শুক্রবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

Srimoti sanbad - poem

শ্রীমতী সংবাদ
সুব্রত মজুমদার 

[[ একদিন নির্জন আরব সাগরের তীরে চঞ্চল কৃষ্ণ পদচারণা করছেন। হঠাৎ শুনতে পেলেন এক পরিচিত স্বর। কে  ? এ কি.. শ্রীমতী ! রাধা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে তুললেন কৃষ্ণকে। ঘটনা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। স্থান, কাল ও ব্যক্তি বা ধর্মীয় ঘটনার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। থাকলে তা নেহাত কাকতালীয়। ]
ভালো আছো জানি প্রীয় অন্যকারো সাথে, অন্য কারো হাত রেখে হাতে ;
মোদের বিরহ ব্যাথা তোমাকে কাঁদায়, - - হয়তো কোন নিঃসঙ্গ নিশীথে।
আমি কাঁদি নাকো। কেন জানো ? আমার হৃদয়জুড়ে আছো তুমি হে দ্বারকাধীশ ;
তব স্মৃতি হিয়া জুড়ে তাই, - বিরহ বেদন মাঝে সুখের হরিষ।
ভয় করে, তোমার পরশ যদি হৃৎপিণ্ডের বদ্ধ কোষ্ঠ হতে আবেগ আকারে
ঝরে পড়ে নয়নের অশ্রুধারা হয়ে ! বল বন্ধু তখন কি করে
বেঁচে রবে কলঙ্কিনী  ? জানি প্রীয় জানি জানি উত্তরের বৃথাই প্রত্যাশা।
কি করে জানবে তুমি জননীর স্নেহ আর দয়ীতার মৌন ভালোবাসা ?
তুমিও কি সুখে আছ  - - রাজছত্র ঢাকেনাই মোহনচূড়া তব  ? যে অঙ্গুলি
বাজাতো বাঁশরী, - উছলিত যমুনার ধারা, ফিরিত গৃহে গাভীবৎসগুলি;--
সে অঙুলে সুদর্শনচক্র ধরো আজ। যে আঙুল ধরেছিল গিরিগোবর্ধন
রেখেছিল গোপগণে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে, সে আঙুল নেয় আজ প্রাণ।
যে গোপবালক যমুনার স্বাদুজল পান করে নিবারিত তৃষা
সে আজ হেমদণ্ড ধরে সমুদ্রের খরজলে হারিয়েছে দিশা।
বৃষ্ণীরাজ ! ভুলে যাই মাঝে মাঝে কোনো দিন আপন ছিলে তুমি,
তোমার বাঁশির তাণে চঞ্চলিত হৃদয় আমার। প্রেমহীন রূক্ষ মরুভূমি
যেথা নাই সামান্য আর্দ্র্যতা, আছে শুধু ন্যায়-নীতি-কূটনীতির জঘন্য প্রলাপ,
সে হৃদয় নিয়ে কেন বাঁচো ? কেনো জগন্নাথ, এত ঘোর পাপ  ?
যে রথের তুমিই সারথি সে রথের হতে ভীমবাণ ছিন্ন করে নিরীহ বৃষ্ণীরে ?
ভালো থেকো প্রীয়তম, নির্জন তরঙ্গময় সমুদ্রের বেলাভূমি পরে
এ সাক্ষাৎ মুছে যাবে ইতিহাস হতে। দ্বৈপায়ণ ব্যাস কৃপণতা বশে
এই জীর্ণ পাতা ভরাবেনা কালির আঁচরে। হয়তো কোন দেশে
হয়তো কোন কালে আবার তোমার হব। তোমার অপেক্ষায়...
বিদায় প্রিয়.... বিদায়....।

বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮

Guru bandana




(  শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শিষ্য শ্রী দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের উদ্দেশ্যে গানটি লেখেন।
ছন্দ - #তোটক
মাত্রা ৪|৪ |৪ ) 
রবি নন্দন বন্ধন খন্ডন হে।
শরনাগত কিঙ্কর ভীত মনে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
হৃদি কন্দর তামস ভাস্কর হে।
তুমি বিষ্ণু প্রজাপতি শঙ্কর হে।
পরব্রহ্ম পরাৎপর বেদ ভণে।
গুরুদেব দয়া কর দীনজনে।।
মন বারণ শাসন অঙ্কুশ হে।
নরত্রান তরে হরি চাক্ষুষ হে।
গুণগান পরায়ণ দেবগণে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
কুলকুণ্ডলিনী ঘুম ভঞ্জক হে।
হৃদিগ্রন্থি বিদারণ কারক হে
মম মানস চঞ্চল রাত্রি দিনে।।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
রিপুসূদন মঙ্গলনায়ক হে।
সুখ শান্তি বরাভয় দায়ক হে।
ত্রয় তাপ হরে তব নাম গুনে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
অভিমান প্রভাব বিনাশক হে।
গতিহীন জনে তুমি রক্ষক হে।
চিত শঙ্কিত বঞ্চিত ভক্তি ধনে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
তব নাম সদা শুভ সাধক হে।
পতিতাধাম মানব পাবক হে।
মহিমা তব গোচর শুদ্ধমনে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
জয় সদ্গুরু ঈশ্বর প্রাপক হে।
ভব রোগ বিকার বিনাশক হে।
মন যেন রহে তব শ্রীচরণে।
গুরুদেব দয়া কর দীন জনে।।
                                               

সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮

Bengali poem


( আরো কবিতা ভীরু প্রেম  )
হৈমন্তীকা
সুব্রত_মজুমদার
এতদিন ধানশীষে চুপচাপ শিশিরেরা পড়ছিল ঝুপঝাপ বোঝেনি কেউ তো আসবে।
এই মেয়ে আজ এলি সে শিশির মেখে নিলি তোর ছোঁয়ায় এই মাঠ জাগবে।।
ঐদিকে রৌদ্রের হরতাল কুয়াশার কু-আশায় বেসামাল হাজার মানিক যেন ঝরছে;
তোর হাতে রেখে হাত ধানের সবুজ পাত হৈমন্তী ভৈরবী ধরছে।।
ঐ দূরে শালেদের জটলায় শিশিরেরা টপটপ টপকায়, বনময় শিহরণ লাগলো
ঘাঁসে বসে চঞ্চল উচ্ছ্বল বিহ্বল ঘাঁসফড়িং এর ডানা জাগল।।
পুবদিক  রাঙিয়ে প্রানে সাড়া জাগিয়ে ক্ষীনরেখা ঐ দেখা যায় রে
ভাঁপ ওঠা দীঘি তে কালো জলে এ শীতে বাতাসের নিঃশ্বাস পাই রে।
দলবেঁধে বালি হাঁস কাটাইছে পরবাস কলকল অবিরল ডেকে যায়
জাগধরা চাদরে পেয়ালার আদরে কবি মন কল্পনা পেয়ে যায়।
হয়তো বা এরপরে কোলাহল নেবে কেড়ে সুপ্তির সুখভরা অবকাশ;
দ্বারকার বুক বেয়ে নির্জনে নির্ভয়ে খেলাকরে যাবে যত বালিহাঁস।
আবার দিনের পরে পেঁচাডাকা রাত্তিরে স্বপ্ন বালিকা সুর ধরবে,
আগামীর আয়োজনে নদীতীরে একমনে শিশিরের স্নেহকণা ঝরবে।।

রবিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৮

Nabanya


                                                              বাঙালি যেমন কৃষিপ্রধান তেমনি উৎসব পাগলও। অপরদিকে বাঙালি আবার ভীষন ধর্মপ্রাণ। তাই ধর্ম, কৃষি, সংস্কৃতি ও আনন্দের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে বাঙালি তার উৎসবানুষ্ঠানের মাধ্যমে। কৃষিপ্রধান বাঙালির এইরকম একটি উৎসব হল নবান্ন । কার্তিক মাস হতে শুরু হয় ধান কাটা। অগ্রহায়ণ বা অঘ্রান মাসে নতুন চালের ভাত প্রথমে দেবতাকে উৎসর্গ করার উৎসবই নবান্ন ।
                পশ্চিমবঙ্গে নবান্ন সাধারণত অন্নপূর্ণা পূজার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। তবে ব্যতিক্রমও আছে। যেমন বীরভূমের তারাপীঠে নবান্ন হয় কার্তিক পূজার সঙ্গে। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে বিয়ের  পর কৈলাশ শিখরে শিব ও পার্বতী বেশ সুখেই দাম্পত্যজীবন কাটাচ্ছিলেন।  আর্থিক অনটনের জেরে  বেশ কিছুদিন পরই শুরু হয় দাম্পত্যকলহ। দারিদ্র্যের কারণে পার্বতীর সঙ্গে কলহে ঘর ছেড়ে ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করেন শিব। কিন্তু কোথাও ভিক্ষা না পেয়ে শেষে  কৈলাশে ফেরেন। পার্বতীর মায়ায় তিনি যে ভিক্ষে পাচ্ছিলেন না, তা ঘুমাক্ষরেও টের পাননি শিব। কাশীতে তখন পার্বতী মা অন্নপূর্ণা রুপে অন্ন বিতরন করছেন। ভোলানাথ দেবী অন্নপূর্ণার কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করেন। দেবী অন্নপূর্ণার হাতে রন্ধনকৃত  সঘৃত পালান্ন, পায়েস ইত্যাদি ভোজন করেন। এই ঘটনাকেই নবান্নের শুরু মনে করা হয়। মনে করা হয় নতুন চালের অন্ন দেবী অন্নপূর্ণাকে নিবেদন করলে দেবী সংসার ধনধান্যে পরিপূর্ণ রাখেন।
পশ্চিমবঙ্গে নবান্য রন্ধন, পূজা ও উৎসর্গে আবদ্ধ থাকলেও পূর্ববঙ্গ তথা অধুনা বাংলাদেশের নবান্নের অনেকগুলো অংশ আছে। সেগুলি হল-
লক্ষ্মী পূজা :-
পিতৃশ্রাদ্ধ:- পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বীরবাশ:- বাড়ির উঠানে গর্ত করে তাতে জ্যান্ত কই মাছ, দুধ দিয়ে মাঝে একটি বাঁশ পোতা হয়। চারপাশে আলপনা আঁকা হয়।
কাকবলি:- একটি কলার পাতায় নতুন চাল, কলা, নাড়ু ইত্যাদি কাককে খেতে দেওয়া হয়। মনে করা হয় কাকের মাধ্যমে মৃত আত্মারা (পূর্বপুরুষের ) ঐ খাবার খান।
সব অনুষ্ঠান হয়ে গেলে রন্ধনকরা খাদ্য দেবতাদের নিবেদন করে একসাথে খাওয়া দাওয়া হয়।
  নবান্নের খাদ্য তালিকা :- 
সকালে পূজার পর নতুন চালের গুঁড়ো / চাল সেদ্ধ, মাখার জন্য দুধ, চিনি, কিসমিস, ফলের টুকরো, মিষ্টি।
দুপুরে পাঁচ, সাত বা নয় রকমের ভাজা। যেমন- আলু-ভাজা, পটলভাজা, বেগুন ভাজা, আখ ভাজা, বড়িভাজা ইত্যাদি।
তরকারি, মুগের ডাল,মাছের পদ, টক, চাটনি পায়েস, মিষ্টি, পান। নবান্নে ডিম বা মাংস রান্না হয় না।
অনেক জায়গায় পরেরদিন রান্না করা হয় না।

                                               

সোমবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৮

Labh Panchami

লাভ পঞ্চমী :-
                 দীপাবলীর তিনদিন পর ছট পূজার  মধ্যে যে পঞ্চমী পড়ে তা লাভ পঞ্চমী বা সৌভাগ্য পঞ্চমী হিসাবে গুজরাত ও অন্য কিছু রাজ্যে পালিত হয়। এই দিনটি খুবই মঙ্গলময় ও সৌভাগ্যদায়ক দিন। মনে করা হয় এই দিন গণেশের দুই স্ত্রী ঋদ্ধি ও সিদ্ধি এর  দুই পুত্র শুভ ও লাভের পূজা করলে সৌভাগ্য আসবে। গুজরাতে সমস্ত ব্যবসায়ীরা এই দিন হতে ব্যবসা শুরু করেন বা হালখাতা করেন। এই নতুন খাতাকে 'খাতু' বলে, যার বাম দিকে 'শুভ' ও ডান দিকে 'লাভ' লেখা হয়। জৈনরা এদিন বই এর পূজা করে। এ অনেকটা আমাদের বসন্তপঞ্চমীর মতো। এদিন জৈনরা জ্ঞানের উপাসনা করেন।
হালখাতর মাঝে আঁকা হয় স্বস্তিকা চিহ্ন যা জ্ঞান ও সিদ্ধির দেবতা গণেশের প্রতীক। আর স্বস্তিকার দুপাশে দুটি করে লাইন গণেশের দুই স্ত্রী ঋদ্ধি ও সিদ্ধির প্রতীক। গণেশের সাথে ঋদ্ধি ( বুদ্ধি ও পদ্ধতি) এর মিলনে শুভ অর্থাৎ মঙ্গলের জন্ম। আবার গণেশের সাথে সিদ্ধি (আত্মশক্তি  ) এর মিলনে লাভ অর্থাৎ মুনাফার জন্ম।