শিবাষ্টক

           দারিদ্র্য দহন শিবাষ্টক
    
        বিশ্বেশ্বরায় নরকার্ণব তারণায়
        কর্ণামৃতায় শশিশেখর ধারণায় |
        কর্পূরকান্তি ধবলায় জটাধরায়
        দারিদ্র্য দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায় || ১ ||

        গৌরীপ্রিয়ায় রজনীশ কলাধরায়
        কালান্তকায় ভুজগাধিপ কংকণায় |
        গঙ্গাধরায় গজরাজ বিমর্ধনায়
        দারিদ্র্য দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায় || ২ ||

        ভক্তপ্রিয়ায় ভবরোগ ভয়াপহায়
        উগ্রায় দুঃখ ভবসাগর তারণায় |
        জ্যোতির্ময়ায় গুণনাম সুৃনর্তকায়
        দারিদ্র্য দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায় || ৩ ||

        চর্ম্মবরায় শবভস্ম বিলেপনায়
        ফালেক্ষণায় মণিকুন্ডল মন্ডিতায় |
        মন্জীরপাদযুগলায় জটাধরায়
        দারিদ্র্য দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায় || ৪ ||

        পঞ্চাননায় ফণিরাজ বিভূষণায়
        হেমাঙ্গকুশায় ভুবনত্রয় মন্ডিতায়
        আনন্দ ভূমি বরদায় তমোপয়ায় |
        দারিদ্র্য দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায় || ৫ ||
        ভানুপ্রিয়ায় ভবসাগর তারণায়
        কালান্তকায় কমলাসন পূজিতায় |
        নেত্রত্রয়ায় শুভলক্ষণ লক্ষিতায়
        দারিদ্র্য দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায় || ৬ ||

        রামপ্রিয়ায় রঘুনাথ বরপ্রদায়
        নাগপ্রিয়ায় নরকার্ণব তারণায় |
        পুণ্যায় পুণ্যভরিতায় সুরার্চিতায়
         দারিদ্র্য দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায় || ৭ ||

         মুক্তেশ্বরায় ফলদায় গণেশ্বরায়
         গীতপ্রিয়ায় বৃষভেশ্বর বাহনায় |
         মাতঙ্গচর্ম বসনায় মহেশ্বরায়
         দারিদ্র্য দুঃখ দহনায় নমঃ শিবায় || ৮ ||

         বসিষ্ঠেন কৃতং স্তোত্রং সর্বরোগ নিবারণম |
         সর্বসঙ্গপত্যকরং শীঘ্রং পুত্রপৌত্রাদি বর্ধনম |
         ত্রিসন্ধ্যায়ং য়ঃ পঠেন নিত্যং ন হি স্বর্গ মবাপ্নুয়াত || ৯ ||
         
|| শ্রী বশিষ্ঠ বিরচিতং দারিদ্র্য দহন শিবাষ্টকম স্তোত্রম সম্পূর্ণম ।।

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

অয়ি গিরি নন্দিনী... // শ্রীমদ শঙ্করাচার্য্য


শ্রীমৎ আদি শঙ্করাচার্য রচিত মহিষাসুরমর্দিনী স্তোত্রম্

।।১।।
অয়ি গিরিনন্দিনি নন্দিতমেদিনি বিশ্ব-বিনোদিনি নন্দনুতে
গিরিবরবিন্ধ  শিরো‌ধিনিবাসিনি বিষ্ণু-বিলাসিনি জিষ্ণুনুতে,
ভগবতি হে শিতিকণ্ঠ-কুটুম্বিণি ভূরিকুটুম্বিণি ভূরিকৃতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।২।।
সুরবরবর্ষিণি দুর্ধর ধর্ষিণি দুর্মুখমর্ষিণি হর্ষরতে
ত্রিভুবন পোষিণি শংকরতোষিণি কিল্বিষমোষিণি ঘোষরতে,
দনুজনিরোষিণি দিতিসুতরোষিণি দুর্মদ শোষিণি সিন্ধুসুতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।৩।।
অযি জগদম্ব মদম্ব কদম্ব বনপ্রিয়বাসিনি হাসরতে
শিখরিশিরোমণি তুঙ্গহিমালয় শৃংগনিজালয় মধ্যগতে,
মধু মধু রে মধুকৈটভ গঞ্জিনি কৈটভ ভঞ্জিনি রাসরতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।৪।।
অয়ি শতখণ্ড বিখণ্ডিতরুণ্ড বিতুণ্ডিতশুণ্ড গজাধিপতে
রিপুগজগণ্ড বিদারণচণ্ড পরাক্রমশুণ্ড মৃগাধিপতে,
নিজভুজ-দণ্ড নিপাতিত-খণ্ড বিপাতিত-মুণ্ড ভটাধিপতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।৫।।
অয়ি রণদুর্মদ শত্রুবধোদিত দুর্ধরনির্জর শক্তিভৃতে
চতুরবিচার ধুরীণ মহাশিবদূতকৃত প্রমথাধিপতে,
দুরিত দুরীহ দুরাশয় দুর্মতি দানবদূত কৃতান্তমতে
জয় জয় হে মহিষাসুর মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।৬।।
অয়ি শরণাগত বৈরিবধূবর বীরবরাভয দায়করে
ত্রিভুবন মস্তক শূলবিরোধি শিরোধি কৃতামল শূলকরে,
দুমিদুমি তামর দুন্দুভিনাদ মহো মুখরীকৃত তিগ্মকরে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।৭।।
অয়ি নিজ হুংকৃতি মাত্র নিরাকৃত ধূম্র বিলোচন ধূম্রশতে
সমর বিশোষিত শোণিত বীজ সমুদ্ভব শোণিত বীজলতে,
শিব শিব শুম্ভ নিশুম্ভ মহাহব তর্পিত ভূত পিশাচরতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।৮।।
ধনুরনুষঙ্গ রণক্ষণসঙ্গ পরিস্ফুরদঙ্গ নটৎকটকে
কনক পিশঙ্গ পৃষৎকনিষঙ্গ রসদ্ভট শৃংগ হতাবটুকে,
কৃত চতুরঙ্গ বলক্ষিতি রঙ্গ ঘটদ্বহুরঙ্গ রটদ্বটুকে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।৯।।
সুরললনা ততথেয়ি তথেয়ি তথাভিনয়োদর নৃত্য় রতে
কৃত কুকুথ কুকুথো গডদাদিক তাল কুতূহল দানরতে,
ধুধুকুট ধুককুট দিহিং ধিমিত ধ্বনি ধীর মৃদঙ্গ নিনাদরতে
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্য়কপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১০।।
জয় জয় জপ্যজয়ে জয় শব্দপরস্তুতি তৎপর বিশ্বনুতে
ঝণঝণ ঝিঞ্জিমি ঝিঙ্কৃতনূপুর সিঞ্জিত মোহিত ভূতপতে,
নটিত নটার্ধ নটীনটনায়ক নাটিতনাট্য সুগানরতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১১।।
অয়ি সুমনঃ সুমনঃ সুমনঃ সুমনঃ সুমনোহর কান্তিয়ুতে
শ্রিত রজনী রজনী রজনী রজনী রজনীকর বক্ত্রবৃতে,
সুনয়ন বিভ্রমর ভ্রমর ভ্রমর ভ্রমর ভ্রমরাধিপতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১২।।
সহিত মহাহব মল্লম তল্লিক মল্লিত রল্লক মল্লরতে
বিরচিত বল্লিক পল্লিক মল্লিক ঝিল্লিক ভিল্লিক বর্গবৃতে,
সিতকৃত ফুল্লি সমুল্ল সিতা‌রুণ তল্লজ পল্লব সল্ললিতে
জয় জয় হে মহিষাসুর মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১৩।।
অবিরল গণ্ডগলন মদ মেদুর মত্ত মতঙ্গজ রাজপতে
ত্রিভুবন ভূষণভূত কলানিধি রূপ পয়োনিধি রাজসুতে,
অয়ি সুদতী জন লালস মানস মোহন মন্মধ রাজসুতে
জয় জয় হে মহিষাসুর মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১৪।।
কমল দলামল কোমল কান্তি কলা কলিতা‌মল ভালতলে
সকল বিলাস কলা নিলয়ক্রম কেলি চলতকল হংসকুলে,
অলিকুল সংকুল কুবলয় মন্ডল মৌলিমিলদভ কুলালিকুলে
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১৫।।
কর মুরলী রব বীজিত কূজিত লজ্জিত কোকিল মঞ্জু মতে
মিলিত পুলিন্দ মনোহর গুঞ্জিত রঞ্জিত শৈল নিকুঞ্জগতে,
নিজগণভূত মহাশবরীগণ সদগুণ-সংভৃত কেলিতলে
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১৬।।
কটিতট পীত দুকূল বিচিত্র ময়ূখ তিরস্কৃত চন্দ্ররুচে
প্রণত সুরাসুর মৌলিমণিস্ফুর দংশুল সন্নথ চন্দ্ররুচে,
জিত কনকাচল মৌলি পদোর্জিত নির্ভর কুঞ্জর কুম্ভকুচে
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১৭।।
বিজিত সহস্র করৈক সহস্র করৈক সহস্র করৈকনুতে
কৃত সুরতারক সঙ্গর তারক সঙ্গর তারকসূনু সুতে।
সুরথ সমাধি সমান সমাধি সমাধি সমাধি সুজাত রতে
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১৮।।
পদকমলং করুণানিলয়ে বরিবস্য়তি য়ো‌নুদিনং ন শিবে
অয়ি কমলে কমলানিলয়ে কমলানিলয়ঃ স কথং ন ভবেত,
তব পদমেব পরম্পদ-মিত্য়নুশীলয়তো মম কিং ন শিবে
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।১৯।।
কনকলসত্কল-সিন্ধুজলৈরনু সিঞ্জিনুতে গুণ রঙ্গভুবম
ভজতি স কিং নু শচীকুচকুম্ভত তটী পরিরম্ভ সুখানুভবম,
তব চরণং শরণং করবাণি নতামরবাণি নিবাশি শিবম
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।২০।।
তব বিমলে‌ন্দু কলং বদনেন্দু মলং সকলং ননু কূলয়তে
কিমু পুরুহূত-পুরীংদুমুখী-সুমুখীভিরসৌ-বিমুখী-ক্রিয়তে,
মম তু মতং শিবনাম-ধনে ভবতী-কৃপয়া কিমুত ক্রিয়তে
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে।
।।২১।।
অয়ি ময়ি দীনদয়ালুতয়া করুণাপরয়া ভবিতব্য়মুমে
অয়ি জগতো জননী কৃপয়াসি য়থাসি তথানু মিতাসি রতে,
য়দুচিতমত্র ভবত্য়ুররী কুরুতা-দুরুতাপম পাকুরুতে
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে,
জয় জয় হে মহিষাসুর-মর্দিনি রম্য়কপর্দিনি শৈলসুতে।।